ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ১৩

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_13
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

নাফিয়া বইটা বন্ধ করে রেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল ।কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ক্ কি হয়েছে আঙ্কেল ? আ্ আমি কি কোনো ভুল করেছি ? আপনাদের সবাইকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন ?

নাফিজ রহমান তড়িৎগতিতে বললেন না না মা তুমি কোনো ভুল করোনি ।
তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো আমরা বলছি সব।
নাফিয়া নাফিজ রহমানের কথামত বসে পরল ।নাফিজ রহমান-ও নাফিয়ার সামনের দিকে মুখ করে বসলেন ।স্ত্রী , সন্তানদের দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন

আমরা সব জানি নাফিয়া ।তোমার পরিবারের কথা ।

নাফিয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল নাফিজ রহমানের দিকে ।সে টলটল দৃষ্টিতে বলল

আ্ আঙ্কেল..নাফিয়া কিছু বলার আগেই নাফিজ রহমান বলে উঠলেন

রাইশা আমাদের ফোন করে সব জানিয়েছে ।তোমার পরিবারের নৃশংসতার কথা আমাদের আর অজানা নেই ।

মিসেস অনিতা আশ্চর্যজনক গলায় বললেন একটা মানুষ কতটা জগন্য হলে নিজের বৌ আর মেয়েকে হত্যা করে ?

আরদিন দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল আমার তো ইচ্ছে করছে ঐ বাড়ির সব কয়টা কুকুরদের পুলিশে ধরিয়ে দিতে !

নাফিজ রহমান গম্ভীর গলায় বললেন এতে কি লাভ ? ওদের ক্ষমতা অনেক ।দুইদিন পর আবার জেল থেকে বের হয়ে আসবে।

মিসেস অনিতা চেহারা মলিন করে বললেন , কোন দুঃখে যে মেয়েটাকে ঐ বাড়ি বিয়ে দিতে গিয়েছিলাম ? আমার মেয়েটাকেও যদি ওরা কিছু করে ফেলে তো ?অনিতার গলা কাঁপছে ।

আরদিন ক্রুব্ধ গলায় বলে , কালকেই আমি রাইশাকে ঐ নরক থেকে নিয়ে আসব ।

নাফিজ রহমান ছেলের কথার প্রত্যুত্তরে গম্ভীর গলায় বললেন , না তুমি কোথাও যাবেনা ।আমি চাইনা তোমার কোনো ক্ষতি হোক ।রাইশার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার হলে ভেবেচিন্তে নেব ।আমি কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাইনা এতে পরিণতি আরো খারাপ হয় ।আর ওরা এত সহজে বাড়ির বৌকে ছাড়বেনা উল্টো আমাদের-ই ক্ষতি করবে আর আমি এটা চাইনা ।

বাবার কথায় আরদিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।সে মনে মনে ভাবে বাবার কথা আসলেই ঠিক তাড়াহুড়ো করে কিছু করলে ফল আরো খারাপ হবে ।তবে বোনের জন্য-ও খুব চিন্তা হয় ওর ।বোনটা কেমন আছে কে জানে ?

নাফিজ রহমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে নাফিয়ার হাতজোড়া স্নেহের সাথে আলতো করে ধরে বললেন

তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই মা মন দিয়ে শোন ।

নাফিয়া ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।তার প্রচন্ড হাঁসফাঁস লাগছে এই মুহূর্তে ।কপাল বেয়ে চিকন ঘাম পরছে ।

নাফিয়ার অবস্থা দেখে নাফিজ রহমান বললেন তুমি কি ভয় পাচ্ছো মা ?

নাফিয়া ভীতু গলায় বলল , ভয় পাচ্ছি না আঙ্কেল ।আপনি বলুন কি বলবেন আমি শুনছি ।

নাফিজ রহমান এবার গম্ভীর গলায় বললেন , তোমায় এই বাড়িতে থাকতে হলে এই বাড়িটাকে আর এই পরিবারটাকে নিজের মনে করে থাকতে হবে ।

নাফিজ রহমানের কথা শুনে নাফিয়ার চমকে যাওয়ার মত অবস্থা হল ।সে এই কথার প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পেলনা ।তবে তার মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে ।ভালো লাগা কাজ করছে এই পরিবারের প্রতি।

নাফিজ রহমান আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগেই মিসেস আনিতা বললেন

মাঝেমধ্যে আমি বা রিয়া বাড়িতে না থাকলে তখন যদি তোমার ক্ষুধা পায় তখন বিনা সংকোচে নিজের হাতে খাবার বেড়ে খেয়ে নিবে ।মনে কোনো সংকোচ রাখবেনা ।যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় আমায় বলবে আর আমায় যদি বলতে না পারো তাহলে রিয়াকে বলবে বুজতে পেরেছ মা ?

নাফিয়া টলটল দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে আছে ।নাফিজ রহমান আলতো হাতে নাফিয়ার চোখটা মুছিয়ে দিয়ে বললেন

অতীতে যা হয়েছে সব ভুলে যাও ।নতুন করে বাঁচতে শেখো ।আজকে থেকে আমরা-ই তোমার আপন ।তোমার যা প্রয়োজন হবে আমরা তা পূরন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব ।তবে নিজেকে কোনোদিন এই বাড়ির পর মনে করোনা তাহলে কিন্তু আমরা খুব কষ্ট পাবো মা ।

নাফিয়ার কি হল সে জানেনা ।মুহূর্তেই নাফিজ রহমানের হাতদুটো নিজের কপালে ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগল ।

নাফিয়ার কান্না দেখে নাফিজ রহমানসহ , আনিতা আর রিয়ার বুক ফেঁটে কান্না আসছে ।নাফিজ রহমান নিজেকে সামলে নিয়ে স্নেহের সাথে নাফিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন

তুমি চাইলে আমায় বাবা ডাকতে পারো ।
আর আনিতাকে মা ডাকতে পারো ।

নাফিয়া এবার কান্নারত অবস্থায় নাফিজ রহমানকে জড়িয়ে ধরে বললেন

ধন্যবাদ ।আমায় এতোটা আপন করার জন্য ।

আনিতা নাফিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।আনিতার মেয়েটার জন্য বড্ড কষ্ট হয় ।কতকিছু সয়েছে মেয়েটা ।অনিতা একটা তপ্তশ্বাস ছাড়ল ।

আনিতা আর নাফিজ রহমান আরো কিছুক্ষন নাফিয়ার সাথে সময় কাটিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলেন ।থেকে গেল শুধু আরদিন আর রিয়া ।

মা , বাবা চলে গেলে আরদিন নাফিয়ার পাশে বসে ধরা গলায় বলল

তুমি তো আমায় খুব ইমোশনাল করে দিলে নাফিয়া ।এর জন্য তোমায় অনেক বড় শাস্তি পেতে হবে ।রিয়া ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে ।আরদিনের চোখে পানি টলটল করছে।রিয়া আজ পর্যন্ত ভাইকে এতটা ইমোশনাল হতে দেখেনি ।

আরদিন আগের মত ধরা গলাতেই নাফিয়াকে জিজ্ঞেস করল , আমার শাস্তির জন্য প্রস্তুত তো তুমি ?

নাফিয়া আরদিনের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমতা আমতা করে ভীতু গলায় বলল , আ্ আমি প্রস্তুত ।

নাফিয়ার অবস্থা দেখে আরদিন হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠল ।আরদিন হাঁসি থামিয়ে বলল এত ভীতু হলে কিভাবে হয় ?
শোন শাস্তিটা হল , রিয়া যেমন আমায় ভাই ডাকে ঠিক তোমাকেও আমায় ভাই ডাকতে হবে বুজলে এটাই হচ্ছে তোমার শাস্তি ।আর কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে তোমার এই ভাইটাকে বলবে কোনো সংকোচ করবেনা ।

নাফিয়া মুচকি হেঁসে বলল ঠিক আছে ভাইয়া ।আরদিন রিয়া আর নাফিয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে গেল ।

নাফিয়ার মনটা হাল্কা হয়ে গেছে ।আজকে থেকে তার জীবনেও সুখ ধরা দিল ।অন্ধকার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আলোর দেখা পেল ।নাফিজ রহমানের মত একজন ভালো বাবা পেল , আনিতার মত মা পেল , আরদিনের মত একজন ভাই পেল , রিয়ার মত বোন পেল ।অতীতে যা কিছুর অভাব ছিল তা সবই আজ পেয়ে গেল ।নিজের জীবনটাকে পরিপূর্ন লাগছে নাফিয়ার ।কোনো কিছুর-ই অভাব নেই আজ তার ।

রিয়া কিছুক্ষণ হলো ঘুমে কাত ।নাফিয়া গল্পের বাকিটুকু পড়া শেষ করে বইটা টেবিলে রাখতে গিয়েই দেখতে পেল এক টুকরো কাগজ ভাজ করা।নাফিয়া কাগজটা হাতে নিল ।এই কাগজটা কালকে স্পর্শ টেবিলের নিচ দিয়ে তার হাতে গুজে দিয়েছিল ।কাগজটা আর খুলে দেখা হয়নি ।নাফিয়া কাগজের ভাজটা খুলে বিরবির করে পড়ল

তুমি ভীতুর ডিম অমন গোমড়া মুখী হয়ে আছো কেন ? এমন ভাব করছ যেন আমি তোমায় মেরেছি । শোন আমি তখন নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি ।তাই বিহেভিয়ারটা একটু বাজে হয়ে গেছে ।ফর গড সেইক এমন গোমড়া হয়ে থেকোনা আমার ভালো লাগছেনা ।তোমার মুখশ্রী অমাবস্যার চাঁদ বানানোর জন্য নিজেকে ভীষন ভীষন অপরাধী মনে হচ্ছে । যদিও তোমার চেহারা অমাবস্যা চাঁদের মতই ।তারপর-ও নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে ।

নাফিয়া কাগজটা কুঁচি কুঁচি করে ছিড়ে চোখ ছোট ছোট করে বিরবির করে বলে ,

সরি তো একবার বলল-ই না উল্টো বলে আমি নাকি ভীতুর ডিম , আমার চেহারা নাকি অমাবস্যার চাঁদের মত ।আরেকবার শুধু দেখা হোক আমি আপনাকে বুঝিয়ে ছাড়ব ভীতুর ডিম কি আর কাকে বলে মি. স্পর্শ রওনাফ বলেই ঠোট প্রশস্ত করে হাঁসল নাফিয়া ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here