মনের_পিঞ্জরে পর্ব ৪১+৪২+৪৩+৪৪+৪৫

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_41

কেউ হাসে কেউ কাদে এই দুনিয়ার নিয়ম। সুখের সময় আসতেও যেমন সময় লাগে না।তেমনি সেটা দুঃখে পরিনত হতেও সময় লাগে না।এক দমকা হওয়া এসেই সুখের মুহূর্তকে তছনছ করে দিয়ে যেতে পারে।দুঃখে,কষ্টে থেকেও কিছু মানুষ চাতক পাখির মত একটু সুখের ঝিলিক দেখার জন‍্য আশায় বাসা বাধে।

সকাল বেলা জিদান ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হয়ে যাওয়ায় কারনে জিদান তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে।জিদান রেডি হতে গিয়ে পুরো হুলস্থুল বাধিয়ে দিয়েছে।জিদান রেডি হচ্ছে আর বলছে……

—সব দোষ তোর ইশু।সব তোর দোষ।একে তো তোর বায়না রাখতে আমাকে দিয়ে গল্প করিয়েছিস তার উপরে সকালে ডেকে দিস নি।একটু ডাক দিয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত তোর?দেখ এখন দেড়ি করে ঘুম থেকে উঠে এখন আমার কি হুলস্থুলই না করতে হচ্ছে।জানিস তোর জন‍্য প্রতিদিন আমার ছোট মায়ের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হয়।চাচ্চু তো সরাসরিই বলে আমি বউ পাগল হয়ে গেছি।

জিদান বেডে শুয়ে থাকা ইশরার দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল…….

—একদম আমাকে দেখে হাসবিনা ইশু।হাসলে একেবারে দাত ভেঙে দিব।একে তো তোর জন‍্য লোকের কাছে লজ্জায় পরতে হচ্ছে তার উপরে আবার আমার উপরে হাসা হচ্ছে না।

জিদান রেডি হচ্ছে আর একা একা এটা সেটা বলেই চলেছে।কেননা তার কথার প্রতি উওরে কথা বলার মানুষটা তো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এই ঘুম থেকে আদো উঠবে কিনা কারো জানা নেই।

ইশফা অনেকক্ষন ধরে খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে দরজায় আড়ালে দাড়িয়ে জিদানের কান্ড দেখছে।জিদান কি সুন্দর বুকে পাথর বেধে মুখের মাঝে মিথ‍্যে রাগি ভাব নিয়ে ইশরার সাথে রাগ করে যাচ্ছে।কথা বলে যাচ্ছে। ইশরা যে জিদানের কোন কথা শুনতে পারছে না বা বুঝতে পারছে তা জিদান ভালো করেই জানে।তারপরেও কত সুন্দর সুখি দম্পতির মত মিথ‍্যে রাগের মাঝেও ভালোবাসার বহ্নিপ্রকাশ করে যাচ্ছে।

ইশরার এক্সিডেন্টের তিন মাসের উপরে হয়ে গেছে।এক্সিডেন্টের পর থেকে ইশরা এখন পযর্ন্ত একবারের জন‍্য চোখ খুলে তাকায়নি।তাকাবে কি করে?সে তো কোমায় চলে গিয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।ইশরাকে হাসপাতালে ২মাসের মত রেখে জিদান সকল ব‍্যবস্থা করে ইশরাকে বাসায় নিয়ে এসেছে।ইশরা যতদিন হাসপাতালে ছিলো ততদিন জিদান ইশরাকে ছেড়ে কোথাও নড়েনি।সব সময়ই হাসপাতালে পরে রয়েছে।ইশরাকে বাসার নিয়ে আসার কিছুদিন পর থেকে জিদান নিজ ইচ্ছাই কলেজে জয়েন করে।জিদানের সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা,নরমাল ব‍্যবহার করা,ইশরার সাথে মিছে মিছে রাগ করা।জিদানের এই সব ব‍্যবহার দেখে ইশফার চোখে না চাইতেও পানি চলে আসে।

ইশফা হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে দরজায় নক করে বলল…..

—ভাইয়া আসবো?

জিদান দরজার দিকে তাকিয়ে ইশফাকে একপলক দেখে নিজের হাতের কাজ করতে করতে বলল……..

—বুচি দাড়িয়ে কেন ভিতরে আয়।

ইশফা রুমের ভিতরে ঢুকে ট্রেটা বেডের এক পাশে রেখে হাসি মুখে বলল…….

— হুলস্থুল করো না তাহলে আরো বেশি দেড়ি হয়ে যাবে।

জিদান হাত ঘড়ি পরতে পরতে বলল……

—দেড়ি তো হয়েই গেছে আর কি দেড়ি হবে। তুই নাস্তা নিয়ে যা বুচি খাওয়ার সময় নেই।আমি কলেজে গিয়ে খেয়ে নিব।

ইশফাঃমোটেও না তুমি নাস্তা না করে এখান থেকে এক পাও বের হতে পারবে না।

জিদানঃসত‍্যি বলছি বোন খেয়ে নিব কেন্টিন থেকে।

ইশফা, ইশরার দিকে তাকিয়ে নালিশের সুরে বলল…..

—দেখ ইরু ভাইয়া আমার কথা একটুও শুনছে না।তুই একটু বকে দে তো।আর বলে দে,না খেয়ে যেন কলেজে না যায়।

জিদান হাতের কাজ সেরে মুচকি হেসে খাবারের ট্রেটার সামনে বসে একটু খাবার খেয়ে উঠে যেতে নিলেই ইশফা ট্রে থেকে জুস এর গ্লাস হাতে নিয়ে জিদানের দিকে বাড়িয়ে দিল।জিদান করুন চোখে ইশফার দিকে তাকাল। ইশফা চোখ রাঙিয়ে জিদানের দিকে তাকাতেই জিদান ভীত ফেস করে ইশফার থেকে জুসের গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে সবটা শেষ করে গ্লাসটা ইশফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল……

—হয়েছে এবার?

ইশফা মুচকি হেসে বলল…..

—আবার জিগায়।

জিদান মুচকি হেসে ইশরার সামনে গিয়ে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলল……

—আসছি।বকার জন‍্য সরি।সাথে সাস্তি সরূপ আজ রাতেও অনেক গল্প করবো।

কথাটা বলে জিদান, ইশরার মাথায় আদর দিয়ে পাশ থেকে ব‍্যাগ হাতে নিয়ে ইশফাকে উদ্দেশ্য করে বলল……

—আসছি।ইশুর খেয়াল রাখিস।কোন দরকার হলে সাথে সাথে আমাকে জানাবি।

ইশফা মাথা নাড়িয়ে হ‍্যা বলতেই জিদান ইশরার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে গেলো।

ইশফা,জিদানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চাপা এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ইশরার মাথার সামনে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল…….

—দেখ ইরু।কি অবস্থা করেছিস তুই আমার ভোলাভালা ভাইটার?ভাই আমার তোর দিওয়ানা হয়ে গেছে।মিস করে যাচ্ছিস রে ভাইয়ার এই পাগলামো গুলো মিস করে যাচ্ছিস।আর কত ঘুমিয়ে থাকবি এবার তো চোখ খুলে তাকানারে বোইন।একবার তাকিয়ে দেখ, তুই যার জন‍্য পাগল। তোর সেই জিদ ভাইয়াও তোকে পাগলের মত ভালোবাসে।চোখ খুলে তাকা না বোইন প্লিজ চোখ খুলে তাকা।তোকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখতে যে বড্ড কষ্ট হয়রে বড্ড কষ্ট হয়।

কথাগুলো বলতে বলতে ইশফা চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।

💦💦💦💦💦💦

ছাদের এক কোনে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে ইশফা।ইশফার নিজেকে নিজের কাছে এখন রোবট রোবট মনে হয়।কেননা কষ্ট পেলেও সে কারো সামনে কান্না করতে পারে না।বাবা,মায়ের সামনে কান্না করলে, মন খারাপ করে থাকলে তারা কষ্ট পারে, আরো বেশি ভেঙে পরবে। তাই সব সময়ই তাদের সামনে নরমাল থাকার চেষ্টা করে।সারাদিন সব মুখ বুজে সহ‍্য করলেও দিন শেষে রাতের আধারে এখানে এসে কান্না করে মনটাকে কিছুটা হালকা করে নেয় ইশফা।

হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্স পেতেই ইশফা তড়িঘড়ি চোখ মুছে পিছন দিকে তাকাতেই সান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইশফা হকচকিয়ে বলল…….

—আপনি?

সান ইশফার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল……

—কান্না করছিলে?

ইশফা সান এর কথার উওর না দিয়ে বলল…….

—কখন এসেছেন?আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে?

সান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…….

—আমার কাছে কোন কিছু লুকিও না বাঘিনী।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।আমি তোমার শুধু সুখের না দুঃখের সাথীও হতে চাই।তোমার খুশিতে যেমন খুশি হতে চাই।তেমনি তোমার দুঃখ ভাগ করে নিতে চাই।দুঃখের ভাগ যদি নিতে না পারি তাহলে নিজের বুক পেতে দিতে চাই। যাতে মাথা রেখে কান্না করে তুমি তোমার অবুঝ মনটাকে কিছুটা হলেও হালকা করতে পারো।একটা কথা মনে রাখবে গোটা মানুষটাই আমি তোমার।তাই নিজের থেকে কখনো কোন কিছু লুকাবে না।

ইশফা কিছু না বলে আস্তে আস্তে সান এর সামনে গিয়ে সান এর বুকে নিজের মাথাটা রেখে ডুকরে কেদে উঠল।সান এক হাতে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে অপর হাতে ইশফার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।

ইশফা কিছুক্ষন কান্না করার পর কিছুটা শান্ত হলে সান নরম গলায় বলল……..

—নিজেকে শক্ত কর।তুমি ভেঙে গেলে বাবা,মাকে কে সামলাবে বল?এখন তুমিই তো তাদের সব।তাদের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।দেখবে আল্লাহ্ অতি তাড়াতাড়ি সব ঠিক করে দিবে।ইরু আবার আগের মত হয়ে যাবে।

ইশফা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল……

—পারছিনা আমি নিজেকে শক্ত রাখতে।ইরুর ঐ মলিন মুখটার দিকে তাকালে দম বন্ধ হয়ে যায়।তখন মনে হয় আল্লাহ্ ওকে কষ্ট না দিয়ে ওর জায়গায় আমাকে কেন দিলো না।ওকে ভালো রেখে আল্লাহ্ কেন আমাকে নিয়ে গেলো না।আমি পারছিনা নিজেকে শক্ত রাখতে আর একটুও পারছি না।অসহায় লাগে নিজেকে খুব অসহায়।

সান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল……

—আমি যেই বাঘিনীকে চিনি সে তো এমন ভিতু নয়?সে তো সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে।তাহলে আজ কেন সে ভেঙে পরছে?জানো তো আল্লাহ্ সব সময় তার বান্দাদের বিপদ দিয়ে পরিক্ষা করেন।আল্লাহ্ দেখেন তার বান্দারা কতটুকু ধর্য‍্য ধরতে পারেন।বিপদ দেখে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কিনা।ধর্য‍্য ধর বাঘিনী ধর্য‍্য ধর।দেখবে একদিন আল্লাহ্ সব ঠিক করে দিবেন।জানোই তো ধর্য‍্যের ফল মিঠা হয়।

ইশফা কিছু না বলে নিরবে কান্না করতে লাগল।

সান একটু চুপ করে থেকে করুন কন্ঠে বলল……

—প্লিজ বাঘিনী মরার কথা আর কখনো বলো না।তোমার মুখে মরার কথা শুনলে কলিজা কেপে উঠে।জিদান ভাইয়া মত অত শক্ত আমি নই।জিদান ভাইয়া তো নিজেকে ভালোবাসার মানুষটাকে ঐ অবস্থায় দেখেও নিজেকে শক্ত রাখছে।তোমার কিছু হলে আমি পাগল হয়ে যাব।পারবো না নিজেকে শক্ত রাখতে।

ইশফা মাথা তুলে সান এর মুখের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল…….

—এতোক্ষন আমাকে জ্ঞানী লোকদের মত সান্তনা দিয়ে নিজে এখন ভীতুদের মত কথা বলছেন কেন?
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_42

—এতোক্ষন আমাকে জ্ঞানী লোকদের মত সান্ত্বনা দিয়ে নিজে এখন ভীতুদের মত কথা বলছেন কেন?সাহসী লোকদের মুখে কিন্তু ভীতুদের মত কথা মানায় না মিঃ।

ইশফার কথা সুনে সান, ইশফার মুখের দিকে পলকহীন তাকিয় মোলায়েম কন্ঠে বলল…….

—কারন এই রাগি,সাহসী, বুঝবান ছেলেটা তার বাঘিনীর ব‍্যপারে পুরোই ভীতু হয়ে যায়।সব সময় তাকে হাড়ানো ভয় তার মনে ঝেকে বেধে থাকে।অন‍্যকে জ্ঞান দেওয়া, সান্ত্বনা দেওয়া সহজ।কিন্তু নিজে তা পালন করা খুব কঠিন।(চাপা নিশ্বাস ফেলে)জানো যেদিন থেকে এই সাহসী ছেলেটা তার বাঘিনীকে দেখেছে সেদিন থেকেই তার সর্বনাশ শুরু।

ইশফা চোখ রাঙিয়ে সান এর দিকে তাকাতেই সান মুচকি হেসে ইশফার নাক টেনে দিয়ে বলল……

—রাগ করার কিছু নেই। এই সর্বনাশ সেই সর্বনাশ না। যেটা তুমি মনে করছো।যেদিন এই সর্বনাশের খাতায় তুমিও নাম লিখাবে সেদিন বুঝতে পারবে আমি কোন সর্বনাশের কথা বলেছি।

সান এর কথা শুনে ইশফা মাথা নিচু করে ফেলল।মুহূর্তেই ঠোটের কোনে চলে এল এক চিলতে হাসি। সাথে সাথেই ইশফা হাসিটাকে ধামাচাপা দিয়ে মনে মনে বলল……

—নতুন করে সর্বনাশের খাতায় কি আর নাম লিখাবো?আপনি কি জানেন?অনেক আগেই যে আমি সেই খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি।

💦💦💦💦💦💦

জিদান ইশরার মাথার সামনে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর সারাদিন কি করেছে না করেছে সব ইশরাকে বলছে।জিদানের কথার মাঝে দরজায় নক পরতেই জিদান দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো ইশফা, সান দরজায় দাড়িয়ে আছে।জিদান তাদের দেখে হাসি মুখে বলল…..

—আরে দরজায় দাড়িয়ে রয়েছো কেন? ভিতরে আসো।

ইশফা,সান ভিতরে ঢুকতেই জিদান বলল……

—ধন‍্যবাদ ভাই।সারাদিন খাটাখাটনি করেও কষ্ট করে এতো রাতে এখানে মেডিসিন নিয়ে আসার জন‍্য।

সানঃএটা কিন্তু ঠিক না ভাইয়া।ভাই ও বলছেন আবার ধন‍্যবাদও দিচ্ছেন।ইরু তো আমারও ছোট বোন তাই না।মেডিসিন নিয়ে আমি আগেই চলে আসতাম।আসলে অফিসের কাজের চাপে মেডিসিনের কথা মাথাই ছিলো না।পরে মনে হতেই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে নিয়ে এসেছি।তাই একটু দেড়ি হয়ে গেছে।

জিদানঃআরে সমস‍্যা নেই। এনেছো তাতেই অনেক।তাছাড়া এটা আজকে লাগবে না কাল সকালে লাগবে।মেডিসিনটা এদিকের পাওয়া যায় না।আমার ও বাসায় আসার পর মনে হয়েছে।তাই তোমাকে ফোন করে……।

সানঃআপনি আমাকে ফোন করে মেডিসিন এর কথা জানিয়েছেন তাতে আমি অনেক খুশি হয়েছি ভাইয়া।কোন সমস‍্যা হলে কিছু লাগলে বিনা সংকোচে জানাবেন আমায়।আমি আমার সাধ‍্য মত করার চেষ্টা করবো।

জিদানঃসাধ‍্যর থেকেও অনেক বেশি করছো তুমি।এভাবে বলে আর লজ্জা দিও না আমায়।

ইশফা জিদান আর সান এর কথা শুনে সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল……

— তোমারে দেখতে মন চাইছে তাই এই রাত বিরাতে ছুইটা তোমার কাছে আইসা পরছি।দেখো না তোমার ঘ্রাণে ঘ্রাণে ছাদেও চলে আসছি।চাপাবাজ।আগেই বুঝতে পারছি কাহিনীতে ভেজাল আছে।

সান ইনোসেন্ট ফেস করে জিদানের দিকে তাকিয়ে বলল……..

—ভাইয়া মেডিসিনটা তো দিয়েই দিয়েছিলাম। এখন আবার মেডিসিনের কথাটা বলার কি দরকার ছিলো?

ইশফা ভেঙচি কেটে বলল……

—ভাইয়া বলছে বেস করছে।ভাইয়া মেডিসিনের কথা না উঠাইলে তো আপনার চাপাবাজিতে ধামাচাপা পইরা যাইতো।আমি যে ছাদে ছিলাম সেটাও যে আপনারে ভাইয়া বলছে তা আমার জানা হয়ে গেছে।

সান কিছু না বলে ইনোসেন্ট ফেস করে জিদানের দিকে তাকিয়ে রইল।

জিদান মুচকি হেসে বলল…….

—বুচি তুই যে এতো সুন্দর ঝগড়া করতে পারিস তা তো আগে জানতাম না।যখনই দেখি সান এর সাথে শুধু ঝগড়া করিস।

সানঃভাইয়া শুধু ঝগড়া না ঝগড়ার সাথে হাতও বেশ চালাতে পারে।

ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয় তাকাতেই সান শুকনো ঢোক গিলে বলল…..

—ভাইয়া আজ তাহলে আসি।এখান কার আবহাওয়া বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে না।কখন ঘূর্ণিঝড় শুরু হয় ঠিক নেই। ঘূর্ণিঝড় এর পূর্বে কেটে পরা ভালো।

জিদান সান এর কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।শত কষ্টের মাঝেও ইশফা আর সান এর এই মিষ্টি ঝগড়া দেখলে জিদান এর মুখে হাসি ফোটে উঠে।তার বোনটা যে সানকে পেয়ে খুশি আছে তা ইশফা মুখে না বললেও জিদান ঠিকই বুঝতে পারে।

💦💦💦💦💦💦

সান কিচেনের দরজার সামনে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। ইশফা খাবার গরম করতে করতে দরজার দিকে তাকাতেই সান কে মুখ লটকিয়ে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ইশফা বলল…….

—আপনি গিয়ে বসুন না আমার হয়ে গেছে।

সান বিরক্ত হয়ে বলল…….

—কি দরকার ছিলো এসব করার।সারাদিন এমনিতেই কত খাটাখাটি করো।আমি চলে যেতেই এখন তুমি একটা ঘুম দিতে পারতে।শুধু শুধু আমাকে আটকে রেখে এখন কষ্ট করছো।

—মুখটা একটু বন্ধ করে গিয়ে চেয়ারে বসুন না ভাই।আমার হয়ে গেছে।

সান কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ চেয়ারে গিয়ে বসল।একটু পর ইশফা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসে খাবারের ট্রে টেবিলের উপর রেখে নিজে এক চেয়ার টেনে সান এর পাশে বসল।

সান খাবার এর দিকে তাকিয়ে চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…….

—এসব না করলে হতো না।শুধু শুধু কষ্ট করলে।

—কোন কষ্টই হয়নি।এখন কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নিন তো।যত দেড়ি করবেন তত আপনার যেতে লেট হবে।

—আমি বাড়িতে গিয়েও খেয়ে নিতে পারতাম।

ইশফা একটা প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলল……

—আপনি যে কত খাবেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে।ভার্সিটি,অফিস দুটো একসাথে চালাতে গিয়ে আপনার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছেন?নিজেই যদি ঠিক না থাকেন তাহলে এত কাজ করে কি লাভ।

(অফিসে কিছু সমস‍্যার কারনে সান এখন বেশির ভাগ সময়ই অফিসের কাজে ডুবে থাকে।)

সান চেয়ারে হেলান দিয়ে ইশফার দিকে পলকহীন তাকিয়ে রয়েছে।ইদানিং ইশফার ছোট ছোট কেয়ার গুলো সান এর বড্ড ভালো রাগে।

💦💦💦💦💦💦

সময় ও স্রোত যেমন কারো জন‍্য থেমে থাকে না তেমনি কারো জীবনও কারো জন‍্য থেমে থাকে না।

দেখতে দেখতে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।সবারই জীবন টেনেটুনে চলে যাচ্ছে না চলার মত।সবাই এই টানা পোড়ার জীবনে আল্লাহ্ কাছে এখন শুধু একটাই ফরিয়াদ,ইশরাকে যেন আল্লাহ্ সুস্থ করে দেয়।ইশরার অবস্থা এখনো সেই আগের মতই আছে।ইশরা এখনো তার মন মত শান্তিতে ঘুম দিচ্ছে।

জিদান বুকে পাথর বেধে হাসিমুখে সব করছে।কলেজের সময়টুকুই জিদান ইশরার থেকে দূরে থাকলেও বাকি সময় সে ইশরার সাথেই কাটায়।সারাদিন কি করেছে না করেছে একা একাই ইশরার সাথে বসে তা বলতে থাকে।মাঝে মাঝে একা একাই ইশরার সাথে মিছে মিছে ঝগড়া করে।জিদান ইশরার সামনে থাকলে শত কষ্ট হলেও কান্না করে না।জিদান ভাবে ইশরার সামনে কান্না করলে যদি ইশরা কোন ভাবে তা বুঝতে পেরে কষ্ট পায়?জিদান চায় না তার পাগলীটাকে আর কোন কষ্ট দিতে।এখন জিদানের সব কান্না সব অভিযোগ একমাত্র আল্লাহ্ কাছে।তাই তো সে রাতের আধারে জায়নামাজে বসে নিজের পাগলীটাকে ফিরে পাওয়ার জন‍্য, তাকে সুস্থ করে দেওয়ার জন‍্য আল্লাহ্ এর দরবারে বুক ভাসিয়ে কান্না করে।

সান সকল ব‍্যস্ততার মাঝেও ইশফা,ইশরার খবর নিতে ভুলে না।যেভাবেই হোক শত কাজের মাঝেও সময় বের করে প্রতিদিন তাদের বাসায় গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে আসে।দিন শেষে সবাই অপেক্ষায় থাকে আগামীকাল নতুন সূর্য উদয়ের সাথে সাথে যেন তাদের জীবনেও এক চিলতে সুখ ফিরে আসে।সবার ঠোটের হাসির কারন যেন তাদের মাঝে পুনরায় ফিরে আসে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_43

—ইশু…..ইশু……
ফাজিল মেয়ে কোথায় পালিয়েছিস তুই?সামনে আয় একবার।থাপ্পড় মেরে তোর কাধের সব ভূত তাড়াবো আমি।

জিদানের চেচামেচি সুনে ইশরা দরজার বাহির থেকে হালকা একটু পর্দা সরিয়ে মাথাটা একটু বের করে উকি দিয়ে বলল…….

—এই যে মিষ্টার খান।এটা ভদ্র লোকের বাড়ি।তাই ইশু ইশু করে ষাড় এর মত চেচানো বন্ধ করুন।হুহ…..

জিদান দরজার দিকে তেড়ে যেতে নিয়েও থেমে গিয়ে রাগি গলায় বলল…….

—দরজার বাহিরে না দাড়িয়ে থেকে ভিতরে আয়।কানের নিচে দুটো দিয়ে তোকে ভদ্রতা দেখাচ্ছি।বেয়াদব মেয়ে আমাকে ভদ্রতা শিখাতে আসছে।এতোই যখন ভদ্রতা জানিস তাহলে আমার কাবাডের সকল জামা-কাপড় এলোমেলো করেছিস কেন?আমার রুম এমন গরুঘর বানিয়েছিস কেন?

ইশরা অরেকটু মাথা বের করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলল……

—হায় আল্লাহ্…..এটা মানুষের রুম না ডাস্টবিন।ভাইয়া তুমি বাচ্চাদের মত রুমের এমন তেরোটা বাজিয়ে রেখেছো কেন?

জিদান ইশরার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল……

—নাটক করিস আমার সাথে?দু’চারটা থাপ্পড় গালে পরলেই তোর সকল নাটক ছুটে যাবে।

—আমি কি করলাম😱

—বেয়াদব মেয়ে এসব যে তুই করেছিস তা আমার ভালো করেই জানা আছে।

ইশরা ভেঙচি কেটে বলল…..

—যা করেছি বেশ করেছি।তুই আমাকে চকলেট কিনে দিবি বলে চকলেট কিনে দিসনি কেন?কবের থেকে বলছি আমাকে একটা গুলুমুলু টেডি কিনে দিতে তাও দিস নি।ফকিরা সবার জন‍্য সবটা কেনার সময় তোর কাছে টাকা হয় আমার জন‍্য কিছু কিনতে গেলেই ওর টাকা নাই হয়ে যায়।তাই আমি নিজের টাকা দিয়েই চকলেট, চিপস কিনে খেয়ে সেগুলোর পেকেট এই রুমে সুন্দর করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখেছি তোকে দেখানোর জন‍্য।

—ভালোয় ভালোয় পুরো রুম তাড়াতাড়ি পরিষ্কার কর ইশু।তা না হলে হাত আর দাত কোনটাই তোর আস্ত থাকবে না।

—আমার অতো ঠেকা পরেনি।হুহ…..

জিদান ইশরার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই ইশরা ভৌ দৌড়।

জিদান ইশরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে গজ গজ করে ইশরাকে বকতে লাগল।

পুরন কথা মনে পরতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠল জিদানের।ইশরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে বিরবির করে বলল……

—পাগলী একটা।ছোট থেকে তো কম জ্বালাসনি।নতুন করে নতুন ভাবে এখন আবার জ্বালানো শুরু করেছিস।ব‍্যপার না তোর সব জ্বালাতন সহ‍্য করার ধয‍্য আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছে।আল্লাহ্ এর দরবারে লক্ষ কুটি শুকরিয়া।যেভাবেই হোক আল্লাহ্ যে তোকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এটাই অনেক।

ওহ্ আপনাদের তো বলাই হয়নি আল্লাহর মেহবানীতে সকলের দোয়ায় ইশরার আজ ১৮ দিন ধরে জ্ঞান ফিরেছে।ইশরার কিছুটা রেসপন্স করার কারনে ডাঃ এর কথা মত ইশরাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে এডমিট করা হয়েছিলো।জ্ঞান ফেরার পর দুদিন পযর্ন্ত ইশরা কারো সাথেই কোন কথা বলেনি।তারপর থেকে শুরু হয় ইশরার পাগলামো।প্রথম প্রথম সবাইকে চিনতে না পারলেও আস্তে আস্তে সবাইকেই চিনতে পেরেছে।জ্ঞান ফেরার পর ইশরাকে সব ধরনের চেকাপ করার পর ডাঃ জানিয়েছে, ইশরা মেমরি লস না হলেও মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে মানসিক সমস‍্যা হয়ে গেছে।ট্রিটমেন্ট এর উপর থাকলে,মাথায় কোন চাপ না পরলে আস্তে আস্তে সেটাও সেরে যাবে।

💦💦💦💦💦💦

অফিসে কাজের চাপের কারনে সান এর বাসায় ফিরতে একটু বেশিই দেড়ি হয়ে গেছে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে লাইট অন করে ডানে বামে না তাকিয়ে কাবাড থেকে নিজের কাপড় নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলো।কিছুক্ষনের মধ‍্যে ফ্রেস হয়ে এসে বেডে বসতে না বসতেই সিনথিয়া খাবার নিয়ে হাজির হয়ে বলল…..

—খবরদার ভাইয়া না খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবি না।আমি খাবার নিয়ে এসেছি।

সান ঘাড় ঘুড়িয়ে সিনথিয়াকে দেখে কাপালে ভাজ ফেলে বলল……

—তুই!এতো রাতে খাবার নিয়ে এসেছিস? তাও আবার আমার রুমে?

—কোন সন্দেহ আছে?

—সন্দেহ মানে?ঘোর সন্দেহ আছে।যে মেয়ে ১০টা বাজতেই ঘুমের দেশে চলে যায় সে আজ দেড়টা বাজে আমার রুমে দাড়িয়ে আছে তা আবার খাবার নিয়ে।আমার তো মনে হচ্ছে তোর বেস ধরে কোন পেত্নী আমার রুমে এসেছে আমার ঘাড় মটকাটে।

সিনথিয়া খাবারের ট্রেটা বেডে রেখে হাই তুলতে তুলতে বলল…..

—ঘাড় মটকাতে চাইলেও পারবো না।কেননা তোর কিছু হলে আমার বেচারী ভাবি কষ্ট পাবে।

—কি বুঝাতে চাইছিস তুই? ভাবি কষ্ট পাবে দেখে তুই আমাকে ছেড়ে দিচ্ছিস?

—দেখ ভাইয়া শুধু শুধু ঝগড়া করার চেষ্টা করিস না।এখন বিন্দু পরিমান ও ঝগড়ার মুডে নেই।অনেক ঘুমে ধরেছে।

—ঘুমে ধরেছে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। না করেছে কে।আর যাওয়ার আগে এগুলো নিয়ে যা।

সিনথিয়া রাগি গলায় বলল…..

—নেওয়ার জন‍্যই কি সাধের ঘুম বাদ দিয়ে কষ্ট করে এগুলো এখানে নিয়ে এসেছি।

—এনেছিস কেন আমি আনতে বলেছি?

—তুই বলিসনি কিন্তু ভাবি বলেছে।ভাবি তোর দায়িত্ব আমার উপর দিয়েছে।তাই তো এসব করছি।তা না হলে কে করতো এসব।হুহ….

সান একটা কুশন নিয়ে আরাম করে বসে বলল……

—তা কি দায়িত্ব দিয়েছি শুনি।

সিনথিয়া বিরক্ত হয়ে বলল…..

—তোর মাথা।এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে আমায় উদ্ধার কর।আমি ঘুমাবো।

—তুই গিয়ে ঘুমিয়ে থাক আমি খেয়ে নিচ্ছি।

—জ্বি না তা হবে না।তুই তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর তোর খাওয়া হলেই আমি যাব।

সান আর কথা না বাড়িয়ে খাবারে হাত দিলো।নিজে খাওয়ার সাথে সাথে সিনথিয়ার মুখেও জোর করে কয়েক বার খাবার তুলে দিল।গপাগপ কোন মত খাওয়া শেষ করেই সান বিছানায় গা এলিয়ে দিল।শরীর ক্লান্ত থাকায় মুহূর্তের মধ‍্যে ঘুমের দেশে চলে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

বেডে সাথে হেলান দিয়ে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিদান ঘুমিয়ে পরেছিল।মুখের মধ‍্যে পানির ঝাপটা লাগায় জিদান ধরফর করে উঠে বসল।জিদান সামনে তাকাতেই দেখে ইশরা কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।জিদান ইশরার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল…….

—কি হয়েছে ইশু?এভাবে বসে রয়েছো কেন?

ইশরা গাল ফুলিয়ে বলল……

—সারাদিন কোথায় ছিলে তুমি?

—আমি তো কলেজে ছিলাম।ভুলে গেছো সকালে না আমি তোমাকে বলে গেলাম।

ইশরা মাথা চুলকিয়ে বলল……

—বলেছিলে হয়ত মনে নাই।

জিদান ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…..

—তুমি না ঘুমিয়ে ছিলে উঠলে কেন?

ইশরা কিছু না বলে ঠোট উল্টিয়ে বসে রইল।

ইশরাকে চুপ করে থাকতে দেখে জিদান পুনরায় বলল……

—এভাবেই বসে থাকবে?ঘুমাবে না?

ইশরা মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে না বলল।যার মানে সে ঘুমাবে না।জিদান কিছু না বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।কেননা একবার যখন ইশরা বলেছে সে ঘুমাবে না তাহলে আর কোনমতেই সে ঘুমাবে না।এখন তাকে দ্বিতীয় বার ঘুমানোর কথা বললেই তার পাগলামী শুরু করে দিবে।তাই জিদান কোন কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘুম বাদ দিয়ে ইশরার আবদার পূরন করার জন‍্য বসে রইল।

ইশরার সাথে ভালো ভাবে কথা বললে তার মন মত সব কাজ করলে ইশরা পুরো সাভাবিক আচারন করে।কিন্তু তার কথার একটু হেরফের হলেই তার পাগলামো শুরু হয়ে যায়।তখন ইশরা আর ইশরার মধ‍্যে থাকে না।কি থেকে কি করে ফেলে সে নিজেও জানে না।তাই বাড়ির সবাই ইশরার মন মত চলার চেষ্টা করে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_44(#স্পেশাল)

সান অফিসে নিজের কেবিনে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।সামনেই টেবিলে উপর কাজের কয়েকটি ফাইল পরে রয়েছে।কিন্তু সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।খেয়াল করেও কোন লাভ নেই কেননা কাজের দিকে সে কিছুতেই মন বসাতে পারছে না।কাজেই বা মন বসাবে কি করে?সে তো ভিতরে ভিতরে ইশফার উপর প্রচন্ড রেগে রয়েছে।তার রাগ করার কারন হল,আজ সান এর বার্থডে।কাল রাতে ইশফার সাথে কথা বলার সময় সান ভেবেছিলো ইশফা তাকে কল এ রেখেই সবার আগে উইস করবে।কিন্তু সান এর সেই আশায় পানি ঢেলে ইশফা ১২টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।সান পুনরায় কল ব‍্যাক না করে ইশফার ফোনের আশায় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পরে।সকালে ঘুম ভাঙতেই সান প্রথমে ফোন চেক করে দেখে নেয় ইশফা রাতে ফোন দিয়েছে কিনা।ফোন ধরতেই সান নিরাস হয়ে যায়। কেননা ইশফার নাম্বার থেকে না কোন কল আর নাই বা কোন মেসেজে এসেছে।সান রাগ করে ফোন বেডে ছুড়ে ফেলে ফ্রেস হতে চলে যায়।সারাদিনও রাগ করে সান আর ইশফাকে একবারের জন‍্যও কল করেনি আর না ইশফা সানকে কল করেছে।

দরজায় নক হতেই সান সোজা হয়ে বসে বলল……

—কামিং।

সাথে সাথে একজন পিয়ন ভিতরে ঢুকে ভনিতা ছাড়াই বলল…….

—বড় স‍্যার খরব পাঠিয়েছে ফাইলগুলো সব কমম্পিট হয়েছে কিনা।

সান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..

—তুমি যাও। আমি দেখে নিচ্ছি।

সান এর কথা শুনে পিয়ন আর কিছু না বলেই চলে গেলো।পিয়ন চলে যেতেই সান নিজের রাগটাকে দমানোর জন‍্য বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে সামনে থেকে একটা ফাইল তুলে খুলে নিল।অনেকক্ষন সামনে ফাইল খুলে বসে থাকার পরেও সান কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারলো না।তাতেই যেন তার নিভু নিভু করা রাগটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।সান নিজের রাগটাকে আর দমাতে না পেরে ইশফাকে কয়েকটা কড়া কথা শোনানোর জন‍্য পাশ থেকে ফোনটা হাতে তুলে নিল। ইশফার নাম্বারে কল করার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্কিনে “আন্টি আশ্রম” লেখাটি দেখে সান এর কপালে একটু ভাজ পরে গেলো।কেননা তিনি কখনো সানকে কল দেন না।সান ওই সব সময় তাকে ফোন করে খবরা খবর নিয়ে থাকে।সান ফোন রিসিভ করে সালাম দিতে না দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এল…..

—বাবা একটা সমস্যা হয়ে গেছে।

তার কথা শুনে সান উওেজিত হয়ে বলল…..

—কি হয়েছে আন্টি?আপনার কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?

—ফোনে কিছু বলতে পারবো না বাবা। প্লিজ তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো এখানে চলে আসো।প্লিজ বাবা মানা করো না।তাড়াতাড়ি চলে আসো।

সান কিছু বলার আগেই ফোনের লাইন কেটে গেলো।কল কেটে যেতেই সান কয়েক বার ঐ নাম্বারে ডায়াল করলো কিন্তু প্রতিবারই ভেসে এল “দুঃখিত কাঙ্খিত নাম্বারটিতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।” সান এর কাছে আশ্রমের অরেকটা নাম্বার ছিলো।সান দ্রুত ঐ নাম্বারে কল করল।কিন্তু সেই নাম্বারটিও বন্ধ।তাই সান দেড়ি না করে ড্রয়ার থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে তড়িঘড়ি কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।

💦💦💦💦💦💦

আধা ঘন্টার মধ‍্যেই সান “স্বপ্নের রাজপ্রাসাদে” পৌচ্ছে গেল।গেডের এর পাশে গাড়ি পার্ক করে দ্রুত গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।ভিতরে প্রবেশ করতেই সান পুরো থ’হয়ে গেলো কেননা ভিতরে খুব সুন্দর করে বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।সান কিছু বুঝার আগেই ১০/১২জন বাচ্চা হাতে লাল হার্ট সেপ বেলুন নিয়ে সান এর দিকে দৌড়ে আসলো।প্রতি বেলুনের মধ‍্যেই লিখা ছিলো “হ‍্যাপি বার্থডে”।বাচ্চারা এক এক করে সান এর হাতে বেলুন দিতে লাগল আর সানকে উইস করতে লাগল।

সান এখনো ঘোরের মধ‍্যে আছে। ঘোর কাটিয়ে সান বাচ্চাদের উদ্দেশ্য বলল……

—এসব কি হচ্ছে?আন্টি কোথায়?আন্টি ঠিক আছে তো?

বাচ্চাদের থেকে একজন বাচ্চা বলল…..

—সবাই ঠিক আছে ভাইয়া। এখন কথা না বলে আমাদের সাথে চল।

সান কিছু বুঝা বা বলার আগেই সান এর হাত ধরে টেনে তারা সানকে সামনে নিয়ে যেতে লাগল।সান বাচ্চাদের সাথে কিছুটা সামনে যেতেই দেখলো কিছু বাচ্চারা লাল হার্ট সেপ বেলুন হাতে দাড়িয়ে রয়েছে।তাদের হাতের বেলুনের মধ‍্যেই “এই লাভ ইউ” লিখা।তারা সবাই ও এক এক করে সান এর হাতে বেলুন ধরিয়ে দিয়ে সান কে উইস করতে লাগল।সবার বেলুন দেওয়া শেষ হতেই সবাই এক সাথে চেচিয়ে সানকে উইস করল।সান খুশি হয়ে বাচ্চাদের সামনে হাটু গেড়ে বসে বলল…….

—ধন‍্যবাদ,ধন‍্যবাদ।অনেক অনেক ধন‍্যবাদ।আই এম সো হ‍্যাপি।তোমরা কি করে জানলে আজ আমার বার্থডে?

বাচ্চারা কোন কথা না বলে একজন পিছন থেকে সান এর চোখ বেধে দিতে লাগলো।সান বাধা দিয়ে বলল……

—আরে আরে কি করছো?চোখ বাধছো কেন?

বাচ্চাটি বিরক্ত হয়ে বলল……

—ভাইয়া আমার কাজে ডিস্টাব করো না তো।আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
আমরা না বলার আগে চোখ খুলবে না বলে দিলাম।

সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।তারা সান এর হাত থেকে বেলুনগুলো নিয়ে নিল।সানকে দাড় করিয়ে দিয়ে তারা সরে গেল।

কিছুক্ষন পর বাচ্চাদের কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান বলল……

—বাচ্চারা কোথায় তোমরা?আর কতক্ষন এভাবে দাড়িয়ে থাকবো?চোখ কি খুলবো?

বাচ্চাদের থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে সান চোখ থেকে কাপড় সরিয়ে তাকাতেই হা হয়ে গেলো।কেননা সকল বাচ্চারা মিলে হার্ট সেপ আকার ধারন করে বেলুন হাতে নিয়ে সানকে ঘিরে দাড়িয়ে রয়েছে।আর সান এর সামনে একজন রমনী হাটু গেড়ে বসে আছে।তার দু ‘হাতে দুটো হার্ট সেপ বেলুন।একটার মধ‍্যে লিখা “হ‍্যাপি বার্থডে”। অপরটিতে লিখা “আই লাভ ইউ”।রমনীটি “আই লাভ ইউ” লিখা বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে “হ‍্যাপি বার্থডে” লিখা বেলুনটি নিজের মুখের সামনে ধরে রেখেছে।বেলুন দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলেও হাতের আংটি টি বলে দিচ্ছে মানুষটা কেন?সব দেখে সান যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছে।সান কি বলবে তার কি বলা উচিত সে কিছুই বুঝতে পারছে না।সান কি স্বপ্ন দেখছে নাকি যা হচ্ছে তা সব বাস্তব তাও সান এর জানা নেই। সানকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রমনীটি মুখ থেকে একটু বেলুনটা সরিয়ে মিনমিনে গলায় বলল…….

—কি হল কথা বলছেন না কেন?আপনি জানেন আমি মুখে কিছু বলতে পারি না।তাই যতটুকু বলেছি ততটুকেই বুঝে নিন।এর বেশি আমি বলতে পারবো না।যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন না। আমার পা ব‍্যাথা করছে তো।

সামনের রমনীটি আর কেউ না ইশফা।ইশফার কথা শুনে সান এর ঠোটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল।সান ইশফার হাত থেকে বেলুনটি নিতেই ইশফা অপর হাতের বেলুনটি সান এর দিকে বাড়িয়ে দিল।সান মুচকি হেসে সেটা হাতে নিয়ে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।ইশফা মুচকি হেসে সান এর হাত ধরে উঠে দাড়ালো।ইশফা দাড়াতেই সান অবাক চোখে ইশফার দিকে তাকিয়ে রইল।এতোক্ষন সান ইশফাকে খেয়াল না করলেও এখন সে খুটিয়ে খুটিয়ে ইশফাকে দেখতে লাগলো।কালো শাড়ি,দু’হাত ভর্তি কালো কাচের চুড়ি,মাথায় সুন্দর করে হিজাব বাধা।হালকা মেকআপে সান এর কাছে ইশফাকে পুরো অপ্সরী লাগছে।ইশফা কোন কথা না বলে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে সান এর কপালের বিন্দু বিন্দু জমে থাকা ঘাম মুছতে মুছতে বলল……

—ইস একেবারে ঘেমেনেয়ে ফেলেছে।এসি গাড়িতেই তো এসেছেন এতো ঘামলেন কিভাবে?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।আজ যেন সান নতুন এক ইশফাকে দেখছে।ইশফার এই নতুন রুপে সানকে পুরোই বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_45

–উহুম উহুম ভাই তোর ভাবিকে দেখা শেষ হলে আমাদের দিকেও একটু তাকা।আমরাও তোকে উইস করার জন‍্য দাড়িয়ে রয়েছি।

সিনথিয়ার কথা শুনে সান ইশফার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল সামনে সিনথিয়া,তুশি, রিধি, নিরব, ইশান,হেনা,শিপন দাড়িয়ে রয়েছে।সানকে তাদের দিকে তাকাতে দেখেই সবাই এক সাথে চেচিয়ে সানকে উইস করল।সান প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও মুহূর্তের মধ‍্যে তার চেহারার হাসির রেখা ফুটে উঠল।

একে একে সবাই সানকে উইস করলো। আশ্রমের মনি মা এসে সানের মাথায় হাত রেখে দোয়া করল।

সানঃভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আন্টি।প্রচুর ভয় পেয়েছিলাম।আমি যে কিভাবে ড্রাইভ করে এখানে পৌচ্ছেছি তা একমাত্র আমিই জানি।

মনি মাঃসরি বাবা।এই সব এদের বুদ্ধি।এদের কথা মতই আমি এসব করেছি।

সানঃইটস ওকে আন্টি।সরি বলার কিছু নেই।এটা যে এদের কাজ তা এখানে এসেই বুঝতে পেরেছি।

মনি মাঃতোমরা কথা বল।আমি ঐ দিকটা একটু দেখে আসি।

কথাটা বলেই মনি মা চলে গেলো।মনি মা চলে যেতেই সিনথিয়া সানকে খোচা মেরে বলল……

—ভাই তুই ভয় পেয়েছিস?তোর চেহারা দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না।তোর চেহারায় তো খুশির রেখা ঢেলে মেলে ফুটে উঠেছে।

রিধি সুর টেনে বলল…..

—সিনথু কি যে বলিস না তুই!খুশির রেখা ফুটবেনা তো দুঃখের রেখা ফুটবে নাকি?দেড়টা বছরের অপেক্ষার পর আজ সে……

রিধির কথার মাঝেই নিরব রিধির মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করে বলল……

—কবে বড় হবে তুমি?কোথায় কি বলতে হয় তা জানো না?আশেপাশে বাচ্চারা আছে।সাথে ইশফার বড় ভাই আছে।তার মধ‍্যে তুমি….?

রিধি নিজের মুখ থেকে নিরবের হাত সরিয়ে ভেঙচি কেটে বলল……

—তো কি হয়েছে?সবাই জানুক আমার ভাই তার বউ এর জন‍্য কতটা পাগল।কি কি করেছে?এদিকে তুমি কি করেছো আমার জন‍্য?কত করে বললাম আমার মিকিমাউস টিশার্টটা গায়ে ফিট হচ্ছে না। একটা নতুন সেম টু সেম টিশার্ট কিনে দিতে।সাথে মিকি মাউস এর দুটো রাউন্ড ব‍্যান্ড।দিয়েছো কিনে?

নিরবঃতোমাকে নিয়ে আর পারি না।নিজেই এখনো বাচ্চামো করো।দুদিন পর নিজের বাচ্চাকে কিভাবে সামলাবে তুমি?

হেনা ফোড়ন কেটে বলল…..

—তুই আছিস কি করতে?রিধি এই ভদ্র শয়তান বহুত জ্বালিয়েছে আমাকে।তুমি আর বেবি মিলে এটাকে ইচ্ছে মত জ্বালিয়ে তার সোধ নিবে।

নিরব হেনার মাথায় গাট্টা মেরে বলল…..

—চুপ কর ব্রিটিশ মহিলা।এমনেই আমার বউ নাচনী বুড়ি তার উপর তোকে আর ঢোলের বাড়ি দিতে হবে না।

রিধি কপালে ভাজ ফেলে দাতে দাত চেপে বলল……

—বাসায় চল আজ।নাচ কত প্রকার ও কি কি উদাহরন সহ বুঝিয়ে দিব।

রিধির কথা শুনে নিরব শুকনো ঢোক গিলে অসহায় ফেস করে রিধির দিকে তাকালো।নিরবের ফেস দেখে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।

রিধি নিরব কে ভেঙচি কেটে সান ইশফাকে উদ্দেশ্য করে বলল……

—ভাইয়া তুমি এখনো দাড়িয়ে রয়েছো?সারপ্রাইজ কিন্তু আরো বাকি আছে।আজ তোমার বাঘিনী তোমার জন‍্য নিজের হাতে কেক বানিয়েছে।কেক দেখেই কিন্তু আমার জিভে পানি চলে এসেছে।তাড়াতাড়ি চল কেক কাটবে।আমার কিন্তু আর তর সইছে না।

সিনথিয়াঃকেক ফেক পরে কাটা হবে।ভাইয়া আগে বল ভাবির এই সারপ্রাইজ তোর কেমন লেগেছে।এই আইডিয়ার অর্ধেক বুদ্ধি কিন্তু আমার।(ভাব নিয়ে)

সান ইশফার দিকে এক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল……

—এগুলো সারপ্রাইজ না কি শক তা নিয়ে আমি কনফিউজড।

তুশিঃভাইয়া আপনার ফিউজ টিউজ সব দুর করনের পরে অনেক টাইম পাইবেন।এখন চিল করেন চিল।

সান মুচকি হেসে বলল…..

—যো হুকুম শালি সাহেবা।

সান আশেপাশে তাকিয়ে বলল……

—সবাই এখানে ভাইয়া আর ইরু কোথায়?তারা আসেনি?

সান এর কথা শুনে ইশফার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।সান ইশফার উওরের আশায় ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।ইশফা নিজেকে সাভাবিক করে বলল……

—ভাইয়ার একটু ব‍্যাস্ত তাই আসতে পারেনি।আর ভাইয়াকে ছাড়া ইরুকে সামলানোর কারো সাধ‍্য নেই।তাই……।জানেনই তো সামান‍্য থেকে সামান‍্য বিষয় নিয়ে ইরু কি তুরকালাম বাধাতে পারে।তাই আমিও জোর দেই নি।(মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা টেনে)

ইশফা ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে কথাটা বললেও তার হাসির আড়ালের কষ্টটা বুঝতে কারোরই বাকি রইল না।

💦💦💦💦💦💦

জোস্নারাতে খোলা আকাশের নিচে নিজের কাছের মানুষটার হাতে হাত রেখে তার কাধে মাথা রেখে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইশফা।বাচ্চাদের সাথে,কেক কাটা হতে শুরু করে হৈ হুল্লোড়,খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আশ্রমের মাঠের একপাশে এসে বসেছে তারা।ইশফার আজকের করা নিজের কাজে নিজেই অবাক হচ্ছে।সে কি ছিলো আর কি হয়ে গেছে।যেই সানকে সে সহ‍্যই করতে পারতো না।তাকে দেখলে অজানা কারনে কেন যেন তার রাগ উঠে যেত।আজ সেই সানকে সে চোখে হাড়ায়।সান যখন ইশফাকে কল করে বিরক্ত করতো তখন একদিন সান কথার ছলে বলেছিল, তোমার আমাকে তোমার মনে জায়গা দিতে হবে না।আমি নিজের জায়গা নিজেই বানিয়ে নিব।আসলেই সান তার কথা মত কেয়ার, শাষণ,ভালোবাসা দিয়ে একটু একটু করে ইশফার মনে নিজের জায়গা নিজেই করে নিয়েছে।

ইশফা সব সময় তার জীবনে এমন একজনকে চেয়েছে যে শুধু তাকে ভালোবাসবে না।তার সাথে তার পরিবার-পরিজন কেও ভালোবাসবে।তার ইচ্ছা,চাওয়া-না চাওয়া, পছন্দ-অপছন্দ সব কিছুকে সম্মান করবে।ইশফার এই দোয়া যে আল্লাহ্ কবুল করে নিবেন তা ইশফা ভাবতেও পারেনি।সান সব সময়ই ইশফার পছন্দ অপছন্দ কে প্রাধান্য দিয়েছে।ইশফার বিপদের দিনে ইশফার ফ‍্যামিলিকে নিজের ফ‍্যামিলির মত আগলে রেখেছে।ইশরার অসুস্থতার সময় যখন ইশফা সম্পূর্ণ ভেঙে পরেছিল তখন সান ইশফার পাশে বন্ধুর মত থেকে নানান ভাবে ইশফাকে বুঝিয়ে তাকে অনেকটাই সাভাবিক করেছে।সব সময় ইশফার ঢাল হয়ে ইশফার পাশে থেকেছে।

—কি হল ভাবনা কুমারী? কি এতো ভাবছো তুমি?

সান এর কথা শুনে ইশফা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে সান এর দিকে তাকিয়ে বলল……

—কিছু বললেন?

—কোথায় হাড়িয়ে রয়েছো তুমি?

—হাড়াতে দিলেন আর কই?হাড়ানোর আগেই তো নিজের সাথে বেধে ফেলেছেন।এখন এমন ভাবে আপনার সাথে আটকা পরেছি যে চাইলেও এই বাধন ছিড়ে যেতে পারবো না।

ইশফা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল……

—জীবন কত অদ্ভুত তাই না?উপরওয়ালা জীবনের মোড় কোথার থেকে কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ কল্পণাও করতে পারে না।

ইশফার কথা শুনে সান ফট করে ইশফার মাথা নিজের কাধ থেকে সরিয়ে ইশফার থেকে একটু দূরে সরে বসে সন্দেহর চোখে ইশফাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।সান এর কাজে ইশফা হকচকিয়ে সান এর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল…..

—কি হয়েছে?এমন করছেন কেন?

সান ইশফার উপর সন্দেহর নরজ রেখেই বলল….

—তুমি আমার বাঘিনী তো?আমি কেন যেন তোমার কথাবার্তায় রহস‍্য রহস‍্য গন্ধ পাচ্ছি।কেন যে মনে হচ্ছে কোন ভূত-প্রেত আমার বাঘিনীর রুপ নিয়ে আমার কাছে এসেছে আমার ঘাড় মটকাতে।

ইশফা কোমড়ে হাত রেখে সান এর দিকে রাগি চোখে তাকাতেই সান মুচকি হেসে বলল…..

—কি করব বল?এক সাথে তোমার এত নতুন রুপ আমার হজম হচ্ছে না।সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।আমার বাঘিনী যে আজ পযর্ন্ত আমাকে তার মনের খবর বিন্দু পরিমান বুঝতে দেয়নি সে যে এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে তা ভাবতেই আমার যে কেমন লাগছে তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।জানো আমার যদি ডানা থাকতো অথবা কারো কাছ থেকে ডানা ধার নিতে পারতাম তাহলে আমি খুশিতে মুক্ত আকাশে ঊড়ে ঊড়ে বেড়াতাম।

ইশফা মনে মনে খুশি হয়ে মুখে রাগি ভাব রেখে বলল……

—ঊড়া ঊড়ি পরে কইরেন।আগে বলেন আপনি আমারে কবের থেকে চিনেন।রিধু তখন কিসের দেড় বছরের কথা বলল।

সান ইশফার কথার কোন উওর না দিয়ে ফট করে ইশফার কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল……

—আজ বলার মুড নাই।মাথা ব‍্যাথা করছে মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।

—মাথা ব‍্যাথা না ছাই।জানি তো সব না বলার ধান্দাবাজি।

সান ইশফার হাত নিজের মাথায় রেখে চোখ বন্ধ করে বলল…..

—সত‍্যি অনেক মাথা ব‍্যাথা করছে।মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও।প্লিজ সেদিনের মত চুল ছিড়ে দিও না।তাহলে আজ আমি টাকলা হয়ে যাব।তখন সবাই তোমাকেই টাকলুর বউ বলবে।

ইশফা সান এর বাহুতে চাপড় মেরে বলল….

—উল্টাপাল্টা কথা না বললে ভালো লাগে না।

—উল্টাপাল্টা কোথায়?যা সত‍্যি তাই তো বলালাম।

ইশফা সান এর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল…..

—আপনি না আকাশে ঊড়তে চাইছিলেন? আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।আপনাকে মুক্ত আকাশে ঊড়তে না পারলেও আপনি চাইলে আমি আপনাকে রাতের শহরটা ঘুড়িয়ে দেখাতে পারি।

সান ফট করে চোখ খুলে ইশফার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল…..

—মানে?

—এতো মানের উওর দিতে পারবো না।যদি যেতে চান তাহলে ফটাফট উঠে দাড়ান আর না হলে এখানে শুয়ে থাকুন।

সান ফটাফট দাড়িয়ে বলল……

—যাবো না মানে?আমার বাঘিনী আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে চেয়েছে আমি কি না করতে পারি বল।

ইশফা সান এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল……

—মাথা ব‍্যাথা শেষ?

সান মাথা চুলকিয়ে ভূবন ভুলানো একটা হাসি দিয়ে বলল…..

—তোমার হাতের ছোয়া পেয়ে ব‍্যাথা পালিয়েছে।

ইশফা ভেঙচি কেটে বলল…..

—চাপাবাজ।

সান মুচকি হেসে ইশফার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ইশফা সান এর হাত ধরে উঠে দাড়ালো।

#চলবে,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here