#মনের_গহীনে
২০তম পর্ব
লেখনীতে: নাদিয়া হোসাইন
পাঁচ ঘন্টা পর প্রাচুর্যের জ্ঞান ফিরে এলো। এতোক্ষণে প্রাচুর্যের রিপোর্ট এসে গেলো। ডক্টর.তারিফ প্রাচুর্যদের পূর্ব পরিচিত, তাই সব কিছু বেশ দ্রুত-ই করে ফেললো। প্রাচুর্যের কেবিনে তার মা-বাবা, ভাইয়ারা আছে। প্রিয় বাইরে থেকে এক পলক প্রাচুর্যকে দেখছে। আজ তারা এক নাম না জানা সম্পর্কে আছে, তাই প্রিয় এলাও না। তার কষ্টটা বোধহয় সবচেয়ে বেশি। কাছে থেকেও সে আজ এক নাম না জানা সম্পর্কের জন্য বহুদূর।
প্রাচুর্যের কেবিনে সবাই নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কেউ কিছু বলছে না৷ ডক্টর. তারিফ ইতোমধ্যে প্রাচুর্যের রিপোর্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। ডক্টরের ধারণা-ই ঠিক হয়েছে।প্রাচুর্যের ব্রেইন ক্যান্সার। সবাই স্তব্ধ হয়ে চোখের জ্বল ফেলে যাচ্ছে, কিন্তু প্রাচুর্য নিঃশব্দে বসে আছে। তখন প্রাচুর্যের বাবা সুবহান সালেহ বলে উঠলো, __ খুব বড় হয়ে গিয়েছিস না? ছোট থেকে আমরা বিজি ছিলাম, কিন্তু তুই লোনলি ফিল তেমন করিস নি। সব রকম স্বাধীনতা তোকে দিয়েছিলাম। নিজে একা চলে গেলি ডক্টর দেখাতে, তাও মেনে নিলাম। কিন্তু গোপন কেন রাখতে গেলি মা? আজ তোকে আমরা হারাতে বসেছি। বুঝতে পারছিস তুই তোর ফল্টটা।
প্রাচুর্য এবার হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। তখন কেবিনের দরজার গ্লাসে দেখতে পেলো প্রিয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাচুর্য প্রিয়কে দেখে-ই কাঁদতে কাঁদতে হাত দিয়ে তাকে ভিতরে আসার জন্য বললো। প্রিয় নির্ভয়ে প্রাচুর্যের ডাকে সাড়া দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। প্রাচুর্যের ফ্যামেলির সবাই প্রিয়র দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ প্রিয় তার সামনে আসার পর সে সুবহান সালেহ-র উদ্যেশ্যে বললো, __আ’ম সরি বাবা! তোমার ভালো মেয়ে হতে পারি নি। তোমার খুব ইচ্ছে ছিলো, আমাকে ডক্টর বানাবে। এখন আমার বাঁচা মরার-ই ঠিক ঠিকানা নেই, পরীক্ষাটাও আর দেওয়া হলো না। বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটে যাবে। ভেবেছিলাম পরীক্ষা আর সামায়ার বিয়ে শেষ হলেই নিজের ট্রিটমেন্ট নিবো। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলো না। ক্ষমা করো আমাকে। বাবা তোমাকে আমার এই কথা গুলো বলা খুব জরুরি ।কিছুক্ষণ থেকে প্রাচুর্য আবার বললো, ওকে তো তোমরা চিনো। সবার দৃষ্টি তখন প্রিয়র দিকে। প্রাচুর্য প্রিয়র হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় এনে বললো,__আ লাভ হিম। ওকে আমি তিনটা বছর ধরে ভালোবেসে আসছি। আম্মু জানো ও অনেক খারাপ। আমি যখন ওকে ভালোবাসতে শুরু করলাম, তখন ও আমাকে ভালোবাসতো না। খুব কষ্ট দিয়েছে আমাকে। আর এখন আমি যখন অসুস্থ তখন ও আমাকে ভালোবাসে। আমি যখন আমার অসুখটা জানতে পারলাম, তখন তিন বছর পর প্রথম ওকে দেখলাম। খামখেয়ালি করে নিজের অসুখটার কথা ভুলে গেলাম। তোমাকে তো ফুপি বলছিলো, যে আমি তিন বছর আগে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম। তখন থেকেই ওকে আমি ভালোবাসি। এখন এই ছেলেটার ভালোবাসা আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি চাচ্ছি, ও আমাকে আর ভালো না বাসুক। ও আমার জীবনে এমন সময়ে এসেছে, যখন আমি খুশি হতে পারছি না। আমি এখন কি করবো, তোমরা বলো প্লিজ! আমি বাঁচতে চাচ্ছি। তোমাদের মনের গহীনে থাকতে চাই না আমি। আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই। অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকলো প্রাচুর্য। তখন সুবহান সালেহ প্রাচুর্যর ও তার স্ত্রী কিয়ারা তার কাছে এসে মেয়েকে জরিয়ে ধরে বললো।
সুবহান সালেহ বললো,__তুই জানিস, আমি অনেক শক্ত মনের মানুষ। ফ্যামেলির মাঝে রিলেশন পছন্দ করি না।কিন্তু বরাবর-ই তোর খুশির জন্য আমি রুলস ব্রেক করি। এবারো তোর প্রিয়কে তোর কাছে ফিরিয়ে দিবো। দেশ, বিদেশে অনেক ভালো ডক্টর আছে। আমরা তোর ভালো ট্রিটমেন্ট করাবো। ক্যান্সার মানেই তো মৃত্যু নয় মা। সুহহান সালেহ আবার প্রিয়র কাছে এসে বললো, __ আমার মেয়েটা অনেক স্ট্রং বাবা। আমি জানি না, ও সুস্থ থাকলে তোমাদের মেনে নিতাম কি-না। কিন্তু ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আমি আমার মেয়ের খুশি বৈ আর কিছু চাই না।
প্রিয় প্রাচুর্যর দিকে তাকিয়ে বললো, আমি প্রাচুর্যকে বিয়ে করতে চাই আংকেল। দু’দিনের মধ্যেই চাই, যদি আপনারা অনুমতি দেন।
প্রিয়র এমন সিদ্ধান্ত শুনে প্রাচুর্য তাৎক্ষণিক বললো, __ নাহ! কোন বিয়ে টিয়ে না। আমার অনিশ্চিত জীবনে তোমাকে চাই না আমি।
কার জীবন কতোটা নিশ্চিত, তার গ্যারান্টি কি তুমি দিতে পারবে প্রাচুর্য? পারবে না তো, তেমনি বিয়ের সাথে এর সম্পর্ক নেই। তোমার তো অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার বউ হওয়ার। এখন আমারও অনেক ইচ্ছে, তোমাকে বউ করার।
তখন প্রাচুর্যের মা কিয়ারা বললো, __ কিন্তু বাবা, আমাদের মেয়ের খুশির জন্য তোমার জীবন বিপাকে ফেলতে চাই না। তোমারও তো পরিবার আছে। তারা নিশ্চয়ই চাইবে না, একটা অনিশ্চিত জীবনকে তাদের ছেলের কাধে দিতে।
আন্টি, আমার ফ্যামেলির প্রায় সবাই-ই জানে প্রাচুর্যের ব্যাপারে। জন্ম, মৃত্যু সব উপর ওয়ালার ইচ্ছে। তার জন্য তো আমাদের ইচ্ছে গুলোর বলী দিতে নেই।
তখন প্রাচুর্য বললো, একদম-ই না।আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।আমাকে ক্ষমা করো, অসময়ে তোমার জীবনে আসার জন্য। আজকে সব কিছু আমার বোকামির জন্য হচ্ছে। আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু এগেইন তোমাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কষ্ট দিয়ে দিলাম।
প্রিয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার উদ্যেশ্যে বললো, __ মনে কিছু না নিলে, আপনারা প্লিজ একটু বাইরে যাবেন।আমার ওর সাথে ইম্পর্টেন্ট কিছু কথা বলার আছে। এটা বেয়াদবি হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমার করার কিছু নেই। কেউ কিছু না বলে বেড় হয়ে গেলো। তখন প্রিয় বললো, __ জীবনটা কোন খেলা নয় প্রাচুর্য। তুমি অনেক বেশি আবেগ প্রবণ। তোমাকে বলেছিলাম একদিন, সব কিছু আবেগ দ্বারা হয় না। তোমার কিছু ভুলের মাঝে আমারো কিছু ভুল ছিলো। তুমি আমাকে নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিলে যে, নিজের দিকে খেয়াল রাখো নি। সবাই মরণশীল। প্লিজ প্রাচুর্য, বিয়েটা হতে দাও। একটা মানুষের জীবনে কতোবার ভালোবাসা আসে বলো? আমার জীবনে দুই বার এসেছে। সেটা তুমিই, আর তুমি-ই আমার শেষ ভালোবাসা। আর কেউ আসবে না, সেটা তুমি চাও বা না চাও। এটলিস্ট তোমার স্বামী হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। এই অধিকারটা প্লিজ দাও আমাকে। অহেতুক ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে বর্তমান নষ্ট করো না প্লিজ!
প্রাচুর্য প্রিয়র কথা নিরবে শুনে নিজের দু’হাত ফাঁকা করে প্রিয়কে ডাকলো আলিঙ্গন করার জন্য। প্রিয় পরম আবেশে প্রাচুর্যকে জরিয়ে ধরল। তখন প্রাচুর্যে বললো, __জানো , তোমার কাছে দু’মাস সময় চেয়েছিলাম যেনো, তুমি আমাকে ভুলে যাও , নাকি আরো ভালোবাসেন তা দেখতে। ততোদিনে আমার পরীক্ষা শেষ হতো, দ্যেন বাসায় সব বলতাম। তার আগেই সব উলট পালট হয়ে গেলো। ভালোই হয়েছে। এখন তোমার কথার বিরোধিতা করবো না। কিন্তু, আমায় কিছু হলে তুমি একা-ও থাকতে পারবে না বা নিজের ক্ষতি করতে পারবে না। নিজের মতো লাইফ গুছিয়ে নিবে। একজন আদর্শ ডক্টর হয়ে দেশের উন্নয়ন করবে। আমিও ডক্টর হতে চাইতাম, বাট পারলাম না। তুমি প্লিজ আমার স্বপ্ন পূরন করো৷ আর অবশ্যই কাউ কে নিজের জীবনে জরিয়ে নিয়ো। নাহলে অনেক রাগ করবো আমি। মরার পর কেউ হিংসা করে না। আমিও করবো না।
প্রিয়র চোখ দিয়ে নোনা জ্বল গড়িয়ে পরলো নিঃশব্দে। কিন্তু প্রাচুর্যের কথার কোন প্রতিবাদ করলো না।প্রাচুর্য বরাবরের মতো কথা বলতে থাকলো আর প্রিয় প্রাচুর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। এক পর্যায়ে এসে প্রিয়র বুকে ঘুমিয়ে পরলো প্রাচুর্য।
#মনের_গহীনে
২১তম পর্ব
লেখনীতে: নাদিয়া হোসাইন
পরদিন প্রাচুর্যকে এক সপ্তাহের জন্য হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো। মূলত প্রিয়-ই রিলিজ করানোর জন্য সবাইকে রাজি করিয়েছে। এক সপ্তাহ পর প্রাচুর্যকে আবার হসপিটালে এডমিড করা হবে অপারেশন করানোর জন্য। অপারেশনটা প্রথমে এতো ক্রিটিকাল ছিলো না। প্রাচুর্যের খামখেয়ালির জন্য টিউমারটা ক্যান্সারে পরিণত হওয়ায় বিষয়টা রিস্কি হয়ে গিয়েছে। প্রাচুর্যকে আজ প্রিয়দের বাড়িতে নেওয়া হবে। মূলত প্রিয় তাদের বিয়েটা আজই সম্পূর্ণ করবে। প্রথম প্রথম প্রিয়-র বাবা-মা বিয়েতে বিরোধিতা করেছিলো। কোন বাবা-মা ই চাইবে না ছেলেকে একটা অনিশ্চিত জীবনের সাথে জুড়ে দিতে। কিন্তু প্রিয়র জেদের কাছে হার মেনে রাজি হয়েছে। প্রাচুর্য এখনো জানে না, আজ যে তার বিয়ে হবে। সব কিছু-র প্লেন-ই প্রিয় করছে।
প্রাচুর্য প্রিয়দের বাসায় আসার পর বিকেলের দিকে শান্তা প্রাচুর্যের রুমে এলো কিছু জিনিসপত্র নিয়ে। প্রাচুর্য তখন শোয়া থেকে উঠে দাড়ালো। শান্তার উদ্যেশ্যে বললো, __ ফুপি তুমি কিছু বলবে?
হ্যাঁ! আয় উঠে দাড়া। শাড়িটা পরে নে৷
শাড়ি কেন পরবো ফুপি?
কারণ আজ তোর বিয়ে। প্রিয় সব এরেঞ্জ করে ফেলেছে। তোর কিছু করতে হবে না, শুধু শাড়িটা পরবি আর সিম্পল কিছু সাঁজ সাঁজবি। তোর যেন বেশি ধকল না হয়, সে সব ব্যবস্থা করা আছে।
কিহ, আজ-ই বিয়ে? বিয়ে করবো, তাও এতো সিম্পল ভাবে।
মন খারাপ করিস না, শোনা! তুই সুস্থ হো। দ্যেন সব কিছু তোর মনের মতো করবো। এখন প্রিয় যা চাচ্ছে, হতে দে।
আচ্ছা, তুমি আমাকে সাজাও।
সাঁজা কম্লিট হলে প্রাচুর্য আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো। লাল কালারের একটা সিম্পল শাড়িতে নিজেকে যে এতোটা সুন্দর লাগবে ভাবতেই পারে-নি । প্রাচুর্য মুখে কোন মেকাপ ইউজ করেনি। প্রিয় বলে দিয়েছিলো লিপস্টিক ছাড়া আর অন্য কিছু না দিতে। শান্তা কিছু পাতলা গহনা পরিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর প্রাচুর্যের মা ও প্রিয়র মা এসে প্রাচুর্যকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। নিচে নেমেই প্রাচুর্যের নজর সর্বপ্রথম প্রিয়র দিকে গেলো। লাল ও সাদার সংমিশ্রণের একটা পাঞ্জাবিতে প্রিয়কে দেখতে একদম অন্যরকম লাগছে। প্রাচুর্য ভাবলো কেমন লাগছে, তখনি আনমনে বলে উঠলো, — একদম- ই আমার জামাই লাহছে। ইস.. আমার জামাইটা কি কিউট । অবশেষে আমি প্রাচুর্যের বউ হচ্ছি। কথাটা বলতেই লজ্জায় নুইয়ে গেলো প্রাচুর্য। তখন প্রিয়র নজর প্রাচুর্যের দিকে গেলো। প্রাচুর্যকে দেখে-ই মিষ্টি একটা হাঁসি দিলো প্রিয়। দু’জনকে পাশাপাশি বসানো হলো। তখন প্রিয়র ফোনে সামায়া ভিডিও কল দিলো । প্রাচুর্যের ফোনটা ভাঙা, তাই সামায়া মোবাইল বন্ধ পেয়ে প্রিয়কে কল দিলো। প্রিয় ফোনটা প্রাচুর্যের দিকে এগিয়ে দিলো। সামায়া কাঁদতে লাগলো। তখন প্রাচুর্যে বললো,__ এই, তুই কাঁদছিস কেন? ওইদিন বকা দিয়েছিলাম তাই মন খারাপ করেছিস তাই না?
নাহ প্রাচুর্য। তুই কি করে পারলি, সবার থেকে গোপন রাখতে। তোর এই অবস্থায় আমি তোর পাশে থাকতে পারছি না। এমনকি তোর আজকের মতো দিনেও আমি নেই। ইচ্ছে করছে পরীক্ষা টরীক্ষা সব ছেড়ে তোর কাছে এসে পরি।
ধূর পাগলি! আমি পরীক্ষা দিতে না পেরে মন খারাপ করে বসে আছি। আর তুই দিতে চাইছিস না। অনেক ভালো করে পরীক্ষা দিবি, আর আমার জন্য দোয়া করবি। তুই মন খারাপ করিস না । আমি যদি বেঁচে থাকি তো তোর জন্য আবার বিয়ে করবো। দেখছিস, তোর আগে বিয়ে করছি। এটা বলেই প্রাচুর্য হেসে দিলো।
তা তো অবশ্যি। দেখবি তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি। তারপর তোর প্রিয়র সাথে সারাজীবন থাকবি। এখন যা বিয়ে কর। আমি লাইনে আছি। শুভ কামনা তোর জন্য।
থেক্সস সামু।
প্রাচুর্য আর প্রিয়র বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। প্রিয় আর প্রাচুর্যের বিয়ের দেনমোহর পাঁচ হাজার টাকা করা হলো। প্রিয়-ই মূলত এটা করেছে। প্রিয়র বাবার অনেক কিছু থাকলেও সে মূলত বেকার। তার জমানো পাঁচ হাজার ছিলো, আর সে সেটা দিয়ে-ই সব নিয়ম কম্লিট করতে চাইলো। কেউ তেমন আপত্তি করলো না।
এই মুহুর্তে প্রাচুর্য প্রিয়র রুমে বসে আছে। একদিন স্বপ্ন ছিলো, এটা তার রুম হবে। আজ তা হয়েই গেলো। এতো অপূর্ণতার মাঝে তাকে কেমন পূর্ণ মনে হচ্ছে। প্রাচুর্যের পরিচয় এখন মিসেস প্রিয় চৌধুরী। প্রাচুর্যের এসব ভাবনার মধ্যে প্রিয় রুমে প্রবেশ করলো। তখন প্রাচুর্য প্রিয়কে দেখে সালাম জানালো। প্রিয়ও সালামের জবাব দিলো। প্রিয় প্রাচুর্যের কাছে এসে তার হাতের পিছন থেকে কিছু কৃষ্ণচূড়া ও শিউলি ফুল প্রাচুর্যে দিকে এগিয়ে দিলো। খুশিতে প্রাচুর্য না পারে কেঁদে দেয়। তখন প্রিয় বললো,__সেদিন তোমার পছন্দের ফুল দিতে পারি নি, আজ দিলাম। এখন থেকে সব কিছু-ই তোমার পছন্দমত হবে।
তখন প্রাচুর্যের মনে পরলো, তাদের দেখা হওয়ার প্রথমদিনের সেই সূর্যমুখী ফুলের কথা। ফুল গুলো সে একটা বক্সে ফরে রেখেছিলো৷ এবাড়িতেই আছে সেগুলো। আগের বার প্রিয়র সাথে মনমালিন্য হওয়ার পর যখন এ বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলো, তখন ভুলে বক্সটা রেখে যায়। ভালো-ই হয়েছে। কষ্ট করে আনতে হয়নি। তখন প্রাচুর্য বললো, দাড়ান এক মিনিটের মধ্যে আসছি।
কোথায় যাবে তুমি?
প্রাচুর্য কোন জবাব না দিয়ে সে আগে যে রুমটায় থাকতো সেখানে চলে এলো। আলমিরার ড্রয়ার থেকে বক্সটা নিয়ে প্রিয়র রুমে চলে এলো। প্রাচুর্যের হাতে বক্স দেখে প্রিয় জিজ্ঞেস করলো, __কি আছে এটায়?
তখন প্রাচুর্য বক্সটা খুলে এই ফুলগুলোও সেখানে রাখলো। প্রিয় দেখতে পেলো কিছু শুকনো সূর্যমুখী ফুল ও যমুমা ফিউচার পার্ক থেকে প্রিয়র কিনে দেওয়া সেই চুরি গুলো এখানে আছে। প্রিয় এসব দেখে কেমন আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেলো। প্রাচুর্যের হাত নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো, __ এতো যত্ন এগুলোর?
হ্যাঁ! আপনার দেওয়া সব কিছুই অমূল্য আমার কাছে। আর এগুলো হারিয়ে যেতে দেই কীভাবে বলুন? আচ্ছা, আমি যদি না থাকি, তাহলে কি আপনি এগুলো ফেলে দিবেন?
মুহুর্তেই প্রিয়র মনে এক চাঁপা আর্তনাদ ভেসে এলো। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রাচুর্যকে বললো, __ এসব কথা আমি শুনতে চাই না। তোমাকে আগেও বলেছি , এখনো বলছি – ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি কিছু ভাববে না। এখন আমি তোমার, তুমি আমার। এটাই বড় কথা। বাকিটা উপর ওয়ালার ইচ্ছে। আজকের এই সময়টা আমরা একদম-ই এসব নিয়ে ভাববো না।
প্রাচুর্য মন খারাপ করে “আচ্ছা” বললো। তখন প্রিয় প্রাচুর্যের কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলো।প্রাচুর্যের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে প্রাচুর্যের ঔষুধগুলো খুলে প্রাচুর্যের সামনে রাখলো।নাও খেয়ে নাও।
প্রাচুর্য গাল ফুলিয়ে বললো,__ধূর ভালো লাগে না। সবাই খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাসর রাতেও কি-না ঔষধ।
হুম। এখন খাও বাচ্ছাটা।
প্রাচুর্য বিনাবাক্যে ওষুধ খেয়ে নিলো।
প্রাচুর্য প্রিয়র বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। প্রাচুর্যের ভিষণ লজ্জা লাগছে এভাবে শুতে। বেশ কিছু দিনের ব্যবধানে তার আর প্রিয়র জীবনের অনেক বদল হয়েছে । এই অনুভূতিগুলো একদম অন্যরকম। আচ্ছা, প্রাচুর্য যদি আর না বাঁচে তখন প্রিয়র কি হবে? প্রিয়কি আর লাইফ নিয়ে এগোবে না? প্রাচুর্যর বুকটা ফেটে যাচ্ছে এসব ভেবে৷ হয়তো প্রাচুর্যের না থাকার ঘাটতি সময় মিটিয়ে দিবে৷ কিন্তু তার সবচেয়ে বড় ভয় প্রিয়কে নিয়ে। ইস.. নিজের জীবনের সাথে প্রিয়কে না জড়ালেও ভালো হতো। কিছুক্ষণের মধ্যে-ই প্রাচুর্য ঘুমিয়ে গেলো।
প্রিয় আপনমনে প্রাচুর্যের মাথায় হাত হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। সেই রীতি-র জন্য সে পারছে না কাঁদতে। যখন প্রাচুর্যকে সে এতোটা ভালোবাসে, সারা জীবন আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলো। তাকে আজকে পেয়েও হারানোর ব্যাথা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। প্রথমবার সামায়াকে ভালোবেসেও নিজেকে এতোটা অসোহায় মনে হয়নি। তবুও সে হাল ছাড়বে না। প্রাচুর্যকে তার জন্য হলেও বাঁচতে হবে। প্রিয়র হাতের মুঠোয় ইতিমধ্যে প্রাচুর্যের অনেক চুল উঠে এসেছে। প্রাচুর্যের চুল গুলো খুব ভালো লাগতো তার। কিছুদিন পর-ই মাথা শূন্য হয়ে যাবে। প্রিয়র এতে কোন সমস্যা নেই। সে ভালোবেসেছে প্রাচুর্যর মনকে৷ সেখানে প্রাচুর্যের চুল না থাকলেও তার সমস্যা হবে না। কিন্তু প্রাচুর্যকে যতোটুকু দেখেছে, চুলের অনেক যত্ন নিতো। মেয়েটা হয়তো সহ্য করতে পারবে না এসব। প্রাচুর্যের এই সময়ের সবচেয়ে বড় ভরসা প্রিয়। তাকেই সব কিছু সামাল দিতে হবে। কাল যখন প্রিয় প্রাচুর্যর কেবিনের বাইরে ছিলো, আর প্রাচুর্য ভেতরে ছিলো। তখন প্রিয়র খুব খারাপ লাগছিলো। কোন অধিকার-ই ছিলো না সর্বপ্রথম প্রাচুর্যের কাছে আসার। তাই-তো সে আজ এতো দ্রুত প্রাচুর্যকে বিয়ে করে নিলো। এখন আর কেউ প্রাচুর্যের থেকে তাকে দূরে রাখতে পারবে না। সব মুহুর্তেই এখন সে আর প্রাচুর্য এক সাথে থাকবে৷
চলবে,