ভালো তোকে বাসতেই হবে পর্ব ৩৬+৩৭

পর্ব ৩৬+৩৭
#ভালো তোকে বাসাতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-৩৬

আমি ঘোর লাগা চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ওনার ভালোবাসার পরিমাণ অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তাও আমি পারছি না। শুধু খুশিতে দু চোখে কোন থেকে খুশীর ধারা বইতে লাগলো,,,

❤️

দুদিন হলো বাসায় ফিরেছি ‌। সাতদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো। তারপর ও ছাড়তে চাইছিল না ডাক্তার। সিনিয়র ডক্টর অবশ্য শারীরিক সমস্যার জন্য রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু মনে হয় ডিউটি ডক্টর আমার প্রেমে পরেছিল। হ্যাঁ,,মাঝে মধ্যেই দেখতাম চশমার ফাঁক দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে তাকিয়ে আছে।রাত ভাইয়ার আবার এসব সহ্য হচ্ছিল না।এই তো ৬ষ্ঠ দিনের দিন বিকেলে
ডক্টর কেবিনে এন্ট্রি করলেন। সম্পূর্ণ ফর্মাল ড্রেসের উপর ধবধবে সাদা এপ্রন ।তালগাছের মতো লম্বা ,, বেশি রোগা না,,। চোখে মোটা কাঁচে চশমা। গায়ের রং কাঁচা হলুদ বর্ণের। ছেলেদের হাত পা এতো সুন্দর খুব কমই দেখা যায় তবে এই ডক্টর বেশ কেয়ারফুল বলে মনে হলো তার হাত পায়ের ব্যাপারে। মাথায় এক ঝাঁকড়া কোঁকড়া চুল। এটিটিউড দেখে ডক্টর মনে হলেও। একে দেখে ডক্টর না স্টুডেন্ট বলে মনে হতো আমার। গলায় স্বর খুবই মিষ্টি। আমার রাত ভাইয়া না থাকলে এই ডক্টরের উপর আমার ফিদা হতে বাধ্য হতাম।রাত ভাইয়া ও আমার কিছু জিনিস হাতে কেবিনে ঢুকলেন।বেশ খুশি মেজাজে থাকলেও ডক্টর কে দেখে তার মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো । ডক্টর কে দেখে আমি শোয়া থেকে উঠে আধশোয়া হয়ে বসলাম । ডক্টর আমার রিপোর্ট দেখছিলেন মাঝে মাঝে আমাকে ও।রাত ভাইয়া চলে আসাতে ফাইলে মুখ গুজে চোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কারো গরু চুরি করেছে।তাই চুপচাপ গরু সহ নিজে ফাইলের মাঝে ঘাপটি মেরে বসে আছেন।টু টা কোনো শব্দ করলেই খপ করে চোর ধরা পড়ে যাবে।রাত ভাইয়া চোখ রসগোল্লার মতো করে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার হাসি পাচ্ছে কান্ড দেখে । কিন্তু এখানে হাসার মানে খাড়া কুরালে ঝাঁপ মারা‌। চুপচাপ বসে একবার এদিক ,, একবার ওদিক চোখ ঘোরাচ্ছি।পুরো কেবিনটাত চারজন মানুষ। ডক্টর ,,আমি,,রাত ভাইয়া,, জেরিন। কিন্তু এতোটা নিরব যে গা ছমছমে একটা ব্যাপার।হঠাৎ নিরবতার দোর খুলে ডক্টর ভীত গলায় বললেন,,

,,”ফ্লুক্লাস পাঁচশ এম জি খাচ্ছে তো প্যাসেঞ্জার??

আমি আর হাসি দমিয়ে রাখতে পারলাম না।সব বেলুনের হাওয়ার মতো এক ধাক্কায় বাইরে প্রকট হলো। সঙ্গে তাল মেলালো জেরিন। তবে ও মুখ টিপে হাসছে ।আর আমি বিছানায় কাঁপিয়ে।রাত ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে এক পলক তাকালেন আমার দিকে। আমি ভয়ের চোটে চট করে হাসি থামিয়ে মাথা নিচু করলাম। ডক্টর এসে প্যাসেন্ট কে প্যারেন্টের পরিবর্তে প্যাসেঞ্জার বলছে।আর সেটা শুনে।হাসতেও পারবা না।বলেন তো কেমনডা লাগে??ধরেন ডক্টর এই লুকে মিরপুর টু এয়ার পোর্টগামি কোনো বাসের কন্ডাক্টরের কাজ করছেন? তখন কেমন হবে? ডক্টর বাসের দরজায় ঝুলতে ঝুলতে বলছে,,,

,,”এই,, মিরপুর ১০,১১,১২ ,কালশী ,পুরবী,,,,,(চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে)।কি ইন্টারেস্টিং না ব্যাপারটা?? এসব ভাবলে আবার হাসি থামিয়ে রাখা যায় নাকি?? আমি ফিক করে হেসে দিলাম। একপলক রাত ভাইয়ার চোখে চোখ পড়তেই আবার মাথা নিচু করে নিলাম। ডক্টর লজ্জিত গলায় গড়গড় করে বলল,,

,,”ওহহহ,,,সরি !! ইটস মাই ফল্ট।প্যাসেন্ট এই মেডিসিনটা নিচ্ছে তো??”(বলেই উত্তরের অপেক্ষায় আমার দিকে তাকিয়ে রইল।)

রাত ভাইয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,,

,, ইয়েস ডক্টর।আর কিছু বলবেন??”

ডাক্তারের মাথায় কিছু গেল বলে মনে হচ্ছে না‌।সে আগের ভঙ্গিতে এক চোখে তাকিয়ে আছেন।রাত ভাইয়ার রাগ আর একধাপ উপরে উঠল। জোরে এক ধমক দিয়ে বললেন,,

,,”ডক্টর ,,,,আর কিছু বলার বাকি আছে??”(চেঁচিয়ে)

ডক্টর লাফিয়ে উঠলেন। তালগাছ মাফিক লোকটার হাত থেকে তাল পড়ার মতো করে টুক করে রিপোর্টের ফাইলটা পড়ে গেল নিচে। লোকটা হতভম্ব হয়ে পড়লেন।এদিকে ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে মুখের ভয় লুকাতে লজ্জিত হাসি দিয়ে বললেন,,

,,”এএএ,,,এএএ,,,??না না আর কিছু না।(বলেই ফাইল উঠাতে যাওয়ার আগেই জেরিন ফাইল উঠিয়ে নিল)

ডক্টর একটু থেমে আবার অদ্ভুত সুরে আবার বললেন,,

,, আচ্ছা ওনাকে কখন ডিসচার্জ করা হবে।”

রাত ভাইয়া এবার আর রাগ করলেন না। ঠান্ডা গলায় বললেন,,

,,”ডক্টর আপনি না আমি??(রাগ ফুস করে বেরিয়ে এলো),,যে বলল কবে ডিসচার্জ করা হবে।(চেঁচিয়ে)

রাত ভাইয়া অগ্নিমূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা ডক্টর ঘামছে। কোঁকড়ানো চুল গুলোর মাঝে থেকে ছোট জলপ্রপাতের মতো ঘাম ঝড়ছে।মুখটা শুকনো হয়ে গেছে। নাকের ডগায় লজ্জা এসে থমকে গেছে। গম্ভীর গলায় বললেন,,

,,”ও,,সরি!!,,আমি এবার আসি আমার কাজ শেষ।”(বলেই বাইরের দিকে হাঁটা দিলেন।)

রাত ভাইয়া রাগে কটমট করে দাঁত কাটছে। নিমিষেই রুমটা থমথমে হয়ে গেল। আমার দিকে একবার দুপুরের তাজা রোদের ঝলকানিতে ঝলসে দেওয়ার ভঙ্গিতে তাকিয়ে দেয়ালে একটা ঘুসি মারলেন। থমথমে রুমে ঘুষির আওয়াজটা গমগম করছে। জেরিন আর আমার বুকটায় ছ্যাত করে বাড়ি মারলো সেই আওয়াজ। আমরাও কেঁপে উঠলাম।মুখ কাচুমাচু করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম।রাত ভাইয়া আর কিছু না বলে হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে জেরিন আর আমি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসির জগতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। তারপর শুধু রাতটা পার করলাম হাসপাতালে । সকালে উঠে দেখি বাক্স প্যাট্রা গোল করে সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন আমি চোখ খুলে চাইব।রাত ভাইয়া ,,ভালো আঙ্কেল ,,আর আব্বু এসেছে।ভাইয়া নিচে ফর্মালিটিজ শেষ করতে গেছেন আর রাত ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। একটু নাম মাত্র ফ্রেশ হয়েছি ।ওড়নাটা গলায় ঝরাতেই রাত ভাইয়া কোলে তুলে নিলেন। সোজা গিয়ে গাড়িতে বসালের। ফর্মালিটিজ শেষ করতে ভাইয়াকে অনেক ঝক্কি সামলাতে হয়েছে।আসলে ডক্টর আরো এক সপ্তাহ হাসপাতালে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাত ভাইয়ার তোপের সামনে কেউ টিকতে পারে নি।
শেষ পর্যন্ত আমাকে ডিসচার্জ করতেই হয়েছে।

দুদিন ধরে বিছানায় বসে থাকতে থাকতে ঘরটাও বিষিয়ে উঠেছে। সবকিছু যেন চক্ষুশূল হয়েছে।দিনে অন্তত দুবার রাত ভাইয়া আসেন । আমার পছন্দের খাবারগুলো নিয়ে আসেন । আমি খালি বুঝি না রাত ভাইয়া যে এতো আমার খেয়াল রাখছে বা দৌড়াদৌড়ি করছে তাতে কি কেউ কিছু সন্দেহ করছে না??কোই কারো মাঝে এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা বা বিবেচনা দেখলাম না। দক্ষিণ মুখি বিছানার বাম পাশের জানালাটা খোলা। রোদের চটচটে গরম কমিয়ে হালকা বেগে শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাস্ত পূবালী হাওয়া। তার ছোট ছোট একঝলক বাতাস জানালার পর্দা দুলিয়ে ঘরে ঢুকছে। বাতাসের তালে তালে কোমর দুলিয়ে হাত পা ছুড়ে তা তা থৈ থৈ করছে সাদা পর্দা টা। আমি ও খুব বিষ্ময় নিয়ে সেই ছন্দ দেখছি।পা টা ভালো থাকলে পর্দার সাথে আমি একটু লম্ফঝম্প করতাম। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। ভেবেই বাইরের দিকে স্থির চোখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ‌। ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করে যে একটু শান্তি পাব তাও হচ্ছে না। ফোনের দিকে তাকালেই চোখ জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে ফোনের সম্পূর্ণ আলো এক পলকে শুষে নিচ্ছে আমার চোখ। তবে হাওয়ার তালে দেখতে ভালোই লাগছে । তবে একটা গান বাজলে আরও ভালো লাগতো যেমন,,

পাগল হাওয়া তুমি ও কি
আমার মতো হারিয়ে গেল
ফুলের ও বনে,,
হাজারো রঙের মেলায়,
সুরভী লুটের খেলায় দারে দারে পেলে,,,

বেশ আয়েশ করে পায়েস খাওয়ার মতো আমিও আয়েশ করে হাওয়া নৃত্য দেখবো।তাই ফোনের হ্যান্ড ব্যাগের দিকে হাত বাড়ালাম।ব্যাগ খুলে ফোন খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না।পাবো কি করে ফোন তো ব্যাগে নেই। তবে ফোনের পরিবর্তে রাত ভাইয়া সেই ডায়রি টা হতে উঠে এলো।ডায়রি টা হাতে রেখে ব্যাগটা সাইডে রেখতে গিয়ে দেখি ফোন তো সাইট টেবিলের উপর ছিল আমিই দেখিনি। তবে এই মুহূর্তে আমার ফোন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই আমার মন গিয়ে পড়ল রাত ভাইয়ার ডায়রির উপর।
কোলে একটা বালিশ নিয়ে বসলাম ‌।বালিশে কনুই গুজে ডায়রির প্রথম পাতা খুললাম।ডায়রির প্রথম পাতা খুলতেই রাত ভাইয়ার সেই পরিচিত সুরভী ভেসে এলো ।প্রথম পাতায় একটা শুকনো গোলাপের পাপড়ি যাতে সোনালী রঙের জেল পেন দিয়ে সযত্নে S অক্ষর লেখা। ডায়রির পাতায় লেখা,,

❤️ সোনালী কে ছেড়ে এই দেশ ছাড়তে যাওয়ার সময় মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছিল আমায়‌।মনে হচ্ছিল কেউ কলিজাটা ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে ‌।এয়ার পোর্টে বসে প্রচুর কেঁদে ছিলাম সেদিন। তারপর নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলাম ।এই সম্পূর্ণ জীবন দশায় সোনালীর কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ না রাখার পন নিয়ে বিদেশের মাটিতে পা রেখেছিলাম।

আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছি।সবার আগে সোনালীর সাথে দেখা করতে গিয়েছি । বিদেশে থাকা কালীন সময় অপূর্বর কাছ থেকে সোনালীর সকল খবরাখবর আমি পেয়েছি। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এনার রাগ যে নাকের ডগায় এসে ঠেকেছে তা তো আর জানা ছিল না।রাগের চোটে যখন ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো না কোনো ভাবেই নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না‌।দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা গোলাপী ঠোঁট টা তীব্র আকর্ষণ করেছিল। তবে বলে না ,,ভেঙ্গেছ কলসির কানা তা বলে কি প্রম দেব না?? আমিও ওর মুখ থেকে ভালোবাসি বলিয়েই ছাড়বো। সোনালী “ভালো তোকে বাসতেই হবে”।

প্রথম পাতা শেষ। অপূর্ব ভাইয়া এই ব্যাপারটা যে জানত তা তো আমার স্মৃতির অগোচরে ছিল। আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।এই ডায়রি থেকে আরো অনেক রহস্য উদঘাটন হতে চলেছে,,,

#পর্ব-৩৭

প্রথম পাতা শেষ। অপূর্ব ভাইয়া এই ব্যাপারটা যে জানত তা তো আমার স্মৃতির অগোচরে ছিল। আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।এই ডায়রি থেকে আরো অনেক রহস্য উদঘাটন হতে চলেছে,,,

নিস্তেজ সূর্যের ঝকঝকে আলো জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। পরিবেশে এখন মৃদু মন্দ বাতাস। ডায়রির পাতায় আঙুল গুজে কভার টা বন্ধ করে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। শেষ বিকেলের আশ্চর্য সৌন্দর্য বহমান।পাখিরা ঝাঁক বেঁধে একজন আরেকজনের পিছুপিছু যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে কিচিরমিচির করে কথা বলাবলি করছে।তারা একজন অন্যজনের প্রতি কতো আনুগত্যশীল। কতো ভালোবাসা বাসি ।একপলক ডায়রির দিকে তাকিয়ে আবার বাইরে চোখ রাখলাম।রাত ভাইয়ার আমার প্রতি ভালোবাসা সেই লেভেলের ও ঊর্ধ্বের লেভেলে। ভালোবাসা ও কিভাবে প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে বাড়ছে। আমাকে সুখে রাখার উদ্দেশ্যে কতো কষ্ট তাকে সইতে হয়েছে।সে যেমন আমায় ভালোবেসে এতোটা করেছে আমি ও আমার সাধ্য মতো তার সকল ইচ্ছার পূর্ণতা দেব। আমরা দুজন মিলে আমাদের ভালোবাসার মহিয়ান নগরী তৈরি করব। যেখানে থাকবে শুধু ভালবাসা আর ভালোবাসা। ভাবতে ভাবতেই সকল অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আবার ডায়রির পাতা উল্টালাম,,

,,❤️ সোনালীর মুখে আমার জন্য একটা বিরক্তর আভা ছড়িয়ে আছে হামেশা। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কিছুই করার নেই।তাই প্রতি কথার মাথায় ওকে কাছে পাওয়ার জন্য থ্রেট দিতে হচ্ছে।সে আবার যেই সেই থ্রেট না। ডাইরেক্ট চুমু থ্রেট। কথাটা বলার সাথে সাথে ওর মুখটা দেখার মতো হয়।একদম চকলেট আইসক্রিম। ইচ্ছে করে চট করে খেয়ে ফেলি।ওর চোখে তাকালেই অসম্ভব রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর বাচ্চাদের মতো কটমট করে দাঁত কাটা।আর ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ নজরে ওর মারাত্মক চাহনি।ওফফ,, আমাকে ছটফট করে মারে‌। হাওয়ায় যখন চুলের গোছা এলোমেলো হয়ে চারদিকে ওড়াওড়ি করে তখন আমার হৃদয়টা ও দ্রুতগতিতে লাফালাফি করে।কি অসম্ভব সুন্দর লাগে তা প্রকাশ করার সাধ্য আমার নেই। গভীর রাতে জানলা টপকে একবার ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখার আসায় যাই।ও এই ব্যাপারটা জানে না‌। জানলে কেমন রিএক্ট করবে কে জানে??যা রাত মহারানীর..!!আর ঝগড়ায় তো পিএইচডি করেছে।(আমি মনে মনে মৃদু হাসি দিলাম) সেদিন রাতে তো আর একটু হলে কেস ঘেটে ঘ হয়ে যেত। কিন্তু কি করবো ওকে না দেখে যে রাতে ঘুমেরা ধরা দেয় না। খুব সখ করে নুপুর কিনেছি। ইচ্ছে নিজের হাতে তার পারে পড়াবো । কিন্তু যেমন রাগে বোমা হয়ে থাকে।নুপূর দিতে গেলে হয়তো আমার উপর বিস্ফোরণ ঘটাবে।তাই রিক্স না নিয়ে রাতে গিয়ে টুক করে পড়িয়ে দিলাম। ভালোবাসার শিকল পড়িয়েছি প্রিয়োর পায়ে।নিশি রাতের ঝলমলে আলোয় ফর্সা পায়ে চিকচিক করছিল ভালোবাসার শিকল। এতো চিকচিকের মধ্যে ও পায়ের কালো তিলটা তীব্রভাবে তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। দ্রুত ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম।(আমি ডায়রি থেকে চোখ সরিয়ে পায়ের নুপূরের দিকে তাকালাম।দু সেকেন্ড আগেও জানতাম না এই শিকলের আসল মালিক কে।একটা সময় তো ভাবতাম ম্যাজিক হচ্ছে আমার সাথে। কিন্তু এখন মনে হয়,,সত্যিই এটা ভালোবাসার শিকল। তাইতো এতো বড় এক্সিডেন্টের পড়েও রাত ভাইয়া ভালোবাসা ,, যায় যায় অবস্থা থেকে আমায় আবার ফিরিয়ে আনল।তাও আবার পা টেনে)

,,মনে হচ্ছিল সোনালী আমার প্রতি দুর্বল। তবে যখন দেখলাম প্রিতির প্রতি ওর জেলাসি,, তখন পুরো সিওর হলাম। সেদিন ইচ্ছে করে জুসের গ্লাসটা প্রিয়তির গায়ে ফেলে দিল। আবার সেদিন শপিং মলে বসে প্রিয়তির চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দিল (আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলাম। তার মানে এসবের কিছুই রাত ভাইয়ার চক্ষু এরাই নি। ওনার চোখ আমার উপরেই স্থির ছিল।চোখ খুলে ডায়রির দিকে তাকিয়ে হাসছি।কি সাংঘাতিক কান্ড,,!! কিন্তু আমি খুব খুশিই হয়েছিলাম ,, আমার প্রতি ওর ভালোবাসা দেখে।যে কি??ভালোবাসলেও তা মুখে শিকার করতে নারাজ,,,,

আমার রুমের দিকে আই গমনরত কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে ডায়রিটা বন্ধ করে ব্যাগে ভরে রাখলাম।দুম করে জেরিন ঘরে ঢুকলো। ওকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। জেরিন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,

,,”কিরে সোনু মনু,,কি করছিস??”(বলে একটা মুচকি হাসি দিল)

আমি একটু বেচারা টাইপ মুখ করে জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,,

,,”কি করব আর বল,,!! ল্যাংড়া হয়ে বিছানায় বসে আছি,,আর কি??

জেরিন বিছানার কাছে এসে আমার পাশে বসতে বসতে বলল,,

,,”আরে দোস্ত,, ভালোবাসায় মানুষ জানে কুরবান দিয়ে দেয়,,আর তুই তো অতি তুচ্ছ জিনিস ,, সামান্য পা কুরবান দিয়েছিস।আর শোন,,জান কুরবান করলে তো আর ফিরে পেতি না। কিন্তু দেখ তোর কপাল আট আঙ্গুল ,,কারন পা তো আবার ফিরে পাবি।কি বল,,!!তোর লাখ কতো ভালো।ভাবা যায়??(চোখ বড়বড় করে আমার দিকে জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।)

ওর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।মাইয়ায় কয় কি??এতো ব্যাথা,, এতো যন্ত্রণা,, এতো কষ্ট ,, এগুলো কি বৃথা গেল?? আমি তীক্ষ্ণ নজরে ওর দিকে তাকালাম,,

,,”তুই কি চাইছিলি যে?? আমার জান কুরবান হয়ে যাক??ওই তুই কোনোদিন এক্সিডেন্ট করেছিস?? প্রথমবার এক্সিডেন্ট করলে কেমন ফিল হয়?? অভ্যাস থাকলে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমার টা তো প্রথম এক্সিডেন্ট,,!!(মুখ কুঁচকে বললাম)আর বলে কিনা পা ফেরত পাব।”

জেরিন আমার কথা শুনে ভ্যাবলা কান্তের মতো হাসছে। মাঝেমধ্যে হাসি থামাতে যাচ্ছে কিন্তু পারছে না।একটু বাদে হাসি থামিয়ে বলল,,

,,আহহ,,সোনু ,,তুই এতো চটছিস কেন?? আমি তো একটু মজা করছি”(আবার হেসে দিচ্ছে)

আমি চোখ মেরে হেসে দিয়ে বললাম,,

,,”আমি ও বেবি,,”(জেরিনের হাসি এবার আরো জোরালো হলো)

বেশ খানিকক্ষণ হেসে হাসির কোটা থামিয়ে শীতল গলায় বললাম,,

,,”আচ্ছা আমার পায়ের কি হবে রে?? পায়ের উপর থেকে এই বিশাল ছাউনি কবে সরবে বলতো??তুই কি কিছু জানিস??”

হাসি থামিয়ে দম নিয়ে ঢোক গিলতে গিলতে বলল,,

,,”হ্যাঁ,,জানব না কেন??,,পরশুই তোর পা কেটে,,(আমি চোখ ছানাবড়া করে তাকালাম ওর দিকে,,ও ফিক করে হেসে দিয়ে বলল),,থুরি,,পা কেটে নয় এই মোটা ব্যান্ডেজ কেটে শুধু ফাটলের উপর সিমেন্ট বালু দিয়ে মেরামত দেবে।(বলতে বলতে বারবার হাসিতে ফেটে পড়ছে জেরিন। আমি থ মেরে শুনছি),, তারপর হালকা হাঁটাহাঁটি ও করতে পারবি।”

,,”কি বলছিস তুই এসব?? এতো তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে??তোর মাথা ঠিক আছে তো?? নাকি আমাকে ঢপ দিচ্ছিস??(বলেই বালিশে ঠেস দিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে উত্তরের আশায় বসে রইলাম)

জেরিন মাথা উঁচু করে থমথমে গলায় বলল,,

,,”নারে আমি,,(বলে একটু থামলো জেরিন।ওর মুখ মলিন। আমার হার্টবিট বাড়ছে ।কি বলবে ও,,)

আমার কাঁধে একটা চাটি দিয়ে দুপাটি চকচকে দাঁত বের করে হি হি করে হেসে দিয়ে বলল,,

,,”আমি ঠিক বলছি। ডক্টর বলেছেন তোর বডি ফাংশন ভালো কাজ করছে ।তাই পা ঠিক হতে বেশি সময় লাগবে না বলেছে।”

আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।এই জেরিনটাও না মাঝেমধ্যে এমন সব ভাব ভঙ্গি করে না।প্রানটা গালার ধারে উঠে আসে। এখন ও এক কান্ড ঘটেছে।প্রান পাখি গলার কাছে উঠে এসেছে।টুক করে একটা ঢোক গিলে প্রান ভোমড়াটা জায়গায় ফেরত পাঠালাম। তারপর ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,,

,,”ভাবী জি আপনি কোন হড়িদাস পাল এসেছেন,, আমাকে এভাবে সাসপেন্সে রেখে রেখে মেরে ফেলার ধান্দা করেছেন??

জেরিন চোখ বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর ঠাস করে বলতে শুরু করল,,

,,”বাব্বাহ,,,,এটা শুনেই তোমার মরে যাওয়ার পালা হলে হাসপাতালে যা ঘটেছে তা শুনে তোমার কি হবে গো আমার প্রাণ প্রিয়সী,,??

আমি একটু অবাক হলাম। তাইতো?? হাসপাতালে কি সত্যিই কিছু হয়েছিল,,,??

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here