#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৪১
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
অঞ্জলির ফোনে দ্রুত ক্লাস থেকে বের হলো সৈকত। নামতে যেয়ে সিঁড়িতেই দেখা হয় অঞ্জলির সাথে। সৈকত অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি হঠাৎ এভাবে ডাকলে যে? ঝিনুক ঠিকাছে তো? ওর কিছু হয়েছে?”
“ভাইয়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেলুন। ব্যস্ত হবেন না, ঝিনুক একদম ঠিকাছে।”
সৈকত গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“তাহলে এভাবে ডাকলে যে?”
“ঝিনুক বলেছিল যেন ওর কথা না জানিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করি আপনার মুখে এই ক্ষত কীসের? আর বেশি ব্যাথা করছে না’কি? চিন্তা করছিলো ভীষণ।”
“ওকে বলবে আমার চিন্তা করার প্রয়োজন ওর নেই।”
“ঠিকাছে বলে দিব কিন্তু আগে আপনি বলুন আপনাদের দুইজনের মাঝে কি চলছে?”
“আমি নিশ্চিত ঝিনুক তোমাকে বলেছে।”
“কিন্তু আপনার পক্ষ থেকে তো বলে নি। শুধু নিজের পক্ষ রেখেছে।”
সৈকত হাসলো একটু। অঞ্জলি জিজ্ঞেস করল,
“হাসছেন কেন ভাইয়া?”
“অনেক বছর পর কেউ নিজে আমার পক্ষ জানতে চাইছে তাই।”
“কারণ প্রতি ঘটনারই একাধিক পক্ষ থাকে। সে ঘটনার সাথে যারা যুক্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সে নিজের মস্তিষ্কে ঘটনা সাজায়। সে ঘটনাটা অন্যকারো যখন রাখে তখন অনেকেই এমনভাবে প্রস্তুত করে যে সে ঘটনায় সে নিজে সঠিক। কারণ তাদের মস্তিষ্কে তারাই সঠিক।”
“চিন্তা করে দেখলে তোমার কথাটা ভুল নয়।”
“ভাইয়া কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমি এটাও জানি যে আপনি জ্যোতির সাথে আসলে কোনো সম্পর্কে নেই।”
সৈকত চমকে উঠলো অঞ্জলির কথা শুনে। তারপর আমতা-আমতা করে বলল,
“না এ-এমন কিছু না।”
“এমন কিছুই। জ্যোতি আজ ক্লাসে এসেছিলো। বলল যে আপনি আহত হওয়ায় সে আসে নি, নাহয় সেই জিতে যেত। সে আপনার খেয়াল রেখেছে। আর ওর কথার ধরণ অনুযায়ী বুঝা গেল যে ও জানতো না ঝিনুকের আসার কথা ছিলো না। ঝিনুক না আসার কোনো কারণ আছে যা জ্যোতি জানে। আমি অনেক কনফিউজড কিন্তু আমি এতটুকু বুঝেছি যে ঝিনুক অংশগ্রহণ করে নি বিধায় আপনি নিশ্চিত করেছেন যে জ্যোতিও যেন না আসে। এছাড়া আপনার মুখ দেখে আমি শিউরও। কারণ যে আপনাকে মেরেছে সে রাগে মারে নি। একটা ক্ষতও তেমন গভীর না।”
সৈকত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো অঞ্জলির দিকে। তারপর গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল,
“তুমি কমার্সে কী করছো? ডিটেকটিভ এজান্সিতে চলে যাও।”
“আপনি আবার কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন?”
“আচ্ছা বাবা ঠিকাছে সব বলছি। কিন্তু এইখানে না ছাদে চলো। আমি ইকবালকেও আসতে বলছি।”
সৈকত অঞ্জলিকে নিয়ে ছাদে যেতেই দেখে ইকবাল আগের থেকেই এসে পড়েছে। অঞ্জলি বলল,
“আমি জানতাম না ছাদে আসার অনুমতি আছে।”
“কারণ নেই। আমরা অনুমতি বিহীন কাজই বেশি করি।”
ইকবালের কথা শুনে অঞ্জলি তার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আবার সৈকতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া এবার বলুন।”
সৈকত ছাদের বর্ডারে যেয়ে হেলান দিয়ে বলতে শুরু করল,
“প্রথম থেকে বলতে শুরু করি তাহলে ভালোভাবে বুঝবে। অর্ক ভাইয়া বিদেশে যাওয়ার পূর্বে আমাদের বাসায় একটা ঝগড়া হয় আর আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। এতটা কি সে যেদিন বিদেশে রওনা দেয় সবাই যায় তাকে বিদায় দেওয়ার জন্য কিন্তু আমি দেখাও দেই নি সেদিন। কিন্তু আমার ভেতরটা তখন শূন্য লাগছিলো। আমি প্রতি সাপ্তাহ তার রুমে যেতাম। রুমে যেয়ে তার জিনিসপত্র পরিষ্কার করতাম। অন্যকাওকে সে রুমে যেতেও দিতাম না।
সেদিন ভাইয়ার জন্মদিন ছিলো আমি রাগে তাকে ফোনও দেই নি। আমি গেলাম তার রুমে। তার জিনিসগুলো দিকে খেই তাকে মনে করতে থাকলাম। তার আলমারি খুলে সবকিছু বের করে দেখলাম। তখনই আলমারির ড্রয়েরে একটা ফাইল দেখলাম। ফাইলে ছিলো কতগুলো ছবি ও একটা কাগজ। ছবিগুলো দেখে আমি বেশ অবাক হই। কারণ ছবির মেয়েটির সাথে বিনয় ভাইয়ার বিয়ে হয়েছিল দুইমাস আগে। কিন্তু মাথায় একটা কথা ঘুরছিলো বিনয় ভাইয়ার যেহেতু এরেঞ্জ ম্যারেজ সেহেতু ভাইয়া বিদেশ যাওয়ার পূর্বে তাকে দেখে নি তাহলে ছবি কীভাবে পেল? বিনয় ভাইয়া যেদিন প্রথম মেয়ে দেখতে যায় সাথে আমিও ছিলাম তাই ভাইয়ার কাছে এই ছবিগুলো আসাটা স্বাভাবিক ছিলো না। উওরটা ছিলো সে কাগজে। আমি সে কাগজ খুলে পড়লাম,
‘প্রিয় বসন্তিকা,
কুহেলিকার চাদরে লেপ্টে থাকা প্রকৃতির মাঝে তুমি বসন্তের হাওয়ায় মতো এলে আর আমার হৃদয়ে অনুভূতির ছড়াছড়ি করে চলে গেলে। সে বছরের প্রভাতে তোমায় প্রথম দেখেছিলাম। আর তিনটি বছরও এমন ভাবেই কেটে গেল। বর্ষের প্রথম সূর্যোদয়ের সাথে বসন্তের মাতাল হাওয়ার মতো হাসিটি দেখি প্রতিটিবার, প্রতিবছর। সে একটি হাসি মনে করতে করতেই বছরের বাকি দিনগুলো কাটিয়েছি। কাউকে শুধু চারবার একটি মানুষকে দেখে তার জন্য জীবন উজার করে কেউ দিতে চায় বলে আমি জানতাম না। আমার কখনো তোমাকে নিজের মনের কথা বলার ইচ্ছাটা হয় নি। তবে তোমায় সারাজীবনের সাথী বানানোর ইচ্ছাটা হয়েছে। আর কিছু বছর পর আমি ফিরে এসে বাবার কাছে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার চাইব, তোমাকে।
আমি তোমার কিছু মুহূর্ত দেখে মন পাড়ায় আটকে রাখতে পারব কিন্তু কিছু মুহূর্ত তোমায় কাছে পেলে যে আর দূরে যেতে ইচ্ছে হবে না। আমি তোমায় কাছে চাই ঠিক, তবে শুধু সারাটা জীবনের জন্য। কিছু মুহূর্তের জন্য নয়। আমি তোমাকে পাওয়ার থেকে তোমার ঠোঁটের কোণের হাসিটা চাই।
ভালোবাসি বলে ভালোবাসাময় একটি জীবন চাই তোমার সাথে, ভুল চাই কি?
আমি তোমাকে অপেক্ষা করাবো না, তবে আমি অপেক্ষা থাকব তোমার ঠোঁটের কোণের সে হাসিটা দেখার আশায়।’
আমি চিঠিটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। বুঝতে পারলাম ভাইয়া যে মেয়েটিকে পছন্দ করতো তার সাথে বিনয় ভাইয়া বিয়ে হয়ে গেছে। অর্থাৎ প্রভা ভাবি। আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরছিলো। ভাইয়া কী বিনয় ভাইয়াকে তার পছন্দের মেয়েটাকে দেখায় নি? আর দেখালে বিনয় ভাইয়া তাকে বিয়ে করেছে কেন? আর ভাইয়াকে বউয়ের ছবি দেখানোর পর সে কিছু বলে নি কেন?
এ-সব প্রশ্নের উওর আমার কাছে ছিলো না। কোথায় পাব তাও জানতাম না। তাই আমি তা করলাম যা আমার করা উচিত ছিলো। আমি হয়তো প্রভা ভাবি ও ভাইয়াকে এক করতে পারতাম না কিন্তু ভাইয়ার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা পূরণ করতে পারতাম। তাই এরপর থেকে বিনয় ভাইয়ার বাসায় যেতে শুরু করলাম। সেখানে যেয়ে যখন প্রভা ভাবিকে মুখ মলিন করে থাকতে দেখতাম তখন এমন কিছু একটা করতাম যেন ভাবি হাসে। যখন ভাইয়ার সাথে নূহার বিয়ে ঠিক হলো, ভাইয়া বাংলাদেশে এলো তখনও। সে হাসিটি ক্ষাণিকের ছিলো তাও আমি জানতাম তবে আমার সীমার বাহিরে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তবে বুঝতে পারতাম সে ঘরের মানুষগুলোকে যেমন দেখায় তারা তেমন না। অবশ্য এই সমাজে বেশিরভাগ মানুষই একটা মুখোশ পরে থাকে। তার মুখোশের উপর পরা থাকে ভালোমানুষি। যেখানে তাদের স্বার্থ থাকে সেখানেই তারা ভালোমানুষি মুখোশটা পরে নেয়। সে মুখোশের ওপারে যে একটা অমানুষ আছে তা কেউ দেখতেই পারে না। বিনয় ভাইয়ার পরিবারের সকলে ছিলো তেমনই। শুধু ফাতেমা ভালো ছিলো তাদের মধ্যে। ফাতেমাই আমাকে প্রভা ভাবির উপর অত্যাচারের কথা বলেছিলো প্রভা ভাবির ডিভোর্সের আড়াই মাস আগে। ভাবিকে বিয়ের পর বেশ মারা হতো, খাবার দেওয়া হতো না ঠিক মতো, অনেক কথা শোনানো হতো। আরও অনেক কিছু যা সময়ের সাথে সাথে কমতে থাকে। ফাতেমার কথানুযায়ী একটা পার্টিতে এমন কিছু হয়েছিল যেখানে প্রভা ভাবির সাথে অন্যায় হওয়ার পরও ভাবিকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাকে পাগলও বলা হচ্ছে। সে ঘটনার কথা কেউ সম্পূর্ণ ভাবে না জানে না তবে সে ঘটনার পর আসলেই ভাবি অনেকটা পরিবর্তন হয়। দুঃস্বপ্ন আসে বারবার। এরপর হঠাৎ করে ভাবির ডিভোর্সের কথা শুনে তার সাথে কথা বলতে যাই। ভাবি প্রথমে কিছু বলতে চায় নি। কিন্তু জোর করায় বিনয় ভাইয়া ও নূহার পরকীয়ার কথা বলে দেয়। আমি অর্ক ভাইয়াকে বলতে যেতে নিয়েছিলাম কিন্তু ভাবি থামায়। উনি ভাইয়াকে বলেছেন কিন্তু অর্ক ভাইয়া না’কি তার কথা বিশ্বাস করে নি। আমার কাছে তা এতটা অস্বাভাবিক লাগে নি। কেননা বিনয় ভাইয়া অর্ক ভাইয়ার ছোট বেলার বন্ধু। তার ভীষণ কাছের। সাথে আমারও অনেক কাছের ছিলো। এইজন্য তার প্রতি সব সম্মান হারানোর পরও আমি আজও তাকে ভাইয়া বলে ডাক দেই। আমাদের সম্পর্কটাই এমন ছিলো। উনি আমার জন্য ভাইয়ের মতোই ছিলো। উনি সবসময় আমার সাথে ছিলো। অর্ক ভাইয়া যখন বিদেশে চলে গেল উনিই দেখাশোনা করতেন আমার। উনার দ্বারা এমন কোনো কাজ হবে আমি চিন্তাও করতে পারি নি। কিন্তু উনি আমার যত কাছেরই হোক প্রভা ভাবির কথাটা আমার বিশ্বাস হয়েছিলো। কারণ প্রভা ভাবি আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী একজন নারী। উনার সাথে কয়েক সাক্ষাৎ পরই আমি উনাকে আমার মা’য়ের সাথে মিলাতে পারতাম। সবসময়ই অন্যের চিন্তা করা, অন্যের জন্য সব কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করা, সবার যত্ন করা। তবে হ্যাঁ এতটুকু বলব একটি বিষয়ে আমার মা ও প্রভা ভাবির অমিল রয়েছে। এবং সে অমিলের উপর আমি গর্বিত। আমি সবসময় চাইতাম আমার মা একবার হলেও নিজের জন্য কথা বলুক কিন্তু মা কখনো এমন করে নি। কিন্তু প্রভা ভাবি করেছে। হ্যাঁ এইটা ঠিক প্রথমে তার সে অত্যাচারগুলো সহ্য করা উচিত হয় নি। তবে দোষটা তার থেকে বেশি এই সমাজের। এই সমাজ মেয়েদেরকে সব চুপ করে সহ্য করতে শেখায় কিন্তু অন্যায়ে প্রতিবাদ করতে শেখায় না। প্রতিবাদ করলেই সে বেয়াদবের উপাধি পায়। অবশ্য শুধু মেয়েরাই না ছেলেরাও। সঠিক কথাটা যে আজকাল কেউ-ই সহ্য করতে পারে না। বেয়াদবি বলে চুপ করে দেওয়াই শ্রেষ্ঠ মনে হয় সবার কাছে। সংসার হলো একটি মেয়ের জন্য স্বর্গীয় স্থান এবং তাকে কারাদণ্ড বানিয়ে দেয় কিছু নির্বোধ ব্যক্তিরা। শুধু শশুড়বাড়ির লোকেরা বা স্বামী নয় নিজের বাবা মায়েরাও। যখন স্বামীরা স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে তখন স্বামীকে না বুঝিয়ে বলা হয় স্ত্রীকে চুপ থাকতে একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। অবশেষে কিছুই ঠিক হয় না। তুমি জানো এভাবে দেশে কতগুলো মেয়ে সুসাইড করে অথবা তাদের খুন করা হয়?”
অঞ্জলি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“জানি। কিন্তু অবশেষে তা পুরনো খবরের কাগজের এক পাতায় পুরনো খবর হিসেবেই থেকে যায়। না তার ন্যায়বিচার হয় আর না কেউ এর থেকে শিক্ষা নেয়।”
সৈকত তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“একদম। আমাদের সমাজে যে অন্যায় করুক তার শাস্তি হোক বা না হোক যার সাথে অন্যায় হয় তার ঠিকই শাস্তি হয়। লোকের হাজারো কটু কথা সহ্য করতে হয় আবার কতজনে সান্ত্বনা দেওয়ার নামে তার ক্ষতগুলো তাজা করার কাজ করে দিয়ে আসে। প্রভা ভাবির সাথেও এমনটা হয়েছে। তবুও তিনি শক্ত রয়েছেন।”
“আমি বুঝলাম না যে প্রভা আপুর ডিভোর্স হতো তা ঝিনুক জানে না কীভাবে?”
“প্রভা ভাবি ও পরিশ চাইতো না যে ডিভোর্সের কথা ঝিনুক জানুক। পরিশেরটা জানি না কিন্তু প্রভা ভাবি ভেবেছিলো ঝিনুকের এইচ এস সি এর পর ওকে ডিভোর্সের কথা জানাবে। যেন পরীক্ষায় কোনো সমস্যা না হয়। তাই ঝিনুককে কিছু সময়ের জন্য ওর মামার বাড়িতে পাঠিয়েছে। সেখানে পরিশের ভয়ে কেউ কিছু বলে নি। আর এলাকার কেউ-ই ডিভোর্সের কথা জানতো না। ঝিনুকের পরীক্ষার জন্য জানানো হয় নি। কিন্তু ডিভোর্সের জন্য এপ্লাই করার পরপরই বিনয় ভাইয়া ও নূহার মৃত্যু হয়ে যায়। আর দোষী হিসেবে প্রথম নাম আসে প্রভা ভাবির।”
অঞ্জলি তার চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,
“হোয়াট!”
“এমনকি বিনয় ভাইয়ার যখন হত্যা করা হয় তখন প্রভা ভাবি সেখানে ছিলো না কিন্তু…… ”
“কিন্তু?”
“কিন্তু নূহার এক্সিডেন্টের সময় সেখানে ছিলো। এমনকি ধারণা করা হয়েছিলো যে নূহার গাড়ির সামনে ভাবি ইচ্ছা করে আসে যেন গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে। পুলিশ ধারণা করেছিলো হয়তো নূহা ও বিনয়ের সম্পর্কে কথা জেনে রাগে ভাবি এমন করেছে বা উনার মানসিক সমস্যার কারণে এমনটা করেছে। এমনকি ভাবির ফোন থেকেই প্রথম নূহাকে ফোন করা হয় কিন্তু ভাবি বলে যে পাবলিক টেলিফোন থেকে নূহা ফোন করে তাকে দেখা করতে বলেছিলো। পুলিশ খোঁজ করে জানতে পায় বিনয় ভাইয়ার বাসার কাছের এক দোকান থেকে একটা মেয়ে ফোন করে। মেয়ের মুখ ঢাকা ছিলো তাই চেহেরা দেখে নি। কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ভাবির বিরুদ্ধে কোনো একশন নাওয়া হয় নি।”
“তাহলে তো সব কাহিনী এইখানেই শেষ।”
“আমারও তাই মনে হয়েছিলো। কিন্তু মাঝখানে অর্ক ভাইয়া আবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ও ভাবির প্রতি প্রমাণের জন্য তাকে বিয়ে করে।”
অঞ্জলি প্রথমে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সৈকতের দিকে আবার চোখ মুখ কুঁচকে বলে,
“অর্ক স্যার প্রভা আপুকে ভালোবাসতো এইজন্য বিয়ে করে নি?”
সৈকত ডানে বামে মাথা নাড়ালো। অঞ্জলি আবারও জিজ্ঞেস করল,
“কিন্তু এইসবের সাথে জ্যোতি ও আপনার সম্পর্কের কী কানেকশন?”
সৈকত ইকবালের দিকে ইশারা দিতেই ইকবাল তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে অঞ্জলির হাতে দিলো।
সৈকত বলল,
“এইটা নূহা ভাবির মেডিক্যাল রিপোর্টের কাগজ। প্রভা ভাবিকে যে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নেওয়া হতো সে সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নূহাও যেত। অর্থাৎ নূহার মানসিক সমস্যা ছিলো। যা আমরা কেউ জানতাম না। গতকাল এইটা জ্যোতির বাসায় পাই। এমনকি জ্যোতির সাথে আমি সম্পর্কে এইজন্যই ছিলাম যেন এমন কিছু প্রমাণ পেয়ে যাই। যেন অর্ক ভাইয়াকে প্রমাণ দেখাতে পারি যে ভাবি নির্দোষ। আজ দুই বছর পর এতটুকু একটা প্রমাণ পেলাম এবং এই নিয়ে এখন সব কাহিনী খুলতে হবে।।”
অঞ্জলি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চিন্তা করে বলল,
“এইসব অনেক পেঁচানো। ভাইয়া মানলাম যে জ্যোতির সাথে আপনি আছেন প্রমাণ বের করার জন্য। কিন্তু আপনি আগে যে সম্পর্কে ছিলেন তার কী? আমি সাধারণ অন্যের কথা মানি না কিন্তু আপনার দুটো ঘটনা ভার্সিটির সবার মুখে মুখে আছে। আর অর্ণব ভাইয়া যে মেয়েটাকে পছন্দ করতো তার সাথে আপনার বাচ্চার কথাটা সাবেক নিজে আমায় বলেছে। এখন ওই মেয়েটা নিখোঁজ। আর এক মিনিট…. যদি অর্ক স্যার পুলিশের সঙ্গে প্রভা ভাবির বিরুদ্ধে ছিলো তাহলে প্রভা আপু মা বাবা বিয়ের জন্য কীভাবে রাজি হলো? আর আপনিই বা কেন এইটা হতে দিলেন? আর আপনি ঝিনুককে এত ভালোবাসলে কেনই-বা আপনাদের মাঝে ভালোবাসা থাকতেই এত দূরত্ব?”
চলবে……
[