মন যাকে চাই পর্ব ১

বরের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে ঝড়ের গতিতে খবর ছড়িয়ে পড়লো বিয়ে বাড়িতে।

সানাইয়ের সুর থেমে গেল।হাসি আনন্দে ভরপুর পরিবেশটা মূহুর্তের মধ্যেই থমথমে হয়ে গেল।
মেহমানদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। আদৌও আজকে বিয়েটা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মাঝে।

—অনেক চেষ্টার পরও দুঃসংবাদ টা ইশিতার কান অব্দি পৌঁছে গেছে। অনুভবের এক্সিডেন্টের খবর শুনে পাগলামী শুরু করে দিয়েছে ইশিতা।

শায়লা হকের মুখ থেকে এমন কথা শুনে অনেক রেগে গেলেন আনিসুল হক।

–কি বললে তুমি?
তোমাকে বারবার করে বললাম ইশিতা যেন কিছু না জানে। কোন কাজের না তুমি। তোমাকে আমি…….

থাপ্পড় মারতে গিয়েও আশেপাশে মেহমানদের দেখে নিজেকে সংযত রেখে গটগট করে সেখান থেকে চলে গেলেন আনিসুল হক।

______________

—আমি এসব বিশ্বাস করি না একটু আগেই অনুভবের সাথে আমার কথা হয়েছে।

অনুভব আমাকে বলেছে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবে। আজকে আমাদের বিয়ে হবে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল ইশিতা।

—হয়তো তোর সাথে কথা বলার পর এক্সিডেন্ট হয়েছে।

এসব আপনি কি বলছেন আন্টি আর কেনই বা বলছেন??

কত করে বললাম ইশিতা কে এক্সিডেন্টের খবর না জানাতে তারপরও আপনি হুট করে এসে বলে দিলেন।ইশিতার বেস্টফ্রেন্ড তানিয়া বললো দাওয়াতে আসা এক মহিলাকে।

বলেছি বেশ করেছি আমি তোমাদের মতো নয় যে মেয়েটাকে মিথ্যে আশ্বাস দেবো বলে মুখ ভেংচে চলে গেলেন মহিলাটি।

–তানিয়া উনি এসব কি বলে গেলেন? উনি বোধহয় পাগল হয়ে গেছেন।

আমার অনুভব আমাকে কথা দিয়েছে কখনও আমাকে ছেড়ে যাবেনা।গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে অথচ মুখে হাসি ফোটানোর বৃথা চেষ্টা করছে ইশিতা।

তুই ঠিক বলেছিস ইশিতা অনুভব তোকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা। তানিয়া কাঁদতে কাঁদতে ইশিতা কে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মনে মনে বলল তোর কথাই যেন সত্যি হয় ইশিতা।।

–কাঁদছিস কেন তানিয়া?( ইশিতা)
–তোকে দেখে। (তানিয়া)

আরে আমি তো কাঁদছি না কেন জানি না না চাইতেও চোখে পানি চলে আসছে।মন টা খুব অস্থির হয়ে উঠেছে।

–আরে এতো অস্থির হওয়ার থেকে তুই বরং অনুভবকে কল কর।

কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেললো রিয়া।বলে জিভে কামড় দিলো। সবাই রেগে তাকিয়ে আছে দেখে সেখান থেকে দ্রুত কেটে পড়লো।

একদম ঠিক কথা বলেছে রিয়া।
(তানিয়া, রিয়া, হেনা, সাথী, বন্যা এরা সবাই ইশিতার ফ্রেন্ড।ইশিতার বিয়েতে সবাই এসেছে)।
সবাই মিলে একসাথে বললো না ইশিতা।

এই তোরা আমাকে আমার হবু বরের সাথে কথা বলতে বাধা দিচ্ছিস কেন বলতো?? তোদের মতলব কী?

তানিয়া ইশিতার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বললো তোর এখন অনেক সাজ বাকি আছে।আর কেঁদে কেঁদে তো পুরো মেকআপের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস। এখন আবার নতুন করে সাজাতে হবে।

–আচ্ছা সে না হয় হবে কিন্তু ফোনটা এভাবে কেড়ে নিলি কেন?

হাসতে হাসতে হেনা বললো তোকে এখন ফোন দেয়া যাবেনা। কারণ তোর আর অনুভবের কথা ফুরায় না। কথা বলতে বলতে রাত থেকে দিন হয়ে গেলেও তোরা টের পাস না।তাই এখন যদি কথা বলা শুরু করিস তাহলে আমরা তোকে সাজাবো কখন?

ইশিতা মিষ্টি হেসে বললো ও আচ্ছা এই কথা।
ঠিক আছে তাড়াতাড়ি করে সাজিয়ে দে আমাকে। অনুভব এসে পড়লো বলে।

ইশিতা কে শান্ত করতে পেরে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

আনিসুল হক বাইরে থেকে মেয়ের হাসিমুখ দেখে চলে গেলেন। মেয়ের কাছে গেলে আরো দুর্বল হয়ে পড়বেন সেই ভয়ে।

_______________

আনিসুল হক কয়েকটা নাম্বারে অনবরত কল করে যাচ্ছেন কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। এবার তার সত্যিই অনেক টেনশন হচ্ছে।

পিছন থেকে ঘাড়ে হাত রেখে আনিসুল হকের মা আনোয়ারা বেগম বললেন ওদের কোন খবর পেয়েছিস খোকা?

টলমল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না বললেন।

আনোয়ারা বেগমের মুখটা শুকিয়ে গেল হয়তো সে অন্য কোন উওর আশা করেছিলো।
–ইশিতা জানে?

জেনে গেছিল কিন্তু ওর বান্ধবীরা মিলে সামলে নিয়েছে।

মা আমার মেয়েটা অনেক স্বপ্ন নিয়ে বৌ সেজে বসে আছে।যখন সত্যি কথা জানবে ওর সাজানো স্বপ্ন গুলো সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে।অনুভবকে ছাড়া ও বাঁচবে না। কেন এমন হলো মা?

মায়ের পায়ের কাছে বসে কেঁদে কেঁদে বললো আনিসুল হক।

শান্ত হো খোকা সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তিনি বিপদ দিয়েছেন তিনিই আমাদের পথ দেখাবেন।

আড়ালে দাঁড়িয়ে স্বামীর কথা গুলো শুনছেন শায়লা। ইচ্ছে করছে স্বামীর কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিতে চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার তো সে অধিকার নেই। সবার সামনে সে আনিসুল হকের স্ত্রী কিন্তু স্বামীর মনে তার জন্য কোনো জায়গা নেই।

সৎ মা হয়েও নিজের মেয়ের মতোই আদর যত্নে বড় করেছেন ইশিতা কে। নিজের ছেলের চেয়েও বেশি ভালবাসেন ইশিতা কে।
তারপর ও এতো অপমান অবহেলা জুটে তার কপালে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেহমানদের ভীড়ে হারিয়ে গেলেন শায়লা হক।

ঈশান অনেকক্ষন ধরেই ইশিতার ঘরের বাইরে ঘুরঘুর করছে। আপুর সামনে গেলে নিশ্চিত ধরা পড়ে যাবো। চোখ দেখেই বুঝে যাবে সবকিছু। নিজের মনের সাথে অনেক বোঝাপড়া করে দুহাতে চোখের পানি ভালো করে মুছে ঘরে প্রবেশ করল ঈশান।

ইশিতা সাজ কমপ্লিট।সে এমনিতেই অনেক সুন্দর তারপর আজকে লাল বেনারসী পড়ে তার সৌন্দর্য দিগুন হয়ে গেছে।

মুখে হাসি এনে ঈশান বললো ওয়াও আপু তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে। দুলাভাই তোমার দিক থেকে চোখ সরাতে পারবে না।

কি ব্যাপার ঈশান এতোক্ষণে তোর আসার সময় হলো? আর তুই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছিস কেন?
আমার দিকে তাকা।

নিজেকে আর আটকে রাখতে না পেরে ঈশান ঈশিতা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

আচমকা ঈশানের এমন আচরণে ইশিতা কিংকর্তব্ বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে তানিয়া তৎক্ষণাৎ ঈশানের উদ্দেশ্যে বলল বোনের বিদায় হতে এখনো দেরি আছে।এখনি যদি চোখের পানি শেষ করে ফেলো তাহলে বিদায়ের সময় কি হবে।

এবারে ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ইশিতা কাঁদতে শুরু করলো।

আরে দুই ভাই বোন মিলে কি শুরু করলে? (তানিয়া)
এই ঈশান যাও তো ইশিতার জন্য খাবার নিয়ে আসো।

ঈশান দ্রুত গিয়ে এক প্লেট খাবার আনলো।প্লেট রেখে চলে যাচ্ছিল।

–তুই খেয়েছিস ঈশান?

আজকের পর থেকে ইশিতার এই কথাটা আর শুনতে পাবে না। ঈশান এটা কর, ওটা কর, এটা করতে হয়না, এসব কে বলবে?রাগ করলে আদর করে কে খাইয়ে দেবে।

পিছনে না তাকিয়ে আমি খেয়েছি তুমি খাও আপু বলে দৌড়ে চলে গেল।

বাইরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল আমি যা শুনেছি সব যেন মিথ্যা হয়।
_______________

বর আসার কথা ৭টাই এখন বাজে রাত নয়টা। ইশিতা কে আর সামলানো যাচ্ছেনা আংকেল।

কান থেকে ফোনটা নামিয়ে পেছনে তাকালেন আনিসুল হক। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বিদ্যমান।
কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি নিজেই যাবে অনুভবের বাড়িতে।

তানিয়া তুমি আরো কিছুক্ষণ ইশিতা কে সামলানোর চেষ্টা কর আমি একটু আসছি।

ইতিমধ্যেই ইশিতা ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তানিয়া ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দেখলো। আমি মনে প্রাণে চাই অনুভব যেন আজকে আসে।

আনিসুল হক ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললেন। এতক্ষণ দুর থেকেই ইশিতার খোঁজ নিচ্ছিলেন শায়লা হক এবার মেয়ের কাছে গেলেন।

পরম মমতায় ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।আগের চেয়ে খানিকটা শান্ত হলো ইশিতা।
তুমি এতোক্ষণ কোথায় ছিলে মা?
অনুভব এখনও আসছে না কেন?

আজকে আমার মেয়ের বিয়ে আমার তো হাজার কাজ তাই আসার সময় পাইনি।
আর তোর বাবা নিজে গেছে অনুভবকে আনতে।
কিন্তু…….

কোন কিন্তু নয়।আমার সেই ছোট্ট ইশিতা কবে এতো বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।বৌ সেজে কি মিষ্টি লাগছে আমার মেয়েটাকে।

ইশিতা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

রাত দশটা ছুঁই ছুঁই।

সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অতিথিদের অনেক বুঝিয়ে আটকে রেখেছেন শায়লা হক নাহলে সবাই তো আরো অনেক আগেই চলে যেতো।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে হর্ন বাজিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো বরের গাড়ি প্রবেশ করল। ঈশান ছুটে গিয়ে ইশিতা কে খবর দিলো।ইশিতার চোখে মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠল।

ইশিতার বান্ধবীরা দৌড়ে এসে গেটে লাল ফিতে নিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালো।

গাড়ি থেকে নেমে আসলো অনুভব। মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে সবাই হাসি মুখ চুপসে গেল।

আনিসুল হক বললেন এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তোমাদের এসব নিয়ম পালন করতে গেলে আরো দেরি হয়ে যাবে তাই তোমাদের যা ডিমান্ড আছে আমি দিয়ে দিচ্ছি তোমরা সরে যাও।

আনিসুল হকের কথা শুনে সবাই সরে গেল।বরযাত্রীরা সবাই ভিতরে চলে আসলো। সানাইয়ের সুর বাজতে শুরু করলো। আগের মতো হাসি আনন্দে মেতে উঠলো পুরো বাড়ি।

আনিসুল হক সবার উদ্দেশ্যে বলল আবার হবুজামাই অনুভবের ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তাই আসতে দেরি হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু করা হবে।

সবাই অনুভবকে নিয়ে বলাবলি করছে। একজন বললো শুনেছি এদের নাকি প্রেমের বিয়ে অথচ দেখ ছেলের মুখে একটুও হাসি নেই।আর দেখো বিয়ের দিনে পাঞ্জাবি/সেরওয়ানী না পরে আধুনিক পোশাক পরেছেন।

সত্যিই অনুভব এসে থেকেই মনমরা হয়ে বসে আছে।
বন্ধুরা অনেক ইয়ার্কি করছে তাতে অনুভবের কোনো ইন্টারেস্ট নেই সে নিজের মতো করে চুপচাপ বসে আছে।
চোখ দুটো ফোলা ফোলা হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক কেঁদেছে।

তানিয়া আড়ালে দাঁড়িয়ে অনুভবের আচরণ লক্ষ্য করলো।

তারপর বাকিদের বললো ইশিতা কে এসব কিছু না জানাতে।

কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন। বিপত্তি বাধল তখন যখন অনুভব কবুল বলছিল না।

এবার অনুভবের বাবা রাজীব চৌধুরী ছেলের কাঁধে হাত রাখল। বাবার দিকে তাকিয়ে মনের সাথে যুদ্ধ করে কবুল বললো অনুভব।

কাজী সাহেব সবাই আলহামদুলিল্লাহ পড়লেন।

কাজী সাহেব এবার ইশিতার কাছে থেকে কবুল নিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করলেন।

আনন্দে ইশিতা কেঁদে ফেললো। অবশেষে তার ৫বছরের ভালোবাসা সফল হলো।

________________

অবশেষে সেই মুহুর্ত চলে আসলো যখন একটা মেয়েকে তার চেনা মুখ চেনা জায়গা ছেড়ে অচেনা জায়গায় যেতে হয়।

অনুভব সবার থেকে বিদায় নিয়ে আগেই গাড়িতে বসে আছে। রাজীব চৌধুরী খানিকটা নরম গলায় বললেন, আপনারা কমবেশি সবাই জানেন এখানের আসার আগে অনুভবের এক্সিডেন্ট হয়েছিল,আর মাথায় আঘাত পেয়েছে তাই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইশিতা কে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।

মা, বাবা, ভাই কে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল ইশিতা। আনোয়ারা বেগম তো কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাই আনিসুল হক তাকে ঘরে রেখে এসেছেন।

অবশেষে সবাই কে কাঁদিয়ে ইশিতা নতুন জীবনের পথে পা বাড়ালো।

_______________

গাড়িতেই বসেই অনুভব কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ইশিতা।

এক্সিডেন্টের কথা আগে কেন বলো নি?মাথা ব্যাথা করছে কি না?ঔষধ খেয়েছে কিনা আরো অনেক প্রশ্ন।

অনুভব খুব বিরক্ত হচ্ছিল।ইশিতার এতো প্রশ্নে সত্যিই মাথা ব্যাথার সৃষ্টি করছে।

আরেকটা বিষয় ভাবছে একটু আগেই কেঁদে কেটে একাকার করছিল আর এখন এসে আমাকে নিয়ে পড়েছে।

অনুভব হাত উঠিয়ে বললো চুপ করে বসে থাকুন মাথা ব্যাথা করছে বাড়ি গিয়ে কথা হবে অনুভব একটু জোরেই বললো কথা।

ইশিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন?

—তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলছো কেন?
সরি ইশিতা আমার ভালো লাগছে না।

আচ্ছা আমি তাহলে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর তুমি ঘুমাও।

এবার ইশিতা অনুভবের বারন শুনলো না।আরেকটু এগিয়ে বসলো অনুভবের দিকে।

কি হলো এতো কাছে আসছেন কেন?
আরে রিল্যাক্স তোমার মাথা আমার কোলের ওপর রাখো।

অনুভবের আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না তাই অনিচ্ছা সত্বেও ইশিতার কথা মেনে নিলো।
প্রায় এক ঘন্টা পর তারা পৌঁছে গেল।

অনুভব ইশিতার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
অনুভবের ঘুম ভেঙ্গে যাবে তাই ইশিতা গাড়ি থেকে নামতে পারছে না।

অনুভবের খালাতো বোন লিমা এসে গাড়িতে টোকা দিয়ে বলল ভাবী সারারাত কি গাড়িতেই পার করে দেবে?

লিমার কথা শুনে ইশিতা লজ্জায় পড়ে গেল। ইতিমধ্যে অনুভবের ঘুম ভেঙ্গে গেল। হুড়মুড়িয়ে মাথা উঁচু করে ইশিতার দিকে একপলক তাকিয়ে সরি বলে গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে চলে গেল।

ইশিতা অনুভবের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। অনুভবের আকস্মিক এমন পরিবর্তন ইশিতা কে বারবার অবাক করে দিচ্ছে।

মন খারাপ করো না ইশিতা মা শরীর খারাপ তাই বোধহয় এমন করে চলে গেল ইশিতার শশুর রাজীব চৌধুরী বললো।

রাজীব চৌধুরীর সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে ইশিতার। কিন্তু আজকে তার গলাটা অন্যরকম লাগছে। নতুন বৌ তাই কিছু বলছে না ইশিতা অন্য সময় হলে অনুভবের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ত।

ইশিতা লক্ষ্য করলো লিমা বাদে কেউ আসেনি তাকে নিয়ে যেতে। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ইশিতা।
তারপর লিজার সাথে ভেতরে চলে গেল।

এই বাড়িতে বিয়ের আগে একবার এসেছিল ইশিতা।
কোন কারণে অনুভব ফোন তুলছিল না তাই। সেবার এসে ইশিতার কান্ডতে অনুভব কে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হয়েছিল।

বাড়িভর্তি মেহমান কিন্তু ইশিতার শাশুড়ি তাহেরা চৌধুরীর কোন চিহ্ন নেই।

সবাই ইশিতা কে নিয়ে ব্যস্ত।ইশিতার ফুপু শাশুড়ি খুব আন্তরিক। সবার সাথে ইশিতা কে পরিচয় করিয়ে দিল।

ইশিতা তার শাশুড়ির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন অনেক রাত হয়ে গেছে কালকে শাশুড়ির সাথে দেখা করো। ইশিতা খুব ভালো করেই জানে তাহেরা চৌধুরীর অনুপস্থিত থাকার কারন।

লিজা আর কয়েকজন মিলে ইশিতা কে অনুভবের ঘরে দিয়ে আসলো।

____________

সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে মিষ্টি ফুলের সুবাস। এতো কিছুর মধ্যে একটা জিনিস দেখে ইশিতার মন ভালো হয়ে গেল। পুরো ঘর সাজানো হয়েছে তার প্রিয় সাদা গোলাপ দিয়ে।

রাত ১টা বাজে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ফুলে ঘেরা বিছানায় বসে আছে ইশিতা।।

চোখে ঘুমের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবুও না ঘুমিয়ে অনুভবের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

আরো দশ মিনিট পর দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ইশিতা নড়েচড়ে বসল।

এই দিনটাকে নিয়ে দুজনে কতো স্বপ্ন দেখেছে।

ঘরের ভেতর এসেই লাইট জ্বালিয়ে দিল অনুভব।
সারা ঘর এভাবে অন্ধকার করে রেখেছেন কেন?

তোমার কি হয়েছে অনুভব তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন অনুভবের খুব কাছে গিয়ে বলল ইশিতা।

ছিটকে সরে গেল অনুভব তারপর বেশ কড়া গলায় বলল আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই নি। শুধু মাত্র বাবার অনুরোধে রাজি হয়েছে।

অনুভবের এমন আচরণে ইশিতা যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

দীর্ঘ ৫বছর প্রেম করেছে তারা তারপর কতো বাধাবিপত্তি পেরিয়ে পরিবারের সবাইকে রাজি করিয়েছে।

আর এখন তাদের বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর অনুভবের মুখে এমন কথা শুনে ইশিতা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।




#চলবে




#মন_যাকে_চাই💝
#সূচনা_পর্ব
#।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here