মাতাল_হাওয়া পর্ব ১০

#মাতাল_হাওয়া
#১০ম_পর্ব
#তাসনিম
নিরব তুলির কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে তুলির সাথে দেখা করবে। এর আগেও যে আসেনি তা না। এই ৩ মাসে অসংখ্যবার এসেছে তুলিকে একনজর দেখার জন্য কিন্তু তুলির অজান্তে। প্রতিদিন কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে তুলিকে দূর থেকে একনজর দেখে চলে যায়। মেয়েটা যে ওকে ছাড়া ভালো নেই তা ওর চোখ মুখ দেখলেই বুঝা যায়। অনেক টা শুখিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালি পড়েছে কিন্তু তারপরও নিরবের কাছে তুলিকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগে। তুলিকে দেখলেই অজানা এক শান্তিতে মন ভরে যায়। তুলি কলেজ থেকে সেতুর সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছিলো। সামনে তাকিয়ে নিরবকে দেখে চমকে তাকালো। এই ৩ মাসের মধ্যে আজ প্রথম দর্শন পেলো নিরবের। অভিমানে কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে তুলির। এতদিন না কোনো খোজ খবর নিয়েছে না দেখা করেছে না ফোন দিয়েছে তাহলে আজ কেনো আসছে উনি। বলবোনা কথা আমি!!! চোখ থেকে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরল তুলির। নিরবকে সামনে আসতে দেখে বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে তুলির। নিরব সামনে এসে দারালো চোখ নামিয়ে নিল তুলি।

—–“কেমন আছিস তুলি????”

——“ভা—-লো।” তুমি???”

——“এইতো ভালো আছি।”

নিরবের ভালো আছি কথাটা যেন তুলির কষ্ট হাজারগুণে বারিয়ে দিল। নিরব ওকে ছাড়া সত্যিই ভালো আছে???? কিন্তু নিরবের চোখ মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছেনা। শুখিয়ে গেছে আগের থেকে অনেক, চোখে হাল্কা কালি পড়েছে, মুখে খোচা খোচা দাড়ি তারপরও নিরবকে মারাত্মক রকমের সুন্দর লাগছে তুলির কাছে। এই ছেলেটাকে মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় শার্টের কলার টান দিয়ে বলি “এই ছেলে এতো জালান কেন আমাকে??? এত পুরান কেন আমাকে??? আমি যে আপনাকে ছাড়া থাকতে পারিনা বুঝেননা আপনি?? আপনাকে দেখলে কতগুলো হার্টবিট মিস করে আমার বুঝেন আপনি??? আপনাকে দেখলে যে আমার ভয়ংকর কিছু করে ফেলতে ইচ্ছা হয় সে কথা কি জানা আছে আপনার!!!”

—–“কিছু কথা ছিল তোর সাথে। ফ্রী আছিস??”

নিরবের কথায় ধ্যান ভাংগে তুলির। সামনে তাকিয়ে কিচ্ছুক্ষণ ভেবে আমতা আমতা করে বলে তুলি,

—–“হ্যা ফ্রী আছি। বলো কি বলবে।”

—–“এইখানে না চল কোন কফিসপে গিয়ে বসি যদি তোর কোনো সমস্যা না থাকে তো।”

——“আচ্ছা চল। সেতু তুই বাসায় চলে যা। আমি চলে আসব।” সেতু মাথা নারিয়ে চলে গেল।

নিরব তুলিকে নিয়ে একটা কফিসপে বসলো। তুলির খুব অস্বস্তি হচ্ছে। এতদিন পরে দেখা কিভাবে কি রিয়েক্ট করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আর নিরব একধ্যানে তুলিকে দেখে নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। নিরব হুট করে বলল,

—–“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তুলি। সামনে মাসেই ডেট পরেছে। তুই আসার সময় চিঠিতে লিখে আসছিস যাতে আমি মুভঅন করি আর তুইও চেষ্টা করবি। তাই ভাবলাম তুই যদি নিজের জীবনে সামনে এগিয়ে যাস তো আমি কেন নয়??? আর মাও খুব জোরাজোরি করছিল বিয়ের জন্য তাই ভাবলাম করেই নেই বিয়েটা এখন বয়সও হয়ে যাচ্ছে।”

নিরবের কথা শুনে তুলি যেন আকাশ থেকে পরলো। নিরব বিয়ে করছে তাও ৩ মাস না যেতেই এইটা কিভাবে সম্ভব!! তাহলে সবকিছু মিথ্যা ছিল। ওদের প্রেম, খুনসুটি, একসাথে এতটা সময় কাটানো সবকিছু মাত্র দুচারদিনের প্রেম ছিল। তুলির কষ্টে অভিমানে চোখে অশ্রুরা এসে ভর করেছে। মনে হচ্ছে বুকে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। চোখ দিয়ে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরল তুলির। নিরব আড়চোখে সব খেয়াল করল কিন্তু কিছু বললো না। ওর কষ্টের কাছে এইটুকু কষ্ট কিছুই না। যে মানুষটা ওর হাত ধরতে চেয়েছিল আজীবনের জন্য, যাকে আগলে রাখতে চেয়েছিল বুকের মাঝে তার উপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করলোনা তুলি। তুলি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বললো,

——“এতো অনেক ভালো কথা নিরব ভাই। শেষমেষ বিয়েটা করছো তুমি। খালামনিরও চিন্তা শেষ হবে।তো তোমার হবু বৌয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে না???”

——“অবশ্যই!!! তোকে পরিচয় করিয়ে দিবার জন্যই তো এইখানে নিয়ে এলাম। ও এসে পরবে এখনি। দেখ বলতে বলতে চলে আসছে।”

তুলি নিরবের কথা শুনে সামনে তাকালো দেখলো অসম্ভব সুন্দরী একজন রমনী ওদের দিকে এগিয়ে আসছে। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী বলা চলে!! না শুধু সুন্দরী না অসম্ভব রূপবতী ও বলা চলে!!! মেয়েটা নিরবের পাশে যেয়ে বসলো। নিরব মেয়েটার কোমর জরিয়ে ধরে বসলো। তুলির এই দৃশ্য দেখে বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো। এইজায়গায় আজকে ওর থাকার কথা ছিল, ওর কোমর জরিয়ে ধরার কথা ছিল কিন্তু আজ অন্য কারো জায়গা হয়ে গেছে। মেয়েটা নিরবের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

——“সরি!!! তোমাদের বেশিক্ষন বসিয়ে রাখলাম না তো??? আসলে রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল।”

—–“না নিলীমা ঠিক সময়ই এসেছো। মিট মাই কাজিন তুলি এন্ড তুলি মিট মাই উড বি ওয়াইফ নিলীমা।”

তুলি হাল্কা হেসে বললো,

—–“বাহ!!! আপু দেখতে খুবি মিষ্টি। তোমাদের দুজনকে খুব মানিয়েছে। আচ্ছা তোমরা তাহলে থাকো আমি আসছি।”

—–“তুমিও খুব মিষ্টি মেয়ে তুলি। আর একটু বসোনা। কিছুক্ষণ থেকে আমরাও বের হয়ে যাব।”

—–“হ্যা তুলি বস আর ৫ মিনিট। আমি তোকে নামিয়ে দিব।”

—–“না নিরব ভাই আমি একা চলে যেতে পারবো। অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।”

——“একদম চুপ তুলি। তোকে আমি নামিয়ে দিব ব্যস আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।”

নিরবের জোরাজুরিতে আর না করতে পারলো না তুলি। কিন্তু ও এইখান থেকে বাচার জন্যই যেতে চাচ্ছিল। নিরব থামিয়ে দিল। মন চাচ্ছে নিরবের মাথা ফাটিয়ে দিতে। আমার যে কত কষ্ট হচ্ছে তা কি বুঝেনা উনি। পৃথিবীর সব সহ্য করতে পারবে কিন্তু ওর নিরবের সাথে কাউকে সহ্য করতে পারবে না। রাগে দুঃখে চোখে পানি চিকচিক করছে তুলির কিন্তু না ও কান্না করবে না। উনাদের নিজের চোখের পানি দেখাবে না। কান্না দেখলে নিরব ভাই বুঝে যাবে যে তুলি এখনো উনাকেই ভালোবাসে একফোঁটা ও সামনে এগোতে পারে নাই এখনও উনাতেই আটকে আছে।

নিরব তুলিকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিল। তুলি কিছু না বলেই একদৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। পিছন ফিরে তাকানোর সাহস আর ওর হলোনা। ফিরলে হয়তো দেখত কেউ একজন মুচকি হাসছে।

——“নিরব মেয়েটা কি মিষ্টি রে!! দেখলেই মনে হয় গালটা টেনে দেই। প্রথমে ঢুকে যখন দেখলাম মনে হচ্ছিলো কোনো বাচ্চা মেয়ে আমার সামনে বসে আছে।”

নিরব মুচকি হাসলো। তা দেখে নিলীমা আবার বললো,

—–“মেয়েটা বাচ্চা নিরব ওকে কি এতটা কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে??? মেয়েটা তোকে অনেক ভালবাসে রে!! আমার সাথে যখন পরিচয় করিয়ে দিলি ওর মুখটা দেখার মতো ছিল। চোখে পানি চিকচিক করছিল। মনে হচ্ছিল এখনই কেদে দিবে। মানলাম তোকেও খুব কষ্ট দিয়েছে কিন্তু ওর বয়সই বা কতটুকু আর বুঝেই বা কতটুকু।”

—–“তুই চিন্তা করিস না নিলী আমি ওকে সামলে নিব।তোকে অনেক ধন্যবাদ রে আমাকে এতবড় হেল্প করার জন্য।”

—–“পাগল নাকি তুই!!!! ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ড এর হেল্প করবোনা তো কার করব?? যাই হোক ঝামেলা মিটিয়ে তুলিকে খুব তারাতাড়ি কাছে টেনে নেয়। আর যখনই কোনো হেল্প লাগবে জাস্ট একটা ফোন দিবি। আচ্ছা এখন আমি আসি রে। আল্লাহ হাফেজ!!!”

—–“আল্লাহ হাফেজ নিলী।”

নিরব ড্রাইভিং সিটে মাথা হেলিয়ে বসে তুলির কথা ভাবলো। মেয়েটা যে এখন কেদে কেটে বুক ভাসাবে তা ওর অজানা নয়। কিন্তু এতটুকু কষ্ট তো ওর অনুধাবন করা দরকার ছিল। না হলে বুঝতো কিভাবে যে নিরবকে ও কি পরিমাণ ভালোবাসে।

চলবে…………

[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here