আমার গায়ে হলুদের দিন সকালে খবর আসে ছেলের শরীরে প*ক্স উঠেছে।আর যেমন তেমন প*ক্স না,সারা শরীর ভরে গেছে প*ক্স দিয়ে।সব থেকে বেশি উঠেছে মুখে।তাই বিয়ের ডেট টা পেছানো হয়।
ছেলে প্রবাসী তাই ছুটিও কম,তাই কোন রকম সুস্থ হতেই ওই বাসায় থেকে কিছু দিন পর লোকজন আসে আবার বিয়ের ডেট ফেলতে।সাথে ছেলেও আসে।কিন্তু আমার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রতিবেশী যারা ছিলো,সবাই আগে যেমন খুশি ছিলো ছেলেকে দেখে।
আজ তার পুরাই উল্টো।ছেলেকে দেখে সবাই কানাঘুষা করছে।
ছেলের মুখে এত্ত খারাপ ভাবে পক্সের দাগ বসে গেছে যা বলার মত না।মানে মুখ টাই যেন চেনা যায়না।
তাই আমার পরিবারের সবাই ডিসিশন নিলো বিয়েটা ভেঙে দিবে।
আর আশেপাশের সবাই তাই ই বল্লো।
বল্লো যে এর থেকে আরো অনেক ভালো ছেলে পাবে দ্রিতা।
না করে দিন তাদের।
কিছু ক্ষণ পর ছেলে পক্ষকে আমার আব্বু ডেকে নিয়ে বললেন,
আমার মেয়েকে আপনাদের ছেলের সাথে বিয়েটা দিতে পারছিনা বলে দুঃখীত।
কিছু মনে করবেন না।
আমার এত সুন্দর মেয়ে আপনাদের ছেলের সাথে যদি ওর বিয়ে দেই।
রাস্তা ঘাটে যেই দেখবে সেই নানান কথা বলবে।
লোকে হাসবে,
বলবে কি সুন্দর মেয়েটাকে কেমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে ওর বাবা মা।
আমাকে মাফ করবেন আপনারা।
এই বলে বিয়েটা ভেঙে দেন আমার বাবা।
ছেলে পক্ষের লোক যদিও বলেছেন,দেখেন এটা তো আমাদের ছেলে আর নিজে ইচ্ছে করে বানায়নি।
আল্লাহই তো দিয়েছে।
দেখেন এভাবে বিয়েটা ভাঙবেন না।
আমাদের মান সম্মানের ব্যাপার।লোকে কি বলবে।
তাছাড়া ছেলেটাকে সবাই যখন বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করবে,তখন ও কি বলবে?
কত ছোট হয়ে যাবে সবার সামনে ও।
আর সাথে আমরাও।এমন করবেন না ভাই।
কিন্তু আব্বু তাদের কোন কথা শোনেন নি।
পরে আমি সবার সামনে গিয়ে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বললাম,
আব্বু আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো।
আব্বু আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
তুমি বেশি বুঝো?
আমার কথার উপরে কথা বলো।
কি বুঝো তুমি?
কিছু বুঝো তুমি বিয়ে বা দুনিয়া সম্পর্কে?
আমি উত্তরে বলেছিলাম,
আব্বু,তার এই সমস্যা টা না হয়ে যদি আমার হতো,তখন ও কি এই ভাবে বিয়েটা ভেঙে দিতেন?
দিতেন নাতো।
তাহলে?
তাছাড়া বিয়ের পরেই যদি এমন হতো তাহলে কি আমাকে তাকে তা*লাক দিতে বলতেন?
বিয়ের পরও তো এমন হতে পারতো,তাইনা?
আমি আব্বু এই ছেলেকেই বিয়ে করবো।
আব্বু আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেন,সাথে আম্মুও।
কিন্তু আমি আমার কথায় অটল।
আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো।
আমি সেদিন কল্পের চোখে জল দেখতে পেয়েছিলাম।
আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,আমি বেঁচে থাকতে আর কোন দিন আপনার চোখে জল আসতে দিবোনা।আজ ই শেষ কান্না আপনার।
আম্মু আমাকে ফিসফিস করে বলে,আরেকবার ভেবে দেখলে ভালো হতোনা?
আমি উত্তরে বলেছিলাম,
আমার ভাবাভাবি শেষ।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করো।
কল্পের বাসার লোকজন পরের দিনই গায়ে হলুদ আর তারপরের দিনই বিয়ের ডেট ফাইনাল করে।
তাদের ভয়,যদি আমার মতও চেঞ্জ হয়ে যায়।
কল্পরা চলে যায়।
আমাকে এত ক্ষণে সবাই আবার বুঝানো শুরু করে দেয়,
কিন্তু আমি যা বলেছি তাই আমার ফাইনাল ডিসিশন বলে দেই সবাইকে।
পরের দিন আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়।
আমার বাসার মানুষ জন যখন কল্পকে হলুদ দিয়ে বাসায় এসেছে।
সবাই অনেক বাজে বাজে কথা বলেছে।
আমি এক কান দিয়ে শুনেছি,আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি।
আজ আমাদের বিয়ে।
কল্প আমার সাথে বিয়ের আগে একটু কথা বলতে চায়,
বাসায় থেকে অনুমতি দেয়া হয়।
আমি তখন বধূ সেজে বসে আছি।
আর কল্প এসে আমাকে বলে,
_আরেক টা বার ভেবে দেখলেও পারতেন।
আমি দেখতে কুৎসিত হয়ে গেছি।আমি আর আগের মত নেই।
চাইলে আপনি এখনো আপনার মত চেঞ্জ করতে পারেন।
প্লিজ যদি করুণা থেকে আপনি আমাকে বিয়েটা করতে চেয়ে থাকেন।
তাহলে বন্ধ করে দিন এই বিয়ে।
আমি করুণা নিয়ে বাঁচতে চাইনা।
_আমি শুধু একটা প্রশ্ন করবো।
_জ্বী করুন।
_আমাকে কি আপনার পছন্দ না?
_এসব কি বলছেন আপনি?আপনাকে আমি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই আপনাকে আমার ভালো লেগে গিয়েছিলো।
তাইতো আপনার বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম।
_তাহলে চুপ থাকুন।
যা হচ্ছে হতে দিন।
_কিন্ত..
_আর কিছু বলবেন?
বাসর ঘরে শুনবো,ওকে?
এবার যান।
কল্প আমার দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যেতে লাগলো।
তারপর হঠাৎ কি যেন মনে করে পেছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে বল্লো,
_শুনুন,আপনাকে না বধূর সাজে খুবই মায়াবী আর সুন্দর লাগছে।
মাশাআল্লাহ!
আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম।
কল্প চলে গেলো বিয়ের আসরে।
আর অবশেষে হয়েও গেলো আমাদের বিয়ে।
বিয়ের পর আমি আম্মু আব্বু সবাইকে বিদায় জানিয়ে কল্পের সাথে কল্পদের বাসায় চলে আসি।
সবাই আমাকে বরণ করে নেয়।
কল্পদের বাসার সবাই অনেক খুশি আমাকে পেয়ে।
কল্পর বন্ধুরা সবাই গাদা এবং গোলাপ ফুল দিয়ে আমাদের বাসর ঘর সাজায়।
অনেক রাত হয়ে গেলে কল্পের ভাবী আমাকে কল্পের রুমে দিয়ে আসে।
আমি ফুলে সাজানো খাট টার মাঝ খানে গিয়ে বসি।
পাশেই ফুল দিয়ে লিখা আছে দ্রিতা+কল্প।
লিখাটা দেখে কেমন যেন একটা অদ্ভুত সুন্দর অনুভূতি কাজ করছে।
আর তখনই কল্প রুমে প্রবেশ করলো।
সে রুমে ঢুকেই তার প্রথম কথা ছিলো,
_আচ্ছা আমি কি খাটে এসে বসবো?
নাকি ফ্লোরেই শুয়ে পড়বো?
না মানে অনেক রাত হয়েছেতো,আপনিও অনেক টায়ার্ড।
তাই বলছিলাম আরকি।
ঘুমিয়ে পড়ুন তাহলে।
আমিও ঘুমিয়ে পড়ি,কিন্তু কোথায় শুবো আমি?
আমি এবার প্রচুর রেগে গেলাম,
রেগে গিয়ে বললাম,
রুমের বাইরে গিয়ে ঘুমা তুই।
একদম রুমে ঢুকবিনা,একদম না।
কল্প এবার দৌড়ে আমার কাছে এসে বলে,
রাগ করেছো?
আচ্ছা সরি।
বসি তাহলে হুম?
_বাহ একবারে আপনি থেকে তুমি?
_তুমি যদি আপনি থেকে একবারে তুই ই নেমে আসতে পারো।
আমিতো সেখানে তুমি বলতেই পারি তাইনা?
_আমি লজ্জা পেয়ে বললাম,সরিইই!
কল্প আমার ডান হাত টা ওর বুকের মধ্যে শক্ত করে ধরলো।
আর বল্লো,
আমার জীবনে আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৬ মাস কেটে গেলো।
কল্প আবার বাইরে চলে গেছে।
কিন্তু সবাই আমাকে এ কয়দিনে জিজ্ঞেস করেছে আমাদের বেবী হয়নি কেন?নাকি বেবী নেইনি?
মানুষ জন না পারেও বটে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় দু বছর।
দু বছর পর কল্প আবার দেশে ফিরেছে।
আমার কাছে এই দুইটা বছর দুইটা যুগ মনে হয়েছে।
আমরা এবার বেবী নেয়ার জান্য ট্রাই করছি,
কিন্তু কেন যেন হচ্ছেনা।
আমাদের বাসার লোকজন সবাই আমাকে বেবী নেয়ার কথা বলছে,
আমি তাদের বলেছি,আল্লাহ দিলে হবে।
আমি এবার খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।
গত বারও হলোনা বেবী,
এবারও হচ্ছেনা।
কেন হচ্ছেনা,আল্লাহ কেন দিচ্ছেনা।
এখন লোকজন বলাবলি শুরু করেছে,পক্সের কারণে নাকি কল্পের প্রবলেম হয়েছে,তাই নাকি আমাদের বেবী হচ্ছেনা।
গ্রামের লোকজন পারেও বটে।
কি সব কুসংস্কার নিয়ে পড়ে আছে এরা।
কল্পকে একদিন একজন ডেকে বল্লো,
_ডাক্তার দেখাও মিয়া।
যদিই তোমার কোন সমস্যা থাইকা থাকে।
যে অসুস্থ হইছিলা তুমি।
কল্প বাসায় এসে আমাকে বলে,রেডি হও তো দ্রিতা।
ডাক্তারের কাছে যাবো।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম,কি হয়েছে ওর জানতে চাইলাম।
ও বল্লো,কিছু হয়নি।
বেবীর জন্য ডাক্তার দেখাবো।
চলো যাই।
আমি বললাম,এত তাড়াহুড়োর কি দরকার?আল্লাহ যখন চাইবেন দিবেন।
কল্প বল্লো,তবুও ডাক্তার টা দেখাই চলো।
আমি আর কল্প ডাক্তারের কাছে গেলাম।
ডাক্তার আমাদের কিছু টেস্ট দিলেন,
টেস্ট গুলো করে আমরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি।
_দ্রিতা!
_হুম,
_আচ্ছা,যদি শোনো আমি কখনো বাবা হতে পারবোনা।
তাহলে তুমি কি আমায় ছেড়ে চলে যাবে?
_ধুর কি সব যে বলো না তুমি।
দেখবে আমাদের কারোই কোন সমস্যা নেই।
এমনিতেই কনসিভ হচ্ছেনা।
পরে হবে বুঝেছো?আল্লাহ যখন চাইবেন।
আর আমি তোমায় কোন দিন ছেড়ে যাবোনা।রেজাল্ট যা ই হোক না কেন।
কোন দিন যাবোনা।
এরমধ্যে আমাদের রিপোর্ট চলে আসে।
আমরা রিপোর্ট গুলো নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই।
ডাক্তার রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলেন,
একটা ব্যাড নিউজ আছে।
চলবে..
#ভুলনা_আমায়
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#১ম_পর্ব
এই মাঝ রাতে ইচ্ছে করলো লিখতে,তাই লিখে ফেললাম।
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যই জানাবেন,ধন্যবাদ।