মনের_পিঞ্জরে পর্ব ৪৬,৪৭,৪৮,৪৯,৫০

#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_46

জিদানের আজ কলেজ থেকে ফিরতে অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে।সারাদিনের ব‍্যস্ততা,ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে মিঃখান কে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে জিদান ক্লান্ত মাখা হাসি দিয়ে বলল…..

—কি ব‍্যপার চাচ্চু!আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় যে তুমি?

মিঃখানঃবাপজান তাড়াতাড়ি বাসায় আমি আসিনি।তুমিই বাসায় আসতে লেট করেছো।

জিদান নিজের হাত ঘড়িতে টাইম দেখে বলল…..

—ক্লাশ শেষে মিটিং ছিলো।তাই ফিরতে একটু বেশিই দেড়ি হয়ে গেছে।

জিদান বাসায় ফিরতেই মিসেস খান জিদানের জন‍্য বানিয়ে রাখা ঠান্ডা পানির শরবত নিয়ে ফটাফট হাজির হয়ে গেল।মিসেস খান জিদানের দিকে শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলে জিদান মুচকি হেসে মিসেস খান এর হাত থেকে শরবতটা নিয়ে মিঃখান এর পাশে বসতে বসতে বলল……

—ছোট মা!পাগলীটার কি খবর?আজ কোন ঝামেলা করেছে?

মিসেস খান মলিন হেসে বলল……

—না আজ সারাদিন ভালোই ছিলো।কোন পাগলামো করেনি।

জিদানঃকোথায় সে?

মিসেস খানঃ রুমেই আছে।ইশফার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে।

জিদান আর কিছু না বলে মলিন হাসল।

জিদান রুমে ঢুকে দেখে ইশরা বাচ্চাদের মত কাচুমাচু করে ঘুমিয়ে রয়েছে।জিদান ইশরার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হাত ব‍্যাগটা সোফার এক কোনে রেখে কাবাড থেকে নিজের কাপড় নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।জিদান ফ্রেস হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই ইশরা জিদানের দিকে পানির গ্লাস ছুড়ে মারল এবং সেটা জিদানের বাহুতে লেগে নিচে পরে ভেঙে কাচগুলো ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরল।ইশরার হঠাৎ আক্রমনে জিদান অবাক হয়ে ইশরার দিকে তাকাতেই দেখল ইশরা রনমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।জিদান নরম গলায় বলল….

—কি হয়েছে ইশু?পানির গ্লাস ছুড়ে মারলে কেন?

ইশরা কোন কথা না বলে পাশ থেকে ফুলদানি তুলে জিদানের দিকে ছুড়ে মারল।জিদান সরে যেতেই ফুলদানি জিদানের শরীরে না লাগলেও কাচ দিয়ে জিদানের পা কেটে গেল।জিদান পা থেকে কাচের টুকরা বের করে ইশরার দিকে অগ্রসর হতে নিলেই ইশরা পানির জগ জিদানের দিকে ছুড়ে মেরে চেচিয়ে বলল……

—খবরদার কাছে আসবি না।কাছে আসলে খুন করে ফেরবো।

জিদান থেমে গিয়ে বলল……

—ওকে ওকে কাছে যাব না।কিন্তু তুমি আমাকে বল এমন কেন করছো?কি করেছি আমি?

ইশরা জিদানের কথার কোন উওর না দিয়ে একটার পর একটা জিনিস জিদানের দিকে ছুড়ে মারতে লাগল।

ইশরার রুমে ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে ইশফা নিজের রুম থেকে তড়িঘড়ি সেখানে এসে দেখে ইশরা পাগলামি করছে।জিদান নানান ভাবে ইশরাকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছে না।মিসেস খান ইশরার রুমের দিকে যেতে চাইলে মিঃখান তাকে বাধা দিয়ে বলল…..

—ওদের ঝামেলা ওদের মিটাতে দাও।আমার মতে সেখানে আমাদের না যাওয়াই ভালো।

কথাটা বলে মিঃখান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলল।

মিসেস খান মিঃখান এর কথা শুনে সেদিনে পা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে রইল।

ইশরা নিজের হাতের নখ দিয়ে জিদানের শরীরে,হাতে,মুখে আঁচড় কাটছে,হাতের কয়েক জায়গায় কামড় দিয়ে রক্ত জমাট হয়ে রয়েছে কিন্তু সেদিকে জিদানের কোন খেয়াল নেই।সে তো তার পাগলীর মান ভাঙাতে ব‍্যাস্ত।জিদান বার বার ইশরাকে জিগ্যেস করছে,সে কি করেছে?তার দোষটা কি?ইশরা জিদানের কথার কোন উওর না দিয়ে এক কথা বলছে,ধরবিনা আমায় ছুবিনা আমায়।সাথে নিজের মত পাগলামী করেই চলেছে।

ইশফা, ইশরার রুমের সামনে ছলছল চোখে ইশরা,জিদানের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।ইশফা রুমে ঢুকতে চাইলে জিদান ইশফাকে ইশারায় রুমে ঢুকতে মানা করে দেয়।কেননা ইশরা যেই পরিমানের রেগে আছে তাতে সে এখন এখানে ইশফাকে দেখলে উল্টো রিয়েক্ট করতে পারে।ইশফাও জিদানের কথা মত রুমে না ঢুকে রুমের বাহিরে আড়াল থেকে ওদের কাহিনী দেখছে।ইশফা জিদানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……..

—ভালোবাসি ভালোবাসি বলে সবাই স্লোগান করতে পারে।কয়জনই বা ভাইয়া তোমার মত নিজের ভালোবাসাকে আগলে রাখতে পারে?

💦💦💦💦💦

জিদান ইশরাকে বহু কষ্ট করে মানিয়ে হালকা কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছে।জিদান ইশরার মাথার পাশে বসে ইশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ইশরার সাথে গল্প করছে।কিছুক্ষনের মধ‍্যেই ইশরা ঘুমের দেশে চলে যায়।জিদান ইশরাকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ডিমলাইট অন করে দেয়।যাতে ইশরার ঘুমে ডিস্টাব না হয়।

এমনিতেই সারাদিনের খাটাখাটনিতে জিদান ক্লান্ত ছিলো।তার উপর বউ এর সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে বউ এর রাগ, মান ভাঙাতে গিয়ে জিদানের রফাদফা হয়ে গেছে।জিদান ঘুমন্ত ইশরার মাথায় আদর দিয়ে বলল…..

—পাগলী।কি সুন্দর এখন বাচ্চাদের মত ঘুমিয়ে রয়েছে।কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে তুরকালাম বাধিয়েছে?

💦💦💦💦💦

ইশফা জিদান এর পায়ে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে আর নাক টানছে।জিদান মলিন হেসে বলল…….

—বুচি বাচ্চাদের মত কান্না করছিস কেন?আমি ঠিক আছি।আমি তো বেন্ডেজ করেই নিয়েছিলাম।তুই শুধু শুধু আবার বেন্ডেজ করছিস।

ইশফা নাক টেনে বলল……

—আমি কানা নই।তুমি যে কি ঠিক আছো তা আমার জানা আছে।আর কি যে বেন্ডেজ করেছো তা তো দেখতেই পাচ্ছি।পাগলীটা নিজের অজান্তেই কত কষ্ট দিচ্ছে তোমায়।সুস্থ হয়ে নেক একবার।তখন ওকে বুঝাবো আমার ভাইকে কষ্ট দেবার ফল।

—পারবি ওকে শাস্তি দিতে?

—পারবো না কেন?সুস্থ হোক একবার প্রথমেই থাটিয়ে কানের নিচে দু’টো লাগাবো।তোমাকে জ্বালানোর জন‍্য।

—দেখা যাবে কে কাকে মারে।

—সেটা সময় হলেই দেখে নিও।তা পাগলীটা কি নিয়ে আজ এমন রাগটা দেখালো?

—আর বলিস না।সকালে আমাকে বলে দিয়েছিল,কলেজ থেকে ফিরেই যেন তার সাথে আগে দেখা করি।ওকে ঘুমোতে দেখে ফ্রেস হতে চলে গিয়েছিলাম।ওয়াসরুম থেকে বের হতে না হতেই আক্রমন শুরু।

ইশফা জিদানের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল……

—হাতের কি অবস্থাতাই না হয়েছে তোমার?

জিদান মলিন হেসে বলল……

—এগুলো আমার কাছে কিছুই মনে হয় না বুচি।ওর সকল পাগলামোই আমি হাসিমুখে সহ‍্য করি।কেননা ওর এই পাগলামোর জন‍্যই তো একটু একটু করে ওর প্রতি দূর্বল হয়েছি আমি।আগের চাইতে পাগলামীটা হয়তো এখন একটু বেশিই করে।কিন্তু তাতে সমস্যা নেই আমি সামলিয়ে নিব।

ইশফা বেন্ডেজ করতে করতে বলল……

—তুমি সহ‍্য করলে কি হবে?কিছুর মানুষ আছে না যাদের নিজেরটা খেয়ে পরের ব‍্যাপারে নাক না গলালে পেটের ভাত হজম হয় না।তাদের তো বহুত সমস‍্যা হচ্ছে।

জিদান কপালে ভাজ ফেলে বলল……

—মানে?

—মানে আমরা তোমাকে ঘর ছাড়া করেছি।আমরা তোমাকে সহজ-সরল পেয়ে আমাদের পাগল বোনটা কে তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছি ইত‍্যাদি,ইত‍্যাদি।

ইশরার কথা শুনে জিদান রাগি গলায় বলল……

—এসব কথা কে বলেছে?

💦💦💦💦💦

জিদান মিঃখান এর রুমের সামনে দাড়িয়ে দরজায় নক করে বলল……

—চাচ্চু আসবো?

মিঃখান বেডে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে।পাশেই মিসেস খান মলিন মুখে মাথা চেপে বসে রয়েছে।জিদান এর গলার আওয়াজ পেয়ে মিঃখান উঠে বসে বলল…….

—দাড়িয়ে কেন ভিতরে আয়।

জিদান ভিতরে ঢুকে কোন ভনিতা ছাড়াই বলল…..

—ছোট মা বাসায় কে এসেছিলো?

জিদানের কাঠকাঠ গলার আওয়াজ শুনে মিসেস খান জিদানের দিকে তাকালো।জিদানের চেহারায় রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।মিসেস খান কিছুটা ঘবড়ে গিয়ে বলল…..

—কেন বাবা কি হয়েছে?

জিদান সোজা ভাবে উওর দিল……

—ছোট মা তোমার ঐ পাতানো ভাবির আমার বউকে নিয়ে কিসের এতো সমস‍্যা তা আমি জানি না?ইশু পাগল হোক বা ভালো ওর বিয়েটা তো আমার সাথে হয়েছে।আমি যদি ওকে নিয়ে সুখে থাকি তাহলে সে কেন আমাদের ব‍্যাপারে নাক গালাতে আসে?মানুষ এতোটা নিচ কি করে হতে পারে?একটা অসুস্থ মানুষ কে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলতে কি তার বিবেকে বাধেনি?আর তুমিই বা কি করে ঐ মহিলার সকল কথা মুখ বুজে সহ‍্য করেছো?কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দাওনি কেন?

(আজ বিকেলে পাশের বাসার এক মহিলা এসে ইশরাকে নিয়ে মিসেস খানকে নানান কথা শুনিয়ে গেছে।মহিলার কথার প্রতি উওরে মিসেস খান কিছুই বলেনি।সে চুপচাপ বসে ঐ মহিলার কথা হজম করেছে।ইশফা প্রতিবাদ করতে চাইলে মিসেস খান ইশফাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে।ভাগ‍্য ভালো ইশরা তখন ঘুমিয়ে ছিল। তা না হলে তখন যে কি হত কেউ জানে না।)

জিদানের কথা শুনে মিসেস খান কোন কথা না বলে চুপকরে বসে রইল।সে কি আর বলবে।তার কিই বা বলার আছে।

জিদান বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল…..

—শোন ছোট মা!ইশু আমার জন‍্য কি সেটা তোমরা সবাই ভালো করে জানো।শুধু শুধু পরের কথা শুনে মন খারাপ করবে না।আমি যেন আর না শুনি ঐ মহিলা এই বাসায় এসেছে।যদি আসে তাহলে দরজার বাহির থেকেই বিদেয় করে দিবে।যাদের বিবেক,বুদ্ধি নেই।পরের গুনগান করার অভ‍্যাস।দরকার নেই সেসব মানুষের এই বাসায় আশার।
যত পারবে এসব মানুষ থেকে দূরে থাকবে।

কথাটা বলে জিদান গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

মিসেস খান জিদানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল……

—এটা কি চুপচাপ,শান্তশিষ্ঠ সেই জিদান?যে নাকি বড়দের সামনে উচু গলায় কথা বলা তো দূর তাদের চেহারার দিকে তাকিয়েও কথা বলতো না?
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_47

—আমরা কি ভুল করছি?সকল কাজে ছেলেটাকে প্রশ্রয় দিয়ে।ইরা যেমন আমার মেয়ে জিদানও কিন্তু আমার ছেলের চেয়ে কোন অংশে কম না।ইরা ঠিক হলে যদি জানতে পারে ইরার জন‍্য জিদান তার পরিবার ছেড়েছে তখন কি হবে?আমরা কি সার্থপর হয়ে গেলাম ইশার মা?এক মেয়ের জন‍্য অপর ছেলে কে কি তার পরিবার থেকে বঞ্চিত করলাম?

মিঃখান এর কথা শুনে মিসেস খান মিঃখান এর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…….

—হঠাৎ কেন তোমার মনে হচ্ছে আমরা ভুল করছি?

মিঃখান একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল…..

—জানিনা।কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা ভুল করছি।আমি চাইলে সেদিন জিদানকে ঐ রকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দিতে পারতাম।

মিসস খান মলিন হেসে বলল…..

—আজ তোমার মনে হচ্ছে তুমি সেদিন চাইলে জিদানকে বাধা দিতে পারতে। স‍ত‍্যিই কি সেদিন তুমি জিদানকে বাধা দিতে পারতে?

মিঃখান কিছু না বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বেডের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল।সেদিন সে জিদানের এক নতুন রুপ দেখেছে।জিদান যে সেদিন কারো ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল সেটা সে নিজেও জানে।তার পরেও কেন যেন মনে হয় তারা ভূল করেছে।বড় ভূল করেছে।

ফ্লাসব‍্যাকঃ

মিঃখান,জিদান মিলে হাসপাতালের কাছের এক মসজিদ থেকে নামাজ পরে হাসপাতালে ফিরতেই দেখে হাসপাতালের নিচের করিডোরে ইশফা,সান দাড়িয়ে রয়েছে।তাদের এক পাশে আওলাদ খান বসে রয়েছে।আওলাদ খান,হাফসা বেগম এর মাধ‍্যমে ইশরার কথা জানতে পারে। তার মধ‍্যমেই সে সকল খবরা-খবর নেয়।ঐ দিকে বিয়ের সব ব‍্যবস্থা করে সে জিদানকে নিতে আসে।আওলাদ খানকে দেখে জিদান কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পর মুহূর্তে নিজেকে ঠিক করে নেয়।মিঃখান এতো বছর পর ভাইয়ে দেখে চোখের কোনে জল চিকচিক করতে লাগলো।সে ভাবতেও পারেনি তার ভাই তার মেয়ের অসুস্থ তার খবর পেয়ে তার মেয়েকে দেখতে আসবে।আওলাদ খান মিঃখান কে দেখে তাকে তাসিল‍্য করে বলল……

—ভালোই তো আমার ছেলের পিছে তোর ঐ বেহায়া,বেয়াদব মেয়েটাকে লাগিয়ে দিয়েছিস।কি ভেবেছিলি তুই? তোর ঐ আধ মরা মেয়ের পিছে আমার সহজ সরল ছেলেটাকে লাগিয়ে দিয়ে আমার টাকা আত্বসাধ করবি আর আমি তা মেনে নিব।এসব যদি ভেবে থাকিস তাহলে ভুল।কেননা তা আমি কিছুতেই হতে দিব না।ভালো করে কান খুলে শুনে রাখ,আমি আমার ছেলেকে নিতে এসেছি।যাতে তোর মত লোভি বাপ আর তোর মেয়ে আমার ছেলেকে আত্বসাধ না করতে পারিস।লোভি দেখেছি তোর মত লোভি দেখিনি।আমার ছেলে দেশে ফিরতে না ফিরতেই মেয়েকে আমার ছেলের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছিস।লজ্জা করল না তো বাপ হয়ে এমন কাজ করতে?

মিঃখান আওলাদ খানের কথা শুনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।কি ভাবলো আর কি হলো।এমন অপমান নতুন না আরো আগেও সে শুনে মুখ বুজে সব সহ‍্য করেছে।কখনো সে তার বাবা সমতুল‍্য ভাই এর সাথে উচু আওয়াজে কথা বলেনি।আজ প্রতিবাদ করতে চেয়েও সে পারছে না।গলা দিয়ে যেন তার কথাই বের হচ্ছে না।তার উপরে সামনেই সান দাড়িয়ে রয়েছে। মেয়ের জামাই এর সামনে এমন অপবাদের কথা শুনে লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে।

ইশফা আওলাদ খান এর কথা শুনে রাগে ফেটে পরছে।তার বাবাকে চুপ করে থাকতে দেখে তার রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল।ইশফার তার বাবার এই একটা জিনিসই ভালো লাগে না।বড় ভাইকে সম্মান,শ্রদ্ধা করবে ভালো কথা।তাই বলে কি তার সকল অন‍্যায়,অপমান মাথা পেতে মেনে নিবে?ইশফা নিজের রাগটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল……

—একটা কথা কি জানেন?যে যেমন সে তেমন ধারনাই করে।আমার আব্বুকে যে আপবাদ গুলো দিলেন সেটা আপনার গুন আমার আব্বুর না।

আওলাদ খান ইশফার কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল……

—কত বড় বেয়াদব মেয়ে।আমাকে কথা শুনায়।

ইশফাঃআওয়াজ নিচে মিঃখান।এটা আপনার বাড়ি না এটা হাসপাতাল।উচিত বললেই যদি বেয়াদব হয়ে যায় তাহলে হলাম একটু আকটু বেয়াদব তাতে আমার কোন আফসোস নেই।ইশফা জিদানের দিকে তাকিয়ে বলল……

—সরি ভাইয়া তোমার বাবার সাথে এভাবে কথা বলার জন‍্য।কি করবো বল, আব্বু তার ভাইকে অতি ভক্ত,শ্রদ্ধা করে চুপ করে থাকলেও আমি আমার সামনে আমার বাবাকে নিয়ে বাজে কথা সহ‍্য করবো না।

মিঃখান ইশফাকে ধমক দিয়ে বলল…..

—কি হচ্ছে কি ইশা।এই তোকে শিক্ষা দিয়েছি?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তুই ভুলে গেছিস?

আওলাদ খানঃহয়েছে তোর নাটক আর দেখাতে হবে না।মেয়েকে দিয়ে অপমান করিয়ে এখন আদিখ‍্যেতা দেখানো হচ্ছে।জিদান চল এখান থেকে।এদের মত মানুষদের সাথে কথা বলতেও আমার ঘিন্না হয়।এদের ছায়া আমি আর তোর জীবনে পরতে দিব না।আর তুই (মিঃখান কে উদ্দেশ্য করে)আমার ছেলের পিছু ছেড়ে দিবি তা না হলে দেখিস তোর কি হাল করি।

জিদান এতোক্ষন চুপ ছিলো।আওলাদ খান এর কথা শুনে নরম গলায় বলল……

—কত টাকায় বিক্রি করলেন আমায়?

জিদানের কথা শুনে আওলাদ খান ঘাবড়ে গিয়ে বলল……

—মানে?

জিদান এর মুখে রাগের আভা ফুটে উঠেছে।তার পরেও নিজেকে সভাবিক রেখে বলল……

—মানে আপনি যে টাকার কাছে আমাকে বিক্রি করছেন তা আমার অজানা নয়।তা না হলে চেয়ারম্যান এর ঐ দুশ্চরিত্রা মেয়ের মত অমন একটা মেয়ের সাথে কেন আমার বিয়ে ঠিক করেছেন?
ইশু একটু না অনেক দুষ্টুমি করে ফরফর করে তার জন‍্য ইশু আপনার কাছে বেয়াদব বাজে মেয়ে।তাহলে যার কাছে আপনার ছেলেকে বিক্রি করছেন সে কি খুব ভালো মেয়ে?

আওলাদ খান কপালে ভাজ ফেলে বলল……

—বিয়ের কথা তুমি কি করে জানলে?

জিদানঃযেভাবেই হোক জেনেছি।তা দরদাম ঠিক মত করেছেন তো?

আওলাদ খানঃআমাকে কথা শুনানোর সাহস তুমি পেলে কি করে? আমার মুখের উপর কথা বলতে এরাই তোমাকে শিখিয়েছে না।

জিদানঃআমি কোন বাচ্চা নই যে আমাকে কেউ কথা শিখিয়ে দিবে।

আওলাদ খানঃচুপ আর একটাও কথা না।আমি তোমার আর কোন কথাই শুনতে চাইনা।সব যখন জানো তাহলে ভালো করেই জানিয়ে দেই,আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।দুদিন পর তোমার বিয়ে।তাই এখন এই মুহূর্তে তুমি আমার সাথে বাড়িতে ফিরছো।

জিদান কাঠকাঠ গলায় বলল…..

—আমি কোথাও যাব না।

আওলাদ খান রাগি গলায় চেচিয়ে বলল……

—যাবে না মানে?আজ বাদে কাল তোমার বিয়ে আর তুমি বলছো তুমি যাবে না।

জিদানঃকত বার বিয়ে দিবেন আপনি আমায়?ছোটবেলায় তো একবার আমাকে না জানিয়েই বিয়ে দিয়েছেন।এখন কি আবার জানিয়ে দেওয়া বাকি আছে?

আওলাদ খান জিদানের কথা শুনে হকচকিয়ে বলল…….

—কে বলেছে তোমার বিয়ে হয়েছিলো?ছোটবেলায় কোন বিয়ে টিয়ে হয়নি তোমার।শুধু ইশরার সাথে বিয়ের কথা হয়েছিলো।কিন্তু তুমি ভুলেও ভেবোনা কথা হয়েছে দেখে ঐ মেয়েকে আমি তোমার বউ করে নিব।

জিদান তাসিল‍্য হেসে বলল……

—বাহ বেশ ভালো তো।পূত্র বধু বানিয়ে বলছেন বউ করে নিবেন না।আপনি বললেন আর আমি আমার স্ত্রীকে আপনার কথা মত অস্বীকার করবো।তা কিন্তু হচ্ছে না।

আওলাদ খানঃকিসের স্ত্রী?ঐ ছোটবেলার পুতুল খেলার বিয়েকে কেউ বিয়ে বলে না।

জিদানঃতাহলে স্বীকার করলেন বিয়ে হয়েছিল।আপনি চিন্তা করবেন না,পুতুর খেলার বিয়েকে বাস্তবায়ন করতে আমরা আবার বিয়ে করেছি।

আওলাদ খানঃকি তুই এই মেয়েকে আবার বিয়ে করেছিস তাও আবার আমাকে না জানিয়ে?

জিদানঃআপনার কাছে আমার কোন কথা শোনার টাইম আছে?

—তোর পিছনে টাকা পয়সা ব‍্যায় করে বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছি এই দিন দেখার জন‍্য।

—ভুল বললেন।আমার পিছে আপনি টাকা পয়সা কিছুই খরচ করেননি যা করেছে দাদাজান আর চাচ্চু করেছে।আপনি আপনার টাকা খরচ হবে দেখে আমাকে পড়াতেই চাননি।

—ওহ এখন তোর কাছে আমার চাইতে তোর চাচাই বড় হয়ে গেছে।আমি পর হয়ে গেছি?

—আপন পর এর কিছু নেই।যেটা সত‍্যি সেটাই বললাম।আপনি আমার পিতা।আপনি কখনোই আমার কাছে পর হবেন না।

—রাখ তোর সত‍্য মিথ‍্যা।এখন চুপ চাপ আমার সাথে চল।বাড়িতে নিয়েই তোর মাথার সব ভূত আমি তাড়াবো।

জিদান কাঠকাঠ গলায় বলল…..

—আমি কোথাও যাবো না।আপনি আসতে পারেন।

—যাবিনা মানে।আমি সকলকে কথা দিয়ে ফেলেছি।তুই না গেলে কি করে হবে?

—আমি বিবাহিত। তাই নতুন করে আমি আর আমার সাথে কাউকে জড়াতে পারবো না।এখন এসব কথা না বলে বিয়ে ঠিক করার আগে আমার সাথে কথা বলা আপনার উচিত ছিলো।

আওলাদ খান নিজের রাগ কন্টল করতে না পেরে জিদানের গালে থাপ্পড় মেরে বলল……..

—তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি।আমার মুখে মুখে কথা।বাড়ি নিয়ে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলবো।বিবাহিতর গান লাগিয়ে দিয়েছে।কিসের বিবাহিত তুই?মানি না আমি এই বিয়ে।যে মেয়ে আধ মরা হয়ে হাসপাতালে বেডে পরে আছে।দুদিন পর মরে যাবে সেই মেয়ের জন‍্য তুই তোর এতো সুন্দর জীবনটা কেন নষ্ট করবি।কেনই যে এরা এই আধ মরা মেয়েটার পিছে টাকা নষ্ট করছে বুঝি না।আমার মেয়ে হলে তো আমি গলা টিপে নিজেই মেরে ফেলতাম।আপদ বিদেয় করে সকল ভেজাল থেকে মুক্ত হতাম।

আওলাদ খানের কথা শুনে সবাই ঘৃনা ভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।মিঃখান ছলছল চোখে তার ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তার ভাই টাকার জন‍্য লোভী,একটু অন‍্যরকম সেটা সে জানতো।কিন্তু তার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে এমন কথা বলবে সে কখনো ভাবতেও পারেনি।

সান কিছু বলতে চাইলে ইশফা সান এর হাত ধরে সানকে বাধা দেয়।জিদান তার বাবার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তাসিল‍্য হেসে বলল……

—এই আপনার আর চাচ্চুর মাঝে পাথর্ক‍্য।আপনি শুধু টাকা চিনেন আর চাচ্চু চিনে ভালোবাসা।নিজের সন্তানদের কিভাবে ভালোবাসতে হয়,মাথার উপর ছায়া হয়ে কিভাবে আগলে রাখতে হয় তা শিখুন চাচ্চুর থেকে।ইশু আপনার মেয়ে হলে আপনি গলাটিপে মেরে ফেলতে আর চাচ্চু নিজের মেয়েকে বাচানোর জন‍্য নিজের তিলে তিলে গড়া সম্পদ, টাকা-পয়সা সব শেষ করছে যাতে তার মেয়েটা সুস্থ হয়ে তার কাছে ফিরে আসে।তার কাছে টাকা পয়সার চাইতে তার মেয়ে বড়।

আওলাদ খানঃতোর ভাষণ আমি শুনতে চাই না।এখন কথা না বাড়িয়ে আমার সাথে চল।

জিদান জেদ ধরে বলল…..

—আমি কোথাও যাব না।

—দেখ জিদান!আজ যদি তুই আমার সাথে না যাস আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি না হোস তাহলে তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক আজ এখানেই শেষ হবে।আমি তোকে তেজ‍্যপূত্র কবরো।

কথাটা শুনেই জিদান চমকে তার বাবার দিকে তাকালো।তার বাবা তার কথা রাখার জন‍্য এমন একটা কথা বলবে তা সে ভাবতেও পারে নি।জিদান চোখের কোনে জমে থাকা জলটুকু মুছে গলা জড়ানো কন্ঠে বলল……

—আপনার দোয়ায় কখনো আমি ছিলাম কিনা জানি না।আজকের পর থেকে কখনো মনে হয় না আর থাকবো।দোয়ায় আমাকে না রাখলেও পারলে বদ দোয়ায় স্বরন করবেন।তাতেই আমার চলবে।

কথাটা বলেই জিদান চলে গেলো।সবাই জিদান এর যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।আওলাদ খান রাগে, অপমানে সেখানে দাড়িয়ে ফুলতে লাগলো।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_48

ইশরার কেবিনের সামনে দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে জিদান।কষ্টে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে তার।সে যদি চিৎকার করে কিছুক্ষন কান্না করতে পারতো হয়তো তার ভিতরের কষ্টটা কিছুটা হলেও কমতো।কিন্তু সে তো ছেলে।ছেলেদের তো আবার কান্না করতে নেই।শত কষ্টের মাঝেও চোখের জলটা আড়াল করে রাখতে হয়।

কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে জিদান চোখের জলটা মুছে মাথা উচু করতেই সামনে মিঃখানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল।মিঃখান কিছু বলার আগেই জিদান বলল…….

—প্লিজ চাচ্চু।আজ কোন কথা না।আমাকে আমার মত ছেড়ে দাও।

মিঃখান চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল……

—এভাবে হুট করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না।বুঝের উপরেও কথা……..।

মিঃখানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে জিদান বলল…….

—অবুঝকে বোঝানো যায়।যে বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করে তাকে নয়।

জিদান দাড়িয়ে বলল……

—আমি কিছুক্ষনের মধ‍্যে আসছি চাচ্চু।ইশুর খেয়াল রেখ।

কথাটা বলেই জিদান গটগট করে হেটে চলে গেলো।মিঃখান পিছন থেকে জিদানকে কয়েকবার ডাক দিল।জিদান মিঃখান এর ডাক শুনেও না শোনার ভান করে চলে গেলো।

💦💦💦💦💦

ব‍্যস্ত নগরীতে নিজের ব‍্যস্ততা নিয়ে রাস্তাঘাটে ছুটছে জনগন।কেউ গাড়িতে চড়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে কেউ বা হেটে।

হাসপাতালের করিডোরের একপাশে পাশাপাশি দাড়িয়ে রয়েছে ইশফা আর সান।কারো মুখেই কোন কথা নেই।দু’জননের মধ‍্যেই নিরবতা বিরাজ করছে।দু’জনই করিডোর থেকে দূরের রাস্তার ব‍্যস্ত নগরীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।নিরবতা ভেঙে সান বলল……

—একটা কথা জিগ্যেস করবো?জানি এই সময়ে আমার এই কথাটা জিগ্যেস করা বেমানান তার পরেও জিগ‍্যেস করতে চাইছি।

সান এর কথা শুনে ইশফা সান এর দিকে তাকালো।সান এর চেহারায় কৌতূহল বিরাজ করছে।ইশফা রেলিং এর উপর হাত রেখে পুনরায় ব‍্যস্ত নগরীর দিকে তাকিয়ে বলল…….

—কি জানতে চাইছেন?

সান বড় করে এক নিশ্বাস ফেলে বলল…..

—ভাইয়া আর ইরু ব‍্যপারটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না।ভেবেছিলাম পরে একদিন তোমার থেকে সব জানবো।কিন্তু আজকের ঘটনা দেখে নিজের জানার আগ্রহটা আর দমিয়ে রাখতে পারছিনা।তাই…..।

সান কর কথার প্রতি উওরে ইশফা কিছু না বলে আগের মতই দাড়িয়ে রইল।সান চাপা এক নিশ্বাস ফেলে বলল……

—তুমি যদি বলতে না চাও তাহলে থাক।আমি তোমাকে কোন জোর করবো না।

ইশফা সান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল…….

—জিদান ভাইয়া আমার আপন চাচাতো ভাই।ছোটবেলা থেকে আমি আর ইরু দুজনই ভাইয়ার পাগল ছিলাম।ভাইয়া ছিলো শান্ত,নম্র,ভদ্র একটা ছেলে।সব সময় চুপচাপ থাকা পছন্দ করতো।অযথা কারো সাথে তেমন কথা বলতো না।ছোট থেকেই ভাইয়া আমাদের দু’বোনকে আদর করতো কিন্তু ইরু দুষ্টুমিটা বেশি করায় মাঝে মাঝে ওর উপর বিরক্ত হয়ে যেত।দুষ্টুমির জন‍্য ভাইয়ার কাছে বকাও খেয়েছে অনেক।তাতেও যেন ওর হত না।ভাইয়াকে নানান ভাবে জ্বালিয়েই যেত।আমি ছোটবেলায় একটু চুপচাপ থাকার কারনে আমি ছিলাম ভাইয়ার চোখের মনি।ইশিতা ফুপি বাদে সবাই আমাদের ইফা,ইরা বললেও ভাইয়া ছোট থেকেই ইরুকে ইশু আর আমাকে বুচি বলে ডাকে।

এতোটুক বলে ইশফা একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগল…..

—যখন আস্তে আস্তে বড় হলাম।বুঝতে শিখলাম তখন থেকেই দেখতাম বাড়ির সবাই ইরুকে ভাইয়ার বউ বলে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।ইরু,ভাইয়া প্রথমে ব‍্যাপারটা মজার ছলে নিলেও দিনকে দিন ব‍্যাপারটা যেন ছড়াতে থাকে।এতে তারা দুজনই বিরক্ত হতে থাকে।এই নিয়ে দুজনই দাদাজান এর কাছে নালিশ করে।সেদিন তাদের মধ‍্যে কি ঝগড়াটাই না হয়েছিল।আর সেদিন জানতে পারি দাদাজান তাদের বিয়ে নাকি ছোট থেকেই ঠিক করে রেখেছে।সেদিনের পর ইরু কিছুদিন চুপ করে থাকলেও তার পর থেকে যেন তার ভাইয়াকে জ্বালানো আরো বেড়ে যায়।কথায় কথায় ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করা।বউ বউ বলে ভাইয়ার কান পচানো।ভাইয়ার যা অপছন্দ তা বেশি বেশি করা।কোন ভাবেই ভাইয়াকে না জ্বালানোর পথ বাকি রাখতো না।নিত‍্য নতুন ভাইয়াকে জ্বালানোর কৌশল বের করত।ইশফা একটু চুপ থেকে আবার বলল……

—ভাইয়া হাই স্টাডির জন‍্য বাহিরে যাওয়ার কথা বাড়িতে জানালে সবাই রাজি হয়ে যায়।তাছাড়া আমাদের অর্থিক অবস্থা ভালো থাকায় টাকারো কোন সমস‍্যা নেই তাই কেউ দ্বিমত করেনি।ভাইয়া বাহিরে যাওয়ার আগে ঘরোয়া ভাবেই তাদের আংটি বদল হয়।ভাইয়ার বাহিরে যাওয়ার দিন যত ঘনিয়ে আসছিলো ততই যেন তাদের দুজন কেমন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিল।দুজনের চেহারা থেকে যেন হাসিটাই গায়েব হয়ে গিয়েছিলো।ভাইয়ার যাওয়ার দিন সবাই ভাইয়ার সাথে দেখা করলেও ইরু সেদিন রুম থেকে বের হয়নি।রুম অন্ধকার বানিয়ে বসে ছিলো।ভাইয়া আমাকে সাথে নিয়ে ওর সাথে দেখা করতে গেলেই ইরু ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কান্না করে উঠে।ভাইয়ার চোখেও সেদিন পানি ছিলো।সেদিন তাদের না বলা কথা আমি পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও তাদের চেহারা দেখে এতোটুকু ঠিকই বুঝেছি যে,তারা একে অপরের প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছিল।

ভাইয়া চলে যাওয়ার পর সব ঠিক থাকলেও ইরু যেন হাসতে কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলো।সব সময়ই কেমন মন মরা হয়ে বসে থাকতো।এভাবেই দেখতে দেখতে কিছুদিন চলে যায়।সবাই ভেবেছি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।ভাইয়া বাহিরে যাওয়ার এক মাসের মাথাই দাদাজান স্ট্রোক করে মারা যান।দাদা জানের মৃত্যুর পরেই যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়।

ইশফা চাপা এক নিশ্বাস ফেলে বলল…..

—দাদাজানের মৃত্যুর পর চাচ্চু জালিয়াতি করে আব্বুর নামের সকল সম্পত্তি তার নামে লিখে নেয়।ইরুকে কারন ছাড়াই বাজে বাজে অপবাদ দেয়।আজ যে সব অপবাদ দিয়েছে তা তো কিছুই না।সেদিন সে যে সব কথা আব্বু আর ইরুকে বলেছে তা মুখে আনা তো দূর মনে পরতেই আমার শরীরে রাগে জ্বালাপোড়া করে।ইশফা চোখ মুখ শক্ত করে বলল……..

—সেদিনও আমি প্রতিবাদ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি মা,আব্বুর জন‍্য।তারা আমাকে রুমে আটকে রেখেছিলো।সেদিনই চাচ্চু আমাদের বাড়ি ছাড়া করে।এক ভাইয়া চলে যাওয়াতে ইরু আপসেট ছিলো।দাদাজান মারা যাওয়াতেও অনেকটা ভেঙে পরেছিলো।তার উপরে বিনা দোষে চাচ্চুর অপবাদগুলো যেন ইরু সহ‍্য করতে পারেনি।সব মিলিয়ে ও যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলো।পুরো ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো।দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর ও অনেকটা স্বাভাবিক হয়।নিজে সাভাবিক হলেও এই সব এর চক্করে ওর জীবন থেকে পড়াশুনার এক বছর চলে যায়।আব্বু ঢাকায় চাকরি করার সুবাদে ইরু ঠিক হওয়ার কিছুদিন পর সবাই ঢাকা শিফট করি।আমি ভাইয়ার সাথে নানান ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা।ভাইয়ার কাছে শুনেছি সেও নাকি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি।

ইশফা এর পরের সব ঘটনা বলে চাপা নিশ্বাস ফেলে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।

(এর পরের কাহিনী তো সবাই জানেন তাই আর বললাম না😑)

সান ইশফার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…….

—সব তো বুঝলাম।কিন্তু দ্বিতীয় বিয়েটা কিভাবে হল?আই মিন কবে?

ইশফা সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আপনি যেই কারনে জেলাসির ঠেলায় আমার বিয়ে করেছেন ভাইয়াও ঠিক একই কারনে বিয়ে করেছে।

সান অবাক হয়ে বলল……

—মানে?

—মানে হল,সেদিন পার্কে যখন ইরু আমার ছোট মামাতো ভাই এর প্রপোজ একসেপ্ট করেছিলো সেটা কে যেন ভিডিও করে ভাইয়ার কাছে দিয়েছে।সাথে তো আপনার স্পেশাল সিন।সেটা দেখেই ভাইয়ার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।ভাইয়া ইরুকে ভিডিও দেখিয়ে সোজা ভাবে সব জিগ‍্যেস করলে সে ত‍্যাড়া ভাবে উওর দেয়।ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ড এটা সেটা নানান কথা ভাইয়াকে শুনায়।তাতেই যেন ভাইয়ার মাথা আরো গরম হয়ে যায়।জানেনই তো ঠান্ডা মানুষ রাগলে সেটা কত ভয়ংকর হয়।ভাইয়া সেদিন রেগে ইরুকে থাপ্পড় মেরে সোজা জোর করে কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে করে।আমাদের বিয়ের পর ভাইয়া একদিন আব্বুর সাথে দেখা করে আব্বুকে সব বলে আব্বুর কাছে ক্ষমা চায়।আর সেদিনই আব্বুর কাছে জানতে পারে ভাইয়া আর ইরুর বিয়ে ছোটবেলায় হয়েছিল।যেটা শুধু দাদাজান,চাচ্চু আর আব্বু জানে।আর কেউ জানে না।

সব শুনে সান মাথায় হাত দিয়ে বলল……

—বাপরে….।পার্কের ঐ এক কাহিনীর থেকে কত কি হয়ে গেছে।ভালো হলো ঐ ঘটনার রেশ ধরে ভাইয়া ইরুকে পেয়েছে। যদিও তদের বিয়েটা আগেই হয়েছিলো। আর আমি তোমাকে।সব সেট।মাঝখান থেকে আমার শালি সাহেবা,ছোট্ট বোনটা দুজনের হাতে চড় খেলো।(আফসোসের সুরে)

সান এর কথা শুনে ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সান বিপদ সংকেত দেখতে পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে সেখান থেকে কেটে পরল।

বর্তমানঃ
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_49

(নিচের লিখাগুলো পড়ার অনুরোধ রইল)

সোফায় বসে এক ধ‍্যানে ল‍্যাপটবে নিজের কাজ করছে সান।চেহারায় ফুটে উঠেছে তার ক্লান্তির ছাপ।সান কাজে এতোটাই ডুবে ছিলো যে কখন যে মিঃশিকদার তার সামনে এসে দাড়িয়েছে তা সে বলতেই পারে না।

—কালকে কি অফিসে কোন মিটিং আছে?

হঠাৎ কারো কথার আওয়াজ শুনে সান ল‍্যাপটবের থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখে মিঃশিকদার দাড়িয়ে আছে।সান মিঃশিকদার কে দেখে অবাক হয়ে বলল…….

—পাপা এতো রাতে তুমি এখানে?কোন দরকার?কিছু লাগবে?

মিঃশিকদার সান এর পাশে বসে তার কাধে চাপর মেরে বলল……

—কুল বেটা কুল।ট্রাডি রুমে ছিলাম।বই পড়ার এতোই ডুবে ছিলাম যে কোন দিক দিয়ে এতো রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।রুমে যাওয়ার সময় তোমার রুমে লাইট অন দেখে ভাবলান দেখে আসি এতো রাতে কি করছো।দরজা খোলা থাকায় বিনা নকেই চলে এলাম।আর এখানে এসে বুঝতে পারলাল বেটা আমার কাজে ডুবে রয়েছে।তা এতো রাত জেগে কি এমন কাজ করছো?আমার জানা মতে কাল তো কোন মিটিং ও নেই।তাহলে রাত জেগে কাজ করে শরীর খারাপ করছো কেন?

সান তার পাপার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তার পাপা আগে কিছুটা গম্ভীর থাকলেও এখন সেই গম্ভীর ভাবটা একেবারেই নেই।হুট করেই যেন তার পাপা চেঞ্জ হয়ে গেল।সান ক্লান্ত মাখা হাসি দিয়ে বলল…….

—রাত জেগে কাজ করে অভ‍্যাস হয়ে গেছে পাপা।তাই এখন আর তেমন সমস‍্যা হয় না।আর যদি বেশি ক্লান্ত লাগে তাহলে এক কাপ কফি খেয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর করে আরামসে ঘুম দেই।

—এতো রাতে কফি?তুমি বাড়ির সার্ভেন্ট কে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে কফি করাও?

—সাভেন্ট কে ঘুম থেকে তুলতে যাবো কেন?আমি নিজেই কফি বানাতে পারি।

মিঃশিকদার অবাক হয়ে বলল……

—তুমি আর কফি?সেটা কি আদো সম্ভব?খাওয়া যাবে তো?

সান চোখ ছোট ছোট করে বলল……

—দেখো পাপা তুমি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছো?আমি কিন্তু গুড কফি বানাতে পারি ওকে?

মিঃশিকদার সোফায় আয়েশ করে বসে বলল…….

—তাহলে আজ টেষ্ট করেই দেখি তুমি কতোটা গুড কফি বানাতে পারো।

সান খুশি হয়ে বলল……

—ওকে।তুমি বস আমি ফটাফট কফি করে নিয়ে আসছি।

সান ল‍্যাপটব সাইডে রেখে কফি করতে চলে গেল।মিঃশিকদার ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলল……

—আমি পেরেছি মা আমার সন্তানদের সাথে বন্ধু সুলুভ আচারন করে তাদের মুডি পাপা থেকে ভালো পাপা হতে।এখন আর আমার ছেলে,মেয়েরা আমাকে কিছু বলতে ভয় পায় না।নির্ভয়ে সব বলতে পারে।সন্তান যতই বড় হোক না কেন পিতামাতার কাছে তারা ছোটই থাকে।আমিও ঠিক তোমার কাছে ছোটই আছি।তোমার প্রতি আমার কোন ক্ষোভ নেই মা।না আছে অভিমাম।বরং ভালোবাসাটা আরো কয়েক শত গুন বেড়ে গেছে।তুমি আরো আগে কেন আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমার ভুলটা দেখিয়ে দিলে না মা।যদি আগে আমার ভুলটা দেখিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আরো কিছু সুন্দর মুহূর্ত স্মৃতির পাতায় থেকে যেত।

ফ্লাসব‍্যাকঃ

সান যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে পরে ছিলো তখন মিঃশিকদার পুরোই ভেঙে পরেছিলো।ডাঃএর কাছে যখন শুনেছে,অতিরিক্ত রাগের কারনে সান এর এমন দশা হয়েছে তখন তার নিজেকে দুনিয়ার সব থেকে অসহায় ও খারাপ মানুষ মনে হয়েছে।যে কিনা নিজের সন্তানকে নিজের জিদ ধরে রাখতে মৃত‍্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।চেহারায় ফুটে উঠেছিল তার অনুতপ্তের ছাপ।মনে মনে নিজেকেই হাজার দোষারোপ করেছে সে।কেন সে তার ছেলের উপর জোর করে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইল।আজ যদি সে নিজের সিদ্ধান্ত তার ছেলের উপর চাপিয়ে দিতে না চাইত তাহলে না সান রাগ করতো আর নাই বা আজ সে হাসপাতালের বেডে পরে থাকতো।

সানকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরেও মিঃশিকদার সান এর সাথে তেমন কথা বলেনি।মিঃশিকদার মনে মনে অনুতপ্ত হলেও ছেলের সাথে ভালো করে দুটো কথা বলা হয়ে উঠেনি তার।হয়তো ভিতরে ইগো কাজ করছিলো নয়তো জরতা। মিঃশিকদার এর চেহারা দেখে তার মনের খবর আর কেউ বুঝতে না পারলেও তার মা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ছেলের মনের খবর।তার ছেলে যে নিজের ছেলের এই দশা দেখে অনুতপ্তে ভুগছে সেটা সে ঢের বুঝতে পেরেছে।

সান এর দাদু মিঃশিকদারকে একদিন এই নিয়ে সরাসরি বললেন,কিরে চেহারার এমন বেহাল দশা বানিয়ে রেখেছিস কেন?তোর তো খুশি হওয়ার কথা।তোর ছেলে এখন অসুস্থ তুই যা বলবি যা জোর করে ওর ঘাড়ে চাপাতে চাবি তাই ও বাধ‍্য হয়ে মেনে নিবে।তাহলে তোর মুখে আমি খুশির রেশ দেখতে পাচ্ছি না কেন?

মিঃশিকদার নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলল…..

—মা….!

দাদু তেজী গলায় বলল…..

—কিসের মা!সব সময় তোকে শিখিয়েছি আগে ফ‍্যামিলি পরে কাজ।কাজের পিছে ছুটটে ছুটটে যদি পরিবারকে সময় দিতে না পারিস তাহলে লাভ টা কোথায়?তুই তো এমন ছিলি না?হুট করে যে তোর সন্তানরা তোকে ভয় পায় সেটা কি তোর চোখে পরে?তোর বাবা তো সারাজীবন কাজ কাজ করে তোকে সময় দিতে পারেনি।সন্তানের কাছে একজন পিতার ভালো মুখে দুটো কথা,তাদের ইচ্ছাকে প্রধান‍্য দেওয়া যে সন্তানের কাছে কত মুল‍্যবান তা আর কেউ না বুঝলেও তো তুই বুঝিস।তাহলে তুই কেন নিজের ইচ্ছা ওদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছিস?আজ আমার দাদুভাই এর অবস্থার জন‍্য একমাত্র তুই দাই।আল্লাহ না করুক আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত পারতি নিজেকে কোন দিন ক্ষমা করতে?এখনো সময় আছে সন্তানদেরকে বোঝতে শিখ।তাদের ইচ্ছাকে মূল‍্যায়ন করতে শিখ।ভুল কোন আবদার করলে বুঝের উপর বল সেটা ভুল।মনে রাখিস সব কাজ রাগারাগি করে হয় না কিছু কাজ বুঝের মাধ‍্যমেও হয়।

মিঃশিকদার সেদিন মায়ের কথা চুপচাপ সব শুনে হজম করে নেয়।ঠান্ডা মাথায় সব ভেবে চিন্তে সান এর সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।

পাশাপাশি বসে রয়েছে মিঃশিকদার আর সান।রুমের মধ‍্যে থমথম পরিবেশ বিরাজ করছে।কারো মুখেই কথা নেই।সান মিঃশিকদারের এর সামনে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।মিঃশিকদার তার ছেলেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।কয়েক দিনের অসুস্থতায় মনে হচ্ছে তার হাসি-খুশি ছেলেটা কেমন যেন হয়ে গেছে।তাতেই যেন তার ভিতরটা আরো ভেঙে পরছে।নিরবতা ভেঙে মিঃশিকদার বলল…….

—তুমি এলিকে বিয়ে করতে চাও না কেন?

সান সরাসরি উওর দিল…..

—ওকে আমার পছন্দ না।

—তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?

এবারো সান এর সোজা উওর….

—যদি বলি আছে।মেনে নিবে তাকে?

মিঃশিকদার সান এর মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…..

—তোমার কাছে আমি আগে না সে?

সান আগের মতই বসে থেকে জবাব দিল…..

—জ্ঞানী মানুষের মুখে এসব কথা সোভা পায় না।যার যেখানে স্থান তারা সেই স্থানেই আছে।

—সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।আমার স্থানটা কোথায়?

—মাথার উপরে।কথাটা বলে সান মিঃশিকদার এর দিকে তাকিয়ে বলল…..

—তোমার স্থান আমার মাথার উপরে।বৃক্ষ যেমন মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে।যা উচ্চাতা কখনো মাপা হয় না।তুমিও আমার কাছে বৃক্ষের মত।শুধু এতোটুকু জানি তোমার স্থান মাথার উপরে।কতটুকু ভালোবাসি কতটা জুড়ে আছো,না কখনো বের করতে গিয়েছি আর না কখনো যাব।শুধু এতোটুকুই চাই এই ছায়া যেন সব সময় আল্লাহ্ আমার সাথে রাখে।

মিঃশিকদার সান এর কথা শুনে মনে মনে খুশি হয়েও গম্ভীর মুখে বলল……

—আর সে?

—সে আমার কতটা জুড়ে আছে সেটা আমি নিজেও জানি না।

কথাটা সান মনে মনে বললেও নিজের পাপার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে ফেলল।

মিঃশিকদার সান এর থেকে কোন উওর না পেয়ে মুচকি হেসে উঠে চলে যেতে নিলে সান বলল……

—তোমার কাছে কে আগে পাপা?বিজনেস পার্টনার না ছেলে?

মিঃশিকদার সান এর কথা শুনে থেমে গেলো।সান এর দিকে তাকিয়ে বলল…..

—আমি জানি আমার ছেলে বুদ্ধিমান।আমি চাই সে তার প্রশ্নের জবাব নিজেই খুজে বের করুক।

সান দাড়িয়ে বলল…….

—এলি মেয়েটা মোটেও ভালো না।অনেকটাই গায়ে পরা সভাবের।হেনার ফ্রেন্ড হবার সুবাদে আমাদের সাথে উঠা বসা হত।মেয়েটাকে পছন্দ না হলেও হেনার জন‍্য চুপ করে থাকতাম।কিন্তু পরে জানতে পারি হেনাকে ও ব‍্যাবহার করেছে শুধু মাত্র আমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন‍্য।আমি জানি পাপা তুমি সব সময় আমার জন‍্য বেষ্টটাই খুজবে।কিন্তু তোমার এবারের খোজে একটু না অনেক ক্রটি পরে গেছে।

মিঃশিকদার ছেলের কথার প্রতি উওরে কিছু সময় চুপ থেকে বলল……

—এটা আমার ক্রটি না কি ভুল সেটা আমি জানি না।সেদিন তোমার উপর উল্টো রিয়েক্ট করে নিজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেবার জন‍্য সরি।আসলে সেদিন মিঃশেখ অফিসে এসে বিজনেস মিটিং শেষ করার পর এমন ভাবে আমাকে ফোস করেছে যে আমি তার কথার উপর কোন কথা বলতেই পারিনি।ভুলটা আমার আমার তোমার দিকটা দেখা আমার উচিত ছিলো।তোমার মতামত ছাড়া আমার কথা বলা উচিত হয়নি।মিঃশিকদার একটু চুপ করে থেকে আবার বলল………

—থাক বাদ দাও এসব।আমি সবটা দেখে নিব।টেক কেয়ার।

মিঃশিকদার কথাটা বলে চলে যেতে নিলেই সান পিছন থেকে বলে উঠল……

—সরি পাপা।সরি ফর এভরিথিং

মিঃশিকদার সান এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।
#মনের_পিঞ্জরে
#Ariyana_Nur
#Part_50(#সারপ্রাইজ)

কাছের মানুষটার ছোট থেকে ছোট কিছু হলেই নিজেকে কেমন অসহায় অসহায় মনে হয়।সাথে মনে এসে বাসা বাধে তাকে হাড়ানোর রাজ‍্যের ভয়।

ইশফাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রয়েছে সান।ভয়ে সান এর শরীর থরথর করে কাপছে।সান এতোটাই ভয় পেয়ে রয়েছে যে,ইশফা যে সেন্সলেস হয়ে গেছে সেদিকে তার খবর নেই।এদিকে যে ইশফার হাত থেকে রক্ত পরছে সেটাও সে বেমালুম হয়ে গেছে।

কিছুক্ষন আগে ইশফা,তুশি ক্লাশ শেষ করে লাইব্রেরী থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বই নিয়ে বের হবার পর একজন ছেলে ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে ইশফাকে বলল…..

—ভাবি ভাই আপনাকে সাছে যেতে বলেছে।

ইশফা ছেলেটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল……

—কোন ভাই?

ছেলেটি কিছুটা আমতা আমতা করে বলল……

—কি যে বলেন না ভাবি।সান ভাই ছাড়া আপনাকে কে ডেকে পাঠাবে।

ইশফা কপালে ভাজ ফেলে বলল……

—কোন দরকার?

ছেলেটি বোকা হাসি দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো।ইশফা পুনরায় কিছু জিগ‍্যেস করার আগেই তুমি বলল……

—ইফু বোকার মত প্রশ্ন কেন করছিস?ভাইয়া যখন ডাকছে তাহলে নিশ্চই কোন দরকার আছে।তুশি কিছুটা ফিসফিস করে বলল…..

—হয়তো কোন সারপ্রাইজ দিবে।

ইশফা বিরক্ত হয়ে বলল…..

—রাখ তোর সারপ্রাইজ।এখন আবার কিসের জন‍্য ডাকছে কে জানে।এমনিই দেড়ি হয়ে গেছে এখন আবার….।চল গিয়ে দেখে আসি।

তুশিঃতুই যা।এমনিতেও আজ এক্সট্রা ক্লাস করতে গিয়ে দেড়ি হয়ে গেছে।বাসায় ফিরতে অনেকটা দেড়ি হয়ে যাবে।তাছাড়া তোকে ডাকছে আমাকে না।আমার ভাই কাবাবে হাড্ডি হবার ইচ্ছা নেই।

ইশফা তুশির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তুশি করুন কন্ঠে বলল……

—বাসায় ফিরতে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে।প্লিজ তুই যা।

ইশফা তুশিকে জোর না দিয়ে বলল…..

—ওকে তুই বাসায় যা।আমি বরং দেখে আসি মহারাজ তার সন‍্যকে দিয়ে কেন খবর পাঠিয়েছে।

ইশফার কথা শুনে তুশি ইশফার কাধে চাপর মেরে বাই বলে দুজন দুদিকে চলে গেলো।

ক্লাশ টাইম অনেক আগে শেষ হওয়ার কারনে ভার্সিটি অনেকটাই ফাকা হয়ে গেছে।ইশফা আস্তে আস্তে ছাদে গিয়ে হাজির হয়ে পুরো ছাদে চোখ বুলিয়ে নিল।কোথাও কোন লোকজন নেই।ইশফা সান কে না দেখে বিরক্ত হয়ে ছাদ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।ইশফা উল্টোদিকে ঘুরতেই দেখে এলি ছাদের দরজার সামনে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে রয়েছে।

এলি এক পা দু’পা করে ইশফার দিকে বাড়াতে বাড়াতে বলল……

—সানকে এখানে না পেয়ে হতাশ হয়ে গেছো।একচুয়েলি তোমাকে সান এখানে ডেকে আনেনি আমি ডেকে এনেছি।

ইশফা কপালে ভাজ ফেলে বলল…..

—কেন ডেকেছেন?

এলি রাগি গলায় বলল…..

—অপমানের বদলা নিতে।কি ভেবেছো তুমি?আমি তোমাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিব?এতোদিন সুযোগ আর সময় কোনটাই ছিলো না।তাই তো শিকারীকে টোপে ফেলতে বাঘ হয়েও এতোদিন বিড়াল হয়ে বসে ছিলাম।আর তোমার ঐ হিরো ভেবেছে আমি তার ভয়ে চুপ করে বসে আছি।

ইশফা ভ্রু কুচকে বলল……

—গন্ডার নাকি আপনি?এতোদিন পর বদলা নেওয়ার কথা মনে পরল?

এলি ধমক দিয়ে বলল…….

—চুপ একদম চুপ।একটা কথা বলবি না।একটু পর যখন মরন যন্ত্রণায় কাতরাবী তখন বুঝতে পারবি আমি কে?
আজ দেখবো তোকে আমার হাত থেকে কে বাচায়।

এলি ইশফারর চারোপাশে গোলগোল করে ঘুরে কথাগুলো বলছিলো।কথা বলা শেষ হতেই ইশফা কিছু বোঝার আগেই এলি ইশফার কাধে ইনজেকশনের পুষ করে দেয়।

ইনজেকশন পুষ করার একটু পর ইশফার মাথা ঘুরতে লাগলো।চোখের মধ‍্যে রাজ‍্যের ঘুম এসে ভর করতে লাগলো।ইশফা ঢুলুঢুলু শরীর নিয়ে অনেক কষ্টে চোখ টেনে মেলে রেখে নিজেকে ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টা করছে।কিন্তু ইশফা কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।এলি ইশফার কাহিনী দেখে পৌচাশিক হাসি দিয়ে ব‍্যাগ থেকে একটা নাইফ বের করে সেটা ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বলল….

—ভাবছি এটা দিয়ে কি করবো।হাত কাটবো নাকি গলা।গলা কাটতে তো বড় ছুড়ি লাগবে এটা তো ছোট তাহলে কি হবে?(একটু ভেবে)ব‍্যাপার না আগে হাত কেটে দেখি হাত কাটে কিনা।হাত কাটতে পারলে গলা কাটা যাবে।

কথাটা বলেই এলি,ইশাফ হাত ধরে হাতের উপর নাইফ দিয়ে একটা টান দিল।সাথে সাথেই হাত থেকে রক্ত বের হতে লাগলো।ইশফা ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠল।কিন্তু প্রতিবাদ করার মত কোন শক্তি বা বল কিছুই সে পেলো না।

এলি আবার পৌচাশিক হাসি দিয়ে বলল……

—নাইফে তো বেশ ধার আছে।এটা দিয়ে তো দেখছি গলাও কাটা যাবে।

এলি,ইশফার দিকে নাইফ নিয়ে দু’কদম বাড়িয়ে থেমে গিয়ে বলল……

—গলা কাটলে তো খুব সহজে মরে যাবি।এতো সহজ মৃত্যু তো আমি তোকে দিচ্ছি না।তোকে আমি আধ মরা করে রেখে দিব।ছাদ থেকে ফেলে দিলে কেমন হয়?মরলে একে বারে উপরে না মরলে চার পাচ মাসেও বিছানা থেকে উঠতে পারবি না।এটাই বেষ্ট হবে।কি বলিস তুই?

এলি,ইশফাকে টেনে ছাদের শেষ সিমানায় দিকে নিয়ে যাচ্ছে।ইশফাও চেষ্টা করেও এলিকে বাধা দিতে পারছে না।ছাদের শেষ সিমানার পৌছানোর আগেই কেউ একজন পিছন থেকে এলির হাত ধরে এলিকে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে এলির গালে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় লাগালো।থাপ্পড়টা এতো জোরেই দিয়েছে যে,এলি নিজের বেলেন্স না রাখতে পেরে পরে গেলো।ইশফা নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে সামনের মানুষটাকে দেখে অস্পষ্ট গলায় বলল…..

—সূ-র্য

আর কিছু বলার আগে ইশফা পরে যেতে নিলেই সান ইশফাকে ধরে ফেলল।

এলি সানকে এখানে দেকে রিতিমত ঘামতে লাগলো।এলি খবর পেয়েছে আজ সান অনেক আগেই ভার্সিটি থেকে চলে গেছে।এদিকে ইশফার এক্সট্রা ক্লাশ করতে দেখে সুযোগ বুঝে এতোদিনের জমানো ক্ষোভ উসুল করার জন‍্য মাথায় যা আসে তাতেই বুদ্ধি পাকিয়ে ইশফাকে এখানে ডেকে আনে।সান ভার্সিটি থেকে আগেই চলে গেছে সেটা ইশফা না জানার কারনে ইশফাও এলির ফাদে পা দেয়।এলি লক্ষন খারাপ দেখে পালানোর চেষ্টা করে দরজার সামনে যেতেই তার গালে আরেকটা থাপ্পড় পরে।থাপ্পড় টা আর কেউ না তুশি এলির গালে লাগায়।তুশি এলির চুলের মুঠি ধরে বলে……

—তোর মত বেহায়া,বেশরম,র্নিলজ্জ মেয়ে আমি জীবনেও দুইটা দেখি নাই।লজ্জা নেই তোর?এতো অপমান করার পরেও বেহায়ার মত কোন মুখে তোর এই চেহারা নিয়া তুই ইফুর সামনে আসোস।ইফুর কিছু হলে দেখিস তুই তোরে আমি কি করি।

এলি ব‍্যাথায় কুকরিয়ে উঠে তুশির হাত থেকে নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তুশি এলির চুল হাতের সাথে পেচিয়ে টেনে ধরল যাতে পালাতে না পারে।

💦💦💦💦💦💦

হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে ইশফা।মাথাটা তার খুব ভাড়ি ভাড়ি লাগছে।ইশফা পিটপিট করে চোখ খুলে আশে পাশে তাকাতেই পাশে সানকে দেখতে পেল।ইশফাকে তাকাতে দেখে সান উত্তেজিত হয়ে বলল…..

—তুমি ঠিক আছো?এখন কেমন লাগছে?হাতে পেইন হচ্ছে?ডাঃ কে ডাকবো?

ইশফা সান এর কথা শুনে উঠে বসার চেষ্টা করে বলল…….

—কাউকে ডাকতে হবে না।আমি ঠিক আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নেই।চেহারা এমন ফোলা ফোলা দেখা যাচ্ছে কেন?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফাকে উঠে বসতে সাহায্য করল।

এমন সময় হেনা,তুশি একসাথে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করল।হেনা ফোড়ন কেটে বলল……

—মেয়ে মানুষের মত কান্না করলে চেহারা ফোলা থাকবো না তো কি হবে।তুমি তো কামাল করে দিয়েছো ইশফা।পাথরকে পযর্ন্ত মমে পরিনত করে দিয়েছো।জানো ছোট থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি।কিন্তু কখনো একে আমি কান্না করতে দেখিনি।আজ সেই পাথরকে আমি কান্না করেতে দেখেছি শুধু মাত্র তোমার জন‍্য।

সান হেনাকে ধমক দিয়ে বলল……

—হেনা চুপ করবি তুই।

হেনা উল্টো সানকে ধমক দিয়ে বলল……

—তুই চুপ থাক।বেশি কথা বলবি ইশফাকে দিয়ে মার খাওয়াবো।জানো ইশফা সান তোমাকে ঐ অবস্থায় দেখে কি পাগলোটাই না করেছে।তোমাকে হাসপাতালে আনার সময় গাড়িতে সে কি কান্না।চারঘন্টা পর তুমি চোখ খুলেছো এই চার ঘন্টায় নার্স,ডাঃ দের কান ঝালাপালা করে দিয়েছে তোমার কথা জিগ‍্যেস করতে করতে।এলিকে তো…..

হেনা আর কিছু বলার আগে সান হেনার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই হেনা শুকনো ঢোক গিলে বলল…….

—আমি আশি ইশফা।টেক কেয়ার।

কথাটা বলেই হেনা তড়িঘড়ি তুশিকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।

ইশফা সান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।সান কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে রয়েছে।ইশফা কিছুটা রাগি গলায় বলল……

—এসবের মানে কি?আপনাকে দিয়ে এটা আশা করা যায়নি।এইটুকুতেই যদি এমন করেন তাহলে বড় কিছু হয়ে গেলে কি করতেন?যদি বড় কিছু হয়ে যেত তখন?

সান ইশফার কথার উওর না দিয়ে ইশফাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইল।সানের এমন কাজে ইশফা স্টেচু হয়ে গেলো।কাধে ভেজা ভেজা অনুভব হতেই ইশফা সানকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল…..

—আরে কি হয়েছে আপনার?আপনি কান্না করছেন কেন?

সান গলা ঝড়ানো গলায় বলল…….

—বড্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।লাইভে ফাষ্ট আমি এমন ভয় পেয়েছি।তোমার কিছু হলে আমি…..।তুমি জানোনা তুশির মুখে যখন শুনেছি কেউ আমার নাম করে তোমাকে ছাদে ডেকে পাঠিয়েছে তখন যে কিভাবে আমি সেখানে পৌছেছি আমি নিজেও জানি না।এতো বোকা কেন তুমি?কেউ বলল,আমি তোমাকে ডেকেছি আর তুমি চলে গেলে?

—এখন আমি বোকা।হুট হাট কে নিজের চেলাদেরকে দিয়ে খবর পাঠায় শুনি।

সান কিছু না বলে চুপ করে রইল।

💦💦💦💦💦💦

দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো বেশ কিছু দিন।সবার দিন কাল ভালোই চলছে।ইশরা এখন অনেকটাই সুস্থ।কিন্তু হুট হাট তার পাগলামো শুরু হয়ে যায়।ইশরার সকল পাগলামো জিদানকে ঘিরেই শুরু হয় এবং জিদানকে ঘিরেই শেষ।এদিকে জিদান,ইশরার সকল পাগলামো হাসিমুখে মেনে নেয়।কখনো কোন বিরক্ত প্রকাশ করে না।

জিদান কলেজ শেষে ইশরার কথা মত তার জন‍্য শপিং করে বাসায় ফিরতে জিদানের অনেকটা রাত হয়ে যায়।নিজের কাছে এক্সট্রা চাবি থাকায় চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।জিদান নিজের রুমে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই পুরো থ’হয়ে গেলো।কেননা পুরো রুম সুন্দর করে প্রদিপ,মোম দিয়ে সাজানো।রুমের একপাশে একটা টেবিল সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো রয়েছে।টেবিলে রয়েছে ছোট একটা হার্ট সেপের কেক।জিদান পুরো রুমে চোখ বুলাতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো হুট করে এসব আবার কে করল।জিদানের ভাবনার মাঝেই ইশরা জিদানের সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে জিদানের দিকে একটি লাল গোলাপ ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলল…….

—শুভ বিবাহবার্ষিকী।তুমি কি আবারো আমায় বিয়ে করবে জিদ ভাইয়া।সারা জীবনের জন‍্য আমার পাগলামো সহ‍্য করার জন‍্য তোমার পাগলীটাকে আবারো বিয়ে করবে?

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here