#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_23
(নিচের লিখাগুলো পড়ার জন্য অনুরোধ করা হল)
ইশফা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রাস্তায় রিকশার জন্য দাড়িয়ে রয়েছে।হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ইশফার সামনে থামক।গাড়ির কাচ নামিয়ে ভিতর থেকে একজন লোক গম্ভীর গলায় বলল……
—গাড়িতে উঠ।
ইশফা লোকটার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল……
—আপনি এখানে?
—কেন অন্য কাউকে আশা করছিলে?ডিস্টাব করলাম নাতো?
সান এর ত্যাড়া কথা শুনে ইশফা কোন কথা না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সান আবারো গম্ভীর গলায় বলল……
—গাড়িতে উঠ।
ইশফা এবারো কোন কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ করে থাকতে দেখে সান রাগি গলায় বলল……
—তুমি নিজের ইচ্ছায় উঠবে? না আমি অন্য ভাবে তোমাকে গাড়িতে উঠাবো?
ইশফা সান এর দিকে তাকিয়ে বলল……
—মানে!
—মানে খুব সিম্পল নিজের ইচ্ছায় গাড়িতে না উঠতে জোর করে গাড়িতে তুলবো।
সান এর সান্ত গলার থ্রেড শুনে ইশফা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মিনমিনে গলায় বলল….
—দেখুন এটা……
আর কিছু বলার আগেই সান ইশফার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল……
—চুপচাপ গাড়িতে উঠ।আর একটা কথা বললে আমি ভুলে যাব এটা রাস্তা।
💦💦💦💦💦💦
সকাল বেলা মায়ের ডাকা-ডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল ইশরার।ইশরা চোখ বন্ধ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠল……..
—কি হয়েছে এতো ডাকছো কেন?
—ক’টা বাজে খবর আছে তোর?কলেজে যাবি না?
ইশরা মাথার উপর বালিশ চেপে ধরে বলল……
—কলেজ বন্ধ।
মা ইশরার মাথা থেকে বালিশ সরিয়ে তেজি গলায় বলল……
—কলেজ বন্ধ!কিসের বন্ধ কলেজ?
ইশরা ফট করে চোখ খুলে তোতলাতে তোতলাতে বলল……
—ঐ তো….ঐ তো……
—কোন বাহানা পাচ্ছো না তাই না?
ইশরা মায়ের কথায় উওর না দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলল…..
—মা আমার মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।মাথার ব্যাথায় ভুল বলে ফেলেছি।আসলে কলেজ বন্ধ না।আমি আজ কলেজে যাবো না।ভীষণ মাথা ব্যাথা করছে।(অভিনয় করে)
মা চোখ রাঙিয়ে ইশরার দিকে তাকিয়ে সান্ত ভাবে বলল……
—চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে কলেজের জন্য রেডি হও।দিনদিন বড় হচ্ছ আর তোমার বাদরামী বেড়ে যাচ্ছে।এখনও ছোটবেলার মত কলেজ বন্ধ করার জন্য বাহানা খোজ।লজ্জা করে না তোমার এই বয়সে এসব করতে?
মায়ের বকা খেয়ে ইশরা গাল ফুলিয়ে মিনমিনে গলায় বলল……
—এখন রেডি হয়ে কলেজে পৌচ্ছাতে দেড়ি হয়ে যাবে।আজ বরং…….
ইশরাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে মা রাগি গলায় বলল……
—আমি তোমার আর একটা কথাও শুনবো না।
—মা দেড়ি হয়ে যাবে তো।(আদুরে সুরে)
মা ধমক দিয়ে বলল…..
—হোক দেড়ি।তার পরেও যেতে হবে।
—মা আ……
মা চোখ রাঙিয়ে বলল……
—আবার।
মায়ের ধমক খেয়ে ইশরা মুখটা ছোট করে বেড থেকে নেমে ফ্রেস হতে চলে গেল।
💦💦💦💦💦💦
আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে সান।তার পাশে বসে ইশফা আড়চোখে সানকে পর্যবেক্ষণ করছে আর উসুখুসু করছে।
তখন ইশফা সান এর ধমক খেয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসেছে।অবশ্য ঐ সব ধমককে ইশফা গায়ে মাখে না।সান অসুস্থ এই অবস্থায় ত্যাড়ামি করলে যদি সান আবার রেগে যায়।তাই সে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসেছে।সান কে ইশফা যতটুকুই চিনে তাতে ইশফা এতটুকু জেনেছে যে সান কোন খারাপ ছেলে নয়।
ইশফা কাচুমাচু করতে করতে সানকে জিগ্যেস করল…….
—কোথায় যাচ্ছি?
সান ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল……
—কাজি অফিসে।
ইশফা সান এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল…..
—কিহহহ?মজা করছেন আপনি আমার সাথে?
—তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে মজা করছি?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইল।ইশফা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মিনমিন করে বলল……
—কেমন আছেন?
সান ত্যাড়া ভাবে উওর দিল……
—আমাকে দেখে বুঝতে পারছো না আমি কেমন আছি?ওহ্ তুমি তো আবার হার্টলেস মানুষ।বুঝবে কিভাবে(তাসিল্যর সুরে)
সান এর কথা সুনে ইশফার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল…..
—এই অসুস্থ শরীরে আপনার বাসা থেকে বের হওয়া ঠিক হয়নি।
সান আবারো তাসিল্যর সুরে বলল…..
—বাহ তুমি আবার আমার কথাও ভাবো?
ইশফা আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।সান ও আর কথা বাড়ালো না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর সান বলল……
—তুশিকে একটা কল দাও।
হঠাৎ সান এর কথায় ইশফা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বলল……
—তুশিকে কল দিয়ে কি হবে?
—কল দিতে বলেছি দাও।কিপটামো করো না।আমি পরে টাকা ভরে দিব।তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে ফোন সাথে নিতে ভুলে গেছি।তাই তোমাকে কল দিতে বলছি।
সান এর কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে বলল……
—এখানের কিপটামোর কি হল?আর আপনি বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন মানে?
—তোমার কি মনে হয় এই শরীর নিয়ে আম্মু আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছে?
ইশফা মনে মনে সানকে বকতে বকতে বলল……
—সব কথাই ত্যাড়া ভাবে বলছে।অসুস্থ দেখে বেচে গেলেন।নাইলে আমিও দেখিয়ে দিতাম ত্যাড়ামো কাকে বলে।
—কি হল।চুপ করে বসে আছো কেন?তুশিকে কল দাও।
ইশফা তুশির নাম্বারে কল দিয়ে ফোনটা সানের হাতে দিল।সান গাড়ি এক সাইডে থামিয়ে তুশির সাথে কথা বলে একটা ঠিকানা দিয়ে তুশিকে সেখানে যেতে বলল।কথা শেষ করে সান ফোনটা ইশফার হাতে দেবার আগেই ইশফার ফোনটা বেজে উঠল।স্কিনে ‘মি’ লেখাটা দেখেই সান এর চেহারার রং পাল্টে গেল।সান ফোনের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—তোমার ফোন।
ইশফা ফোনটা হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে দিল। ইশফাকে কল কাটতে দেখে সান গম্ভীর গলায় বলল…….
—কল কাটলে কেন?
—কল রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করেনি তাই কেটে দিয়েছি।
ইশফা আর কিছু বলার আগেই আবার ফোনটা বেজে উঠল। ইশফা দ্বিতীয় বার কল কাটার আগেই সান ইশফার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে দাতে দাত চেপে বলল…….
—আমার সামনে কথা বলতে সমস্যা হবে?গাড়ি থেকে নেমে যাব?
—সমস্যা হবে কেন?
—তাহলে কল কাটছো কেন?
সান এর রাগি গলার কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে বলল…..
— আমি বুঝতে পারছি না সামান্য একটা কল রিসিভ করা নিয়ে আপনি এতো রাগ করছেন কেন?
সান,ইশফা কথার উওর না দিয়ে কলটা রিসিভ করে লাউডে দিতেই অপর পাশ থেকে ইশরার কাদো কাদো কন্ঠে ভেসে এল……
—বোইনা আমার কালো হিজাব পাচ্ছি না।কোথায় রেখেছিস? পিন কই? হিজাব বাধার সময় কি পিন গিলেছিস?আর তুই আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে যাস নি কেন শয়তান মহিলা।তোর জন্য মায়ের মুখে কতোগুলো বকা শুনলাম।
ইশফা এক পলক সান এর দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বলল……
—ইরু ফোন রাখ।পরে কথা বলছি।
—পরে না তুই এখন বল।
—বলছিনা এখন ফোন রাখ পরে কথা হবে।
—ঢং করে ফোন রাখ ফোন রাখ করতাছোস কে।নিজে রাখতে পারোস না।এক মিনিট তুই এতো সুন্দর করে কথা বলতাছোস ক্যান?কার আবার তেরোটা বাজাইতাছোস?তোরে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি কারো তেরোটা বাজানোর আগেই তুমি সাধু সাজো।
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল…..
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই বকা খাওয়ার জন্যই তো এমন করতাছোস।তোর মনের আশা পুরোন করছি এবার ফোন রাখ।আর একটাও কথা বলবি না।
—চেতোস ক্যান।সত্যি কথা ভালো লাগে না।এবার ভালো মানুষের মত ক’ কোনটা কোন জায়গায় রেখেছিস।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—তোরে আমি ফোন রাখতে কইতাছি।দ্বিতীয় বার কল দিলে তোর খবর আছে। পিঠ,গাল একটাও আস্ত থাকবো না।
—প্যাচাল না পাইরা ক’ কোনটা কই রাখছোস।তাইলেই তো হয়। তাড়াতাড়ি ক’ আমার দেড়ি হইয়া যাইতাছে।না কইলে কিন্তু আমি মায়রে কইয়া দিমু তুই এক পোলার লিগা দু’দিন ধরে দিন রাত চোখে জল নাকের জল ফালাইয়া খাল,বিল,নদী-নালা বানাইছোস।আর দোয়া করছোস পোলাডা যেন তাড়াতাড়ি টপকায়।
ইশফা, ইশরা কথা শুনে সাথে সাথে ফোনটা সানের হাত থেকে কেড়ে নিতে চাইলে সান হাত সরিয়ে ফেলে।ইশফা সানের দিকে তাকাতেই দেখে সান ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইশরা আর কিছু বলার আগেই ইশফা হালকা চেচিয়ে বলল…..
—ইরু তোর কালো হিজাব আমি বের করে তোর বোরকার সাথে রেখেছি।আর পিন ড্রেসিন টেবিলে খুজে দেখ পেয়ে যাবি।
—এই তো আমার ভালো বোইনা।থ্রেড না দিলে কাজ হয় না।লাভ ইউ বোইনা।
ইশফা দাতে দাত চেপে বলল….
—তুই আমারে বাসায় যাইতে দে তার পরে তোর লাভ ইউ আমি ছুডামু।আর একটা কথা বললে তোর খবর আছে।চুপচাপ কল কাট।
ইশফার থ্রেড খেয়ে ইশরা কাদো কাদো গলায় বলল….
—আমি তো ভালা না ভালো লইয়াই থাইকো।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না কল কেটে দিল।
সান,ইশফার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—ফোনে কে ছিলো?
ইশফা ফোনটা ধরে বলল…..
—আমার ছোট বোন।আমার কলিজা।
সান মিটমিট করে হেসে বলল…..
—যাক ভালোই হল তোমাকে সোজা করার লোকের সন্ধান পেয়ে গেলাম।জিজু,শালিকা মিলে ঘাড় ত্যাড়াকে পুরো সোজা করে ফেলবো।
ইশফা সান এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই সান মুচকি হেসে পুনরায় গাড়ি নিয়ে গন্তব্যর দিকে ছুটল।
💦💦💦💦💦💦
গাড়ি এসে এক রেস্টুরেন্টের সামনে থামল।ইশফা গাড়ি থেকে বের হতেই দেখে সামনে নিরব,রিধি সাথে আরেটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মেয়েটি ইশফার দিকে এগিয়ে এসে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে বলল……
—ভাবিইইই।কেমন আছো তুমি?
ইশফা কোন কথা না বলে থ’ হয়ে দাড়িয়ে রইল।মেয়েটি ইশফাকে ছেড়ে দিয়ে গরগর করে বলতে লাগলো……
—ভাবি তুমি আমাকে চিনতে পারছো না তাই তো?চিনবে কি করে ভাই তো তোমাকে আমার কথা বলেই নি।থাক সমস্যা নেই আমি বলে দিচ্ছি। আমি তোমার একমাত্র ননদ সিনথিয়া।
মেয়েটির কথা শুনে ইশফা অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।মনে মনে বলতে লাগল…..
—এ দেখি পুরো রিধির কপি।একবার কথা শুরু করলে গরগর করে সব বলতেই থাকে।থামার নাম গন্ধ থাকে না।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_24_25
“তুই বর্ষা বিকেলের ঢেউ”
“তুই আমার কাছের কেউ”
“তুই চাদরে উড়ানো রাত”
“তোকে দেখতে পেয়েছি হঠাৎ”
“দিয়েছে কি হাওয়া হয়েছি পুরো ক্ষয়”
“রয়েছি আমাতে আমি কই?”
ইশরা গানটা মনে মনে গাইছে আর সামনে দিকে তাকিয়ে রয়েছে।এমন একটা ভাব করছে যেন স্যার যা পড়াচ্ছেন তা খুব মনোযোগ দিয়ে সে শুনছে।
স্যার ক্লাশ শেষে করে বের হতে না হতেই লিপি ন্যাকা কান্না করে বলল…….
—ইরুরে ক্লাশ করতে আর ভালো লাগছে না।কোন ভাবেই ক্লাশে মনোযোগ দিতে পারছিনা।কি করবো বলতো?
—বইয়া বইয়া গান গা।দেখবি অটোমেটিক পড়ায় মন বসে গেছে।
লিপি ইশরার হাতে চাপড় মেরে বলল……
—সব সময় তোর ফাজলামি না।
ইশরা হাত ঢলতে ঢলতে বলল……
—মারোস ক্যান?
—মারবো না তো কি করবো। ভালো বুদ্ধি দে তয় আর তোরে মারুম না।
ইশরা দুঃখি ফেস করে বলল…..
—তোরে আমি কি বুদ্ধি দিমু ক’।আজ আমিই কত বাহানা বানাইলাম কলেজে না আসার লিগা কিন্তু আমার আম্মাজানে আমার ঠেইলা ধাক্কাইয়া হেই কলেজে পাঠাইলই।ফিলিং বহুত দুক্কু।
লিপি আফসোসের সুরে বলল…..
—আহারে কত কষ্ট।
—হ রে বহুত কষ্ট।
ইশরা কিছুক্ষণ দুঃখি দুঃখি ফেস করে বসে থেকে লিপির দিকে তাকিয়ে বলল…..
—চল আজ আর ক্লাশ করতে হবে না।ক্লাশ বন্ধ করে শরীরে হাওয়া লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াই।তাহলে মন-মেজাজ সব ফুরফুরে হয়ে যাবে।
লিপি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল….
—হ তার পরে আমার কোন এক স্যারের সামনে পইরা ধমক খাই।ঐ দিন ইশান স্যার যেই ধমক দিছে তা আর জীবনেও ভুলুম না কখনো।আমি যামু না তুই গেলে যা।
(সেদিন ইশরা,লিপি জিদান এর ক্লাশ না করে বের হওয়ার পর ইশান এর সামনে পরে।ইশরা ওদের বকে পুনরায় ক্লাশে পাঠায়)
ইশরা গালে হাত দিয়ে বসে মনে মনে বলল……
—তুই তো শুধু ইশান স্যারের ধমক খাইছোস আর আমি তো বদের হাড্ডির হাতে কানমলা খাইছি সাথে বকা ফ্রি।
💦💦💦💦💦💦
রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি চেয়ারে বসে রয়েছে ইশফা,সিনথিয়া।ইশফা আসার পর থেকে সিনথিয়া, ইশফাকে এটা সেটা বলেই যাচ্ছে।আর ভাবি,ভাবি বলে ইশফার কান ঝালাপালা করেই চলেছে।ইশফা অনেক বার ভাবি ডাকতে বারন করার পরেও সিনথিয়া শোনে নি।সেই ভাবি, ভাবি বলেই যাচ্ছে।অন্য সময় হলে হয়তো ইশফার রাগ হতো কিন্তু আজ ইশফা কেন যেন ইচ্ছে করেও রাগ করতে পারছে না।ইশফা অবাক হয়ে সিনথিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফার কাছে সিনথিয়া দেখতে পুরো পুতুলের মত লাগছে।দুধে আলতা গায়ের রং।তার মধ্যে কালো ড্রেসটা তার গায়ে পুরো ফুটে রয়েছে।ইশফার মনে হচ্ছে কোন পুতুল ওর সামনে বসে কথা বলছে।সিনথিয়া কথার মাঝে খেয়াল করল ইশফা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সিনথিয়া নিজের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বলল…..
—কি হয়েছে ভাবি? তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে রয়েছো কেন?
ইশফা সামনের থেকে এক গ্লাস পানি সিনথিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—একটু পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নাও।
সান,সিনথিয়ার অপর পাশে বসা ছিল।সান,সিনথিয়ার মাথায় হালকা চাপড় মেরে বলল…….
—তোর বকবক বন্ধ কর।মাথা ব্যথা করছে।
সিনথিয়া নালিশের সুরে বলল……
—দেখলে ভাবি তোমার সামনে ভাই আমাকে মারছে।ওকে আচ্ছা করে বকে দাও।
ইশফাঃদেখো আপু আমি তোমার ভাবি না।তু……
ইশফাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে সিনথিয়া বলল…….
—ভাবি হওনি তো কি হয়েছে হয়ে তো যাবে।তাই আগে থেকেই অভ্যাস করে রাখছি।
সানঃসিনথি মুখটা বন্ধ রাখ বোর হচ্ছে ও।
সিনথিয়াঃমোটেও না।ভাবি একটুও আমার আমার কথার জন্য বোর হচ্ছে না।ভাবি তুমি কি আমার কথায় বোর হচ্ছ?
(বেবি ফেস করে ইশফার দিকে তাকিয়ে)
সানঃগাধী ও কি বলবে যে ও তোর কথায় বোর হচ্ছে।
সিনথিয়াঃবুঝি বুঝি সব বুঝি।সব তোর ভাবির সাথে কথা বলার ধান্দা।তুই চাচ্ছিস যাতে আমি এখান থেকে চলে যাই।তাই এমন করছিস।
সান চোখ রাঙিয়ে বলল…..
—তোর কি এক লাইন বেশি না বুঝলে হয় না।
সিনথিয়াঃতুই আমাকে বললেই পারতি যে তুই ভাবির সাথে কথা বলতে চাচ্ছিস।তাহলেই তো আমি কাবাব মে হাড্ডি হতাম না।
সান দাতে দাত চেপে বলল…..
—মুখটা বন্ধ রাখ।এখন আমি তোর সাথে কোন কথা বাড়াতে চাচ্ছি না।
সিনথিয়া ভেংচি কেটে বলল…..
—যা যা যাচ্ছি যাচ্ছি।ভাবি তুমি একটু বসো আমি দেখে আসি তুশি আপু আসলো কি না।
সিনথিয়া চলে যেতেই ইশফা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল……
—আমাকে এখানে নিয়ে আশার কারন কি জানতে পারি?
সান চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বলল…..
—আমি যেদিন হস্পিটালে এডমিট ছিলাম সেদিন সিনথির বার্ডডে ছিল।সেদিন তো ওর জন্য কোন কিছু করতে পারিনি।তাই আজ ওর জন্য কিছু করার ব্যবস্থা করেছি।
—বেশ ভালো তো।কিন্তু আমাকে কেন নিয়ে এসেছে?
—ও তোমাকে দেখতে চেয়েছিল প্লাস তোমাকে সাথে নিয়ে বার্ডডে সেলিব্রেট করতে চেয়েছিলো।তাই আর কি।
—তাই বলে সকাল বেলা এভাবে তুলে নিয়ে আসবেন?
সান সোজা হয়ে বসে বলল…..
—ও হ্যালো আমি তোমাকে তুলে নিয়ে আসি নি ওকে।তুমি নিজেই এসেছো।
—মোটেও না।
—মোটেও হ্যা।
ইশফা তাড়া দিয়ে বলল…..
—আমি ভার্সিটিতে যাব।আমার ক্লাশ আছে।
—একদিন ক্লাশ না করলে কিছু হবে না।
একদিনে তুমি ইশ্বরী চন্দ্রী বিদ্যা সাগরী হয়ে যাবে না।
ইশফা অবাক হয়ে বলল…..
—মানে!ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যা সাগর শুনেছি।এই ইশ্বরী চন্দ্রী বিদ্যা সাগরীটা আবার কে?
সান ইশফার দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলল……
—আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বুদ্ধিমতী।এখন তো দেখছি তুমি মাথা মোটা। জেন্ডার পরিবর্তনও বোঝ না।
ইশফা কিছু বলার আগেই বাকিরা সবাই চলে আসলো।ইশফা কিছু বলতে নিয়েও চুপ করে রইল।মনে মনে পণ করল।এর জবার সে সুদে আসলে দিবে।
💦💦💦💦💦💦💦
ইশরা,লিপি ক্লাশ শেষ করে ক্লাশ থেকে বের হয়ে গেডের দিকে যাবার সময় পিয়ন এসে বলল……
—ম্যাম ইশান স্যার আপনাকে ডাকছে?
ইশরা পিওনের দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল….
—সত্যি তো…?
পিয়নঃজ্বি ম্যাম সত্যি।
ইশরাঃভাইয়ার রুমে মানে ইশান স্যারের রুমে স্যার কি একা না অন্য কেউ আছে?
পিয়নঃম্যাম স্যার আপনাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।
কথাটা বলেই পিয়ন ঝড়ের গতিতে চলে গেল।
ইশরা পিয়নের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……
—নিশ্চই সাথে বদের হাড্ডি আছে।তাই তো ব্যাটা পিয়ন আমার কথার উওর না দিয়ে চলে গেল।
লিপিঃইরু তাহলে তুই স্যার এর সাথে দেখা করে আয়।আমি চলে যাই।
ইশরাঃযাবি মানে?তুইও আমার সাথে যাবি।
—আরে আমি গিয়ে তোদের মধ্যে কি করবো?তোর ইশান স্যার তো তোকে ডাকছে।(চোখ মেরে)
ইশরা লিপির হাতে চাপড় মেরে বলল…..
—লিপি কি বাচ্চি। ইশান স্যার আমার ভাইয়া বুঝেছিস।তাই উল্টাপাল্টা ভেবে মাথার মধ্যে জগাখিচুড়ি পাকানোর দরকার নেই।চল।
—তুই যা আমি যাবো না।
—তুই যাবি তোর ঘাড় যাবে।
ইশরা লিপিকে টেনে তার সাথে নিয়ে গেলো।
💦💦💦💦💦💦
ইশান এর রুমের মধ্যে চুপচাপ ইশরা,লিপি দাড়িয়ে রয়েছে।ইশান চেয়ারে বসে সামনে কিছু খাতা-পত্র নিয়ে সেগুলোর মধ্যে চোখ বুলাচ্ছে।জিদান চুপচাপ ফোন হাতে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে মুখ ভার করে বসে রয়েছে।
জিদান যে রেগে আছে তা ইশরা জিদানের চেহারা দেখেই বুঝতে পারছে।কিন্তু কেন রেগে আছে তাই বুঝতে পারছে না।ইশরা কিছুক্ষন চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার পর কাচুমাচু করে ভয়ে ভয়ে বলল……
—ভাইয়া আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো।কেন ডেকেছিস তাড়াতাড়ি বল।বাড়িতে যেতে দেরি হয়ে যাবে তো।
ইশান খাতা-পত্রর দিকে চোখ রেখেই বলল……
—ইরু ডিস্টাব করিস না।দাড়িয়ে না থেকে বসে থাক।চেয়ার খালিই আছে।
ইশরা,জিদান সামনে দেখে আর কিছু বলার সাহস পেল না।চুপ করে দাড়িয়েই রইল।জিদানের ফোন বাজতেই জিদান ফোনটা রিসিভ করে ইশরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল…..
—কথা বল।
ইশরা জিদানের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই জিদান বলল…..
—হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?ফোন ধর মা লাইনে আছে।
ইশরা ফোন ধরে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।একটু পর অপর পাস থেকে ভেসে এল…..
—আমার লাল টুকটুকে পরিটা কি আমার সাথে অভিমান করেছে?কথা বলবে না আমার সাথে?
ইশরা সাথে সাথে ফুপিয়ে কান্না করে দিল।ইশরার কান্নার আওয়াজ পেয়ে অপর পাশ থেকে হাফসা বেগম ব্যস্ত সুরে বলল…..
—এই বোকা মেয়ে কান্না করছিস কেন?
ইশরা কাপাকাপা গলায় বলল……
—কে-কেমন আ-আছো বড় মা?
—ভালো ছিলাম না আমার মেয়েটার সাথে কথা বলে মনটা ভালো হয়ে গেছে।
তুই কেমন আছিস?
— আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।
—বাসার সবাই কেমন আছে?সবাই কি আমাকে ভুলে গেছে?
ইশরা অভিমানের সুরে বলল……
—বড় মা তুমি এটা বলতে পারলে?আমরা তোমাকে ভুলে যাব।
হাফসা বেগম মুচকি হেসে বলল…..
—পাগলি মেয়ে রাগ করছিস কেন?আমি তো এমনিই বলছিলাম।
ইশরা কিছুক্ষন হাফসা বেগম এর সাথে কথা বলার পর হাফসা বেগম বলল……
—ভালো থাকিস মা।আর শোন আমার ছেলেটার একটু খেয়াল রাখিস।জানিস তো ও একটু চাপা সভাবের।
—বড় মা তুমি আজ পযর্ন্ত তোমার ছেলেকে চিনলেই না।তোমার বদ ছেলে সবার সামনে সাধু সাজে আর যত রাগ খালি আমার উপর দেখায়।
ইশরা মুখ ফোসকে কথাটা বলে সাথে সাথে জিদানের দিকে তাকাতেই দেখে জিদান ওর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রয়েছে।ইশরা কাদো কাদো গলায় বলল……
—বড় মা দেখো তোমার ছেলে আমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে রয়েছে।ওহ তুমি দেখবে কি ভাবে তুমি তো অডিও কলে আছো।তুমি এক কাজ করো তোমার ছেলেকে বলে দেও আমাকে যেন না বকে।
হাফসা বেগম মুচকি হেসে বলল…..
—ঠিক আছে বলে দিচ্ছি।দে ওর কাছে ফোন দে।
ইশরা জিদানের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।জিদান,হাফসা বেগম এর সাথে কথা বলার মাঝে ইশরা কেটে পরতে নিলেই জিদান গম্ভীর গলায় বলল……
—এখন অব্দি বউ না হতেই শাশুড়ির কাছে বিচার দেওয়া হচ্ছে।তোর সাহস তো দেখছি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
ইশরা ঘুড়ে জিদানকে ভেংচি কেটে বলল…..
—বিচার দিয়েছি বেস করেছি।আর আপনার বউ হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।নতুন একটা খুজে নিয়েন।
জিদান হাত ভাজ করে বলল….
—পুরান পাগলকেই সামলাতে পারি না আবার নতুন একটা।
ইশরা কোন কথা না বলে ভেংচি কেটে লিপিকে টেনে নিয়ে বের হয়ে গেল।
এতোক্ষনের পুরো ঘটনা লিপির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।লিপি নিরব র্দশকের মত চুপচাপ দাড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছিলো।
💦💦💦💦💦💦
সকাল সকাল ইশরার ফোনটা লাগাতার বেজেই চলেছে।ইশরা ঘুমঘুম চোখে স্কিনের উপর ভেসে উঠা নামটা দেখে কল রিসিভ করে বলল……
—কুত্তা সাত সকালে কি মনে করে তুই আমারে ফোন দিয়া আমার সাধের ঘুমটা নষ্ট করলি।
অপর পাশ থেকে ভেসে এল……
—দোস্ত আমারে বাচা।
—তোরে বাচাইতে যামু কোন দুঃখে।তুই মরলে বিরিয়ানি খাইতে পারুম সেই আশায় বইসা রইছি।
—বিরিয়ানি পরে খাইস আগে আমারে বাচা।
—ঢং না করে কইতে পারোস না কি হইছে?
—ফোনে কওন যাইবো না।সমনা সামনি কওন লাগবো।বিকেলে ফ্রি আছোস?
—ক্যান বাসায় আসবি।বাসায় আইলে কিন্তু চকলেট,চিপস নিয়া আসবি বেশি করে।ঐ বার কিপটার মত একটা কইরা সব আনছোস।
—খাদকরে আমার কাজ হলে তোরে বড় করে একটা ট্রিট দিমু।এখন বল বিকেলে ফ্রি আছোস কিনা।
—হুম ফ্রি আছি।আগে ক’ কি খাওয়াবি তাইলে যেই জায়গায় যাইতে কবি যামু।
—আচ্ছা খাওয়ামু নে।আর পরে বলতাছি কই দেখা করবো।
—আচ্ছা।
—আর শোন।পারলে ইফু আপুরে সাথে নিয়া আসিস।
—রিদের বাচ্চা ইফু বেলায় আপু।আর আমার বেলায় তুই।
—তো ইফু আপু আমার বড় না।বড়গো তো সম্মানই দিতে হয়।
—ইফু তোর বড় তয় আমি কি?আমি তোর ছোট নাকি?আমারেও সম্মান দিয়া কথা বলবি।
—তরে আর সম্মান।যা ভাগ।
—যা তোর লগে দেখা করতে যামু না।
—কথা বাড়াইস না তো।এমনিই মন মেজাজ ভালো না।আন্টিরে আমার সালাম দিস।আর ইফু আপুরে সাথে করে নিয়ে আসবি।
—আচ্ছা।
—মনে থাকে যেন।
—থাকবো মনে।ফোন রাখ এখন।
ইশরা কল কেটে আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল।
ফোনের অপর পাশের লোকটা হল রিদওয়ান হাসান।ডাক নাম রিদ।রিদ,ইশরার বন্ধু সাথে প্রতিবেশি।রিদ ইশফা,ঈশরার ১মাসের ছোট।রিদ ছোট থেকেই ইশফাকে আপু বলে আর ইশরাকে নাম ধরে ডাকে।
💦💦💦💦💦💦
পার্কের এক বেঞ্চের মধ্যে রিদ বসে ছটফট করছে।রিদ অনেক ক্ষন ধরে বসে রয়েছে।এখন অব্দি ইশরার আসার খরব নেই।হুট করেই ইশরা পিছন দিক দিয়ে এসে রিদের পিঠে এক তাল ফালালো।
রিদ চমকে গিয়ে পিছনে তাকাতেই ইশরাকে হাসি মুখে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাগি গলায় বলল…….
—মারোস ক্যান?না মারামারি করলে তোর ভালো লাগে না?
ইশরা দাত কেলিয়ে হেসে বলল……
—এই মাইর ডা তোর পাওনা আছিল।কুত্তা সান্ত আমার লগে ভেজাল করছিল তা তুই ইফুরে কেন বলতে গেছিলি?বলছোত তো বলছোত আমার ফোন দিয়া কল দিছিলি ক্যান?তোর ফোনে টাকা ছিলো না?
পিছন থেকে ইশফা সামনে এসে ইশরার মাথায় চাপড় মেরে বলল……
—তোর ফোন দিয়ে কল দেওয়াতে দোষ হয়েছে নাকি আমাকে জানানোতে দোষ হয়েছে কোনটা?
রিদঃঠিক করেছো আপু এরে আরো দুই তিনটা লাগাও।সব সময় আমার পিঠ এর তেরোটা বাজিয়ে দেয়।
ইশরা,রিদের দিকে তেড়ে যেতে নিলেই ইশফা থামিয়ে দিয়ে বলল…..
—এটা বাড়ি না পার্ক।মারামারি বাড়িতে করিস।এখন যে কাজের জন্য এখানে এসেছি তা আগে শেষ করি।
💦💦💦💦💦💦
পার্কের এক পাশে রিদ হাটুগেড়ে বসে ফুলের তোড়া ধরে আছে ইশরার সামনে।ইশরা মুচকি হেসে বলল….
—আমি রাজি।
কথাটা বলে ফুলের তোড়াটা ধরার আগেই সান কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে এসে ইশরাকে থাপ্পড় মেরে চিৎকার করে বলল……
—কি করে পারলে তুমি আমার মন নিয়ে ছেলেখেলা করতে? বল কি করে পারলে?(চিৎকার করে)
সান এর এমন চিৎকারে ইশরা কেপে উঠল।গালে হাত দিয়ে টলমল চোখে সানের দিকে তাকিয়ে রইল।সানকে এর আগে কখনো দেখেছে কিনা তার মনে হচ্ছে না।ইশরাকে চুপ করে থাকতে দেখে সান ইশরার গাল চেপে ধরে বলল….
—এখন কথা বলছো না কেন?চোখে পানি কেন?থাপ্পড় কি খুব লেগেছে?আমার থাপ্পড় তো শুধু তোমার গালে লেগেছে আর তোমার এই কাজে যে আমার মনে কতটা ক্ষত হচ্ছে তা কি তুমি বুঝতে পারছো?
কথাটা বলেই ইশরার গাল ছেড়ে দিয়ে দু হাত দিয়ে নিজের চুল টানটে লাগলো।ইশরা থেমে থেমে বলল….
—আ-মি কি আ-পনাকে চি-নি?
ইশরার কথা ছিল আগুনে ঘৃ ঢালার মত।সান ইশরার দিকে তেড়ে যেতেই ইশরা দু কদম পিছিয়ে গেল।সান একটা তাসিল্য হাসি দিয়ে বলল….
—বাহ কি সুন্দর প্রশ্ন তোমার?কি যেন বললে,(মনে করার ভান করে)তুমি আমাকে চেনো কি না?আমি কত বোকা না।তোমার জন্য পাগলামী করে যাচ্ছি আর তুমি আমাকে পাগলের মত নাচাচ্ছো।আমি ভেবেছি তুমি একদিন না একদিন আমাকে বুঝতে পারবে।কালকে তো সারাদিন আমার সাথেই ছিলে একবার কেন বললে না তুমি আমাকে চাও না।অন্য কাউকে চাও।উওর দাও।(চেচিয়ে)
সান এর কথা শুনে ইশরা মুচকি হেসে বলল….
—অনেক সময় চোখের দেখাও ভুল হয়।তখন মন দিয়ে অনুভব করতে হয়।আপনার মাথায় এখন রক্ত চড়ে গেছে।মন, মস্তিস্ক কোনটাই কাজ করবে না।মাথা ঠান্ডা করে পরে ভাববেন, আমিই কি সে যার জন্য আপনি “দিওয়ানা”?
সান চেচিয়ে বলল…….
—ওহ্ এখন আমার ভুল হচ্ছে?আসলেই আমার ভুল হয়েছে ভুল মানুষকে নিজের জন্য ঠিক করে। তুই থাক তোর মত।আমি আর না তোর সামনে কখনো আসবো আর না তোদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়াবো।কথাগুলো বলেই সান হনহন করে চলে গেলো।
ইশরা বোকার মত সান এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ইশফা পিছন থেকে বলল…..
—কি হয়েছে।ঐ দিকে কি দেখছিস?
ইশফার কথা শুনে ইশরা পিছন দিকে ঘুড়ে কাদো কাদো হয়ে বলল……
—সর্বনাশ হয়ে গেছে ইফু।
—কি হয়েছে বলবি তো?
—তোর সূর্য্য আমাকে তুই ভেবে গন্ডগোল করে ফেলেছে।
—মানে!
ইশরা একপলক রিদের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল…..
—তুই আইসক্রিম আনতে যাওয়ার পর রিদ ওর গার্লফ্রেন্ড কে প্রপোজ করার জন্য আমাকে দিয়ে ট্রাই করছিলো।তখনি…..
ইশরা আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলল।
ইশফা দুজনের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে থেকে রাগি গলায় বলল…..
—দুটোকে এখন পাশের ড্রেনে নিয়ে হাবুডুবু খাওয়াতে মন চাচ্ছে।আর যায়গা পাওনি তোমরা।
ইশফা পাশের বেঞ্চে ধপ করে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলল……
—সর্বনাশ হয়ে গেছে রে ইরু।পুরোই সর্বনাশ হয়ে গেছে।ঐ পাগল না জানি নিজের আবার কি ক্ষতি করে বসে।ঐ পাগলকে আমি এখন কিভাবে থামাবো?
#চলব,
(#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_26
১৫দিন পরঃ
—কাছে থাকতে কেন আমরা মানুষের মূল্য বুঝিনা?কেন সব সময় নিজের মানুষটাকে হাড়িয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকি বলতে পারো?
আপন মনে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো সান।ইশফা গাড়ির কাচ নামিয়ে চারোপাশে তাকিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলো।সান চুপ করে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো আর আড়চোখে ইশফাকে পর্যবেক্ষণ করছে।হঠাৎ সানের এমন কথা শুনে ইশফার সানের দিকে তাকিয়ে দেখে সান এর চেহারাটা কেমন ফেকাসে হয়ে রয়েছে।কথাটা বলে হয়তো সান উওরের আশায় চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে।
ইশফা সান এর কথার উওর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল……
—আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
ইশফার কথা শুনে সান ইশফার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলল……
—না ঠিক আছি।
—দেখুন সব সময় কিন্তু বাড়াবাড়ি ভালো না।আপনি এই অবস্থায় না আসলেও পারতেন।আমি একাই চলে যেতে পারতাম।
সান সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—বেশি কথা বলো না তো।যা জিগ্যেস করেছি তার উওর দাও।আমি ঠিক আছি।
—বললেই হলো ঠিক আছেন।আপনারা চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনি অসুস্থ।আপনি আমাকে নামিয়ে দিন।আমি এখান থেকে একাই চলে যেতে পারবো।
সান মুচকি হেসে বলল…..
—বাহ আমার কথা দেখি কত ভাবো তুমি।তা হঠাৎ আমার প্রতি এতো ভাল…..
সানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে ইশফা বলল……
—আস্তে আস্তে বেশি ঊড়তে হবে না।আপনি অসুস্থ তাই আমি কথাগুলো বলেছি।আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলেও আমি এই কথাগুলোই বলতাম।
সান মুখটা ছোট করে বলল…..
—তোমার মনে কি একটুও মায়া দয়া নেই?আমি অসুস্থ আমার মন রাখতেও তো একটু লাজুক হেসে বলতে পারতে তেমন কিছু না।আপনার চিন্তা আমি না করলে কে করবে শুনি।
ইশফা সান এর কথা বলার ভাব ভঙ্গি দেখে নিজের হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলো না।ইশফা ফিক করে হেসে উঠল।হাসতে হাসতে বলল……
—ও মাই গড।মিঃসান যে কিনা সব সময় রাগি,গম্ভীর লুকে থাকে তাকে যে এই লুকে দেখবো কখনো ভাবতেও পারিনি। তাকে কিন্তু এই লুকে মানাচ্ছে না।আর আসলেই আমার মনে মায়া দয়া নেই।বলতে পারেন পাষাণ।তাই এই পাষাণের জন্য নিজের মুল্যবান সময়ের থেকে একটুও সময় নষ্ট না করাই ভালো।ভালো কাউকে খুজে নিন।
ইশফার কথা শুনে সান বড় করে নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ দমিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—যা আজ বলেছো তো বলেছো।দ্বিতীয় বার এই কথা আর মুখে নিবে না।আগেও বলেছি এখনও বলছি তুমি শুধু আমার।না তোমাকে কারো হতে দিব আর না নিজে অন্য কারো হব।
ইশরার ডাকে ইশফা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এল।ইশফা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে পুরোন কথাগুলো ভাবছিল।ইশরা,ইশফার পাশে এসে দাড়িয়ে বলল…….
—এতো রাতে ব্যালকনিতে কি করছিস তুই?
ইশফা আগের মত দাড়িয়ে থেকেই আস্তে করে বলল…..
—ঘুম আসছে না।
ইশরা,ইশফার দিকে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বলল…..
—তোর সূর্যর কোন খবর জানতে পেরেছিস?হতেও তো পারে তার বিয়ের খবরটা রটানো ছিল।
ইশফা একটু সময় চুপ করে থেকে বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—প্রথমত সে আমার না।দ্বিতীয়ত অন্যের খবর জেনে আমার কি লাভ?
ইশরা চোখ ছোট ছোট করে ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল……
—ঢং করো আমার সাথে ঢং।তুমি যে তোমার ঐ সূর্য এর চিন্তায় চেহারার তেরোটা বাজিয়ে রেখেছো আমি কি বুঝি না মনে করেছো।
ইশফা সান্ত গলায় বলল……
—দেখ ইরু প্রতিদিন এক প্যাচাল ভালো লাগে না।তার জন্য আমার মনে না কিছু আছে আর না ছিলো।এসব কথা এবার বন্ধ কর।ভালো লাগে না শুনতে আর।
ইশরা সান্ত গলায় বলল…..
—সত্যি বলতাছোস?তার জন্য তোর মনে কিছু নাই?
—মিথ্যে বলে আমার কি লাভ।তার বিয়ের কথা শুনে প্রথমে একটু খারাপ লেগেছে।হয়তো তার ঐ সব পাগলামি দেখে তার প্রতি একটু ভালো লাগা কাজ করে ছিলো তাই।এখন সে অন্য কারো হয়ে গেছে।তাকে নিয়ে সুখে থাক তাই ভালো।আমার পিছু তো ছেড়েছে আর কি চাই।
—সত্যি বলছিস তার জন্য এখন তোর মনে কোন অনুভূতি নেই?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে ইশরা বলল…..
—এখন চুপ কইরা আছোস ক্যান?
ইশফা রুমে যেতে যেতে বলল…..
—মাথা ব্যাথা করছে ঘুমোব।খবরদার কানের সামনে আর কোন প্যানপ্যান করবি না।
ইশফা চলে যেতেই ইশরা হতাশ হয়ে নিশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বলল…..
—আমার বোইনডা আসলেই পাষান।এর দ্বারা কিছুই হবে না।বুক ফাটবে তবুও মুখ ফাটবে না।
পার্কের সেদিনের ঘটনার পরের দিন ইশফা অসুস্থ থাকার কারনে ভার্সিটিতে যেতে পারে নি।এমনকি বাসা থেকেও ইশফার মা ইশফাকে বের হতে দেয়নি।অনেক চেষ্টা করেও সেদিন সান এর খবর নিতে পারেনি।সারাদিন বাড়িতে থেকে শুধু ছটফট করেছে।না জানি সান কি করে বসে।সারাদিন মাথার মধ্যে শুধু সানকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ঘুরপাক করেছে।
পরের দিন ইশফা ভার্সিটিতে গিয়ে সানকে বহু খোজাখুজি করে কিন্তু পায় না।পরে রিধির কাছে জানতে পারে সান তার এক আত্মীয় এর বাড়িতে অনুষ্ঠানে গিয়েছে।কথাটা শুনে ইশফা হাফ ছেড়ে বাচে।সান সুস্থ আছে শুনেই সে শান্তি পায়।কিন্তু মনে মনে সানকে দেখার জন্য অধিক আগ্রহে বসে থাকে।৫দিন পরে ইশফা সানকে দূর থেকে দেখতে পায় বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছে।ইশফা সান এর সাথে দেখা করার আগেই রিধির এক কথায় ইশফার পুরো স্টেচু হয়ে যায়।এলির সাথে সান এর বিয়ে ঠিক এবং বিয়ে এই সপ্তাহে।কথাটা শুনে ইশফা কি রিয়েক্ট করবে সেটাই ভুলে গিয়েছিল।কিছুক্ষন স্টেচু হয়ে থেকে মলিন হেসে বলেছে……
—ভালো তো?আমার পিছু আর পরতে আসবে না।আপদ বিদায় হল।
মুখে হাসি নিয়ে কথাটা বললেও মনের মধ্যে ঠিকই ইশফার রক্ত ক্ষরন হচ্ছিল।ইশফা কেমন এক চাপা কষ্ট অনুভব করছিলো।কেন সে তা জানে না।
সেদিন ভার্সিটি থেকে ফিরে বাড়িতে কেউ না থাকায় দু’ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে বের হয়।সেদিন রাত থেকেই ইশফার ধুম জ্বর, ঠান্ডা।জ্বর,ঠান্ডা ছেড়ে উঠতেই সপ্তাহ পার হয়ে যায়।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা ভার্সিটি থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে হুলস্থুল লেগে গেছে।বাসায় তার ফুপ্পি,ফুপা সাথে ইশান এসেছে।ইশফা তাদের সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। মনে মনে ভাবলো তারা এসেছে দেখে হয়তো এমন কান্ড।বোরকা,হিজাব খুলে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় শরীর বিছিয়ে দেয়।একটু পর তার মা এসে তাড়া দিয়ে বলল……..
—কিরে তুই এমন শুয়ে রয়েছিস কেন?তাড়াতাড়ি কর মেহমান এসে পরবে।
ইশফাঃমা একটু রেস্ট নিতে দেও তো।ফুপিরা তো এসেই পরেছে নতুন করে আর কে আসবে?
মাঃকে আসবে মানে?আজ তোকে দেখতে আসবে ভুলে গেছিস।
ইশফা লাফ দিয়ে উঠে বসে বলল……
—কিহহহহ!বলা নাই কওয়া নাই দেখতে আসবে মানে কি?
মাঃকেন ইরু তোকে কালকে কিছু বলে নি?
—না তো ও কিছু বলেনি।
—না বলেছে তো কি হয়েছে এখন তো আমি বললাম।যা এবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল…..
—মা এখন এসবের কি দরকার?আমি এখন কারো সামনে যেতে পারবো না।
মা, ইশফার দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল…..
—যেতে পারবি না মানে কি? তোর কি কোন পছন্দ আছে?
ইশফা মাথা নিচু করে বলল…..
—না আমার কোন পছন্দ নেই?
মা ইশফার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল……
—তাহলে এমন করছিস কেন?মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দিতে হবে না।
ইশফা নিচু গলায় বলল…..
—মা আমি সবে মাত্র অর্নাস করছি।এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের তাড়া কিসের?আমি আরো পড়ালেখা করবো।
—আজ দেখতে আসছে বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না।আর তাছাড়া বিয়ের পর যদি লেখাপড়া করায় তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?
ইশফা কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।
ইশরা ধরফরিয়ে রুমে ঢুকে বিছানায় গা বিছিয়ে দিয়ে বলল……
—মা গো কাজ করতে করতে আজ আমি শেষ।ইফু যা পাবি তার থেকে অর্ধেক আমারে দিবি।লোকেরা কিন্তু খালি তোর চেহারা দেইখাই টাকা দিবো না।গোছগাছ, আদর-আপ্পায়ন দেখেও দিবো।
ইশফা, ইশরার দিকে রাগি চোখে তাকাতেই ইশরা ঢোক গিলে তোতলাতে তোতলাতে বলল……
—ম-মা ড-ড্রয়িং রুমে আমি ময়লা রেখে এসেছিলাম।তা পরিষ্কার করে আসছি।
কথাটা বলেই ইশরা যেভাবে এসেছিল সেভাবেই জান নিয়ে পালালো।মনে মনে বলল……
—এর সামনে আজ আর পরা যাবে না।এ আমারে আজ একা পাইলে পানি ছাড়াই কাচা গিল্লা খাইবো।
💦💦💦💦💦💦
বেডের মধ্যে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে ইশফা। চোখ দিয়ে তার টপটপ করে পানি ঝড়ছে ।ইশরা দূরে দাড়িয়ে রয়েছে তার চোখেও পানি।
ছেলে পক্ষ ইশফাকে দেখতে আসার পর তারা ইশফাকে পছন্দ করেছে এবং তারা আজই রেজিষ্ট্রার মেরেজ করে রাখতে চাচ্ছে।ছেলের বাবা কয়েক দিনের মধ্যেই বিডির বাহিরে যাবে।ফিরতে একটু সময় লাগবে।তাই তারা শুভ কাজে দেড়ি করতে চাচ্ছে না।ছেলে,ছেলের ফ্যামিলি ইশিতা বেগমদের পূর্ব পরিচিত।তাই তারাও ছেলের পক্ষের জোড় এর কাছে হার মেনে বসে রয়েছে।ইশফার যেহেতু কোন পছন্দ নেই তাই তারাও এতো ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া করতে চাচ্ছে না।
মিঃখান এসে ইশফার পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলল……
—দেখ মা মেয়ে হয়ে জন্মেছিস একদিন না একদিন তো পরের ঘড়ে যেতেই হবে।এটাই সমাজের নিয়ম।তোর মনে হতে পারে ছেলের সম্পর্কে না জেনে কিভাবে হুট করে আমরা তোকে তার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছি।আমরা ছেলে, ছেলের ফ্যামিলি সম্পর্কে আগে থেকেই খোজ নিয়েছি।তোর ফুপারও পরিচিত।তারা যখন এতো করে জোর করছে তাই আমরাও আগাতে চাচ্ছি।কিন্তু আমরা কিছু বলার আগে তোর মতামত জানতে চাই।তোর যদি কোন আপত্তি থাকে বলতে পারিস।আর অন্য কোথাও পছন্দ থাকলেও বলতে পারিস।তোর মতেই সব হবে।আমাদের সবারই ছেলে পছন্দ হয়েছে।তোর যদি না হয় তাহলে আমরা না করে দিব।এখন বল কি করবো?
ইশফা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে বলল……
—আ-আমি ক-কোথাও যাবো না আব্বু।ত-তোমাদের কে ছেড়ে কোথাও যাব না।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_27
জিদানের নাম্বারে একের পর এক কল দিয়েই চলেছে ইশফা।বার বার জিদান কল রিসিভ না করে কেটে দিচ্ছে।ইশফা হাল না ছেড়ে লাগাতার কল দিয়েই যাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর জিদান কল রিসিভ করে গম্ভীর গলায় বলল…..
—এতো বারবার কল কেন দিচ্ছিস বুচি?দেখছিস কলটা কেটে দিচ্ছি তারপরেও কেন ডিস্টাব করছিস?একটা কাজে আছি।বাসায় গিয়ে কল দিব।
ইশফা ফুপিয়ে,ফুপিয়ে বলল……
—মি-মিথ্যে কে-কেন ব-বলছো ভা-ভাইয়া?তোমার মুখে কিন্তু মিথ্যে মানায় না ভাইয়া।ইশান ভাইয়া বলেছে তুমি আমাদের বাসার আশেপাশে আছো।আর এখানে কি হচ্ছে তুমি সব জানো।আমার জীবনের এতো বড় একটা দিনে তুমি কি আমার পাশে থাকবে না ভাইয়া?
ইশফার কথা শুনে জিদানের চোখের কোন ভিজে গেল।ইশফাকে কি বলবে তাই ভেবে পাচ্ছেনা জিদান।তারও তো ইচ্ছে করছে বড় ভাই এর মত ছোট বোনটার পাশে থেকে তাকে আরেক জনের হাতে তুলে দিতে।কিন্তু পরিস্থিতির কাছে সে নিরুপায়।জিদান কান্না আটকিয়ে বলল……
—আমার দোয়ায় সব সময়ই আমার বুচি বোনটা থাকবে।সামনে থেকে আলাদা করে দোয়া করতে হবে না।
জিদানের কথা শুনে ইশফা শব্দ করে কান্না করতে লাগলো।জিদান ব্যাস্ত হয়ে বলল……
—বুচি তুই এভাবে কাদছিস কেন?কি হয়েছে তোর?তোর কি এই বিয়েতে মত নেই?
ইশফা ফুপিয়ে বলল…..
—তুমি বাসায় আসো ভাইয়া।আমি তোমাকে আজ আমার পাশে চাই।
ইশফার কথা শুনে জিদানের চোখ দিয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পরল।নিচু গলায় বলল…..
—তোর কি মনে হয় বাসায় যেতে পারলে তোর বলার আশায় বসে থাকতাম?
ইশফা কিছু না বলে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।জিদানও অপর পাশ থেকে নিরবে কান্না করতে লাগল।কিছুক্ষন পর ইশন এসে তাড়া দিয়ে বলল…..
—তাড়াতাড়ি কথা শেষ কর।মামা এখনি তোর সাইন নিতে আসবে।
জিদান,ইশান এর কথা শুনতে পেয়ে কান্নামাখা গলায় বলল…..
—দোয়া করি আমার বুচি বোনটা যেন সুখি হয়।দুনিয়ার কোন দুঃখ যেন তাকে স্পর্স করতে না পারে।আল্লাহ্ যেন তাকে সকল বালা-মুছিবত থেকে হেফাজত করে।
💦💦💦💦💦💦
ইশফা পাথরের মত বসে নিরবে কান্না করছে।পাশে বসে তুশি বিরক্ত হয়ে বলল…..
—ঐ ছেমড়ি এমন কানতাছোস ক্যান? আমরা কি তোরে বনবাসে দিয়া দিছি?কান্না বন্ধ কর।তোরে এমন ফ্যাসফ্যাস কান্নায় মানায় না।
ইশফা কিছু না বলে সেই আগের মত বসে রয়েছে।ইশফাকে চুপ থাকতে দেখে তুশি আবার বলল……
—দেখ ইফু একটা ভালো বুদ্ধি দেই।জীবনে তো পারলিনা একটা প্রেম করতে।সারা জীবন গুন্ডামি কইরা গেলি।প্রপোজ করতে আসলেও এমন থ্রেড দিছোস দ্বিতীয় বার ঐ পোলা আর সামনে পরে নাই।তোর লিগা আমিও জীবনে একটা প্রেম করতে পারলাম না😔।কথা সেটা না কথা হল এখন যতদিন পযর্ন্ত জিজু তোরে উঠাইয়া না নেয় চুটিয়ে জিজুর লগে প্রেম কর।দেখবি তাইলে সব সমস্যা সমাধান।তোর লগে আমিও না হয় হালু,কালু একটা খুইজা নিমু নে।আইডিয়া টা কেমন বলতো?☺
—হালু,কালু কেন খুজতে যাবে আমাকে কি চোখে পরে না।
ইশান এর কথা শুনে তুশি চোখ বড় বড় করে সামনে তাকিয়ে তুতলিয়ে বলল…..
—আ-আপনি!আপনি রুমে কখন এসেছেন?
ইশানঃযখন থেকে আপনি বকবক শুরু করেছেন তখন।আপনাদের তো আবার সভাব ভালো কথা শুরু করলে কোন হুস থাকে না।সামনে পিছে না দেখেই বকবক করতে থাকেন।
তুশি বিরবির করে বলল…..
—শুরু হয়ে গেছে লেকচার।
তুশি,ইশফার দিকে কাদো কাদো ফেস করে তাকিয়ে থেকে কেটে পরতে চাইলে জিদান বলল…….
—যা শোনার শুনে নিয়েছি এখন আর পালিয়ে লাভ নেই।ইশফাকে নিয়ে ছাদে আসো ওর বর ওর সাথে কথা বলবে।
কথাটা বলে ইশান তুশির দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে চলে গেল।তুশি মাথায় হাত দিয়ে ন্যাকা কান্না করে বলল…..
—আমি শেষ ইফু।তোর ভাই এবার আমারে পচাইয়া মারবো।এই লোক আমার রিলেশন শুরু করার আগেই ব্রেকআপ করাইয়া দিব।
💦💦💦💦💦💦
ছাদের এক পাশে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা। পাশে দাড়িয়ে রয়েছে আরেক জন লোক।প্রচন্ড কান্নার ফলে ইশফার চেহারা, চোখ-মুখ পুরো লাল হয়ে রয়েছে।ইশফা জানে না লোকটা কে?হয়তো তার বর হবে।তা না হলে কি তুশি,ইশান মিলে ওদের কে একা কথা বলার জন্য এখানে রেখে অন্য পাশে চলে যেত।কিছুক্ষন চুপকরে থাকার পর লোকটি গলা পরিষ্কার করে বলল……
—হাই আমি রিমন।আপনার নাম কি?
ইশফা ত্যাড়া ভাবে উওর দিল……
—নাম না জেনেই বিয়ে করেছেন?
রিমন মুচকি হেসে বলল……
—আসলে আপনাকে একটু ফ্রি করতে চাইছিলাম ঐ আর কি। আচ্ছা আপনাকে তো আজ নিয়ে যাচ্ছি না।তাহলে কান্না করে চোখ-মুখ এমন ফুলিয়েছেন কেন?আপনি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না?আপনার কি কোন পছন্দ আছে?
রিমনের কথা শুনে ইশফা তাসিল্য হেসে বলল ……
—কথাটা অনেক দ্রুত জিগ্যেস করে ফেললে না?কয়েক বছর ঘড়-সংসার করার পরে করলেও হতো।
—আপনি কি রেগে আছেন আমার উপর?
—রাগ করার কি কিছু করেছেন?
—রাগের কারনটা কি জানতে পারি?
ইশফা গম্ভীর গলায় বলল…..
— আমার সম্পর্কে কিছু না জেনে হুট করে এভাবে বিয়ে করার কারনটা কি জানতে পারি?
রিমন লাজুক হেসে বলল…..
—আপনাকে আমাদের সবার খুব পছন্দ হয়েছে তাই হুট করে এভাবে….।যাই হোক আপনার কি পছন্দের কেউ আছে?
ইশফা ত্যাড়া ভাবেই বলল…..
—থাকলে কি তার কাছে ফিরিয়ে দিবেন?
রিমন ইশফার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল…..
—যদি পাগলাটে কোন আশিক থাকে তাহলে ভেবে দেখবো?ছেচড়া আশিক হলে কিন্তু দিব না।
ইশফা তাসিল্য হেসে বলল……
—আমার মত গুন্ডি মেয়ের আবার আশিক।সবারই জানের মায়া আছে।আমার তেমন কেউ নেই।
রিমন সন্দেহর গলায় বলল…..
—সত্যি কেউ নেই?কেউ আপনার জন্য পাগলামো করে নি?
ইশফা মনে মনে ভাবলো,পরে না জানিয়ে আগে জানিয়ে দেয়াই ভালো।তাই সে একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—মিথ্যে বলে কি লাভ।একজন কিছুদিন পাগলামো করেছে।তারপর নিজেই পিছু ছেড়ে দিয়েছে।
ইশফার কথা শেষ হতে না হতেই পিছন থেকে ভেসে এল……
—তুমি ভাবলে কি করে এতো সহজে আমি তোমার পিছু ছেড়ে দিব?আমি অমন আশিক নই যে দুদিন ঘুরেই পাগলামো শেষ।সান-ইশফার জন্য তার পাগলামো ছাড়তে পারে কিন্তু আমি আমার বাঘিনীর জন্য কখনো পাগলামো ছাড়ি নি আর না ছাড়বো।আমার বাঘিনী আমার ছিল, আছে এবং থাকবে।
ইশফার কানে আমার বাঘিনী কথাটা বার বার বাজছে।ইশাফাকে বাঘিনী বলে একজনই ডাকে।ইশফা লোকটাকে দেখার জন্য পিছনের দিকে ঘুরে লোকটাকে দেখে কি রিয়েক্ট করবে সেটাই সে ভুলে গেলো।কেননা লোকটা আর কেউ নয় সান।ইশফা,সানকে এখানে দেখে অবাক হবে নাকি এটা বুঝতে পেরে রাগ করবে যে,সানই সে লোক যে ইশফাকে প্রতিদিন একবার না একবার ফোন করে বিরক্ত করতো।ইশফা কিছুক্ষণ থ’ হয়ে দাড়িয়ে থেকে সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল……
—আপনি এখানে?
সান বুকে হাত চেপে ধরে সুর টেনে বলল……
—ওহ্ মেরি বাঘিনী এভাবে তাকিয় না।তোমার এই তাকানো দেখলে আমি ঘায়েল হয়ে যাই।
ইশফা রাগি গলায় বলল…..
—তাহলে আপনিই সে যে আমা…..
ইশফা কথাটা শেষ না করে রিমনের দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপ করে রইল।এক হাতের নখ আরেক হাতে চেপে ধরে নিজের রাগ দমাতে লাগলো।ইশফা,রিমনের জন্য পারছেনা সান এর তেরোটা বাজাতে।
সান, ইশফার সামনে এসে মুচকি হেসে বলল…..
— “আমার বাঘিনীর নজর”
” একেবারে শকুনের মত।”
“বুদ্ধির তো কোন জবাব নেই”
“পুরোই সিম্পাঞ্জির মত।”
সান এর কথা শুনে ইশফা ভিতরে,ভিতরে রেগে বোম হতে লাগলো।রিমন সান কে বাহবাহ দিয়ে বলল….
— আহা আমার ভাই তো দেখছি পুরো কবি হয়ে গেছে।কবি, কবি ভাব ভাবির অভাব।সরি ভাবিও তো মিলে গেছে।ভাবি যাই বলুন না কেন?আপনি কিন্তু আমার ভাইকে পুরোই চেঞ্জ করে দিয়েছেন।(রিমন শেষের কথাটা ইশফার দিকে তাকিয়ে বলল)
ইশফা অবাক হয়ে বলল….
—মানে!কে আপনার ভাবি?
রিমন মুচকি হেসে বলল…..
—কেন আপনি।
ইশফা সন্দেহর চোখে রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল…..
—আপনি কে বলুন তো?
রিমন মুচকি হেসে বলল…..
—আপনার অনলি এন্ড ওয়ান পিস দেবর।
ইশফা,রিমনের কথা শুনে অবাক হয়ে বলল…..
—তাহলে বিয়েটা কার সাথে হয়েছে?
সানঃতুমি ভাবলে কি করে আমি থাকতে অন্য কারো সাথে তোমার বিয়ে হতে দিব মাই ডিয়ার বাঘিনী বউ।
“মন পিঞ্জরে আটকিয়েছি তোরে”
“ঊড়ে যেতে চাইলেই কি পারবি যেতে ”
“এই মনের পিঞ্জর ভেঙে?”
ইশফা,রিমনকে উদ্দেশ্য করে বলল…..
—বিয়েটা কি আপনার সাথে হয়নি?
রিমনঃতওবা,তওবা আমার কাছে আমার বড় ভাবি মায়ের মত।তাকে বিয়ের কথা মুখে আনাও পাপ।
ইশফা, রিমন এর দিকে ছোট,ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……
—আপনার বড় ভাই কে?
সান, ইশফার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল……
—বউ আমাকে কি চোখে পরছে না?আমার জন্য কান্না করে কি চোখে ছানি পরিয়ে ফেলেছো?
সান এর কথা শুনে রিমন মিটমিট করে হাসতে লাগল।
ইশফা বুঝতে আর বাকি রইল না বিয়েটা কার সাথে হয়েছে।ইশফার মাথায় মধ্যে নানান প্রশ্ন জট বেধে চরকির মত ঘুরপাক করার কারনে মাথা ভনভন করে ঘুড়তে লাগল।ইশফা সান এর দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলল……
—তার মানে বিয়েটা আপনার সাথে হয়ে….
পুরো কথা শেষ করার আগেই ইশফা ঠলে পরে যেতে নিলেই সান ইশফাকে ধরে ফেলল।
সান, ইশফার গালে হালকা চাপড় মেরে কয়েকবার ডাক দিল।
রিমন ব্যাস্ত গলায় বলল…..
—ভাইয়া ভাবি তো সেন্সলেস হয়ে গেছে।
সান,রিমনের কথায় উওর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল…..
—রিমন বলতো আমারে কেমন দেখা যাচ্ছে?ভালো মত তাকিয়ে দেখে তারপর বলবি।আর সত্যি কথা বললি।
রিমন বিরক্ত হয়ে বলল….
—ভাইয়া এখন এসব কথা বলার সময়।ভাবিকে নিয়ে আগে নিচে চল।
সান চোখ রাঙিয়ে বলল…….
—যা জিগ্যেস করছি তা আগে বল।
রিমন অর্ধয্য গলায় বলল…..
—কেমন আবার লাগবে সব সময় যেমন হ্যান্ডস্যাম লাগে এখনো তেমনি লাগছে।
সান হতাশ হয়ে বলল…..
—তাহলে তোর ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে সেন্সলেস হলো কেন?কি বিয়ে করলাম রে ভাই বউ আমার চেহারা দেখেই বেহুস।
#চলবে,
(
(