#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৩৯
শ্রুতি বসে বসে নিজের হাতের আঙ্গুল চুসছে ।আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। প্রচুর টেনশন হচ্ছে তার। কিছুদিন পর বাস্কেটবল খেলা আছে তাদের ভার্সিটির সাথে অরেগন অঙ্গরাজ্য অরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি।প্রতি বছরই নাকি ভার্সিটির জুনিয়ার প্লেয়ারদের নিয়ে এই রকম খেলা হয়। তাদের ভার্সিটির বার্সকেটবল টিমের নাম “হুকিজ “।এই কমপিটিশন জন্য ওমেন বাস্কেটবলের টিম থেকে মাত্র ৫ জন প্লেয়ার।সেই জন্যই এতো টেনশন।
পাশ থেকে লিলি শ্রুতির অবস্থা দেখে বলল,
–আঙ্গুল চোসা বাদ দেও৷ এটা ছোট বাচ্চাদের লক্ষণ।হাতে কতো ময়লা থাকে তুমি এসব খাচ্ছো?টেনশন করার কিছুই নেই। আই নো তুমি সিলেক্ট হবে।
শ্রুতি মুখ থেকে আঙ্গুল টা সরালো না। এটা ওর ছোটবেলার অভ্যাস বেশি টেনশন কাজ করলেই এরকম করে। শ্রুতি কিছু বলতে নিবে তার আগেই বাস্কেটবলের ট্রেইনার তাদের সামনে আসল৷ তাদের টিমের সবাই উঠে দাড়ালো।
তিনি সবার সামনে বললেন যে,
–তোমরা যান কিছুদিন বাদে আমাদের ভার্সিটির সাথে অরেগন ভার্সিটির একটা বাস্কেটবল কম্পিটিশনের আয়োজন করা হয়েছে।এটা সিয়াটল মেমোরিয়াল স্টেডিয়ামের হবে। সো আর কোথাও যাওয়ার টেশন করতে হবে না৷ এটা প্রত্যেক বছর ই হয় ভার্সিটির জুনিয়র বার্কেটবলের প্লেয়ারদের নিয়ে।তোমরা এই ভার্সিটির সবচেয়ে জুনিয়র প্লেয়ার। বেশিরভাগ বছরই আমাদের ভার্সিটিই ফার্স্ট হয়৷ আর এই ভার্সিটির বাস্কেটবল টিমের অনেক সম্মান রয়েছে৷অলিম্পিক এ ১ বার স্বর্ণের মেডেল ও পেয়েছে। আরও অনেক এচিভ রয়েছে। বাট তোমরা জুনিয়র । তোমাদের টিমে ৯জন প্লেয়ার আছে। আমরা এরমধ্যে মাত্র ৫জন কে বেছে নেবো যারা বেস্ট খেলে বা মোটামুটি। আর এই ৫জন হলো,
১.মেলিনডা.
২.সোফিয়া
৩.কারিনা
৪.শ্রুতি
৫.লিলি
তোমরা এই ৫জন এখানে উপস্থিত আছো।
৫জন হাত জাগালো৷
–ওকে ঠিক আছে৷ তোমরা যাও৷ ভার্সিটির ছুটির পরে আমার সাথে মিট করো।
বলে তিনি চলে গেলেন৷ যারা সিলেক্ট হয়নি , তাদের মন ভিষণ খারাপ।যারা তাদের ফ্রেন্ড তারা শান্তনা দিতে লাগলো। এর ছিল কেটি আর জুডি সহ কে কে যেন । ওরা অন্য ডিপার্টমেন্টে। শ্রুতি আর লিলি চিনে না তাদের৷ তাই কোনো কাজ নেই এখানে তাদের। বাস্কেটবল ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো৷
শ্রুতি আর লিলি ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটছে লাগলো।
হঠাৎ লিলি বললো,
–তুমি শুধু শুধু টেনশন করেছিলে শ্রুতি। বললাম না তুমি সিলেক্ট হবে ।
শ্রুতি আনন্দিত হয়ে বলল,
— নতুন ভার্সিটিতে একজন ভিনদেশী হয়ে যে এতো সহজে সিলেক্ট হবো ভাবতে পারেনি৷ তাই টেনশন হয়েছিলো।
লিলি বললো,
–টেনশন করে একটা উপকার হয়েছে তা কী তুমি জানো?
শ্রুতি কৌতুহলী দৃষ্টিতে বলল,
–কী?
লিলি হেসে বলল,
–তোমার হাতটা পরিষ্কার হয়ে গেল।
শ্রুতি ও লিলির কথা শুনে হাসলো৷
শ্রুতি আর লিলি ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ঢুকবে তখন ক্লেভ সামনে এসে দাড়ালো৷ শ্রুতি বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকালো। মনে মনে বলল, এই ছেলে আবার কোথা থেকে উদ্ভব হলো?
ক্লেভ মুচকি হেসে বলল,
–কেমন আছো শ্রুতি?
শ্রুতি মুখে নকল হাসি নিয়ে বলল,
–ফাইন। তুমি কেমন আছো?
–হুম আমিও ভালো আছি৷
–এই দেখো এই বইটা তোমার না?
শ্রুতির দিকে একটা বই এগিয়ে দিয়ে বলল। শ্রুতি বইটা দেখে হতবাক। কতদিন ধরে বইটা খুঁজছে। ক্লেভ এর কাছে আসলো কী করে?
–ক্লেভ তুমি বইটা কোথায় পেলে? বইটা অনেক ইম্পটেন্ট৷ কতদিন ধরে খুঁজেছি!
–আমি এটা লাইব্রেরিতে পেয়েছিলাম। পরে তোমাকে দেবো সেই সুযোগ ও নাই৷ তুমি তো আমার সাথে কথায় বলো না?
শ্রুতি বিস্মিত হয়ে বললো,
–লাইব্রেরিতে?
–হুম।
শ্রুতি মনে মনে বললো,
–লাইব্রেরিতে কীভাবে থাকবে? আমি তো বইটা নিয়ে কখনো লাইব্রেরিতে যাই নি।
কিছুক্ষণ পর,শ্রুতি ভাবলো এসব প্রশ্নের উত্তর পরে খুঁজবে। আগে বইটা নিয়ে যায়।
শ্রুতি ক্লেভ এর হাত থেকে বইটা নিতে গেলে ক্লেভ হাত উঠিয়ে নিয়ে বলল,
–No, no, দেবো না।
শ্রুতি হাত নামিয়ে বলল,
–কেনো? বইটা তো আমার দেবে না কেন?
–দিবো বাট একটা শর্ত আছে।
নিজের বই নিবে তাও আবার শর্ত আছে৷ ওহ গড! শ্রুতি বিরক্ত হয়ে বলল,
–কী শর্ত?
–আমার সাথে এখন রেস্টুরেন্টে যেতে হবে তাহলে দিবো।
শ্রুতি হতবাক হয়ে বললো,
–ক্লেভ!তুমি বই দেয়ার কথা বলে কিন্তু এডভান্টেজ নিচ্ছো।
ক্লেভ হেসে বললো,
–বইয়ের জন্য তো নিতেই পারি তাই না?
–ওকে তুমি বই দেও। কালকে যাবো তোমার সাথে। আজকে আমার ইম্পটেন্ট ক্লাস আছে।
শ্রুতি মনে মনে বলল,
–তোর সাথে যাবো আমি রেস্টুরেন্টে? হালা কী পাইছো? একবার খালি বইটা পাই তার পর তোর যাওয়া বাইর করতেছি।
ক্লেভ বলল,
–ওকে নেও কালকের কথা যেনো মনে থাকে৷
শ্রুতি ক্লেভের কাছ থেকে বইটা নিয়ে যাওয়া ধরলে ভার্সিটির ইয়ার্ডে এককোণে চোখ আঁটকে যায়৷মৃদু হাসিতে মুখটা ছেয়ে গেলো শ্রুতির ৷ লিলির দিকে ঘুরে বলল,
–লিলি তুমি যাও আমার একটু কাজ আছে।
লিলিও শ্রুতির কথা মতো চলে গেলো।
শ্রুতি জ্যাকের কাছে গেলেই জ্যাক সেখান থেকে উঠে চলে গেলো৷ জ্যাক কে এরকম চলে যেতে দেখে শ্রুতি মুখটা নিষ্প্রভ হয়ে গেল৷ চোখের কোণে পানি জমলো৷ জ্যাক তাকে এরকম ইগনোর করে চলে গেলো কেন?
এদিকে ক্লেভ দূর থেকে এসব দেখে বাকা হেসে বলল,
–জ্যাক তোমার কারণে আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি এবার অনুভব করো ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখতে কেমন লাগে?
শ্রুতি সেখানে ঠায় হয়ে দাড়িয়ে থাকলো। ভাবলে লাগলো জ্যাক কিসের কারণে তাকে ইগনোর করলো। হঠাৎ শ্রুতি কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকালো৷ দেখলো এলিশা দাড়িয়ে আছে। শ্রুতি একবার এলিশার দিকে তাকিয়ে জ্যাকের পথের দিকে চেয়ে বললো,
–জ্যাক ও রকম চলে গেলো কেন?
এলিশা শ্রুতির ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে বলল,
–কেন গেলো তুমি জানো না?
শ্রুতি না সূচক মাথা নাড়ালো।
এলিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
–ও তোমার উপর রাগ করে চলে গেছে। তুমি ক্লেভের সাথে কথা বলেছো তাই জন্য।
শ্রুতি জিজ্ঞেস করলো,
–ওহহ, আচ্ছা এলিশা আমি শুনেছি জ্যাক ক্লেভকে সহ্য করতে পারে না? কিন্তু কেন?
–এর অনেক ঘটনা আছে।
শ্রুতি এলিশার হাত ধরে মিনতি করে বলল,
–প্লিজ বলো।
–ওকে চলো এক জায়গায় গিয়ে বসে কথা বলি৷
শ্রুতি আর এলিশা ভার্সিটির পিছনের দিকে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসল। এদিকটায় ছাত্র ছাত্রী দের আনাগোনা কম৷
শ্রুতি আগ্রহী হয়ে বলল,
–এখন বলো।
এলিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করল,
–জ্যাক আর ক্লেভ ছোট বেলা থেকে খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল৷ দুজন দুজনার বেস্ট ফ্রেন্ড । দুই জনই লেখাপড়ায় ভালো ছিল৷ কেউ কাউকে ছাড়া কিছুই করতে পারতো না।খেলা ধুলা, গ্রুপ স্টাডি, গান মিনিয়াম এভ্রিথিং সব কিছুতেই একে অপরকে লাগলো। একজন আর একজন ছাড়া অচল ছিলো এই রকম মনে করতে পারো ৷
বলে এলিশা থামলো৷
–কিন্তু কী হলো যে এখন তারা একে অপরকে সহ্যই করতে পারে না?
এলিশা আবার বলতে শুরু করল,
–কিন্তু যখন ক্লাস ১০ এ উঠলাম তখন ওদের বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরা শুরু করল। এর কারণ ছিল একটা মেয়ে। মেয়েটার নাম ছিল মারলিও ,। ও কানাডা থেকে এসেছিলে৷ দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলো। ক্লেভ এর প্রথম দেখায় মারলিওকে ভালো লেগে যায়।কিছুদিনের মধ্যেই ক্লেভ আর মারলিওর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু ক্লেভের কাছে ওটা বন্ধুত্ব ছিলো না।ও এই বন্ধুত্বের জের ধরেই ধীরে ধীরে মারলিওকে ভালোবাসতে থাকে৷ আমরা জানতাম এসব। কিন্তু মারলিও জানতো না। একদিন মারলিও হতবাক করে ক্লাসের সবার সামনে জ্যাককে প্রপোজ করে বসে। জ্যাক তখনও ছিলো আমাদের স্কুলের ক্রাশ বয়। জ্যাক জানতো ক্লেভ মারলিওকে ভালোবাসে তাই রিজেক্ট করে দিলো। কিন্তু এই দিকে ক্লেভ মনে মনে জ্যাকের প্রতি ক্রুদ্ধ হলো। কিন্তু আমরা সবাই মিলে ক্লেভ কে সামলেছিলাম। জ্যাক রিজেক্ট করার পর মারলিও জ্যাকের পিছনেই পরে থাকতো৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত একদিন মারলিও জেনে গেলো যে জ্যাক তাকে কেন রিজেক্ট করেছে? যেদিন মারলিও এইসব খবর জেনেছিল সেদিন আবার ক্লেভ ও তাকে প্রপোজ করে। মারলিও রিজেক্ট করে দিয়ে ক্লেভ এর গালে কয়েকটা চড় মেরে আজবাজে কথা বলেছিল। এরপর থেকে মারলিও ক্লেভ এর সাথে সব বন্ধুত্ব ছিন্ন করে ফেলে।ক্লেভ এই সমস্ত দোষ দেয় জ্যাকের উপর৷ জ্যাক ক্লেভকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু ক্লেভ জ্যাকেরই দোষ দিতে থাকে। এইখান থেকে তাদের বন্ধুত্ব বড় একটা ফাটল ধরে। একদিন আমরা সব বন্ধুরা মিলে একটা ক্লাবে পার্টি এর আয়োজন করেছিলাম। ক্লেভ সেদিন খুব ড্রিংকস সেদিন। সেদিন মারলিওকে টেনে হিচরে রুমে নিয়ে গিয়ে রেপ করে। আমরা তখন পার্টিতে ব্যস্ত ছিলাম। ফলে কিছুই শুনি নি। আর আমাদের খেয়াল ও ছিল না।এই খবর আমরা কেউ জানতাম না।পরে জ্যাক কিসের কারণে যেন ওইরুমে গিয়েছিল তখন রুমে কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পায়। জ্যাক ও তখন হালকা মাতাল ছিলো৷ তাই সে অতটা বেশি গুরুত্ব দেয় নি৷ পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে৷ পরেরদিন আমরা শুনলাম যে মেয়েটি নাকি আত্মহত্যা করেছে? আমরা পুরো অবাক। কালকে আমাদের সাথে পার্টি করলো আজকে আত্মহত্যা। কেন করলো এই প্রশ্ন জেগেছিলো? পুলিশ ও তদন্ত করতে শুরু করেছে। জানতে পেরেছিলাম মেয়েটার কোনো মা ছিলো না। জন্মের সময়ই মারা গেছে৷ ওর বাবা ছিলো শুধু৷ সেদিন দেখেছিলাম ওর বাবা কতো কেঁদেছিলো ওর জন্য। একটা মেয়ে ছিলো ওনার। সেই যদি এরকম করে।পোস্ট মাডামের রিপোর্ট বের হলে দেখা গিয়েছিলো আগের দিন কার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল।পুলিশ অনেক তদন্ত করেছিলো কোনো রিপোর্ট পায়নি। ক্লেভের ও কিছুই মনে ছিলো না যে সে মাতাল হয়ে কী করেছে? সে সব দোষ জ্যাকের ঘাড়ে দিতে থাকে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায় জ্যাক বেঁচে যায়। আর আমাদের ১৮ বছরের অনেক কম ছিল। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু জ্যাকের শারীরিক সম্পর্কের কথা শুনে কেমন যেন সন্দেহ হতে শুরু করেছিল৷ সেদিনের রাতের কান্নাকাটি গুলো তার বার বার কানের কাছে ভাসছিল৷ সে দ্রুত ক্লাবে গিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ অন করে দেখে৷ পার্টিতে যখন সবাই নাচানাচি করছিলো তখন ক্লেভ ছিলো না। আর ক্লেভ টেনে হিচরে মারলিওকে নিয়ে যাচ্ছে। এতেই জ্যাকের কাছে সব স্পষ্ট হয়ে গেলো। সে ফুটেজ টা নিয়ে পুলিশের কাছে দিলো। কিন্তু কিছুদিন বাদে জানতে পারে পুলিশ কিছুই করে নি । জ্যাক ও আংকেল দুই জন গিয়েছিল অনেক বার বিচারের জন্য কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ক্লেভের বাবা ছিলো অনেক ধনী৷ হয়তো এসব শুনে টাকা খাইয়ে মুখ বন্ধ করিয়েছে৷ জ্যাক সেই ফুটেজ নিয়ে ক্লেভের কাছে গিয়ে সটাং সটাং থাপ্পড় মেরে দেখিয়েছিল। কিন্তু ক্লেভ বলে এসব ভুয়া৷ সব জ্যাকের দোষ৷ জ্যাক নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসব করেছে।পুলিশ দু জনকেই ছেড়ে দিলো।কিন্তু চলে গেল একটা নিষ্পাপ প্রাণ। এই সেদিন থেকে জ্যাক ভাবে ক্লেভ দোষী,একজন রেপার৷ আর ক্লেভ ভাবে জ্যাকের কারণে সে তার ভালোবাসাকে হারিয়েছি। আসল সত্য কী এখনো কেউ জানে না। এই জন্য কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। এই হলো কাহিনী। তাই জ্যাক তোমাকে ক্লেভ এর থেকে দূরে থাকতে বলে যাতে তোমার কোনো ক্ষতি করতে না পারে৷ ক্লেভ জ্যাকের ক্ষতি করার সুযোগ খোঁজে ।তাই তোমাকে নিয়ে এতো টেনশন, এতো ভয় পায়।
এসব শুনে শ্রুতির চোখে পানি জমে গেল৷ আমাদের সমাজে ধর্ষকদের কোনো শাস্তি হয় না।সব দোষ গিয়ে পরে মেয়েটার গায়েই৷ছেলেটার কিছুই হলো না। মাঝখান দিয়ে চলে গেলো সেই মেয়েটা৷ সে এটা করতো ওটা করতো৷ আর ধনীরা কী করে টাকা দিয়ে পুলিশের মুখ বন্ধ করে দেয়। এই হলো আমাদের সমাজ৷ টাকা জোরেই চলে পুরো পৃথিবী । যার টাকা আছে তার সব আছে যার টাকা নেই তার কিছুই নেই৷
শ্রুতি নিজের চোখের পানি মুছে বলল,
–আমার খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে৷ জ্যাক কোথায় তুমি বলতে পারো?
এলিশা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
–আমার জানা মতে ওর পছন্দের জায়গা দুটো।
যখন খুশি থাকে তখন পার্কে যায় আর মন খারাপ থাকলে হ্যালার লেকের পাড়ে গিয়ে বসে থাকে। তুমি ওখানে গিয়ে দেখতে পারো ও সেখানে যেতে পারো। গাড়িতে গেলে মিনিমাম ১৫ মিনিটের মতো লাগবে।
শ্রুতি উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
–থ্যাংক ইউ এলিশা।
বলেই সে দ্রুত হেটে সেখান থেকে চলে গেলো একজনার রাগ ভাঙ্গাতে৷ কিন্তু আসলে কী পারবে? একবার মানা করার সত্যেও সে তার সাথে কথা বলেছে। দেখা যাক কী হয়। আগে গিয়ে তো চেষ্টা করে দেখুক।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৪০
সিয়াটলে অবস্হিত হ্যালার লেক একটি মনোমুগ্ধকর জায়গা। লেকের চারপাশ সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা৷ হালকা দমকা হাওয়ার দৌরাত্ম্যে গাছগুলো থেকে থেকে দুলে উঠছে।
সেইসাথে শ্রুতি স্কার্ফ টাও পবলে সাথে তালমিলিয়ে দুলছে।নির্দিষ্ট স্হানে তাকে রাখা যাচ্ছে না। বারবার এদিক এদিক সরে যাচ্ছে৷ এই বসন্তের হাওয়া তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
শ্রুতি হাঁটতে হাঁটতে হ্যালার লেক এ এসে পৌঁছালো। নিজের চোখ দিয়ে লেকের চারপাশটা অবলোকন করলো। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে বেশি খুঁজতে হলো না। অদূরে শ্রুতি চোখে পড়লো লেকের পাড়ের একটা ঘাটের সিড়িতে জ্যাকের প্রতিচ্ছিত৷ শ্রুতির মুখে কোমল হাসি ফুটে উঠল।
সে ধীর পায়ে জ্যাকের পাশে গিয়ে বসল। জ্যাকের পূর্ণ দৃষ্টি লেকের জলরাশির দিকে। একজন মানুষ যে তার পাশে বসে আসে তা নিয়ে তার কোনো ভাবমূর্তি নেই।
–জ্যাক,সরি। ভেরি ভেরি সরি।
শ্রুতির কথার উত্তরে জ্যাক কোনো প্রতিক্রিয়া না করে অন্যদিকে ঘুরে তাকালো। এতে শ্রুতি হালকা হাসলো৷ একটু তেই এতো অভিমান। শ্রুতি মনে মনে বলল,
★জ্যাক তুমি বন্ড অভিমানী।কখনো তোমার ক্রোধ আবার কখনো সম্বন্ধ প্রলাপ দুটোই আমার খুব ভালোলাগে। বিমোহিত করে আমাকে। মান, রাগ, অভিমান, আপোষ এইসব নিয়েই তো ভালোবাসা৷ একজন রাগ করলে আর একজনার তা ভাঙ্গানো আশু কর্তব্য। ভালোবাসার স্বাদটা হয় মিষ্টি, মধুর।
তুমি যদি হও অভিমান,
আমি হবো বৃষ্টি
ভিজিয়ে দেবো তোমার কষ্ট
যত,বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায়
অনুভব করবে আমার মনে
আছে ভালোবাসা যতো ★
শ্রুতি বলল,
–জ্যাক প্লিজ কথা বলো। সরি বললাম তো। আর কখনো ক্লেভ এর সাথে কথা বলবো না। ইনফেক্ট ওর ছায়ার কাছেও যাবো না। ও যে কতো খারাপ তা জেনেছি। আর আবার ই বা দোষ কী বলো? ওই আমার পিছনে লেগে থাকে৷ আমি কথা বলতে চাইনা তবুও৷ ক্ষণে ক্ষণে আমার সামনে আসে। একেবারে এলিয়েন এর মতো৷ আমি কী,,,
শ্রুতি কথার মাঝেই থেমে গেল। কারণ জ্যাক তার পুরো কথা না শুনেই চলে যাচ্ছে। শ্রুতি নেত্রে অশ্রু কণায় ভরে উঠলো। জ্যাক এতো রাগ করেছে তার উপর? সে তো সরি বললাম। তবুও? তার দোষ কোথায়?সে তো ক্লেভের কাছে যায়নি,জ্যাক মানা করার পর। ওকে এড়িয়ে চলেছে। তবুও জ্যাক আজকের জন্য এতো রাগ করলো?
অশ্রু কণাগুলো গাল বেয়ে পরার আগেই শ্রুতি নিজের হাত দিয়ে মুছে নিল। মনে মনে বলল,
–আমিও দেখবো জ্যাক তুমি আমার সাথে কথা না বলে কোথায় যায়? আমিও শ্রুতি, রাগ যদি না ভেঙ্গেছি। নাম পালটে দিও। হুম।
শ্রুতি উঠে দাড়ালো। জ্যাক ততক্ষণে অনেক দূর চলে গিয়েছে। শ্রুতি জ্যাকের পিছন দৌড়াতো লাগলো। আর পিছন থেকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু জ্যাক একবারো পিছনে ফিরল না। সে গাড়ির দিকেই যেতে থাকলো। হঠাৎ শ্রুতি দৌড়াতে দৌড়াতে পরে গেলে, আহ!বলে চিৎকার করে উঠে।
শ্রুতির চিৎকার জ্যাকের কর্ণে পৌঁছায়। জ্যাক থমকে যায়। সে পিছনে ঘুরে থেকে শ্রুতি বসে পায়ে হাত দিয়ে কাঁদছে । জ্যাকের মুখটা বিষন্নতার এক টুকরা মেঘে ছেয়ে যায়। সে দ্রুত সেখান থেকে প্রায় দৌড়ে শ্রুতির কাছে ছুটে আসে।
জ্যাক উদ্বিগ্ন হয়ে একবার শ্রুতির পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
–কী হয়েছে শ্রুতি? কীভাবে পড়ে গিয়েছো? কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি।
শ্রুতি কাঁদছে। পায়ে অসম্ভব ব্যথা পেয়েছে। নাড়াতেও পারছে না। নাড়ালেই ব্যথা পাচ্ছে। শ্রুতি নিজের নাক টেনে টেনে বলল,
–জ্যাক আমার সব শেষ হয়ে গেলো। পা ভেঙ্গে গিয়েছে। আমি কোনো দিন হাঁটতে পারবো না।
বলে আরও কাঁদতে লাগলো। জ্যাক শ্রুতির পা টা হালকা ভাবে ধরলে, শ্রুতি আহ! করে উঠে।
–প্লিজ জ্যাক ধরো না। একটা এম্বুলেন্স ডাকো প্লিজ।আমি হাটতে পারবো না। আমাকে আর কেউ বিয়ে করবে না গো আল্লাহ।
শ্রুতি নিজের পা ধরে কাঁদতে লাগলো৷
জ্যাক শ্রুতিকে এক ধমক দিয়ে বলল,
–চুপ, একদম বাচ্চাদের মতো কাঁদবে না। পায়ে ব্যথা পেয়েও তো ফটফটানি কমে না। তোমাকে দৌড়াতে বলেছিল কে? বেশি মাতব্বরি করো।
জ্যাকের ধমক শুনে শ্রুতি আরও ভ্যা করে কেঁদে দিল।
–তোমার জন্যই তো দৌড়ালাম। তুমি তো আমার সাথে কথাই বলছিলে না। এখন সব দোষ আমার হয়ে গেলো?তোমার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে। আমার পা টা ভেঙ্গে গেলো রে।
বলে সে আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
জ্যাক উঠে দাড়িয়ে শ্রুতি দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
–আমার হাত ধরে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করো।
শ্রুতি জ্যাকের হাত ধরে দাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। আবার পরে গেলো।
শ্রুতি আবারো কেঁদে দিলো। বলল,
–জ্যাক দেখেছো, আমি দাড়াতেও পারছি না। আমার পা সত্যি সত্যিই ভেঙ্গে গেছে। আমি কোথায় যামু গো? আমি তো আর হাঁটতে পারবো না, সামনে বাস্কেটবল খেলা আছে। খেলতেও পারবো না। সারাদিন হুইল চেয়ারে বসে থাকতে হবে। আমাকে কে বিয়ে করবে গো? আমার সব,,,
আর কিছু বলতে পারলো না। মুখ অটোমেটিকালি বন্ধ হয়ে গেলো। অনুভব করলো নিজে শূন্যে ভাসছে৷পরক্ষণে বুঝতে পারলো আসল ঘটনা। নিজে লজ্জায় রঞ্জিত হলো। জ্যাক তাকে কোলে নিয়েছে এই পাবলিক প্লেসে। শ্রুতি হালকা ছটপট করতে লাগলো।
জ্যাক চক্ষু লাল করে শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতি হালকা ভয় পেলো৷ তবুও এই ভয়কে উপেক্ষা করে বলল,
–জ্যাক তুমি আমাকে কোলে নিয়েছো কেন? এটা পাবলিক প্লেস। নামাও বলছি। আমার কারো কোলে উঠার প্রয়োজন নেই। নামও আমাকে।
জ্যাক খাটিকটা ব্যাঙ্গ ও মুখে কঠোরতার ভাব এনে বলল,
–হ্যাঁ নামিয়ে দিচ্ছি। তারপর তুমি ওখানে বসে থাকো। আর আমি হাতে একটা থাল দিবো। সবাই কিছু টাকা দিয়ে যাবে। ইস্টুপিট!
ছটপট না করে চুপচাপ যেরকম আছো সে রকম থাকো। নাহলে ফেলে দিবো। এখন এক পা ভাঙ্গছে ফেলে দিলে আরও এক পা ভাঙ্গে। তখন আরও ভালো হবে।
শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে খানিকটা ভয় পেয়ে জ্যাকের গলা জড়িয়ে ধরলো। সত্যিই জ্যাক এখন রেগে আছে। যদি তাকে ফেলে দেয় তাহলে আরও একটা পা যাবে। কোমড় ও যাবে । তারপর সে সোজা উপরে চলে যাবে। তার থেকে এরকমই ভালো।
জ্যাক শ্রুতির অবস্থা দেখে বাঁকা হাসলো।
জ্যাক শ্রুতিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলো।অতঃপর শ্রুতির পাটা দেখতে চাইলো। শ্রুতি ভয়ে এক কোনায় গুটি মেরে বসে বলল,
–না জ্যাক। অনেক ব্যথা। তুমি আরও ব্যথা দিবে। আমি দেখাবো না।
জ্যাক আরও কয়েকবার পা টা কী হয়েছে তা দেখার কথা বলল। প্রত্যেক বার শ্রুতি নাকচ করলো৷ জ্যাক এবার বিরক্ত হলো সাথে রাগান্বিতও হলো।
শ্রুতি একদমক দিয়ে বলল,
–দেখাবে না তো কী করবে? সারাজীবন ও রকম পা ধরে বসে থাকবে?
শ্রুতি জ্যাকের দমক শুনে আমার কেঁদে দিল। এবার আরও জোরে ধমক দেয়েছে জ্যাক। শ্রুতি ফুপাতে ফুপাতে ছোট বাচ্চাদের মতো করে বলল,
–জ্যাক তুমি একটুকুও ভালো না। আমায় আর ভালোবাসো না। পায়ে তোমার জন্যই ব্যথা পিয়েছি। আর তুমি আমাকে বকা দিচ্ছো, ধমক দিচ্ছো। আর ভালোয় বাসো না৷ লাগবে না আমার কারো ভালোবাসা।আমি লুসিকে কল দিচ্ছি ৷ ও আমাকে নিয়ে যাবে।
বলেই শ্রুতি ব্যাগে নিজের ফোন খুঁজতে লাগলো।
জ্যাক শ্রুতির কথা শুনে গলে গেলো।নিজের মনে খারাপ লাগতে শুরু করলো। মনে মনে বলল,
সত্যিই একটু বেশি একটু বাড়াবাড়ি করছি শ্রুতির সাথে৷ মেয়েটা তো সরি বলেছে। তবুও এতো রাগ করা ঠিক হয়নি। এখন পায়ে ব্যথা পেয়েছে তবুও ধমক দিচ্ছি। সত্যিই খুব খারাপ আমি।
জ্যাক চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটাকে কমানোর চেষ্টা করলো। তারপর শ্রুতির দিকে ঘুরলো।
শ্রুতি তখন লুসির ফোনে ট্রাই করছিল। কিন্তু লুসি কল ধরছিলো না। শ্রুতি আবার দিতে নিলে জ্যাক তার হাত ধরলো। শ্রুতি অশ্রুসিক্ত নয়নে জ্যাকের দিকে তাকালো৷ জ্যাকও তার দিকে তাকানো। জ্যাক শ্রুতির স্নিগ্ধ মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের জল গালে পরে শুকিয়ে গিয়েছে। চোখের পাপড়ি গুলোতে অশ্রুর কণা লেগে ভারি হয়ে আছে। নাকটা লাল টকটকে টমেটোর মতো হয়ে গেছে। কতো স্নিগ্ধ লাগছে!
এভাবে দুজন একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো৷ কারো কোনোদিকে ধ্যান নেই৷ চোখে চোখে তারা তাদের মনের কথা আদানপ্রদান করছে৷এক একজনার চোখে হারিয়ে গেলো৷ শ্রুতি নিজের পায়ের ব্যথা ভুলেই গিয়েছে। হঠাৎ এর ব্যাঘাত ঘটালো একটা ফোন কল৷ দু জনই চমকে উঠলো। জ্যাক ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকালো। কলের শব্দ পেয়ে তার ঘোর কাটলো। এতক্ষণের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় খানিকটা নুয়ে গেল।ফোনটা হাতে নিতে নিলে জ্যাক ছো মেরে নিয়ে নিয়ে কেটে দিয়ে ফোনটা বন্ধ করে দিলো। শ্রুতি কিছু বলতে নিলেই জ্যাক ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল,
–No more talks.লুসি কল দিয়েছিল।
জ্যাক শ্রুতির ঠোট থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে শ্রুতির দুহাত ররডীসসসসডতডতঢতডডডডগগহহটডডডরটটটএনিজের মুঠোয় নিল। শ্রুতি অবাক হয়ে জ্যাকের কান্ডকারখানা দেখছে৷ জ্যাক কী করতে চাচ্ছে মাথায় ঢুকছে না। অতঃপর করুণ স্বরে জ্যাক বলল,
–শ্রুতি সরি। অনেক মিসবিহেভ করেছি এতক্ষণ। আসলে তোমাকে ক্লেভ এর সাথে দেখে খুব রাগ উঠেছিল। তাই এরকম করেছি সরি। এখন দেখো তুমি তোমার পাটা আমাকে দেখাও। বেশি সিরিয়াস হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাট আমার মনে হয় না যে যেতে হবে। পাটা হয়তো মচকে গেছে। আমি দেখি ব্যথা দিবো না।
শ্রুতি জ্যাকের কথা বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে। জ্যাকের চোখের দিকে তাকালো। জ্যাক অনুনয় করছে। শ্রুতি তবুও ক্ষীণ শঙ্কা গ্রস্ত থেকে কাঁপা কাঁপা পাটা জ্যাকের কাছে দিলো। আর নিজের খানিকটা লজ্জা বোধ হলো।
জ্যাক শ্রুতির দিকে তাকালো। শ্রুতি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। জ্যাকের বন্ড মায়া হলো। সে ধীরে ধীরে শ্রুতির পাটা নিজের পায়ের উপর রেখে দিলো এক টান।
ততক্ষণাত্ শ্রুতি চিৎকার করলো। শ্রুতির চিত্কারে পুরো গাড়ি ভনভন করতে লাগলো। কিন্তু বাহিরে গেলো না। কারণ গাড়িটা সাউন্ডপ্রুফ। জ্যাক শ্রুতির পাটা ছেড়ে দিলো। আর শ্রুতি জোরে কান্না করে দিলো। চিৎকার করে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–মাগো আমার পাটা গেলো রে৷ আমার পাটা শেষ। জ্যাক তুমি এতো নিষ্ঠুর৷ তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছো। কেন করলে? আমার কতো ব্যথা পেয়েছি জানো৷ তোমাকে বিশ্বাস,,,
আর বলতে পারলো না। হঠাৎ অনুভব করলো সে পা নাড়াতে পারছে৷ শ্রুতি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে একবার নিজের পায়ের দিকে একবার জ্যাকের দিকে তাকাচ্ছে।কোনো ম্যাজিক নাকি এটা!
জ্যাক শ্রুতির অবস্হা দেখে দুর্বোধ্য হাসলো। মেয়েটা এইটুকুর জন্য এতক্ষণ কতো কাহিনী করলো।
____________
৭দিন পেরিয়ে গেল।
গতকাল শ্রুতিদের ভার্সিটির সাথে অরেগন ভার্সিটির বাস্কেটবল খেলা সিয়াটল মেমোরিয়াল স্টেডিয়ামে আয়োজন হয়েছিল৷ সেখানে “হুকিজ” টিম মানে শ্রুতিদের ভার্সিটির টিম ই জিতেছে৷ তবে এবারকার জেতার ব্যবধান আগের বছর গুলোর তুলনায় অনেক বেশি। সিয়াটলে যারা হুকিজ টিমের সমর্থন ছিল তারা অনেক প্রফুল্ল । ওয়াশিংটন ভার্সিটি আবার প্রশংসায় পঞ্চমুখর। কালকে সিয়াটলের স্টেডিয়াম পুরো রমরমা ছিল৷ শ্রুতি একজন ভিনদেশী হয়ে বুঝতে কালকে পেরেছে এখানকার মানুষের কাছে বাস্কেটবল খেলাটা কতো জনপ্রিয়।
শ্রুতি ভার্সিটির গ্যাট দিয়ে ঢুকলে চোখে পরলো,তার ফ্রেন্ড গুলোকে। শ্রুতি হালকা হেসে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
জ্যাক তখন মোবাইল প্রেসিং করছিল, শ্রুতি জ্যাকের পাশে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল,
–কী নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছিল আমি কী শুনতে পারি?
এলিশা হাসতে হাসতে বলল,
–আগে লিওকে একবার দেখো তারপর বলছি।
শ্রুতি এলিশার কথা শুনে একটু উঁচু হয়ে দেখলো লিওকে হাঁটু উপরে ভর করে হাঁপাচ্ছে৷ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। পরনের শার্ট ঘামে ভিজে একাকার।কপাল দিয়ে টপ টপ ঘাম পড়ছে।
শ্রুতি নিজের জায়গায় বসে কৌতুহলী হয়ে বলল,
–লিও ওরকম হাঁপাচ্ছে কেন? আর চোখ মুখের এরকম অবস্হা কেন?
শ্রুতির কথা শুনে এলিশার যেন আরও হাসি পেলো। সে আবার হো হো করে হেসে দিলো। কোনো রকম হাসি আটকাতে পারছে না। শ্রুতি ভ্রু কুঁচকালো। সে কী কোনো হাসির কথা বলেছে?
শ্রুতি লুসি কানে ফিসফিস করে বলল,
–এলিশা পাগলের মতো ওরকম হাসছে কেন? কিছু হয়েছে তুমি কী জানো?
লুসি মাথা নাড়িয়ে না বলল। মানে সে জানেনা। লুসি বলল,
–কী হয়েছে এলিশা হাসছো কেন? আমরা এমনি লাইফের প্যারার জ্বলায় বাঁচি না। আর তুমি কতো সুন্দর হাসছো। আমাদের ও একটু বল আমরাও হাসি।
এলিশা কোনোরকম হাসি আটকিয়ে বলল,
–জানো লিও আজকে গোলাপ নিয়ে লিলিকে প্রপোজ করতে গিয়েছিল।
এইটুকু বলে আবার হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে গায়ের উপর পড়ছে।
শ্রুতি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে এলিশার দিকে। এতো হাসছে কেন মেয়েটা বুঝতেছে না? নিজের কৌতুহল দমিয়ে না রাখতে পেরে বলল,
–তারপর কী হয়েছে?
এলিশা শ্রুতির কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
–লিলি ওই গোলাপ দেখে লিওকে প্রথমে চোখ রাঙানি দিছে। লিও তাতে ফেরি নি। লিলি তারপর লিওকে এই পুরো মাঠে ধাওয়া করছে। লিও তো একবার উষ্ঠা খাইয়া পরে, আর একবার উঠে আবার দৌড়। তাই পোলাটার এখন এই অবস্হা। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে পালাইছে।এতো দৌড়ানোর ফলে ওর অনেক,,, চাপ দিয়েছে৷ ওইখানে কাজ সারতে গিয়া লিলি এমন জোরে দরজা ধাক্কা দিছে যে লিলি লিওর সব,,
এলিশার মুখে লিওর আর লিলির এইসব কান্ড শুনে লুসি আর শ্রুতি দুই জন ই হেসে দিলো। আর লিও লজ্জায় পুরো লাল। মান স্মানের ফালুদা বানিয়ে দিয়েছি।
লিও পাশে থাকা বেঞ্চে বসতে বসতে বলল,
–মেয়েটা অনেক ডেঞ্জারাস রে ভাই৷
লিওর কথা শুনে পুনরায় সবাই হেসে উঠলো।
জ্যাক নিজের মোবাইলটা পকেটে ভরে বলল,
–বুঝলি লিও ইচ্ছা আছে জীবনে দুটো বিয়ে করবো। একজন বৌ রাগ করলে আর একজনার কাছে যাবো। সে আদর করবে। সে রাগ করলে আর একজনার কাছে যাবো।আবার দুই সতীন ঝগড়া করবে দেখতে কতো ভালো লাগবে। আইডিয়াটা অনেক সুন্দর না?
লিও বলল,
–হ,ব্রো আইডিয়াটা অসাম।দুইটা বৌ যদি রাগ করে তাহলে তোরে পিছা দিয়া পিডাইয়া ঘর দিয়া বাইর কইরা দিবো।
বলে লিও হাসতে লাগলো।
এলিশা বলল,
–হ,এতো সুন্দর আইডিয়া তোর মাথায় ই আসে। দুই বউ তোরে নিয়া কারাকারি করবে, একজন টানবে হাত আর একজন টানবে পাও।
বলে সেও হাসতে লাগলো।
এদিকে শ্রুতি কটমট দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকালো।চোখ দিয়ে যেনো বলছে, তোর দুটো বিয়ে করা আমি বাইর করতেছি হালা। দুইডা বিয়া করবি তুই।জ্যাক শ্রুতিকে এরকম তাকাতে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসলো। শ্রুতি নিজের ব্যাগ নিয়ে হন হন করে উঠে গেলো।
জ্যাক বেঞ্চ থেকে উঠতে উঠতে বলল,
–তোগো ভাবির রাগ ভাঙ্গিয়ে আসি।আশীর্বাদ কর।
এলিশা দাঁত বের করে হেসে জ্যাকের মাথায় হাত রেখে বলল,
–আশীর্বাদ করি এই যাত্রায় যেনো জয়ী হয়ে ফিরে আসো৷
এলিশার কথা শুনে ওখানে সবাই হো হো করে হেসে দিলো৷
——————
এদিকে ক্লেভ আর জেসিকার একটা লাক্সারি রেস্টুরেন্টে বসে আছে৷ দুজন একে বারে নীরব।হঠাৎ ক্লেভ নীরবতা ভেঙে বলল,
–কী ব্যাপার জেসিকা? তুমি আমাকে হঠাৎ এখানে ডাকলে কেনো? কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য আছে নাকি?
জেসিকা টেবিলের উপরে থাকা শ্যাম্পেইন গ্লাস টা হাতে দিয়ে এক চুমুক দিতে দিতে বলল,
–কারণ তো অবশ্যই আছে। আমি কারণ ছাড়া অকারণে কাউকে ডাকি না।এখানে তোমাকে ডাকার একটা কারণ হলো তোমার আর আমার উদ্দেশ্য এক।
জেসিকার কথা শুনে ক্লেভ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
–তোমার আর আমার উদ্দেশ্য এক? হাসালে জেসিকা।তোমার আর আমার উদ্দেশ্য কখনো এক হতে পারে না৷ যাই হোক তুমি না জ্যাকের বেস্ট ফ্রেন্ড,আবার শুনলাম বাগদত্তাও । জ্যাক যদি জানে তুমি আমার সাথে কথা বলেছো তাহলে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিবে। তুমি আমাকে কিসের জন্য ডেকেছো তা ক্লিয়ার লি বলো।
জেসিকা শ্যাম্পেইন এর গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল,
–জ্যাকের কথা বাদ দেও। তুমি তো চাও যে শ্রুতি মরে যাক। এম আই রাইট?
জেসিকার কথা শুনে ক্লেভ বিস্মিত হয়ে গেল। ভয় লাগছে তার। দড়দড় করে ঘামতে লাগলো এই ভেবে জেসিকা এগুলো জানলো কীভাবে? যদি জ্যাককে বলে দেয়া তাহলে তো সে শেষ। ক্লেভের অবস্থা দেখে জেসিকা বাঁকা হেসে ক্লেভের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল।ক্লেভ পানি টুকু ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
–তু-মি এ-সব জা-নলে কী-ভাবে?
জেসিকা হেসে বলল,
–এতো টেনশন করো না ক্লেভ। আমি কাউকে কিছু বলবো না।
ক্লেভ জিজ্ঞেস করল,
–জ্যাককেও না?
–জ্যাককে বললে কী গেমই থাকে নাকি?
ক্লেভ জেসিকার কথা কিছুই বুঝলো৷ সে ভ্রু উল্টিয়ে প্রশ্ন করল,
–কিসের গেম?
জেসিকা মুখে দৃঢ়তা এনে বলল,
–শ্রুতিকে ধ্বংস করার।
ক্লেভ আর একদফা অবাক হলো।
–শ্রুতিকে ধ্বংস করা মানে?তুমি শ্রুতিকে মেরে ফেলতে চাও কেন? ও তোমার কী ক্ষতি করেছে?
জেসিকা পুনরায় শ্যাম্পেইন টাতে চুমুক দিতে দিতে বলল,
–সেটা তোমার জানতে হবে না। তুমি কী আমার সাথে কাজ করতে চাও তাহলে বলো?
ক্লেভ কিছু বিবেচনা না করেই মাথা নাড়ালো। জেসিকার কথা শুনে তার বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে। মন বলছে জেসিকা সত্যিই চায় শ্রুতিকে ধ্বংস করতে । তাহলে তো তার ভালোই।তার নিজের একা আর কাজটা করতে হবে না। জ্যাক কারণে যেমন মারলিও আত্মহত্যা করেছে তেমনি জ্যাকের আশিককেও সে মেরে ফেলবে। মারলিওর হত্যার প্রতিশোধ নিবে।
জেসিকার ক্লেভকে সব প্লান একে একে খুলে বলল। সব শুনে ক্লেভ হেসে বলল,
–প্লান তো জোস৷ এতে শ্রুতি মরবে নিশ্চিত। সাথে জ্যাকও শ্রুতির শোকে মরবে৷
বলেই দুজন বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো।
#ভিনদেশী
#আদ্রিয়ানা নীলা
#পার্ট ঃ৪১
অপরাহ্নের শেষ প্রহর। নভোমণ্ডল আবৃত হালকা সিঁদুর রাঙ্গা মেঘে। হালকা পবন বহমান৷ পবনের সাথে বইছে ফুলের মন মাতানো সুবাস,হামিংবার্ডের গান গাওয়ার গুন গুন শব্দ।বিমোহিত করার মতো একটা পরিবেশ৷ শ্রুতির এক হাত জ্যাক হাতের ভাজে মুষ্টি বদ্ধ৷দুজন হাতে হাত রেখে সামনের পথ ধরে হাঁটছে। জ্যাকের দৃষ্টি রাস্তার দিকে না তার দৃষ্টি শ্রুতির স্নিগ্ধ আননে নিবন্ধ। মাঝে মাঝে মৃদু হাসছে শ্রুতির অভিমানে ফুলে যাওয়া মুখটিকে দেখে। জ্যাক মৃদু কন্ঠে বলল,
–আমার উপর রাগ করে আছো শ্রুতি? আমি তো মজা করেছিলাম।
শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে অন্যদিকে মুখ ঘুড়ালো। খুব বলতে ইচ্ছে করছে তার,” রাখ তুই তোর মজা, বিয়া করবি ২টা কর। আমার কাছে আসছিস কেন? “কিন্তু বললো না। জ্যাকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে নেই।
–শ্রুতি তোমাকে ছাড়া আমি আর কাউকেই বিয়ে করবো না। আলাদা করে তোমার সতীন বানানোর কী দরকার? তোমার সতীন তো একজন আছেই। এই দুইজনই তো আমাকে শেষ করেছো৷ আবার দুইটা বিয়ে করলে আমার মতো একটা ছোট বাচ্চা তোমাদের অত্যাচারে শেষ হয়ে যাবে।
জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতি যেমন অবাক হলো তেমনি রাগান্বিত হলো। অবাক হলো এই ভেবে সে যা মনে মনে বললো তা জ্যাক জানলো কী করে? সে কী মনের কথা পরতে পারে নি। তবে অবাকের চেয়ে রাগ টাই যেন বেশি হচ্ছে। শ্রুতি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাক এতে আরও জোরে হাসলো। শ্রুতি এবার নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে লাগলো। মোটেও এখন তার জ্যাককে সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু জ্যাক তার হাত ছাড়ছে না।
উল্টো জ্যাক একহাত দিয়ে গাল টেন বলল,
–Wow! রাগ করলে কী সুন্দর লাগে তোমাকে?তোমার নাকটা লাল টকটকে হয়ে যায়।
বলে দুর্বোধ্য হাসলো। শ্রুতি নিজের গাল থেকে জ্যাকের হাত সরিয়ে দিল।এতেও জ্যাক হাসলো।কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,
–রাগ করেছো ভাঙ্গানোর দ্বায়িত্ব তো আমার। চলো!
শ্রুতির হাত ধরে টেনে নিয়ে পাশের একটা ফুলের স্টোরে নিয়ে গেল।বিচিত্র রকমের ফুলে আছে দোকানটাতে।
কতগুলো আমেরিকান গোলাপ এখানে যা ইউস্টোমা নামে বেশি পরিচিত।এই গোলাপ গুলো গোলাপি রঙের হয়ে থাকে৷জ্যাক কত গুলো ইউস্টোমা কিনলো।
শ্রুতিকে নিয়ে পাশে থাকা পার্কে ঢুকে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে একটা বেঞ্চে বসলো। ফুলগুলো শ্রুতির হাতে এখনো দেয়নি। শ্রুতি বারবার আড়চোখে তাকিয়েছে! আর ভাবছে তাকে দিচ্ছে না কেন? তাকে যদি না দেয় তাহলে এ গোলাপ দিয়ে কী করবে জ্যাক? ভাবনার আকুল পাথারেই জ্যাক বলে উঠল,
–এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই৷ এগুলো তোমার জন্য না।
শ্রুতি যেন এবার হতবাক হয়ে গেল৷ জ্যাকের দিকে তাকালো। সে মিটিমিটি হাসছে৷ শ্রুতি জিজ্ঞেস করলো,
— তো কার?
জ্যাক অনেকক্ষণ শ্রুতির প্রশ্নের কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না। শ্রুতি আকুল আগ্রহে বসে আছে উত্তর শোনার জন্য।
জ্যাক শ্রুতির কানে একটা গোলাপ গুঁজে বললো,
–এগুলো আমার শ্রুতির জন্য। তা আমার শ্রুতি কী এগুলো নিবে? সে তো আমার উপর রাগ করে আছে?
শ্রুতি জ্যাকের কথা শুনে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো। এতক্ষণ জান বের হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল জ্যাকের কথা শুনে।
শ্রুতি জ্যাকের হাত থেকে গোলাপ গুলো ছিনিয়ে নিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো,
–আমি ছাড়া এগুলো কে নিবে? নিলে তার হাত ভেঙ্গে দিবো।এগুলোর উপর শুধু আমার অধিকার।
বলে সে গোলাপ গুলো ঘ্রাণ নিতে থাকলো। পাশ থেকে জ্যাকের হাসির ঝংকার শুনতে পেল।শ্রুতি গায়ে না লাগিয়ে ফুল গুলো দেখতে থাকলো।
হঠাৎ কী মনে করে জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাকের নীলাভ মনিযুক্ত চোখ গুলো তার দিকেই স্হির৷ শ্রুতির এবার কেমন অস্বস্তি বোধ করলো।জ্যাক ঘোর লাগা নিমগ্ন কন্ঠে বলল,
–শ্রুতি জানো আমার বড় ইচ্ছে তোমাকে লাল টকটকে শাড়িতে দেখবো। তুমি ঘোমটা দেয়া থাকবে। আমি একদৃষ্টিতে তোমার ওই লজ্জা রাঙ্গা মুখটি দেখবো। রাতে আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ওই জোছনা ভরা রজনী টাকে দেখবো। আমাদের একটা ছোট বেবি গার্ল হবে। একটা ছোট ঘর থাকবে আমাদের।
শ্রুতি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল। ওষ্ঠদ্বয় তিড়তিড় করে কাঁপছে। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।বুকের হার্টবিট এর হার বেড়ে গেছে।
হঠাৎ শ্রুতিকে অবাক করে জ্যাক হাঁটু গেড়ে বসল।শ্রুতি হতভম্ব হয়ে গেল। ভাবতে লাগলো জ্যাক কী তাকে প্রপোজ করছে? কিন্তু জ্যাক তো তাকে আরও আগে প্রপোজ করেছে? তাহলে আবার কেন হাঁটু গেড়ে বসলো? কী চায় সে? শ্রুতি একরাশ কৌতুহল নিয়ে উঠে দাড়ালো।জ্যাক তার পকেট থেকে একটা বক্স সামনে ধরলো। অনুভূতিপ্রবণ কন্ঠে বলল ,
–Will you marry me?
জ্যাকের কথা শুনে শ্রুতি দুই ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে হা করে তাকিয়ে রইল জ্যাকের দিকে। মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেছে তার। জ্যাকের হাতে ছোট একটা বক্স। তার ভিতরে একটা আংটি। শ্রুতি আংটিটা দেখে আবার অবাক হলো। হাত অটোমেটিকালি মুখে চলে গেল। মুখে হাত দিয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে জ্যাকের দিকে। এটা তো তার আংটি? কতো প্রিয় ছিল?কতো খুঁজেছে সে? জ্যাকের কাছে গেলো কী করে? শ্রুতির চোখ ছলছল করছে। একমূহূর্তে মধ্যে সে অন্য জগতে চলে গেল।
হালকা ঝাঁকুনিতে শ্রুতির বাস্তবে ফিরল। সে নড়েচড়ে উঠল। তাকিয়ে দেখে জ্যাকের চোখ ছলছল করছে।চোখে আছে একরাশ আকুতি। তার এক হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বলছে,
–Say yes.
শ্রুতি কাঁপছে। শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। কেমন যেনো উত্তেজনা কাজ করছে।আশেপাশের কেউ কেউ চিত্কার করে বলছে,
–Say yes. He wants to marry you, Say yes.
শ্রুতি আশেপাশে তাকালো।পার্কের ভিতরের সব মানুষ যে যার স্হান থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ চিত্কার করে, কেউ হাত নাড়িয়ে বলছে,
–Say yes.
শ্রুতি পুনরায় জ্যাকের দিকে তাকালো। জ্যাকের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। বার বার শ্রুতির হাত ঝাঁকুনি দিচ্ছে। জ্যাক ভাবছে শ্রুতি ইয়েস বলবে না। কিন্তু শ্রুতি কী করবে ভেবে পাচ্ছে না? নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে সে৷ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। এতগুলো মানুষের সামনে কী করে বলবে! কিন্তু জ্যাকের চোখের অশ্রুকণা দেখে শ্রুতির হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল। তার নেত্র কোনা দিয়ে দু এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। শ্রুতি কোনোদিক খেয়াল না দিয়ে বলে দিলো,
–Yes Jack, I want to marry you. I want to spend my whole life with you.
শ্রুতি বলার সাথে সাথেই পুরো জায়গাটা নিরবতায় ভরে গেলো। মুহূর্তে করতালির আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল। কেউ হাত তালি দিচ্ছে তো কেউ শিশ বাজাচ্ছে। জ্যাক
খুশি তে লাফিয়ে উঠলো। সে শ্রুতির হাতের পিঠে আলতো করে নিজের অধর যুগল ছোয়ালো। অতঃপর আংটিটা শ্রুতির অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে দিল। জ্যাক একটু নিচু হয়ে শ্রুতির হাটু জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ঘুরাতে লাগলো। শ্রুতি এরকম ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সে শক্ত করে জ্যাকের কাঁধ ধরলো। চারদিক থেকে হৈ হুল্লোড় ও অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। শ্রুতির নিজেরও খুব খুশি খুশি লাগছে৷ সে নিজের হাত দুটো মেলে দিল৷মনে হচ্ছে সে অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে নতুন একটা জীবনের সূচনা করছে। যে জীবনটা শান্তি, সুখ আর ভালোবাসা দিয়ে গড়া।
ধীরে ধীরে জায়গাটা খালি হতে লাগলো। সবাই যার যার কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে গেল। জ্যাক ধীরে ধীরে তাকে নিচে নামালো। জ্যাকের চোখদুটো জ্বল জ্বল করছে। ঠোটের কোণায় লেগে আছে হাসি। তবুও চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ছে। হুট করে জ্যাক জড়িয়ে ধরল। শ্রুতি হতভম্ব হয়ে গেলো। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। পরক্ষণেই অনুভব করলো তার কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। তাহলে কী জ্যাক কাঁদছে? সে তো রাজি হয়েছে?কাঁদছে কেন তাহলে?শ্রুতি জ্যাকের পিঠে কাঁপতে থাকা হাতটি বুলিয়ে দিলো।কম্পিত স্বরে বলল,
–জ্যা-ক তুমি কাঁদছো কেন?আমি কী কিছু করেছি?
শ্রুতির কথা শুনে জ্যাক যেন আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ফিসফিস করে বলল,
–আজকে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ লাগছে৷ এই চোখের পানি কষ্টের না আনন্দের। নতুন জীবনের। কথা দাও আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না? তোমার আনন্দ সব আমার আনন্দ হবে? তোমার চোখের এই অশ্রু সব আমার অশ্রু হবে? তোমার কষ্ট সব আমার কষ্ট হবে? কথা দাও।
জ্যাক শ্রুতির কাঁধ থেকে মাথা তুলে হাতটা শ্রুতির দিকে এগিয়ে দিলো। শ্রুতি নিজের হাত দিয়ে জ্যাকের চোখের পানিটুকু মুছে নিজের হাত জ্যাকের হাতের উপর রেখে বলল,
–কথা দিলাম কখনো ছেড়ে যাবো না। আজ থেকে তোমার সব আনন্দ আমার আনন্দ। তোমার চোখের অশ্রু সব আমার অশ্রু। তোমার কষ্ট আমার কষ্ট।
জ্যাক শ্রুতি কথা শুনে পুনরায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
–I love you Sruti.I love you than myself
–Me-me too.
জ্যাক হাসলো শ্রুতির উত্তর শুনে। শ্রুতিকে ছেড়ে শ্রুতির কপালে অধরযুগল ছোয়ালো। অতঃপর একহাত দিয়ে শ্রুতিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রেখে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেল।
এদিকে ক্লেণ দূর থেকে গাড়িতে বসে শ্রুতি আর জ্যাকের এই মিলন দেখে উচ্চস্বরে হাসলো। হাসতে হাসতে বললো,
–এতো ভালোবাসা? আর তো শুধু ২৪ ঘন্টা,শুধু ২৪ঘন্টা । তারপর শ্রুতি আমাদের কাছে৷ আর জ্যাক তুমি তো এমনি শেষ হয়ে যাবা শ্রুতির শোকে। এখন যতো ভালোবাসা লাগে বেসে নেও। তারপর শ্রুতি শেষ।
বলেই বিচ্ছিরি ভাবে হাসতে লাগলো। অতঃপর সেও গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
চলবে……
[