#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২২
#M_Sonali
“কোথায় আপনি শ্রাবণ। এই মুহূর্তে এখানে আসুন। আপনার সাথে কথা বলতে চাই আমি।”
কথাটি বলেই হাতে থাকা পালকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো চাঁদনী। কিন্তু না শ্রাবণ আসেনি। সে এবার বেশ বিরক্ত হলো। হাতে থাকা পালকটা জোরে জোরে ডলতে ডলতে রাগি গলায় বলল,
“আমি আপনাকে ডাকছি, আপনি কি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছেন না? এই মুহূর্তে আমার সামনে আসুন। নইলে আমি কি করবো নিজেও জানিনা।”
কথাটা বলা শেষ হতেই হঠাৎ চাঁদনীর রুমটা ভারী হয়ে এল। তার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। সে না চাওয়া সত্ত্বেও ভয় পেতে লাগলো। মুহূর্তেই মনে হল রুমের মাঝে গম্ভীর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সে এবার একটি শুকনো ঢোক গিললো। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো শ্রাবন আসেনি। কিন্তু এমনটা হওয়ার কারণ সে বেশ ভালই বুঝতে পারছে। হঠাৎ করেই তার সামনে হাজির হল শ্রাবণ। যেন দেয়াল ভেদ করে সামনে এসে দাঁড়াল সে। হঠাৎ এভাবে সামনে এসে দাঁড়ানোর কারণে বেশ ভয় পেয়ে গেল চাঁদনী। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে এগিয়ে গেল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“কি ভেবেছেন কি আপনি? এভাবে আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি আপনাকে দেখে ভয় পেয়ে যাবো? কখনোই না। আমি আপনাকে বিন্দু পরিমানও ভয় পাই না। কি শুরু করেছেন আপনি এসব? কেন এভাবে এলাকার নিরীহ পশুপাখি গুলোকে হ-ত্যা করছেন। আপনার মনে কি মায়া দয়া বলতে কিছু নেই? সত্যিই আপনি একটি রাক্ষস। আপনাকে ভালোবাসা তো দূর ঘৃণা করতেও ঘৃণা হয় আমার। আপনি কিভাবে পারেন এতগুলো মানুষের ক্ষতি করতে।”
কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থেমে গেল চাঁদনী। রাগে যেন শরীর জ্বলছে তার। সে এবার ভালোভাবে শ্রাবনের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখল তার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলছে। অসম্ভব ভয়ানক দেখতে লাগছে তাকে। এবার চাঁদনী মনে মনে কিছুটা ভয় পেল। কিন্তু ওকে সেটা বুঝতে দিল না। সে আবারও কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তখনই হঠাৎ শ্রাবণ দুহাতে তাকে আঁকড়ে ধরল। তার ঠোঁটদুটো নিজের আয়ত্বে নিয়ে নিল। এমন ভাবে ধরেছে যেনো চাঁদনীর জান বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ভীষণ রকম কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু সে কিছুতেই সেটা বুঝাতে পারছে না। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়েও শ্রাবনকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারছে না সে।
তীব্র যন্ত্রণায় চোখ থেকে এবার জল গড়িয়ে পরল চাঁদনীর। সাথে সাথে তাকে ছেড়ে দিলো শ্রাবণ। এখন তাকে অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে। চাঁদনী কাঁদতে কাঁদতে জোরে জোরে হাফাতে লাগলো। শ্রাবণ অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলল,
“তুমি আমাকে বাধ্য করেছো এটা করতে। আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমার থেকে দূরে যেও না। তাহলে আমি নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো। আমাকে শান্ত করার একমাত্র ওষুধ তুমি। কিন্তু সেই তুমি আমায় বারে বারে রাগিয়ে দাও। এখন এটা না করলে আমি নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতাম। তখন তোমার ক্ষতি করে দিতে পারতাম। তাই এটা করতে হলো। এখনো সময় আছে চাঁদনী ফিরে আসো। সব কিছু ভুলে আমার হয়ে যাও।”
কথাগুলো বলেই চাঁদনীর দিকে ফিরে তাকাল শ্রাবণ। সাথে সাথে চাঁদনী নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর মেরে দিল। তারপর রাগি গলায় বলল,
“কি ভেবেছেন কি আপনি? শক্তিশালী বলে নিজের ইচ্ছায় সবকিছু করবেন। যখন যা খুশি তাই করবেন। আর আমি সেটা মেনে নিব। আসলে আপনি তো একজন ভ্যাম্পায়ার। যে কিনা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। সে কিভাবে বুঝবে মানুষের ভালোবাসার মর্ম। আপনি ভালোবাসা তো দূর মানুষের ঘৃণা পাওয়ারও যোগ্য নয়। আমি আপনাকে কখনই মেনে নিবনা। আর না কখনো আপনার কাছে ফিরে যাবো। বেরিয়ে যান এখান থেকে। আপনাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি আর কারো কোন ক্ষতি করবেন না। নইলে আমার চাইতে খারাপ আর কেউ হবে না।”
কথাগুলো বলতেই শ্রাবন যেন নিজের সবচাইতে ভয়ংকর রূপ ধারণ করল। তার ঠোঁটের দুকোনা দিয়ে বেরিয়ে এল সরু লম্বা দাঁত। হাতের নকগুলো বিশাল বড় বড় হয়ে গেল। মুহূর্তে রক্তবর্ণ ধারণ করলো চোখ দুটো। একদম লাল টকটকে হয়ে গেল। পিঠ দিয়ে বেরিয়ে এলো বিশাল দুটি কালো রঙের ডানা। একদম চিকচিক করছে ডানা দুটো। ওর এমন ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে কেপে উঠলো চাঁদনী। তারপর ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই শ্রাবণ দেওয়ালের মধ্য দিয়ে ঢুকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। চাঁদনী ভীষণ রকম ভয় পেয়ে গেল এতে। সে বুঝতে পারল সে ভুল করে ফেলেছে। শ্রাবন প্রচন্ড পরিমানে রেগে আছে। এখন যদি কারো কোন ক্ষতি করে বশে সে। কথাটা মনে মনে ভাবতেই বাইরে থেকে ভেসে এলো এক আত্মচিৎকার। সাথে সাথে বুকটা কেঁপে উঠল চাঁদনীর। সে দ্রুত দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। আর বাইরে যেতেই দেখল একজন লোক মাটিতে পড়ে আছে। যার গলায় কাটা দুটি দাগ। সে গলাকাটা মুরগির মত ছটফট করছে। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার।
মুহুর্তের মাঝে ঐ লোকটি চাঁদনীর সামনে ছটফট করতে করতে মারা গেল। আশেপাশের লোকজন দৌড়ে এসে তার এমন অবস্থা দেখে তার কাছে এগিয়ে আসলো। চাঁদনী যেন কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সেখানেই থমকে গেছে সে। তার শরীরটা যেন পাথরের মূর্তি তে পরিণত হয়েছে। সে কি করবে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। তার ভাবনা শক্তি যেন লোপ পেয়ে গেছে কিছু মুহূর্তের জন্য। তার কানে শুধু সেই চিৎকারের শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই সাথে শ্রাবনের সেই ভয়ংকর চেহারাটা।
পিছন থেকে দৌড়ে এলেন রত্না বেগম এবং রতন মিয়া। দুজনে চাঁদনীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কি হয়েছে রে মা এই লোকটার। সে এভাবে মারা গেল কিভাবে? তুই এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন। তুইকি কিছু দেখেছিস?”
কথাটা বলতে বলতেই চাঁদনী জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ল তার বাবার বুকে। ওর এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠলেন তারা। মুহূর্তেই সবাই লোকটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো তার দিকে।
,
,
,
বিছানার ওপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে চাঁদনী। তাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকে। সকলের মাঝে একটি উত্তেজনা কাজ করছে। চাঁদনীর জ্ঞান ফেরার পর তার কাছ থেকে সকলে সত্যি জানতে পারবে। কারণ লোকটির মৃত্যুর সময় একমাত্র সেখানে চাঁদনী উপস্থিত ছিল। তাই সে অবশ্যই দেখেছে কি হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই তার জ্ঞান ফিরছে না। ডাক্তার এসে তাকে একটি ইনজেকশন দিয়ে গেছে। আর বলে গেছে কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞান ফিরে আসবে। তাই সকলে আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। বাইরে দুপুর গরিয়ে বিকেল হয়ে আসছে।
বেশ কিছুটা সময় পার হওয়ার পরপরই জ্ঞান ফিরে এলো চাঁদনীর। সে টিপ টিপ চোখে চারপাশে তাকাল। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক মানুষ। একদম ঘর ভর্তি হয়ে আছে। তার জ্ঞান ফিরতে দেখেই উৎসুক জনতা হা করে তাকিয়ে রইল তার দিকে। একে অপরের সাথে কানাঘুষা শুরু করে দিলো। চাঁদনী এবার বোঝার চেষ্টা করল তার সাথে কি হয়েছে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ভাবতেই মনে পড়ে গেল সকল ঘটনা। সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠে বসল সে। সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরল রত্না বেগম। চাঁদনী তার বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে বলল,
“কাউকে বাঁচতে দেবে না। সবাইকে মেরে ফেলবে। কারণ ভীষন #ভয়ংকর_সে। কাউকে বাঁচতে দিবেনা। সবাইকে শেষ করে দিবে। সে কোনো মানুষ নয়। সে একজন ভ্যাম্পায়ার। ভীষন শক্তিশালী এবং ভয়ঙ্কর ভ্যাম্পায়ার সে। তার হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না।”
কথাগুলো বলেই ফুঁপিয়ে কান্না করে দিল চাঁদনি। ওর দাদিকে জড়িয়ে ধরে। ওর কথা শুনে সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল ও এসব কি বলছে। ওর কথা শুনে এবার রতন মিয়া ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“এসব কি বলছিস মা? কার কথা বলছিস? কে এত ভয়ংকর? কে সবাইকে মেরে ফেলবে?”
“বাবা তুমি আমাকে যার সাথে বিয়ে দিয়েছো। ওই শ্রাবণ কোনো মানুষ নয়। সে একজন ভ্যাম্পায়ার। ভীষণ শক্তিশালী ও ভয়ংকর একজন ভ্যাম্পায়ার সে। এতদিন আমাদের এলাকায় যত মানুষ এবং পশু মারা গেছে, সবকিছুর পেছনেই আছে ওই শ্রাবন। সবার রক্ত চুষে মেরে ফেলেছে বাবা। আর কাউকে বাঁচতে দেবে না সে। আজ যে লোকটা মারা গেছে তাকেও সে’ই মেরে ফেলেছে।”
ওর এমন কথা শুনে ভীষণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল সকলের মাঝে। সবাই শুকনো ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল ওর দিকে উৎসুক চোখে। সবাই জানার চেষ্টা করল ওর বলা কথাগুলোর রহস্য। রতন মিয়া এবার ধমকের সুরে বলল,
“এসব কি বলছিস চাঁদনী? তোর কি মাথা ঠিক আছে? জামাই কিভাবে ভ্যাম্পায়ার হতে পারে। পৃথিবীতে ভ্যাম্পায়ার বলে কিছু নেই। ওগুলো শুধু গল্প উপন্যাসেই শোভা পায়। আর তাছাড়া আমি নিজে তার সাথে কথা বলেছি। একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি। কোন ভ্যাম্পায়ার কখনো ভাত মাছ খায়? শ্রাবণ বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ সে এমনটা কেনো করবে?”
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৩
#M_Sonali
“এসব কি বলছিস চাঁদনী? তোর কি মাথা ঠিক আছে? জামাই কিভাবে ভ্যাম্পায়ার হতে পারে। পৃথিবীতে ভ্যাম্পায়ার বলে কিছু নেই। ওগুলো শুধু গল্প উপন্যাসেই শোভা পায়। আর তাছাড়া আমি নিজে তার সাথে কথা বলেছি। একসাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি। কোন ভ্যাম্পায়ার কখনো ভাত মাছ খায়? শ্রাবণ বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ সে এমনটা কেনো করবে?”
রতন মিয়ার কথার উত্তরে চাঁদনী ভেবে পাচ্ছে না যে কিভাবে সবাইকে বোঝাবে। কিভাবে সবাইকে বিশ্বাস করাবে যে সে যা বলছে তার সবকিছুই সত্যি। চাঁদনী কাঁদতে কাঁদতে ওর বাবার হাত জড়িয়ে ধরে। তারপর উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
“বাবা তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না? আমি কি কখনো তোমাকে মিথ্যে বলেছি? আর আমি কিভাবে নিজের স্বামীর নামে মিথ্যা কথা বলব বল। আমি সত্যি বলছি বাবা উনি কোনো মানুষ নয়। উনি একজন ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার। শুধু ভাম্পায়ার বললেও ভুল হবে। উনি তো ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা। সবচাইতে শক্তিশালী একজন ভাম্পায়ার। আর উনার মাঝে মানুষের শক্তি ও আছে। কারণ উনি দুই সত্তার অধিকারী।”
এবার রতন মিয়া বেশ রেগে যায়। ঝাড়ি মেরে নিজের হাতটা ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। রাগী গলায় বলে,
“চাঁদনী কখন থেকে কি শুরু করেছিস তুই এইসব? কীসব যা-তা বলে যাচ্ছিস। ভ্যাম্পায়ার রাজ্য আবার মানুষের শক্তি, দু সত্তার অধিকারী। তুই কি সব ছেলেখেলা মনে করছিস? আমি না হয় তোর কথা বিশ্বাস করছি না। কিন্তু এরা যদি বিশ্বাস করে নেয় তাহলে কি হতে পারে তোর জানা আছে? শুধু শুধু কেন জামাইয়ের নামে এত মিথ্যে কথা বলছিস। ওর সাথে কি তোর কোন ঝগড়া হয়েছে? ঝগড়া হয়ে থাকলে বল আমি সেগুলো মানিয়ে নেব। কিন্তু এভাবে শুধু শুধু এমন ভালো একটি ছেলের নামে আর বদনাম করিস না।”
চাঁদনী এবার কান্নায় ভেঙে পড়ল। সে কিভাবে বোঝাবে কিভাবে বিশ্বাস করাবে এটা নিয়ে যেন ভীষণ দোটানায় পড়ে গেল। এদিকে আশেপাশের সবাই নিজেদের মাঝে কানাঘুষা শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছে চাঁদনীর মাথা খারাপ হবে গেছে। আবার কেউ বলছে মেয়েটা কত খারাপ নিজের জামাইয়ের নামে কত মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলছে। চারিপাশের কথা শুনে রতন মিয়ার মাথা এবার আরো গরম হয়ে গেল। সে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,
“তুই যদি এভাবে এমন আজেবাজে কথা বলতে থাকিস তাহলে আমি আর তোকে এ বাড়িতে আসতে দিবোনা। জামাইকে ডেকে এনে তার হাতে তুলে দিব। তোর জন্য এবাড়ির রাস্তা বন্ধ করে দেবো বুঝেছিস। আমি অন্তত তোকে ছোটবেলা থেকে এমন শিক্ষা দেয়নি যে নিজের স্বামীর নামে সকলের কাছে এমন বাজে ভাবে বদনাম করে বেড়াবি।”
চাঁদনী যেন তার বাবার কথা শুনে থমকে গেল। সে অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তার বাবার দিকে। তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুজল। যে বাবা তাকে ছোটবেলা থেকে আগলে রেখেছে। মা এবং বাবা দুজনের আদর দিয়ে বড় করেছে। তার প্রতিটা কথায় বিশ্বাস করেছে। আজকে সেই বাবা কিনা তার সাথে এভাবে কথা বলছে। কথাগুলো ভেবে চাঁদনীর চোখ দিয়ে আরো বেশি জল গড়িয়ে পড়ে। তখনই তার কিছু একটা মনে পড়ে। সে চোখের জল মুছে দ্রুত বিছানা থেকে নিচে নামে। মানুষকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দৌড়ে চলে যায় নিজের রুমে। সেখান থেকে শ্রাবণের দেওয়া সেই পালকগুলো হাতে নিয়ে দৌড়ে চলে আসে সবার সামনে।
রুমের সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চাঁদনী সকলের সামনে এসে পালকগুলো সবাইকে দেখিয়ে বলে উঠলো,
“দেখতে পাচ্ছেন আপনারা এই পালক গুলো? বাবা তোমার কি মনে আছে এই পালকগুলো তোমাকে দাদিকে এবং তোমাকে শ্রাবন দিয়েছিল। আর বলেছিল এটা যতক্ষণ আমাদের কাছে থাকবে ততক্ষণ আমরা সকল বিপদ থেকে দূরে থাকবো। মনে আছে তোমার? বলতো এগুলো আসলে কিসের পালক? তুমি কখনো কোথাও দেখেছ এই পালকের সাথে পৃথিবীর কোন পাখির পালকের মিল আছে? বলতে পারো? এটা আর কারো নয় এটা তো ভ্যাম্পায়ার শ্রাবণের নিজের গায়ের পালক। ও যখন ভ্যাম্পায়ার রূপ নেয় তখন ওর পিঠ ভেদ করে বিশাল বড় দুটি ডানা বেরিয়ে আসে। সেই ডানার সাথে অসংখ্য এমন পালক রয়েছে। সেখান থেকে আমাদের তিনজনের হাতে তিনটা পালক দিয়ে গিয়েছিল। এটাতে ওনার শক্তি লুকিয়ে আছে যার মাধ্যমে উনি,,,!”
এতোটুকু বলার পরেই আর কিছু বলতে পারলাম না চাঁদনী। তার আগেই যেন কানে তালা লেগে গেল তার। রতন মিয়া শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঠাস করে তার গালে একটি থাপ্পর বসিয়ে দিয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় যেন থমকে গেছে চাঁদনী। ভাবলেশহীন হয়ে গেছে সে। মুহুর্তের মাঝে কী ঘটে গেল সেটা কোনভাবেই বুঝে আসছেনা তার। সে গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে চারি দিকে একবার তাকাল। তারপর নিজের বাবার দিকে তাকাতেই রতন মিয়া বলে উঠলেন,
“বেয়াদব মেয়ে কখন থেকে কি যা তা বলে যাচ্ছিস তুই? নিজেকে কি পাগল বানাতে চাস নাকি? তোর মাথা ঠিক আছে। হাতে গুলো কি নিয়ে এসেছিস? আর কি সব আবোল তাবোল বলে যাচ্ছিস কখন থেকে। এই দিন দেখার জন্য এত কষ্ট করে বড় করেছিলাম তোকে আমি? নিজের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে মা বাবার ভালোবাসা দিয়ে তোকে বড় করেছিলাম। আজ আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তুই আমার মেয়ে। কি ভাবে পারছিস একটি ভাল ছেলের নামে এভাবে বদনাম করতে? এতো আজেবাজে ঘটনা সাজিয়ে তার নামে বদনাম ছরাতে?
অনেক সহ্য করেছি আর নয়। আমি এখনই শ্রাবনকে ফোন দিয়ে বলবো তোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। তোকে আর এক মুহূর্তও এবাড়িতে দেখতে চাই না আমি।”
“আর এই যে আপনারা, এখানে দাঁড়িয়ে কিসের নাটক দেখছেন হ্যা? আপনারা সবাই যার যার বাড়িতে যান। এখানে কিছুই হয় নি।”
উনার রাগি চেহারা দেখে ঘরের মধ্যে থাকা সবাই বেরিয়ে যে যার মত চলে গেল। চাঁদনী বুঝতে পারছেনা তার বাবার এমন রিঅ্যাক্ট করার কারণ। সে তো কিছু মিথ্যে বলেনি। সে তো সবই সত্যি বলছে। চাঁদনী কোনো কথা না বলে নিজের হাতে থাকা পালক গুলোর দিকে তাকাল। তাকাতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো তার। কারণ সে যেটা হাতে ধরে আছে সেটা কোনো পালক নয়। বরং দুটি শুকনো পাতা।
চাঁদনী কোন কিছু বলল না। সে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেল। রুমে গিয়ে বসে ভাবতে লাগল হাতে থাকা পালক গুলো এভাবে শুকনো পাতায় বদলে গেল কিভাবে? আর তার বাবা কিভাবে ভুলে গেল শ্রাবনের দেওয়া পালক গুলোর কথা। এসব কথা ভাবতেই তার খেয়াল হল শ্রাবন ইচ্ছে করলে স্মৃতিশক্তি থেকে ভুলিয়ে দিতে পারে। অনেক ঘটনাই মুছে দিতে পারে মন থেকে। তার মানে এবারেও সেটাই করেছে। নিজের ওপর এবার বড্ড রাগ হলো চাঁদনীর। সে বুঝতে পারলো কোনোভাবেই সে ওর সাথে পেরে উঠবে না। কারো কাছে প্রমাণ করতে পারবেনা যে তার কথা সত্যি। কি করবে ভেবে না পেয়ে চাঁদনী এবার মনে মনে ঠিক করল, সে ওর কাছে ফিরে যাবে। আর ফিরে গিয়ে ওকে শেষ করার উপায় খুঁজবে। এখন থেকে ওকে ভালোবেসে নয় ওর সবচাইতে বড় শত্রু হয়ে দেখাবে চাঁদনী।
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৪
#M_Sonali
” বাবা তুমি শ্রাবনকে ফোন করে বলো আমি তার সাথে চলে যেতে চাই। আর তুমি ঠিক বলেছো সত্যিই আমার কি হয়েছিল আমি জানিনা। তাই এমন উল্টাপাল্টা কথা শুরু করে দিয়েছিলাম। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর কখনো এমন হবে না। তুমি ওনাকে ফোন করে বল আমি তার সাথে যেতে চাই। আর কখন ওনার সাথে রাগারাগি করবো না।”
কথাগুলো বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো চাঁদনী। ওর কথা শুনে বেশ অবাক হলেন রতন মিয়া। সেইসাথে খুশিও হলেন বটে। তিনি ওর কাছে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“অবশেষে তুই বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক মা। স্বামীর সাথে যতই ঝগড়া হোক না কেন সব সময় মনে রাখবি, বাবার পরে মেয়েদের যদি মাথার উপর ছাদ বলতে কেউ থাকে। সেটা হল স্বামী। যে সারা জীবন তোর পাশে থাকবে, তোকে আগলে রাখবে। তাই তার ব্যাপারে মানুষের সামনে এমন কিছু বলিস না যে সবাই তাকে খারাপভাবে। যাইহোক আমি অনেক খুশি হয়েছি যে তুই আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছিস। আমি একটু আগেই ওকে ফোন করেছিলাম ও হয়তো এখন রাস্তায় আছে। তুই রেডি হয়ে থাক। শ্রাবন এলে খাওয়া-দাওয়া করে একসাথে বেরিয়ে যাস।”
উনার কথার উত্তরে চাঁদনী কিছু বলল না। মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সেখান থেকে সোজা নিজের রুমে চলে গেল। চুপচাপ বসে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগল। হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ কেটে তার পাশে এসে বসল কেউ। মুহূর্তে কেঁপে উঠল চাঁদনী। পাশে তাকাতেই দেখলো শ্রাবন হাসিমুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও কিছু একটা ভেবে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
“কখন এসেছেন?”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ একটি রহস্যময় হাসি দিল। তারপর আবেগি কণ্ঠে বলল,
“যখন তুমি মনযোগ দিয়ে আমার কথা ভাবছিলে ঠিক তখন।”
ওর কথা শুনে চাঁদনী একটি ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি রেডি হয়ে আছি। বলুন কখন আমাকে নিয়ে যাবেন।”
“এত তাড়াহুড়ো কিসের চাঁদ পাখি? আজতো শুধু তোমাকে নয় তোমার দাদি এবং বাবা তাদেরকেও নিয়ে যাব। আজ পর্যন্ত মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি দেখে নি সেটা কিভাবে হয় বলো। ওনাদেরও তো দেখা উচিত তার মেয়ে বিয়ে হয়ে কোথায় গিয়ে থাকছে।”
কথাটা শুনতেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল চাঁদনীর। সে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“উনাদের কেন সাথে নিয়ে যাবেন আপনি? প্লিজ উনাদের কোন ক্ষতি করবেন না। আমি তো আপনার সাথে যাচ্ছি’ই।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মৃদু হাসল। উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে গিয়ে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তারপর ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে আদুরে গলায় বলল,
“আরে আরে তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন চাঁদ পাখি। আমি ওনাদের ক্ষতি করতে যাব কেন? ওনারা তো আমার সম্মানের ব্যক্তি। আমার একমাত্র শশুর এবং দাদি শাশুড়ি। উনাদের কি কোন ক্ষতি করতে পারি। আর তাছাড়া তুমি কিভাবে ভাবলে যে ওদের কোন ক্ষতি করবো? কিছুই হবে না শুধুমাত্র ওনাদের দেখাতে চাই তোমাকে আমি কতটা সুখে রেখেছি। এখন এসব চিন্তাভাবনা না করে যাও তো, আমার জন্য খাবার-দাবারের আয়োজন চলছে। সেখানে একটু হাত লাগাও। দাদি তো বৃদ্ধ মানুষ কতটা কাজ আর একা করবে।”
চাঁদনী কি বলবে বা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। শ্রাবনকে নিজের এতটা কাছে দেখে অসম্ভব রকম ভয় লাগছে তার। ওর এমন কথা শুনে যেন ভীষণ রকম ভয় পাচ্ছে চাঁদনী। সে ভাল করেই জানে শ্রাবণ কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে এখানে এসেছে। তবে সে উদ্দেশ্যটা কি সেটাই তার না জানা। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকলো সে। তাকে এভাবে ভাবতে দেখে শ্রাবন এবার গালে ছোট্ট করে একটি চুমু এঁকে দিয়ে বলল,
“এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বরের আদর’ই খাবে নাকি বরের জন্য কিছু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলো তো? আমার কিন্তু আপত্তি নাই এভাবে আদর করতে।”
ওর এমন কথায় মুহূর্তেই ওর কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে গেল চাঁদনী। কোন রকম কথা না বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শ্রাবন কিছু বলল না। মৃদু হেসে বিছানার উপর বসে পড়ল। কিছু একটা ভেবে তার মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি।
রান্না ঘরে গিয়ে চাঁদনী দেখলো তার দাদী সব রান্না শেষ করে এখন সবকিছু গুছিয়ে টেবিলে নিয়ে আসছে। সে গিয়ে তার সাথে হাত লাগাতে চাইলে রত্না বেগম ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
“তোকে এখানে আসতে বলেছে কে রে চাঁদনী বুড়ি? জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করে তো অনেক কিছুই ঘটালি। এখন কি এখানে এসে তার সময়টুকুও নষ্ট করতে চাস। যা গিয়ে তাকে সময় দে। একটু আদর সোহাগ করে রাগ অভিমান ভাঙা। এগুলো আমি একাই সামলে নিবো।”
উনার এমন কথায় চাঁদনী বেশ বিরক্ত হলো। তবুও তার দাদিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বলল,
“উনি বলেছেন ওনার জন্য খাবার রেডি করতে। তাই এখানে এসেছি।”
এবার রত্না বেগম মৃদু হাসলেন। বললেন,
“যাক তার মানে তোদের মাঝে রাগ অভিমান সব ঠিক হয়ে গেছে। তাই তো? মাশাআল্লাহ সুন্দর। একটা কথা বলি শোন, জামাই হল মেয়েদের মাথার তাজ। তার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করবি না। ঝগড়াঝাটি করে এরকম দুমদাম বাপের বাড়ি চলে আসবি না। জামাইকে আদর সোহাগ করে আঁচলে বেঁধে রাখতে হয়। তবেই জীবনে সুখী হতে পারবি। আর তোর তো কোন শশুর শাশুরি বা দেবর ননদের ঝামেলাও নাই। এত সুন্দর একটা রাজপুত্রর মত জামাই পাইছিস। তোর জায়গায় আমি হইলে তো সারাক্ষণ জামাইরে জাপ্টে ধরে রাখতাম। এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল করতাম না। যদি আবার অন্য কাউকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে যায়। এখনো মন চায় যদি জোয়ান হইতাম তোর জামাইয়ের সাথে প্রেম করতাম রে চাঁদনী বুড়ি।”
কথাগুলো বলেই ফিক করে হেসে দিল রত্না বেগম। ওনার কথা শুনে চাঁদনীর কোনরকম রিয়াকশন দেখা গেল না। সেতো মনে মনে ভয় মরছে। শ্রাবণ কেন তার দাদী এবং বাবা কে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আর কোথায় নিয়ে যাবে সে? ওই বাড়িতে তো কখনোই নিয়ে যাবে না। তাহলে কোথায় নিয়ে যাবে সে তাদের?
,
,
,
খাবার টেবিলে সবকিছু রেডি করে পিছনে ঘুরতেই চাঁদনী দেখল রতন মিয়া ২ হাতে প্রায় ৫-৬ কেজির মত মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। উনার হাতে এত মিষ্টি দেখে ভ্রু কুচকালো চাঁদনী। এগিয়ে গিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“এত মিষ্টি কেন এনেছ বাবা? এগুলো দিয়ে কি হবে? তুমি কি সারা এলাকায় মিষ্টি বিলাবে নাকি? কিন্তু কেনো”
ওর কথার উত্তরে রতন মিয়া হাতে থাকা মিষ্টির প্যাকেট গুলো পাশে টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে হাসি দিয়ে বলল,
“নারে মা এগুলো নিয়ে এসেছি আজ প্রথম তোর শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছি খালি হাতে গেলে কেমন দেখায় বল। তাই অল্প কিছু মিষ্টি নিয়ে এলাম। আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি জামাই বাবাজি কে নিয়ে খেতে বস। আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
কথাটি বলেই উনি চলে গেলেন। চাঁদনী যেন আরো বেশি ঘাবড়ে গেল তার বাবা কথায়। সেকি তাহলে আরো বেশি বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? নিজের ফুল ফ্যামিলি সহ? পাশে তাকাতেই দেখলো শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে রহস্যময় হাসি। এবার যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল চাঁদনীর। সে কিভাবে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে এতোটুকু নিশ্চিত যে আজকে নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটবে। শ্রাবণ অবশ্যই কোন একটা কিছু প্ল্যান করে রেখেছে। কিন্তু যত কিছু হয়ে যাক না কেন সে কোনভাবেই নিজের বাবা এবং দাদির ক্ষতি হতে দিবে না। দরকার হলে শ্রাবনকে মারবে, নয় নিজে মরবে। যেভাবেই হোক তাদেরকে সকল বিপদ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে সে। চাঁদনীকে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শ্রাবণ পাশে এগিয়ে এল। মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো,
“এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো? এত ভাবাভাবির কিছু নেই জলদি খেতে দাও। খাওয়া-দাওয়া করে আবার রওনা হতে হবে তো। নইলে দেরি হয়ে যাবে না?”
#ভয়ংকর_সে #পর্ব_২৫
#M_Sonali
“বাবা আপনাদের কে একটি কথা বলার ছিল। কিন্তু আসার পর থেকে আপনাকে একদম ফ্রি পাইনি তাই বলা হয়নি। অনেক বড় একটি গুড নিউজ আছে আপনাদের জন্য।”
খাবার টেবিলে বসে খাবার খেতে খেতে কথা গুলো বলে উঠলো শ্রাবণ। ওর কথা শুনে পাশের চেয়ারে বসে খাবার খেতে থাকা রতন মিয়া আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“কি গুড নিউজ জামাই বাবা? তাড়াতাড়ি বল শুনি।”
ওনার কথা শুনে রত্না বেগম এবং চাঁদনী ও আগ্রহী দৃষ্টিতে তাকালো শ্রাবনের দিকে। সে এবার খাওয়া ছেড়ে বলতে শুরু করল,
“আপনারা তো জানেন আমি এতিম। আমার বাবা-মা ভাই-বোন কেউ নেই। বাবা মারা যাওয়ার আগে যতোটুকু সম্পত্তি রেখে গেছে তা দিয়েই বেশ ভালো ভাবেই চলছিল। কিন্তু যেদিন চাঁদনীকে এখানে রেখে যাই, তার ঠিক পরদিন একজন উকিল আসে আমার সাথে দেখা করতে। সে আমাকে জানায় আমার দাদুর বিশাল সম্পত্তির কথা। যেটা বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে আছে। তাই দাদুর সব সম্পত্তি একমাত্র আমাকে লিখে দিতে চায়। কথাটা প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখি সত্যি বলছেন তিনি। আর সেই সম্পদ নিজের নামে বুঝে নেওয়ার কারণে কয়েক দিন এখানে আসতে পারিনি। আপনাদের খোঁজ নিতে পারেনি।”
এতোটুকু বলে থামল শ্রাবণ। ওর কথা শুনে রতন মিয়া এবং রত্না বেগম দুজনের চোখই চিকচিক করে উঠল। তারা যেন খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। এদিকে চাঁদনী সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রতন মিয়া উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে বলে উঠল,
“আলহামদুলিল্লাহ এটাতো অনেক ভালো খবর। তাহলে তো আমাদের আর কোন চিন্তাই নেই। আমার একমাত্র মেয়ে অনেক সুখী হবে তোমার সাথে। তা তোমার দাদার সম্পত্তিতে কি কি পেয়েছো তুমি?”
“বিশাল বড় দু তলা একটি বাড়ি। দুটি প্রাইভেট কার। আরো কিছু জমিজমা পেয়েছি বাবা। আর কিছু ব্যাংক ব্যালেন্সের টাকা পেয়েছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ কোটির মত হবে।”
ওর কথা শুনে রত্না বেগম এর হাত থেকে খাবার পড়ে গেল। হা করে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। এত টাকার মালিক হয়েছে শুনে তারা ভীষণ রকম খুশি। তাদের আদরের চাঁদনী তাহলে অনেক সুখি হবে। রাজ রানীর মত থাকবে সে শ্রাবণের ঘরে। ভেবেই যেন রতন মিয়ার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সে ভীষণ রকম খুশি হচ্ছে।
তারপর খাবার টেবিলে আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে খাওয়া শেষ করে সবাই উঠে দাঁড়ানো। শ্রাবণ রুমে যেতে যেতে বলল,
“বাবা, দাদি তাহলে আর দেরি করবেন না আপনারা। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন। আমরা এখনই বেরিয়ে পড়বো।”
ওর কথা শুনে রতন মিয়া ভ্রু কুচকালো। অবাক হয়ে বলল,
“এসব তুমি কি বলছো জামাই বাবা? এত রাতে আমরা কিভাবে যাব? এখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা বাজে। এখন যে যার মতো ঘুমাও আমরা বরং সকালে রওনা দিব। তাহলে ভালোভাবে পৌছানো যাবে।”
“সমস্যা হবে না বাবা। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। আমি সাথে করে প্রাইভেটকার নিয়ে এসেছি। আমরা সেটাতে করেই যাব। কোন ঝামেলা হবে না।”
ওর কথা শুনে রতন মিয়া কিছু বলার আগেই চাঁদনী বলে উঠল,
“না আমরা এখন কোথাও যাবো না। গেলে কাল সকালে সূর্য ওঠার পর যাব। আর তাছাড়া এত রাত করে আমার কোথাও যেতে ভালো লাগেনা।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মুচকি হাসলো। তারপর আদুরে গলায় বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যখন চাইছো তাহলে আমরা কাল সকালেই যাব। তাহলে বাবা আপনারা ঘুমিয়ে পড়ুন। আমিও ঘুমাতে যাচ্ছি। আমরা বরং সকালেই যাব। সেটাই ভালো হবে।”
কথাটি বলেই চাঁদনীর রুমে ঢুকে গেল। এতে চাঁদনী বেশ অবাক হলো। সে ভেবেছিল শ্রাবণ কিছুতেই তার কথা মানবে না। জোর করে নিয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু এক কথাতেই এভাবে মেনে যাবে সেটা যেন কল্পনায়ও ছিল না তার। মেয়ের কথায় রাজি হয়ে যাওয়াতে রতন মিয়া মনে মনে ভীষণ খুশি হল। সে ভাবলো জামাই তার মেয়েকে সত্যিই কতটা ভালোবাসে। যে তার মেয়ের একটা কথাও ফেলে না।
সবাই যে যার রুমে চলে যেতেই চাঁদনী রাতে আগুন হয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করল। দরজা লাগিয়ে দিয়ে শ্রাবণের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। শ্রাবণ পায়ের উপর পা তুলে বিছানার উপর শুয়ে আছে। আর তাকিয়ে আছে উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে। ওকে পাশে এসে দাড়াতে দেখেই ফ্যানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকাল শ্রাবণ। মুচকি হেসে বলল,
“সুইটহার্ট তুমি এসেছ? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
“দেখুন আমার সাথে একদম নাটক করবেন না। আমি বেশ ভালোভাবেই জানি আপনি অনেক বড় কিছু প্ল্যান করে এখানে এসেছেন। সত্যি করে বলুন আপনি কি করতে চলেছেন?”
ওর কথার উত্তরে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো শ্রাবণ। তারপর ওর পাশে এসে দাঁড়িয়ে দুগালে হাত রেখে বললো,
“আরে তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো চাঁদপাখি। আমি তেমন কিছুই করবো না যেমনটা তুমি ভাবছো।”
ওর কথার উত্তরে ওর হাতটা ছিটকে দূরে সরিয়ে চাঁদনী বললো,
“আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। আমার বাবা এবং দাদির সাথে কি করতে চাচ্ছেন আপনি। দয়া করে ওনাদের কোন ক্ষতি করবেন না। ওনারা তো আপনার কোন ক্ষতি করেনি। বরং আপনাকে ওনারা কত ভালবাসে। কত বিশ্বাস করে। দয়া করে ওনাদের কিছু করবেন না।”
ওর কথার উত্তরে শ্রাবণ মৃদু হাসল। আবারো বিছানার উপর গিয়ে বসে পায়ের উপর পা তুলে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
“ঠিক আছে তোমার বিশ্বাস করতে হবে না। কালকে নিজের চোখেই দেখো কি করি।”
এবার চাঁদনী বেশ কিছুটা ঘাবড়ে গেল। শ্রাবণ এর পায়ের কাছে এসে ফ্লোরে বসে পড়লো। দুই হাত জোড় করে বলল,
“আপনার কাছে দোহাই লাগে। আপনি আমার বাবা বা দাদির কোনো ক্ষতি করবেন না। ওদের কিছু হলে আমি বাঁচব না। আমিও মরে যাব। ওদের কিছু করার আগে আপনি আমাকে মেরে ফেলুন। তবুও ওদের কোনো ক্ষতি করবেন না।”
কথাটি বলার সাথে সাথে শ্রাবণের চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করলো। রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে শক্ত হাতে দুই বাহু ধরে উঠে দাঁড়ালো। ওকে ঝাঁকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
“তোমাকে কতবার বলেছি এই কথাটা না বলতে। আমি আর কতবার বলবো আমি তোমাদের কারো কোন ক্ষতি করব না। তুমি কেন বারবার আমাকে এভাবে রাগি দাও। তুমি কি জানো না আমার রাগের পরিণাম?”
চাঁদনী নিমেষেই চুপসে গেল। আর কোনো কথা বলল না। দু বাহুতে প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে সে। শ্রাবণ বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে। যে কারণে এতক্ষণে প্রচুর ব্যথা পাচ্ছে সে। ব্যথায় দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল চাঁদনীর। ব্যাপারটা বুঝতে পারতেই শ্রাবণ দ্রুত তাকে ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের স্বাভাবিক রুপে ফিরে ওর দুবাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে পাগলের মত করে বলতে লাগল,
“কি হয়েছে চাঁদপাখি। ব্যথা পেয়েছ? আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি বুঝতে পারিনি। ইচ্ছে করে ব্যথা দিইনি। তুমি আমাকে কেন রাগিয়ে দাও বারেবারে। জানো না রাগ উঠলে আমি নিজের ভেতর থাকি না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখাও আমাকে। আমি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না প্রমিস।”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,