#মনমোহিণী
#Part_10
#Writer_NOVA
‘ভাই, ভাবীরে হাত ধইরা সাবধানে নিয়া যাইয়েন। ঘুমের জ্বালায় চোহে দেকতাছে না।’
এনাজ উনার কথায় উত্তর দিলো না। গম্ভীর চোখে সিএনজি ওয়ালার দিকে তাকিয়ে মানিব্যাগ বের করে ভাড়া দিলো। ল্যাগেজ, ব্যাগ নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াতেই বললাম,
‘উনি আমাকে ভাবী বললো আপনি কিছু বললেন না কেনো?’
‘কি বলবো?’
‘আশ্চর্য, কি বলবেন মানে? আমি কি আপনার বউ নাকি যে সে ভাবী বলবে।’
‘বলে ফেলছে তো ফেলছেই। এর জন্য কি আমি ঝগড়া করবো নাকি।’
‘ঝগড়া করতে কে বললো? বাধা দিয়ে বলতে পারতেন আপনার ভুল হচ্ছে ভাই। ও আমার স্ত্রী নন।’
‘আচ্ছা পরেরবার থেকে বলবোনি।’
‘আমি জানি, আপনি ইচ্ছে করে এমনটা করছেন।’
এনাজ কথার উত্তর না দিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো। আমিও মুখ গোমড়া করে তার পিছনে হাঁটছি। আজকে ঘাটে প্রচুর ভিড়। তাড়াতাড়ি হেঁটেও এনাজের পাশাপাশি থাকতে পারছি না আমি। তাই এনাজ হাঁটা থামিয়ে এক সাইডে দাঁড়ালো।ডান হাত থেকে ল্যাগেজটা বাম হাতে নিলো। ডান হাতে আমার বাম হাতটাকে শক্ত করে ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। অবশেষে ভিড় ঠেলে আমরা লঞ্চে উঠতে সক্ষম হলাম। দোতলায় উঠে পাশাপাশি দুটো সিট নিয়ে বসে পরলাম। এনাজ ক্লান্ত হয়ে হেলান দিয়ে বসে পরেছে।
‘আপনার খারাপ লাগছে?’
‘কিছুটা অস্থির লাগছে।’
‘পানি খাবেন?’
‘দাও।’
সাইড ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিলাম। উনি খানিকটা পানি খেয়ে বোতল ফেরত দিলো। ঘাটে যতটা উপচে পরা ভিড় ছিলো এখন ততটা নেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে একেকজন বাইরের পরিবেশ দেখছে। ছোলাবুট ওয়ালা বোল ভর্তি ছোলা নিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে অন্য দিকে চলে গেলো। দই, ঝালমুড়ি, পানি, সফট ড্রিংকস, চিড়া নারিকেল নানা রকম হকার ওয়ালারা তাদের জিনিসপত্র ফেরি করছে।
‘ছোলাবুট খাবা?’
আমি মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম। কিন্তু সে শুনলো না। বারান্দা দিয়ে ছোলাবুট ওয়ালা যেতেই দুজনের জন্য ছোলাবুট কিনলো। একটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরেকটা নিজে খেতে লাগলো। মিনিট দশের ভেতরে লঞ্চ ছেড়ে দিলো। বাইরে তাকালে নজরে পরে চারিদিকে পানি আর পানি। হালকা বাতাস বইছে। ইচ্ছে ছিলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরের পরিবেশ উপভোগ করবো। কিন্তু এনাজ যে আমায় একা ছাড়বে না তা আমি জানি। তাছাড়া তাকে সাথে নিয়ে গেলে ব্যাগ, ল্যাগেজ হাওয়া হয়ে যাবে।
‘আরো কিছু খাবে?’
‘না!’
‘লজ্জা পেয়ে মানা করো না।’
‘আমি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না।’
‘না, পেলেই ভালো।’
কিছু সময় পর টিকিট কাটতে এলো। এনাজ দুটো টিকিট কেটে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
‘অপ্রয়োজনীয় কাগজ ভেবে ফেলে দিয়ো না। তাহলে জরিমানা দিতে হবে।’
‘তাহলে আপনার কাছে রাখেন। আমি কোন ফাঁকে গোল করে মুড়িয়ে পানিতে ফেলে দেই তার ঠিক নেই।’
টিকিট দুটো ভাজ করে পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। আমি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করতে নিলে প্রিয় লিপবামটা পেলাম।এটা সবসময় আমার ব্যাগে থাকে। দেখে দিতে মন চাইলো। খাপ খুলে ঠোঁটে দিতে না দিতেই উনি ছোঁ মেরে আমার থেকে নিয়ে নিজের ঠোঁটে ঘষলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবাক।
‘এটা কি হলো?’
‘দেখতেই পেলে।’
‘আমাকে বললে আমি দিতাম। চিলের মতো থাবা দেওয়ার দরকার ছিলো না।’
হাতে লিপবাম ফেরত দিতে দিতে বললো,
‘নাও দিয়ে দিলাম।’
উনার ঠোঁট ছুঁয়েছে এটা। আমি কি আর এটা দিবো। উনার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,
‘এটা আপনার কাছে রেখে দিন, আমি নিবো না।’
‘থ্যান্কস!’
সাথে সাথে লিপবামটা নিজের পকেটে পুরে ফেললো। আমার পছন্দের লিপবাম ছিলো ঐটা।কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। পদ্মা সেতু এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। সবেমাত্র পিলারের কাজ চলছে। সেতু উদ্বোধন হলে লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাবে। হঠাৎ এনাজের দিকে তাকাতেই দেখলাম সে মিটমিট করে হাসছে।
‘হাসছেন কেনো?’
‘এমনি।’
‘উহু এমনি নয়। কারণ বলেন।’
‘সত্যি বলবো?’
‘হ্যাঁ!’
‘আমার ফিল আসছে বউ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি।’
‘ওহ আচ্ছা।’
আনমনে ওহ আচ্ছা বলতেই খেয়াল হলো উনি কি বলেছে। চোখ দুটো বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি বললেন,
‘এভাবে তাকিয়ে থাকবে না। আমার লজ্জা করে।’
লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললো। আমি আহাম্মকের মতো উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
দেড় ঘন্টা পর মাওয়া ঘাটে পৌঁছালাম।সময় মনে হচ্ছে ঝড়ের বেগে চলে যাচ্ছে। বাস স্ট্যান্ডের সামনে আসতেই আব্বুকে দেখতে পেলাম। আব্বুকে দেখে এনাজ সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। আমি এনাজকে আব্বুর সাথে পরিচয় করে দিলাম। আব্বুর সাথে টুকটাক কথা বললো। এনাজ এখান থেকে ঢাকার বাসে উঠে যাবে। আমার থেকে এনাজ বিদায় নিতে এসে বললো,
‘সময়টা যে এতো দ্রুত চলে গেলো বুঝতে পারলাম না। জীবন পাতায় যত্ন করে স্মৃতিটুকু আগলে রেখে দিবো। খুব শীঘ্রই দেখা হবে। অপেক্ষা করো, মনমোহিণী।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে উনি ভিড়ে হারিয়ে গেলো। আমি নিষ্পলক চোখে তাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। সময়টা একটু ধীরে চললে কি হতো? বিদায়ের সময়টুকু বিষাদ ঘেরা ছিলো যে।
★
কেটে গেছে অনেক দিন। মাস ঘুরিয়ে নতুন মাস এলো। কিন্তু এনাজ এলো না। খানিকের সময় পরিচয়ে আমার মন নিয়ে সে যে পালিয়ে গেলো এর জন্য কি শাস্তি দেওয়া যায়? একবার আসুক! খবর আছে। তায়াং ভাইয়া নিজে থেকে আমাকে এনাজের মোবাইল নাম্বার দিয়েছিলো। আমি সেভ করে রেখে দিছি। কিন্তু কল করার সাহস হয়নি। আজও কন্টাক্ট লিস্ট থাকা এনাজ নামটা খুঁজে বের করলাম৷ কল দিবো কিনা দিবো ভেবে রেখে দিলাম। দিবো না কল। উনি তো চাইলে দিতে পারতো। আমি দিবো কেন?তবে প্রায়সময় একটা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে। ম্যাসেজগুলো এমন-
‘মনমোহিণী, কেমন আছো? জানি ভালো আছো।আমায় ভুলে ভালো তো থাকবেই।’
‘আমায় কি মনে পরে না?’
‘এতো সহজে ভুলে গেলে?’
‘মন চুরি করে এখন ভুলে যাওয়ার ভান করছো মনমোহিণী? এটা কিন্তু ঠিক নয়।’
আমার মন বলে এটা এনাজের কাজ। কিন্তু কল দিলে সিম বন্ধ বলে। তাই কল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
কিছুদিন গোয়েন্দা হয়ে অনুসন্ধান করেও ফলাফল শূন্য। কিছু পেলাম না। তাই এসব চিন্তা ঝেরে পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে গেছি। হরদমে ক্লাশ শুরু হয়েছে। কলেজ থেকে বাসা, বাসা থেকে কলেজ। এই অব্দি আমার দৌড়।
সেদিন দুপুরবেলা কলেজ থেকে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। আম্মু এসে বলছে,
‘হাত-মুখ না ধুয়ে এভাবে শুয়ে পরলি কেন?’
মাথা উঠিয়ে আম্মুর চোখের দিকে তাকিয়ে আবার ঠাস করে শুয়ে পরলাম। ক্লান্তিতে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আম্মু হাত ধরে টেনে তাড়া দিয়ে বললো,
‘বাসায় মেহমান এসেছে। এভাবে শুয়ে থাকিস না।’
কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কে এসেছে?’
‘হাত-মুখ ধুয়ে ভালো একটা জামা পরে আয়।’
‘কে এসেছে বলবে তো।’
‘তুই আগে ফ্রেশ হয়ে আয় বলছি।’
ভেবেছিলাম উঠবো না। আম্মুর পিড়াপিড়িতে উঠতে হলো। ফ্রেশ হয়ে এমব্রয়ডারির একটা সুতি থ্রি পিস পরে ওয়াসরুম থেকে বের হতেই ছোট বোনের সাথে দেখা। ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কে এসেছে রে?’
‘আমি চিনি না।’
‘সত্যি বল।’
‘সত্যি চিনি না বোইনে। পাঞ্জাবি পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক।আব্বুর থেকে উনার বয়স বেশি হবে।’
‘কখন এসেছে?’
‘এই তো বারোটার দিকে। আমার কি মনে হয় জানো বোইনে?’
ফিসফিস করে ছোট বোন বললো। আমি তােয়ালে দিয়ে মুখ মুছে চেয়ারের ওপর রেখে ঘুরে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কি?’
‘তোমাকে দেখতে এসেছে।’
‘ধ্যাত!’
‘হ্যাঁ, সত্যি কথা। আসার পর থেকে তোমাকে দেখতে চাইছে।’
ছোট বোনের কথায় যতটা না কপালে চিন্তার ভাজ পরছে তার থেকে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বাবা-মা কে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি এখন বিয়ে করবো না। আব্বু রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
‘নোভামণি একটু এদিকে আসো তো।’
‘জ্বি আব্বু বলো।’
‘মাথায় সুন্দর করে ঘোমটা দাও।’
‘কে আসছে আব্বু?’
আব্বু উত্তর দিলো না। আমি ঘোমটা টেনে আব্বুর পিছন পিছন পাশের রুমে গেলাম। সুন্দর করে একটা সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। লোকটা সালামের উত্তর নিয়ে বললো,
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এসো মা মণি! তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’
আমি একবার আব্বুর দিকে তাকিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেই উনি খুশি হয়ে গেলেন। উনার চেহারার দিকে ভালো করে তাকাতেই কিছুটা চমকে গেলাম। উনি আমাকে বললো,
‘আমার ছেলেটা সহজে আমার কাছে কিছুর জন্য বায়না করে না। কিন্তু এবার আমার হাত ধরে বাচ্চাদের মতো করে করুন সুরে বায়না করে বললো, বাবা আমার একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে।আমার শুধু ওকে চাই।বিয়ে করলে ঐ মেয়েকেই করবো। তুমি তোমার ছেলের জন্য ওকে এনে দিতে পারবে না?’
#চলবে#মনমোহিণী
#Part_11
#Writer_NOVA
মাঠ পেরিয়ে কলেজের ক্যান্টিনের দিকে যেতে নিলেই প্রাইমারি স্কুলে পড়ুয়া এক পিচ্চি সামনে এসে পথ আটকে বললো,
‘আপু, আপনাকে ডাকে।’
আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ নেই। নিজের দিকে আঙুল তাক করে জিজ্ঞেস করলাম,
‘আমাকে বলছো?’
‘হুম।’
‘কে ডাকে বাবু?’
‘ঐ যে গেইটের পাশে থাকা ভাইয়াটা।’
বিস্মিত নয়নে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বাচ্চা ছেলেটা যেভাবে ভৌ করে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবে চলে গেলো। মাথায় খেললো না কে হতে পারে। উৎসুক হয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে গেইট পার হলাম। গেইটের পাশে বাইকের সাথে অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তারা ডাকেনি আমি জানি। মিনিট খানেক অপেক্ষা করে চলে যাওয়ার জন্য পথ ধরতেই পিছন থেকে কেউ ডাকলো।
‘নোভা!’
চোখ সরু করে তাকিয়ে মুখ, চোখ হা হয়ে গেলো। সে এখানে কি করে? দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে বললো,
‘কখন থেকে অপেক্ষা করছি?’
‘আপনি এখানে?’
চোখের পলক পরছে না। তাকে এই সময় দেখতে পাবো আমার কল্পনায় ছিলো না।এনাজ চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
‘কোথায় হারালে?’
‘আপনার সাথে কোন কথা নেই।’
‘কেনো কেনো?’
‘দুই মাস শেষ হয়ে তিন মাস পরলো। আপনি একটা খোঁজও নিলেন না।’
‘কে বললো আমি খোঁজ নেইনি?’
‘খোঁজ নিলে তো একটা কল করতে পারতেন।’
‘তুমি তো করতে পারতে।’
‘আমি কি করে করি?’
‘তাহলে আমি তোমার অনুমতি ছাড়া কল কিভাবে করি?’
আমি গাল ফুলিয়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলাম। উনি একগাল হেসে বললো,
‘তুমি কি আমার সাথে অভিমান করছো?’
‘না তো। আমি অভিমান করবো কেন? অভিমান করার কে আমি?’
নিজের কাজে নিজে অবাক হলাম। আমি তো সত্যি অভিমান করেছি। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।
‘বাহ বাহ আমার মনমোহিণী তো কড়াকড়ি অভিমান করেছে।’
‘হুহ আসছে।’
মুখ ভেংচি দিয়ে বুকের কাছে দুই হাত গুঁজে সরে এলাম। খেয়াল হলো উনি আমায় মনমোহিণী বলে ডেকেছে। এই নামটা তো অচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজে বলতো। তাহলে এটা নিশ্চয়ই উনি ছিলেন।
‘এই আপনি একটু আগে কি বললেন?’
‘যাক বাবা, আমি আবার কি বললাম?’
‘কি নামে ডেকেছেন?’
‘মনমোহিণী!’
‘তাহলে আপনি ছিলেন?’
চোখ দুটো গোল আলু করে বললাম। সে মুচকি হেসে বললো,
‘তোমাকে আমি বুদ্ধিমতি ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি আসলে মাথামোটা।’
‘এই কি বললেন?’
‘কিছু না! চলো কোথাও বসি।’
ধীর পায়ে পাশাপাশি হাঁটছি। কতদিন পর তাকে দেখলাম। অগোছালো চুল, তৈলাক্ত মুখশ্রী, দাড়িগুলো আগের তুলনায় অনেকটা বড়, চোখ দুটোতে ছটফটানি দৃষ্টি। এসবই জানান দিচ্ছে উনি আমার সাথে দেখা করার জন্য কতটা মরিয়া হয়ে ছিলেন।
‘বাচ্চাটা আমাকে চিনলো কি করে?’
‘তোমার ছবি দেখিয়েছিলাম। সাথে তোমাকে দেখিয়ে দিছিলাম।’
হাঁটতে হাঁটতে কিছু সময় পরপর আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। যা দেখে আমি ঠোঁট চেপে হাসলাম। হঠাৎ কিছু মনে পরতেই উনি বললেন,
‘হেই দাঁড়াও।’
আমি দাড়িয়ে গেলাম। উনি পকেট থেকে দুটো সিল্ক চকলেট, এক মুঠ বকুল ফুল আর একটা লিপবাম বের করে আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘সরি,পকেটে চাপে পরে বকুল ফুলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’
তার কথা আমার কর্ণকুহরে ঢুকেনি। আমি বকুল ফুল দেখে দিশেহারা। এই সাধারণ একটা ফুল যে আমার কতটা প্রিয় বলে বুঝাতে পারবো না। ফুলগুলো হাতে নিয়ে নাক টেনে ঘ্রাণ শুঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘এগুলো কোথায় পেলেন?’
‘তোমাদের কলেজের ভেতরের গাছের থেকে।’
‘আপনি কুড়িয়েছেন?’
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। খুশি মনে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম।লিপবামটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছি।আমার পছন্দের লিপবামটা।উনি নতুন কিনে এনেছেন।
‘পুরাতন লিপবামটা কিন্তু আমার কাছে এখনো আছে।’
আমি মুচকি হেসে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘এসব কিছুর সন্ধান নিশ্চয়ই তায়াং ভাইয়া দিয়েছে।’
‘এছাড়া আর কোথায় পাবো বলো?’
উনার চকলেট, ফুল, লিপবাম দেওয়ায় আমারও একটা জিনিসের কথা খেয়াল হলো। চকলেট, লিপবাম ব্যাগে রেখে একটা ছোট ব্যাগ বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। উনি কপালে প্রশ্নসূচক চিহ্ন একে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এটা কি?’
‘খুলে দেখুন।’
উনি প্যাকেট খুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।উনার যে টি-শার্ট আমি পুড়েছিলাম অবিকল ঐরকম একটা টি-শার্ট। আমি বললাম,
‘আমি কারো ঋণ রাখি না।’
‘তুমি জানতে আমি আসবো?’
‘না, অর্ডার করেছিলাম। আজকে এসেছে। তাই ব্যাগে ছিলো।আল্লাহর কি মর্জি দেখুন। আজকেই আপনি এলেন।’
‘ধন্যবাদ।’
উনি কথা বাড়ালো না। কিছু দূর যাওয়ার পর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
‘এই তুমি একটু সুস্থির হয়ে দাঁড়াও তো।’
‘কেনো?’
‘তোমাকে মনভরে দেখবো।’
★
সাত দিন পরের কথা। ছাদে দাঁড়িয়ে এনাজকে একের পর এক কল করছি। কিন্তু অপরপাশ থেকে সুইচ অফ বলছে। রাগে, অভিমানে চোখ দুটো টলমল করছে। আগামীকাল পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আর উনার মোবাইল বন্ধ। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে। ছোট বোন নিঃশব্দে পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘কল উঠাচ্ছে না?’
‘না মোবাইল বন্ধ বলছে।’
‘কেনো?’
‘জানি না।’
‘সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। নিচে চলো।’
আমি ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে কল দেওয়া বন্ধ করলাম। ও সবকিছু জানে আমাদের বিষয়ে। আমি চুপচাপ নিচে নেমে এলাম। রাতেও কল করলাম। কিন্তু একই বিষয়। মোবাইল বন্ধ। দুঃখে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। দুদিন আগেও সব ঠিক ছিলো। এখন এমন লাপাত্তা হয়ে গেলো কেন?জিদ করে রাতের খাবার না খেয়ে শুয়ে পরলাম।
পরদিন বিকাল…..
‘তোর হলো?’
আম্মু রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো। আমি তখনও ড্রেসিং টেবিলের সামনে ঠায় বসে আছি। আম্মু তা দেখে চেচিয়ে বললো,
‘তুই তো এখনো কিছু করিসনি।’
‘আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না।’
‘দেখতে আসলে কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি।’
‘তাহলে দেখতে আসবে কেনো?’
‘শুনো বোকা মেয়ের কথা।’
‘উনারা এসে বসে রয়েছে। জলদী রেডি হো।’
‘ভালো লাগছে না।’
‘তোর ভালো লাগে কবে? পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসবি।’
‘আমি কোন মেকআপ করবো না। শুধু ড্রেস পাল্টে আসবো। কোন শাড়ি-টারি পরতে পারবো না।’
জর্জেটের একটা থ্রিপিস নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। দরজাটা দ্রিম করে বন্ধ করে ভেতরে ফুঁসতে লাগলাম। এই মুহুর্তে এনাজকে পেলে হামানদিস্তা দিয়ে পিষতাম।
মুখে একটু ক্রিম ঘষে বড় করে ঘোমটা টেনে সামনে গেলাম। ইচ্ছে করে সাজগোজ করিনি। আমি চাইছি না তারা আমায় পছন্দ করুক। পর্দা ভেদ করে ভেতরে ঢুকে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর নিয়ে এক মহিলা খুশি মুখে সামনে এগিয়ে এসে আমাকে তার পাশে বসালো। মাথা হালকা উঠাতেই সেদিনের সেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। মহিলা আমার গালে হাত দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললো,
‘ছেলে তো খাঁটি সোনা পছন্দ করেছে। মা শা আল্লাহ! আমাদের ছেলের সাথে ভালো মানাবে। কি বলো?’
‘আমি তো সেদিন দেখে গিয়ে তোমাকে সবটা বলেছি। তুমি বিশ্বাস করতে চাওনি। এবার নিজ চোখে দেখে নাও।’
লোকটা বললো। মহিলা আমার বাম হাতের অনামিকা আঙুলে আংটি পরিয়ে দিতে দিতে বললো,
‘রান্না পারো?’
‘জ্বি!’
‘মা শা আল্লাহ! মেয়ে কাজের আছে।’
সামনে আবছা অবয়ব চোখে এলো। মুখটাকে হাসি হাসি করে রেখেছে এক ছেলে। নিশ্চয়ই পাত্র হবে। আমার এখন হাত-পা ছুঁড়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। মহিলা আমার থুঁতনি উঁচু করে ছেলেটাকে দেখিয়ে বললো,
‘দেখ তো এনাম, তোর ভাবীকে ভাইয়ের সাথে কেমন মানাবে?’
‘সুপার আম্মু। ভাইয়ার সাথে জোস লাগবে।’
এর মানে এটা পাত্র নয়। পাত্রের ভাই। তাহলে পাত্র কই? চোখ বুলিয়ে কাউকে পেলাম না। পাত্রের মা আমার আব্বু-আম্মুকে বললো,
‘মেয়ে কিন্তু আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। আমরা বেশি দেরী করতে চাই না। যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা দিতে চাই। ছেলে আমাদের পাগল করে ফেললো।’
আব্বু জিজ্ঞেস করলো,
‘ছেলে কোথায়?’
পাত্রের বাবা বললো,
‘ছেলে এসেছে। বাইরে বন্ধুর সাথে কথা বলছে। এখন আপনারা বলুন আমাদের বাসায় কবে যাচ্ছেন?’
এর মধ্যে দুটো ছেলে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। কন্ঠ পরিচিত মনে হওয়ায় মাথা উঠিয়ে তাকালাম।এনাজ ও তায়াং ভাইয়াকে দেখে মুখটা অলরেডি হা হয়ে গেছে। আরেকটু হা হলো যখন পাত্রের বাবা এনাজকে দেখিয়ে বললো,
‘এই তো আমাদের বড় ছেলে চলে এসেছে।’
আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তায়াং ভাইয়া মুখ টিপে হাসলো। এনাজ চোখ মারলো। এনাজের মা এনাজকে আমার পাশে বসালো। এখনো আমার কাছে মনে হচ্ছে সব স্বপ্ন। এনাজ কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
‘মুখ বন্ধ করো। মাছি তাদের ঘর ভেবে ঢুকে যাবে।’
এবার বিস্মিত ভাব কেটে গিয়ে মাথায় চিনচিন করে রাগ উঠে গেলো। কালকের থেকে আমি কেঁদে মরছি। আর উনারা সবাই মিলে এই পরিকল্পনা করেছে। এনাজ এক কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস করে করুণ সুরে বললো,
‘সরি, তোমাকে এই সারপ্রাইজটা দিতে এমনটা করেছি। তুমি রাগ করো না প্লিজ।এবারের মতো মাফ করে দিও।’
[নেক্সট, নাইস,ওয়াও,অসাধারণ, ভালো এগুলো ছাড়া অন্য কিছু থাকলে দয়া করে একটু কমেন্ট করেন। এগুলো দেখতে দেখতে তো মেজাজ গরম হয়ে যায়।বিরক্তিতে গল্প লিখতে মন চায় না। দুই লাইন ভালো-মন্দ বলতে আপনাদের কষ্ট লাগে কিন্তু সমালোচনা গ্রুপে গিয়ে সমালোচনা করতে কোন কষ্ট লাগে না। আপনারা যদি কমেন্টে আমাদের ভুলগুলো না ধরিয়ে দেন তাহলে বুঝবো কি করে?এখন আবার বলতে এসেন না আপু আপনার গল্পে আমি কোন ভুল খুঁজে পাই না। এটা একটা ডাহামিথ্যে কথা। আমি মানুষ আমার ভুল হওটাই স্বাভাবিক। বরং ভুল না হওয়া অস্বাভাবিক। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কথাগুলো বললাম। কারো খারাপ লাগলে দুঃখীত।কারণ আমি খারাপ লাগানোর জন্য বলছি।]
#চলবে