মনের আড়ালে পর্ব ২+৩

#গল্পের_নাম_মনের_আড়ালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২ + ৩
আমি এখন বসে আছি রুপসার মাথার কাছে মেয়েটার অসম্ভব জ্বর একটু পর পর তার মাথায় জল পট্টি দিচ্ছি সবচেয়ে আজব ব্যাপার হলো রুপসা এই জ্বরের ঘোরেও আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে একটু পর পর তাকাচ্ছে।হয়তো ও আমার উপর নজর রাখছে ওর অগোচরে যদি আমি পালিয়ে যাই বাচ্চা মেয়ে এতসব ও বুঝেনা রুপসার মতো আমারও যদি একটা মেয়ে থাকতো ভাবলেই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বের হয়।জল পট্টি দিতে দিতে খেয়াল হলো ওর খাবারের কথা তাই আমি বিছানা থেকে উঠে যেই না রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই মিস্টার রক্তিম হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে হাজির হয়।আমাকে একবার ভালোমতো দেখে সে প্লেট গুলো টি টেবিলে রেখে বুকে হাত গুজে বললেন,
~দেখেন অধরা,আমার মেয়ের জ্বর যে পর্যন্ত ঠিক না হচ্ছে সে পর্যন্ত আপনি কোথাও যেতে পারবেন না।
তার এরূপ কথা শুনে রাগে আমার শরীর কাঁপতে শুরু করলো এই ব্যক্তির উপর রাগটা ২ঘন্টা আগের ঘটনার জন্য। এতটা ম্যান্যারলেস আর অসভ্য মানুষ আমার জীবনে আমি দেখিনি
২ঘন্টা আগে সে আমাকে দেখে রাস্তা পার হয়ে আমার কাছে এসে আমার হাত খপ করে দিলেন তার এহেন ব্যবহারের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।মিস্টার রক্তিম আমাকে টেনে নিয়ে আসলেন তার গাড়ির কাছে আমি তার থেকে হাত ছাড়িয়ে বললাম,
~কীসব আচরণ করছেন মাঝরাস্তায় মাথা কী খারাপ আপনার?
মিস্টার রক্তিমের এতে কোনো ভাবান্তর হলো না সে আবার আমার হাত ধরে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গেইট লক করে দিলো।আমি ভিতর থেকে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করলাম কোনো লাভ হলো না সে গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। আমি তার দিকে ভালোমতো তাকালাম মিস্টার রক্তিমের অবস্থা খুব খারাপ চুলগুলো একদম অগোছালো শার্টের অবস্থাও বেশি ভালো না।আমি বললাম,
~কিছু কী হয়েছে?রুপসা ঠিক আছে?
রুপসার কথা বলতেই সে আরো জোরে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলেন আমি ভয় পেয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম।হঠাৎ মনে হলো গাড়িটা থেমে গেছে আমি চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলাম।মিস্টার রক্তিম গাড়ির সীটে হেলান দিয়ে আছেন তার চোখ বন্ধ। আমি তার অবস্থা দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না কিছুক্ষন পর মিস্টার রক্তিম বললেন,
~রুপসার শরীর ভালো না প্রচন্ড জ্বর কিন্তু ও দরজা বন্ধ করে বসে আছে কাউকে ওর কাছে আসতে দিতে চায় না।রুপসা আপনাকে এখনই তার কাছে চায় আমার কাছে আর কোনো অপশন নেই।
বলেই আবার গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলেন আমি বোকার মতো বসে রইলাম আর সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

___________

বর্তমান
আমি তার কথার প্রেক্ষিতে কোনো কথা বললাম না টি টেবিল থেকে খাবারটা নিয়ে আস্তে করে রুপসার পাশে বসলাম।তারপর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে ডাকলাম ~রুপসা সোনা বাচ্চা।উঠো খেতে হবে যে নাহলে কীভাবে ম্যামের সাথে খেলবে?
রুপসা চোখ খুলে বললো,
~খেতে মন চায় না তো বমি আসে।
আমি ওর কপালে চুমো দিয়ে বললাম,
~সোনা বাচ্চা না খেলে সুস্থ হবে কী করে?আর আমার সাথে খেলবে কী করে?
রুপসা চট করে বললো,
~একটু খাবো তাহলে।
আমি হেসে বললাম,
~ঠিক আছে।
রক্তিম দাড়িয়ে দাড়িয়ে অধরা আর রুপসাকে দেখছে একদম মা-মেয়ে লাগছে দুজনকে।আজ যদি রাহি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো রুপসাকে এভাবেই খাইয়ে দিতো।রাহি তো রুপসা বলতে পাগল ছিল একমূর্হুত রুপসাকে ছাড়া তার চলতো না তাহলে এভাবে রুপসাকে ছেড়ে কেন চলে গেলো?এসব ভাবলে রক্তিমের বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে উঠে। সেই ছোট বেলায় সে তার মা-বাবাকে হারালো আর তার এই রাজকুমারিও তার মতো মা হারা হলো।এসব ভাবছিল রক্তিম তখনই রুপসা তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~পাপা,তুমি খেয়েছো?
মেয়ের কথায় রক্তিম অপরাধীর মতো চোখ করে বললো,
~সরি পরী খাইনি এখন পর্যন্ত।
রুপসা চোখ গরম করে বললো,
~যাও এখনি তুমি খাবার খেয়ে আসো নাহলে তোমার সাথে আড়ি।
এতটুকু বলে রুপসা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো রক্তিম হালকা মেয়ের পাশে গিয়ে বসে বললো,
~পাপা তার পরীর কথা অমান্য করতে পারে এখনই আমি খাবার খেয়ে নিচ্ছি।
রক্তিমের কথা শুনে রুপসা তাকে জড়িয়ে ধরলো তারপর রক্তিমের গালে চুমো খেয়ে বললো,
~এইতো আমার good papa.
বাবা-মেয়ের এতো সুন্দর মুর্হুত দেখতে দেখতে হঠাৎ বাসার কথা মনে পরে গেলো আমি সাথে সাথে মোবাইল বের করে দেখি ৭.৩০ তা দেখে আমার মাথায় হাত মা অনেক টেনশন করছে নিশ্চিত আমাকে এখনই বাসার জন্য রওনা দিতে হবে কিন্তু তার আগে রুপসাকে বোঝাতে হবে।আমি রুপসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
~রুপসা।
রুপসা আমার ডাকে মিস্টার রক্তিমকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে ঘুরলো আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
~রুপসা তোমার পাপা যেমন তোমার জন্য না খেয়ে বসে আছে তেমনি আমার পাপাও আমার জন্য না খেয়ে বসে থাকবে।তোমার কী কষ্ট লাগবেনা আমার পাপার জন্য
রুপসা আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
~ম্যাম আমি চাই না আমার জন্য তোমার পাপা কষ্ট করুক।তুমি কাল আসবে তো
আমি কী জবাব দিবো তা আমি বুঝতে পারলাম না কিন্তু আমার আগেই মিস্টার রক্তিম বলে উঠলেন,
~অবশ্যই অধরা আপনি কালকে আমাদের বাসায় আসবেন আর কালকে তো ছুটির দিন।
I hope you shall have no work for tomorrow.
মিস্টার রক্তিমের কথা শুনে মন চাইছে তার মাথা ফাটিয়ে দেই কিন্তু এখন বাসায় যেতে হবে তাই আমি রুপসাকে বললাম,
~হ্যাঁ সোনা বাচ্চা কাল আমি আসবো।
আমি রুপসার থেকে বিদায় নিয়ে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। মা অনেক টেনশন করছে নিশ্চয় কিন্তু মা একবারও ফোন দিলো না কেন?

______________

আমি বাসায় পৌছে কলিংবেল টিপ দিতেই মা দরজা খুলে দিলো।মা আমাকে দেখে বললো,
~তুই কোথায় ছিলি?
আমি জুতা খুলতে খুলতে বললাম,
~একটা জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিলাম মা।
আমার কথা শেষ হতেই একজন নারী কন্ঠ গম্ভীরভাবে বলে উঠলো,
~কাজ ছিল নাকি কোন নাগর জুটিয়েছ যে বাসায় আসতে এতো দেরি হলো?
এই কন্ঠটা শুনে আমি হতবাক হয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে দেখি আহনাফের মা সোফায় বসে আছে তার পাশে আহনাফের খালাতো বোন রামিয়া বসে আছে।
তাদের দেখে আমি অবাক হলাম আহনাফের মৃত্যর পর তারা এ বাসায় আসাতো দূর আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত করেনি।আমি নিজেকে সামলে তাদের কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
~কেমন আছেন?মা
আহনাফের মা মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
~রামিয়া,এই মেয়ে যেনো আমাকে মা না ডাকে।
রামিয়া মুখ কাচুমাচু করে আমাকে বললো,
~ভাবি তুমি খালামণিকে
রামিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আহনাফের মা বলে উঠলো,
~রামিয়া সে তোর ভাবি না আর এই কাগজে ওকে সাইন করতে বলে দে।
হাতের কাগজটা রামিয়ার হাতে দিয়ে একথাটি বললেন।রামিয়া আমার হাতে কাগজ দিয়ে বললো,
~এই কাগজটায় সাইন করে দেও।
আমি বললাম,
~কীসের কাগজ এটি?
রামিয়া আমতা আমতা করে বললো,
~আহনাফ ভাই তার অর্ধেক জমানো টাকা তোমার নামে ব্যাংকে রেখেছে খালাম্মা সেটি এখন বের করতে চায় তাই এই কাগজে তোমার সাইন নিতে এসেছি আমরা।
রামিয়ার কথা শুনে অবাক হলাম না সে যে নিজের স্বার্থের জন্য এসেছে তা আমার প্রথমে বোঝা উচিত ছিল।আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
~আহনাফের সম্পত্তির জন্য এখানে এসেছো?
আমার কথা শুনে আহনাফের মা চেঁচিয়ে বললেন,
~এই মেয়ে মুখ সামলিয়ে কথা বলবে।আমার ছেলের টাকা আমি নিবো তোমার কী?
আমি কিছু না বলে ব্যাগ থেকে কলম বের করে কাগজটায় সাইন করে দিলাম আর সেটা আহনাফের মায়ের হাতে দিয়ে বললাম,
~আপনাকে যাতে আমি কোনোদিন এ বাসায় না দেখি।
বলেই নিজের ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।ব্যাগটা ছুরে ফেলে দিয়ে ফ্লোরে বসে পরলাম হাঁটু গেড়ে কাদঁতে থাকলাম আমার সাথেই কেন এমন হলো?আহনাফ আপনি আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলেন?আমি কী এতো খারাপ যে আমাকে একা করে কেন চলে গেলেন?তখনই মা আর অরুনার গলা শোনা গেলো তারা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর বলছে
~আপু দরজা খোলো ওই মহিলার কথা শুনে নিজেকে হার্ট করো না।
মা বললো,
~কী করছিস ভিতরে অধরা?দরজা খোল।
আমি চোখ মুছে তাদের বললাম,
~মা অরুনা তোমরা যাও আমি ঠিক আছি।একটু একা থাকতে দেও আর হ্যাঁ বাবাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই।
অধরার মা আর অরুনা আর অধরাকে ডাকলো না। থাক না মানুষটি একা কিছু কষ্ট একাই সামলাতে হয় অন্যকে জড়িয়ে নিলে কষ্টটা আরো দ্বিগুন হয়ে যায়।

____________

সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে মোবাইলের আওয়াজে আমি চোখ খুলে চারপাশ খুব ভালো করে দেখে বুঝতে পারি কাল রাতে কান্না করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পরেছিলার ফ্লোরে।আমি আস্তে আস্তে ফ্লোর থেকে উঠে ব্যাগ হাতড়ে মোবাইল বের করে দেখি রুপসার ফোন।আমি রিসিভ করতেই রুপসা অভিমান কন্ঠে বলে উঠলো,
~ম্যাম তুমি আসো না কেন?সকাল ১০টা বাজে
রুপসার কথায় মনে হলো আজ তো ওর বাসায় যাওয়ার কথা ছিল কালকের ঘটনার জন্য একথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আমি রুপসাকে বললাম,
~রুপসা আমি একটু পরই আসছি তোমার কাছে।
রুপসা বললো,
~ঠিক আছে।পাপাকে তোমার জন্য গাড়ি পাঠতে বলবো?
আমি বললাম,
~না আমি চলে আসবো।
আমি ফোন রেখে কার্বাড থেকে কাপড় নিয়ে সোজা চলে গেলাম ওয়াশরুমে শাওয়ার নিয়ে একবারে বের হলাম।নিজেকে পরিপাটি করে ব্যাগটা নিয়ে দরজা খুলে বের হলাম রুম থেকে। বাহিরে বের হয়ে দেখি বাবা সোফায় বসে আছে পেপার পরছে মা রান্নাঘরে তাই সেখানে চলে গেলাম মা আমাকে দেখে বললো,
~অধরা,তুই কী কোথাও বের হচ্ছিস?
আমি বললাম,
~একটু কাজ আছে হয়তো বাসায় আসতে সন্ধ্যা হবে।
অরুনা কোথায়?
মা বললো,
~ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসেছে।তুই নাস্তা কর টেবিলে রাখা আছে
আমি বললাম,
~বক্সে ভরে দেও যেতে খেয়ে নিবো।
বলেই অরুনার কাছে চলে গেলাম গিয়ে দেখি মেয়েটা আসলেই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।তাই আমি আর ওকে ডিস্টার্ব করলাম না বের হয়ে আসলাম টেবিল থেকে বক্স নিয়ে হলরুমে এসে পরলাম বাবা আমাকে দেখে বললো,
~তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসিস।
আমি মুচকি হেসে বের হয়ে পরলাম বাড়ির দরজার সামনে এসে দেখলাম মিস্টার রক্তিম গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখে সে বিরক্তি নিয়ে বললেন,
~রুপসা ওয়েট করছে প্লিজ তাড়াতাড়ি আসেন।
তার কথা শুনে রাগে আমার মাথা নষ্ট ইশশ কী সিরি কথা বলার যেমন আমি তাকে আসতে বলেছি এই ব্যাটা তুই কেন এসেছিস?আমি বলেছি আসতে এভাবেই আমার মুডের ৪২০ বেজে আছে উপর দিয়ে তোর ত্যাড়া কথা। এসব বলতে গিয়েও বললাম না আমি শুধু বললাম,
~আসার কোনো প্রয়োজন ছিলনা আমি একা পৌছাতে পারতাম।
মিস্টার রক্তিম আমার কথা শুনে বললেন,
~অধরা,এতকথার টাইম নেই আপনার জন্য এভাবেই আমার মিটিং লেট করে শুরু করতে হবে তাই মেজাজ এভাবেই খারাপ। তাই গাড়িতে উঠে বসেন মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে এসব করতে হচ্ছে।
আমি আর কিছু না বলে ধুপধাপ পা ফেলে গাড়িতে উঠে বসলাম সেও গাড়িতে উঠে বসলো।

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

#গল্পের_নাম_মনের_আড়ালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৩
ঠিক আধঘন্টার পর আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছালাম।আমি গাড়ির গেইট খুলে বাহিরে চলে আসলাম।ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে যাবো তখনই মিস্টার রক্তিম পিছন থেকে বলললেন,
~অধরা,আমি অফিসে যাচ্ছি একটা জরুরি মিটিং পরে গেছে তাই রুপসার খেয়াল রাখবেন।আর শোনেন আমি না আসা পর্যন্ত ওকে একা ছাড়বেন না।
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
এতটুকু বলে আমি বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলাম।আমি হলরুমে এসে দেখি পুরো হলরুমে খেলনা দিয়ে ভরা আমি অবাক হয়ে গেলাম এতটুকুন বাচ্চার এতো খেলনা।আমি এসব ভাবা বন্ধ করে চারদিকে রুপসাকে খুজতে লাগলাম কোথাও তাকে না পেয়ে একটা সার্ভেন্টকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
~রুপসা কোথায় আছে তা কি আপনি বলতে পারবেন?
সার্ভেন্ট বললেন,
~জ্বী ম্যাড্যাম।রুপসা মামণি তার রুমে গিয়েছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~ধন্যবাদ।
আর পা বাড়ালাম রুপসার রুমের দিকে।
অফিসে পৌছে রক্তিম তার কাজে মনোযোগ দিলো এই প্রজেক্ট টা তার দরকার নাহলে কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে আর এর দায়ভার রক্তিমের বহন করতে হবে।সে অনেক চিন্তিত একদিকে মেয়ের চিন্তা অন্যদিকে অফিসের কাজ কীভাবে যে সামাল দিচ্ছে তা শুধু রক্তিম জানে।মামাও দেশের বাহিরে নাহলে মামার সাথে দুটো কথা বলে নিজের মনটাকে হালকা করতে পারতো।রক্তিম ল্যাপটপটা সাইডে রেখে চোখ বন্ধ করে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে রইলো।সে যে এখন সম্পূর্ণ একা সে এখন বুঝতে পারছে কেউ তার মনের কথা শুনতে আসে না উপরের চাকচিক্য দেখে বোঝা যায় না একটা মানুষের মনে কতো বড় একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে।বাহির থেকে হাসি খুশি টাকা পয়সা দেখে মানুষ তাই বুঝে যে সে হয়তো অনেক খুশি।এসব ভাবতেই রক্তিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে আবার ল্যাপটপ টা নিয়ে কাজ শুরু করে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাসায়ও ফিরতে হবে অধরা এতক্ষন হয়তো থাকতে পারবেনা তার জীবনেও অনেক কাজ আছে তারও পরিবার আছে।রক্তিম এতোটাও স্বার্থপর হয়ে এই পৃথিবীতে থাকতে চায় না যে তার কারণে অন্য একটা মানুষ নিজের জীবন নিজ ইচ্ছাই চালাতে পারবে না।
আমি রুপসার রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে যা দেখি তাতে আমার চোখ ছানাবড়া কারণ রুপসা বিছানার মাঝখানে বসে আছে। শুধু বসে নয় তার আশেপাশে চকলেটের প্যাকেট দিয়ে ভরা রুপসা টিভি দেখছে আর চকলেট খাচ্ছে আর কার্টুন দেখে হেসে ফেলছে।আমি আস্তে করে ব্যাগটা ওর স্টাডি টেবিলে রেখে ধীরপায়ে ওর পাশে গিয়ে দাড়াতেই রুপসা আমার দিকে তাকালো।আমাকে দেখে রুপসা খুশী হয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
~ম্যাম তুমি এসেছো সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
আমি রুপসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম রুপসা আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে চুমো দিয়ে বললো,
~I miss you.
আমি বললাম,
~I miss you too baby.কিন্তু রুমের এই অবস্থা কেন সোনা?তোমার পাপা কী জানে তুমি এভাবে চকলেট খাচ্ছো?
রুপসা বললো,
~পাপা নেই দেখেই তো খেতে পারছি পাপা খেতে দেয়না চকলেট।
আমি বললাম,
~পাপার অগোচরে এসব হচ্ছে তাই না।
বলেই ওর পেটে সুরসুরি দেওয়া শুরু করলাম রুপসা হাসতে হাসতে বললো,
~ম্যাম কি করছো আমাকে ছাড়ো।আমার সুরসুরি লাগছে।
বলতে বলতে ও বিছানায় পরে গেলো আমিও বিছানায় শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে চুমো দিয়ে বললাম,
~আমার লক্ষ্মীবাচ্চা।
রুপসা ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

____________
রুপসার সাথে আজ সারাদিন আমি অনেক কিছু খেলেছি ওর সাথে বসে আড্ডা দিয়েছি ওকে গল্প শুনেয়েছি।অনেক মজা করেছি কিন্তু আমরা একটা অঘটনও করে ফেলেছি তা হলো এখন আমরা আটার সাথে মাখামাখি হয়ে আছি কারণ রুপসা একটু আগে আমাকে বললো,
~ম্যাম,চলো না আমরা রান্না করি।
আমি বললাম,
~কী খাবে বলো?
রুপসা বললো,
~গরুর মাংসের ভূনা আর রুটি।পাপা আমাকে অনেকবার খাইয়েছে।
আমি বললাম,
~ঠিক আছে।
তারপর কী চলে আসলাম রান্নাঘরে মাংসটা রেঁধে আমি যেইনা আটার ডাব্বাটা নিচে নামাতে যাবো তখনই আমার উপর সব আটা পরে গেলো।তা দেখে রুপসার কী হাসি তাই আমি বললাম,
~তোর অনেক হাসি পাচ্ছে দাড়া দেখাচ্ছি মজা
বলেই ওর পিছে একগাদা আটা দিয়ে দেই দৌড় ওকে পুরো আটা দিয়ে গোসল করিয়ে দিলাম।রুপসা হেসে কুটিকুটি নিজের অবস্থা আর আমার অবস্থা দেখে।
আমিও বিষয়টাকে অনেক enjoy করছি সব সার্ভেন্টরাও আমাদের দশা দেখে হাসতে হাসতে শেষ কিন্তু পরক্ষণেই সবার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো একটা কন্ঠস্বর শোনামাত্র তা আর কারো নয় মিস্টার রক্তিমের সে চেঁচিয়ে বললেন,
~এই তোমরা এসব কী করছো?এটা বাড়ি নাকি খেলার প্লে গ্রাউন্ড।
মিস্টার রক্তিমের এমন ভয়াবহ কন্ঠ শুনে রুপসা আমাকে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটা বড্ড ভয় পেয়ে গেছে।রুপসার অবস্থা দেখে আমার রাগ হলো একটা বাচ্চা মেয়ের সামনে এভাবে চিল্লিয়ে কথা বলার কোনো মানে আছে। আমি জোড়ে নিশ্বাস ছেড়ে পিছন ফিরলাম কিছু কড়া কথা শোনার জন্য আমি পিছন ফিরতেই মিস্টার রক্তিম আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন তারপর হো হো করে হেসে উঠলেন।মিস্টার রক্তিমের হাসি দেখে আমার সব কথা পেটে রয়ে গেলো রুপসা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ড্যাবড্যাব করে ওর পাপার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমি কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলান আটা আমার পুরো শরীরে আর মুখে লেগে হয়তো ভুত সেজে আছি তাই সে হাসছে।আমি নড়েচড়ে উঠলাম রুপসা দৌড়ে মিস্টার রক্তিমের কাছে চলে গেলো সে হাসতে হাসতে মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন তারপর বললেন,
~অধরা,আমি তো জানতাম মেয়েরা মেকআপ নামের আটা-ময়দা মাখে এখন তো দেখছি আপনি সত্যি সত্যি আটা-ময়দা মেখে হাটছেন।
বলেই আবার হেসে উঠলেন।আমার রাগে শরীর জ্বলছে আমি কিছু না বলে ফোস ফোস করছি রুপসা বললো,
~পাপা এভাবে বলো না ম্যাম আমার জন্য রুটি বানাতে গিয়েই এ অবস্থা বানিয়েছে।
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~ঠিক আছে মা আর বলবো না তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।
রুপসা কোল থেকে নেমে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।আমি এখনও সেখানেই দাড়িয়ে আছি

_____________
মিস্টার রক্তিম আমার একটু কাছে এসে বললেন,
~অধরা,ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি আর একমূর্হুত সেখানে দাড়ালাম না দৌড়ে রুপসার রুমে চলে আসলাম রুপসাকে ফ্রেশ করিয়ে নিজে ফ্রেশ হলাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৬.২০বাজে।নাহ এখানে আর থাকা যাবে না বেশ দেরি হয়ে গেছে মা অপেক্ষা করছে আর বাবা তো তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।আমি রুপসাকে নিয়ে নিচে নামতেই দেখি মিস্টার রক্তিম সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর ফাইল চেক করছপ।আমি তার সামনে গিয়ে বললাম,
~আমি এখন আসি।বাসায় সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমার এহেন কথা শুনে রুপসা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ম্যাম প্লিজ আজ থেকে যাও।
আমি বললাম,
~না সোনা আমি তোমার সাথে স্কুলে দেখা করবো।
রুপসা আমাকে ধরে কান্না করে দেয় আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম
রক্তিম অধরার সব কথা শুনে বললো,
~অধরা,আপনার নিজস্ব জীবন আছে তাই আমি আপনাকে জোর করবো না যদি রুপসার জন্য আপনার মায়া হয় তাহলে আপনি রুপসার দায়িত্ব নিতে পারেন।
মিস্টার রক্তিমের কথা শুনে কী বলবো বুঝতে পারছি না তাই বললাম,
~আমি আপনাকে ভেবে বলছি।
মিস্টার রক্তিম বললেন,
~রুপসা তুমি লক্ষ্মীমেয়ের মতো থাকো আমি ম্যামকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।
আমি বললাম,
~তার কোনো দরকার নেই আমি চলে যেতে পারবো।
মিস্টার রক্তিম আর কথা বাড়ালেন না আমি রুপসাকে বিদায় জানিয়ে বের হয়ে আসলাম বাসা থেকে।
আনমনে হেঁটে চলছি রাস্তা দিয়ে মিস্টার রক্তিমের কথাগুলো ভাবছি রুপসার সাথে এই কদিনে আমার অনেক কাছের একজন হয়ে গেছে মেয়েটা আমার এক সাগর দুখের মধ্যে একটুকরো সুখ নিয়ে এসেছে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় রওনা হলাম বাবার সাথে কথা বলতে রুপসার ব্যাপারে।
বাসায় পৌছে ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে বসে আছি সবাই টুকটাক কথা বলছে আমি বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
~বাবা তোমার সাথে কথা আছে।
বাবা ভ্রুকুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
~বল মা কী বলবি?
আমি শুরু থেকে সবকিছু তাকে বললাম বাবা আমার সব কথা শুনে বললো,
~রুপসা ছোট মানুষ সঙ্গ চাচ্ছে তোমার মায়ের অভাবটা তোমার দ্বারা পূরণ করতে চায়।
আমি চুপচাপ বাবার কথা শুনছি বাবা বললো,
~অধরা রুপসাকে তোমার দরকার কারণ তুমি ওর সাথে খুশি থাকো।ওর বাচ্চামি গুলোকে পছন্দ করো তাই আমার মতে রুপসার দায়িত্ব তুমি নিতে পারবে।
বাবার কথা শুনে তার দিকে তাকালাম বাবা মুচকি হেসে বললো,
~স্কুলে তো ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত ডিউটি করো এখন না হয় ফুল টাইম ডিউটি করো আর হা রাতে তুমি বাসায় চলে আসবে আমি আবার আমার মা ছাড়া থাকতে পারবো না।
বাবার কথা শুনে মা আর অরুনাও বললো,
~আপু রুপসাকে বাসায় নিয়ে আসিস একদিন ওকে দেখতে মন চাচ্ছে।
আমি বললাম,
~যদি ওর বাবা পারমিশন দেয় তাহলে নিয়ে আসবো।
মা আফসোস করে বললো,
~এতটুকু মেয়েটার মা নেই।
এভাবে অনেকক্ষন কথা বলে আমি ঘুমাতে চলে গেলাম কালকে তাড়াতাড়ি উঠে রুপসার কাছে যেতে হবে।

_____________
রক্তিম রুপসাকে ঘুম পারিয়ে রাহির ছবিটা নিয়ে বসে আছে বারান্দায়। কালকের জন্য চিন্তা হচ্ছে অধরা কি আসবে?যদি না আসে তাহলে রুপসাকে সে কীভাবে সামলাবে রুপসাকি বুঝবে নাহ মেয়েটা অধরাকে অনেক পছন্দ করে।আসলে কেউ ঠিক বলেছে আমরা যাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি তারাই আমাদের ছেড়ে বহুদূর চলে যায়।রুপসাকে বুঝতে হবে এখন থেকেই ওকে স্ট্রং হতে হবে রুপসার কিছু হলে তার পাপা যে শেষ হয়ে যাবে।রাহির মতো আমি রুপসাকে হারাতে পারবো না রক্তিম রাহির ছবিটা আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।আর তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকলো রক্তিম ভাবছে এতো কষ্ট তার ভাগ্যে এসে কেন পরলো?
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হয়ে পরলাম রুপসার বাসায় যাওয়ার জন্য আজ নিজ হাতে রুপসার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছি মেয়েটা কতো খুশি হবে।আর আমার গোলাপ গাছটায় একটা গোলাপ ফুটেছিল তাও রুপসার জন্য নিয়ে এসেছি আমার সোনা বাচ্চাট অনেক খুশি হবে ওর মুখে হাসি দেখলে আমারও অনেক ভালো লাগে।
রুপসার বাসার সামনে যেতেই দারোয়ান গেইট খুলে দিলো।আমি ভিতরে ঢুকে পরলাম আমি মনের খুশিতে হেটে হেটে যাচ্ছি তখনই আমার চোখ পরলো বাগানে সেখানে তাকাতেই আমি চোখ সাথে সাথে বন্ধ করে বললাম,
~নাউযুবিল্লাহ।
আমার বলা কথাটা একটু জোড়েই শোনা গেলো সামনে থাকা ব্যক্তিটি আমার দিকে তাকালো সেই মানুষটি আর কেউ নয় মিস্টার রক্তিম যে এখন খালি গায়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে একটু আগে পুশ আপ করতে ব্যস্ত ছিল।আমাকে দেখে মিস্টার রক্তিম তার শার্ট গায়ে গায়ে দিতে দিতে বললেন,
~অধরা আপনি এখানে?তাহলে কী আমি আপনার জবাব হ্যাঁ ধরে নিবো?

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here