মরুর বুকে বৃষ্টি পর্ব ৩৪

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি 💖
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৪

★এরই মাঝে এক সপ্তাহ কেটে গেছে। আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। আর নূরও না চাইতেও কেমন যেন আদিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। উপরে উপরে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে দূর্বল হয়ে পড়ছে আদিত্যের প্রতি। যেন এক অদৃশ্য কোন মায়া টানে ওকে আদিত্যের দিকে। তবে আদিত্যের প্রতি কেমন যেন সন্দেহ হয় ওর। আদিত্যকে কেমন রহস্যময় লাগে ওর কাছে। তাই আদিত্যর ওপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না নূর।

আদিত্য রোজ রাতেই নূরের রুমে এসে নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমায়।আবার খুব ভোরে নূর জাগার আগেই চলে যায়। আর নূর রোজ সকালে উঠে নিজের জামা থেকে সেই ঘ্রাণ টা পায়। নূর প্রথম প্রথম এটা নিয়ে টেনশন করলেও এখন আর তেমন ভাবে না এটা নিয়ে। কারণ ঘ্রাণ টা কেন যেন ওর অনেক ভালো লাগে। সারাক্ষণ এই মোহময় ঘ্রাণ টাতে ডুবে থাকতে ইচ্ছে হয় ওর।
আদিত্য আজকাল প্রায় রোজই নূরকে ভার্সিটি নিয়ে যায়। আবার কতদিন নিয়েও আসে।

বিহান এই এক সপ্তাহে নিজেকে অনেক টা সামলে নিয়েছে। সে তার দূর্বলতা কাওকে দেখাতে চায় না। নিজের ভেতর ঝড় বয়ে গেলেও বাইরে সেটা বুঝতে দেয়না ও। এই কয়দিনে বিহান দরকার ছাড়া খুব একটা আদিত্যের বাসায় যায়নি। আর গেলেও যতটা সম্ভব আয়াতের সামনে না পরার চেষ্টা করেছে। মেয়েটির মুখোমুখি হলে ওর বুকের যন্ত্রণা টা জেগে ওঠে তখন। তাই সে যতটা পারে আয়াতকে এভয়েড করার চেষ্টা করে।
আয়াতও বিহানের হঠাৎ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করেছে। অনেক বার এই ব্যাপারে কথা বলতেও চেয়েছে বিহানের সাথে। তবে বলতে চেয়েও বলেনি। কোন অধিকারেই বা বলবে? তার ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার অধিকার যে তার নেই। হতে পারে অনধিকার চর্চা করতে গিয়ে তাকে রাগিয়ে দিল তখন? এসব ভেবে দ্বিধাদ্বন্দে আর এগুই না আয়াত।

আবির আর নিলার প্রেমও ভালোই চলছে। আবির প্রায়ই আদিত্যর সাথে দেখা করার বাহানায় তার কচি বিয়াইন টার যাথে একটু মিষ্টি মিষ্টি প্রেম করে যায়। কখনো কখনো তার ভিটামিন ডোজ পায়।আবার কখনো খালি হাতেই ফিরতে হয় বেচারাকে। আবির নূরের সামনে নিজেকে আদিত্যর ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ।

বিকাল পাঁচ টা,
নূর ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিল।তখনই হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। নূর উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড় করে ওর বান্ধবী গুলো বাসায় ঢুকে পড়লো। নূর একটু অবাক হয়ে বললো।
–কিরে তোরা হঠাৎ এখানে?

নূরের এক বান্ধবী বলে উঠলো।
–কেন আসতে পারিনা বুঝি? তোর বাসায় আসতে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে নাকি?

–আরে আমি কি তাই বলেছি নাকি? তোরা না বলে হঠাৎ করে এলি তাই বললাম।

এবার আরেক বান্ধবী বলে উঠলো।
–আরে আমাদের না তোর কথা অনেক মনে পরছিল। তাইতো তোকে সারপ্রাইজ দিতে চলে এলাম।

নূর কেমন সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকালো ওদের দিকে। এরা যে এখানে কোন মতলবে এসেছে তা ঠিকই বুঝতে পারছে নূর। তবুও হাসিমুখে সবাইকে সোফায় নিয়ে বসালো নূর। সোফায় বসে সবাই কেমন এদিক ওদিক তাকাতাকি করছে। নূর সেটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কিরে কি খুজছিস তোরা?

একজন বলে উঠলো।
–হ্যাঁরে নূর তোর সেই হটি পেইং গেস্ট টা কই রে? দেখছি নাতো।

আরেকজন বলে উঠলো।
–হ্যাঁ নূর একটু ডাক দেনা। আমাদের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দেনা?

নূর এবার সত্যি সত্যিই বুঝে গেল এই বান্দরনী দের মতলব। তাইতো বলি হঠাৎ করে এদের আমার জন্য এতো দরদ উতলে ঢেলে পরছে কেন? লুচু ছেমরি গুলো সব লুচুগিরি করতে এসেছে । ভালো হয়েছে উনি এখন বাসায় নেই। লুচ্চি গুলো ওনার সাথে দেখাই করতে পারবে না। এক মিনিট, উনি বাসায় নেই এতে আমি এতো খুশী হচ্ছি কেন? উনি এদের সাথে দেখা করতে পারবেন না তাতে এতো খুশীর কি হলো? আর এদের সাথে দেখা করলেই বা কি হবে? উনি এদের সাথে দেখা করুক আর যা খুশী তাই করুক তাতে আমার কি? আমার ওপর এতো এফেক্ট হচ্ছে কেন?
নূরের ভাবনার মাঝেই ওর বান্ধবী আবারও বলে উঠলো।
–কিরে চুপ করে আছিস কেন? বলনা উনি কোথায়? ইশশ আমরা তো এক্সাইটেড হয়ে আছি উনার সাথে দেখা করার জন্য।

নূরের চরম বিরক্তি লাগছে। তবুও জোরপূর্বক হেসে বললো।
–উনিতো নেই এখন। কখন আসবে তার কোন ঠিক নেই।

নূরের বান্ধবী গুলো বলে উঠলো।
–কি বলিস? ব্যাপার না আমরা ওনার জন্য অপেক্ষা করবো।

–আরে উনার তো আসার কোন ঠিক নেই। হতে পারে আজকে উনি নাও আসতে পারে। উনি মাঝে মধ্যে বাসায় আসেন না। তোরা কতক্ষণ অপেক্ষা করবি তাইনা।

–আরে এটা কোন ব্যাপার হলো? আমরা উনার জন্য অপেক্ষা করবো। ততক্ষণ নাহয় তোর সাথে একটু আড্ডা দেই।

নূর দাঁতে দাঁত চেপে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয়। তোরা বয় আমি তোদের জন্য চা নাস্তা নিয়ে আসছি।
কথাটা বলে নূর উঠে কিচেনের দিকে গেল। যেতে যেতে চেহারায় বিরক্তির ছাপ ভেসে উঠলো

একটু পরে নূর সবার নুডলস করে নিয়ে এলো। ট্রে টা টেবিলের ওপর রাখতেই হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। নূর এগিয়ে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে সামনে আদিত্যকে দেখে নূরের চোখ বড়বড় হয়ে গেল।আদিত্য এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে তা ভাবেনি নূর। আদিত্য নূরকে দেখে মুচকি হেসে যেই ভেতরে ঢুকতে যাবে ওমনি হঠাৎ নূর আদিত্যের মুখের ওপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। একটুর জন্য আদিত্যর নাকে লাগেনি দরজা। নূরের এহেন কাজে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বললো।
–এটা কি হলো?

নূর দরজা আটকে টেনশনে নখ কামড়াতে লাগলো। এই লোকটারও এখুনি আসা লাগলো? একটু দেরি দিয়ে আসলে কি হতো? এখন লুচিগুলোর হাত থেকে কি করে বাঁচাব উনাকে? কিন্তু আমি এতো হাইপার হচ্ছি কেন? এতো টেনশনেরই বা কি আছে ? ওরা কি আর খেয়ে ফেলবে নাকি ওনাকে?
নূরের ভেতরের আওয়াজ টা নূরের প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বললো, আরে খেয়ে ফেলবে মানে অবশ্যই খেয়ে ফেলবে। দেখছিস না এই ক্ষুদার্ত বাঘিনী গুলো কেমন আদিত্যকে গেলার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। তাছাড়া উনি আমাদের পেইং গেস্ট উনাকে এসব ঝামেলা থেকে বাঁচানো আমার দায়িত্ব। মা যদি জানতে পারে যে আমার বান্ধবী গুলো আদিত্যকে জ্বালিয়েছে তাহলে তো আমার আর নিস্তার নেই। তাই ওনাকে যে করেই হোক এদের হাত থেকে বাচাতেই হবে।
নিজের মনকে নিজেই এসব হাবিজাবি জাস্টিফিকেশান দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে, তার মনে অন্য কিছু নেই। সে শুধুমাত্র একজন দায়িত্ববান বাড়িওয়ালা হিসেবে তার পেইং গেস্ট কে রক্ষা করছে। ব্যাস আর কিছুনা। তার সাদা মনে কোন কাঁদা নেই।

নূরকে এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর বান্ধবীরা বলে উঠলো।
–কিরে নূর এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কে এসেছে? তোর পেইং গেস্ট আসেনিতো?

নূর থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বললো।
–না না উনি এখনো আসেন নি। ওটাতো এমনি ওই পাশের বাসার এক আন্টি । আমাকে একটু ডাকছেন উনি। তোরা থাক আমি এখুনি আসছি হ্যাঁ?
কথাটা বলে নূর দরজা হালকা করে খুললো।

আদিত্য মাত্রই আবার দরজায় নক করতে যাবে তখনই নূর আবার দরজা হালকা করে খুলে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে আবার দরজা আটকে দিল। নূরের কাজকর্ম কিছুই আদিত্যের বোধগম্য হচ্ছে না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি নূর ফট করে নিজের এক হাতের তর্জনী আঙুল টা আদিত্যের ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে,আরেক হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপর রেখে আদিত্যকে চুপ থাকার ইশারা করলো। আদিত্য কথা কি বলবে, নূরের আঙুল ওর ঠোঁটে রাখায় বেচারা এমনিতেই চুপ হয়ে গেছে। তবে নূরের আচরণ কেমন যেন আজব লাগছে আজ।

নূর এবার আঙুল সরিয়ে আদিত্যর হাত ধরে আদিত্যকে টেনে একদিকে নিয়ে যেতে লাগলো।আদিত্য শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। নূর কি করতে চাইছে সেটাই বুঝতে পারছে না ও। নূর আদিত্যেকে নিয়ে বাসার পেছন সাইটে এসে দাঁড়াল। আদিত্য এবার নিজের কৌতুহল লুকিয়ে রাখতে না পেরে বলে উঠলো।
–নূর আর ইউ ওকে? সব ঠিক আছে তো?

নূর জোরপূর্বক হেসে আমতা আমতা করে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আমার আবার কি হবে?

–তাহলে এমন আজব বিহেব করছ কেন? আর আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন?

নূর কি বলবে এবারে ভেবে পাচ্ছে না। কোন কিছু না পেয়ে বোকার মতো বলে উঠলো।
–কেন আবার, আপনাকে এই জায়গা টা দেখাতে। আরে আপনিতো আমাদের বাসার পেছন সাইট টা দেখেন নি। তাই আপনাকে দেখাতে নিয়ে এলাম। ভালো করে দেখুন। সুন্দর না জায়গায় টা।

আদিত্য যেন তব্দা খেয়ে গেল।বাসার পেছন সাইটের পরিত্যক্ত এমন একটা জায়গায় নূর সৌন্দর্যের কি দেখতে পেল তাই ভেবে পাচ্ছে না আদিত্য। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–এখানে সুন্দর বলতে কি দেখতে পাচ্ছ তুমি?

নূর আবারও কোন কিছু না পেয়ে বোকার মতো বলে উঠলো।
–কেন, এইযে দেখুন কত সুন্দর স্যানিটারি পাইপ। এমন পাইপ কখনো দেখেছেন আপনি? এতো বছর ধরে আমাদের সাথে আছে। তবুও এখনো ক্লান্ত হয়ে ফেটে যায়নি। কতো মজবুত দেখেছেন? কালারটাও কতো সুন্দর তাইনা? আমিতো ভেবেছি এই পাইপের সাথে ম্যাচ করে কয়েকটা জামা বানাবো ভালো হবে না বলেন?
নূর হড়বড়িয়ে বোকার মতো কি বলে যাচ্ছে ও নিজেও জানে না।

আদিত্য বেচারা ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। ওর এঞ্জেল টা কি এবার সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেল নাকি? কি সব আবোল তাবোল কথা বলছে। এমন হলে কি করবে ও?
আদিত্য নূরের কপালে হাত রেখে ওর টেম্পারেচার চেক করে চিন্তিত সুরে বললো।
–নূর তোমার শরীর ঠিক আছে? এভাবে আবোল তাবোল কথা বলছ কেন? তুমি তোমার মেডিসিন গুলো ঠিকমতো নিচ্ছ তো?

নূর আবারও মেকি হেসে বললো।
–আরে আমার আবার কি হবে? বললাম তো আমি ঠিক আছি।

–না তুমি ঠিক নেই। তুমি চল তোমার চেকআপ করাতে হবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে আসতে লাগলো। নূর আদিত্যেকে থামতে বলছে কিন্তু আদিত্য কোন কথা শুনছে না। নূর পরে গেছে এক মহা ঝামেলায়। এবার ওই লুচিগুলো দেখে ফেললে কি হবে আল্লাই জানে।

আদিত্য নূরকে নিয়ে দরজার সামনে আসতেই নূর আবারও বলে উঠলো।
–আরে আমার কথাটা তো শুনুন প্লিজ?

আদিত্য কিছু বলতে যাবে তখনই নূরের বান্ধবীরা দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। আদিত্যকে দেখে সবকয়টা খুশিতে গদগদ হয়ে গেল। ওরা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আরে নূর উনি এসেছেন তুই আমাদের বললি না কেন?

নূর কি বলবে, বেচারি এখন নিজের মুখ লুকানোর জন্য ইদুরের গর্ত খুঁজছে। সেখানে যেয়ে যদি নিজেকে লুকাতে পারে।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে বললো।
–জ্বি আপনারা কারা আপনাদের তো চিনলাম না?

নূরের বান্ধবী বলে উঠলো।
–আমরা হলাম নূরের ফ্রেন্ডস। আসলে আমরা একটু আপনার সাথে দেখা করে পরিচিত হতে এসেছিলাম। কিন্তু নূর বললো আপনি হয়তো আজ আসবেননা। তাই অনেকক্ষণ ধরে বসে থেকে আমরা এখন যেতেই নিয়েছিলাম।

এদের কথা শুনে আদিত্য এক ভ্রু উঁচু করে সরু চোখে নূরের দিকে তাকালো 🤨। আর সেটা দেখে নূর অন্য দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। বেচারি এখন কোন কোনায় গিয়ে লুকানো যায় সেই জায়গা খুঁজছে। আদিত্যর কাছে এবার আসল ব্যাপার টা ক্লিয়ার হয়ে গেল। নূরের এতক্ষণ ধরে এসব পাগলামির কারণও বুঝে গেল আদিত্য। তো এঞ্জেল টা জেলাস হয়ে এসব করছে। কথাটা ভেবে আদিত্য মনে মনে হাসলো। আব আয়েগা মাজা। আদিত্য বাঁকা হাসি দিয়ে নূরের বান্ধবীর দের দিকে তাকিয়ে অমায়িক ভাবে বললো।
–আরে আরে আপনারা এভাবে চলে যাচ্ছেন কেন? আপনারা আমার সাথে দেখা করতে এসে না দেখা করেই চলে যাবেন তাকি হয়। চলুন না আমরা ভেতরে গিয়ে বসে আরামে কথা বলি।

নূরের বান্ধবীরা খুশিতে ডগমগ হয়ে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই চলুন না।

আদিত্য নূরের ফ্রেন্ডস দের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলে গেল। আর বেচারি নূর ওখানে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে যেন কারোর চোখেই পরছে না। ছেলে মানুষ সবই এক। এমনিতেতো সারাক্ষণ আমার পেছনে পরে থাকে। আর আজ যেই ওদের দেখলো ওমনি পল্টি খেয়ে গেল? আর ওনাকেই বা কি বলবো,আমার লুচ্চি কাচ্চি বান্দরনী গুলাও কি কম নাকি। মীরজাফরের মতো সবগুলো আমাকে যেন মেমোরি থেকে ডিলিট করে দিল। শালী লুচ্চির দল। নূর বিরক্ত হয়ে নিজেই ভেতরে ঢুকলো।

ভেতরে ঢুকে নূরের চোখ কপালে উঠে গেল। আদিত্য নূরের ফ্রেন্ডস দের সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে যেন দুধের সাথে হড়লিক্স। কি সুন্দর হাসাহাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। যেন সকাল সকাল হাঁসের মাংস খেয়ে এসেছে। ইশশ দেখে মনে হচ্ছে হাসির ডেট যেন আজকের পর এক্সপাইয়ার হয়ে যাবে।তাই জন্মের হাসি আজই হেঁসে শেষ করছে। আর এই লোকটাকে দেখ, মনে হচ্ছে যেন গোপিদের মাঝে কৃষ্ণ সেজে বসে আছে। মরণ😏। কিন্তু আমার এতো রাগ হচ্ছে কেন? ধূরর জ্বালা কিছুই ভাল্লাগছে না। নূর রাগে কিড়মিড় করে এগিয়ে গিয়ে সোফায় ধূপ করে বসে পড়লো।

আদিত্য আরচোখে নূরকে ঠিকই দেখছে। ওকে এভাবে জেলাস হতে দেখে অনেক মজা লাগছে ওর। আর এটা ভেবেও অনেক খুশী লাগছে যে,ওর এঞ্জেল টা এখনো ওকে অন্য কারোর সাথে সহ্য করতে পারে না। ব্যাস একবার শুধু নূর ওর মনের কথাটা বুঝতে পারলেই হলো। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নূরের বান্ধবীরা এবার আদিত্যের গা ঘেঁষে বসে ওর সাথে সেলফি তুলতে লাগলো। যদিও আদিত্য ভেতরে ভেতরে চরম বিরক্ত হচ্ছে। তবুও নূরকে দেখানোর জন্য ও নিজেও হাসিমুখ করে ওদের কাজে সায় দিচ্ছে।
ওদের এসব কান্ডকারখানা নূরের রাগের অগ্নিকুণ্ডে আরও ঘি ঢেলে দিল। নূরের ইচ্ছে করছে সবকয়টার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিতে। এমন লুচ্চি মেয়েরা ওর বান্ধবী কি করে হলো সেটাই আজকের দিনে ভাবনার বিষয়। লুচ্চিগিরিতে এদের মেডেল পাওয়া উচিত। সবগুলো সানি লিওনির নেক্সট জেনারেশন মনে হচ্ছে।

আদিত্য এবার টি টেবিলের ওপর নুডলস দেখে বলে উঠলো।
–ওয়াও নুডলস? কে বানিয়েছে?

নূরের এক বান্ধবী বলে উঠলো।
–নূর বানিয়েছে। আপনি খাবেন নাকি?

আদিত্য নূরের দিকে আরচোখে তাকিয়ে বললো।
–হ্যাঁ কেও দিলেতো খাওয়াই যায়।

নূরের বান্ধবী এবার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এই নূর যানা আদিত্য জির জন্যেও এক বাটি নুডলস নিয়ে আয়।

আদিত্য জি??? কেনরে ভাই ভাইয়া বলতে কি মুখে ফসকা পরে যায়? উঁহহ আদিখ্যেতা দেখে গা জ্বলে যায়।
মনে মনে এসব বললেও, উপরে উপরে জোরপূর্বক হেসে নূর বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয়, এখুনি আনছি। আমার কাজই তো এই তাইনা?
কথাটা বলে নূর দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে হাজার টা গালি দিতে দিতে কিচেনের দিকে গেল।

কিচেনে এসে নূর রাগে ফেটে পড়ছে। ইশশ কি শখ গোপিদের সাথে রঙ্গলিলা করে করে নুডলস খাওয়া হবে তাইনা? খাওয়াচ্ছি নুডলস। এমন নুডলস খাওয়াবো যে বাপের জন্মেও ভুলবে না।এসব ভেবে নূর রাগের বশে আদিত্যর নুডলসের বাটিতে অনেক গুলো মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে দিল। তারপর সেটা একটা ট্রেতে করে নিয়ে বাইরে এলো। বাইরে এসে আদিত্যের সামনে নুডলস এর বোলটা এগিয়ে দিয়ে ফেক স্মাইল দিয়ে বললো।
–এই নিন আপনার নুডলস।

নূরের এক্সপ্রেশন দেখে আদিত্যর একটু সন্দেহ হলো। তবুও কিছু না বলে মুচকি হেসে নূরের হাত থেকে নুডলস এর বোল টা হাতে নিল। নূর সেটা দেখে একটা বাঁকা হাসি দিল। আদিত্য চামচে পেচিয়ে এক চামচ নুডলস মুখে দিতেই সন্দেহ টা ক্লিয়ার হয়ে গেল। আদিত্য বুঝতে পারছে নূর এসব ইচ্ছে করেই করেছে। আদিত্য মনে মনে বললো, তুমি বললে তো বিষপান করতেও দ্বিতীয় বার ভাববো না। সেখানে এই ঝাল কি জিনিস। তোমার দেওয়া শাস্তি সানন্দে গ্রহণ করলাম এঞ্জেল। অতঃপর আদিত্য সেই ঝাল দেওয়া নুডলস খেতে শুরু করলো।

এটা দেখে নূর অনেক অবাক করে গেল। ওতো ভেবেছিল আদিত্য একবার মুখে দিয়েই আর খাবেনা। কিন্তু আদিত্য তো বিনাবাক্যে খেয়েই যাচ্ছে। আদিত্য নুডলস খেতে খেতে ওর চোখ দুটো লাল বর্ন হয়ে গেল। ঠোঁট আর নাকের ডগাও লাল হয়ে উঠলো। আদিত্য ছোট থেকেই ঝাল কম খায়। সেখানে এতো ঝালে আদিত্যর অবস্থা করুন হয়ে যাচ্ছে। ঠোঁট দুটো ঝালে কাঁপছে। নূরের এবার প্রচুর খারাপ লাগছে। ওতো শুধু একটু মজা দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যাপার টা এমন হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি ও। নিজের বোকামির ওপর চরম রাগ লাগছে ওর। নূর আদিত্যের এই অবস্থা আর দেখতে পারলোনা। আদিত্যর হাত থেকে নুডলস এর বোল টা টান দিয়ে নিয়ে বললো।
–প্লিজ বন্ধ করুন। আর খেতে হবে না আপনাকে।

আদিত্য কিছু না বলে নূরের হাত থেকে আবারও বোল টা কেঁড়ে নিয়ে খেতে লাগলো। নূরের বান্ধবীরা ওদের কান্ড কারখানা কিছুই বুঝতে পারছে না। ওরা শুধু তাকিয়ে আছে।
এদিকে আদিত্যের ঝালে আরও নিদারুণ অবস্থা। নূরের এবার কান্না পাচ্ছে। কেন করতে গেল ও এমনটা? আর উনিও কেমন জেদ ধরে খেয়েই যাচ্ছে। এখন কি করবো আমি,?

আদিত্য নুডলস একেবারে শেষ করে বোল টা টি টেবিলের ওপর রাখলো। তারপর নূরের বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো।
–লেডিস তোমাদের সাথে দেখা করে অনেক ভালো লাগলো। আমার একটু কাজ আছে, আমি আসছি এখন।
কথাটা বলে আদিত্য উঠে দাঁড়াল। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
–থ্যাংকস ফর ইউর ডেলিশিয়াস ফুড।

কথাটা বলেই আদিত্য ওখান থেকে দ্রুত ওর রুমে চলে গেল। নূরের চোখ দিয়ে এবার সত্যিই পানি গড়িয়ে পড়লো। নিজের ওপর চরম রাগ লাগছে ওর। কি দরকার ছিল এমন বোকামি করার। তুই আসলেই একটা গাধা।
নূর তাড়াতাড়ি করে কিচেনে দৌড়ে গেল। কিচেনে এসে একটা বোলে মধু ঢেলে নিয়ে আবারও বেরিয়ে এসে আদিত্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল।

আদিত্য রুমে এসে দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরে শুধু পায়চারি করছে আর জোরে জোরে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ছে।।ঝালে ওর মাথায় যেন আগুন ধরে গেছে ওর, সারা শরীর ঝিনঝিন করছে।কান দিয়ে ধুঁয়া বেড় হচ্ছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর সামনে যে আসবে তাকে ধ্বংস করে ফেলবে ও।

তখনই নূর আদিত্যের রুমে ঢুকলো।আদিত্য উল্টো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। নূর আদিত্যের পেছনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে ওর দিকে মধুর বোলটা এগিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
–আই অ্যাম সরি। প্লিজ এই মধুটা খেয়ে নিন।আপনার ভালো লাগবে।

আদিত্য হঠাৎ নূরের দিকে ফিরে ওর হাত টেনে ধরে এক ঝটকায় দেয়ালের সাথে আটকে দিল। নূর কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই আদিত্য নূরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে নিল । নূর যেন মুহূর্তেই ফ্রিজ হয়ে গেল। হাতের বোলটাও ঠাস করে নিচে পড়ে গেল। আদিত্য নূরের দুই হাতের আঙুলের ভেতর নিজের দুই হাতের আঙুল ঢুকিয়ে নূরের হাতদুটো দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, নূরের অধরসুধাপান করতে লাগলো।নিজের ঝালের নিবারন করছে নূরের ঠোঁটের মধু দিয়ে। নূর চোখ বন্ধ করে আছে, শরীর অসম্ভব কাঁপছে ওর। হৃৎস্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। নূর চেয়েও কেন যেন আদিত্যকে সরিয়ে দিতে পারছে না। কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছে ও। মনে হচ্ছে এই স্পর্শটা ওর অনেক পরিচিত। একদম আপন কেও।

প্রায় পাঁচ মিনিট আদিত্য নূরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে, নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে নেশালো কন্ঠে বললো।
–স্যার নিউটনের সূত্র মনে আছে তো? প্রতেকটা ক্রিয়ারই কোন না কোন প্রতিক্রিয়া আছে। তোমার ফ্রেন্ডস দের ক্রিয়ায় তুমি জেলাস হয়েছ।আর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমাকে ঝাল খাইয়েছ। আর তোমার ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমি আমার ঝালের নিবারন আমার মতো করে নিলাম। তোমার আনা ওই মধু দিয়ে আমার কিছু হতো না। আমারতো এক্সট্রা পাওয়ারফুল মধুর দরকার ছিল। যে মধু খাওয়ার সাথে সাথে একদম ইন্সট্যান্ট কাজ করে।

আদিত্য এবার নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বললো।
–বায়দা ওয়ে, আজকের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া খেলায় কিন্তু শেষে আমিই সবচেয়ে লাভবান হয়েছি। তুমি রোজ এমন ক্রিয়া করো,আর আমি রোজ এমন প্রতিক্রিয়া করে যাবো।

নূর আর সহ্য করতে পারলোনা। আদিত্যকে হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আর আদিত্য পেছন থেকে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here