#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_9
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain
নাফিয়ার পালানোর খবরটা সকালের আলো স্পষ্ট হতেই বাড়ির পুরুষরা সবাই জেনে গেছে ।আজম খাঁন সকাল থেকে দরজা জানালা বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন ।
এদিকে তনয় বাড়ির সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে ।আরিফ খাঁন সাহস পাচ্ছেন না ছেলেকে থামানোর ।নিলয়-ও বাড়িতে নেই সেই সকালে বেরিয়েছে নাফিয়াকে খুঁজতে ।আতিফা , রাইশা আর আছিয়া রুমে চিন্তাগ্রস্ত চেহারা নিয়ে বসে আছে ।এই মুহূর্তে নিচে যাওয়ার সাহস কারোর-ই নেই ।
—— ভাই আমরা সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজছি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনাই ছেলেটা বলল ।ছেলেটার চেহারায় ভয় স্পষ্ট ।কারন এই মুহূর্তে যে কেউ তনয়কে ভয় পাবে ।
ছেলেটার বলতে দেরি হল তনয়ের ডাইনিং টেবিলের চেয়ারটা ছেলেটার দিকে ছুড়ে মারতে দেরি হল না ।তনয় চেয়ারটা ছুড়ে মারতেই ছেলেটা দ্রুত সড়ে পড়ল ।তনয় ছেলেটার কলার ধরে বলল
তোরা যেখান থেকে পারিস ওকে খুঁজে বের কর ।আজকের মধ্যেই ওকে আমার চাই-ই চাই ।যদি আজকের মধ্যে খুঁজে বের করতে না পারিস তাহলে সব কটার গর্দান নিয়ে নিব বুজতে পেরেছিস ?
ছেলেটা মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল তারপর বাড়ি থেকে বের হয়ে আবার নাফিয়ার খোঁজ করতে চলে গেল বাকি ছেলেদেরকে নিয়ে।
____________________
নাফিয়া আর রিয়া মিসেস আনিতাকে রান্নাঘরে সাহায্য করছে ।কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ করেই তার ছেলে বন্ধুদের নিয়ে হাজির হয়েছে ।তাই তাদের জন্য নাস্তা প্রস্তুত করছে ।নাফিয়া খুব ভালো নুডুলস রান্না করতে পারে তাই নুডুলস রান্না করার কাজটা সে নিজেই করছে ।যদিও মিসেস অনিতা আর রিয়া তাকে কোনো কাজ করতে দিতে চাইছিল না তারপর-ও সে একপ্রকার জোড় করেই তাদের সাথে কাজ করছে ।আর রিয়া চিকেন ফ্রাই বাজছে ।নুডুলস রান্না শেষ হলে নাফিয়া চা বসিয়ে দিল ।চা-টাও সে ভালোই বানাতে পারে ।নাস্তা বানানো শেষ হলে মিসেস আনিতা কিছুফল কেটে ট্রেতে খাবারগুলো সাজিয়ে নিলেন আর রিয়াকে বললেন দিয়ে আসতে ।রিয়া লজ্জাবতী চেহারা বানিয়ে বলল আম্মু আমার লজ্জা করছে আমি পারবনা তুমি নিয়ে যাও ।
আনিতার খুব রাগ হল মেয়ের কথা শুনে ।আরদিনের একটা ফ্রেন্ড আছে ।দেখতে যেমন সুদর্শন তেমন ধনীও আর আচার-ব্যবহার তো মাশাআল্লাহ ।ছেলেটার ব্যবহারে মনেই হয় না ছেলেটা এত ধনী পরিবারের ছেলে ।ছেলেটার মধ্যে কোনো অহংকার নেই ধনী গরীব সবার সাথেই মিশে ।তাই প্রথম দেখাতেই ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয় উনার।তিনি মনে মনে খুব চান ছোট মেয়েটাকে উনার পছন্দের ছেলের কাছে বিয়ে দিতে ।তাই তো সব সময় ছেলেটা যখনি তাদের বাসায় আসে রিয়াকে ছেলেটার পাশাপাশি রাখার চেষ্টা করেন ।কিন্তু গাধা মেয়েটা কিছু বোঝেই না ।এখন সবকিছু আল্লাহর হাতে ।
ও মা… এত কি ভাবছ ? খাবারগুলো নিয়ে যাও ।চা তো ঠান্ডা হয়ে যাবে পরে ।
রিয়ার ডাকে আনিতা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলেন ।তিনি রাগী গলায় বললেন তুই নিয়ে যা ।
রিয়া বলে মা এতগুলো ছেলের সামনে কিভাবে যাই বল তো ? তোমার কি মাথা ঠিক আছে ?
আনিতা মেয়ের দিকে রাগীচোখে তাকালেন ।নাফিয়া এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মা , মেয়ের কান্ড দেখছে ।ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে মা , মেয়ের দিকে ।তার নিজের মায়ের কথা মনে পরে গেল ।মায়ের কথা ভাবতেই নাফিয়ার চোখজোড়া জলে ভরে উঠে ।
আনিতা নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল , তাহলে নাফিয়কে সঙ্গে করে নিয়ে যা ।
নাফিয়া আমতা আমতা করে বলল আমি ? আমি কিভাবে্ আনিতা নাফিয়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল কোনো সমস্যা নেই ।ওরা খুব ভদ্র পরিবারের ছেলে আর রিয়া তোমার সঙ্গে যাবে তো!
নাফিয়া মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোঝাল ।
নাফিয়ার হাতে খাবারের ট্রে আর রিয়ার হাতে পানির ট্রে ।তারা গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকতেই আরদিনসহ সাত -আট টা ছেলে কথা বন্ধ করে তাদের দিকে তাকাল ।কিন্তু তাদের সবার দৃষ্টি নাফিয়ার দিকেই ।নাফিয়া নিচু হয়ে খাবারের ট্রেটা টেবিলে রাখল ।নাফিয়া ঝুকে খাবারগুলো রাখার সময় বুজতে পারল ছেলেগুলো তার দিকেই তাকিয়ে আছে ।কিন্তু একজনের দৃষ্টি নাফিয়ার কাছে গভীর মনে হল ।এমন মনে হল যেন গভীর দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে ।নাফিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলল ।তার সাহস হল না আড়চোখে একবার দৃষ্টিজোড়ার মালিকের দিকে তাকাতে । তার খুব অসস্তি হচ্ছে ।সে আর রিয়া যখনি খাবারগুলো রেখে রুম থেকে বের হতে যাবে অমনি রিয়ার ভাই আরদিন বলে উঠে,
রিয়া এই মেয়েটা কে ?
নাফিয়া থমকে দাঁড়াল ।রিয়ার পেছনে নিজেকে আড়াল করে গুটিসুটি হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াল সে ।
রিয়া মুচকি হেঁসে বলল ভাইয়া ও রাইশা আপুর ননদ নাফিয়া ।
আরদিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার রিয়ার পেছনে নাফিয়াকে দেখার চেষ্টা করে বলল ওহ আচ্ছা যা তাহলে ।
নাফিয়া রুম থেকে বের হতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল ।
——–আমার মনে হয় আমি এই মেয়েটাকে কোথাও দেখেছি কিন্তু মনে করতে পারছিনা ।
——— হ্যাঁরে স্পর্শ আমার-ও মনে হচ্ছে এই মেয়েটাকে আমি কোথাও দেখেছি আসিফ বলল ।
———- আরদিন বলে , দেখতেই পারিস তোরা না ক’দিন আগে বিয়ে খেয়ে এলি ও সেখানকার-ই মেয়ে ।
এবার স্পর্শ চিনতে পারল মেয়েটাকে ।এই মেয়েটাই সেই মেয়ে ।যাকে নিজের গাড়ি করে পৌঁছে দিতে গিয়েছিল ।
আসিফ স্পর্শকে দুষ্টুমি গলায় বলল কি মামা মেয়েটার প্রেমেট্রেমে পড়ে যাসনি তো ? সবাই স্পর্শের দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকাল ।
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে তাকায় আসিফের দিকে ।আসিফ বলে , না মানে যেভাবে মেয়েটার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে ছিলি !!
স্পর্শ আসিফের পেটে আলতো ঘুষি মেরে বলল তুই যে আজকাল মেয়েদের নিয়ে গবেষনা করিস তা কি বলব অরিনকে ?
আসিফ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল ভাই মাফ কর ।তারপর-ও ঐ ড্যাঞ্জারাস মেয়ের নাম মুখে নিস না আমার সামনে ।লাস্ট বার পানিতে কি চুবানটাই না চুবাইল আমায় সামান্য কারণে ।
স্পর্শসহ সবাই ফিঁক করে হেঁসে দিল ।
চলবে,
@Nusrat Hossain