#ভ্রান্তির_অগোচরে
লেখা আশিকা জামান
পার্ট ১২
রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম ছিলো। ডাক্তারের এপোয়নমেন্ট ছিলো বিকেল ৫টা থেকে। ওখানেও লেট হয়ে যায় কিছু টেস্ট দিয়েছিলো।হিসেব মতো বাসায় পৌছুতে পৌছুতে সাড়ে নয়টা বেজে যায়।
আজকে বাসায় এ নিয়ে যে ঝামেলা হবে এটা ও বেশ বুঝতে পারছে।
প্রতিদিন রাত দশটা নাগাদ সোহেল চৌধুরী বাসায় ফেরে। আজকে আগেই ফিরেছে। ড্রয়িংরুমে শ্বশুড়ের মুখটা দেখতে পেয়ে মিম যেন হালে পানি পেলো। অন্তত উনি ওকে কোন কথা শোনাবেন না, পারলে প্রটেস্ট করবে।
মিম নিঃশ্বব্দে উনাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে পিনপতন নিরবতা। মিম মুহুর্তকাল বিলম্ব না করে রুমে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়।
” দাড়া, কোথায় গিয়েছিলি?”
শাশুড়ির করা প্রশ্নে মিম কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে অন্তত অহেতুক টেনশান না করে বাসায় এসে কি বলবে এটা ভাবা উচিৎ ছিলো।
ইদানীং শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। মাথাটা যখন তখন চক্কর দিয়ে উঠে। শরীর দূর্বলতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ঘুম থেকে উঠেই বমি একটা প্রাত্যাহিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তারউপর না খেয়ে না নেয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে, শরীরের হাড় গুনে গুনে বলা যাবে। এতোকিছুর পর হাত গুটিয়ে বসে থাকার মত মেয়ে ও নয়। তাছাড়া অন্যরকম একটা ভাবনা শরীর মন আচ্ছন্ন করে রেখেছে। এর শেষ না দেখলেই নয়।
নিজের সাথে না পেরে তাইই ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলো।।এখনি সবাইকে সবটা জানানোর মত বোকামো করার ইচ্ছে আপাতত ওর নেই।
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
সোহেল চৌধুরী বেশ গম্ভীর ভাবেই কথাটা বললেন।
মিম তখনো চুপ করেই ছিলো। শিউলি টিপ্পনি কেটে বলে উঠলেন,
” কি বলবে ও? বলার মুখ থাকলে না বলবে। দিন নাই রাত নাই বাড়ির বউ হুটহাট কাউকে না বলে বাহিরে চলে যাচ্ছে। এটাও দেখার বাকী ছিলো।”
“সবুজের মা, চুপ করোতো।”
অনেকটা ধমকের সুরেই স্ত্রীকে থামালেন। পরক্ষণেই মিমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করোনি। আজকে আমি তোমাকে কোন সাপোর্ট করবোনা।
অন্তত গাড়ীটাতো নিয়ে যেতে পারতে? এইভাবে না বলে কয়ে কোথাও গেলে যে আমাদেরো টেনশান হতে পারে এটা তুমি বুঝলেনা!”
” এইভাবে ভদ্রভাবে বললেই কি ওর পেট থেকে কোন কথা বের করতে পারবা? পারবানা। খুব ধড়ীবাজ।”
” শিউলি জাস্ট সেট আপ। তুমি যদি আর একটা কথা বলেছো আমি এখান থেকে উঠে যাব।”
স্বামীর রাগের খবর তার বেশ ভালোকরেই জানা আছে। অনিচ্ছাসত্বেও চুপ করে গেলো।
” মিম, যাও তোমার রুমে যাও। আর ফ্রেস হয়ে এসো একসাথে ডিনার করবো।”
এইমুহুর্তে বাসায় কোন ঝামেলা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে সোহেল চৌধুরীর নেই।
মিম নিঃশব্দে রুমে ঢুকে। এসিটা ছেড়ে দেয় তাড়াতাড়ি। ইদানীং শরীরে উত্তাপ বেড়েই চলেছে। কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা। এসি ছাড়লে ঠান্ডা লাগে আবার অফ করে গরমে শরীর জ্বলে পুড়ে উঠে। নাহ্ শাওয়ারটা বোধ হয় নিতেই হবে। শাওয়ার নেয়ার সময় শরীরের এই হঠাৎ পরিবর্তন ওর দৃষ্টি এড়ায় না। অনেকদিন নিজেকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়নি।
ডাক্তার যেটা সন্দেহ করছে সেটাই কি ঠিক? ও কি প্রেগন্যান্ট!
নাহ্ কিছু ভাবতে পারছেনা। কথা ছিলো ওর বান্ধবী রিমু কালকে এসে রিপোর্ট টা দিয়ে যাবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভালোমন্দ একটা কিছু না জানা অব্দি স্বস্তি পাওয়া যাবেনা। বুকের ভেতরটা কেমন হাসপাস করতে লাগলো।
——————————————–
” ইউ আর সো হ্যান্ডসাম।”
নায়রা অনেকটা গায়ের উপর পড়েই কথাটা বললো।
সবুজ মনে মনে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ওর প্রত্যেকটা দীর্ঘশ্বাসে ঠিক কতোটা বিষাদবেলার উপখ্যান জড়িয়ে থকে তা কেবল ওই ভালো জানে।
” যে নিজের ওয়াইফের দৃষ্টিআআকর্ষন করতে পারে না তাকে অন্যকেউ কি বললোনা বললো তাতে তার যায় আসেনা।
যদিও এখানে এসে এই কয়েকমাসে ও পুরা চেঞ্জ হয়ে গেছে। রেগুলার এক্সারসাইজ, ডায়েট সব মিলিয়ে ও এখন অনেকটা স্লিম। নিজের শরীরের উপর এই এক্সট্রা কেয়ার কেন যে ও নিচ্ছে তা মাঝেমাঝে ওর নিজেরই বোধগম্য হয়না। হয়তোবা মিমের উপর চাপা অভিমানে ও নিজেকে পরিবর্তন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। হয়তোবা মিমকে ও দেখিয়ে দিতে চায় ওর জন্যেও মেয়েরা পাগল হতে পারে। সে যাই হোক এই মুহুর্তে এই একটা কথাও সবুজ স্বীকার করবেনা।
নায়রা মেয়েটার গায়েপড়ার স্বভাবটা সবুজের মোটেও প্রছন্দ হয়না। ও আর নায়রা টরেন্টোতে পাশাপাশিই ফ্ল্যাটেই থাকে। আর ঘটনাচক্রে একি ইউনিভার্সিটিতেই পড়ে। ওখান থেকেই আলাপ, বাংলাদেশি বলে ওর প্রতি একটা আলাদা সফট কর্নার কাজ করে সবুজের। কিন্তু তাই বলে ওর এইসব ন্যাকামো সবসময় নিতে পারেনা সবুজ। এই যেমন এখন ওর চরম বিরক্ত লাগছে।
নায়রার দিকে চোয়াল শক্ত করে সবুজ বলেই ফেললো,
” ওয়েট এই কথাটা দুই কদম দূরে থেকে বললেও আমি শুনতে পেতাম। আই থিংক আমি বোবাকালা নই। এইভাবে গায়ের উপড় পড়ার কোন দরকার ছিলো কি?”
নায়রা অপমানটা গায়ে মাখালোনা। যাই হোক এইরকম সুদর্শন, তারউপর ফ্যামিলির ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে যেকোন মেয়ের মনে ধরার কথা। ওকে হাতছাড়া করাটা বোকামো ছাড়া আর কিছু নয়।
” ওহ সরি, আসলে আমি একটু এইরকমই। আর বুঝতে পারিনি তুমি এইরকম ঘেঁষাঘেঁষি করাটা অপ্রছন্দ করো।
তবে প্রমিজ আর এরকম করবোনা।”
নায়রা কপট অভিমান দেখিয়ে মিনমিনিয়ে কথাটা বললো।
” লিসেন নায়রা, এইরকম প্রমিজ আর কত করবা? অলরেডি বহুবার করে ফেলেছো।”
নায়রা হঠাৎ করে এসে সবুজের হাত ধরে ফেললো।
” এক্সট্রেমলি সরি। এবারের মতো ক্ষমা করো।”
নায়রা যতো দ্রুত হাতটা ধরেছিলো। সবুজ ঠিক ততোটা দ্রুততার সাথেই হাতটা ছাড়িয়ে চলে আসে।
নায়রা বুঝতে পারেনা হুট করে সবুজের কি হয়ে যায়? এইভাবে চলেই বা কেন গেলো? ও কি এমন অপরাধ করে ফেলেছো। ছেলেটাকে অত্যাধিক মোডিস্ট ছাড়া আর কিছু মনে হয়না।
চলবে..