মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ২১

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২১

★ওই ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। নূর এখন আবার আগের মতো প্রানচঞ্চল হয়ে উঠেছে। সবই আদিত্যর কেয়ার আর ভালোবাসায় হয়েছে। নূরকে হাসিখুশি দেখে আদিত্যও খুশী। আদিত্য আর সিলেট যায়নি। বিহানকে পাঠিয়েছিল ওখানে। আর নিজেও ভার্চুয়ালি সব মিটিংয়ে এটেন্ট করেছিল। পুরো কাজ না হলেও আপাতত কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে। বাদবাকি পরে দেখে নিবে আদিত্য।

আদিত্য সোফার ওপর বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। তখনই নূর এসে বললো।
–এই হিরো শোন না।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–বলো এঞ্জেল। কি হয়েছে?

–দেবর আর ননদকে একটু আসতে বলোনা। ওরা না কয়দিন হলো আর আসছে না। নূর ওদের অনেক মিস্সি করছে।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, নূর ঠিকই বলেছে। ও নিজেও খেয়াল করেছে,আবির আর আয়াত কয়দিন হলো এবাসায় আসছে না। তাহলে কি ওরা সেদিন ওর মায়ের সাথে আমার করা ব্যবহারের জন্য রাগ করেছে? আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আচ্ছা আমি ওদের ফোন করে আসতে বলছি।তুমি চিন্তা করোনা।
কথাটা বলে আদিত্য ফোন বের করে আবিরকে ফোন করলো। ফোন রিসিভ হলে আদিত্য বলে উঠলো।
–দশ মিনিট আছে তোদের হাতে। দশ মিনিটের ভেতর তোকে আর আয়াতকে আমার বাসায় দেখতে চাই। কথার হেরফের হলে আমি কি করতে পারি সেটা নিশ্চয় তোকে বলতে হবে না? রাখলাম।
কথাটা বলেই আদিত্য ফোন রেখে দিল। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–বলে দিয়েছি। দেখবে ওরা একটু পরেই চলে আসবে।

–আচ্ছা।

ঠিক দশ মিনিটের মাথায়ই আবির আর আয়াত হুরমুর করে দৌড়ে বাসার ভেতর ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে দুইজন হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে লাগলো। সবাই ওদের অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো। কারণ আবিরের পরণে একটা টাওয়াল আর টিশার্ট। মুখে শেভিং ক্রিম লাগানো। একপাশে শেভ করেছে আরেক পাশে এখনো ক্রিম লাগানো। আর আয়াতও একটা টিশার্ট আর প্লাজু পরা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে টেনে আনা হয়েছে ওকে।

বিহানও ড্রয়িং রুমেই বসা ছিল। আবিরের এই অবস্থা দেখে হাসতে দেখে বলে উঠলো।
–কিরে হারামি মাইনছের বাথরুমে চুরি করবার গেছিলি নি? এমতে চোরেগো লাহান পুলিশের ভয়ে দৌড়ায় দৌড়ায় আসলি ক্যালা?

আবির সোফায় গিয়ে ঠাস করে বসে পড়ে বললো।
–ওই বিটলা তুই চুপ থাক। আরে এমনি এমনি এভাবে এসেছি নাকি? ভাইয়ার হুমকির জন্যই তো এভাবে আসতে হলো। শেভটাও শেষ করতে পারলাম না। আরে এমন কেউ করে? কি হয়েছে ভাই? এভাবে হুমকি দিয়ে কেন ডাকলে?

আয়াতও সোফায় এসে বসলো।
আদিত্য এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো।
–আবির আয়ু তোরা কি আমার ওপর রেগে আছিস?

আবির সোজা হয়ে বসে বললো।
–কি বলছো ভাই? আমরা কেন তোমার ওপর রাগ করবো?

–তাহলে বাসায় আসছিস না কেন? নূর বারবার শুধু তোদের কথা বলছে।

আবির এবার মাথা নিচু করে অপরাধী সুরে বললো।
–কোন মুখে আসবো ভাইয়া? তোমার সামনে মুখ দেখাতে যে লজ্জা করছিল। তুমি আমাকে ভাবিডলের খেয়াল রাখতে বলেছিলে। আর আমি সে কাজে অসফল হয়েছি। আর আমাদের মা যে কাজ করেছে তাতে কোন লজ্জায় তোমাদের মুখ দেখাবো বলো?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
–হইছে হইছে আর সেন্টি খাইস না। তোর সাথে যায়না এসব। আর তোদের এতো লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই। তোরা সবসময় আমার ভাই বোন ছিলি আর থাকবি। তাই এসব মেলোড্রামা করার দরকার নেই। যা এখন উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।

আবির মাথা ঝাকিয়ে উপরে উঠে গেল। আয়াতও ঘুমের কথা বলে রুমে চলে গেল। বেচারির ঘুম এখনো পুরো হয়নি।
_____

নিলা মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়ছিল। তখনকার আবির আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। নিলাকে দেখে টেডি স্মাইল দিয়ে বলে উঠলো।
–ওয়াহ,সুবহানাল্লাহ কেয়া সিন। সকাল সকাল এমন সিন দেখানোর জন্য আমার ভাইয়াকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে।

আবিরের কথায় নিলা চমকে পেছনে তাকাল। আবিরকে দেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
–আ আপনি? কখন এলেন?

আবির বাঁকা হেসে নিলার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো। আর নিলা ধীরে ধীরে পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালের সাথে লেগে গেল।আবির এসে নিলার দুইপাশে দেয়ালে হাত রেখে নিলাকে আটকে দিল। নিলা লজ্জায় মাথায় নিচু করে ফেললো। আবির মাথা নিচু করে নিলার চুলে মুখ গুঁজে দিল।নাক ডুবিয়ে নিলার সদ্য ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। নিলা কেঁপে উঠে দুই হাতে নিজের জামা খামচে ধরলো। আবির নিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
–ভাবছি চুমুটা ভাইয়াকে না দিয়ে তোমাকেই দিয়ে দেই। তাহলে চুমুটা বেশি ইউজফুল হবে কি বলো?

নিলা লজ্জায় আরো কুঁকড়ে গেল।আবির হাত দিয়ে নিলার চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে নিলার কাঁধে একটা চুমু খেল। নিলা কেঁপে উঠে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। আবির নিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠলো।
–বায়দা ওয়ে ওড়না ছাড়া কিন্তু তোমাকে আরও বেশি হট লাগছে।

নিলা চমকে উঠে আবিরকে আলতো করে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে বললো।
–ছিহ অসভ্য একটা।

আবির হো হো করে হাসতে লাগলো। নিলা এবার আবিরের দিকে ভালো করে তাকালো।আবিরের এমন অদ্ভুত বেশ ভুসা দেখে হেসে দিয়ে বললো।
–এসব কি? এই বেশে কেন ঘুরছেন?

আবির দুষ্টুমি করে বললো।
–আমি না অনেক মুভিতে দেখেছি গার্লফ্রেন্ড বা বউয়েরা তাদের বয়ফ্রেন্ড বা হাসব্যান্ড কে নিজের হাতে শেভ করে দেয়। তাই আজ শেভ করতে গিয়ে আমারও তোমাকে দিয়ে শেভ করানোর পরম ইচ্ছে জাগলো। তাইতো ওভাবেই ফটাফট দৌড়ে চলে এলাম। এখন আমার কচি প্রেমিকাটা তার কচি কচি হাত দিয়ে আমার শেভ করিয়ে দিবে।

নিলা বললো।
–কিন্তু আমিতো শেভ করতে পারিনা।

–ব্যাপার না। আমি শিখিয়ে দিব। এখন চলো।

–কিন্তু,,

–নো ইফ নো বাট।অনলি ফটাফট।
কথাটা বলেই আবির নিলাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর হাত ধরে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে গেল।
____

সবাই ড্রয়িং রুমে বসে হাসাহাসি করছে। তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলে,একটা আলট্রা মডার্ন মেয়ে ভেতরে ঢুকলো। পরনে ছোট টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার জিন্স। হাতের ট্রলি ব্যাগটা সার্ভেন্টের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কোমড় আঁকিয়ে বাঁকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

সবাই কথা বলছিল। মেয়েটি ওদের সামনে গিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলো।
–সারপ্রাইজ!!

মেয়েটির কথায় সবাই তার দিকে তাকালো। মেয়েটিকে দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে ফেললো।নূর আর নিলা বাদে বাকি সবার এক্সপ্রেশন দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তারা খুব একটা খুশি হননি মেয়েটিকে দেখে। তবুও ভদ্রতার খাতিরে আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো।
–আরে শায়না, তুমি কখন এলে? কেমন আছ তুমি?

শায়না খুশিতে গদগদ হয়ে দ্রুত বেগে গিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো।জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো।
–আই মিস ইউ আদি।আই মিস ইউ সো মাচ।

এটা দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। আদিত্যও প্রচুর বিরক্ত আর অস্বস্তিতে পরে গেল। হাত মুষ্টি করে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। শায়নাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে নূরের ভেতর কিছু একটা হয়ে গেল। ওর কেন যেন প্রচুর রাগ লাগতে শুরু করলো। বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যাথা করছে। কিন্তু অবুঝ নূর বিষয় টা বুঝতে পারছে না। শুধু মনে হচ্ছে ওর হিরোকে কেন এই মেয়েটা জড়িয়ে ধরলো। হিরোকে শুধু ও জড়িয়ে ধরবে, আর কেউ না। শায়না মেয়েটাকে নূরের প্রথম নজরেই অপছন্দ হয়ে গেল। মেয়েটাকে মোটেও ভালো লাগছে না নূরের।

নূর আর থাকতে পারলোনা। ছুটে আদিত্যের কাছে গিয়ে শায়নার হাত ধরে শায়নাকে আদিত্যের কাছ থেকে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিয়ে, আদিত্যের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
–এই এই পঁচা মেয়েটা তুমি আমার হিরোকে কেন জড়িয়ে ধরছো? আমার হিরোকে একদম ধরবে না। যাও এখান থেকে সরো।ছুহ ছু ছু,,

নূরের কান্ড দেখে সবাই অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি আটকে রেখেছে। শায়নাকে এভাবে হেনেস্তা করতে দেখে মনে মনে সবাই খুশিই হয়েছে। কিন্তু শায়না নূরকে দেখে কপাল কুঁচকে ফেললো।এই মেয়েটা কে, তাই চিনতে পারছে না ও। শায়না নূরের দিকে আঙুল তুলে হালকা রাগী কন্ঠে বললো।
–এই মেয়ে কে তুমি? আর কিসের হিরো হ্যাঁ? তোমার সাহস কি করে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার?

আদিত্য এবার রেগে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–লো ইউর ভয়েস শায়না। নূরের সাথে এভাবে কথা বলার অধিকার কারোর নেই। আজ প্রথম তাই কিছু বললাম না। এরপর থেকে যেন মনে থাকে।

শায়না অবাক হয়ে বললো।
–আদিত্য তুমি আমাকে বকছ? তাও আবার এই মেয়েটার জন্য? কে হয় এই মেয়েটা তোমার ? যার জন্য তুমি এতো পজেসিভ হচ্ছো?

আদিত্য নূরকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বললো।
–সবকিছু। সি ইজ মাই এভরিথিং। মাই লাইফ,মাই হার্ট, মাই হ্যাপিনেস এভরিথিং। সি ইজ মাই বিউটিফুল ওয়াইফ নূর।

আদিত্যের কথায় শায়নার মাথায় যেন মঙ্গলগ্রহ ভেঙ্গে পড়লো।শায়না অবাক হয়ে বললো।
–হোয়াট তুমি বিয়ে করেছ আদিত্য? কবে? কখন? আমাদের বলোনি কেন?

আদিত্য বলে উঠলো।
–ফাস্ট অফ অল, আমি তোমার বড়ো। তাই আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে। এটা তোমার লন্ডন না, বাংলাদেশ। তাই এখানকার সভ্যতায় চলার চেষ্টা করবে। আর দ্বিতীয়ত হ্যাঁ আমি বিয়ে করেছি। আর আমার বিয়ের কথা সবাইকে চেচিয়ে চেচিয়ে বলাটা আমি জরুরি মনে করিনা। আর তাছাড়া তোমাদের সাথে তেমন যোগাযোগ নেই তাই বলা হয়ে ওঠেনি।

আদিত্যের কথায় শায়না চমকে গেল। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না যে আদিত্য সত্যি সত্যিই বিয়ে করেছে। সেতো আদিত্যকে পছন্দ করে। আদিত্য যখন লন্ডন ছিল তখন থেকেই। কতো প্ল্যান করে এসেছিল যে এবার ও আদিত্যকে বিয়ে করেই ছাড়বে। কিন্তু এখন কি শুনছে এসব? শায়নার ভাবনার মাঝে আদিত্য আবার বলে উঠলো।
–আচ্ছা এখন বলো ফুপি ফুপা কেমন আছে? আর তুমি আসবে সেটা বলোনি কেন?

শায়না জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–সবাই ভালো আছে। আসলে আমি তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই না বলেই এসেছি।

–ও আচ্ছা ঠিক আছে। যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। জার্নি করে এসেছ, ফ্রেশ হয়ে নাও।
আদিত্য সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে বললো।
–যাও শায়নাকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দাও।

সার্ভেন্ট মাথা ঝাকিয়ে শায়নাকে সাথে করে নিয়ে গেল।

শায়না যেতেই আবির বলে উঠলো।
–এই শায়না না ডায়না হঠাৎ এখানে কোথাথেকে উদয় হলো? আর তুমি ওকে এখানে কেন থাকতে বললে?

আদিত্য বলে উঠলো।
–তো কি করবো? যাই হোক শায়না আমাদের ফুপির মেয়ে। বাংলাদেশে এসে আমার বাসায় এসেছে। এখন কি আমি ওকে বের করে দিবো? কয়দিন থাকুক। ঘুরেফিরে আবার চলে যাবে। ততদিন নাহয় আমরা ওকে টলারেট করে নিবো।

শায়না রুমে এসে রাগে অস্থির হয়ে সারা রুমে পায়চারী করতে লাগলো। নিজের এমন হার কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারছে না শায়না। ওর সারাবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। না না কিছুতেই না।আমি কিছুতেই হারবো না। আদিত্য শুধু আমার। আমি ওকে যেভাবেই হোক হাসিল করেই ছাড়বো। এত সহজে হার মানবো না আমি।

রাতে ডিনার টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। সবসময়ের মতো আদিত্য নূরকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। আর নূর নানান তালবাহানা করছে না খাওয়ার জন্য। বাকি সবাই আদিত্যের হাল দেখে মিটিমিটি হাসছে। একটু পরেই ওখানে শায়না আসলো। পরনে একটা স্লিভলেস টিশার্ট আর শর্ট জিন্স। শায়নার এমন অশালীন ড্রেসিং সেন্স দেখে সবাই প্রচুর অস্বস্তিতে পরে গেল। নূর কেমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। তবে শায়নার কোন ভাবাবেগ নেই। ও হেলেদুলে এসে আদিত্যের পাশের চেয়ার টান দিয়ে বসে পড়লো। তখনই নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
–শোন হিরো এই মেয়েটা বোধহয় অনেক গরীব। একে তুমি কিছু টাকা পয়সা দিয়ে দাও হ্যাঁ?
শায়নাকে ইশারা করে কথাটা বললো নূর।

শায়না তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো।
–হোয়াট রাবিশ। আমাকে কোনদিক দিয়ে তোমার গরীব মনে হয়?

নূর অবলীলায় বলে উঠলো।
–সব দিক দিয়েই। তোমার টাকা পয়সা নেই বলেই তো এতো কম কম কাপড় পরে আছো। পুরো কাপড় কেনার টাকা নেই তোমার তাইনা? আহারে। হিরো তুমি ওকে কিছু টাকা দিয়ে দাও। বেচারি তাহলে পুরো কাপড় কিনতে পারবে।

নূরের কথা শুনে আবির আর বিহান নিজেদের হাসি আর আটকাতে পারলোনা। হো হো করে হেঁসে উঠলো দুজন। বাকিরাও ঠোঁট চেপে ধরে হাসছে। নূর যে সরল মনে এই শায়নাকে শাবান পানি ছাড়াই ধুয়ে দিয়েছে, এটা নিয়ে ওদের ভীষণ মজা লাগছে। আর শায়না এদিকে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–আদিত্য তোমার বউ এভাবে আমাকে অপমান করছে আর তুমি হাসছ?

আদিত্য বলে উঠলো।
–সরি শায়না কিছু মনে করোনা। আসলে নূর একটু অবুঝ। ছোট মানুষের মতো যা মনে আসে তাই বলে দেয়। ওর কথায় রাগ করোনা। তবে তোমাকেও একটা কথা বলতে চাই। যেখানকার যেমন সংস্কৃতি সেখানে সেই অনুযায়ী চলা উচিত। আমি আগেও বলেছি। এটা বাংলাদেশ, তোমার লন্ডন না।তাই এখানকার সভ্যতা অনুযায়ী না চললে তুমি সবসময় এভাবে হাসির পাত্র হবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছা। এখন ডিনার করে নাও।

আদিত্যের কথায় শায়না অনেক অপমান বোধ করলো। ওতো এসব ড্রেস পরেছে আদিত্যর এট্রাকশন পাওয়ার জন্য। কিন্তু ওতো আরও উল্টো আমাকে কথা শোনাচ্ছে। শায়না আরেক টা কথা ভাবছে। আদিত্য তখন নূরকে অবুঝ কেন বললো? তারমানে কি? নূর কি স্বাভাবিক না? শায়না খাবার খেতে খেতে দেখলো আদিত্য কেমন বাচ্চাদের নূরকে এটা ওটা বলে খাইয়ে দিচ্ছে।এটা দেখে শায়না ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে।তবে ব্যাপার টা কেমন যেন খটকা লাগলো শায়নার। মনে মনে ভাবছে, নূরের নিশ্চয় কোন সমস্যা আছে। ব্যাপার টা আমাকো জানতে হবে।

খাওয়া দাওয়া শেষে শায়না একটা সার্ভেন্ট কে ডাক দিয়ে নূরের ব্যাপারে সব জিজ্ঞেস করলো। সার্ভেন্ট টা শায়নাকে নূরের সমস্যার ব্যাপারে সব খুলে বললো। সব শুনে শায়না মনে মনে সয়তানি হাসি দিল। তারমানে নূর মেন্টালি স্টেবল না। এটা তো আমার জন্য সূবর্ণ সুযোগ। ওই পাগল মেয়েকে আদিত্যের জীবন থেকে সরাতে আমার দুই মিনিটও লাগবে না। আদিত্য শুধু আমারই হবে।
______

আয়াত ওর এক বান্ধবীর বাসায় এসেছিল বেড়াতে। আড্ডা দিতে দিতে অনেক টা রাত হয়ে গেছে। রাত দশটার দিকে আয়াত বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে এসে বসলো। আয়াতের গাড়ি একটা সিগনালে থেমে আছে। আয়াত বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ দেখলো বিহান একটা সিএনজির ভেতর বসে আছে। বিহানকে দেখে আয়াত প্রথমে একটু খুশী হলো। পরে আবার ভাবলো বিহান এইসময় এখানে কি করছে? তাও আবার সিএনজিতে? বিহান তো সবসময় আদিত্যের গাড়িতেই চলাফেরা করে। আয়াতের ভাবনার মাঝেই সিগনাল ছেড়ে দিল। বিহানের সিএনজি আগে চলে গেল। আয়াত সেটা দেখে ওর ড্রাইভারকে তাড়াতাড়ি বিহানের সিএনজিকে ফলো করতে বললো। ড্রাইভার আয়াতের কথামতো বিহানের সিএনজি ফলো করলো।

একটু পর বিহানের সিএনজি একটা গলির ভেতর ঢুকলো। আয়াতের গাড়িও কিছুটা দূর থেকে ওকে ফলো করছে। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর বিহানের সিএনজি একজায়গায় থেমে গেল। বিহান সিএনজি থেকে নেমে সামনের দিকে এগুলো। আয়াত সামনের জায়গাটা দেখে থমকে গেল। কারণ সামনে রেড লাইট এরিয়া। বিহানকে এই নিষিদ্ধ পল্লিতে যেতে দেখে আয়াতের হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। বিহান এখানে কি করছে? ওকি তাহলে?? না না আর ভাবতে পারছে না আয়াত। ওর মাথা ঘুরছে গা কেমন গুলিয়ে উঠছে। এ এটা সত্যি হতে পারে না। কখনোই না।

আয়াত আর থাকতে পারলোনা। ড্রাইভারকে বলে তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here