#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_০৯. ( অংশ-০১ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .
চোখেমুখে হিং:স্র প্রতাপ। চোখের কোটর শক্ত। পলকহীন চোখদুটো স্ক্রিনের দিকে নিবদ্ধ। নিকোটিন ফুঁকা ঠোঁটদুটো ফাঁক হয়ে আছে। মোহিত দৃষ্টিতে অবাক ভঙ্গিতে বুক ফুলিয়ে যাচ্ছে। মনে বাজছে সুর, কানে চলছে তাল, ঠোঁটে আসছে সাড়া। এমন রমনীর মূর্তি যেনো কল্পনায় ভাবা চিত্র। যার সৌন্দর্যের কাছে চোখ পরলে রবীন্দ্র সংগীত বাজে, হৃদয়কুঠিতে উচাটন করে, কোথাও যেনো মৃদ্যু-মৃদ্যু ধাক্কার অনুভব হয়। ল্যাপটপের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ভদ্রলোক,
– এটাই আনসারীর বউ? মেয়েটা মেহনূর আফরিন?
ভাইয়ের কথামতো স্ক্রিনে তাকালো রজনী। সম্মতি জানিয়ে মৃদ্যুস্বরে বললো,
– জ্বী ভাইজান। মেয়েটা মাহতিমের বউ। আপনাকে দেখানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু, আপনিতো কাজের ব্যস্ততায় দেখলেন না। এটাকে কিছু করুন ভাইজান। এই কেস যদি আপনি হ্যান্ডেল করেন, তাহলে আমি চিন্তামুক্ত থাকতাম।
রাত দশটা। জায়গাটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। নরম সোফায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন। রজনী নিজের পার্সনাল ল্যাপটপ এনে বড়ভাইকে পুরো ঘটনা খুলে বললো। সেই রহস্যময় ট্যুর, সেই কক্সবাজারের সমুদ্রতীর, সেই বালুর কাছে সকলের হাসি-হাসি মুখের ছবি, মাহদির শেষ স্মৃতি, মেহনূরের গোটা পরিচয়, সব একনিমেষে বিবৃতি করলো সে। মেহনূরকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখতেই কোমরে চোখ পরলো ভদ্রলোকের। সেখানে খুবই কর্তৃত্বের সাথে হাত রেখেছে মাহতিম আনসারী। সদাসর্বদা যার মুখ গম্ভীর হয়ে থাকতো, একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব দেহসৌষ্ঠব্যে ফুটে উঠতো, এই ছবিতে সেই মুখটা হাসি দিয়ে আছে। একটা সরস ভাবের প্রাণপূর্ণ চাহনি ঠিক নব্য-প্রেমের আশ্বাস দিচ্ছে। আবার মেহনূরের দিকে দৃষ্টি রেখে থুতনি চুলকে বললো,
– মেয়েটার নাম সুন্দর। দেখতেও গেঁয়ো লাগে না। টার্গেট কি একটাই? নাকি উদ্দেশ্য অন্য কিছু আছে?
খুবই রোষের সাথে নিশ্বাস ফেললো রজনী। একের-পর-এক ব্যর্থ প্রচেষ্টার ঘটনা উল্লেখ করে বললো,
– উদ্দেশ্য একটাই ভাইজান। ওকে মে::রে ফেলা। যদি অনাকে বিয়ে করতো, তাহলে কোনো টেনশনই ছিলো না। আনসারী খুব ভোগাচ্ছে ভাইজান। আমি বাজেভাবে হেরে গিয়েছি। ব্যর্থ হতে-হতে আমার ধৈর্য্য এখন তলায় জমে গেছে। আর পারা যায় না। যতবার ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছি, আনসারী ততবারই আমাকে তছনছ করে দিয়েছে। দুটো বছর আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে ভাইজান। না পেরেছি বলতে, না পেরেছি ধরতে। যতবার ওকে য:ন্ত্রণার মুখে ফেলতে চাইতাম, কোনো-না-কোনো বাধা আসতোই। আমি সহ্য করতে পারছি না।
রজনীর কথাটা শোনার পর ভ্রুঁ কুঁচকালো সে। বোনের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি ছুঁড়ে গম্ভীর গলায় বললো,
– কি ধরনের বাঁধা? এমপির সম্মান পেয়েছো রজু। পুরো তোমাকে পার্টি নমঃ নমঃ করে। সেখানে ব্যর্থ হচ্ছো কেন? সমস্যাটা কোথায়?
দাঁত শক্ত করে চোখ বুজলো রজনী। ব্যর্থতার আগুন, অপ্রকাশ্য জ্বালাটা খুব কষ্টে গলাধঃকরণ করলো। পুনরায় চোখ খুলে সংযত গলায় আসল ঘটনা বললো,
– আমাকে বারবার গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কি হচ্ছে সেটা আমি জানি না ভাইজান। মেহনূরের উপর লোক ফিট করেছিলাম। প্রোফেশনাল গ্যাংয়ের সাতজন সদস্য মহিমপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো। পরিকল্পনা মোতাবেক ওরাও আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, পৌঁছে গেছে। এরপর যেটা হলো, সেটা আমি ভাবতেও পারিনি ভাইজান। যাদের হায়ার করেছিলাম, তাদের লা::শ তো দূরে থাক, সাতটা জী:ব:ন্ত মানুষের অস্তিত্বই মুছে গেছে। তদন্তের জন্য চার সদস্যের টিম পাঠাই, ওরাও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ওই মোল্লাবাড়িতে কোনো পুরুষমানুষ থাকে না। ওদের ফোনকল পযর্ন্ত চেক করে দেখেছি। কোনোভাবেই আনসারীর সাথে সম্পৃক্ততা পাইনি। ও দেশের বাইরে গিয়ে ওই বাড়িতে খোঁজ নিতো না। মেহনূরের সাথে সম্পর্ক বলতে গেলে নষ্ট ছিলো। মেহনূরও নিজ থেকে যোগাযোগ করতো না। এর মধ্যে লোক পাঠালে কেউ ফেরত আসতো না। আমি নোমান ইকবালের উপরও কড়া নজর রেখেছি। ওরও কোনো সন্দেহজনক ব্যাপার ধরা পরেনি। মাহতিম দেশের বাইরে যে কাজে গিয়েছিলো, ও সেকাজেই ব্যস্ত ছিলো। তাহলে আমার এখানে প্রশ্ন হলো, মেহনূরের উপর কিছু হচ্ছে না কেনো? যদি মাহতিম ওকে না বাঁচায়, তাহলে ওকে বাঁ:চাচ্ছে কে? কে ওর প্রতি সহায় হচ্ছে? কে আমার চালগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে ভাইজান? আপনিই বলুন কেন এমনটা হচ্ছে?
.
ঘরে মোমের আলো। কাঠের দরজাটা বন্ধ। বাইরে বৃষ্টি কমেছে। ঝিরিঝিরি বাতাসে মিষ্টি গন্ধ ছেড়েছে। কালো চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে আছে মাহতিম। সম্পূর্ণ ভর মেহনূরের উপর ছেড়ে মুখের দিকে ঝুঁকে আছে। ডানগালটা ছুঁয়ে-ছুঁয়ে একটুখানি হাসলো সে। বাঁহাতে গলার ওড়নাটা মুঠোয় ধরলো মাহতিম। মেহনূর চোখ নিচু করে চুপচাপ কীর্তিটা দেখতে লাগলো। খুব সন্তর্পণে ওড়নাটা টেনে-টেনে গলামুক্ত করলো। শয্যাশায়িনী মেহনূর নিরবে-নিভৃতে সমস্ত কিছু অবলোকন করতেই নির্ভীক মানুষটা বাঁ-কাধের মাঝে ডুবে গেলো। হৃদয়ের আলিঙ্গনটুকু পূর্ণ করার জন্য থুতনিটা রাখলো মেহনূরের কাধের হাড্ডিতে, গালটা মিলিয়ে দিলো কানের সাথে। পিঠের নিচে দুই হাত গলিয়ে মেহনূরকে বুকের সাথে চেপে ধরলো। এ যেনো আষ্টেপৃষ্টে পেঁচিয়ে ধরা শক্ত বাহুবন্ধন। শক্ত বাহুবন্ধনের সুংকুচিত চাপে নিশ্বাসটা আঁটকে এলো মেহনূরের। তবুও কোনোমতে নাক ফুলিয়ে শ্বাসটুকু ছাড়লো সে। বাঁ-কাধের কাছে লুকানো মুখটা ফিসফিস করে বললো,
– যদি বলি যোগাযোগ বন্ধ রাখার পেছনে কারণ আছে, তাহলে কি তুমি বিশ্বাস করবে?
সিলিংয়ের দিকে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি রাখলো মেহনূর। বিদ্যুৎহীন ফ্যানটা স্থির। রুমে পর্যাপ্ত আলো নেই।সম্পূর্ণ কথাটা শোনার পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– কি কারণ?
প্রশ্নটা করার সাথে-সাথে দম আঁটকালো মেহনূর। বাহুবন্ধনের সুদৃঢ় চাপে শক্ত রইলো সে। প্রাণচঞ্চল করা অনুভূতিতে জীর্ণ থাকতেই কানে প্রখর সান্নিধ্যের সাথে চুমু খেলো। কিছুক্ষণের ভেতর বাহুজোড়া শিথিল করে মুখ তুললো মাহতিম। চোখে চোখ রেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
– তোমার কি মনেহয় আমি বোকা? ওইরকম সামান্য ঘটনার জন্য কেউ যোগাযোগ বন্ধ করবে? আমি বিনা কারণে কাজটা করিনি। তুমি যেই গাড়িতে যাওয়ার জন্য চড়েছিলে, ওই গাড়িই আমি তছনছ করে দিতাম, তবুও তোমাকে যেতে দিতাম না মেহনূর। দরকার পরলে তোমার হাত-পা বেঁধেই হোক, আমার বাড়ি থেকে একপা-ও নড়তে দিতাম না। এ নিয়ে মামলা-টামলা খেলে খেতাম, ভয় নেই। আমার বউ ভুল বুঝে চলে যাচ্ছে, এটা আমি মেনে নেবো? আমার ইচ্ছা ছাড়া, আমার অনুমতি ছাড়া সামান্য ঘটনার রেশ ধরে তুমি চলে যাবে, আর আমিও বসে-বসে তামাশা দেখবো, এটা বাংলা নাটক না মেহনূর। যদি তোমার ক্ষ:তির আশঙ্কা না থাকতো, আমি মহিমপুর আসাটাই ব্যর্থ করে ছাড়তাম।
কথার ভঙ্গিতে ক্ষুদ্ধ অবস্থা ফুটে উঠেছে মাহতিমের। বাক্যের-পর-বাক্য যেনো চাপা ক্ষোভের প্রকাশ। ইচ্ছাবিরুদ্ধ কাজটা যেন ঘাতের মতো বাজিয়েছে, সেটা চোখের দৃষ্টি, মুখের ভঙ্গি সবকিছুতে দৃশ্যমান। মেহনূর চুপ থাকার পরিকল্পনায় ছিলো, কিন্তু মনের মধ্যে অসংখ্য প্রশ্নের ঘূর্ণিপাকে চুপ থাকতে পারলো না। সোজা কাট-কাট ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো সে,
– আপনি কিছুই খুলে বলছেন না। সব জায়গায় ‘ কিন্তু ‘ লাগিয়ে কথা শেষ করছেন। আমি জানতে চাই, কেন আপনি আমার সাথে যোগাযোগ রাখলেন না। আপনার এমন কঠিন পদক্ষেপের পেছনে শক্ত কারণ কি ছিলো। কেন আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করলেন। যেখানে আপনার বিভিন্ন ক্ষমতার কথা শুনি, সেখানে ওই ক্ষমতা কেন ব্যবহার করলেন না। আপনার এসব কাজের পেছনে বারবার কেন আমাকে ঠেলে দিলেন?
প্রশ্নবাণে নির্যুত্তর রইলো মাহতিম। নয়নমন একীভূত করে ম্লা:ন ঠোঁটে হাসলো। বুক ভারী নিশ্বাসটা আস্তে করে ছেড়ে নিষ্প্রভ কন্ঠে বললো,
– মা গেলে তো মা আসে না, বউ ঠিকই আসে। কিন্তু, আমার ক্ষেত্রে, বউ গেলে তো তুমি আসবে না। উলটো আমার ভালোবাসাই চলে যাবে।
ঘটনার শুরওয়াত সেই রাতের দিকে। বাড়িটা তখন সৌভিকের বিয়েতে পূর্ণ। সবখানে রমারমা আনন্দ। মেহনূর রুমে নেই। কাজের জন্য নিচে ছিলো। খুব স্বাভাবিকভাবে রাত দশটার দিকে কল আসে। মাহতিম সেটা রিসিভও করে। কিন্তু সে জানতো না, ওই একটি কলই সবকিছু বিগড়াতে প্রস্তুত। পাক্কা কয়েক মিনিট স্তব্ধ ছিলো মাহতিম। নিজের উপরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না, সত্যিই ডাক এসেছে। ডাইরেক্ট গর্ভঃমেন্ট থেকে সুপারিশ নিয়ে অফিশিয়াল লেটার পৌঁছেছে। এতো তাড়াতাড়ি এই সুযোগ আসলো কেন? কেন আসলো? মনে-প্রাণে শুধু দেরির জন্য আবদার করতো। অন্তত মেহনূরের জন্য সবকিছু বন্দোবস্ত করে তারপর যেতে চাইতো। এই মূহুর্তে কিভাবে কি দেখবে? সৌভিকের বিয়ে, মায়ের চিকিৎসা, মেহনূরের নিরাপত্তা, এসব কি সম্ভব? রাগের চোটে ঠোঁট কুঁচকে ফোন ছুঁড়ে মারলো। ভাগ্য পরিহাসে ক্ষুদ্ধ হয়ে ফুঁসতে থাকলো মাহতিম। তখন সে জানতো না, দরজার বাইরে আরো দুজন ব্যক্তি চুপচাপ সব দেখছে। সেই দুজন ব্যক্তি আর কেউ না, তৌফ ও ফারিন ছিলো। এই ঘটনা মুখ ফুটে কাউকে বলেনি মাহতিম। যদিও তৌফ-ফারিন ভুলবশত রাগের তেজটা দেখেছে, তবে আসল ঘটনা জানতে পারেনি কেউই।
.
বিদেশি ইম্পোর্ট বোতলটা বের করলো ভদ্রলোক। গ্লাসের কাছে বোতল কাত করে ঢকঢক করে পানীয় ঢাললো। চ্যাপ্টা বোতলটা বন্ধ করে আদেশের সুরে বললো,
– গ্লাসটা নাও রজু। মেজাজটা ঠান্ডা করো। আমি গরম মেজাজের কথাবার্তা সহ্য করি না।
কাঁচের টেবিলে বিয়ারপূর্ণ গ্লাসের দিকে নজর দিলো রজনী। বড়ভাইয়ের আদেশটা মান্য করে ডানহাত বাড়িয়ে দিলো। গ্লাস তুলে ঠোঁটের কাছে নিতেই তপ্ত গলায় বললো,
– আমার কথাগুলো শোনার পর কি মনেহচ্ছে ভাইজান? ঘাপলা কি আছে না?
খুবই গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলো ভদ্রলোক,
– আছে। না থাকলে হেরে যেতে না। তোমাকে গুল খাইয়েছে রজু। তুমি এখনো ছেলেটাকে শক্তভাবে নিলে না। ওর দূরদর্শি চিন্তাভাবনা ধরতে পেরেছো? তুমি পারোনি। ও দেশ থেকে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সব পাকাপোক্ত করে গিয়েছে। তোমার ফাঁদে তোমাকেই ডুবিয়ে গেছে রজু। ও মেহনূর আফরিনের সাথে সম্পর্ক ন:ষ্ট করেনি। শুধু একটা ধা:প্পাবা:জি করেছে!
চুমুক দিতে গিয়ে চকিত হলো রজনী। পানীয়টা গলা আঁটকে গেলে খুক-খুক করে কেশে উঠলো। চোখ কুঁচকে কাশতে-কাশতে প্রশ্ন ছুঁড়ে বললো,
– আপনি কিভাবে নিশ্চিত ভাইজান? আমি নিজে দেখেছি সবকিছু নষ্ট। মাহতিম যে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেনি, এটাও ওর কললিস্ট বলে দিচ্ছে।
সরু চোখে তাকালো ভদ্রলোক। বাঁ ভ্রুঁ-টা উপরে তুলে বিজ্ঞের মতো বললো,
– মানুষের মাথাটা একশো কম্পিউটারের সমান। বাকিটা বুঝা উচিত রজু। আনসারীর মাথাটা খুবই শার্প। ওর চিন্তাগুলো কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে। ও এখানে বসেই বলে দিতে পারবে, ঠিক কত পা এগুলে ওই দরজা পযর্ন্ত যাওয়া সম্ভব। ওর পর্যবেক্ষণ শক্তি নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। ওর অনুমানের সত্যতা বহুবার প্রমাণ পেয়েছি। আমি নিশ্চিত, ও নিজের পিঠ-পেছনে এমন কাউকে রেখে গিয়েছে, যেকিনা সবকিছু আড়ালে-আড়ালে দেখে রাখতো। খুব মাথা খাটিয়েছে রজু। স্বাভাবিক ভাবে দেখলে কেউই বুঝতে পারবে না।
প্রশ্ন উদ্রেক চাহনিতে তাকিয়ে আছে রজনী। ভাইয়ের কথার মর্মটা বুঝতে পারেনি। আড়ালে-আড়ালে দেখতো মানে? মাহতিমের পরিচিত বলতে যারা আছে, তারা কেউই মাহতিমের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতো না। এমনকি খাস বন্ধু সৌভিকের সাথেও মেহনূরকে নিয়ে তর্ক হয়েছে। তার ফলাফল হিসেবে দুই বন্ধুর মধ্যে যোগাযোগ নেই। মাহতিমকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করবে ওমন পুরুষ কোথায়? বাইরে থেকে কে মাহতিমকে সাহায্য করছে? যেহেতু সাহায্য করছে, তারমানে ওই ব্যক্তি নিজেও পাওয়ারফুল। নাহলে মাহতিমের সাথে কানেক্ট হবার চান্স শূন্য বটে। এখানে ঘটনার তদুপরি সত্য তাহলে কি? কি দাঁড়াচ্ছে সবকিছুর পেছনে? ভাইজান কিভাবে মাহতিমের চালবাজি বুঝছে?
.
বিছানায় উঠে বসলো মাহতিম। পা-দুটো ফ্লোরে রেখে বাঁয়ে মুখ ফেরালো। এখনো বিছানায় শুয়ে আছে মেহনূর। পাশের টেবিল থেকে মোমের আলোটা মুখের উপর পরেছে। আরো নরম, আরো স্নিগ্ধ লাগছে। মাহতিম মৃদ্যু হেসে ওর দিকে বাঁহাত বাড়িয়ে দিলো। ‘ না ‘ সূচকে মাথা নেড়ে আবদার সুরে বললো,
– তোমাকে এই পোশাকে দেখতে চাই না। হাতটা ধরে উঠো,
হাতের দিকে একনজর তাকালো মেহনূর। আপনমনে কিছু একটা চিন্তা করে ওই হাতে হাত রাখলো। শক্ত হাতে ভর দিয়ে শয্যা থেকে উঠলো। মেহনূর যখন বিছানা থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন হাত ছেড়ে আলমারির পাশে হাঁটু গুটালো মাহতিম। লাগেজ খুলে ভাঁজকৃত শার্টের তলায় হাত ঢুকালো সে। দূর থেকে বসে-বসে দেখে যাচ্ছে মেহনূর। এই লাগেজটা কখন এই ঘরে এনেছে, সেটা সম্পর্কে জানে না। মেহনূর যখন চায়ের জন্য নিচে নামে, সম্ভবত তখনই লাগেজটা রেখে গেছে। নিজের শার্টের নিচ থেকে প্যাকেট বের করলো মাহতিম। মৃদ্যু-মৃদ্যু আলোয় দেখা যাচ্ছে, ওটা একটা সুতির শাড়ি। রঙটা হালকা আকাশী। প্যাকেটটা খুলে ফেলে সামনে আসলো মাহতিম। দুহাতে শাড়ি নিয়ে ইতস্তত চোখে তাকালো। যদি বলে ‘ আমি এটা পরবো না ‘? যদি এই প্রকাশ্যভঙ্গির ছোট্ট ভালোবাসাটা ফিরিয়ে দেয়? যদি শাড়ির ভাঁজটা না খুলে? ফিরিয়ে দিলেও মেহনূরের দোষ নেই। সত্যিই কোনো দোষ নেই। কিন্তু, মন তো ভেঙ্গে যাবে। মুখে দ্বিধা, চোখে সংশয়, ঠোঁট নড়াচড়া করছে, কিন্তু বলতে পারছেনা কিছুই। মেহনূর মুখ তুলে নিরীক্ষা চালিয়ে শান্তসুরে বললো,
– আপনাকে একটা শেষ প্রশ্ন করবো। যদি যথাযথ উত্তর দেন, তো পুরোনো রূপে আপনার সামনে ফিরবো। যদি আপনার কথায় একটুও মিথ্যে পাই, তাহলে আজকের পর জীবনেও আমাকে খুঁজে পাবেন না।
চোয়াল শক্ত করলো মাহতিম। নাক ফুলিয়ে অদম্য নিশ্বাস ছেড়ে প্রত্যয়ের সুরে বললো,
– বলো,
কঠিন প্রশ্নটা করার জন্য প্রস্তুতি নিলো মেহনূর। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে জিজ্ঞেস করলো সে,
– আপনার কি মনেহয় মাহদি আমার জন্য চলে গেছে?
শাড়িটা নিচে নামালো মাহতিম। মেহনূরের দিকে একনিষ্ঠ চাহনিতে অটল থেকে দাম্ভিকতার সুরে বললো,
– জটিল প্রশ্নের জন্য বানোয়াট উত্তর দেবো না। সত্যই সই। আমার ভাইয়ের জন্য যদি তুমি দায়ী থাকতে আমাকে এই রূপে দেখতে পেতে না। তোমার যে কি অবস্থা করতাম, সেটা আপাতত বলতে চাই না। তুমি আমার কি হও, না-হও; সব বাদ! আজন্মের জন্য ধি:ক্কা:র জানিয়ে তোমাকে টু:ক:রো করে ফেলতাম। আজ তুমি আমাকে এখানে দেখছো, তোমার সামনে আমি কাঙালের মতো দাঁড়িয়ে আছি, এইভাবে কক্ষনো দেখতে না মেহনূর। তোমার কাছে তোমার মাহতিমের মতো আচরণ করি, যার আচরণ দেখে তুমি অভ্যস্ত আছো। আমার ওই ডে:ড-হ্যা:ল রূপ তোমাকে কোনোদিন দেখাইনি। আগামীতেও দেখাবো না। এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই সোজা গাড়িতে উঠেছি, কোনোদিক তাকাইনি। তেরোটা ঘন্টা একটানা ড্রাইভ করেছি, কোথাও থামিনি, কোথাও ঘুমাইনি, শুধু চালিয়েই গিয়েছি, চালিয়েই গিয়েছি, এসব পাগলামি কার জন্য করেছি? তোমার জন্য। আমার বউ এখানে পরে আছে, একমাত্র সেই চিন্তা ঘুরঘুর করতো। আমি কোনো খু:নি:র প্রতি মায়া-দয়া দেখাতে আসিনি। আমার যেই অধিকার আমি দু’বছর আগে যেতে দিয়েছি, সেই অধিকার আমার কাছে ফিরিয়ে নিতে এসেছি। আমার সম্পদে কারো হস্তক্ষেপ পরতে দেইনি। কোনো চেয়ারম্যান কুলা:ঙ্গারকে ভ:দ্রভাবে ছা:ড়িনি। কোনো জামিল নামের হা:রা:মিকে মা:ফও করিনি। তুমি দুই বছর আগেও আমার বউ ছিলে, এখনো আমার বউই আছো। তোমাকে দূরে রেখেছি, কোনো বিচ্ছেদ করিনি। তুমি আমার অবিচ্ছেদ্য অংশ, যেখানে ছেদ করলে আমার অর্ধেক সত্ত্বাই হারিয়ে যাবে। এমন বোকামো তো জীবনেও করবো না।
কথা শেষ করে বিছানায় শাড়ি ফেললো মাহতিম। মুখ ফিরিয়ে পা ঘুরিয়ে দরজার দিকে চললো। ছিটকিনিটা যেভাবে লাগিয়েছিলো, সেটা এখন চট করে নামিয়ে দিলো। দরজার দুই দ্বার ধরে খুলে ফেলতেই মুখটা বাঁকাধের কাছে আনলো। সংযত বাক্যে ঠান্ডাভঙ্গিতে বললো,
– যদি আমার কথা বিশ্বাস হয়, ওটা পরে এসো। সারারাত রুমের দরজা খোলা রাখবো। যদি মিথ্যার আভাস পাও, তবে মোমের আগুনে জ্বা:লিয়ে দিও। আর আসা লাগবে না। তোমার শাড়ি পোড়া গন্ধেই আমি বুঝে যাব, তুমি কি চাচ্ছো।
#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_০৯. ( শেষ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .
অপেক্ষা করছে মাহতিম। নির্ভীক মনটা বেসামাল। অবিচল চিন্তায় উতলা। বাইরের অবস্থা যতই শান্ত দেখাক, সে শান্ত নেই। মনটা অসংখ্য চিন্তায় ডুবে আছে। বারবার চোখদুটো দরজার দিকে যাচ্ছে। কখন অন্ধকার দরজা ঠেলে আকাঙ্ক্ষী শিখাটা জ্বলবে। কখন পদশব্দের মৃদ্যু-মৃদ্যু আওয়াজে বুকটা ভারী হবে। কখন অপেক্ষা কাটিয়ে আসবে মেহনূর। শাড়ি জড়িয়ে লজ্জাবতীর ন্যায় হাজির হবে। ওর ছোট্ট মুখটা অনেকক্ষণ ধরে কখন আদর করবে। লজ্জা রাঙ্গা মুখটা বুকে টেনে নিবে। আর কতো অপেক্ষা? ধৈর্য্য যে কুলোচ্ছে না। সময়ের কাটা ঘুরতে-ঘুরতে পন্ঞ্চাশ মিনিট চলে গেছে, এখনো তো আসলো না। সে কি আসবে না? অপেক্ষায় কাতর চোখদুটো বন্ধ করলো মাহতিম। শেষ ধৈর্য্যটা রাখার জন্য মনে-মনে বললো, ও আসবে, হাল ছাড়িস না। বিছানায় শুয়ে আছে মাহতিম। চোখের উপর হাত ফেলে সময় গুণছে। মেহনূর যেনো আসুক মনে-প্রাণে চাচ্ছে। এবার এলে কোথাও যেতে দিবে না। একদম সিন্দুকের মতো রেখে দিবে। একটু করে আদর দিবে, একটুখানি রাগ দেখাবে। শাষনের বেলায় কড়া হবে, দিনশেষে কাছেই রাখবে। অনেক সহ্য করেছে মেয়েটা। এবার একটু কাছে রাখা দরকার। সুগভীর ছায়াতলে ভীষণভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আদরে-সোহাগে সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসা দরকার। রুমটা অন্ধকার। আলো জ্বালায়নি মাহতিম। একমাত্র আলোটা দরজা দিয়ে ঢুকুক। সবটুকু অন্ধকার পরিষ্কার করে দিক। অপেক্ষার যন্ত্রণা নিপাত যাক। মাহতিম ব্যকুল হয়ে আপনমনে বললো,
– একবার আসো বউ। শাড়িটা পুড়িয়ে দিও না।
চোখ থেকে হাত সরালো মাহতিম। আবার দরজার দিকে চাইলো। খোলা দরজায় কেউ নেই। কোনো পদশব্দ নেই। অধীর নেত্রে তাকিয়ে রইলো মাহতিম। অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যদি মেহনূর না আসে, যদি শাড়িটা পুড়িয়ে দেয়, তাহলে আজকের পর আর আসবে না। চিরদিনের জন্য মোল্লাবাড়িকে ছেড়ে দিবে। এমনভাবে সরে যাবে, যেনো কখনো ছিলো না সে। কষ্ট হবে, দুঃখ লাগবে, মনটা খুব ভেঙ্গে যাবে, তবুও মেয়েটা খুশি থাকুক। এটুকু যন্ত্রণা যদি মেহনূরকে স্বস্তি দেয়, তবে আক্ষেপ নেই। কিন্তু আফসোস, ওই মনের মধ্যে আর কাউকে জায়গা দিতে পারবে না। সেটা কোনোদিন সম্ভব না। ওই সম্মানীয় স্থানটা স্রেফ ভালোবাসার চিহ্ন। এটা অকাট্য দলিল, অমূল্য প্রমাণ, একমাত্র সাক্ষ্য যে, সেও পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো। নিঃস্ব, শূন্য, ভঙ্গুর মনটা কারো কাছে আমানতের মতো রেখেছিলো। তবে দোষ এটুকুই, আমানত তুলে দেওয়ার পর খোঁজ নেয়নি। দিনের-পর-দিন নিখোঁজ থাকার সংবাদে তার উপর গাদ জমেছে। বুঝতেও পারেনি, ভাবতেও পারেনি, গাদের পাতলা প্রলেপটা একটু-একটু করে মোটা হচ্ছে। আজ সেই প্রলেপটা শক্ত দেয়ালে পরিণত। সেটা উঠানোর পন্থা, সারানোর টোটকা তারও জানা নেই। দীর্ঘসময় এমন চিন্তা নিয়ে ডুবে থাকতেই নাকে জোরালো গন্ধ পেলো। একবার-দুইবার শান্তভাবে দম নিলো। চট করে চোখ খুললো মাহতিম। ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় শক্তি পুরোপুরি সজাগ! পোড়া গন্ধটা সত্যি-সত্যিই পাচ্ছে। অন্ধকারে আরো একবার নিজেকে স্থির রাখলো। এটা কি ভ্রম, নাকি সত্য, সেটা বুঝার জন্য শান্ত রইলো। যতবার বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে, ততবার পোড়া গন্ধটা নাসাপথে ঢুকছে। ক্রমাগত জোরে-জোরে নিশ্বাস নিতেই একলাফে বিছানা থেকে নামলো। না, মেহনূর করবে না। নিশ্চয়ই গন্ধটা বাইরে থেকে আসছে। নিজের মিথ্যা অনুমানকে সাঙ্গ করে জানালা খুললো মাহতিম। ইতিমধ্যে মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেছে। অস্থিরভাবে ডানে-বামে চোখ ঘুরালো মাহতিম। নির্ঘাত খড়কুটো পুড়াচ্ছে। কিন্তু না, কোথাও কোনো খড়কুটো নেই। বাইরে কোনো আগুন নেই। মাহতিম একবুক হতাশা নিয়ে জানালা থেকে সরে এলো। হতভম্বের মতো পা চালিয়ে বিছানার কাছে আসলো। অন্ধকারে অসতর্কভাবে হাঁটার জন্য পায়ে উষ্টাঘাত খেলো। প্রচণ্ড ব্যথায় চোখটা কুঁঁচকে যেতো, কিন্তু মাহতিম পাত্তাই দিলো না। ধপ্ করে বিছানায় বসে পরলো, অথচ পায়ের প্রতি খেয়াল রইলো না।
.
সুজলার নির্দেশে কেউ ঘর থেকে বেরোয়নি। সবাই যার-যার খাবার নিয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকেছে। ইতিমধ্যে সাবা ও সুরাইয়া বাদে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। সুজলা ইচ্ছে করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেছেন। তিনি সবকিছু সময়ের হালে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি সবকিছু স্বাভাবিক হয়, তাতে দুজনের মঙ্গল। যদি মেহনূর অটল থাকে, তবে মাহতিম কি করবে, তিনি জানেন না। কিন্তু মন গলানোর মতো অদ্ভুত আকর্ষণ মাহতিমের আছে। অন্তত, একটা গুণের কারণে দশটা মানুষকে বাজাতে পারে। ওর যুক্তি, ওর কথা, ওর দূরদর্শি চিন্তাভাবনা বেশ আশ্চর্যজনক! কথাবার্তায় নিশ্চয়ই চুম্বকের মতো একটা ব্যাপার আছে। নাহলে মানুষ ওর কথা শুনতে বাধ্য হয় কেন? প্রতিটি কথা বেশ মাপযোগ করে বলে। সেখানে বাড়তি কথার রেশ থাকে না। বাক্যের-পর-বাক্য যেনো সততার সাথে ফুটে উঠে। মিথ্যের ছোঁয়া থাকে না। এবারও সুজলা সব কথা শুনেছেন। মাহতিমের প্রতিটি কথা বর্ণনার সাথে শুনেছেন। একটি ঘটনা শোনার পর আশ্চর্য না-হয়ে পারেননি। যে দু’বছর দেশের বাইরে ছিলো, ওসময় দেশে নির্বাচনী হাওয়া গেছে। দেশের পরিস্থিতি কি ছিলো, বলার মতো না। ওমন বীভৎস পরিবেশে সবকিছু সামাল দেওয়াটা সোজা কথা না। তাঁরও মনে রজনীর মতো প্রশ্ন বুনেছে। এভাবে বাজির উপর বাজি খেলাটা সহজ কর্ম না। তাও রাজনীতিতে চাল ফেলাটা সাংঘাতিক কিছু। মাহতিম যেখানে প:লি:টি:ক্স করে না, সেখানে প:লিটি:ক্সে:র হম্বিতম্বি বুঝলো কি করে? এটা কি আশ্চর্যের ব্যাপার না?
.
মৃত্যুর কাছে পরাজিত সৈন্য যেমন নিরুত্তাপ ভাবে তাকায়, চক্ষু ধীরে-ধীরে মুদিয়ে ফেলে, দু’ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ শ্বাসটুকু ছাড়ে, তেমনি সশব্দে দম ছাড়লো মাহতিম। নিজের সমস্ত অনুভূতি আবদ্ধ করার জন্য নিচের ঠোঁটে দাঁত চাপলো। সুদীর্ঘ শ্বাসটা নিতেই অতিকষ্টে ঢোক গিললো। খুব চেষ্টায় ছিলো চোখদুটো শুষ্ক থাকুক। থাকলো না। ভেতরের যন্ত্রণাগুলো কোনোভাবেই ক্ষান্ত দিলো না। বহুদিন পর গভীর-শান্ত চোখদুটো ভিজে এলো। চক্ষুপল্লব বেয়ে নিভৃতে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরলো। বদ্ধ চোখের পাতায় তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুল চাপলো মাহতিম। পকেট থেকে ফোন বের করলো। দ্রুত অবসাদগ্রস্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কল বসালো সে। কয়েকটা টিউন যেতেই রিসিভ হলো কলটা। ওপাশ থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে সাড়া দিয়ে বললো,
– হ্যালো,
নির্যুত্তর রইলো মাহতিম। কোনো কথাই বলতে পারলো না। অনেক চেষ্টা করলো, একটা শব্দও বেরুলো না। ওপাশের ব্যক্তি এবার ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো। বিচলিত হয়ে বললো,
– তুই কি চুপ থাকবি?
তিরতির আঙ্গুল ভিজে যাচ্ছে। গাল বেয়ে নিঃশব্দে ফোয়ারা ঝরছে। নাক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিতেই মাথা ঝুঁকালো মাহতিম। নিচের ঠোঁট ছেড়ে ঢোক গিললো। চোখ থেকে আঙ্গুল সরিয়ে ধাতস্থ গলায় বললো,
– কেমন আছিস?
কন্ঠটা স্বাভাবিক লাগছে না। নির্ঘাত কিছু হয়েছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছে সৌভিক। তৎক্ষণাৎ সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো। মনে-মনে শঙ্কা নিয়ে চিন্তিত গলায় বললো,
– কিচ্ছু লুকাবি না মাহতিম। সব খুলে বল্। তোর কন্ঠ আমার কাছে সুবিধার লাগছে না।
কন্ঠরোধ হয়ে এলো মাহতিমের। আর একটা শব্দও বলতে পারলোনা। খুব চেষ্টায় কান্নার উচ্ছাসটুকু ঢেকে রাখলো। সৌভিককে কিছুই বুঝতে দিলো না। কি বলবে সৌভিককে? কি বলার জন্য ফোন দিয়েছে? মাহতিম কোনো কথাই বললো না। কলের ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন সৌভিক আবার জিজ্ঞেস করলো,
– দোস্ত বল না। এতো বছর যোগাযোগ করিসনি সব মাফ। তোর কি হয়েছে বল্। আমার কাছে তো কিচ্ছু লুকাস না। অন্তত সেই বিশ্বাসে বলে ফ্যাল। তুই কাঁদছিস কেন শা::লা? তুই অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে কাঁদবি কেন? ফোন দিয়েছিস চুপ থাকার জন্যে? তুই একবারও যোগাযোগ করিসনি। উলটো নাম্বার বন্ধ করে বসেছিলি। তোর মতো আস্ত শ:য়:তা:ন হয়?
বন্ধুতুল্য সৌভিকের কথা শুনে ঢোক গিললো মাহতিম। অনেকটা সময় নিয়ে স্থির হলো সে। হাতের উলটোপিঠে চোখ ডলে আর্দ্র গলায় বললো,
– আমার ফোনকল ট্র্যাক হতো। তোদের সাথে যা কথা বলতাম, সব শুনতে পেতো। যোগাযোগ বন্ধ ছাড়া উপায় পাইনি সৌভিক। যেই মাধ্যমেই কথা বলি না কেন, সব রেকর্ড হয়ে পৌঁছে যেতো। এর মধ্যে আমার বাইরে যাওয়াটা জরুরী হয়। কি কারণে দেশের বাইরে যাই, তুইতো জানিস। ওই অবস্থায় কিভাবে ওকে ছেড়ে যাই বল্? ফ্যামিলি এ্যালাউ করলে ওকে রেখে যেতাম? আমিতো ট্রিপ যাইনি। কিভাবে ওকে নিতাম? ও আমার কথা বুঝলোই না। একটা জিদ ধরেই আছে। সেদিন কেন মাহদির জন্য ওকে দায়ী করেছি। সৌভিক তুই-ই বল, দায়ী যদি করতাম, ওকে কি বাঁচিয়ে রাখতাম? মে;রে ফেলতাম না?
ভারী নিশ্বাস ছাড়লো সৌভিক। কন্ঠ খাটো করে বললো,
– তোর সংসারের কেরোসিন দিয়ে আমার জীবনে বাতি ধরিয়ে দিলি। এখন তুইযে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিস সেই হুঁশ আছে? তোর সামান্য কাণ্ডে এদিকে শানাজ পযর্ন্ত তোর নাম শুনতে চায় না। ওর তো বোন হয়। তার উপর তোকেও খুব মান্য করতো। আমি কতবার তোর কাছে কারণ জিজ্ঞেস করেছি, উলটো তুই আমাকে ব:কাব;কি করে দ:মিয়ে দিতি। ওর মনে আঘাত লেগেছে মাহতিম। ওর বদ্ধমূল ধারণা এটাই, তুই সেদিন ভুলবশত সত্য কথা উগলেছিস। ও এটা ভাবেনি, তুই অসতর্ক হয়ে ভুল কথা বলেছিস। এজন্যই বড়রা বলে, কথা আর থুথু একবার ফেললে মুখে তোলা যায় না। মানুষেরও ভুল হয়। তুই আছিস কোথায়? তোর কল তো বিডির টাইম শো করছে।
পোড়া গন্ধটা আরো বেড়েছে। রুমের ভেতরটা ধোঁয়াটে। প্রচণ্ড চোখ জ্বালা করছে। নাক নিয়ে নিশ্বাস নিতেই খুক-খুক করে কাশলো মাহতিম। ধোঁয়া সরানোর জন্য ডানহাত নাড়তেই কাশতে-কাশতে বললো,
– আমি দেশে একটু কাজে —
গলা বিষিয়ে উঠলো কাশিতে। প্রচণ্ড ধোঁয়া নাক দিয়ে ঢুকে কন্ঠনালিতে সমস্যা করছে। স্বাভাবিক কথা তো দূরে থাক, নিশ্বাসই নিতে পারছেনা। হঠাৎ কয়েক মিনিটের মধ্যে কি হলো? মাথা উঠিয়ে দেখলো পুরো রুম ধোঁয়ায় ভরা। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। সব ধোঁয়ায় মিলে যাচ্ছে। কাশতে-কাশতে ফোনটা কান থেকে নামালো মাহতিম। কলের ওপাশ থেকে চিন্তার সুরে সৌভিক চেঁচামেচি করছে। প্রতিটি কাশির শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। সে চিৎকার দিয়ে ডাকলো,
– মাহতিম! দোস্ত তুই কাশছিস কেন? হ্যালো!
মাহতিম কাশির চোটে নির্যুত্তর রইলো। মুখের কাছে ডানহাত মুঠো করে কাশতে-কাশতে কল কাটলো। দ্রুত বাঁহাতে ধোঁয়া সরিয়ে রুমের দরজা খুললো সে। বুঝতেই পারছেনা এতো ধোঁয়া কোত্থেকে এসেছে। চোখে অসহন জ্বালা নিয়ে ডানে-বাঁয়ে চোখ ঘুরালো। না, কিছু দেখা যাচ্ছে না। কাশতে-কাশতে গলাটা বাজেভাবে ঝাঁজাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক গন্ধ না। এটা ঝাঁজালো টাইপের গন্ধ। যেটা নাক দিয়ে ঢুকলে নিশ্বাসে জ্বালা ধরে, গলার কাছে খুশখুশে ভাব হয়, চোখ দিয়ে পানি পরে। তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে কোনোমতে নিচে নামলো মাহতিম। আঙিনায় সব ঠান্ডা। কেউ নেই। গন্ধ-টন্ধ কিচ্ছু নেই।
অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে সিঁড়িতে উঠলো মাহতিম। সে জানে, সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। তবুও গন্ধটা কেউ পায়নি। না-পাওয়ার অবশ্য কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, মরিচ পোড়ার ঝাঁজালো গন্ধ কেউ পেলো না? এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? নাতো, এটা স্বাভাবিক ঘটনা না। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলো। এই সাইডের দোতলায় কেউ থাকে না। বর্তমানে সে একা। মোম জ্বালায়নি বলে বারান্দাটা অন্ধকার। বলতে গেলে পুরো জায়গাটাই আলোহীন। বাইরে বৃষ্টি নেই। সেটা ক্ষণিকের জন্য থেমেছে। রুমের ভেতর থেকে সকল ধোঁয়া দরজা দিয়ে বেরিয়েছে। ভেতর-বাড়িতে খোলা আঙিনা থাকার জন্য গন্ধটা বুঝি ছড়ায়নি। নাহলে ঠিকই সবার ঘরে-ঘরে ঢুকতো। ফ্ল্যাশ জ্বালানো মোবাইলটা রুমের কাছাকাছি এসে বন্ধ করলো। কলপাড় থেকে মুখ ধুয়েছে মাহতিম। চোখের জ্বালাটা কমে এলেও গলা খুশখুশ করছে। কাশিটা থেমে-থেমে হচ্ছে। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগালো মাহতিম। আর খুলে রাখার প্রয়োজন নেই। যার জন্য নৈঃশব্দের মূহুর্তগুলো কাটিয়েছে, সে আর মুখ ফিরেও চাইবে না। অন্ধকার রুম, একাকী মূহুর্ত, কেউ নেই পাশে। এমন একটা নিঝুম রাতে পুরোনো স্মৃতি ঘাটলো। কাল তো চলেই যাবে, আজ না-হয় শেষ স্মৃতিটুকু থেকে যাক। খোলা জানালার কাছে আসলো মাহতিম। কাশতে-কাশতেই গলা ঠিক করলো। কয়েকবার খাকাড়ি দিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়লো। আকাশে তাকিয়ে মলিন চাহনিতে হাসলো মাহতিম। সুর ধরে একটুখানি গাওয়ার ইচ্ছা রাখলো,
অভিমান পিছু নাও,
তাকে পিছু ফেরাও।
তার কানে না যায় পিছু ডাক আমার,
মুখ বুজেই তাকে ডাকছি আবার।
দুচোখ বন্ধ করে থেমে গেলো মাহতিম। কোথাও যেনো লেগেছে। আবার পুরোনো ঘাঁয়ে আঁচড় পরেছে। আর কখনো গান গাইবে না। যেই গলা দিয়ে তীব্র সুর বেরোয়, সেখান দিয়ে রেওয়াজ গলা মানায় না। আজই এই গানের ব্যাপারটা জলাঞ্জলি দেবে। শোয়ার জন্য বিছানায় কাছে আসলো মাহতিম। জানালা থেকে সরার পর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কোনোমতে হাতড়ে-হাতড়ে টেবিলে ফোন রাখলো। বিছানায় উঠে দু’হাতে টিশার্ট খুলে ফেললো। আন্দাজে বালিশের কাছে টিশার্ট রাখতেই হঠাৎ কেউ অন্ধকার চিঁড়ে বললো,
– কলেজে যখন আপনার পরিচয় দিয়েছিলাম। সবাই আপনার পেশা শুনে আপনাকে ‘ ঘ্যা:ড়া, ব:দরা:গী, র:সক:সহীন ‘ বলেছিলো। আমি ওদের কথায় তর্ক করিনি। রেসোর্টের সন্ধ্যায় আপনার ঠোঁটে যেই গান শুনেছিলাম, আপনাকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছাটুকু সেদিনই অনুভব করি।
আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে মাহতিম। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই তার গায়ে হাত রাখলো। চমক উঠলো মাহতিম। কিছু বলার আগেই একজোড়া কোমল বাহুপাশ তাকে বেষ্টন করে ধরলো। তার উন্মুক্ত বুকের কাছে ছোট্ট দেহটা লুকিয়ে পরলো। খুব শক্ত করে আশ্লেষের ডোরে বেঁধে ফেললো। মাহতিমের মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বললো,
– জড়িয়ে ধরবেন না?
এক টুকরো হাসি দিলো মাহতিম। চোখটা অন্ধকার সয়ে গেছে। দুটো কালো চক্ষু মাহতিমের দিকে তাকিয়ে আছে। আবদারী মুখটা খুব কাছে, খুব নিকটে, খুব সন্নিকটে। মাহতিম পাগলের মতো ওই মুখে চুমু খেলো। দু’হাতে ছোট্ট মুখটা ধরে গালে-কপালে আদর করলো। জোরে-জোরে উত্থাল নিশ্বাস নিতেই মুখ নামালো মাহতিম। সুনিবিড় অন্ধকার প্রাসাদে একমাত্র মানুষটা বহুদিন পর আলো জ্বালালো। যেমন যত্নের সাথে সেই প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষে আলো জ্বালানো হয়, তেমনি আবেশীচিত্তে ওষ্ঠাধরে চুমু বসালো মাহতিম। দমবন্ধ করে তার ভালোবাসাটুকু অধরযুগলে জাহির করলো। ঠিক কতক্ষণ, কতখানি, কতটুকু সময় পেরুলো মেহনূরের জানে নেই। মাহতিমের চোখ এখনো বন্ধ। পিঠে বুলানো হাতটা সরিয়ে ফেললো মেহনূর। শাড়ির লম্বা আঁচলটুকু টেনে খুব সন্তপর্ণে মাহতিমের ঠান্ডা পিঠটা ঢেকে দিলো। #মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_০৯. ( শেষ )
#ফাবিয়াহ্_মমো .
অপেক্ষা করছে মাহতিম। নির্ভীক মনটা বেসামাল। অবিচল চিন্তায় উতলা। বাইরের অবস্থা যতই শান্ত দেখাক, সে শান্ত নেই। মনটা অসংখ্য চিন্তায় ডুবে আছে। বারবার চোখদুটো দরজার দিকে যাচ্ছে। কখন অন্ধকার দরজা ঠেলে আকাঙ্ক্ষী শিখাটা জ্বলবে। কখন পদশব্দের মৃদ্যু-মৃদ্যু আওয়াজে বুকটা ভারী হবে। কখন অপেক্ষা কাটিয়ে আসবে মেহনূর। শাড়ি জড়িয়ে লজ্জাবতীর ন্যায় হাজির হবে। ওর ছোট্ট মুখটা অনেকক্ষণ ধরে কখন আদর করবে। লজ্জা রাঙ্গা মুখটা বুকে টেনে নিবে। আর কতো অপেক্ষা? ধৈর্য্য যে কুলোচ্ছে না। সময়ের কাটা ঘুরতে-ঘুরতে পন্ঞ্চাশ মিনিট চলে গেছে, এখনো তো আসলো না। সে কি আসবে না? অপেক্ষায় কাতর চোখদুটো বন্ধ করলো মাহতিম। শেষ ধৈর্য্যটা রাখার জন্য মনে-মনে বললো, ও আসবে, হাল ছাড়িস না। বিছানায় শুয়ে আছে মাহতিম। চোখের উপর হাত ফেলে সময় গুণছে। মেহনূর যেনো আসুক মনে-প্রাণে চাচ্ছে। এবার এলে কোথাও যেতে দিবে না। একদম সিন্দুকের মতো রেখে দিবে। একটু করে আদর দিবে, একটুখানি রাগ দেখাবে। শাষনের বেলায় কড়া হবে, দিনশেষে কাছেই রাখবে। অনেক সহ্য করেছে মেয়েটা। এবার একটু কাছে রাখা দরকার। সুগভীর ছায়াতলে ভীষণভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আদরে-সোহাগে সবটুকু উজাড় করে ভালোবাসা দরকার। রুমটা অন্ধকার। আলো জ্বালায়নি মাহতিম। একমাত্র আলোটা দরজা দিয়ে ঢুকুক। সবটুকু অন্ধকার পরিষ্কার করে দিক। অপেক্ষার যন্ত্রণা নিপাত যাক। মাহতিম ব্যকুল হয়ে আপনমনে বললো,
– একবার আসো বউ। শাড়িটা পুড়িয়ে দিও না।
চোখ থেকে হাত সরালো মাহতিম। আবার দরজার দিকে চাইলো। খোলা দরজায় কেউ নেই। কোনো পদশব্দ নেই। অধীর নেত্রে তাকিয়ে রইলো মাহতিম। অসহায়ের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যদি মেহনূর না আসে, যদি শাড়িটা পুড়িয়ে দেয়, তাহলে আজকের পর আর আসবে না। চিরদিনের জন্য মোল্লাবাড়িকে ছেড়ে দিবে। এমনভাবে সরে যাবে, যেনো কখনো ছিলো না সে। কষ্ট হবে, দুঃখ লাগবে, মনটা খুব ভেঙ্গে যাবে, তবুও মেয়েটা খুশি থাকুক। এটুকু যন্ত্রণা যদি মেহনূরকে স্বস্তি দেয়, তবে আক্ষেপ নেই। কিন্তু আফসোস, ওই মনের মধ্যে আর কাউকে জায়গা দিতে পারবে না। সেটা কোনোদিন সম্ভব না। ওই সম্মানীয় স্থানটা স্রেফ ভালোবাসার চিহ্ন। এটা অকাট্য দলিল, অমূল্য প্রমাণ, একমাত্র সাক্ষ্য যে, সেও পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো। নিঃস্ব, শূন্য, ভঙ্গুর মনটা কারো কাছে আমানতের মতো রেখেছিলো। তবে দোষ এটুকুই, আমানত তুলে দেওয়ার পর খোঁজ নেয়নি। দিনের-পর-দিন নিখোঁজ থাকার সংবাদে তার উপর গাদ জমেছে। বুঝতেও পারেনি, ভাবতেও পারেনি, গাদের পাতলা প্রলেপটা একটু-একটু করে মোটা হচ্ছে। আজ সেই প্রলেপটা শক্ত দেয়ালে পরিণত। সেটা উঠানোর পন্থা, সারানোর টোটকা তারও জানা নেই। দীর্ঘসময় এমন চিন্তা নিয়ে ডুবে থাকতেই নাকে জোরালো গন্ধ পেলো। একবার-দুইবার শান্তভাবে দম নিলো। চট করে চোখ খুললো মাহতিম। ধপ করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় শক্তি পুরোপুরি সজাগ! পোড়া গন্ধটা সত্যি-সত্যিই পাচ্ছে। অন্ধকারে আরো একবার নিজেকে স্থির রাখলো। এটা কি ভ্রম, নাকি সত্য, সেটা বুঝার জন্য শান্ত রইলো। যতবার বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে, ততবার পোড়া গন্ধটা নাসাপথে ঢুকছে। ক্রমাগত জোরে-জোরে নিশ্বাস নিতেই একলাফে বিছানা থেকে নামলো। না, মেহনূর করবে না। নিশ্চয়ই গন্ধটা বাইরে থেকে আসছে। নিজের মিথ্যা অনুমানকে সাঙ্গ করে জানালা খুললো মাহতিম। ইতিমধ্যে মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেছে। অস্থিরভাবে ডানে-বামে চোখ ঘুরালো মাহতিম। নির্ঘাত খড়কুটো পুড়াচ্ছে। কিন্তু না, কোথাও কোনো খড়কুটো নেই। বাইরে কোনো আগুন নেই। মাহতিম একবুক হতাশা নিয়ে জানালা থেকে সরে এলো। হতভম্বের মতো পা চালিয়ে বিছানার কাছে আসলো। অন্ধকারে অসতর্কভাবে হাঁটার জন্য পায়ে উষ্টাঘাত খেলো। প্রচণ্ড ব্যথায় চোখটা কুঁঁচকে যেতো, কিন্তু মাহতিম পাত্তাই দিলো না। ধপ্ করে বিছানায় বসে পরলো, অথচ পায়ের প্রতি খেয়াল রইলো না।
.
সুজলার নির্দেশে কেউ ঘর থেকে বেরোয়নি। সবাই যার-যার খাবার নিয়ে নিজেদের ঘরে ঢুকেছে। ইতিমধ্যে সাবা ও সুরাইয়া বাদে সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। সুজলা ইচ্ছে করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেছেন। তিনি সবকিছু সময়ের হালে ছেড়ে দিয়েছেন। যদি সবকিছু স্বাভাবিক হয়, তাতে দুজনের মঙ্গল। যদি মেহনূর অটল থাকে, তবে মাহতিম কি করবে, তিনি জানেন না। কিন্তু মন গলানোর মতো অদ্ভুত আকর্ষণ মাহতিমের আছে। অন্তত, একটা গুণের কারণে দশটা মানুষকে বাজাতে পারে। ওর যুক্তি, ওর কথা, ওর দূরদর্শি চিন্তাভাবনা বেশ আশ্চর্যজনক! কথাবার্তায় নিশ্চয়ই চুম্বকের মতো একটা ব্যাপার আছে। নাহলে মানুষ ওর কথা শুনতে বাধ্য হয় কেন? প্রতিটি কথা বেশ মাপযোগ করে বলে। সেখানে বাড়তি কথার রেশ থাকে না। বাক্যের-পর-বাক্য যেনো সততার সাথে ফুটে উঠে। মিথ্যের ছোঁয়া থাকে না। এবারও সুজলা সব কথা শুনেছেন। মাহতিমের প্রতিটি কথা বর্ণনার সাথে শুনেছেন। একটি ঘটনা শোনার পর আশ্চর্য না-হয়ে পারেননি। যে দু’বছর দেশের বাইরে ছিলো, ওসময় দেশে নির্বাচনী হাওয়া গেছে। দেশের পরিস্থিতি কি ছিলো, বলার মতো না। ওমন বীভৎস পরিবেশে সবকিছু সামাল দেওয়াটা সোজা কথা না। তাঁরও মনে রজনীর মতো প্রশ্ন বুনেছে। এভাবে বাজির উপর বাজি খেলাটা সহজ কর্ম না। তাও রাজনীতিতে চাল ফেলাটা সাংঘাতিক কিছু। মাহতিম যেখানে প:লি:টি:ক্স করে না, সেখানে প:লিটি:ক্সে:র হম্বিতম্বি বুঝলো কি করে? এটা কি আশ্চর্যের ব্যাপার না?
.
মৃত্যুর কাছে পরাজিত সৈন্য যেমন নিরুত্তাপ ভাবে তাকায়, চক্ষু ধীরে-ধীরে মুদিয়ে ফেলে, দু’ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ শ্বাসটুকু ছাড়ে, তেমনি সশব্দে দম ছাড়লো মাহতিম। নিজের সমস্ত অনুভূতি আবদ্ধ করার জন্য নিচের ঠোঁটে দাঁত চাপলো। সুদীর্ঘ শ্বাসটা নিতেই অতিকষ্টে ঢোক গিললো। খুব চেষ্টায় ছিলো চোখদুটো শুষ্ক থাকুক। থাকলো না। ভেতরের যন্ত্রণাগুলো কোনোভাবেই ক্ষান্ত দিলো না। বহুদিন পর গভীর-শান্ত চোখদুটো ভিজে এলো। চক্ষুপল্লব বেয়ে নিভৃতে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরলো। বদ্ধ চোখের পাতায় তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুল চাপলো মাহতিম। পকেট থেকে ফোন বের করলো। দ্রুত অবসাদগ্রস্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কল বসালো সে। কয়েকটা টিউন যেতেই রিসিভ হলো কলটা। ওপাশ থেকে স্বাভাবিক কন্ঠে সাড়া দিয়ে বললো,
– হ্যালো,
নির্যুত্তর রইলো মাহতিম। কোনো কথাই বলতে পারলো না। অনেক চেষ্টা করলো, একটা শব্দও বেরুলো না। ওপাশের ব্যক্তি এবার ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো। বিচলিত হয়ে বললো,
– তুই কি চুপ থাকবি?
তিরতির আঙ্গুল ভিজে যাচ্ছে। গাল বেয়ে নিঃশব্দে ফোয়ারা ঝরছে। নাক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিতেই মাথা ঝুঁকালো মাহতিম। নিচের ঠোঁট ছেড়ে ঢোক গিললো। চোখ থেকে আঙ্গুল সরিয়ে ধাতস্থ গলায় বললো,
– কেমন আছিস?
কন্ঠটা স্বাভাবিক লাগছে না। নির্ঘাত কিছু হয়েছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছে সৌভিক। তৎক্ষণাৎ সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরলো। মনে-মনে শঙ্কা নিয়ে চিন্তিত গলায় বললো,
– কিচ্ছু লুকাবি না মাহতিম। সব খুলে বল্। তোর কন্ঠ আমার কাছে সুবিধার লাগছে না।
কন্ঠরোধ হয়ে এলো মাহতিমের। আর একটা শব্দও বলতে পারলোনা। খুব চেষ্টায় কান্নার উচ্ছাসটুকু ঢেকে রাখলো। সৌভিককে কিছুই বুঝতে দিলো না। কি বলবে সৌভিককে? কি বলার জন্য ফোন দিয়েছে? মাহতিম কোনো কথাই বললো না। কলের ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন সৌভিক আবার জিজ্ঞেস করলো,
– দোস্ত বল না। এতো বছর যোগাযোগ করিসনি সব মাফ। তোর কি হয়েছে বল্। আমার কাছে তো কিচ্ছু লুকাস না। অন্তত সেই বিশ্বাসে বলে ফ্যাল। তুই কাঁদছিস কেন শা::লা? তুই অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজে কাঁদবি কেন? ফোন দিয়েছিস চুপ থাকার জন্যে? তুই একবারও যোগাযোগ করিসনি। উলটো নাম্বার বন্ধ করে বসেছিলি। তোর মতো আস্ত শ:য়:তা:ন হয়?
বন্ধুতুল্য সৌভিকের কথা শুনে ঢোক গিললো মাহতিম। অনেকটা সময় নিয়ে স্থির হলো সে। হাতের উলটোপিঠে চোখ ডলে আর্দ্র গলায় বললো,
– আমার ফোনকল ট্র্যাক হতো। তোদের সাথে যা কথা বলতাম, সব শুনতে পেতো। যোগাযোগ বন্ধ ছাড়া উপায় পাইনি সৌভিক। যেই মাধ্যমেই কথা বলি না কেন, সব রেকর্ড হয়ে পৌঁছে যেতো। এর মধ্যে আমার বাইরে যাওয়াটা জরুরী হয়। কি কারণে দেশের বাইরে যাই, তুইতো জানিস। ওই অবস্থায় কিভাবে ওকে ছেড়ে যাই বল্? ফ্যামিলি এ্যালাউ করলে ওকে রেখে যেতাম? আমিতো ট্রিপ যাইনি। কিভাবে ওকে নিতাম? ও আমার কথা বুঝলোই না। একটা জিদ ধরেই আছে। সেদিন কেন মাহদির জন্য ওকে দায়ী করেছি। সৌভিক তুই-ই বল, দায়ী যদি করতাম, ওকে কি বাঁচিয়ে রাখতাম? মে;রে ফেলতাম না?
ভারী নিশ্বাস ছাড়লো সৌভিক। কন্ঠ খাটো করে বললো,
– তোর সংসারের কেরোসিন দিয়ে আমার জীবনে বাতি ধরিয়ে দিলি। এখন তুইযে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিস সেই হুঁশ আছে? তোর সামান্য কাণ্ডে এদিকে শানাজ পযর্ন্ত তোর নাম শুনতে চায় না। ওর তো বোন হয়। তার উপর তোকেও খুব মান্য করতো। আমি কতবার তোর কাছে কারণ জিজ্ঞেস করেছি, উলটো তুই আমাকে ব:কাব;কি করে দ:মিয়ে দিতি। ওর মনে আঘাত লেগেছে মাহতিম। ওর বদ্ধমূল ধারণা এটাই, তুই সেদিন ভুলবশত সত্য কথা উগলেছিস। ও এটা ভাবেনি, তুই অসতর্ক হয়ে ভুল কথা বলেছিস। এজন্যই বড়রা বলে, কথা আর থুথু একবার ফেললে মুখে তোলা যায় না। মানুষেরও ভুল হয়। তুই আছিস কোথায়? তোর কল তো বিডির টাইম শো করছে।
পোড়া গন্ধটা আরো বেড়েছে। রুমের ভেতরটা ধোঁয়াটে। প্রচণ্ড চোখ জ্বালা করছে। নাক নিয়ে নিশ্বাস নিতেই খুক-খুক করে কাশলো মাহতিম। ধোঁয়া সরানোর জন্য ডানহাত নাড়তেই কাশতে-কাশতে বললো,
– আমি দেশে একটু কাজে —
গলা বিষিয়ে উঠলো কাশিতে। প্রচণ্ড ধোঁয়া নাক দিয়ে ঢুকে কন্ঠনালিতে সমস্যা করছে। স্বাভাবিক কথা তো দূরে থাক, নিশ্বাসই নিতে পারছেনা। হঠাৎ কয়েক মিনিটের মধ্যে কি হলো? মাথা উঠিয়ে দেখলো পুরো রুম ধোঁয়ায় ভরা। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। সব ধোঁয়ায় মিলে যাচ্ছে। কাশতে-কাশতে ফোনটা কান থেকে নামালো মাহতিম। কলের ওপাশ থেকে চিন্তার সুরে সৌভিক চেঁচামেচি করছে। প্রতিটি কাশির শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। সে চিৎকার দিয়ে ডাকলো,
– মাহতিম! দোস্ত তুই কাশছিস কেন? হ্যালো!
মাহতিম কাশির চোটে নির্যুত্তর রইলো। মুখের কাছে ডানহাত মুঠো করে কাশতে-কাশতে কল কাটলো। দ্রুত বাঁহাতে ধোঁয়া সরিয়ে রুমের দরজা খুললো সে। বুঝতেই পারছেনা এতো ধোঁয়া কোত্থেকে এসেছে। চোখে অসহন জ্বালা নিয়ে ডানে-বাঁয়ে চোখ ঘুরালো। না, কিছু দেখা যাচ্ছে না। কাশতে-কাশতে গলাটা বাজেভাবে ঝাঁজাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক গন্ধ না। এটা ঝাঁজালো টাইপের গন্ধ। যেটা নাক দিয়ে ঢুকলে নিশ্বাসে জ্বালা ধরে, গলার কাছে খুশখুশে ভাব হয়, চোখ দিয়ে পানি পরে। তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে কোনোমতে নিচে নামলো মাহতিম। আঙিনায় সব ঠান্ডা। কেউ নেই। গন্ধ-টন্ধ কিচ্ছু নেই।
অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে সিঁড়িতে উঠলো মাহতিম। সে জানে, সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। তবুও গন্ধটা কেউ পায়নি। না-পাওয়ার অবশ্য কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, মরিচ পোড়ার ঝাঁজালো গন্ধ কেউ পেলো না? এটা কি স্বাভাবিক ঘটনা? নাতো, এটা স্বাভাবিক ঘটনা না। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলো। এই সাইডের দোতলায় কেউ থাকে না। বর্তমানে সে একা। মোম জ্বালায়নি বলে বারান্দাটা অন্ধকার। বলতে গেলে পুরো জায়গাটাই আলোহীন। বাইরে বৃষ্টি নেই। সেটা ক্ষণিকের জন্য থেমেছে। রুমের ভেতর থেকে সকল ধোঁয়া দরজা দিয়ে বেরিয়েছে। ভেতর-বাড়িতে খোলা আঙিনা থাকার জন্য গন্ধটা বুঝি ছড়ায়নি। নাহলে ঠিকই সবার ঘরে-ঘরে ঢুকতো। ফ্ল্যাশ জ্বালানো মোবাইলটা রুমের কাছাকাছি এসে বন্ধ করলো। কলপাড় থেকে মুখ ধুয়েছে মাহতিম। চোখের জ্বালাটা কমে এলেও গলা খুশখুশ করছে। কাশিটা থেমে-থেমে হচ্ছে। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগালো মাহতিম। আর খুলে রাখার প্রয়োজন নেই। যার জন্য নৈঃশব্দের মূহুর্তগুলো কাটিয়েছে, সে আর মুখ ফিরেও চাইবে না। অন্ধকার রুম, একাকী মূহুর্ত, কেউ নেই পাশে। এমন একটা নিঝুম রাতে পুরোনো স্মৃতি ঘাটলো। কাল তো চলেই যাবে, আজ না-হয় শেষ স্মৃতিটুকু থেকে যাক। খোলা জানালার কাছে আসলো মাহতিম। কাশতে-কাশতেই গলা ঠিক করলো। কয়েকবার খাকাড়ি দিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়লো। আকাশে তাকিয়ে মলিন চাহনিতে হাসলো মাহতিম। সুর ধরে একটুখানি গাওয়ার ইচ্ছা রাখলো,
অভিমান পিছু নাও,
তাকে পিছু ফেরাও।
তার কানে না যায় পিছু ডাক আমার,
মুখ বুজেই তাকে ডাকছি আবার।
দুচোখ বন্ধ করে থেমে গেলো মাহতিম। কোথাও যেনো লেগেছে। আবার পুরোনো ঘাঁয়ে আঁচড় পরেছে। আর কখনো গান গাইবে না। যেই গলা দিয়ে তীব্র সুর বেরোয়, সেখান দিয়ে রেওয়াজ গলা মানায় না। আজই এই গানের ব্যাপারটা জলাঞ্জলি দেবে। শোয়ার জন্য বিছানায় কাছে আসলো মাহতিম। জানালা থেকে সরার পর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কোনোমতে হাতড়ে-হাতড়ে টেবিলে ফোন রাখলো। বিছানায় উঠে দু’হাতে টিশার্ট খুলে ফেললো। আন্দাজে বালিশের কাছে টিশার্ট রাখতেই হঠাৎ কেউ অন্ধকার চিঁড়ে বললো,
– কলেজে যখন আপনার পরিচয় দিয়েছিলাম। সবাই আপনার পেশা শুনে আপনাকে ‘ ঘ্যা:ড়া, ব:দরা:গী, র:সক:সহীন ‘ বলেছিলো। আমি ওদের কথায় তর্ক করিনি। রেসোর্টের সন্ধ্যায় আপনার ঠোঁটে যেই গান শুনেছিলাম, আপনাকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছাটুকু সেদিনই অনুভব করি।
আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে মাহতিম। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই তার গায়ে হাত রাখলো। চমক উঠলো মাহতিম। কিছু বলার আগেই একজোড়া কোমল বাহুপাশ তাকে বেষ্টন করে ধরলো। তার উন্মুক্ত বুকের কাছে ছোট্ট দেহটা লুকিয়ে পরলো। খুব শক্ত করে আশ্লেষের ডোরে বেঁধে ফেললো। মাহতিমের মুখের কাছে নিজের মুখ এনে বললো,
– জড়িয়ে ধরবেন না?
এক টুকরো হাসি দিলো মাহতিম। চোখটা অন্ধকার সয়ে গেছে। দুটো কালো চক্ষু মাহতিমের দিকে তাকিয়ে আছে। আবদারী মুখটা খুব কাছে, খুব নিকটে, খুব সন্নিকটে। মাহতিম পাগলের মতো ওই মুখে চুমু খেলো। দু’হাতে ছোট্ট মুখটা ধরে গালে-কপালে আদর করলো। জোরে-জোরে উত্থাল নিশ্বাস নিতেই মুখ নামালো মাহতিম। সুনিবিড় অন্ধকার প্রাসাদে একমাত্র মানুষটা বহুদিন পর আলো জ্বালালো। যেমন যত্নের সাথে সেই প্রাসাদের প্রতিটি কক্ষে আলো জ্বালানো হয়, তেমনি আবেশীচিত্তে ওষ্ঠাধরে চুমু বসালো মাহতিম। দমবন্ধ করে তার ভালোবাসাটুকু অধরযুগলে জাহির করলো। ঠিক কতক্ষণ, কতখানি, কতটুকু সময় পেরুলো মেহনূরের জানে নেই। মাহতিমের চোখ এখনো বন্ধ। পিঠে বুলানো হাতটা সরিয়ে ফেললো মেহনূর। শাড়ির লম্বা আঁচলটুকু টেনে খুব সন্তপর্ণে মাহতিমের ঠান্ডা পিঠটা ঢেকে দিলো।
চলমান .
.
# .
Galpo complete Karo na keno