#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৬
সকালে সূর্যের দ্রুতি কাচ ভেদ করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করছে। জ্যাকের আননে(মুখে) সূর্যের আলো পরতেই নিজের অক্ষি কুঁচকে ফেলল। ধীরে ধীরে অক্ষি খুলল।পাশে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, ৮ বাজে। নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে সে খুব অবাক হলো। আস্তে আস্তে উঠে বসল। মাথাটা তার ভার ভার লাগছে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো এটা ওর রুম।
–কালকে তো রাতে ক্লাবে গিয়েছিলাম।তাহলে বাসায় আসলাম কী করে? কে নিয়ে আসলো? লিও?
জ্যাক মনে করার চেষ্টা করলো কালকে রাতে কী কী হয়েছিল? হালকা হালকা মনে পরছে তার৷ কালকে রাতে,হুইস্কির বোতল নিয়ে টানাটানি করেছিল, সেই সময় শ্রুতিও গিয়েছিল ক্লাবে৷ আর সে শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করছিলে তাকে ভালোবাসে কীনা? শ্রুতি তাকে ভালোবাসি বলেছিল৷
এই রকম মনে পরছে জ্যাকের। জ্যাক দু হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বলল,
–মনে কর জ্যাক। কী হয়েছিল?শ্রুতি কী সত্যিই তোকে ভালোবাসি বলেছিল মনে কর?
কিন্তু জ্যাকের কিছুই মনে পরছে না। চোখের সামনে জাপসা জাপসা সব কিছু ভেসে উঠছে।
–জ্যাক কী হয়েছে? মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
বলেই জ্যাকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। জ্যাক চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল তার মম।
–মম কালকে আমাকে কে বাসায় দিয়ে গিয়েছিল? আমি তো ক্লাবে গিয়েছিলাম?
মিসেস এলিজাবেথ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
–তুমি কালকে অনেক ড্রিংকস করেছিলে জ্যাক। তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলে ৷ আরিচ আর লিও তোমাকে বাসায় দিয়ে গেছে।
জ্যাক প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করল,
–কোনো মেয়ে ছিল সাথে?
–না তো কোনো মেয়ে ছিল না।
জ্যাক ভাবুক হয়ে ভাবতে লাগলো। তাহলে শ্রুতি কী কালকে ক্লাবে যায় নি?কিন্তু তার তো মনে পড়ছে গিয়েছিল।তাহলে মম কেন বলছে যে কোনো মেয়েকে ত
সে দেখেনি নি?
–কী ভাবছো জ্যাক? কয়টা বেজেছে দেখেছো? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।
বলেই তিনি ঘর থেকে প্রস্হান করলেন।
–আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর আরিচ কিংবা লিও দিতে পারবে। ভার্সিটিতে তাড়াতাড়ি গিয়ে ওদের সাথে কথা বলে জানতে হবে কালকের ঘটনা।
জ্যাক কথাগুলো বলে দ্রুত ওয়াশরুমে গেলো।
_________
এখন অপরাহ্ন। ভার্সিটি পাট চুকিয়ে শ্রুতিকে এখন প্রাইভেট সেন্টারে যেতে হবে। কিন্তু সে ভার্সিটির গ্যাটের সামনে দাড়িয়ে আছে।ভার্সিটি ছুটি দিয়েছে আরও আগে। স্টুডেন্ট আনাগোনা তাই একটু কম। কিন্তু শ্রুতি দাড়িয়ে আছে একজনার সাথে অধির আগ্রহে দেখা করার জন্য। ভার্সিটিতে আজকে দেরি করে আসার কারণে তার সাথে দেখা হয়নি।
শ্রুতি আশপাশ অবলোকন কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু পাচ্ছে না।ফোন দিয়েছিল, কিন্তু ফোন বন্ধ করা।
হঠাৎ শ্রুতির মনে আশার আলো জেগে উঠলো, জ্যাকের গাড়ি দেখে। জ্যাক গাড়িতে চড়ছে। শ্রুতি দৌড়ে জ্যাকের কাছে গেলো।
জ্যাক তখন গাড়ি স্টার্ট দিবে, শ্রুতি এসে জানালার কাচে টোকা দিল৷
জ্যাক বিরক্ত হয়ে তাকালো। কিন্তু শ্রুতিকে দেখতেই বিরক্ত সব উবে গেল৷ ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠল।
–জ্যাক আমাকে একটু ড্রপ করে দিবে। অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি।কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।প্রাইভেটও হয়তো শুরু হয়ে গেছি৷ প্লিজ একটু আমাকে দিয়ে আসো৷
–ওকে আসো। আমি ওইদিকেই যাচ্ছি। তোমাকে নামিয়ে দিবো।
শ্রুতি উচ্ছসিত হয়ে বলল,
–Thank you.
তাড়াতাড়ি গিয়ে জ্যাকের পাশের বসল। সে জ্যাককে মিথ্যে বলেছিল৷ তার জন্যই সে এতক্ষণ অপেক্ষার প্রহর গুনছিল৷ ভাবতেই পারেনি জ্যাক বিশ্বাস করবে।
১৫মিনিট বাদে শ্রুতি তার প্রাইভেট সেন্টারে পৌঁছে গেল।
জ্যাক গাড়ি ব্রেক করে বলল,
–এসে গেছি শ্রুতি। নামো৷
শ্রুতি ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
–তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো জ্যাক।
জ্যাক শ্রুতির বাচ্চামো কথা শুনে হাসলো। দুষ্টমির করে বলল,
–তাড়িয়ে দিচ্ছি কোথায়? তবে তুমি চাইলে আমার সাথেই থাকতে পারো?
শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে হালকা লজ্জা পেলো৷ তবুও এই জ্যাককেই তার ভালো লাগে৷ কতদিন পর আবার আগের মতো হাসতে দেখল।
–জ্যাক তোমার জন্য আমি একটা উপহার এনেছি।তোমার জন্মদিন কিছুই দিতে পারলাম না। উইশ ও করি নি। তার জন্য অনক সরি।
বলতে বলতে শ্রুতি ব্যাগ থেকে একটা রঙিন কাগজে মোড়ানো একটা বক্স বের করলো।
জ্যাক অবাক হয়ে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রুতি তাকে গিফট দিচ্ছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে গিফট পাচ্ছে এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!
শ্রুতি জ্যাকের অবস্হা দেখে হাসলো।
–ওরকম হা করে না তাকিয়ে থেকে খুলে দেখো তোমার পছন্দ হয়েছে কীনা?
জ্যাকের হাতে উপহারটা দিল৷ জ্যাক একবার শ্রুতির দিকে দৃষ্টিপাত করে খুলতে লাগলো।
জ্যাক প্রথমে গিফট পেপার টা খুলল৷ একটা বক্স এখন দৃশ্যমান। দেখেই বোঝা যাচ্ছে একটা ঘড়ির৷ জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতি চোখের ইশারায় বক্সটা খুলতে বলল।
জ্যাক বক্সটা খুলে হা হয়ে গেল৷ রোলেক্স সাবমেরিনার একটা লাক্সারি ঘড়ি। ঘড়িটা অনেক সুন্দর। ঘড়িটার উপরে স্টোন বসানো।
–জ্যাক তোমার কী ঘড়িটা পছন্দ হয়েছে? আমি আগে একা কখনো কিছু কিনি নি৷ ইনফেক্ট কিনতেও পারিনা৷ তোমার জন্য ফাস্ট একা গিয়ে কিছু কিনলাম। ভালো হয়নি তাই না?
জ্যাক ঘড়িটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো,
–অনেক সুন্দর হয়েছে ঘড়িটা৷This is the best gift in my life.
–পরে দেখো ঠিক হয়েছে কিনা?
জ্যাক শ্রুতির দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
–তুমি পড়িয়ে দেও।
শ্রুতি দ্বিমত না করে জ্যাকের হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
–জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। জীবনে এগিয়ে যাও। সব সময় সুখী থাকো। এই কামনা করি।
জ্যাক বলল,
–আর কিছু বলবে না?
–আর কী বলবো?
দেখো তোমার হাতে ঘড়িটা অনেক সুন্দর মানিয়েছে।
–হুম।
শ্রুতি নিজের ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলল,
–আচ্ছা আমি যাই। দেরি হয়ে গেলো অনেক।
বলেই শ্রুতি গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল৷
কিছুদূর যেতেই জ্যাক ডাক দিল,
— শ্রুতি?
শ্রুতি পিছন ফিরে হাতের ইশারায় বলল,কী?
–I love you.
শ্রুতি শুনেও না শোনার ভান করে বললো, কী বললে?
জ্যাক চেচিয়ে বলল,
–I love you.
শ্রুতি হাসলো। অতঃপর এক দৌড় দিয়ে সেন্টারে ঢুকল।
জ্যাক শ্রুতিকে দৌড়াতে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। খুব খুশি খুশি লাগছে৷ আজকে শ্রুতিকে ভালোবাসি বললে শ্রুতি রিয়েক্ট করেনি। সে হেসেছে। তার মানে শ্রুতিও তাকে ভালোবাসে। কালকের ঘটনা তাহলে সঠিক।
________
জ্যাক গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। মিসেস এলিজাবেথ ড্রইংরুমে টেলিভিশন দেখছিলেন। জ্যাক দেখে তা বন্ধ করে উঠে দাড়ালেন৷
জ্যাক সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে,তিনি পিছন থেকে বললেন,
–কী ব্যাপার জ্যাক? তোমাকে আজকে খুশি খুশি দেখাচ্ছে ? Something special happened?
জ্যাক নিচে নেমে নিজের মায়ের দুহাত ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
–হুম মম, খুব খুশি৷
–ওকে আমাকে থামাও। পরে যাবো তো।
জ্যাক থামালো। মিসেস এলিজাবেথ হাপাতে হাপাতে বললেন,
–তো এখন বলো কী হয়েছে? আমি শুনতে আগ্রহী?
জ্যাক উল্লাসিত হয়ে বলল,
–মম অবশেষে শ্রুতি আমাকে আমার প্রপোজ এক্সেপ্ট করেছে,, জানো কালকে আমাকে ভালবাসি বলেছে। তাই আমি খুব, খুব খুশি।
বলে আবার নিজের মায়ের হাত ধরে ঘুরাতে থাকলো।
মিসেস এলিজাবেথ প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে বললেন,
–শ্রুতি কী ওই মেয়েটার নাম?
–হুম মম।
–নামটা আনকমন। ও কী এখানেই থাকে?
–হুম মম। আমি যে ভার্সিটিতে পড়ি ওখানেই পড়ে৷
–ওহহ, তাহলে ভালো। একদিন বাসায় নিয়ে এসো।ওকে?
জ্যাক নিজের মমের গাল দুটো টেনে বলল,
–ওকে মম, নিয়ে আসবো।
বলেই পুনরায় গুনগুন করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো।
এদিকে মিসেস এলিজাবেথ নিজের ছেলেকে খুশি দেখে নিজেও খুব খুশি হলেন। কতদিন পর ছেলেটাকে আবার হাসিখুশি দেখলেন। মনে মনে ভাবলেন,
–জ্যাক নিশ্চিত মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসে।এরকম ভালোবাসা আজকাল দেখা যায় না,নিজের ভালোবাসার মানুষ খুশি হলে খুশী, সে দুঃখ পেলে দুঃখী৷ মেয়েটাও অনেক ভাগ্যবতী।
তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, একটাই টেনশন শুধু জ্যাকের বাবা যে মেয়েটাকে মেনে নিবেন না।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৭
বসন্ত মানেই সুন্দরের জাগরণ আর নতুনের জয়গান। ঝিরঝির হাওয়া, নির্মেঘ রোদ্দুর নতুন মাত্রা যোগ করে নিয়ে যায় নিসর্গে।বসন্তের নতুন হাওয়ায় মিশে যায় ফুলের শুভ্র সুবাস। সবুজ পত্ররাজি, ফুল, পাখি ও ঘাস মুখরিত হয়ে থাকে বসন্তেরই সকালবেলা৷
“পাকার হল” এ রয়েছে বিরাট বড় লাইব্রেরি। লাইব্রেরিটা বিভিন্ন বইয়ের ভান্ডারে সমৃদ্ধ। অনেক বৃহৎ৷ আবার এই লাইব্রেরি থেকে দেখা যায় হলের পিছন দিকের দৃশ্যমান জায়গাগুলো। সেইখানে বিচিত্র ধরণের, বিচিত্র রঙের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। বাতাসের সাথে ফুলের সেই সুগন্ধে পুরো লাইব্রেরির গন্ধে মৌ মৌ করে।
শ্রুতি লাইব্রেরি তে ঢুকল। কিছু প্রয়োজনীয় নোট করতে হবে তাকে৷একহাত হাতে তার ব্যাগ আর একহাতে তার একপিস হ্যাম বার্গার। সকালে ব্রেকফাস্ট করে আসেনি বলে ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। একসাথে দুটো কাজ হবে খাওয়া হবে, নোট করাও হবে। পুরো লাইব্রেরিটা নিজের অক্ষি দিয়ে একবার অবলোকন করল।কেউ তার দিকে তাকায় নি। কিছু স্টুডেন্ট আছে। তারাও তাদের মতো ব্যস্ত।কেউ পড়ছে, কেউ সেল্ফে বই খুঁজতেছে, আবার কেউ বই থেকে প্রয়োজনীয় নোট টুকে নিচ্ছে৷ শ্রুতি সেইসবে খেয়াল না দিয়ে নিজে গিয়ে জানালার পাশের একটা চেয়ারে বসলো।টেবিলের উপরে বার্গারটা রাখল। মন ভরে একটা নিঃশ্বাস নিল। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখল নানারকমের ফুলে সমৃদ্ধ সেই বাগানি৷এটি নিঃসন্দেহে কারো মন নিমিষেই কেড়ে নিবে। অতঃপর নিজের ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ টা বের করে টেবিলের উপরে রাখলো।
প্রয়োজনীয় কিছু বই নিয়ে আসলো সেল্ফ থেকে।চেয়ারে বসে ল্যাপটপটি ওপেন করল। বইয়ের নির্দিষ্ট অনুশীলনটি বের করে নোট করা শুরু করলো।
একবার বার্গারে একটা কামড় দিচ্ছি আর একবার বই পড়ে পড়ে টাইপিং করছে৷ শ্রুতি নিজের অবস্হা দেখে মনে মনে বললো,
–আহ, শ্রুতি তুই কতো ব্রিলিয়ান্ট!তোর মতো স্টুডেন্ট কী আছে?আশেপাশে তাকিয়ে দেখ সবাই একটা কাজই ই করছে৷ আর তুই একসাথে তিনটার মতো কাজ করছিস। খাচ্ছি, পড়ছিস, নোট করছিস। এরকম সব কাজ ত্রিপল ভাবে করলে তোর জীবনের তিনের দুই অংশ সময় থেকে যেতো।
নিজের কথা নিজে বলেই সে হাসলো।এসব চিন্তা বাদ দিয়ে শ্রুতি নোট করায় মনোনিবেশ করলো। একেবারে তাতেই বিভোর হয়ে গেল। মাঝে মাঝে কোন ফাঁকে বার্গারে কামড় দিচ্ছে না দিচ্ছে তার ও ঠিক নেই।
–শ্রুতিই
নামটায় আরও অনেক খানি টান দিয়ে কর্ণের কাছে এসে কেউ ফিসফিস করে বললো। শ্রুতি এতই মনোযোগ দিয়ে কাজ করছিল যে নিজের কানের কাছে নামটা শুনে আতঙ্কিত হয়ে গেলো। বুকটের ভিতরে কাঁপুনির সৃষ্টি হলো৷ হৃৎস্পন্দনের গতি এতো বেড়ে গেল মনে হয় এখনি হার্টফেল করবে। হঠাত্ ভয় পেলে এরকমই হয়। শ্রুতি নিজের বুকে থু থু দিয়ে বললো,
–‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
শ্রুতি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখলো জ্যাক কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শ্রুতির মন চাচ্ছে জ্যাককে ঠাস ঠাস কয়েক চড় মারতে। এইভাবে কেউ ডাকে। শ্রুতি কোনো কথা না বলে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
জ্যাক কৌতুহলী হয়ে বলল,
–শ্রুতি তুমি একটু আগে বুকে থু থু দিয়েছো? ইয়াক। আরও কী কী বললে যেনো? এরকম করলা কেন ?
শ্রুতি জ্যাকের দিকে না তাকিয়ে বলল,
–হঠাৎ ভয় পেলে বুকে থু থু দিয়ে বলতে হয় ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপমুক্তির কোনো পথ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ইবাদতের কোনো শক্তি নেই’।
জ্যাক, ওওওও বলে একটা টান দিয়ে বলল,
–এটা ইসলাম ধর্মে করতে হয়?
শ্রুতি একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। নিজের পড়ায় মন দিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
–তুমি আমাকে অনেক ভয় পাইয়ে দিয়েছো। এরকম কানের কাছে হঠাৎ এসে কিছু বলবা না।নাহলে আমি হার্টফেল করে মারা,,,,
শ্রুতির কথা শেষ না হতেই জ্যাক শ্রুতির ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল রেখে বলল,
–চুপ, একবার এসব কথা যদি বলছো তাহলে তোমার খবর আছে। আমি মজা করেছি৷ তাই বলে এরকম কথা বলো কেন?
শ্রুতির কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
–আমি থাকতে তোমার কিছুই হবে। আমি সংগ্রামী প্রেমিকের মতো প্রতিটা মুহূর্ত সব বিপদ থেকে তোমাকে আগলিয়ে রাখবো। কোনো কিছুই তোমাকে ছুঁতে পারবে।
কথাগুলো শ্রুতির মনটা ছুয়ে গেল৷ কতটা মধুর, কতটা নেশালো কন্ঠস্বর। কিন্তু জ্যাক জড়িয়ে ধরায় শ্রুতির মনে হলো তার শরীরে কারেন্টে লেগে রয়েছে। শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। অজানা একটা উত্তজনায় বুকের হৃৎস্পন্দনের ভিতর আবার কাঁপুনি হচ্ছে।
শ্রুতি জ্যাকের গলার ফাক দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু স্টুডেন্ট হা করে, কেউ ঈর্ষান্বিত দৃষ্টিতে, আবার কেউ একপলক তাকিয়ে নিজের কাজ করছে।যেনো কিছু হয়নি এমন। যাইহোক শ্রুতির খুব লজ্জা পেল।লাল হয়ে গেছে পুরো। শ্রুতি লজ্জিত স্বরে বললো,
–জ্যাক ছাড়ো।
জ্যাক দ্বিমত না করে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
শ্রুতি পরে গেল অস্বস্তিতে। লজ্জা, অস্বস্তি,এক মধুর অনুভূতি প্রবল বেগে হানা দিলো তার বুকে।
লজ্জায় রঙ্গিন হয়ে আবার নিজের কাজ শুরু করলো।এখানে এক প্রকার বাধ্য হয়ে থাকছে। অনেক গুলো চ্যাপ্টার এর নোট করা বাকি।
–সরি শ্রুতি।
শ্রুতি জ্যাকের মুখে সরি শুনে তার দিকে তাকালো। কিন্তু চোখে চোখ মিলাতে পারলো না। তার আগেই নামিয়ে নিল। লজ্জা লাগছে প্রচুর।
জ্যাক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
–খুব সরি, শ্রুতি। তুমি মানা করা সত্ত্বেও আবার তোমার কাছে গিয়েছে। আসলে কী বলোতো তোমার কাছে গেলে নিজেকে কেমন যেনো উন্মাদ উন্মাদ মনে হয়!নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। খালি মনে হয়, কবে যে তোমাকে বিয়ে করবো!
কথা গুলো বলে জ্যাক ঠোঁট কামড়ে হাসতে হাসতে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলো।
জ্যাকের এই লাগামহীন কথা শ্রুতির লজ্জা আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো৷ নিজের ব্যাগ গুছানো শুরু করলো।আজকে আর পড়া হবে না। মনোযোগটা আর নেই।
সব কিছু গুছিয়ে শ্রুতি উঠতে নিলে ঘটলো এক বিপত্তি। কারা যেন এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো তার উপর। শ্রুতি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে। এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা কি শুধু তার সাথেই ঘটে সে বুঝে না। লিলি শ্রুতিকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যে শ্রুতি টেবিলটার কারণে পরে যায়নি। শ্রুতি চোখটা পিটপিট করে খুলে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো। লরি, মার্ক, জুলিয়া তাকে ঘিরে রেখেছে। শ্রুতি কারণটা বুঝলো না এখানে এরকম এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কারণ।
জুলিয়া বলল,
–আরে লিলি ছাড়ো শ্রুতিকে, দেখো ও পরে যাবে তো। ছাড়ো।
জুলিয়ার কথা শুনে লিলি শ্রুতিকে ছেড়ে দিলো।কিন্তু কিছু বলতে নিলে আর পারলো না। পিছন থেকে একজনার কর্কশ কন্ঠ শুনতে পেলো।
–লাইব্রেরি টাকে তোমরা কী পেয়েছো? চিত্কার চেচামেচি করছো কেনো? এটা লাইব্রেরি চিত্কার করার ইচ্ছে থাকলে বাহিরে গিয়ে করো৷ যাও বের হও৷
সবাই পিছন ফিরে তাকিয়ে সাদাচামড়ার লম্বাদেহী মানুষকে দেখতে পেলো৷ত্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ইনি লাইব্রেরিয়ান।
শ্রুতি একটা ঢোক গিলল। এনাকে খুব ভয় পায় শ্রুতি। সবসময় গম্ভীর, আর একটু টু শব্দ শুনতে পেলেই রাগরাগি করে৷ পাশে ফেরি দেখলো জুলিয়া, লিলি, লরি সহ সবাই ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ জুলিয়া লিলির কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
–তোমার জন্য সব হয়েছে?এরকম না করলেও পারতে।
লিলি উল্টো বললো,
–তুমি তো এসে আমাকে শ্রুতির ঘটনা বললা। আর এখন সব দোষ আমার। হুম?
এর মধ্যে লাইব্রেরিয়ান আবার হাক ছেড়ে বললেন,
–কী গুজরগুজর ফুসুরফুসুর করছো? বের হও এখনি৷ লাইব্রেরির পরিবেশ নষ্ট করতে আসো৷ বের হও।
শ্রুতি পরিস্থিতি খারাপ বুঝে নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে গেল। পিছন পিছন ওরাও ধীরে ধীরে বের হলো।
শ্রুতি ক্লাসে এসে নিজের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে বিড়বিড় করে বলল,
–জীবনে শান্তি নেই, এই একজন ওই আর একজন। এখন আবার এরা এসে প্যাক প্যাক করবে।
হলোও তাই একে একে সবাই এসে শ্রুতিকে পুনরায় ঘিরে ধরল।
লিলি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
–শ্রুতি তুমি তো একটু কিছু বললে করলেই লজ্জায় লাল হয়ে যাও? তাহলে আমাদের না জানিয়ে পিছনে পিছনে এতোদূর এগিয়ে গেলে। রিলেশনে আছো এটা আমাদের থেকে লুকালে কেন হুম?
লিলির কথা শুনে শ্রুতি হা করে তাকালো।
–কিসের রিলেশন? কার সাথে?
জুলিয়া বলল,
–আবার লুকাচ্ছো? আমরা কিন্তু সব দেখেছি।তাও মিথ্যা বলছো? তুমি জ্যাকের সাথে রিলেশনে আছো?সত্যি করে বলো।
শ্রুতি লজ্জায় মাথা হেট করে রইল৷ লাইব্রেরিতে যা হয়েছে সব ওরা দেখছি৷আল্লাহ! এখন কী হবে?
–তোমরা যা ভাবছো, আসলে ওরকম কিছুই না। জ্যা,,
আর কিছু বলতেই পারলো না তার আগেই,
–হ্যাঁ, আমরা রিলেশনে আছি৷ আমরা একে অপরকে লাভ করি৷ ও লজ্জা পেয়েছে তাই কিছু বলতে পারছে না?
শ্রুতি দরজার সামনে তাকালো। জ্যাক হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো বলছে।
লিলি বলল,
–শ্রুতি তুমি এটা ঠিক করো নি আমাদের না জানিয়ে?আমাদের কী ফ্রেন্ড মনে করো না?যাইহোক তুমি তো আবার লজ্জাবতী? কিন্তু এখন আর ছাড় নেই৷ আমাদের সবাইকে কিন্তু ট্রিট দিতে হবে।রাজি সবাই?
সবাই চিত্কার দিয়ে বলল, হুম। দিতে হবে।
জ্যাক হেসে বলল,
–ওকে ওকে, পেয়ে যাবে।
অতঃপর জ্যাক নিজের ঘড়ি দেখতে দেখতে আবার বলল,
–শ্রুতি আসো এক জায়গায় ঘুরতে যাবো।
শ্রুতি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। সব কিছু ফাস করে দিল জ্যাক সবার সামনে।
জ্যাক পুনরায় বলল,
–শ্রুতি আসো তাড়াতাড়ি।
জুলিয়া পাশ থেকে খোচা মেরে বলল,
–আরে শ্রুতি যাও। তোমার লাভার ডাকছে ডেটিং করতে যাবে বলে ।যাও তাড়াতাড়ি।
শ্রুতি দাড়াতে দাড়াতে বললো,
–হ্যাঁ যাচ্ছি। আজকে আমাকে নিয়ে মজা নিচ্ছো একদিন আমারো সময় আসবে৷
শ্রুতি দ্রুত হেঁটে ক্লাস থেকে বের হলো৷ পিছন থেকে ওদের হাসির ঝংকার শুনতে পেলো।
———–
জ্যাক গাড়ি চালাচ্ছে। আর শ্রুতি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে৷
জ্যাক বললো,
–ওরকম বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন?
শ্রুতি চোখ ছোট ছোট করে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে বলল,
–তুমি সবার সামনে রিলেশনের কথা বলে ঠিক করো নি জ্যাক।
জ্যাক হেসে বললো,
–তো কী হয়েছে? এটা অনেক স্বাভাবিক।গোপন কথা সবসময় লুকিয়ে রাখতে নেই। কিছু কিছু ওপেন করে দিতে।
জ্যাকের এই সব কথায় শ্রুতির রাগে কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–তো এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে? আমার প্রাইভেট সেন্টারে যেতে হবে৷
–তোমার প্রাইভেট শুরু হতে আরো অনেক সময় বাকি৷ ১ঘন্টার ও বেশি। তাই টেনশন ফ্রি থাকো৷
শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে হাসবে না কানবে বুঝতেছে না। অসহায় হয়ে বললো,
–তো আমাকে এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
জ্যাক হেসে বলল,
–সারপ্রাইজ।
শ্রুতি প্রশ্নাত্মক চাহনিতে বলল,
–কিসের সারপ্রাইজ?
–গেলেই দেখতে পাবে?
শ্রুতি রাগে, দুঃখে বাইরে তাকালো৷এই মুহূর্তে জ্যাকের প্রতি তার খুব রাগ উঠতেছে।পানিতে চুবালেও রাগ কমবে না।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৮(ধামাকা)
বিশাল এক বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে শ্রুতি৷ বাড়ির চারপাশে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাউন্ডারি করা। গেটের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পরবে তিনতলা বিশিষ্ট বাড়িটা বাহির। যেটা দেখতে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসের থেকে কম কিছু নয়৷ তার চারপাশ ঘিরে রয়েছে বাগান। বিশাল ইয়ার্ড। দুইপাশে সবুজ গাছপালা; পাতাগুলোও ছাটাই করা, দুইপাশে বিস্তৃত জায়গাজুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা।বাগান টা বাড়ির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছি । নানারকম ফুলের গাছ সারি সারি ভাবে লাগানো। যেখানে রয়েছে টিউলিপ,ব্লুবেলস,হায়াসিন্হ,নার্সিসি, লিলি, ড্যাফোডিল সহ আরও হরেক রকম। এর একপাশে রয়েছে কৃত্রিম ঝরণা।
শ্রুতি দেখলো কয়েকজন মালি বাগানের ফুল গাছ গুলোয় পানি দিচ্ছে, পরিচর্যা করছে।
বাড়িটার এতো সৌন্দর্য দেখে শ্রুতি বাক্যহীন।তার চাচার বাড়ি থেকেও দ্বিগুণ এর সৌন্দর্য, কারুকার্য। বাংলাদেশের অনেক ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখেছি এটা তার থেকে সম্পুর্ণই আলাদা৷ পরক্ষণেই শ্রুতি ভাবলো। জ্যাকরা তো অনেকে বড়োলোক৷ বিলিয়নিয়ারদের বাড়ি বুঝি এরইরকম হয়।
বিভোর হয়ে সব কিছু দেখছিল শ্রুতি। হালকা ঝাঁকুনিতে শ্রুতি নড়েচড়ে উঠলো। পাশ ফিরে জ্যাকের দিকে তাকালো।
ততক্ষণাত্ জ্যাক বলল,
–এখানেই কী দাড়িয়ে থাকবে? চলো ভিতরে।
বলেই জ্যাক শ্রুতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বাড়ির ভিতর। শ্রুতির এখনও বুঝতে পারছে না কেনো জ্যাক তাদের বাড়িতে হঠাৎ নিয়ে আসল। জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু জ্যাক কিছুই তাকে বলেনি। স্বাভাবিক ভাবে চুপ করে ছিল।
বাড়ির ভিতর ঢুকে শ্রুতি যেনো আরও হতবাক হয়ে গেলো। ড্রইংরুমে বিভিন্ন লাক্সারি আসবাবপত্র। সব কিছু চকচক করছে। মনে হয় স্বর্ণে মোড়ানো সব কিছু।
জ্যাক শ্রুতিকে একটা সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
–এখানে তুমি বসো। আমি মমকে ডেকে আনছি।
বলেই সে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে গেলো৷ শ্রুতি সেখানেই বসে রইল। শ্রুতি পুরো বাড়িটা আঁখিপাত করতে লাগলো। হঠাৎ একটা শ্রুতির চোখ একটা জিনিসে আঁটকে গেলো। দেয়ালে তিন সদস্যের বড়সড় একটা রঙিন ছবি টানানো৷এটা হয়তো জ্যাকের পরিবারের ছবি৷ শ্রুতি ছবিটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।ছবিটার মাঝখানে জ্যাক আর দুপাশে জ্যাকের মা বাবা। জ্যাক তার বাবার কোলে আছে।
হঠাৎ শ্রুতি সিড়ি দিয়ে কারো কন্ঠ শুনে সে দিকে তাকালো৷দেখতে পেলো জ্যাক তার মাকে নিয়ে নামছে। শ্রুতি উঠে দাড়ালো৷ মহিলাটি তার দিকে তাকিয়ে আছে।জ্যাকের মমকে দেখলে বোঝা যায় না যে তিনি জ্যাকের মা। মনে হচ্ছে একজন কিশোরী৷ একদম ফিট।বয়সের কোনো ছাপ পরেনি।ভদ্র মহিলাটি তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন শ্রুতি উলঙ্গ হয়ে দাড়িয়ে আছে। শ্রুতির বেশ অস্বস্তি হতে লাগলো।জ্যাক তার মমকে নিয়ে শ্রুতির কাছে আসতেই শ্রুতি ঘামতে শুরু করলো। তার মন চাচ্ছে দৌড়ে পালাতে। জ্যাক হাসিমুখে বলল,
–মম, তুমি শ্রুতিকে বাসায় নিয়ে আনতে বলেছিলে না? এই হলো শ্রুতি।
জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলল,
–শ্রুতি এই হলো আমার মম। মিট হার!
শ্রুতি জ্যাকের কথাশুনে মুখে নকল হাসিরেখা টেনে বলল,
–হ্যা,লো আন্টি।
জ্যাকের মা শ্রুতির দিকেই তাকিয়ে আছে। শ্রুতির মনে হলো তাকে নিয়ে কোনো প্রদর্শনী করা হচ্ছে। এই সব দোষ জ্যাকের। হুটহাট করে বাড়িতে নিয়ে আসবে জানতো কে? আর জানলে এই শ্রুতি জীবনেও আসতো না। ব্যাটা খবিশ। মনে মনে শ্রুতি জ্যাককে আরও কয়েকটা গালি দিলো।
জ্যাক নিজের মমের তাকানো দেখে বলল,
–মম শ্রুতি! মিট করো।
জ্যাকের কথা শুনে মিসেস এলিজাবেথ হুম হুম করলেন। ওনাকে দেখে শ্রুতি বুঝলো উনি এতক্ষণ তাকে নিয়ে গবেষণা করতেই বিভোর ছিলেন।
হঠাৎ মিসেস এলিজাবেথ শ্রুতিকে অবাক করে তার গাল টেনে বললো,
–বাহ, ভারি মিষ্টি তুমি।জ্যাক তোমার কথা অনেক বলেছে।আমার তো মাথাই খারাপ করে দেয় তোমার কথা বলে। আমি ওকে কয়েকদিন ধরে তোমাকে বাসায় আনার কথা বলেছি। অবশেষে আনলো।
বলেই তিনি হালকা হাসলেন। অতঃপর বললেন,
–দাড়িয়ে আছো যে বসো । জ্যাক তুমিও বসো। আমি তোমাদের জন্য হালকা খাবার নিয়ে আসছি।
বলেই তিনি কিচেনে এর দিকে চলে গেলেন। তিনি যেতেই
শ্রুতি জ্যাকের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো।ত্রুর স্বরে বললো,
–এই ছিলো তোমার সারপ্রাইজ?
জ্যাক মাথা চুল গুলো একহাত দিয়ে ঠেলে বললো,
–হুম, পছন্দ হয়নি?
শ্রুতি বিড়বিড় করে বলল,
–সারপ্রাইজ না ছাই। এরকম সারপ্রাইজ আর জীবনে যেনো না পাই।
জ্যাকের শ্রুতির কথা বুঝতে না বললো,
–কী বললে? শুনতে পারি নি?
শ্রুতি অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
–নাথিং।
শ্রুতির কথা শেষ হতেই জ্যাকের ফোনে কল আসার শব্দ শুনতে পেলো। জ্যাক পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করে,
–হ্যা, এলিশা বলো।
ওপাশ থেকে কী বললো শ্রুতি তা শুনতে পেলো না।
জ্যাক উঠতে উঠতে বললো,
–ওকে আমি আসছি৷ একটু ওয়েট করো৷
বলেই কলটা কেটে দিয়ে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বললো,
–আমাকে একটু ভার্সিটিতে যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তুমি মমের সাথে কথা বলো। আমি কিছুক্ষণ পরে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতির কাঁদো কাঁদো অবস্হা।জ্যাকের মাকে সে চিনে না ঠিক ভাবে, আজকে প্রথম দেখলো। তার সাথে থাকবে কীভাবে জ্যাক না আসা পর্যন্ত?শ্রুতি দাড়াতে দাড়াতে বললো,
–না জ্যাক, আমিও তোমার সাথে যাবো।
জ্যাক শ্রুতিকে আশ্বস্ত করে বলল,
–আরে, আমি একটু পরই এসে নিয়ে যাবো। মমের সাথে কথা বলো। কিছুই হবে না।
শ্রুতি দ্বিমত করে বললো,
–না জ্যাক প্লিজ৷ তোমার সাথে যাবো আর আরএকদিন আসবো।
জ্যাক কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিসেস এলিজাবেথ ট্রেতে খাবার নিয়ে আসতে আসতে বললেন,
–জ্যাক তুমি যাও, শ্রুতি আমার সাথে থাকুক৷ তোমার কাজ শেষ করে আসো।
জ্যাকের মায়ের কথা শুনে শ্রুতি করুণ দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাক শ্রুতির ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
–শ্রুতি ভয় পাচ্ছো কেন? স্বাভাবিক হও৷ মম অনেক ভালো মানুষ। ফ্রি হওয়ার চেষ্টা করো। আমি আসছি।
বলেই জ্যাক দ্রুত চলে গেলো।
মিসেস এলিজাবেথ শ্রুতির অবস্হা বুঝতে পারলেন। তিনি খাবারের ট্রে টা টেবিলের উপরে রেখে শ্রুতিকে বসতে বললেন।নিজেরও শ্রুতির পাশে বসলেন।
–শ্রুতি তুমি বাংলাদেশ থেকে এসেছো?
শ্রুতি মিসেস এলিজাবেথ এর কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো।এ কি শুনলো? নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার? মিসেস এলিজাবেথ বাংলা বলছেন । তিনি বাংলা জানলেন কীভাবে? হা করে তাকিয়ে থাকলো তার দিকে। যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।
মিসেস এলিজাবেথ শ্রুতির অবস্হা থেকে হাসলেন,
–এতো অবাক হওয়ার কিছুই নেই? আমিও বাংলাদেশের নাগরিক৷
শ্রুতি এবারও অবাক। দফায় দফায় অবাক হচ্ছে। তবে শ্রুতির প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল ওনাকে দেখে। অনেকটা বাংলাদেশীদের মতোই চেহারা৷চোখের মনি স্বচ্ছ কালো, ঘন কালো চুল, ফর্সা গড়নের শরীর । চোখ গুলো যেনো কোনো শিল্পীর রং তুলি দিয়ে আকা। এক অসাধারণ সুন্দরী রমনী। যে কাউকে মুগ্ধ করে ফেলবে।
–আপনি বাংলাদেশের মেয়ে?
–হুম।এর অনেক ইতিহাস আছে। তুমিই তো পরবর্তীতে এ সংসারে দায়ভার নেবে। তেমার জানার অধিকার আছে। যদি তুমি জানতে চাও তাহলে বলবো?
শ্রুতি লজ্জায় মাথা নিচু করে মাথা নাড়ালো।
মিসেস এলিজাবেথ বলতে শুরু করলেন,
–আমার বাবার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। আমার ২ বোন আর একভাই ছিলো। আমি বড় ছিলাম। বাবার বড় ব্যবসা ছিল। ছোট খাটো একটা পরিবার ছিল আমার।সুখে পরিপূর্ণ ছিলো।কোনোকিছুরই অভাব ছিলো না। আমি যেমন ছিলাম রুপবতী তেমনি ছিলাম লেখাপড়ায় ভালো। দশম শ্রেণিতে যখন পড়ি তখন থেকেই বড় বড় পরিবার থেকে প্রস্তাব আসতে শুরু করে। কিন্তু আমার কাউকে পছন্দ হতো না। আর বাবাও ফিরিয়ে দিতো। তার ইচ্ছা ছিলো ছেলে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তারপর বিয়ে। আমার পাত্রদের ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ হলো আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করতাম। আর সেই হলো তোমার আংকেল আই মিন জ্যাকের বাবা। সেও বাংলাদেশী। ভালোই দিন কাটছিলো আমাদের। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে দেখা করা, ঘুরতে যাওয়া। কিন্তু একদিন ঘটলো এক অঘটন। আব্বা কিভাবে যেনো জেনে গেলো তোমার আংকেল এর কথা?আমি স্কুল থেকে আসার পর বাবা আমাকে অনেক মারলো৷ তোমার আংকেল সাথে কোনো মতেই বিয়ে দিবেন। তোমার আংকেল এর ফ্যামিলি ছিল গরিব। আর তারা ছিল খ্রিস্টান ধর্মী। ফলে কেউ মানলো না। আর সেই যুগে ভালোবাসার কোনো দাম ছিলনা৷ আর এই সব প্রেম -ভালোবাসার নাম শুনলেই মানুষ বলতো নষ্টা।নষ্টামি করে। সেই রকম আমাকেও সবাই বলা শুরু করলো নষ্টা মেয়ে। বাহিরেই বের হতে পারতাম না।আব্বার মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেছিল। তবুও মাঝে মাঝে তোমার আংকেল এর সাথে যোগাযোগ রাখতাম, চিঠি লিখতাম। কিন্তু একদিন আবার ধরা খেয়ে গেলাম।পরিবারের সবাই আমার বিরুদ্ধে চলে গেল। এবার আর কেউ ছাড়লো না। পাত্র দেখা শুরু করলো৷ আর আমাকে রাখা হলো ঘর বন্ধি৷ তোমার আংকেলের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।
এই টুকু বলে তিনি থামলেন। শ্রুতিও গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগল।
তিনি আবার বললেন,
–আমার অবস্হা হয়ে গেছিলো খারাপ৷ আমি তোমার আংকেল কে খুব ভালোবাসতাম। তাকে ছাড়া কীভাবে থাকবো?প্রতিদিন ঘরে বসে অনেক কাঁদতাম। কিন্তু কেউ আসতো না৷ এভাবে দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসল৷ আমি পাত্রকে পর্যন্ত দেখিনি৷ আর কীভাবে বিয়ে করে সারাজীবন কাটাবো? আমি বিয়ের দিনের আগের রাতে ঘরে কাঁদছিলাম। হঠাৎ দরজায় করাঘাত হলো। এতো রাতে কে হতে পারে আমি ভাবতে লাগলাম৷ কারণ কেউ আমার রুমে এতো রাতে আসতো না। এভাবে অনেকক্ষণ দরজা ঠকঠক করতে লাগলো৷ আমি অবশেষ চোখটা মুছে দরজাটা খুলতে দেখি আমার ছোট বোন, ও তখন ৮এ পরে।ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম এতো রাতে আমার ঘরে কী? ও আমার কথার উত্তর না দিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতর ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। সেদিন ওর কারণে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পেরেছিলাম।আমি আর তোমার আংকেল পালিয়ে ঢাকা শহরে আসি৷ দুই দিনের ভিতর তোমার আংকেল ধর্ম চেঞ্জ করে বিয়ে করি। যখন আব্বা এই খবর জানতে পারে তখন আমাকে তারা ত্যাজ্য মেয়ে বলে তাড়িয়ে দেন। তার নাকি প্রথম মেয়ে মারা গেছে। শ্বশুর বাড়িতে গেলাম তারাও মেনে নিল না। এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই বাড়ির সাথে। খোজ নিয়েছিলাম এখানে এসে অনেক কিন্তু কারো খবর ই পাই নি।
এই টুকু বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পরলেন। শ্রুতি বুঝতে পারছিল না কীভাবে শান্ত না দিবে? একটা মেয়ের কাছে পরিবার কত গুরুত্বপূর্ণ সে সেটা এখানে এসে বুঝতে পারছে। একটা মেয়ের কাছে স্বামীর পরই সবচেয়ে আপনজন হলো তার পরিবার৷
তবুও শ্রুতি বললো,
–প্লিজ আপনি কাঁদবেন না? একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু শ্রুতির মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। নিজেকে আর দমিয়ে না রাখতে পেরে বললেন,
–আন্টি আপনি যে বললেন আপনারা মুসলমান, কিন্তু জ্যাক যে বলে সে খ্রিস্টান।বুঝলাম না ঠিক?
মিসেস এলিজাবেথ নিজের চোখের পানি মুছে বললেন,
–বাড়ির কেউ না মেনে নেওয়ায় আমরা পুনরায় ঢাকা আসলাম৷ আমার এক ছোটবেলার বান্ধবীর বাসা ছিল এখানে। একসাথে পড়েছিলাম ছোট বেলায়। পরে ওরা ঢাকায় চলে গিয়েছিল। ওদের বাসায় উঠলাম। ওকে সব ঘটনা খুলে বলার পর বললো এখানে না থাকতে। তাহলে আব্বা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ওর সহায়তা আমরা দুজন আমেরিকার ভিসা, পাসপোর্ট রেডি করলাম৷ কয়েকমাস চলে গেল৷এরপর এয়ারপোর্টের দিন আসলে আমরা উড়াল দিয়ে আমেরিকায় চলে আসলাম৷আমেরিকায় এসে হলো আর এক বিপত্তি। সেই সময় আমেরিকায় বেশিক্ষণ মানুষ ছিল খ্রিস্টান। সব জায়গায় ছিল তাদের অধিকার। ফলে কয়েকমাস তোমার আংকেল কোনো কাজ যোগাড় করতে পারলো না। অবশেষে আর উপায় না পেয়ে আমি আমার গহনা গাটি সব বিক্রি করে দিলাম। এতে যা টাকা পেলাম তা দিয়ে তিনি ছোট খাটো একটা ব্যবসা শুরু করল৷ কিন্তু তা বেশিদিন স্হায়ী হলো না। এদেশের মানুষ তা কেড়ে নিলো। আমরা নিউইয়র্ক ছিলাম। আমাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হলো আমরা মুসলমান বলে। আমরা চলে আসলাম এই ওয়াশিংটনে। কিন্তু এসে আবার অসহায় হয়ে পড়লাম। না ছিল টাকা না ছিল ঘর। ফুটপাতেই কয়েকদিন কাটিয়ে দিলাম। পরে তোমার আংকেলের সাথে হঠাৎ একদিন জেসিকার বাবার পরিচয় হলো।তার তখন বড় বিজনেস ছিলো৷ এখন তার থেকেও শতগুন বড়। তিনি তাকে তার অফিসে চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে আমরা মুসলমান। বলিও নি। যদি আবার চাকরিটা চলে যায় এই ভয়ে।সেটাই ছিল আমাদের শেষ সম্বল। আমার নাম ও চেঞ্জ করে দিলাম। জেসিকার বাবা তোমার আংকেলের কাজ কর্মে খুশি হয়ে তাকে পার্টনারশিপের আইডিয়া দিলেন। নতুন বিজনেস শুরু করতে যা টাকা লাগবে তা তিনি দিবেন। তোমার আংকেল ও খুশি হলো। তার প্রস্তাবে রাজি হলো। নতুন বিজনেস শুরু করার কয়েক বছর পর জ্যাক হলো।জ্যাকের কয়েক মাস পরই জেসিকা হলো। এরপর থেকে একের পর এক সাফল্য পেয়ে তোমার আংকেল এই জায়গায় এসেছে। যখন তোমার আংকেলের বিজনেসটা ভালো পজিসনে পৌছালো তখন জেসিকার বাবা প্রস্তাব করেছিলেন জ্যাক আর জেসিকার একসাথে বিয়ে দিবেন। এতে দুজনের বন্ধুত্ব আরও গাড়ো হবে। তোমার আংকেল বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন? নিজের বন্ধুকে কী করে বলবেন যে সে মুসলমান, আর তারা খ্রিস্টান ?এতে এতো বছরের বন্ধুত্ব তো ভেঙে যাবে। পরে তিনি অনেক ভেবে ঠিক করলেন বন্ধুর বিশ্বাস ভাঙবেন না। যা হবে পরে দেখা যাবে। ফলে সেই সময় ই তাদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো৷ কিন্তু তুমি জ্যাকের জীবনে এসে সব পাল্টে দিলে।
শ্রুতি প্রশ্নাত্মক চাহনিতে বলল,
— কী?
–জ্যাকের বার্থডে পার্টিতে তো তুমি আসো নি৷ তাই হয়তো জানো না? সেদিন জ্যাক পার্টিতে জেসিকার মায়ের সামনে বলেছে সে জেসিকাকে বিয়ে করতে পারবে না। এনগেইজমেন্টের কথা ওকে বলেনি কখনো। কিন্তু কীভাবে জানলো আমি জানি না । তুমি কী ওকে কিছু বলেছিলে নাকি?
শ্রুতি হা সূচক মাথা নাড়ালো৷ মিসেস এলিজাবেথ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে বললেন,
–কীভাবে তুমি এইসব জানলে?
শ্রুতি এলিশা যা বলেছিল, সেদিন রাতের সব ঘটানা একে একে খুলে বলল।
সব শুনে মিসেস এলিজাবেথ বললেন,
–ওহহ এই ব্যাপার। জ্যাক এসে যখন জিজ্ঞেস করল যে জেসিকার সাথে তার এনগেইজমেন্ট হয়েছে কীনা? তখন আমরা খুব অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবে ও জানল কীভাবে?আনরা ওকে এইসব কথা বলিনি। কারণ আমরা চাইনি জ্যাক একটা খ্রিস্টান মেয়েকে বিয়ে করুক৷ পরে জ্যাক সবার সামনে তোমাকে ভালোবাসার কথা বলে বলল, ও জেসিকাকে বিয়ে করতে পারবে না।এতে জেসিকার মার খুব অপমান বোধ হয়। সেদিন জেসিকার মা তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলেন৷ আমার মনে হয় জেসিকার মা -বাবা এসব শুনে কখনো বিয়ে দিবেন না। কারণ তারা আমাদের জানা মতে কারো অপমান সহ্য করে কিছু করে না। এতো বছরের সম্পর্কে যা বুঝেছি। আর এতোদিনে এও জেনেছি জেসিকার বাবা ভালো মানুষ না।তার পথে কেউ আসলে সরিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। তোমার আংকেল এসব কথা শুনে তার সাথে এখন মাঝে মাঝে কথা বলেন। ওতোটা গাড়ো বন্ধুত্ব নেই এখন। কিন্তু কিছুই বলে পারে না। যে যার মতো আছে তাকে তার মতো থাকতে দেও৷ জ্যাকের কথা শুনে আমি আর তোমার আংকেল মনে মনে খুশি হয়েছিলাম। তাহলে আর জ্যাক আর জেসিকার বিয়ে হচ্ছে না।তোমার আংকেল ও বেঁচে গেলো৷ কারো বিবাস ও ভাঙ্গা হলো না৷ পুরো ক্রেডিট টাই তোমার। অনেক ধন্যবাদ।
শ্রুতি হালকা হেসে ফেলল৷ অতঃপর বলল,
–তাহলে আপনার আর আংকেল এর আসল নাম কী?
–তোমার আংকেল এর নাম যেটা বাংলাদেশে থাকতে ছিল সেটাই। কারণ সে খ্রিস্টান ই ছিল। বাট আমার নাম চেঞ্চ করে করছি৷ আমার আগের নাম ছিল মোসাঃপারভীন আকতার।
–ওহ,
–জ্যাকের রিয়াল নেম জানো? জ্যাক কিন্তু ওর ডাকনাম।
শ্রুতি কৌতুহলী হয়ে বলল,
–না তো জ্যাক এই সব কথা আমাকে কখনো বলেনি৷ এতো সত্য ওর জীবনে লুকিয়ে ছিল৷ ও কিছুই আমাকে বলেনি। ওর সার্টিফিকেট এ কী নেম দেওয়া?
–সাফিন আহমেদ।
শ্রুতি মনে মনে সাফিন নাম আওড়াতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পরে হালকা হেসে বলল,
–কিন্তু জ্যাক তো আপনাদের কারোর মতই দেখতে হইনি, বিদেশীদের মতো হয়েছে?
–হুম কাকতালীয় ভাবে কীভাবে ও হয়ে গেল জানি না। আর ওর ছোটবেলার চেহারা বাবার সাথে কিছুটা মিল ছিল৷ এখন একেবারে বিদেশীদের মতো হয়ে গেছে।
অতঃপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি আবার বললেন,
–শ্রুতি তুমি জেসিকা আর ওর বাবার থেকে সাবধান থেকো। ওরা এখন তোমার উপর এটাক করার সুযোগ খুজবে। ওর বাবা অনেক প্রভাবশালী মানুষ৷ বিশাল গ্যাং আছে তার৷মেয়ের জন্য সব কিছু করতে পারে৷ ওনি হয়তো সেদিনকার ঘটনা জেনে গেছে৷আর জেসিকা গিয়ে তোমার কথা বলেছে আমি সিউর। সাবধানে থেকো৷ আর জ্যাকের ও খেয়াল রেখো৷
শ্রুতি মিসেস এলিজাবেথ ওরফে পারভীন এর কথা শুনে ভাবতে লাগলো। এতো দিন কত বড় সত্য জ্যাক তার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছে। কেন বললো না তাকে এসব? সে তো এতোদিন ধর্মের বাধার কারণে তাকে কতো কিছু বলেছে। এটা যদি ও বলতো তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো৷ এতোদিন ছিল ধর্ম এখন কী আবার জেসিকা তাদের জীবনে এসে ঝামেলা শুরু করবে? তাদেরকে আলাদা করার চেষ্টা করবে?