ভয়ংকর প্রণয় পর্ব ৮

#ভয়ংকর_প্রণয়
Part_8
লেখনীতে_#Nusrat_Hossain

কারো ধাক্কানিতে নাফিয়ার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল ।মাত্রই চোখটা লেগেছিল তার ।ঘুমের রেশ কাটতেই চাইছেনা ।আর এদিকে কেউ তার বাহুতে ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে ।ঘুমে চোখজোড়া খুলতে ইচ্ছে করছেনা ।কানের খুব কাছে মৃদু চিৎকার শুনতেই নাফিয়া লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল ।ঢুলুঢুলু চোখে আছিয়া চাচী আর রাইশা ভাবীকে দেখতে পেল ।তারমানে এতক্ষণ তারা-ই তাকে ধাক্কাচ্ছিল ।কিন্তু এতরাতে তারা এইরুমে কি করছে সেটা নাফিয়ার বোধগম্য হচ্ছেনা ।দূরের মসজিদ থেকে ফজরের আজান কানে আসছে ।আছিয়া তড়িগড়ি করে বলে উঠল

নাফিয়া তাড়াতাড়ি সবকিছু গোছগাছ করে নে মা জলদি কর সময় নেই ।

নাফিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাল আর জিজ্ঞেস করল

গোছগাছ করব কেন ? কি হয়েছে চাচী ?

রাইশা থমথমে গলায় বলল আজকে তোমার বিয়ে তনয়ের সাথে ।

নাফিয়া হতভম্ব চোখে রাইশার দিকে তাকাল তারপর চোখজোড়া হাত দিয়ে ডলে নিয়ে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল ।
নাফিয়া চেহারায় একরাশ হতাশা নিয়ে বলল চাচী আমি কই যাবো ?আমার কি কোথাও যাওয়ার জায়গা আছে ?

তাহলে কি তনয়ের কাছে বিয়ে বসে সারাজীবনের জন্য মরতে চাস ?আছিয়া রাগী গলায় বলল ।

নাফিয়া তড়িৎগতিতে মাথা নাড়িয়ে না বোঝাল ।

আছিয়া বলল তাহলে তোকে পালাতে হবে এই বাড়ি থেকে ।

নাফিয়া বলল কিন্তু কোথায় যাবো ?

রাইশা চট করে বলে উঠল নাফিয়া তুমি আমার বাড়িতে যেতে পারো ।কিন্তু তুমি তো আমাদের বাড়ি চেনো না ।তবে সমস্যা নেই আমি তোমায় বাড়ির ঠিকানা লিখে দিচ্ছি তুমি ঠিকানা দেখে দেখে চলে যেও আর গিয়ে অবশ্যই আমার নাম বলবে বুজতে পেরেছ ?

নাফিয়া মাথা ঝুলিয়ে হ্যাঁ বোজাল ।

নাফিয়া সব কিছু গোছগাছ করে নিল ।ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে ।সবাই এখন ঘুমে ।বাড়ির পুরুষরা নয়টার আগে কেউ উঠবে না ।নাফিয়া আছিয়া আর রাইশার থেকে বিধায় নিয়ে যে-ই না বাড়ির চৌকাঠ পেরোতে যাবে অমনি কেউ তার হাত ধরে ফেলল ।নাফিয়া পেছন ফিরে তাকাতেই তার শরীর শিউরে উঠল ।সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আতিফার দিকে তাকাল ।আছিয়া আর রাইশাও ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আতিফার দিকে তাকাল ।এখন যদি সবাইকে ডেকে বলে দেয় কি হবে ?নাফিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

আ্ আপু ত্ তুই ।

আতিফা নাফিয়ার হাতে পাঁচ হাজার টাকা আর একটা বাটন মোবাইল দিয়ে বলল চলে যা ।

নাফিয়া এই প্রথম আতিফাকে জড়িয়ে ধরল ।আতিফা চোখের পানি ফেলে মুচকি হেঁসে নাফিয়াকে ইশারা করল চলে যেতে ।নাফিয়া চৌকাঠ পেরিয়ে উঠানের এক কোণে মা আর বোনের কবরটায় চোখ বুলিয়ে বাড়ির বড় বাউন্ডারি টা পার করে চলে এল । বাউন্ডারিটা পার হতেই তার মনে প্রশান্তি কাজ করছে ।আজ থেকে সে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি ।

নাফিয়া বাসে উঠে জানালার পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে ।এখন ঠিক কয়টা বাজে তার জানা নেই ।ভোরের আলো ফুটতেই সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে ।বাড়ি থেকে পালিয়ে আসাটা তার জন্য সহজ হতনা যদি না তার আপন মানুষগুলো তাকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য না করত ।নাহলে আজকেই তাকে তনয়ের কাছে সবকিছু সপে দিতে হত ।বাস চলছে নিজ গতিতে ।নাফিয়া সিটে হেলান দিয়ে চোখটা বুজল ।তার খুব ঘুম ঘুম পাচ্ছে ।সে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল ।

বাসের জোড়ে ঝাকুনিতে নাফিয়া তড়াক করে জেগে উঠল ।বাস থামিয়ে দিয়েছে ।কেউ কেউ বাস থেকে নেমে পরছে ।সে বুজতে পারছেনা সে কোথায় নামবে ।রাইশা তাকে বারবার বলে দিয়েছে কিভাবে কিভাবে যেতে হবে ।সে একটা লোককে জিজ্ঞেস করল ।রাইশার ঠিকানা অনুযায়ী তাকে এখানেই নামতে হবে ।সে কাধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে বাস থেকে নেমে পরল ।সে একটা সিএনজি নিল ।সিএনজিতে আরো দুজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ছিল ।নাফিয়া ব্যাগ থেকে বাটন মোবাইলটা বের করল টাইম জানার জন্য ।এখন বারোটা বিশ বাজে ।সেই ভোরে রওনা দিয়েছিল কতটা সময় পেরিয়ে গেল সে বুজতেই পারল না । এই প্রথম সে এত দূরে এল ।গ্রাম ছেড়ে শহরে এল ।খুব ভয় করছে তার ।নাফিয়া বাইরে দৃষ্টি দিল ।
আধঘণ্টা পর সিএনজি থেকে নেমে রাস্তার পাশে দাঁড়াল ।কোনো রিকশা খুঁজে পাচ্ছে না সে ।মাথার উপর তপ্ত রোদ ।ঘামে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে ।কিছুদূর হাঁটতেই একটা রিকশা পেয়ে গেল ।রিকশাওয়ালাকে ঠিকানাটা দেখাল ।প্রায় আট মিনিট পর সে তার গন্তব্য পৌঁছে গেল ।নাফিয়া রিকশা থেকে নেমে পরল ।রিকশা একেবারে রাইশার বাড়ির সামনে থেমেছে ।নাফিয়া বাড়িটার দিকে চোখ বুলাল ।রাস্তার পাশে একতলা আকাশী রং এর বাড়ি ।নাফিয়া পা বাড়াল বাড়িটার দিকে ।তার বুকটা ধুরুধুরু করে কাঁপছে ।এই প্রথম অচেনা অজানা বাড়িতে আসল ।বাড়ির মানুষগুলো কেমন হবে কে জানে ? সে কাঁপা কাঁপা হাতে কলিংবেলটা চাপল ।কিন্তু কেউ দরজা খুলল না ।নাফিয়া আরো দুইবার কলিংবেল চাপল ।প্রায় দুই – তিন মিনিট পর কেউ দরজা খুলল ।একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ।নাফিয়া একটা ঢোক গিলে বলল

আসসালামু আলাইকুম ।

ভদ্র মহিলা চোখ ছোট ছোট করে সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করল

তুমি কে ?

নাফিয়া ইতস্ততভাবে বলল

রাইশা ভাবী ।আমি রাইশা ভাবীর ননদ মানে নিলয় ভাইয়ার বোন ।

ভদ্র মহিলার মুখ মলিন হয়ে গেল ।বলল

ভেতরে এসো ।তোমায় তো রাইশার বিয়েতে দেখিনি তাই তোমাকে চিনতে পারিনি ।

নাফিয়া ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল আমাদের বাড়ির মেয়ে বৌ-দের কোনো বিয়ে সাদিতে থাকার নিয়ম নেই ।তাই আপনি আমাকে দেখেননি ।

ভদ্রমহিলা বলল হুম শুধু তোমার বাবা , চাচা ,ভাইদেরকেই দেখেছিলাম বিয়ের দিন।তোমার মা , চাচী , বোনদের দেখিনি আজ পর্যন্ত। তোমার আঙ্কেলের-ই একমাত্র সৌভাগ্য হয়েছে তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার।আর আমাদের তো সেই সৌভাগ্য-ই হলনা বিয়াইন বাড়ি যাওয়ার তোমার বাবা , চাচারা নাকি পছন্দ করেনা ।নাফিয়া খুব লজ্জা পেল কথাটা শুনে ।পরোক্ষনেই ভদ্রমহিলা মুখ মলিন করে জিজ্ঞেস করল

আমার মেয়েটা কেমন আছে ?কতদিন মেয়েটাকে দেখিনা ।মিসেস আনিতার চোখজোড়া ভিজে আসছে ।

নাফিয়া বুজতে পারল এটাই রাইশা ভাবীর মা ।সে মুখে হাঁসি ফুটিয়ে বলল রাইশা ভাবী খুব ভালো আছে আন্টি ।সে মিথ্যা বলল রাইশা ভালো নেই।কিন্তু উনাকে এই কথাটা বললে মন খারাপ করবে শুধু শুধু ।তাই সত্যিটা লুকাল ।

মিসেস আনিতা মলিন হাসি দিয়ে ওহ বলে কাকে যেন ডাকল ।কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে নাফিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মিসেস আনিতাকে জিজ্ঞেস করল এটা কে মা ?

আনিতা বলল এটা তোর রাইশা আপুর ননদ ।
নাফিয়া মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে ।শ্যামলা রঙের গোলগাল চেহারার মেয়েটি তার থেকে বয়সে বড় হবে নাফিয়া মনে মনে অনুমান করল ।
তখনি মেয়েটির হাতের মুঠো ফোনটা বেজে উঠল ।মেয়েটি উচ্ছাসিত গলায় বলল

মা আপু ফোন করেছে ।মেয়েটি ফোনটা রিসিভ করে তার মায়ের হাতে দিল ।নাফিয়া ভাবছে রাইশার কাছে তো ফোন নেই হয়ত নিলয় ভাইয়ার ফোন থেকে চুপিচুপি ফোন করেছে ।মাঝে মধ্যেই রাইশা ভাবী নিলয় ভাইয়ার ফোন থেকে চুপিচুপি ফোন করে তার মায়ের বাড়িতে নাফিয়া জানে সেটা ।রাইশা ভাবী ফোনের ওপাশ থেকে তার মায়ের কাছে কি যেন বলে ফোনটা রেখে দিল ।

মিসেস আনিতা তার ছোট মেয়েকে বলল

রিয়া ওকে তোর রুমে নিয়ে যা ।আজকে থেকে ও এখানেই থাকবে ।

মিসেস আনিতা নাফিয়াকে বলল যাও মা গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাও ।

রিয়া নাফিয়াকে নিজের রুমে নিয়ে গেল ।নাফিয়ার শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে ।সে জামা কাপড় বের করে রুমের সাথে লাগোয়া ওয়াশরুমে গোসল করতে চলে গেল ।

নাফিয়া গোসল সেড়ে এসে দেখল রিয়া মেয়েটি বসে আছে ।তাকে ওয়াশরুমে থেকে বের হতে দেখে রিয়া মুচকি হেঁসে বলল

তোমার নামটাই তো জানা হল না ।কি নাম তোমার ?

আমি নাফিয়া ।

রিয়া জিজ্ঞেস করল কিসে পড় তুমি ?

আমি এবার এইচ এস সি একুশ ব্যাচের পরীক্ষার্থী ।

ওহ আচ্ছা তাহলে তুমি তো আমার ছোট । আমি এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ।তুমি আমায় আপু বলে ডেকো ।

নাফিয়া মুচকি হেঁসে বলল ঠিক আছে আপু ।রিয়ার সাথে আরো অনেক গল্প করল নাফিয়া ।

দুপুরের ভোজন শেষে নাফিয়া বিছানায় চোখ বুজল ।রাতে ঘুমাতে পারেনি তারমধ্য এত ঘন্টার জার্নিতে সে খুব ক্লান্ত ।তাই তার চোখজোড়া ঘুমের কোলে ডলে পরল ।

নাফিয়া অনুভব করছে কেউ তার বাহুতে আলতো করে হাত বুলাচ্ছে ।নাফিয়া ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকাল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here