#মন_যাকে_চাই
#পর্ব_২
#সুবর্ণা_আক্তার_জুথি✍️
ইশিতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। অনুভব নাহ্ বলে চিৎকার করে উঠল।
–এই অনুভব কি হয়েছে তোমার? চিৎকার করলে কেন?
এতক্ষণ লাগে ফ্রেশ হতে।৩০ মিনিট ধরে বাথরুমে আছো।বের হও বলছি।
আরে আমি কি সাধে আছি বাথরুমে তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য তো এর থেকে আর ভালো জায়গা খুঁজে পেলাম না।বের হলেই তো প্রশ্নের পাহাড় তুলে দেবে। মনে মনে বলল অনুভব।
অনুভব চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বলল না এখন কিছুতেই ইশিতা কে সত্যিটা বলা যাবেনা।
ইশিতা ও কম জেদী না দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে।
অনুভব দরজা খুলে দিতেই ইশিতা প্রশ্নের পাহাড় তুলে দিলো।
এই মেয়েটা এতো কথা বলে কেন? একটু কি চুপ থাকতে পারে না।
একটু আগে অনুভব ঘরে এসেছে। ইশিতা কে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাথরুমে ঢুকে পড়েছিল।
কি হলো অনুভব কথা বলছো না কেন? আমি কিন্তু তোমার উপর ভীষণ রেগে আছি।
–কেন..?
আবার জানতে চাইছো কেন অনুভবের দিকে তেড়ে গিয়ে বলল ইশিতা।
তুমি আমাকে গাড়ীতে রেখে চলে আসলে কেন?
বিয়ের আগে তো আমাকে প্রমিজ করেছিল তুমি আমাকে কোলে করে নামাবে।
তাই বলেছিলাম বুঝি,সরি ভুলে গেছিলাম।
“আমাকে দেয়া প্রমিজ তুমি কি করে ভুলে গেলে?গাল ফুলিয়ে বললো ইশিতা।”
বললাম তো সরি আর ভুল হবে না।
“আর এতোক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি, গাড়ি থেকে নেমে কোথায় উধাও হয়ে গেছিলে?”
না মানে আমি তো ছিলাম বাড়িতেই তুমি হয়তো খেয়াল করো নি।
আমি তোমার উপর ভীষণ রেগে আছি আমি তোমার সাথে কথা বলবো না।
ও রিয়েলি!!
তাহলে তো ভালোই হবে।
“কি বললে তুমি আমি কথা না বললে ভালো হবে এ্যা এ্যা…………. কাঁদতে লাগলো ইশিতা।”
এইতো বললে কথা বলবে না এখন আবার প্যা প্যা শুরু করলে কেন?
ইশিতা আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
“কি শুরু করলো মেয়েটা বাসর রাতে যদি বৌ এভাবে কাঁদে আর সেটা যদি কেউ শুনে ফেলে তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।”
যে করেই হোক এই মেশিন বন্ধ করতে হবে।
ওকে আই এম সরি ইশিতা আমার ভুল হয়ে গেছে।এই দেখো আমি কান ধরছি।
অনুভব কে কান ধরতে দেখে ইশিতা হেসে বললো আচ্ছা ঠিক আছে এবারের মতো মাফ করে দিলাম।
অনুভব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইশিতার হাসিমাখা মুখের দিকে।
ইশিতা খানিকটা লজ্জা পেয়ে বলল এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
“তোমার হাসিটা খুব সুন্দর।”
ইশিতা অনুভবের কাছে এগিয়ে আসতেই অনুভব চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর বললো, অনেক রাত হয়ে গেছে ঘুমিয়ে পড়।
হুম ঘুমাবো তুমি ঔষধ খেয়েছো তো অনুভব?
হুম।
যদিও আজকে আমাদের জোৎস্না বিলাস করার কথা ছিল। কিন্তু তুমি যেহেতু অসুস্থ তাই বাদ দিলাম। কিন্তু সুস্থ হয়ে গেলে রোজ রাতে আমার সাথে চাঁদ দেখতে হবে মনে থাকে যেন। ইশিতা বিছানায় শুয়ে পড়ল ।
কিন্তু অনুভব কে সোফায় শুতে দেখে ফট করে উঠে পড়লো।
এসব কি অনুভব? “এখানে কি সিরিয়াল চলছে নাকি যে তুমি সোফায় শোবে আমি বিছানায় শোব।”
অনুভব চুপ করে আছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।
ইশিতা দৌড়ে অনুভবের খুব কাছে গিয়ে বসলো, “তারপর দুহাত দিয়ে অনুভবের গাল আলতো করে ধরে বললো তুমি কি কোন কারণে আমাকে ইগনোর করতে চাইছো?”
“এমন করো না অনুভব আমি সব সইতে পারলেও তোমার অবহেলা সইতে পারবোনা।”
ইশিতা অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো।
অনুভব পরম যত্নে ইশিতার গাল বেয়ে ঝরে পড়া পানি মুছে দিলো।
এমন কিছুই না ইশিতা তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।
ইশিতা অনুভবের বুকে মাথা রাখতে যাবে সেই মুহুর্তে দরজায় নক করল কেউ।
“যাক বাবা বাঁচা গেল এক্ষুনি মেয়েটা কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতো মনে মনে কথাটা বলে দ্রুত দরজা খুলতে গেল অনুভব।”
“ইশিতা কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বলল এতো রাতে আবার কে আসলো?”
অনুভব দরজায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে ইশিতা ঠিক করে দেখতে পাচ্ছে না ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে।
অনুভব দরজা খোলা রেখেই ভিতরে আসলো। ইশিতা এখনো সোফায় বসে আছে। ইশিতা তুমি ঘুমিয়ে পড় আমি পরে আসছি আমার একটু কাজ আছে।
ইশিতা কে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনুভব দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
“আরে আজব তো বিয়ের রাতে কোন বেআক্কেল আমার বরকে ডেকে নিয়ে চলে গেল।”
আর অনুভব বা কি করে আমাকে রেখে চলে গেল।
বিয়ের আগে তো ইশিতা ইশিতা করে সবসময় আমার পিছে ঘুরে বেড়াতো।
আর বিয়ের পর পরই ভাব নিচ্ছে।
ঠিক আছে আমিও কম না। সময় আমারও আসবে। কপালের ওপর ঝুঁকে পড়া চুলে ফু মেরে বললো ইশিতা।
_________
“সব ঠিক আছে তো অনু…. অনুভব?”
“হুম।”
আমার ওপর তোর খুব রাগ তাইনা?
“রাগ করিস না বাবা দেখবি এই বিয়েতে তোরা দু’জনেই খুব সুখী হবি।”
“অনুভব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, আমি তোমার জন্য কিছুই করিনি।”
রাজীব চৌধুরী কে আর কোন কথা না শুনে অনুভব চলে গেল।
ঘরের সামনে এসে দরজা সামান্য খুলে উকি মেরে দেখলো ইশিতা বিছানায় শুয়ে আছে, বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে।এই ঘরে থাকলে অনুভবের দম বন্ধ হয়ে আসছে তাই ছাদে চলে গেল।
ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই চাঁদের ওপর নজর পড়ল,হুট করে ইশিতার বলা কথা মনে পড়লো।
কি অদ্ভুত ইচ্ছে মেয়েটার বিয়ের রাতে বরের সাথে জোৎস্না বিলাস করবে।
আবার বলে কিনা প্রতিদিন ওর সাথে চাঁদ দেখতে হবে।
“ওর সাথে চাঁদ দেখা তো দুরের কথা ওর মুখ দেখার কোন ইচ্ছে আমার নেই।”
ঐ মেয়েটার জন্য আমি অনেক কিছু হারিয়েছি।
আমার অতীত বর্তমান সব হারিয়ে গেছে। আমি কিছুতেই ক্ষমা করবো না।
কোন দিন নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবো না। ওর জন্য আমি আমার প্রিয়জনকে হারিয়েছি।
“তাই ইশিতার জীবন টা আমি এতো কষ্টে ভরিয়ে দেবো যা ও কোনদিন কল্পনাও করেনি ”
অনুভবের অট্টহাসিতে কেঁপে উঠলো ছাদের প্রতিটি ইটপাথর।
ক্ষনিকের মধ্যেই আবার কেঁদে উঠলো অনুভব।
হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছে অনুভব।
হাসি কান্না মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল।
_________
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারিপাশ।
চোখে আলোর ছটা লাগতেই অনুভবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ঘুম থেকে উঠে দেখলো সে এখনো ছাদের দোলনায় শুয়ে আছে।
দ্রুত নিচে নেমে আসলো অনুভব তারপর চুপিচুপি ঘরের দরজা খুলে দেখলো ইশিতা ঘরে নেই।
যাক বাবা বাঁচা গেল টকিং মেশিন ঘরে নেই। একটু শান্তিতে থাকতে পারবো।
অনুভব ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর ঝাঁপ দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
চোখ বন্ধ করা মাএই পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো ইশিতা।
আমাকে টকিং মেশিন বলা তাই না দাঁড়াও সোনা দেখাচ্ছি মজা। চুপি চুপি বাথরুমে গিয়ে এক বালতি পানি এনে অনুভবের মুখের ওপর ঢেলে দিলো।
বেচারার আরামের ঘুম ভেঙ্গে গেল।ধড়ফড়িয়ে উঠলো অনুভব।
অনুভবের অবস্থা দেখে ইশিতা হেসে কুটিকুটি।
হাত দিয়ে মুখের পানি মুছে অনুভব রেগেমেগে ইশিতার দিকে তাকালো।
এই মেয়ে তোমার এতবড় সাহস। আমার মুখে পানি ঢেলে দাও।
তোমাকে আমি,,,,,
ইশিতা দৌড়ে পালালো অনুভব ছুটলো তার পিছু।
ইশিতা পুরো ঘরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে অনুভব কিছুতেই তার নাগাল পাচ্ছে। দুজনে দুজনকে বালিশ ছুড়ে মারছে।
হঠাৎই মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা পানিতে পিছনে পড়লো ইশিতা, ধপাস করে বসে পড়লো। “আর অনুভব কে দেখিয়ে দেখিয়ে কাঁদতে লাগলো ও মা আমার কোমর টা বোধহয় ভেঙ্গে গেল।”
অনুভব ইশিতার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল হাতটা ধরে উঠে পড়।
এইজন্যই বলতাম অনুভব একটু রোমান্টিক সিনেমা দেখ।কে শোনে কার কথা উনি তো দেখবেন হরর মুভি।যদি আমার কথা শুনতো তাহলে আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার বদলে কোলে করে উঠাতো। মনে মনে বলল ইশিতা।
“কি টকিং মেশিন কি এত ভাবছো?”
কিছু না বেবি বলে অনুভবের হাত ধরে টান দিলো।
হুড়মুড়িয়ে পড়লো অনুভব।
“আর ইউ ক্রেজি। কি করলে এটা?”
“ইয়েস আই এম ক্রেজি ফর ইউ।”
অনুভব রেগেমেগে উঠে বাথরুমে চলে গেল।
ইশিতা ও উঠে দাঁড়াল তারপর বললো তোমার কি হয়েছে তা আমি জানি না। তুমি কেন আমার থেকে দূরে সরে থাকতে চাইছো তা-ও জানিনা তবে খুব তাড়াতাড়ি তোমার মুখ থেকে সত্যিটা জেনেই ছাড়বো।
___________
“ভাবী ভাইয়াকে নিয়ে নিচে এসো। নাস্তা করবে। সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
ইশিতা গোসল সেরে এসেছে মাত্র।
চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
লিজার ডাক শুনে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।
অনুভব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। তবে সে এতোক্ষণ আয়নায় নিজেকে না দেখে ইশিতা কে দেখছিল।
না চাইতেও বারবার অনুভবের চোখ ইশিতা কে দেখতে চাইছে। মায়াবী চেহারা আর ঠোঁটের কোনে সবসময় হাসি লেগেই থাকে।
“লিজা কে ভেতরে আসতে দেখে অনুভব ইশিতার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজের কাছে মনোযোগী হলো।”
ভাবী ঘরের একি অবস্থা হয়েছে?
“তোমরা কি বাসর রাতে ফাইটিং করেছ নাকি। মনে হচ্ছে সমস্ত ঝড় ঘরের উপর দিয়ে গেছে।”
লিজা মুচকি মুচকি হাসছে।
লিজা আর কিছু বলার আগেই অনুভব বাইরে চলে গেল।
ইশিতা আর লিজা এবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো।
লিজা বললো ভাবী তুমি নিচে চলে যাও আমি রুমটা গোছানোর ব্যবস্থা করছি।
“না থাক লিজা কাউকে করতে হবে না তুমি যাও
আমি ঘরটা গুছিয়ে নিচে আসছি।”
“তুমি একা করলে তো দেরি হবে তারচেয়ে বরং দুজনে মিলে করি তাহলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।”
আচ্ছা ঠিক আছে আমার মিষ্টি ননদিনী।
সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে অনুভব ফোন নিয়ে ব্যস্ত। রাজীব চৌধুরী মনমরা হয়ে বসে আছেন। কালকে তার ছেলের বিয়ে হয়েছে তবুও তার মনে বিষাদের কালো মেঘ জমে আছে।
তাহেরা বেগম খাবেনা বলে দিয়েছে আরো বলেছে তাকে যেন কেউ ডাকে।
লিজা এসে সবার সাথে যোগ দিল।
ইশিতা অনুভবের দিকে একবার তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।
অনুভবের ফুপু নাস্তা বানাচ্ছে।
–সরি ফুপু আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।
–আরে ইশিতা সরি কেন বলছো?
তোমার তো এতো সকালে উঠার অভ্যাস নেই তাই দেরি হয়ে গেছে। “তোমার মা সকালে ফোন করেছিল।তার কাছ থেকে জানতে পারলাম তুমি নাকি খুব ঘুম পাগলী।”
তাই তো লিজা কে ডাকতে বললাম।
ইশিতার ভীষণ লজ্জা করছে সে তো অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠেছে। অনুভবের জন্য আস্তে দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা তো আর ফুপুকে বলা যাবে না।
ফুপু আমাকে দিন আমি সবাইকে নাস্তা দিয়ে আসি।
আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাও।
কে কি খায় জানো তো?
শুধু অনুভবের জানি। আস্তে করে বললো।
আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি।
_________
ইশিতা সবাই কে নাস্তা দিয়ে দিল।
নাস্তায় ছিল ডিম, পরোটা,সেমাই,চা আর কয়েক রকম ফল।
নাস্তা দেখে অনুভব নাক সিঁটকালো। রাজীব চৌধুরী ইশারা করতেই অল্প অল্প করে খেতে শুরু করলো।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে গেল চা খাওয়া নিয়ে।
“ইশিতা অনুভবের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিতেই একি আমাকে চা দিচ্ছো কেন?আমার কফি কয়?”
এ্যা ,,,,,,, ইশিতা আর লিজা একসাথে বললো।
রাজীব চৌধুরী বিষম খেয়ে গেল।
এই নিন বাবা পানি খান। রাজীব চৌধুরী ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।
এই ভাইয়া তুমি কবে থেকে কফি খাওয়া শুরু করলে?
হ্যা তাইতো অনুভব তুমি কফি খেতে পছন্দ করোনা আজকে হঠাৎ কফি খেতে চাইছো। কফি তো আমি খেতে পছন্দ করি।
অনুভব থতমত খেয়ে বললো আরে আশ্চর্য তো মানুষের কি রুচি বদলাতে পারে না।”আর আমি মনে মনে ঠিক করেছিলাম তোমার যেহেতু পছন্দ তাই বিয়ের পর দিন থেকে কফি খাওয়া শুরু করবো।”
আর তোমরা সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেন আমি কফি না রানী ভিক্টোরিয়ার হাতের রান্না খেতে চেয়েছি।
রেগেমেগে উঠে চলে গেল অনুভব।
অনুভবের কান্ড দেখে ইশিতা আর লিজা হাসতে শুরু করলো। রাজীব চৌধুরী কোনরকমে খেয়ে উঠে চলে গেল।
অনুভবের ফুপু রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো অনেক হাসাহাসি হয়েছে। শুধু শুধু ছেলেটার পিছনে লাগছো কেন তোমরা?
লিজা আর ইশিতা চুপ করে গেল।
তুমিও খেতে বসো ইশিতা।
ফুপু আপনি আর লিজা খেয়ে নিন আমি মায়ের সাথে খাবো।মা কোথায়?
খালামনির আসায় থাকলে তোমার আজকে আর খাওয়া হবে না ভাবী।
কেন?
শোন ইশিতা আমার মনে হয় তুমি সবটাই জানো। ভাবীর এই বিয়েতে মত ছিল না।
সে তোমার সাথে দেখা করতে চাইনা। তবে তুমি চিন্তা করো না ইশিতা সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফুপু আমি গিয়ে মাকে ডেকে আনবো।
আচ্ছা যাও চেষ্টা করে দেখ।
___________
মা ভেতরে আসবো?
“তাহেরা চৌধুরী ফোনে কথা বলছিল তার বোনের সাথে। ইশিতার ডাকে খুব বিরক্ত হলেন।”
ইশিতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে বললো মা চলুন নাস্তা করে নিবেন।
আমার খিদে নেই।
আমি জানি মা আমাকে আপনার পছন্দ না। কিন্তু তা বলে না খেয়ে থাকবেন কেন? আপনার রাগ তো আমার ওপর।
বললাম তো খিদে নেই যাও এখান থেকে।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। তারপর না খেয়ে ঘরে চলে গেল।
রাজীব চৌধুরী বাইরে দাঁড়িয়ে সব শুনলেন তারপর ঘরে গিয়ে তাহেরা বেগম কে বললেন মেয়েটা এতো করে বললো তবুও গেলে না উল্টো মেয়েটাকে কাঁদিয়ে দিলে।
আমি কি ওকে বলেছি এখানে আসতে।
হুম তুমি বলো নি। কিন্তু ইশিতা নিজে থেকেই এসেছে যেখানে ও এটা খুব ভালো করেই জানে যে তুমি তাকে পছন্দ করোনা। সব জেনেও মেয়েটা তোমার মন পাওয়ার চেষ্টা করছে।
তাহেরা বেগম আর কিছু না বলে বাইরে চলে গেল।
_________
ইশিতা কফি বানিয়ে এনে দরজার সামনে যেতেই অনুভবের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে গেল।
“এই তুমি কি দেখে চলতে পারো না দিলে তো আমার নতুন শার্টটা নষ্ট করে।”
তুমি এমন করে কথা বলছো কেন অনুভব, আমি ইচ্ছে করে করিনি। ধাক্কা লেগে পড়ে গেছে।
চুপ একদম চুপ মুডটাই নষ্ট করে দিলো। অনুভব নতুন আরেকটা শার্ট হাতে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল।
দরজা লাগানোর শব্দে ইশিতা কেঁপে উঠলো।
পায়ের কাছে পড়ে থাকা ভাঙ্গা কাপের টুকরো গুলো পরিষ্কার করছিল ইশিতা।
অনুভব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ইশিতার কান্ড দেখছে।
হঠাৎই ইশিতা আহ্ করে শব্দ করে উঠলো।
“অনুভব ছুটে গিয়ে ইশিতার হাত ধরলো। ইশ্ আঙ্গুল টা অনেকখানি কেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে।”
এতো কেয়ারলেস কেন তুমি?
উঠে এসো। এখানে বসো। “ইশিতা কে সোফায় বসিয়ে হাতে স্যাভলন ক্রিম লাগিয়ে দিলো।”
ইশিতার চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
আবার কাঁদছো কেন? খুব জ্বালা করছে?
অনুভব ইশিতার আঙুলে ফু দিতে দিতে বলল ক্রিম লাগিয়ে দিয়েছি এক্ষুনি জ্বালা কমে যাবে।
কি দরকার এগুলো করার সার্ভেন্টদের বললেই তো করে দিত।
ভাগ্যিস কাজটা আমি করেছিলাম। কষ্ট হলে হোক তবু তো তোমাকে কাছে পেলাম।
অনুভব এবার ইশিতার হাতটা ছেড়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে গেল।
।
।
।
।
#চলবে