#ভ্রান্তির_অগোচরে
লেখা আশিকা
পার্ট ০৩
” মিম তুমি এইভাবে ব্রেকফাস্ট না করে চলে আসলে কেন? হঠাৎ কি এমন হলো?”
সবুজ বেশ উচ্চস্বরেই চেঁচিয়ে উঠলো।
” আমার ইচ্ছে হয়েছি আসছি। আপনার তাতে কি?”
ফুঁসতে ফুঁসতে কথাটা বললো মিম।
” আমার তাতে কি? সত্যিইতো আমার কি?
আমার কিচ্ছু না। ”
সবুজ ধপাস করে মিমের গা ঘেঁষে বসে পড়লো। ওকে এভাবে বসতে দেখে মিম কিছুটা সরে এসে সবুজের চোখের দিকে তাকায়।
সবুজ অগ্নিচোখ দেখে মিম কিছুটা ভড়কে যায়।
” তুমি আমার সাথে যা খুশি তাই করতে পারো। হ্যা, সে অধিকার আমি তোমাকে দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে তুমি বাবা-মায়ের সাথে যা খুশি তাই করবে, এটা আমি কিছুতেই মেনে নিবোনা।”
” অদ্ভুত! আমি তাদের সাথে কি এমন করেছি? এভাবে বলার মতো কিছুইতো আমি করিনি।”
” তোমার ঐভাবে চলে আসা দেখে বাবা-মা কতোটা হার্ট হয়েছে বুঝতে পারছো।দেখ তোমার আমার সম্পর্কটা যে কম্পলিকেটেড। আমি চাইনা এটা জেনে বাবা-মা কষ্ট পাক।কিন্তু তোমার আচরণে সবাই সন্দিহান। অন্তত যারা তোমার জন্য এতো কিছু করলো, তাদের কথা তুমি একবারো ভাববে না”
” এই কথাগুলো আপনি কেন বলছেন, সেটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি?”
” কি বুঝতে পারছো তুমি?”
” এই যে, এখানেতো আপনি বেশ সুবিধে করতে পাচ্ছেন না। তাই হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যানটা এঁটেছেন। আমি শিউর আপনিই বাবাকে বলেছেন টিকেটটা কাটার
জন্য। আর এখন আমাকে ফোর্স করা হচ্ছে বাবা-মায়ের দোহাই দিয়ে। ”
” তুমি কি জানো? তুমি চূড়ান্ত বেয়াদব একটা মেয়ে।
আজকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে যাওয়ার আগমুহূর্তেও আমি জানতাম না এই টিকেট কাটার বিষয়টা। বাবা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই এমনটা করেছে। বিশ্বাস করো আমি যদি ঘুণাক্ষরেও জানতাম তবে যে করেই হোক ক্যানসেল করতাম। অন্তত আমিতো জানি তুমি আমাকে ঠিক কতোটা অপ্রছন্দ কর।”
” তার মানে কি, যেই লাউ সেই কদু। ফাইনালি যাওয়া হচ্ছে তাই না!”
সবুজ মাথা নিচু করে ফেলে।
” বুঝেছি বুঝেছি। কিন্তু মিঃ সবুজ আজকে ব্রেকফাস্ট টা, যেমন সবার সামনে শুধু এই কারণে স্কিপ করে গেলাম। তেমনি কালকে হানিমুনে যাওয়াটাও আমি স্কিপ করলাম।”
সবুজ দু হাত মুষ্ঠি করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। কিন্তু বেশীক্ষণ স্থায়ী হলোনা।
মুহূর্তেই মিমের দুই চিবুক বেশ শক্ত করে ধরে ওর মুখের খুব কাছে নিয়াসলো।
ভয় আর উত্তেজনায় মিম মূর্ছা যেতে লাগলো।
” তুমি মানো আর না মানো তুমি আমার স্ত্রী। তাই আমার কথা মানতে তুমি বাধ্য। না মানতে চাইলে জোড় করার অধিকারটুকুও কিন্তু আমার আছে। অধিকার আদায় করে নেয়ার যোগ্যতা আর ক্ষমতা দুইটাই আমার আছে।”
একটা সজোরে ধাক্কা দিয়ে সবুজ মিমকে বিছানায় ফেলে দেয়। মিম নিজের দুই গালে আলতো করে হাত বুলায়। ওর গালদুটোতে লালচে আর অগ্নিসম উত্তাপ ছেয়েঁ আছে।
মিমের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই সবুজের পাশে বসে থাকার। বিছানা থেকে নেমেই ওয়াশরুমে চলে যায়। সবুজ কপালে হাত দিয়ে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ইচ্ছে হচ্ছে যদি কোনভাবে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতে পারতো! এত দুঃসহ যন্ত্রনা ও আর নিতে পারছেনা।
ভাবতে ভাবতে দুচোখের পাতায় কখন যেন ঘুম নামক প্রশান্তি নেমে এলো।
ঘুম নামক স্বপ্ন জুড়েও মিম আকুলিবিকুলি করে বিচরণ করতে লাগলো। সবুজের ঘুম ভাঙ্গতেই এদিকসেদিক মিমকেই খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ ওয়াশরুমের পানির শব্দ অনেকটা চমকানোর মতো করেই সবুজ উঠে বসলো।
ফোন টা পকেট থেকে বের করে দেখে ১:৩০ বাজে। সবুজ বিছানা থেকে উঠে অজানা আশঙ্কায় ওয়াশরুমের দরজার কাছে যায়। ভাবনাটা মাথায় আসতেই সজোরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো।
” মিম, দরজা খোল। ওয়াশরুমে এতোক্ষন করছোটা কি? খুলো?
মিম। এই মিম।”
কিন্তু মিমের কোন সাড়াই পাচ্ছিলোনা।
“আচ্ছা মিম, তুমি যদি না খোল আমি কিন্তু দরজা ভেঙ্গে ফেলবো।”
গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে সবুজ দরজা ধাক্কাতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর ক্যাচ করে দরজা খোলার শব্দ হলো।
ভেজা শাড়ী সারাগায়ে লেপ্টে শরীরের ভাজ স্পষ্ট দৃশ্যমান হচ্ছে। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়তে লাগলো। একমুহূর্তের জন্যে হলেও সবুজের পুরো পৃথিবী থমকে যায়। অনেকক্ষণ ভিজার জন্য মিম থরথর করে কাঁপতে লাগলো। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলোনা। বেকার দাড়িয়ে না থেকে সবুজ মিমের দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো।
” তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
তিনঘণ্টা ধরে তুমি পানিতে ভিজছিলে? তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে?”
মিম কোন উত্তর দিচ্ছিলোনা।
“যাও ড্রেস চেঞ্জ করো।”
ধমকের সুরেই কথাটা বললো সবুজ।
” করবোনা ছাড়ুন। ”
“নাহ্ করলে আমি আছি কি জন্যে?
করিয়ে দিচ্ছি।”
মিম লাফিয়ে উঠার মতো করে, বলে উঠে।
” লাগবেনা আমি করছি।
” ঠিক আছে অনলি পাচঁ মিনিট। এরমধ্যে ড্রেস চেঞ্জ না করে আসলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”
সবুজ, মিমের ড্রেস ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে, জোর করে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়।
কোনরকমে ড্রেসটা চেঞ্জ করে মিম রুমে ঢুকে। মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বার বার হাচিঁ আসতেছিলো। হাচিঁ দিতে দিতে মিম বিছানার কোণে বসে পড়ে।
সবুজের রাঙা চোখের দিকে তাকিয়ে মিম একপ্রকার চমকেই উঠে। মানুষটার নির্লিপ্ত ভঙ্গির চাহনী, ভেতর ভেতর ওকে বড্ড দূর্বল করে দিতে লাগলো। বড্ড ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করলো, এতোক্ষণ ধরে ওর করা সমস্ত কীর্তিকলাপগুলোকে। ওর কাছে সমস্ত কিছুই ভ্যালুলেস মনে হতে লাগলো।
সবুজের প্রস্তাবটা কেন জানি আরেকবার ভেবে দেখতে ইচ্ছে করছে।
হঠাৎই দরজায় নক করার মতো শব্দ হয়। সবুজ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
অনেক অজানা আশঙ্কায় ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে সবুজের মা বিছানার এক কোণে বসে পড়ে।
এই মূহুর্তে শাশুড়ির আগমণে মিম অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলে।
” যে জন্য এসেছিলাম। মিম, সবুজ তোদের মধ্যে সব ঠিকতো?”
ধরা গলায় কথাটা বললো সবুজের মা।
” মা, হঠাৎ করে তোমার এটা কেন মনে হচ্ছে?”
” মনে হওয়ার অনেক কারণই আছে। আচ্ছা, মিম সকালে ওই হানিমুনের টিকেট কাটার বিষয়টা শোনারপরই ওমন রিএক্ট করে উঠে আসলি কেন তুই?
তুই কি কোনকারণে সবুজের সাথে মানিয়ে নিতে পাচ্ছিস না। তোর যদি ওকে এতোটাই অপ্রছন্দ ছিলো, তাহলে বিয়ের আগেইতো ক্লিয়ার করতে পারতি তাই না।”
মিম ভেবে পায়না এই সবের কি উওর দেবে ও? এখন সমস্ত কিছুর দায়ভার যে ওকেই নিতে হবে।
অশ্রুসজল চোখে মিম, সবুজের দিকে তাকায়।
ওর চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা যে সবুজের আছে। ও ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে তারি প্রমাণ দিতে লাগলো।
” মা, আসলে ব্যাপারটা ওরকম কিছুই না। তুমি অহেতুক টেনশন করছো। আসলে কালকে রাতে কোন একটা বিষয় নিয়ে, আমি মিমকে অহেতুক বকাবকি করেছি। অনেক কটু কথা শুনিয়েছি। পরে বুঝতে পারছি যে ভুলটা আমারি। মিম আমার উপর ঐ কারণে কালকে থেকে অভিমান করে আছে। ওইটার রিএকশন সকাল পর্যন্ত ছিলো তাই ও এমনটা করেছে। মা তুমি দেখো, আমরা আর চার পাচটা নরমাল কাপলদের মতো। মান-অভিমানতো সব সম্পর্কেই আছে তাই নয়কি?
আর আমার রাগ সম্পর্কেতো তুমি ভালো করেই জানো।”
” হ্যা জানিতো, এরপর থেকে এমন অহেতুক কারণে বকাবকি করে মেয়েটাকে কাঁদাবি না। মেয়েটা আমার বড্ড দুঃখি।”
শাশুড়ি চলে যাবারপর মিম হয়তোবা সবুজকে কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু সবুজ না শোনতে চাওয়ার ভাণ করে, ওখান থেকে চলে যায়।
রাতে মিমের প্রচণ্ড জ্বর এসে গেলো। সবুজের কানে কথাটা উঠতেই মেয়েটার উপর আর অভিমান করে থাকতে পারলোনা। মেয়েটাকে যে ও বড্ড ভালোবাসে।
সবুজ দৌড়িয়ে রুমে ঢুকে। জ্বরের ঘোরে মেয়েটা বেহুঁশ হয়ে আছে। মেয়েটার কপালে হাত দিতেই সবুজের চোখের কোণের জল চিকচিক করতে লাগলো।
এইসবের জন্য ও দায়ী।
আজকে ওর জন্যই মেয়েটা নিজেই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে।
সবুজ সারা রাত জেগে মিমের সেবা করতে লাগলো।
জ্বরের ঘোরে মিম বারবার নিজের শাড়ী নিজেই উন্মুক্ত করে ফেলছিলো।
এইরকম অবস্থায় এই প্রথম মিমকে দেখে সবুজের বারবার ওর কাছে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
পরক্ষণেই ওর মনে হলো, মিমের এই সৌন্দর্য্য দেখার কোন অধিকার ওর নেই।
সবুজ বারবার ওর গায়ে শাড়ী জড়িয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু একটুপরেই সবুজ বুঝতে পারলো যে ও বৃথা চেষ্টা করছিলো।
মিমের গায়ে একটা চাদর টেনে দিয়ে ও পাশে বসে পড়লো। শেষ রাতের দিকে সবুজের চোখ লেগে আসে।
চলবে…..