মন নিয়ে কাছাকাছি পর্ব – ২১+২২+২৩

#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
২১
🌸

মুবিন ভাইয়ের গানের গলা এত সুন্দর হবে কেউ ভাবতেই পারেনি। মুবিন ভাইয়ের গান এই প্রথম শুনলো ওরা। শুনেই মুবিন ভাইয়ের ফ্যান হয়ে গেল। মীরা হাত তালি দিতে দিতে বলল,

“মুবিন ভাই আপনি কী সুন্দর গান! আমি তো জানতামই না আপনি গান গাইতে পারেন।”

“হ্যাঁ মুবিন ভাই আপনি সত্যিই অনেক ভালো গেয়েছেন। আমাদের স্কুলের প্রোগ্রামে একটা সিঙ্গার এসেছিল। নিঃসন্দেহে আপনি ওই গায়কের থেকেও বেশি ভালো গাইতে পারেন।”

মাহিমার মুখে নিজের সম্পর্কে প্রশংসা টুকুই মুবিনের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার ছিল। রাত অনেক হয়ে গেছে মীরার ঘুম পেয়ে গেল। সে আবির ভাইকে বাড়ি যাওয়ার কথা বলল।

“এখনই বাড়ি চলে যাবি! কী বলিস, মাত্র এগারোটা বাজে।”

“বাজুক। আমার ঘুম পেয়েছে। আমি গিয়ে ইভা আপুর রুমে শুয়ে পড়ছি। তোমরা যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে নিয়ে যেয়ো।”

“আচ্ছা দাঁড়া। ঘুমিয়ে পড়িস না। তুই একবার ঘুমিয়ে পড়লে তোকে জাগানো মানুষের পক্ষে অসাধ্য কাজ।”

“তাহলে চলো বাড়ি চলে যাই। রুশমি তো সেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“ঠিক আছে দাঁড়া ইভান ভাইকে কল দিয়ে বলি আমাদের এসে নিয়ে যেতে।”

“তা-ই বলো।”

মীরা মুখে হাত দিয়ে হাই তুলছে। জায়িন আবিরের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল,

“এখন কি চলে যাবি?”

“হুম। আমাদের ঘুম কুমারীর ঘুম পেয়ে গেছে। এখন যতক্ষণ বাড়ি না যাব ও শান্তি দিবে না।”

“ইভার রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়।”

“পরে একে নিয়ে যাবে কে? একবার ঘুমিয়ে পড়লে কারো বাপের সাধ্য নেই ওকে জাগাবে।”

আবির ইভানকে কল করলো। ইভান ওদেরকে নিতেই আসছিল। পথে আছে ও। ইভান আসতে আসতে মীরা ঘুমে কাঁদা। মাহিমার কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইভান ইভার সাথে আলাদা কথা বলার মতো সময় সুযোগ কোনোটাই পেলো না। রুমশি এখনও ঘুমিয়ে আছে। ইভা ওকে কোলে নিয়ে এসেছে। ইভা বলল,

“আজ ওরা থেকে যাক। রুমশি তো ঘুমিয়েই আছে। মীরাও প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছে। এত রাতে ওদের যেতে হবে না।”

“বাবা মা পাঠিয়ে দিয়েছে। বিচ্ছু গুলাকে একা ছেড়ে স্বস্তি পাচ্ছে না।”

ইভান ইভার কাছ থেকে রুশমিকে নেওয়ার সময় রুমশি নড়ে উঠল।

“ভাইয়ার কাছে এসো রুমশি। বাড়ি যাবে না?”

ইভান এত যত্ন করে রুশমিকে কোলে নিয়েছে, এত আদর করে কথা বলছে দেখে ইভা হেসে ফেলল। ওকে হাসতে দেখে ইভান বলল,

“হাসছেন কেন ম্যাডাম?”

“দেখছি। যে লোক ভাইবোনদের এত খেয়াল রাখে সে বউয়ের কতটা খেয়াল রাখবে।”

নায়ক নায়িকার চোখে চোখ রেখে লম্বা সময় কাটিয়ে দেওয়ার সিন তৈরি হওয়ার আগেই আবির মাঝখানে এসে পড়লো।

“দুঃখিত, কিন্তু এখন রোমান্স করার সময় নেই। আণ্ডাবাচ্চা গুলো যতদিন বড় না হচ্ছে ততদিন রোমান্সে বাধা আসবেই।”

গাড়িতেই মীরা ঘুমিয়ে পড়েছে। সে কীভাবে রুমে এসেছে এটাও বলতে পারবে না। মীরা আজ অনলাইনে ঢুকলে দেখতে পেতো তার জন্য কোন ধাক্কাটা অপেক্ষা করছে।

🌸

ঘুম ভেঙে আড়মোড়া ভেঙে চোখ না খুলেই ফোন হাতড়াতে লাগলো। খোঁজা খুঁজি করেও হাতের কাছে ফোন না পেয়ে উঠে বসলো। চোখ খুলে নিজেকে তার রুমে আবিস্কার করে ভাবতে লাগল, কাল রাতে ইভা আপুদের বাড়িতে গিয়েছিল। আসার সময় অনেক ঘুম পেয়েছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। মীরা ফোন হাতে নিয়ে অনলাইনে ঢুকলো। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই চমকটা তার সামনে। জায়িন ভাই মেসেজ সিন করেছে। মীরা চোখ কচলে ঘুম ছাড়িয়ে নিল। জায়িন ভাই শুধু মেসেজ সিন করেছে। কোন রিপ্লাই দেয়নি। যাক বাবা শান্তি। জায়িন ভাই তাকে চিনতে পারেনি। জায়িন ভাই তার ফেইক আইডি চিনতে পারেনি ভেবে মীরা খুশি ছিল। কিন্তু তার এই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। কালকের রাতে জায়িন ভাই তাকে কিছু বলেছিল। হঠাৎ জায়িন ভাই তাকে এসব কথা কেন বলছে তখন বুঝে না এলেও এখন ঠিক বুঝতে পারছে। জায়িন ভাই এই মেসেজ দেখেছে। এবং তাকে চিনেও ফেলেছে। তাই তো ওই কথা বলেছে। বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বলেছে। মীরা ফোন ছুড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠে চুল টেনে ধরল।

” না, না, না। এ হতে পারে না। জায়িন ভাই আমাকে চিনে ফেলেছে। হায় আল্লাহ এই মুখ আমি উনাকে কীভাবে দেখাব?”

মীরা শুয়ে হাতপা ছুঁড়তে ছুঁড়তে নাকিকান্না কাঁদছে। বালিশ জড়িয়ে ডান কাত হয়ে শুয়ে বলল,

“সব দোষ কইতরির। ও-ই এই মেসেজ লিখেছে। আমি কিছু করিনি। আমার কোন দোষ নেই।”

এবার বাম কাত হয়ে বলল,

“কিন্তু জায়িন ভাই তো জানবে না এই মেসেজ কে লিখেছে। তিনি তো ভাববেন আমিই লিখেছি। আমার ফোন, আমার আইডি। মাহিমা লিখেছে এটা তো বললেও বিশ্বাস করবেন না।”

মীরা মুখে বালিশ চেপে ধরে উপুড় হয়ে শুনে পা ছুড়তে লাগল।

“কী লজ্জা, কী লজ্জা! এজন্যই উনি কেমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন। উনি ভাবছেন, আমি উনার উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। আল্লাহ এত লজ্জা আমি কই রাখব? মাহির বাচ্চা তোকে পানি ছাড়া গিলে ফেলব আমি। সব তোর জন্য হয়েছে।”

🌸

লজ্জায় মীরা আজ মুবিন ভাইয়ের কাছে পড়তে যেতে পারলো না। ওবাড়িতে গেলেই তো জায়িন ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। কাল রাতে এসেছেন উনি। আজই তো আর চলে যাবেন না। প্রাইভেটে না যাবার আসল কারণও বলার মতো না। তাই পেট ব্যথার বাহানা দিয়ে বিকেলে রুমে শুয়ে রইলো। ওর পড়া চুরি করার অজুহাত কমবেশি সবাই জানে এখন। চাচী এসে দেখে গেল সত্যিই পেট ব্যথা কি-না। মীরা চাচীর সামনে পেট চেপে ধরে বিছানায় কতক্ষণ গড়াগড়ি খেয়ে চাচীকে বিশ্বাস করাতে পেরেছে। ছোট চাচী যাওয়ার একটু পরেই তনি রুমে এলো। চোখ ছোট ছোট করে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“কিসের পেট ব্যথা রে তোর?”

“পেট ব্যথা কিসের থাকে?”

“কত পেট ব্যথাই তো থাকে। তোর কোনটা?”

“তুমি বুঝবে না।”

“আমি বুঝবো না! ঠিক আছে। ডাক্তার তো বুঝবে। চল ডাক্তারের কাছে যাব।”

মীরা মনে মনে ভয় পেলো। তার তো কোনো পেট ব্যথা নেই। মিথ্যা কথা বলছে সে। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার নিশ্চয় বুঝে যাবে। তাই ঘটনাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলল,

“এই পেট ব্যথা ওই পেট ব্যথা না। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। দুই তিনদিন পর আপনাআপনিই চলে যাবে।”

তনি তীক্ষ্ণ চোখে মীরাকে দেখছে। মীরা মাহিমার মতো সুন্দর করে মিথ্যা বলতে পারে না। তবুও আজ চেষ্টার কমতি রাখছে না। মীরার শত চেষ্টার পরেও তনি ওর মিথ্যা ধরে ফেলল।

“এক মাসের মধ্যে এই পেট ব্যথা কয়বার হয় তোর? এক সপ্তাহ আগেই না এই পেট ব্যথা হয়ে গেল। কাকে টুপি পরাচ্ছিস মীরা? তোর ওই বয়স আমিও পার করে এসেছি। প্রাইভেটে না যাবার আসল কারণ বল। নাহলে কিন্তু আমি এক্ষুনি গিয়ে চাচীকে বলে দিব তুই যে মিথ্যা বলছিস।”

তনি আপু এত চালাক কেন? আল্লাহ ওর মাথায় একটু কম বুদ্ধি দিলে কী হতো! তনি এখনও সত্য কথাটা শোনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ মীরা না বলবে দাঁড়িয়েই থাকবে। বাধ্য হয়ে মীরা তনিকে সব বলল। এটাও বলল,

“বিশ্বাস করো তনি আপু, সব দোষ মাহির। আমি কিন্তু ওই মেসেজ লিখিনি। আমি বাংলায় মেসেজ করি না এটা তো তুমি জানোই। মাহির মাথায়ই এইসব শয়তানি বুদ্ধি এসেছিল। আর শয়তানি করতে যেয়ে জায়িন ভাইকে এসব উল্টাপাল্টা কথা লিখেছে। কিন্তু জায়িন ভাই ধরে ফেলেছে। অনেক চালাক কি-না! উনি ভাবছে ওসব আমি লিখেছি। তাই লজ্জায় উনার সামনে পড়তে চাচ্ছি না।”

মীরা কাচুমাচু মুখ করে তনির দিকে তাকাল। ভেবেছিল তনি আপু এসবের জন্য অনেক রাগ করবে। বকা দিবে। কিন্তু তনি তাকে অবাক করে দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে মীরার গায়ে ঠাস করে চড়ও মারলো। মীরা ব্যথা পেলেও তনি আপু এখনও হেসে যাচ্ছে।

“ওরে মীরা! তোরা না থাকলে এত বিনোদন কোত্থেকে পেতাম রে! সার্কাসের জোকারও তোদের কাছে হার মেনে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি যাবে। কীভাবে পারিস তোরা? এসব বুদ্ধি কই থেকে আসে?”

তনি আপুকে এভাবে হাসতে দেখেও মীরার ভালো লাগছে না। এরকম ভাবে হাসার মতো কী হলো! শুধু শুধু হাসে।

“একটু আধটু দুষ্টুমি করেছিস ভালো কথা। তাই বলে এখন ধরা খেয়ে চোরের মতো ঘরে বসে থাকবি? ওবাড়িতে আর যাবি না?”

মীরা মুখ কালো করে বলল,

“যাব। জায়িন ভাই চলে গেলেই যাব।”

“ধর জায়িন যদি আর না যায়? একেবারের জন্য বাড়ি চলে আসে।”

“তাহলে আর যাব না।”

তনির হাসি কিছুটা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি থামেনি।

“শোন গাধী, তুই যেমন ভাবছিস জায়িন ওরকম ছেলেই না। ও মোটেও রাগী না। কথা কম বলে এটা জন্মগত অভ্যাস। তোরা যে দুষ্টুমি করেছিস এটা জায়িনও বুঝেছে। তাই তো তোকে বকেনি। বকেছে বল?”

“না।”

“জায়িন যদি তোকে কিছু বলেও থাকে তাহলে নিশ্চয় বলেছে এটা তোর পড়াশোনা করার বয়স। বাজে কাজে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে।”

মীরা বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তনির দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি কীভাবে জানো?”

“জানব না? জায়িন, আমি, আবির প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজেও বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। কম কথা বলতো দেখে আমরা দু’জন ছাড়া আর কারো সাথেই মিশতো না। আবির তো হাইস্কুল থেকেই মেয়েদের পেছনে ঘোরা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু জায়িনকে জোর করেও কোন মেয়ের সাথে কথা বলাতে পারিনি। ও পারলে মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে থাকতো। তোদের দুই তিনটা দুষ্টুমি মেসেজ কেন, তুই গিয়ে সরাসরি প্রপোজ করলেও জায়িন তোকে নিয়ে কোনোদিন ওরকম কিছু ভাববে না। আর জায়িন ভালো করেই জানে তুই আমার আর আবিরের বোন। বন্ধুর বোনকে নিজের বোন ছাড়া অন্য কোন নজরেই দেখবে না। শুধু শুধু ভয় না পেয়ে পড়তে যা।”

“হুম।”

“একটা কথা, তোরা ও বেচারাকে জ্বালাতন করতে গেলি কেন? ফোন পেয়ে সবার সাথেই কি এরকম করছিস! তোদের আইডি চেনে না কেউ?”

মীরা গাল ফুলিয়ে সব দোষ মাহিমার কাঁধে দিয়ে বলল,

“আমার কোন দোষ নেই। এসব আইডিয়া কইতরির মাথা থেকে এসেছে। ফেইক আইডি খুলে সবাইকে এভাবে জ্বালাচ্ছে।”

“তোমার দোষ নেই! আহা তুমি কত্ত ইনোসেন্ট বাচ্চা! আমি তোদের দুইটাকে চিনি না মনে করেছিস! একজন শয়তানের মা হলে আরেকজন খালা। কেউ কারো থেকে কম যাও না। এখন সাধু সাজতে হবে না।”

চলবে#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
২২
🌸

বিয়ের যেহেতু আর বেশিদিন বাকি নেই তাই এখনই শপিং সেরে ফেলা উচিত। বড় ফুপুও চলে এসেছে। মীরা মাহিমা আজই শপিংয়ে যাবার জন্য বায়না ধরেছে। ওরা শপিংয়ে যাচ্ছে শুনে বড়মা বলল,

“তোরা যাচ্ছিস তাহলে ইভাকেও সাথে নিয়ে যা। বিয়ের শাড়ি ও নিজেই পছন্দ করে নিবে। কেনাকাটার ঝামেলা এক বারেই চুকিয়ে ফেল।”

এটা তো আরও ভালো প্রস্তাব। বিয়ের শাড়ি ইভার আপুর সাথে ওরা সবাই পছন্দ করে কিনবে। বড়মা ইভাদের বাড়িতে কল করে জানিয়ে দিল, ছেলেমেয়েরা আজ কেনাকাটা করতে যাচ্ছে। ইভাও যেন ওদের সাথে যায়।
বাড়িতে প্রথম বিয়ে। সবাই প্রচুর কেনাকাটা করবে। তাই বেরুবার জন্য সকাল সকাল সবাই রেডি হয়ে গেল। নইলে পরে ফিরতে রাত হবে।
সবাই বেরিয়ে গেলেও মীরা এখনও আসছে না দেখে আবির ডাকলো।

“মীরাবাঈ তোমাকে ফেলেই কিন্তু চলে যাব। তখন ঘরে বসে অনলাইনে শপিং কোরো।”

“আসছি আবির ভাই। এক মিনিট।”

মীরা কানের দুল পরতে পরতে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। ওদের কাছে এসে কানের দুল পরা শেষ করে জিজ্ঞেস করল,

“মাহি আসেনি?”

“অলরেডি শপিংমলে গিয়ে বসে আছে। তুই আরও দেরি কর।”

“সরি সরি। তাড়াতাড়ি চলো।”

গাড়িতে বসে প্রিয়া ইভানকে জিজ্ঞেস করল,

“ভাবীকে ওদের বাড়ি থেকে পিক করবে না ইভান ভাই?”

“তার দরকার হবে না। ও মাহির সাথে অনেক আগেই চলে গেছে।”

মাহি ইভা আপুর সাথে গেছে শুনে মীরা মুখ কালো করে বলল,

“কইতরিটা অনেক খারাপ। স্বার্থপর একটা।”

তনি মীরাকে ক্ষেপাতে বলল,

“দেখ এটাই বোন+বান্ধবী! তোকে রেখে একা একা চলে গেল। আমার বান্ধবী জীবনেও আমাকে রেখে যেত না।”

মীরাও তনি আপুর উসকানি না বুঝে রেগে বলল,

“ওটা আমার বান্ধবী না। আমার শত্রু।”

মীরার কথা শুনে সবাই হাসছে। এদিকে মীরার রাগ আরও বাড়ছে। আবির তনির সাথে খোঁচাখুঁচি করছে। প্রিয়া জানালা দিয়ে মাথা বের করে চোখ বুঝে রেখেছে। বাতাসে ওর চুল উড়ছে। ইভান স্বপ্নে ডুবে আছে। নিজের বিয়ের শপিংয়ে যাচ্ছে ভেবে কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে।
দশ মিনিটের মধ্যে ওরা শপিংমলে চলে এলো। সবাই হুড়োহুড়ি করে গাড়ি থেকে নামছে। ইভান সাবধান করলো। মীরা লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমেই মাহিমাকে দেখতে পেলো। মাহিমা ওদের কাছে এগিয়ে এলো। কাছে এসে দাঁড়াতেই মীরা ওকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পিঠে এক কিল বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগল,

“হারামির বাচ্চা আমাকে ফেলে চলে এসেছিস! তুই বান্ধবী নামে কলঙ্ক। আজ থেকে তুই আমার বোনও না। সব সম্পর্ক শেষ।”

ইভা দূর থেকে দাঁড়িয়ে মীরাকে ডাকলো। মীরা ওদিকে তাকিয়ে ইভা আপুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে চুপসে গেল। সে খেয়ালই করেনি জায়িন ভাই আর মুবিন ভাইও এসেছে। ওরা কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। আবির জায়িনকে দেখে হৈচৈ জুড়ে দিল।

“আরে আরে, কাকে দেখছি আমি! কে এসেছে এইটা? কীভাবে এলি রে তুই? আগে জানলে আমি ফুল বিছিয়ে তোকে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতাম।”

জায়িন আবিরের ধরা হাতে চাপ বাড়াতে বাড়াতে নিচু গলায় বলল,

“গার্লফ্রেন্ড সাথে আছে বলে ওভার অ্যাক্টিং করছিস শালা! সবাইকে জানিয়ে দিব?”

আবির চোখ পাকিয়ে তাকালো। ওদেরকে ফিসফাস করতে দেখে ইভা বলল,

“জায়িন তো আসতেই চাচ্ছিল না। ওর নাকি কিছু কিনতে হবে না। সব আছে। আমি জোর করে নিয়ে এসেছি। মুবিনই ভালো। ওকে আমার জীবনেও জোর করতে হয় না।”

আবির বলল,

“আরে ভাবী বুঝো না। ডাক্তার মানুষ ভাবসাবই বেশি। এখন কী আর ও আমাদের পাত্তা দিবে!”

“তাই! এখন কিন্তু তোর আর তনির রিলেশন বাড়িতে জানাতেই হবে। ইভান ভাইয়ের পরেই তো তোদের পালা।”

“চুপ কর শালা। সবাইকে তো জানিয়েই দিচ্ছিস।”

“তোর ভাইয়ের শালা হচ্ছি। তুই তো মামার সম্পদের উপর নজর দিয়ে রেখেছিস।”

“আমার অনেকগুলো বোন আছে। আমি তোর শালা হবো। তবুও চুপ কর বাপ। এখন জানালে প্রবলেম হবে।”

ওদের গোপন আলোচনা শেষ হয়েছে। ইভান এতক্ষণ ইভার সাথে কথা বলছিল। জায়িনকে দেখে বলল,

“কেমন আছেন ডাক্তার সাহেব?”

জায়িন মৃদু হেসে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই।”

এই লোকও রসিকতা করতে পারে! মীরা আড়চোখে জায়িনকে দেখল। দেখো দেখো, হাসছেও আবার! ওরে হাসছিস যে এজন্য জরিমানা হবে না তোর? গোমড়ামুখে পেঁচা। ইভান মুবিনের সাথেও দুষ্টুমি করছে।

“মাস্টার সাহেবের মাথা এখনও ঠিক আছে? আপনার ছাত্রী কিন্তু আমাদের মাথা খারাপ করে ফেলে। এই প্রথম আপনিই কীভাবে টিকে গেলেন বুঝতে পারলাম না।”

এখন এসব কথা বলার কোন দরকার আছে? ইভান ভাইও না! অসহ্য। আবির ওদেরকে তাড়া দিয়ে ভেতরে নিয়ে চলে এলো।

“গল্প করার সময় জীবনে অনেক পাবে। কিন্তু তার জন্য দেখতে হবে আজ জীবন নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারো কি-না। যে বাহিনীর সাথে এসেছো! একটা দিনে ওদের কিছুই হবে না।

🌸

দুই ঘন্টা ধরে ঘুরে পুরো মলে ত্রিশ চক্করের বেশি লাগিয়ে মাত্র দু’জনের কাপড় কেনা হলো। সেটাও বিয়েতে পরার জামা না। এমনিতেই পছন্দ হয়েছে তাই নিয়েছে। এভাবে সারাদিন ঘুরলেও কারো কোন ড্রেসই পছন্দ হবে না। তাই ইভান এক দোকানে গিয়ে সবার জন্য হলুদের কাপড় বের করতে বলল। নাক উঁচু বোন গুলোকে বলে দিল,

” হলুদের জন্য যার যে শাড়ি পছন্দ এখান থেকেই নিতে হবে। আর একটা দোকানও ঘোরা যাবে না।”

ওরা নিজেরা যেটা নিচ্ছে এটা পছন্দ হচ্ছে না। কিন্তু অন্যেরটা ঠিকই পছন্দ হচ্ছে। যেমন মীরা যে শাড়ি নিতে চাচ্ছে এটা তার ভালো লাগছে না। কিন্তু মাহিমার ঠিকই ভালো লাগছে। আবার মাহিমার ক্ষেত্রেও সেইম। আবির ওদের এই কাণ্ড দেখে দু’জনের হাত থেকে শাড়ি দু’টো নিয়ে মীরারটা মাহিমাকে আর মাহিমারটা মীরাকে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

“নিজেরটা ভালো লাগছে না। ওরটা লাগছে তাহলে অদলবদল করে নে। এই সহজ কথাটা মাথায় ঢুকছে না?”

মীরা মাহিমা মুখ কালো করে আবিরের দিকে তাকাল। পরক্ষণেই নিজেদের আগের শাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

“না, আমারটাই ঠিক আছে। আমি এটাই নিব।”

আবির জায়িনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“দেখলি, মাইয়া জাতি কী চায় এটা ওরা নিজেরাই জানে না। আবার আশা রাখে আমরা ওদের মন বুঝমু! কেন ভাই? পুরুষগো এত ঠেকা কিসের!”

হলুদ আর বিয়ের দিনের কেনাকাটা শেষ। তবে এখনও আরও বাকি আছে। রিসিপশন, মেহেদি আরও যে যে দিন বাকি আছে। আবার মামা মামী, বাড়িতে যে ছোট দু’জন সদস্য আছে তাদের জন্যও কিনতে হবে। বলতে গেলে এখনও সবই বাকি। সকালে বেরিয়েছিল। এখন দুপুর গড়াচ্ছে। ক্ষিদেয় সবার পেট চুঁচুঁ করছে। পেট শান্তি করে তারপর এসে বাকি কেনাকাটা করা যাবে। ওরা বেরুতেই যাচ্ছিল তখন খেয়াল হলো মীরা মাহিমা সাথে নেই। কোথায় গেল ওরা? একটু খোঁজাখুঁজি করে দু’জনকে অন্য একটা দোকানে পাওয়া গেল।
না বলে চলে আসায় তনি ওদের ধমকাচ্ছে।

“গাধা গুলা না বলে চলে এসেছিস কেন? তোদের না পেয়ে জান যাচ্ছিল। বলে আসতে পারলি না?”

ইভান বলল,

“আচ্ছা থাক। বুঝতে পারেনি। আর এমন করিস না কেমন?”

মীরার পার্পল কালারের একটা স্কার্ফ পছন্দ হয়েছে। সে অনেকক্ষণ ধরে এমনই একটা স্কার্ফ খুঁজছিল। অবশেষে পেয়েও গেল। কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা চোখের সামনে দেখে মীরা তনির বকাও গায়ে মাখলো না। সে বলে উঠল,

“ইভান ভাই আমাকে পার্পল কালারের ওই স্কার্ফটা কিনে দাও।”

“কোনটা? ওইটা?”

“হ্যাঁ।”

আবির মাঝখানে ফোঁড়ন কেটে বলল,

“পার্পল রানী! এই তোর বেশির ভাগ জামাকাপড়ই তো এই কালার। নতুন কোন কালারকে সুযোগ দে। এইটার চক্করে বাকিদের বঞ্চিত করে পাপ কামাই করছিস কিন্তু।”

মীরা মুখ মোচড়াল। ইভান দোকানদারকে স্কার্ফটা দিতে বলল। মাহিমাও মীরার সাথে জোড়া ধরে বলল,

“আমিও এমন নেব।”

আবির বলল,

“বলতে লেট করে ফেললি যে! তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোরা দুইটা যে যমজ।”

ওরা শপিংমলে আছে নাকি বাসার ড্রয়িংরুমে আছে তা কে বলবে! একটু আসছি বলে তনি, প্রিয়া দল ছাড়া হয়ে অন্যদিকে ঘুরে দেখছে। ইভা এই চার ভাইবোনের খুনসুটি দেখছে। মুবিন, জায়িনকেও বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে। জায়িন ইভাকে বলেছিল,

“আমি একটু আসি। তোমাদের শেষ হলে আমাকে কল করো।”

কিন্তু ইভা ওকে নড়তে দিল না। বড় বোনের অধিকারের অপব্যবহার করে বলল,

“চুপচাপ আমার পেছন পেছন ঘুরবি। আমার ব্যাগ ক্যারি করবি। ওদেরকে দেখ, কী সুন্দর বোনদের পছন্দের জিনিস কিনতে দশ দোকান ঘুরছে। ধৈর্য নিয়ে পছন্দ করে দিচ্ছে। একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। নিজের বন্ধুকে দেখে শেখ কিছু।”

দোকানী দুইটা স্কার্ফের দাম চারশো করে আটশো টাকা চেয়েছে। ইভান মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে গেলে মীরা মাহিমা চোখ বড় বড় করে সমস্বরে প্রায় চেঁচিয়ে বলল,

“কিহ! দুইটা স্কার্ফের দাম আটশো টাকা!”

চলবে..#মন_নিয়ে_কাছাকাছি
#জেরিন_আক্তার_নিপা
২৩
🌸

ওদেরকে এমনভাবে চেঁচাতে দেখে ইভান বলল,

“সমস্যা নাই। নিয়ে দিচ্ছি তোদের।”

মীরা দু’পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে অসম্মতি জানালো। বলল,

“নিয়ে দেওয়া কথা না ভাইয়া। তোমরা এসব জিনিস কোনদিন কেনো না। সঠিক দাম জানো না। তাই বলে কি আমার সামনে আমার ভাইদের থেকে ডাকাতি করবে! অসম্ভব।”

মাহিমাও বলল,

“দুইটা স্কার্ফ আটশো টাকা! দিনেদুপুরে ডাকাতি পেয়েছেন নাকি?”

দোকানী লোকটা বলল,

“তাহলে আপনারাই বলেন কত দিবেন।”

মাহিমা একটু ভেবে বল,

“দেড়শো করে তিনশো। তার বেশি এক টাকাও না। দিলে দিবেন। না দিলে চলে যাব।”

আবির বিস্ময়ে রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে বোনের দিকে তাকাচ্ছে। এটা তার নিজের বোন! এখন ত মানুষের সামনে বোন পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগছে। কোথায় আটশো আর কোথায় তিনশো! আবির মুখ লুকিয়ে ফেলে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল। জায়িনের চোখাচোখি হয়ে গেলে বোকা হাসি দিল। চোখ, মুখের ভঙ্গিমা করে বোঝালো, এটা তার বোন না। এটা কার বোন! নিশ্চয় হাসপাতালে চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। জায়িন হেসে ফেলল। মুবিন হাঁ করে মাহিমাকে দেখছে। মীরাও মাহিমার সাথে সুর মিলিয়ে বলল,

“হ্যাঁ। এই স্কার্ফের দাম খুব বেশি হলে দেড়শোই হবে। এর বেশি হবে না।”

“না, আপু। এত কমে হবে না।”

মীরা বলল,

“এত কম কই? আপনার কি মনে হয় আমরা এই প্রথম স্কার্ফ কিনছি? তাই দাম জানি না। শুনুন এমন স্কার্ফ দিয়ে আমার ওয়ারড্রব ভরা। বিশ্বাস না হলে চলুন দেখাই।”

মাহিমা মীরার দিকে তাকিয়ে চোখে কিছু ইশারা করে বলল,

“আমরা যদি দেড়শো টাকা করে এমন স্কার্ফ এনে দিতে পারি তখন কিন্তু ফ্রি-তে দিতে হবে। আমাদের কলেজের পাশের দোকানেই এমন স্কার্ফ কত দেখেছি।”

ইভান ওদের কথাবার্তা শুনে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভা মুখ টিপে হাসছে। মেয়েগুলো কী ভীষণ বিচ্ছু!

“আপু আর একটু বাড়িয়ে দিলে হয় না? ভাইয়া আপনি কিছু বলুন।”

মাহিমা জবাব দিল,

“ভাইয়া কী বলবে? ভাইয়া কি বুঝে নাকি? আমার ভাইয়েরা এত সহজসরল ওদেরকে আপনারা যা বলবেন তা-ই মেনে নিবে।”

“তাহলে আপু সত্যিই এই দামে দেওয়া যাচ্ছে না।”

মীরা মাহিমার হাতে মৃদু চাপ দিল। তারপর বলল,

“ঠিক আছে। দুশো করে চারশো। দুটাতে পঞ্চাশ করে একশো টাকা বাড়িয়েছি। আর এক টাকাও বাড়াব না। দিলে প্যাক করুন। নয়তো ভাইয়া চলো। অন্য দোকান দেখি।”

মীরা মাহিমা ইভানের হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে। মনে মনে এক দুই গুনছে। মাহিমা ফিসফিস করে বলল,

“এখনই ডাকবে। দেখে নিও।”

মাহিমার কথা সত্যি হলো। লোকটা সত্যিই পেছন থেকে ডাকলো।

“আচ্ছা আপু, নিয়ে যান। রাগ করবেন না।”

মীরা, মাহিমা বিজয়ের হাসি হাসল। আবির, ইভান, মুবিন তিনজনই বাকরুদ্ধ। আটশো টাকার জিনিস চারশো টাকায় দিয়ে দিচ্ছে! তাদের কাছে তো আটশোও কম মনে হয়েছিল। ছেলেদের থেকে এভাবেই ডাকাতি করে তাহলে! ওরা ফিরে গেল। ইভান টাকা দিল। মীরা মাহিমা দুই ব্যাগ দু’জন হাতে নিয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হাসলো। আসার সময় দোকানী ইভানকে বলল,

“ভাইয়া এর পর থেকে কিছু নিতে এলে ওদের নিয়ে আসবেন না প্লিজ। এক টাকাও লাভ করতে দিল না।”

ইভান হাসলো। আবিরের বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে বারবার দোকানী লোকটাকে গালি দিচ্ছে।

“তোরা না থাকলে শালা আমাদের সাথে সত্যিই আজ ডাকাতি করত। আমি তো আটশো দিয়েই নিয়ে নিতাম।”

মুবিন এতক্ষণে মুখ খুললো।

“আমি কল্পনাও করিনি লোকটা এত কমে দিয়ে দিবে।”

মীরা বলল,

“কম না মুবিন ভাই। এগুলোর দাম এতই। বড় দোকানে আছে বলে দাম বেড়ে গেছে। ছোট দোকান থেকে নিলে এর কমেও নেওযা যাবে। জিনিস একই কিন্তু।”

“হুম। সেটাই তো দেখছি।”

আবির বলল,

“তোরা এত দরদাম করা কীভাবে শিখেছিস?”

মাহিমা গৌরবের সাথে বলল,

“মেয়েদের এসব শিখতে হয় না ভাইয়া। মেয়েরা এসব গুণ জন্ম থেকেই নিয়ে আসে।”

“আজকের পর থেকে আমার সব জামাকাপড় তোরা কিনবি। আমি টাকা দিয়ে দিব। তোরা আমার জন্য নিয়ে আসবি। বাকি যত বাঁচবে তার থেকে অর্ধেক তোদের। পারবি না?”

মীরা মাহিমা একসাথে বলল,

“অবশ্যই।”

ইভা হাসতে হাসতে বলল,

“তোমরা ভাইবোনরা কি সমসময় এরকম ছিলে? মানে ছোট থেকেই এমন।”

আবির ইভার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে হেসে বলল,

“অবাক হচ্ছেন ভাবী? শবে তো শুরু। আমাদের সাথে থাকুন বেশি না এক মাসেই আপনাকেও আমাদের মতো বানিয়ে ফেলব।”

ইভান এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে বলল,

“তনি, প্রিয়া ওরা আবার কোথায় গেল?”

“আমি খুঁজে আনছি।”

বলেই মীরা ছুটে কোথাও চলে গেল। ইভান পেছন থেকে ডাকলো।

“পরে আবার তোকে কে খুঁজতে যাবে।”

“আমি খুঁজে আনছি ভাইয়া।”

মাহিমাও কারো কথা না শুনে চলে গেল। এদের কাণ্ড দেখে ইভান নিরাশ হয়ে বলল,

“ওদেরকে নিয়ে কোথাও বেরিয়ে সহিসালামত বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া পৃথিবীর কঠিনতম কাজগুলোর মধ্যে একটা।”

জায়িন পকেট থেকে ফোন বের করে ইভার কাছে এসে বলল,

“আমি একটু আসছি।”

জায়িন ফোন কানে নিয়ে ওদিকে চলে গেল। এখানে কি ওরা দাঁড়িয়ে থাকবে? আবির বলল,

“ভাবী আপনার তো কেনাকাটা শেষ হয়নি। চলুন দেখি আপনিও কেমন দামাদামি করতে পারেন।”

মুবিন বলল,

“আপু পানি খাবে?”

“খাওয়ালে সওয়াবের কাজ হতো।”

“আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।”

🌸

তনি আপুরা কোথায় গেছে? পুরো মল জুড়ে দুই চক্কর লাগিয়ে ফেলেছে। তবুও ওদের দেখা পাচ্ছে না। মীরা এই দোকান, ওই দোকান খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছিল। একটা ছেলে হাতে সেল্ফি স্টিক ধরে পেছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে আসছে। মীরা আগে খেয়াল করেনি। একটুর জন্য ছেলেটা এসে ওর সাথে ধাক্কা খেতো। কিন্তু তার আগেই কেউ মীরার হাত ধরে টেনে নিল। মীরা তাকিয়ে দেখল জায়িন ভাই। ছেলেটা জায়িনের সাথে ধাক্কা খেয়ে সরি টরি বলে একাকার করে ফেললো। জায়িন রাগলো না। শান্ত অথচ কেমন ধমক মেশানো গলায় ছেলেটাকে বলল,

“শপিংমলে ব্লগ করার জায়গা? ব্লগ করার জন্য পার্ক, রেস্টুরেন্টে আরও অনেক জায়গা আছে।”

ছেলেটা কাচুমাচু মুখে বলল,

“সরি ভাইয়া। আমি আপুকে দেখিনি। সরি আপু। ভাইয়াকে বলুন না আমাকে যেন ক্ষমা করে দেন।”

ছেলেটাকে এত করে ক্ষমা চাইতে দেখে মীরার মন গলে গেল। সে হেসে বলল,

“সমস্যা নেই ভাইয়া। ভুল মানুষেরই হয়।”

“তারপরও সরি আপু। ভাইয়া আপনার অনেক কেয়ার করে। তাই হয়তো রেগে গেছেন।”

মীরা মুখ মুচড়ে মনে মনে বলল, কেয়ার না কচু করেন। মানুষকে ধমকে উনি মজা পান। জায়িন কঠিন চোখে ছেলেটার দিকে তাকালে সে এখান থেকে কেটে পড়লো। ছেলেটা চলে গেলে জায়িনও চলে যেতে নিল। মীরা ওর পিছু নিয়ে বলল,

“আপনি সবাইকে এমন ধমকান কেন? ছেলেটা আপনাকে কতটা ভয় পেয়েছে জানেন। বেচারা সরি বলতে বলতেই…

” ওই ছেলের জন্য খুব মায়া হচ্ছে!”

“হবে না? ওই ছেলের জায়গায় যে কেউ থাকলেও হতো। কীভাবে সরি বলছিল। আপনি সবসময় এমন গম্ভীর থাকেন বলেই আপনাকে বয়সের থেকেও বেশি বুড়া লাগে। আপনি তো আবির ভাইয়ার সমান হবেন। কিন্তু আপনাকে আমার বাবার বয়সী লাগে। কেন জানেন?”

জায়িন থেমে গিয়ে কঠিন চোখে মীরার দিকে তাকাল। মীরা কিছুটা ভয় পেলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না। এই লোককে ভয় পাওয়ার কী আছে? ইনি কি তার গার্জিয়ান? টিচার? নাকি বড় ভাই? এলাকার বড় ভাই। মুখে মুখে ভাই ডাকে শুধু। উনাকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।

“শুনুন জায়িন ভাই, আপনি তো ডাক্তারি পড়ছেন। তাহলে নিশ্চয় এই কথাটা জানার কথা। হাসলে মানুষের মন ভালো থাকো। শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আপনিও এখন থেকে হাসার চেষ্টা করবেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো হাসতে না পারলেও অস্বাভাবিক মানুষের মতো সারাবছর মুখটাকে বাংলার পেঁচার মতো করে রাখবেন না। আমি কত হাসি দেখেন। সেজন্য কি আবার বাবার সম্পত্তি কমে গেছে? কমেনি, না? আপনি হাসলেও আপনার বাবার সম্পত্তি কমে যাবে না। বরং হাসলে আপনাকে সুন্দর দেখাবে। মানুষ অযথাই আপনাকে ভয় পাবে না।”

🌸

শপিং শেষে বের হয়ে প্রিয়া জোরাজুরি শুরু করলো সে ফুচকা খাবে। তনিরও মত আছে দেখে আবির উৎসাহ নিয়ে বলল,

“শুধু তুমি একা খাবে না। আমরা সবাই খাবো।”

মীরা মাহিমা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে মুখ বাঁকাল। ওদের মুখ বাঁকানো জায়িন, মুবিন দু’জনেরই নজরে পড়ল। রাস্তার পাশেই ফুচকা স্টল। ইভা আপুও দলটার সাথে ভিড়ে যাওয়ায় মুবিন জায়িন চলে যেতে পারছে না। তারপরও জায়িন চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আবির যেতে দিল না।

“দূর শালা! কয়দিন পর বিয়াই হবি এখন তোর ভাব দেখার সময় আছে নাকি।”

তনি, প্রিয়া ঝাল দিয়ে ফুচকা খাবে। ইভার ঝাল পছন্দ না। আবির সবার পছন্দ জেনে সবার জন্য এক প্লেট করে ফুচকা দিতে বললে মীরা নাক উঁচিয়ে বলল,

“আমি ফুচকা খাই না।”

মাহিমা মুখ বাঁকিয়ে বলল,

“আমিও না।”

চলবে…

বিঃদ্রঃ অনেকেই পেইজের ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে গল্পের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। কারো কারো মেসেজের রিপ্লাই দেওয়া যায়। কারোটা যায় না। হয়তো যাদের প্রোফাইল লক করা তাদের রিপ্লাই দেওয়া যায় না। আমি সঠিক জানি না।
গল্প আমি রাতে দিই। দিনের বেলা খুব কমই গল্প পোস্ট করি। আপনারা সারাদিন বারবার চেক না করে কষ্ট করে সন্ধ্যার পরে একবার উঁকি দিয়ে যাবেন। প্রতিদিন গল্প দিতে পারি না। একদিন বা দু’দিন পরপর দেই। মাঝে মাঝে আরও দেরি করি। তবুও এটা নিয়ে পাঠকদের খুব একটা অভিযোগ নেই। এতেই আমি খুশি। পাঠকরা আমাকে বুঝে। আর কী চাই আমার? ভালোবাসা 💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here