মন বাড়িয়ে ছুঁই ২ পর্ব -০৮

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_০৮.
#ফাবিয়াহ্_মমো .

দু’আঙ্গুলে এক কঠিন মোচড় মারলো! সাথে-সাথে হারিকেন নিভে শেষ। সবটুকু আলো নিঃশেষ করে অন্ধকার করলো মাহতিম। এবার তাকালো ক্ষোভের সাথে। ওই ক্ষোভিত দৃষ্টির কাছে মিইয়ে গেলো মেহনূর। ভেতরে-ভেতরে কুণ্ঠার সাথে কুঁকড়াতে লাগলো সে। ভয় মেশানো শঙ্কায় বুক ফুলিয়ে নিশ্বাস নিতেই পা চালালো মাহতিম। তার দৃষ্টি স্রেফ সামনের দিকে। পায়ে-পায়ে এগিয়ে যেতেই দূরত্ব ঘুচালো সে, ভীতু-ভীতু মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো। ভীতু মুখটা বুকের সাথে থুতনি মিলিয়ে আছে। মাহতিমের দিকে তাকানোর সাহসটুকু নেই। নিজের হাতদুটো উপরে তুললো মাহতিম। আলতো করে নতমুখটা দুহাতে ধরলো সে। নিজের সান্নিধ্যের কাছে আনার জন্য উপরে তুললো মুখটা। সেই অবুঝ, চুপচাপ, অমিশুক মেয়েটা ছলছল নেত্রে তাকালো। যার দুচোখ ভরা ছলবলানো অশ্রু। সামান্য একটু টোকা পেলেই শিশির ফোঁটার মতো গড়িয়ে পরবে। আজও সেই তীক্ষ্ম সুডৌল নাকটা টকটকে লাল হয়ে আছে। রক্তজবার একফোঁটা রঙ বুঝি নাকের ডগায় লেগেছে। সুকান্তির ভ্রুঁদুটো কাঁদো-কাঁদো ছাঁচে কুন্ঞ্চিত। সুচারু ঠোঁটদুটো খিঁচুনি দেওয়া। বহুক্ষণ, ঠিক বহুক্ষণ যাবৎ নিঁখুত মুখটা তৃপ্তি নিয়ে দেখলো মাহতিম। চুলোর হলদে শিখায় কাঁদো-কাঁদো মুখটা নিরবে দেখলো সে। কোনো কথা নেই, কোনো বার্তা নেই, কোনো ভাব নেই, কোনো ভঙ্গি নেই, শুধু স্থির নেত্রে চেয়ে থাকলো। যে চোখদুটো বুকের ভেতর দহনের দামামা বাজিয়ে দেয়, সেই চোখদুটো আজ অশ্রু ছেড়ে দিলো। নাক ফুলিয়ে ছোট্ট শিশুর মতোই ঠোঁট কুঁচকে ফুপিয়ে উঠলো। উদবেলিত রোদনটা ঠেকানোর জন্যই হোক, বা আকস্মিক ধাক্কাটা সামলানোর জন্য, মাহতিম ওর গালদুটো শক্ত করে ধরে আলতো সুরে বললো,

– ফেলে তো তুমি গিয়েছো। আমিতো সেদিন বাধা দেইনি। একটা মানুষ কি পরিমাণে ধাক্কা খেলে তোমার যাওয়াটা মেনে নিতে পারে? একবার ভেবেছো? বলো না? সামান্য একটা ইস্যু নিয়ে আমাকে ফেলে গেলে কেন? আমার কি দোষ ছিলো? কি ক্ষতি করেছি আমি? আমি তোমার কাছে নিজের ভুলটুকু স্বীকার করতে পারলাম না। তুমি আমাকে সে সুযোগই দিলে না। এমনভাবেই ফেলে গেলে আমাকে নিঃশেষ করে দিলে। কি ক্ষতি করেছি বলো? সবার কাছে আমাকেই কেন দোষী সাব্যস্ত করলে মেহনূর? আমাদের সম্পর্কটা কেনো এমন করলে? ছোট্ট একটা ভুল বুঝাবুঝি কেনো এতো বড় হয়ে দাঁড়ালো? তোমার প্রতি কোনোদিন অন্যায় ভাবনা আনিনি মেহনূর। তার সাক্ষী তুমি নিজেই আছো। কোনোদিন ভাবতেও পারবো না, তুমি খারাপভাবে থাকো। সেদিন মায়ের সাথে কি বলেছি, না-বলেছি, সেগুলো বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে বলিনি। আমার অস্থির মনটা সেদিন খুব খারাপ ছিলো। আমার তো একটা মা-ই আছে। মন খারাপের কথা কার কাছে বলবো? সেদিন কিচ্ছু ভেবে বলিনি! আমি কিচ্ছু ভেবে বলিনি! তবুও ভুল বুঝলে? আমি পাগল মেহনূর। আমার তো মাথা ঠিক ছিলো না। সবসময় আমাকে ভালো দেখো, সুস্থ দেখো, আমি কি আসলেই ভালো থাকি? ও মেহনূর, কান্না থামাও না। চোখদুটো খুলো। একটু তাকাও। তোমাকে সব বলার জন্যই তো এসেছি।

চোখের কপাট শক্ত করে বোজা। সেই বোজা চোখের পাপড়ি চুয়ে নিরব অশ্রু ঝরছে। দমকে-দমকে হিঁচকি তুলে মেহনূর কাঁপছে। নিচের অধরটা ওষ্ঠ দিয়ে চাপতেই চোখ খুললো মেহনূর। লালবর্ণের চক্ষুদুটো মাহতিমের দিকে ছুঁড়লো। ব্যথিত হরিণের মতো তাকিয়ে থেকে ফুপাতে-ফুপাতে বললো,

– তাই বলে দুটো বছর? দুই বছর খতম করে এলেন? আমার জন্য একটা দিনও ফুরসত ছিলো না? এতো অবহেলা কি করে সহ্য করি বলুন? আমিতো প্রতিটা দিন জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম। ভাবতাম, আপনি এসে নিয়ে যাবেন। দিন গিয়ে রাত হতো, রাত গিয়ে দিন হতো, অনেকগুলো মাস গেলো। এরপর বছরও পেরিয়ে গেলো। কিন্তু আমার অপেক্ষা আর শেষ হলো না। এই অপেক্ষার যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিদিন আকাশে চাইতাম, ওইদিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করতাম, আদৌ আমার কি দোষ ছিলো? তখন মন থেকে উত্তর আসতো, হ্যাঁ ছিলো। মস্তিষ্ক থেকে উত্তর দিতো, না, ছিলো না। আমার দাদাভাইয়ের আঙ্গুল ছেড়ে আপনার হাতটা ধরেছিলাম। আমার জীবনে আপনার হাতটা ভরসার হাত ছিলো। ওই হাতে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি, শক্ত করে ধরেছি, সাহায্যের জন্য কাছে পেয়েছি। সেই হাত ছাড়াটা সহজ ছিলো? গাড়িতে চড়েছিলাম। আমার মন তখনও ভেবেছিলো, আপনি আঁটকাবেন। রাগ দেখিয়ে, জিদ খাটিয়ে, চড় কষিয়েই হোক, আপনি কোনোভাবেই যেতে দিবেন না। আপনি আমাকে খুব অবাক করে দিয়ে সেদিন যেতে দিলেন। আমার মনটা ভেঙ্গে টুকরা-টুকরা হয়ে যায়। যদি আমার ভেতরের অবস্থা দেখাতে পারতাম! আমার ভেতরকার একটুকরো চিত্র যদি দেখতেন! আল্লাহ্ আমাকে খুব ধৈর্য্য দিয়েছেন জানেন। আপনার বউ হওয়ার সৌভাগ্য পাওয়ার চাইতে দূরত্বের যন্ত্রণা দিব্যি বিষাচ্ছে। আমাকে কেউ বুঝলো না। আমার জীবনে যেই কটা মানুষ পেয়েছিলাম, তাদের মধ্য থেকে আপনাকেই সবচাইতে আপন করেছি। ওই আপন-কুঠিতে আপনি প্রথম ছিলেন, আপনিই বুঝি শেষ। আপনাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম। জানেন আমার দাদার প্রতি যতখানি ভালোবাসা ছিলো, সেই দাদার মৃত্যুর চাইতেও আপনার আচরণ আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে কথা আমি কাউকে বলতে পারিনি। আম্মা ক্যান্সারে ভুগছে, কিছুদিন পর সেও চলে যাবে, তবুও আপনার চিন্তায় বিভোর থেকেছি। কেমন আছেন, কি করছেন, কোথায় আছেন। আপনাকে বেশিই আপন ভেবেছিলাম। এক অব্যক্ত আপন। যা কোনোদিন বলতে পারিনি, শুধু মনে-মনে উপলব্ধি করে অমানুষিক কষ্ট পেয়েছি।

কন্ঠরোধ হয়ে ভেঙ্গে পরলো মেহনূর। চোখ কুঁচকে মাহতিমের সামনেই নিরলস প্রতিমা চূর্ণ করে ফেললো। আগুনের সেই অগ্নিশিখার আলোতে ভঙ্গুর মেহনূরের সিক্ত মুখটা শক্ত করে ধরলো মাহতিম। নিজের মুখটা এগিয়ে সেই আরক্ত নাকের মাথায় দুঠোঁট চেপে দিলো। ছোট্ট চুমু খেলো। গালে হাত চেপে সিক্ত চোখদুটোর নিচটা বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলো। দু’চোখের পাতায় পূর্ণমায়ায় আদর করলো মাহতিম। মুখ উঠিয়ে কপালের মধ্যভাগটায় প্রগাঢ়ভাবে ওষ্ঠজোড়া ছোঁয়ালো। এক অদ্ভুত অনুভূতিতে পূর্ণ হলো মেহনূর। তনুমনে শীতকাঁটা স্পর্শ যেনো রন্ধ্রে-রন্ধ্রে পৌঁছালো। অনুভব করলো, বেশ গাঢ় করে টের পেলো, মাহতিমের হাতদুটি গাল থেকে নেমে যাচ্ছে। খুব সন্তর্পণে নেমে-নেমে কোমরের দুপাশটা ধরলো সে। আলতোভাবে হাতদুটো সেখানে বুলাতে-বুলাতে বললো,

– মাথার কাছে খোলা বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো খসখস করে উড়তো। বিছানায় উপুড় হয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন থাকতে। তোমার চুল, তোমার শাড়ির লম্বা আঁচল আমার বিছানা গড়িয়ে ফ্লোরে পরতো। বড় জানালা দিয়ে দমকা হাওয়া এসে তোমাকে আরো এলোমেলো করে দিতো। আমি দরজার নব্ মোচড়ে তোমার ওই দৃশ্য দেখে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা ভুলে যেতাম। কতবার থমকে গিয়েছি হিসেব নেই। নেশার চোখে তাকিয়ে থাকতে-থাকতে তোমার কাছে যেতাম। দরজাটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যেতো। তোমার পিঠ থেকে চুল সরে ফর্সা চামড়াটা উন্মুক্ত হয়ে যেতো। কখনো দেখতাম, ব্লাউজ আর পেডিকোটের মধ্যখানটায় শাড়ি সরে গেছে। তোমার ঘুমন্ত মুখে কতো কতো চুল উড়াউড়ি করতো। আমি হাঁটু ভাঁজ করে ধপ করে ফ্লোরে বসে পরতাম। আমার মধ্যে মাতালের মতো অস্থির অনুভূতি হতো। শুধু তোমার ঘুমন্ত মুখটা দেখার জন্য উন্মাদ হয়ে যেতাম। অবাধ্য মনের বেহায়া কারসাজির জন্য তোমার কানে চুমু খেতাম। তোমার ঘুমটা পাতলা হয়ে যেতো। নড়াচড়া করে তুমি আমার দিকে ঘুম-ঘুম চোখে তাকাতে। ওভাবেই তাকিয়ে থাকতে। আমি ধরা পরার ভয়ে থমথমে দৃষ্টিতে তাকাতাম। নিজের চোরাই কাজ ঢাকা দেবার জন্য কিছু বলতে যাবো, তখন তুমি প্রচণ্ড অবাক করে দিতে। ওই বেহায়া মনের মানুষটাকে তিনগুণ আদর দিয়ে মুখের ভাষাই কেড়ে নিতে। আশ্চর্যে আমার চোখ যেমন বড় হয়ে যেতো, তেমনি খুশি হয়ে তোমার মধ্যে আরো ভীষণভাবে ডুবে যেতাম। আমার কানদুটো তোমার নরম হাতের তালুতে চাপা দিয়ে ধরতে। কতক্ষণ ওভাবে দম আঁটকে থাকতাম জানা নেই। হাঁটুগেড়ে বিছানার ধারে ওইটুকু সময়, ওইটুকু মূহুর্ত আমার জন্য সবকিছু ছিলো। তোমার ঘুমঘুম ঠোঁটের চুমু, তোমার তন্দ্রামিশ্রিত চোখ, তোমার গায়ের গন্ধ সবকিছু আমাকে মাতাল করে দিতো। তোমার ছোট্ট বুকটায় যখন মাথা রাখতাম, তুমিও তোমার আদুরে হাত দিয়ে আমার মাথা জড়িয়ে ধরতে, আমার পিঠে তোমার চিকন আঙ্গুলগুলো ছঁয়ে দিতে, তখন আমি স্বর্গীয় সুখে হারিয়ে যেতাম মেহনূর। আমার অন্তরটা তোমার ভালোবাসায় ঠান্ডা হয়ে যেতো। যেই মেয়েটাকে শাড়ি পরতে গিয়ে দেখেছিলাম, আজ সেই মেয়েটা এমন কেন? আমার কাছে, আমার সামনে অন্য পোশাকে দাঁড়িয়ে কেন? আমার স্যালারির টাকায় যার জন্য সর্বপ্রথম শাড়ি কিনতাম, নিজেরটা চিন্তা না করে তার কথাই ভাবতাম, আজ ওগুলো কোথায়? শাস্তিটা তুমি এভাবে দিলে?

চোখজোড়া এখনো বুজে আছে মেহনূর। একঝাঁক প্রশ্নের কাছে বিদ্ধ করলো তাকে। উত্তরের সময়টা তিরতির করে পেরুচ্ছে। মেহনূরকে ছেড়ে জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়লো মাহতিম। রান্নাঘরটা অন্ধকারে পূর্ণ। আঙিনার স্বল্প আলো তেরছা হয়ে ঢুকছে। ওই যৎসামান্য আলোকে সাঙ্গ করে ঘাড়ের নিচে বাঁহাত ও হাঁটুদ্বয়ের নিচে ডানহাত গলিয়ে একটানে বুকে তুললো। মেহনূরের মাথাটা বুকের বাঁপাশে ইচ্ছে করে চাপলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকানোর সুযোগ পেলো না মেহনূর, ঘাড়ের নিচে চাপ খেয়ে বুকটার কাছে ঠেকলো। বাহুডোরের মাঝে আবদ্ধ করে আঙিনার দিকে চললো মাহতিম। প্রথম সিঁড়িতে পা ফেলেই নম্রভাবে বললো,

– নেভির স্পেশাল ব্রান্ঞ্চ,

কথাটুকু বলেই দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা ফেললো মাহতিম। লোডশেডিংয়ের জন্য চর্তুপাশে আধাঁর। কেবল হারিকেনের আলোয় চারপাশটায় অল্প-স্বল্প ফুটে আছে। তৃতীয় সিঁড়িতে পা পরতেই আবার বললো সে,

– অর্থাৎ আমি যে সেকশনে যুক্ত, সেখানে একটা অফিশিয়াল লেটার আসে। এই লেটার ডাইরেক্ট গভঃমেন্টের কাছ থেকে রিকমান্ড হিসেবে হেডঅফিসে পৌঁছায়। আমি নেভিতে জয়েন দিলেও আমার মূল কাজ অন্য সেক্টরে। তুমি জানো স্পেশাল ওয়ারফেয়ার এ্যান্ড ডাইভিং স্যালভেজ, যেটাকে শর্টকাট ভাষায় সোয়াডস্ বলে। আমি সবার কাছে নেভির পরিচয় দিলেও আমি একজন এ্যালিট ইউনিটের সদস্য। আমার কাজ, আমার কর্তব্য অন্যান্যদের মতো না। আমি যেই ছুটিগুলো নেই, সেগুলো কিন্তু হেডের কাছ থেকে আসে। কারোর সুপারিশ বা স্বাক্ষর এতে প্রায়োরিটি পায় না। আমি এমন একটা মূহুর্তে ছিলাম, যেখানে রিক্রুট সোলজারদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের প্রয়োজন পরে। কেননা, ট্রেনিং শেষে ওরা আমার আন্ডারে কাজ করতো। সেখানে আমার উপস্থিতিটা সবার আগে দরকার। ছুটিটা অটোমেটিক বাতিল হয়। আমি বাতিল করিনি। অবশ্য বাতিল করার কথাটা ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে অন্যভাবে বলেছি। শুধু তোমাকে শায়েস্তা করার জন্য একটু মিথ্যা করে বলেছি। আমি জানি, তুমি নিউজটা নিতে পারবে না। ইন দ্যাট রেজাল্ট, তুমি —

কথাটা থামিয়ে রেখে দোতলায় উঠলো মাহতিম। অর্ধপূর্ণ কথাটায় খুব গুরত্ব দেওয়ার ভঙ্গিতে মেহনূরের মুখের কাছে মুখ নিচু করলো। কণ্ঠ খাটো করে ফিসফিস সুরে হাসি দিয়ে বললো,

– একটুখানি আদর পাওয়ার জন্য ছটফট করতে। আমিও তোমার ব্যকুল ইচ্ছাটুকু পূরণ করে দিতাম। তোমাকে কাছে রাখার লোভটা শুধু রাতজুড়ে নয়, আমার চলে যাওয়ার আগমূহুর্ত পযর্ন্ত সাক্ষ্য রাখতাম।

আবার কথা থামিয়ে মুখ তুললো মাহতিম। সেকেন্ডের ভেতর কিছু একটা দেখতে পেয়ে সতর্ক মেজাজে থেমে গেলো। মেহনূর প্রথম-প্রথম কিছুই বুঝতে না পেরে ভীষণভাবে ভ্রুঁ কুঁচকালো, রাগের ভঙ্গিটা চোখে-মুখে ফুটাতেই তৎক্ষণাৎ মাহতিম চক্ষু ইশারা করলো। ইশারাটা লক্ষ করে বাঁয়ে তাকাতেই কিন্ঞ্চিত আশ্চর্য হলো মেহনূর। সাবার বন্ধ দরজার তল দিয়ে হলুদ আভাটা আঁটকে গেছে। সেখানে একফালি কালো ছায়া বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আছে। দরজায় কান পেতে শোনার ফন্দিফিকির চলছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না। ততক্ষণে মাহতিম কৌশলের সাথে রুম পেরিয়ে মেহনূরের রুমে ঢুকলো। ডানপায়ে দ্বারদুটো ঠেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করলো।

দরজার বন্ধ হবার আওয়াজ শুনে ‘ ধ্যাত! ‘ বললো সাবা। আফসোসের সাথে ঠোঁট উল্টিয়ে সুরাইয়ার মাথায় এক ঘা মারলো। ব্যথায় মুখ বিকৃত করে দরজার ছিদ্র থেকে মুখ তুললো সুরাইয়া। রাগ দেখিয়ে চেঁচিয়ে বললো সে,

– মা:রলে কেন? পুরো মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠেছে। এভাবে কেউ মাথায় মা;রে?

সাবা ভ্রুঁ কুঁচকে তর্জনী উচিঁয়ে বলে,

– একদম ঠিক হয়েছে। তোকে এভাবেই মা::রা দরকার। মা:রতে-মা:রতে ভোঁতা বানালেও সমস্যা নেই। তুই না বললি ওরা ঝগড়া করছে? এই ওদের ঝগড়া করার নমুনা? তোকে তো —

আরেক চোট মারার জন্য হাত উঠালো সাবা। শূন্যৃে হাত তুললেই সুরাইয়া ভো-দৌঁড় মারলো। একেবারে বিছানায় উঠে তড়িঘড়ি দৃষ্টিতে চট করে অস্ত্র তুললো। অস্ত্র হিসেবে প্লাস্টিকের চিরুনিকে সামনে উঁচিয়ে বললো,

– আগাবে না বুবু। আমার কোনো দোষ নেই। কসম! সত্যি কসম! ওরা রান্নাঘরে —

কথা কাটলো সাবা। মাথাটা উপর-নিচ নাড়াতে-নাড়াতে বললো,

– তাইনা? ঝগড়া করতে খুব দেখেছো? ওরে বা:টপার, অ:ন্ধ কোথাকার, ভাইয়া যে কোলে তুলে দরজা বন্ধ করলো, এরপরও আমার সামনে কসম-কসম করবি?

বলতে-বলতেই দরজার আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো সাবা। ডানে-বামে চোখ ঘুরাতেই চটিজুতা দেখলো, ডানহাতে সেটা তুলতেই সুরাইয়া হা হয়ে অনবরত বলতে লাগলো,

– ও বুবু, চটি মে:রো না। আল্লাহ্, আম্মা! ও আম্মা বাঁচাও। তোমার চটির বারি খুব লাগে। আমার কি দোষ? মাহতিম ভাইয়া পল্টি মেরেছে বুবু, বাজি ফেলতে কতক্ষণ!

বাতাসের তাল কেটে জোরে এক ঘা পরলো। চিরুনির অস্ত্রটা হাতে নিয়েই ‘ ওমাগো ‘ বলে চিৎকার দিলো সুরাইয়া। একজন যখন ব্যথায় কাতর, অন্যজন যখন তির্যক মেজাজে তাকিয়ে আছে, তখন পাশের রুম থেকে উচ্চগলায় পুরুষ কণ্ঠটা ভেসে আসে,

– প্রথম বদ:মাশ বুঝি দ্বিতীয় ব:দমাশের গালে মিষ্টি বসালো। জয় হোক চটিজুতার।

চলমান .

#FABIYAH_MOMO .

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here