প্রণয়প্রেমিকের নেশাক্ত প্রণয়োণী পর্ব -০১

ভরা শপিংমল থেকে ষোল বছরের কিশোরী আহিফাকে চারজন নারী পাচারকারী নিজের বউ-বোনের পরিচয় দিয়ে অজ্ঞান করে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে। খবরটি চ্যানেলের মধ্যে তাজা খবরে পরিণত হয়েছে। রিপোটার্স শপিংমলের ম্যানেজারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে এরুপে প্রশ্ন করে।

‘স্যার মেয়েটি কে ছিল! তাকে হরণ করার পেছনে কার বড়জোড় হাত আছে বলে মনে করেন। আর মেয়েটাকেও বা বউ-বোনের পরিচয় দেওয়ার কারণ কি!’

রিপোটার্সের কৌতূহলী প্রশ্ন শুনে ম্যানেজার ভেবাচ্যাকা খেয়ে যায়। আমতা ভাব নিয়ে অবুঝ দৃষ্টিকোণে বলে,

‘ম্যাম এন্ড স্যার’স মেয়েটাকে আমরা চিনি না। সে শুধু ওয়াশরুম থেকে এমাজেন্সি কল করে বলে ছিল, তার হেল্পের প্রয়োজন। ব্যস, আমি ফিমেইল ওয়েট্রেস পাঠিয়ে ছিলাম। তবে ঐ মেয়ের কোনো ক্লু পায়নি। কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি ঘেঁটে দেখেনি। কিন্তু একঘণ্টা পর ল্যান্ডফোন থেকে ওয়াচম্যান কল করে জানায়, কালো ড্রেসআপের কয়েকজন লোক এক মেয়েকে ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করুন মেয়েটার নাম-পরিচয় আমরা জানিনা।’

ম্যানেজারের কথা শুনে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগে রুবা ও রুহিয়া। উভয়ের বয়স আনুমানিক চৌদ্দ বছর হবে। দুজনে জমজ বোন। তাদের কান্না দেখে রিপোটার্স আগ্রহদীপ্ত হয়ে তাদের সামনে প্রকট হলো। বেচারীরা আকস্মিক কয়েকজন রিপোটার্সের ভীড় দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠে। দুজন নিজেদের ঝাপ্টে ধরে মুখশ্রীতে আশ্চর্য ভাব ফুটিয়ে আনে। এক রিপোর্টার মেয়ে উৎসাহী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘ম্যাম আপনি কি জানেন কিডনাপিত মেয়েটি কে বা তার পরিচয় কি! উৎসাহী জনতা জানার আগ্রহ পোষণ করছে।’

রুবা দুঃখী চোখের পানি আড়াল করতে রুহিয়ার কাঁধে মাথা রাখে। সে তার মাথায় হাত বুলিয়ে রিপোর্টারকে বলে,

‘মেয়েটার নাম আহিফা জামান। আমাদের খ্যান্ত বোন।’

‘খ্যান্ত’ শব্দ শুনে রিপোটার্স একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তাদের প্রসঙ্গ হলো ‘খ্যান্ত’ আবার বোনও হয়। এ আবার কোন ধরনের বোন! রুহিয়ার কথায় রুবা চট করে মাথা তুলে বলে,

‘এ্যা ঐ গাধী খ্যান্ত না খালাতো বোন হবে।’

রুবা বুঝতে পেরে ‘হে খালাতো বোন আমাদের!’ রিপোটার্স অন্য কোনো প্রশ্ন করিনী। এটুকু যথেষ্ঠ খবরকে তাল থেকে তিল বানানোর জন্য। রুবা ও রুহিয়া মলিন চেহারা নিয়ে মল থেকে বেরিয়ে যায়। বাহিরে এসে অগ্নিশর্মার ন্যায় তাদের খালাব্বা আদাফাতকে দেখতে পায়। ভয়ে ঢোক গিলে দুজনে। আদাফাত শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ে বলে,

‘গাড়িতে উঠো।’

বেশ নিশ্চুপে তারা গাড়িতে উঠে পড়ে। আদাফাত তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোনের মধ্যে কাকে যেন ছড়ানো খবরের বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দেয়। মাথার থেকে চিন্তা ঝেড়ে তিনিও গাড়িতে বসে বসে পড়ে। মাত্রাতিরিক্ত চিন্তার ফলে প্রেশার লো হতে পারে। সে ডক্টর হওয়ার তার নিজের হেল্থেরও খেয়াল রাখতে হবে। তবুও মনের খুঁতখুঁতে আকাঙ্ক্ষা রয়েই যায়! না জানে তার চোখের মণি আহিফা কোথায় আছে বর্তমানে!

____

‘কু’ত্তা’র লেজগুলো আমারে কিডনাপ করলি কেন! ইংল্যাণ্ড ফিরতি মেয়েকে কিডনাপ করিস সাহস কতবড় তোদের।’

ডাকাত দলের লিডার রুমের বাহিরে মদ গিলছে। তার সাঙ্গপাঙ্গ তিনজনে নাকের মধ্যে ড্রাগের ঘ্রাণ শুকে নিচ্ছে। লিডারটা বদ্ধ রুম থেকে মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পেয়ে মাথা চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে,

‘শা’লী চুপ কর। মাথা খাইস না।’

ভয়ংকর বিশ্রী কণ্ঠের অধিকারী পুরুষের আভাস পেয়ে নুয়ে পড়ে আহিফা। ঠোঁট কামড়ে বেঁচে যাওয়ার প্রেরণা মনে আঁটকায়। কেমনে রেহাই পাবে সে! পাজোড়া দড়িহীন উম্মুক্ত থাকায় ‘উফ উফ’ করে আর্তনাদ করছে। ডাকাত দলের একজন ড্রাগের ঘ্রাণ শক্ত ও গভীর ভাবে শুকে ‘আহ্ কি ঘ্রাণ!’ বলে চোখ খুলে। খেয়াল করে দেখে তার লিডারসহ বাকি দুজন ঘুমে তলিয়ে গেছে। সে ঢুলুঢুলু চোখে দাঁড়িয়ে লিডারসহ দুজনের নাকের কাছে হাত এগিয়ে নিশ্বাসের পর্যায় চেক করে। গরম তপ্ত নিশ্বাস ফেলছে দেখে লোকটি বিশ্রী হাসি দিয়ে বদ্ধ রুমের দিকে তাকায়। তিনজনের কেউই ভোরবেলার পূর্বে জেগে উঠবে না। ঠোঁট কামড়ে কুবুদ্ধি নিয়ে এগিয়ে যায় বদ্ধ রুমের দিকে। অন্যথায় আহিফার পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম। দড়ি দ্বারা হাত বদ্ধ থাকায় পেট চেপে আর্তনাদ বন্ধ করার অবস্থায় নেই। তবুও কসটেপ লাগানো ঠোঁট দিয়ে পিনপন ‘উহ উহ’ শব্দ বের করছে। আকস্মিক কারো পায়ের শব্দ রুমের নিকটস্থ হতে শুনতে পেয়ে খোশমনে তাকায়। কিন্তু তাকানোর সঙ্গেই ভয়ে তুষ্ঠ হলো! লোকটার বাহ্যিক দশা বিশ্রী,কুৎসিত চরিত্রের আভাস প্রকাশ পাচ্ছে। ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে।

‘আপনি কে, কে…কেনো আমাকে ধরে এনেছেন!’

লোকটি নেশার ঘোরে থাকায় মেয়ের কথায় অবুঝ রইল। বিপরীতে কিশোরীর রুপের দিকে লালসার দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। আহিফার পরণে পেটের নিচ অব্দি লং কামিজ ও গোলাপী রঙের প্লাজু রয়েছে। লোকটি হাটুগেড়ে নেশাবুদ দৃষ্টিতে প্লাজুর দিকে চাই। আহিফার ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মাথা নেড়ে ‘উম উম’ করে বারণ করছে তাকে স্পর্শ করতে! তবুও লোকটার হেলদোল নেই। সে তার বাজে হাতের ছোঁয়া আহিফার পায়ে দেয়। শিউরে উঠে সে। গলা নেড়ে চোখ ফেটে অশ্রুজল বিসর্জন দিচ্ছে! যেই না লোকটা হাতের ছোঁয়া উপরে নেবে। তার পূর্বে কে যেন তার মাথায় ছোট পাথরের ঢিল ছুঁড়ে মা’রে! হঠাৎ ঢিলের আক্রমণ ও শব্দে লোকটি বিরক্ত হলো ও ভয় পেল। তাদের আস্তানায় কেউ ঢুকেছে ভেবে দাঁড়িয়ে যায়! আহিফা পিটপিটিয়ে রুমের চর্তুপাশ্বে দৃষ্টিকোণ বুলায়। পরিবেশ নিস্তদ্ধ থাকায় লোকটি সংকোচহীন পুনরায় হাটুমোড়ে বসতে নিলে কোথার থেকে যেন আবারো পাথরের ঢিল ছুঁড়ে দেয় কে!
আহিফা নিশ্চিত কারো আহট রুমের মাঝারে অবস্থিত। লোকটি ক্ষেপে তার পকেট থেকে পি’স্ত’ল বের করে। পিস্তল চর্তুপাশ্বে ঘুরিয়ে শাঁসায়।

‘কোন শু’য়ো’রের বাচ্চা ভেতরে এসেছিস সামনে আয়! নাহলে বুলে’ট চালিয়ে তোর কলিজা এপাড়ওপাড় করে দেব।’

আহিফাও উৎসুক দৃষ্টিকোণে সামনে দৃষ্টি ফেলল। শুদ্ধ,সুশীল,লাজুক লুঙ্গি পরিহিত এক কিশোর বালক রুমের ভেতরে অনায়াসে প্রবেশ করে। উচ্চতা অনুযায়ী লোকটার চেয়ে খাটো হবে কিন্তু আহিফার চেয়ে বড়। আহিফা অবুঝ দৃষ্টিতে ড্যাবড্যাব করে বালকের দিকে চেয়ে রইল। লোকটা পিস্তল দেখিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে।

‘কে রে তুই এখানে কেমনে আসলি বল!’

বালক ঠোঁট কামড়ে ভীতিগ্রস্থ কণ্ঠে শুধায়।

‘সাহেব আমি হিসু করতে গিয়ে রাস্তা হারায় ফেলছি। এখানে কি হিসুখানা আছে!’

‘কিসের খানা!’

‘আরে মিয়া হিসুখানা!’

‘নাই রে ভাই আপনি এখান থেকে যান। কাজ আছে চরম।’

‘হে মিয়া আমারো চরম লেভেলের হিসু পাইছে। এখন না করতে পারলে আপনার উপরই করতে হবে।’

লোকটি গাধার মত হা করল। বালক নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে চোখ বুজে চিৎকার করে বলে, ‘সাহেব হিসু থামাতে পারব না। জলদি চোখ-মুখ-নাক বন্ধ কইরা নেন, নইলে হিসু আপনার পেটে যাব গা।’
তার কথা শেষ হতে দেরি করলেও হিসু গিয়ে লোকটার চোখ-মুখে পড়তে দেরি হলো না। অন্ধকারে ঝাপসা আলোতে কি হলো ঘটনা আগাগোড়া মাথায় ঢুকলো না আহিফার! কৌতূহল দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল। ভাবনার ফোড়ন কাটে তার শূন্যে ভাসা অবস্থায়। চেঁচামেচি করে নড়চড় করে সে। বালক বিরক্তের ঠেলায় নরম ঘাসের উপর ধপাস করে ফেলে দেয় আহিফাকে। বেচারী ঘাসের উপর পড়ায় তার কোমর বেঁকে যায়। মৃদু আর্তনাদ করে ‘আহ্ মরে গেলাম রে!’ বলে কোমরে হাত রেখে ধীরস্থিরে দাঁড়ায়। বালক একপলক আহিফার ন্যাকামী দেখে লুঙ্গি খুলতে আরম্ভ করে। ব্যাপারখানা আহিফার চুক্ষগোচর হতেই হাত নাড়িয়ে ‘এ হাল’কাট কি করিস তুই লুঙ্গি কেন খুলছিস!’

বালক ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘তো আধগুজা লুঙ্গি পরে কি লুঙ্গি ডান্স করব! অবশ্য তুমি যদি লুঙ্গি পড়তে চাও পড়তেই পারো। এক নাম্বার,দুই নাম্বার অনায়াসে ছাড়তে পারবে।’

শেষের কথায় চকিত দৃষ্টিতে নির্বোধের মত চাই আহিফা। ব্যাটা হাল’কাট বুঝল কেমনে তার এক নাম্বার খুব জড় চেয়ে পেয়েছে! এ কোনো জ্যােতিষী নাকি! ভীতি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

‘ছিঃ বে’হা’য়া লোক আপনার পরণের লুঙ্গি আমি পড়ব।’

বালক তার পরণের লুঙ্গির দিকে তাকিয়ে আড়চোখে আহিফার দিকে তাকায়। বাঁকা হেসে আহিফার চোখে চোখ রেখে লুঙ্গি খুলে। আহিফা উত্তেজিত হয়ে চোখ বুজে ‘না প্লিজ লুঙ্গি খুলবেন না। আমি মোটেও আপনার ইয়ে দেখব না।’
কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আহিফা চোখ খুলে তাকাতেই টাস্কি খায়। সুদর্শন এক বালক মাথায় ঝাঁঝরা চুল,মুখে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, পরণে তার টম এন্ড জেরির টিশার্ট ও শর্টপ্যান্ট। ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে আহিফা বিড়বিড়ে বলে,

‘এই ছেলে শর্ট প্যান্ট,কার্টুনের টিশার্ট পরে উদ্ধার করল তাকে! ধ্যাঁত ছাতার মাথা! কোথায় ভেবে ছিলাম হিরোর মত টাইফিট দু’বোতাম খোলা করা শার্ট ও জিন্স পরিহিত কোনো মাফিয়া টাফিয়া আসবে! তা না উল্টা কোথাকার কোন সত্যিকারের জমিচাষ ওয়ালা হাল’কাট এসেছে।’

শেষের কথাটি বালকের কর্ণগোচর হওয়ায় সে ভ্রু নাঁচিয়ে কোমরে হাত রেখে বলে,

‘এই দুষ্টু মেয়ে একে তো আমার প্যান্টের দিকে হা করে তাকিয়ে আছো! তার উপর লোলুপ দৃষ্টি দিচ্ছো। ছিঃ ছিঃ এই কারে বাঁচালাম খোদা! আমার মান-সম্মান লুটে নিচ্ছে! চোখের নজরেই মনে হয় আমার প্যান্ট গিলা করে দেবে।’

বালকের শ্রীহীন কথায় যেন মাথা ঘুরে উঠে আহিফার। দিগ্বিদিকহীন ঢলে পড়ে বালকের বুকে। বালক হকচকিয়ে যায়। আহিফার গালে মৃদু চড় লাগিয়ে আভাস পেল মেয়েটি হুঁশ হারিয়েছে। বুঝতে পেরে ফিক করে হেসে দেয় সে। আনমনে চওড়া হেসে বলে,

‘বাহ্ আমার হিসুর মধ্যে দেখি জাদুও আছে! পান্ডার মত লোকের মুখে হিসু ফেলে অজ্ঞান করেছে। এখন হিসু দেখার ঠেলায় আহিফা লজ্জায় বুকে মুখ গুজে দিল। ইশ! পুচকি মেয়েটা কত ভালোবাসে। আই লাভ ইউ টু উম্মাহ্!’

বালক তার কথা আওড়ে আহিফার গালে লম্বা এক চুমু খেল। লাজুক হেসে লুঙ্গির মধ্যে বস্তা পেঁচানোর মত আহিফাকে পেঁচিয়ে ফেলে। কোলে উঠিয়ে হাঁটা ধরে। সাইকেলের নিকটস্থ এসে বস্তাটি ঘাসের উপর সন্তপর্ণে রাখে। কোমর দুলিয়ে আনমনে আওড়ায়।

‘মেয়ে নাকি চালের বস্তা হাতটা নিশ্চিত ভাঙ্গলো!’

তখনি লুঙ্গির মারপ্যাচঁ খুলে আহিফা চটফটে কণ্ঠে শুধায়।

‘উঠালেন কেন জানেন না আমার ওজন তিন কুড়ির সমান!’

বালক তার হাত হামি দেওয়ার মত উঁচিয়ে আকস্মিক ঘাসের উপর পুশআপ দেওয়া শুরু করে। আহিফা বেকুব বনে যায়। অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে বালকের বেক্কলমার্কা কাজের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে! একে তো তার চোখে চশমা নেই। যার কারণে কিছুই স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না তার। কোমরে হাত রেখে ক্ষিপ্ত গলায় বলে,

‘আপনার কি মাথায় সমস্যা আছে! একে তো কিডনাপ করে প্রথম দলের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনলেন। তার উপর নিজের আবালমার্কা কামসাজি দেখাচ্ছেন। বলি আপনি কি পাগলাগরাধ থেকে পালিয়ে এসেছেন!’

বালক এবার সটান হয়ে আহিফার মুখোমুখি হলো। আহিফা সরু চোখে স্পষ্ট দেখার প্রয়াস করে। কিন্তু ব্যর্থ চোখের পাওয়ার খুব কম তার! প্রারম্ভিককালে বেশি ফোন টিপার ফলাফল! তথাপি অনুভব করতে পেরেছে বালকটি প্রায় ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আছে তার। সজোড়ে ধাক্কা দেয় বালককে। বেচারা মুখ থুবড়ে ঘাসের উপর পড়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,

‘ঐ লতা গাছের ডাইনী পুচকি সিনিয়রকে ধাক্কা দাও সাহস কত বড় তোমার!’

আহিফাও তেজি গলায় শুধায়।

‘আপনিও কোন আক্কেলের সিনিয়র হে! যে জুনিয়রকে মাঝরাতে মাঝরাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। ন্যূনতম জ্ঞানবুদ্ধিও নেই।’

‘আহিফা সুইটহার্ট বেশি বেশি বলে ফেলছো কিন্তু!’

‘আহিফা সুইটহার্ট’ শব্দ দুটি আহিফার কানে ঝংকার তুলল। দুকদম পিছিয়ে যায় সে। এবার চোখে না দেখলেও পরিপূর্ণ বিশ্বাস তার যে বালক অন্য কেউ নয় স্বয়ং আশফি ফাওয়াজ সে! কাঁপান্বিত কণ্ঠে বলে উঠে।

‘আ আশফি আপনি!’

আশফি নিজের নাম আহিফার গলায় শুনে খুশিতে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তার বাহু ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,

‘বাহ্ সেকালের লজ্জাবতীদের মত তোতলামিও শুরু করছো দেখি! শুনতে কিন্তু আমার মন কেমন কেমন ফিলিং দিচ্ছে গো। আহা কি আনন্দ আসমানের হাওয়ায়!’

‘সেটআপ অসভ্য ইতর তুই সেই না যে আমার গাড়ির পিছু নিয়ে ছিলি।’

কথাটি শুনে চোরা দৃষ্টিতে মাথা চুলকানি দেয় আশফি। আহিফার কথায় মিথ্যে নেই। সাইকেল নিয়ে আহিফার গাড়ির পিছু নিয়ে ছিলো ঠিক তবে মলের সামনে আসায় সাইকেল ঘুরে ফেলে সে। কেননা তার আব্বু অথাৎ আরভীক কল দিয়ে বাসায় আসতে বলে! আব্বুর কথা সে কখনো অমান্য করেনি। বিধেয় আহিফার পিছু ছাড়ল। ভাবান্তর থাকায় আহিফার চিৎকারে তার ধ্যান কাটে। সে মুখ ফুলিয়ে বলে,

‘কেন তুমি বুঝি আমাকে চিনো নেই!’

‘নো হু আর ইউ মিস্টার বুচা!’

‘ওয়াও আমি বুচা তো তুমি বুচার বউ পুচকি সুইটহার্ট!’

‘সেটআপ আপনার আজাইরা কথা বন্ধ করে আমাকে গার্লস টয়লেটে নিয়ে যান।”

আশফি বাকশক্তিহীন তাকায়। সে কি কানে ভুল শুনেছে কিনা বুঝায় ন্যায় পুনরায় জিজ্ঞেস করে।

‘তোমার একনাম্বার পেয়েছে আগে বললেই পারতে। খামোখা আমার কিমতি টাইম নষ্ট করলে ছেহ্! চলো তোমাকে একনাম্বারী জায়গায় নিয়ে যায়।’

ফাটাফাটা দৃষ্টি নিয়ে হা করে তাকায় আহিফা। সে বুঝছে না এই বালকের সমস্যা আসলে কোথায়! আক্কেলে নাকি জ্ঞানইন্দ্রিয়ে। আহিফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ ঘুরিয়ে পুনরায় হেঁচকা টেনে কোলে উঠিয়ে নেয় আশফি। হেলেদুলে গাজাঁখোড়ে মত সামনে এগোয় সে। আহিফা যেন সাত আসমান থেকে ধপাস করে পড়ে যাবার উপক্রম! সে ফিসফিসিয়ে করুণ গলায় শুধায়।

‘ও ভাই খাড়া তুই ! আমাকে তো ফেলেই দিবি মনে হচ্ছে। যে হারে গাজাঁখোড়ের ন্যায় হাঁটছিস।’

আশফি দুষ্টু হেসে আহিফাকে কোলে নিয়ে পা উচিঁয়ে হাঁটতে থেকে ঠোঁটের কোণায় সুর টেনে বলে,

‘প্রিয়তমাহ্ তুমি আর আমি একদিন গোধূলি বিকালে হাতে হাত রেখে বসে বসে গাজাঁ খাবোউ।’

ফাটাঁবাশের কণ্ঠ শুনে কান যেন ফেটে গেল আহিফার। সেও গম্ভীর কণ্ঠে সুরের মত টান দিয়ে বলে,

‘আর আমি তোমায় বসে বসে থাপ্পাড়াবো ওগোউ।’

লাজুকলতার ন্যায় আশফি মুখ ঢাকার চেষ্টা করেও পারল না। কেননা হাতে তার ভারী ওজনের মেয়ে আছে। ফলে সে আফসোসের সুরে বলে,

‘লাভলী ডেয়ার তোমার হাতের চড় লাগলে সোজা হার্টবিট বেড়ে যাবে।’

কথা সম্পূর্ণ করে আহিফাকে নিচে নামায় ও হাতের ইশারায় ঝগড়া থামানোর প্রয়াস করে। আহিফাও নিবিড় রইল। আশফি হাতের ইশারায় গার্লস টয়লেট দেখায়। পরিতুষ্টে আহিফা তৎক্ষণাৎ টয়লেটে প্রবেশ করে। আশফি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ফোন বের করে তার চাচ্চুকে মেসেজ দেয়।

‘চাচ্চু ডুড কাম খাতাম!’

‘ওয়েল ডান মাই সান ইন লো!’

‘একমাত্র তুমিই বুঝলে। তোমার মেয়ের মাথায় না জানে কার ভূত চেপেছে মনে।’

‘সান ইন লো আমার মেয়ের মাথায় যারই ভূত চাপুক না কেন! আই নো তুমিও তোমার বাপের মতই করবে। অবশ্য তোমার ফাদার আর মাদার ইন লো রাজি আছে।’

‘উম্মাহ্ চাচ্চু ইউ আর দ্যা বেস্ট ফাদার ইন লো।’

মেসেজটি পড়ে আদাফাত চওড়া হাসি দেয়। নাইফা ভ্রু কুঁচকে কাপড় ভাঁজ করতে থেকে চোখের পানি মুচ্ছে আর ফুঁপাচ্ছে! তার কাছে মনে হচ্ছে আদাফাতের কাছে নাইফার অনুভূতি তুচ্ছ! সেই কথা ভেবে আরো চিন্তায় ফুঁপাচ্ছে। আদাফাত বিব্রত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,

‘ওহে বউ ফুঁপিয়ে রুমটাকে ভূতুড়ে বানাচ্ছো কেন!’

‘কি তুমি আমাকে ইনডাইরেক্টলি ভূতনী বললে!’

আদাফাত ঢোক গিলে হেহে করে হেসে বলে, ‘না না কই তুমি তো!’

পরিপূর্ণভাবে কথা সমাপ্ত করতে পারল না সে। তার বউ মিসেস নাইফা গরম খুন্তি কিচেন থেকে নিয়ে তার দিকে এগোয়। দিশা হারিয়ে তৎক্ষণাৎ চেঁচিয়ে বলে,

‘আজ জরুরি সার্জারি আছে আসছি বউ। মাথা গরম আইমিন ঠান্ডা হলে কল দিও।’

লেজ গুটিয়ে কোনোমতে বেঁচে যায় আদাফাত।

____

‘এই যে মিস্টার হাল’কাট আমি বাসায় যাবো।’

‘যাও গাজাঁ তো খাবে না, নিয়েও যাবো না।’

‘এই রাতবিরাতে গাজাঁ পাবো কই হে! আর এসব গাজাঁ টাজা ব্যাড গার্লস খাই। আইম এ গুড গার্ল।’

আশফি শুনে চোখ বিড়িয়ে ফিসফিসিয়ে আওড়ায়।

‘গুড নাকি ধানিলঙ্কা বেশ ভালো জানা আছে।’

‘কি বললেন!’

আশফি কথা বলবে তার পূর্বেই দেখতে পেল ডাকাত দলের লোকগণ জেগে গেছে ইতিমধ্যে। তারা সন্নিকট হওয়ায় ঐ হিসু খাওয়া লোক আশফি ও আহিফাকে দেখে ফেলে। তাদের লিডারকে শাঁসিয়ে অভিযোগ দিয়ে বলে,

‘ভাই ওই যে আমাগো মাল ঐ ছোডো পোলা উদ্ধার কইরা পালাইতাছে!’

আশফি ও আহিফা দুজন আহাম্মকের মত চেয়ে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘পালাও!’ সে আহিফার হাত ধরে সামনের দিকে দৌড় লাগায়। দুজনে কোনোমতে প্রধান রাস্তার চওড়ায় এলে আহিফা হাঁপাতে থেকে বলে,

‘এবার যাবো কেমনে আমরা!’

আশফি চট করে মাথা তুলে বলে,’সাইকেল!’
আহিফা চটে গিয়ে বলে,’তোর মুণ্ড বেআক্কেল সাইকেল দিয়ে গেলে গুন্ডারা আমাদের উপর গুলি চালিয়ে খুল্লি উড়িয়ে দেবে।’
আশফি সময় বিলম্ব না করে গাছের ঝোঁপঝাড় হতে তার সাইকেলটি বের করে আহিফার বাহু ধরে বসায়। সেও বসে সাইকেল চালানো শুরু করে। আহিফা ভর্য়াত দৃষ্টিতে পিছু তাকাচ্ছে। কিন্তু আশফি আয়েশে ধীরস্থিরভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ও মনে মনে চাইছে, ‘তোমার আমার এ রাস্তা যেনো শেষ না হোক কভুও।’
আহিফা একপলক পিছু-সামনে তাকাচ্ছে।আশফি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘খুব দরদ দেখছি তাদের জন্য। কেন আসছে না বলে বারে বারে পিছে তাকাচ্ছো।’

‘চুপ হাবা একখান! না জানে কবে এসে সুট করে দেয়। নিজে মরবি আমারেও মরাবি।’

‘তবে কথা নেই। মুভির মত শেষ কথা, মারেনগিবি হাম সাথ সাথ, জিয়েনগিবি হাম সাথ সাথ।’

‘তোর বালাইচাঁদ বলদ।’

‘দেখো আমি কিন্তু এইচএসসি কেন্ডিডেইটার। তোমার সিনিয়র।’

‘বুচা সিনিয়র কোনখান! আমি নিউ টেন হাহ্।’

আশফি শুনে ফিক করে হেসে। দেখে আহিফার রাগের আগুন উত্তপ্ত হলো। তেজি কণ্ঠে বলে,

‘হাসছেন কেন!’

‘না মানে দেখে মনে হচ্ছে ক্লাস ফাইভের বাচ্চা মাইয়া। মোটা শরীরে অবশ্য পোয়াতি লাগছে।’

রুক্ষ মাথায় আহিফা খামচি দেয় আশফির কোমরে। এতে সে যন্ত্রণা অনুভব করলেও নিশ্চুপে সহে যায়। আহিফা ক্রোধের ন্যায় কি করছে জানে না! তবে তার মন মস্তিষ্ক ঠান্ডা হবে আশফিকে কষ্ট দেওয়ার পরই। আশফির কোমরে আহিফার নখ বিঁধে রক্ত ঝরছে। এতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। আপনমনে সাইকেলের গতি বাড়িয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে! আহিফার চোখে অনিমেষ ঘুম চলে আসে। চলন্ত সাইকেলে, অপ্রিয়ের ন্যায় প্রিয় মানুষটি বুকে আগলে নিয়ে চলছে! বাড়ন্ত রাত, শীরশীরে ঠান্ডা হাওয়ায় সে ঘুমের জগৎ এ তলিয়ে যায়। আশফি ক্ষণিকের জন্য সাইকেল থামায়। চোখ নামিয়ে একপলক আহিফার দিকে তাকায়। মেয়েটা বড্ড খারাপ! কি করে পারল তার প্রণয়প্রেমিককে ক্ষত দিতে! একটুও কি তার মনে ক্লেশ জম্মায়নি তার প্রতি। হয়ত না,হলে কি আর রক্ত ঝরাতো। আশফি কি ভেবে যেন চর্তুপাশ্ব দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। কেউ নেই দেখে শয়তানি হেসে আহিফার ঘাড়ে তীব্র,ঘনক্ষেপে কামড় বসিয়ে দেয়। ঘুমের ঘোরে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করে চোখ খুলে আহিফা। আকস্মিক আক্রমণে মোটেও প্রস্তুত ছিল না সে। ‘আহ্ রাক্ষস ছাড় আমায়!’ বলে সে আশফিকে ছড়ানোর চেষ্টা করে। তবে আশফি একদন্ডও নড়ল না। বরং ক্ষণিক রক্ত আহিফার ঘাড় থেকে ঝরিয়ে তবেই ছাড়ল। ফুঁপিয়ে ঠোঁট ফুলানোর মত কেঁদে বলে,

‘আমি পাপ্পাকে তোর কথা বলে দেবো বেয়া’দব রাক্ষস ভ্যাম্পায়ার, আমারে কামড়াস যাহ্ তোর কপালে ডাইনী জুটবে।’

‘অলরেডি সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’

আহিফা শুনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ কাঁদতে থাকে। আশফি পকেট থেকে কানগুতোনি বের করে একটা আহিফার হাতে ধরিয়ে দেয়। হকচকিয়ে যায় সে। অবুঝের মত জিজ্ঞেস করে।

‘কানগুতোনি দিলে যে!’

‘কানের মধ্যে পোকা জমছে তোমার। সেগুলো পরিষ্কার করে নাও। তবেই শুনতে পারবে নিজের ফাটাঁবাশের ভ্যাঁ ভ্যাঁ চিৎকাদুরীর সুর কেমন!’

আহিফা ফুলেফেঁপে উঠল। এমুর্হুত সহায়কারী কেউ নেই বলে সে বাধ্য আশফির কাছে। বিধেয় কথ্যহীন সাইকেল ধরে বসে রইল। আশফি ঠোঁট কামড়ে বাঁকা হাসি দিয়ে সাইকেল চালু করে।
আড়চোখে সে পিছু তাকায়। গুন্ডাদের চিহ্নটুকু দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। হবেই না বা কেমনে! সে ইচ্ছেকৃত রাস্তার প্রধান চওড়ায় এসেছে। কেননা ঝোপের পেছনে তার সঙ্গে এসে ছিল গার্ড’স। যাদের কবলে ডাকাতদল আটকা পড়েছে। আহিফা পুনরায় ঘুমিয়ে যায়। ঘাড়ে কামড়ানোর ফলে ব্যথা অনুভব করছে সে। কিন্তু আশফির ব্যথিত হৃদয় ও কোমর দেখতে পেল না সে। তপ্ত শ্বাস ফেলে সে বলে,

‘সবেই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে প্রণয়োণী। এখনো জানি না সামনে কি অপেক্ষা করছে। কেনো তুই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে! সেই আহিফা কই আমার! যে একদন্ড আমাকে না জ্বালিয়ে থাকতো না, বায়না না ধরে কাছে আসতো না, কই হারিয়ে গেলি রে তুই। তোকে বড্ড মিস করি। পরাণ জ্বলিয়া যায় রে প্রণয়োণী। তুই এখনো জানিস না আমি কতটা ভয়ংকরও হতে পারি। আজ সঠিক সময়ে পৌঁছেছি। বিধেয় তারা গার্ডের হাতে লেগেছে। যদি আমি ধরতাম। তবে হয়ত জ্যান্ত থাকতো না একটাও। এই প্রণয়প্রেমিকের নেশা তুই আহিফা।’

চলবে……

#প্রণয়প্রেমিকের_নেশাক্ত_প্রণয়োণী
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০১

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here