মাতাল_হাওয়া পর্ব ৪+৫

#মাতাল_হাওয়া
#৪র্থ_পর্ব
#তাসনিম
দুপুর ১২ টার সময় সেন্ট মার্টিন পৌছালো সবাই। “দোস্ত আমার অনেক খিদা লাগছে রে, চল তারাতারি ফ্রেশ হয়ে খাইতে যাই” রাকিব বললো। “পেটুক কোথাকার” ভেংচি মেরে বললো রায়না। নিরব মুচকি হাসলো ওদের খুনসুটি দেখে। হোটেল এ পৌছে মেয়েরা ওদের রুম এ ফ্রেশ হতে চলে গেল। আর নিরব আর রাকিব ওদের রুম এ। দোস্ত, আর কত লুকাবি তুলির কাছে নিজের মনের কথা, বলে কেন দিস না এখন ও? আর এখন টাইমিং টাও পারফেক্ট, সমুদ্রের ধারে প্রপোজ করা টা খুবই সুন্দর হবে রে। বলবো রাকিব কিন্তু জানিস ভয় হয় ও যদি আমাকে ভুল বুঝে তখন কি করব আমি! ও যদি আমার ভালবাসা না বুঝে তখন কি করব আমি! আরে কি যে বলিস তুলির চোখ দেখলেই বুঝা যায় ও তোকে অনেক ভালবাসে, যে কেউ দেখলেই বুজবে সালা! তুই বুঝিস না। নিরব মুচকি হাসলো কেন জানি ওর নিজের ও মনে হয় তুলি ও ওকে ভালবাসে কিন্তু পরক্ষনে মনে হয় তুলি ওর থেকে অনেক ছোট এই ভেবেও ও ওর ভয় হয়, যাই হোক তুলিকে কখন ও নিজের থেকে আলাদা হতে দিবেনা যা কিছুই হক না কেন, মনে মনে পণ করে নিলো নিরব।

তুলি গোসল করে নিল এখন অনেক টা ফ্রেশ লাগছে। নীল কালার এর একটা কামিজ পরেছে, চোখ এ কাজল দিয়েছে, আর ঠোঁট এ হাল্কা লিপস্টিক দিয়েছে, তেমন একটা মেকাপ করতে পছন্দ করে না তুলি, তাই হালকা সাজ দিয়েছে, অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে, যে কেউ দেখলে চোখ ফিরানো দায় হয়ে যাবে। সুমি, নিপা, রায়না তুলিকে দেখে বললো, আয়হায়! আমাদের ভাই টা তো আজকে চোখই ফিরাতে পারবে না, হাহাহা, ওরা হাসি ঠাট্টা করতে লাগলো। হয়েছে থামবি তোরা, এমন ভাবে বলছিস যেন আমি উনার বিয়ে করা বউ, ভেংচি কেটে বললো তুলি। “না” তার থেকেও আরো বেশি কিছু, এই বলে চোখ টিপ মেরে হাসতে লাগলো তিনজন। তুলি লজ্জা পেয়ে আর কিছু বললো না কারণ জানে ওদের সাথে কথায় পারবে না। আচ্ছা চল এখন যাওয়া যাক না হয় ভাইয়া রাগ করবে, রায়না বললো। সবাই রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেলো যেয়ে দেখে নিরব আর রাকিব আগে থেকেই দাড়ানো। নিরব ফোন এ কাজ করছিল হঠাৎ তুলির দিক এ চোখ পড়লো ওর, তুলিকে দেখে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য ওর মাথা হ্যাং হয়ে গেল, তুলিকে যেনো কোনো নীল গোলাপ এর মতো লাগছে, এত পবিত্র এত স্নিগ্ধ লাগছে যে চোখ ফিরানো দায় হয়ে যাচ্ছে নিরব এর। নিরব কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুলি লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো। আর ওইদিকে রাকিব রায়নাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। রায়না একটা গোলাপি রঙের কামিজ পরেছে যা ওর ফর্সা গায়ে খুব ভালো মানিয়েছে, রায়না দেখতেও খুব সুন্দর, হাসলে গাল এ টোল পড়ে যা খুব সুন্দর মানায় ওকে। রাকিব কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়না ব্রু কুচকায় আর ইশারায় বলে “কি মিস্টার”! রাকিব ঢোক গিলে না বোধক চিহ্ন দেখায়।

সবাই দুপুর এর লাঞ্চ শেষ করে সমুদ্র বিচ এ যায়। তারপর সবাই দারুচিনি দ্বীপ, হুমায়ুন আহমেদ এর বাড়ি সমুদ্র বিলাস, শুটকি আর আচার এর বাজার ঘুরে হোটেল এ ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রাত এর খাবার শেষ করে সবাই হোটেল এর সামনে বিচ এ যায়। রাতের ঠান্ডা বাতাস আর সমুদ্রের গর্জন এই দুটো মিলিয়ে প্রকৃতিকে অসম্ভব সুন্দর বানিয়ে দিয়েছে। নিরব আর তুলি একসাথে হাটছে আর রায়না আর রাকিব একসাথে হাটছে। নিপা আর সুমি হোটেল এ রেস্ট নিচ্ছে ওরা আসে নাই। ” তুলি, আমাকে কি তোর অনেক খারাপ মনে হয়? যে তোকে সবসময় বকে, শাষণ করে, তোর সবকিছুতে অধিকার খাটায়, আসলে কি জানিস তোকে আগলে রাখতে চাই, এই দুনিয়া অনেক খারাপ তাই তোকে প্রটেক্ট করতে চাই, যাতে তোর উপর খারাপ কোন কিছুর আচ না আসে”। নাহ আমি এমন কিছুই মনে করিনা, তুমি আমার ভাল চাও তাই আমাকে শাষণ করো, আর একটা কথা আছেনা “যে আদর করে সে শাষণ ও করে” এইটা বলে জিহবায় কামড় দিল তুলি যে এইটা কি বললাম। নিরব তুলির কথা সুনে শব্দ করে হেসে দিল। ও আমি তোকে বকতাম এইটা জানি কিন্তু আদর ও যে করি তা তো জানতাম না! দুষ্টমি করে বললো নিরব। তুলি লজ্জা পেয়ে চলে যেতে নিলে নিরব ওর হাত ধরে হেচকা টান মারে আর তুলি নিরব এর বুকে যেয়ে পরে, দুজন দুজন এর দিক এ একধ্যানে তাকিয়ে থাকে, নিরব হালকা করে ফু দিতেই তুলি কেপে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিরব তুলির কাপাকাপা ঠোঁট এ হাত বুলায় তুলির নিঃস্বাস যেন আটকে যায় যায় অবস্থা । নিরব আলতো করে তুলির কপাল এ ঠোঁট ছোয়ায়। তুলি কাপাকাপা কন্ঠে বলে, চলো অনেক রাত হয়ে গেছে হোটেলে ফিরে যাই। নিরব বুঝতে পেরেছে যে তুলি লজ্জা পাচ্ছে তাই বললো, চল যাওয়া যাক রাকিব আর রায়নাকে ও খুজি। হুম চলো। “রায়না আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই জানিনা তুমি কিভাবে রিয়েক্ট করবে কিন্তু আমি আর না বলে থাকতে পারছিনা, আমি তোমাকে অনেক ভালবাসতে চাই, তোমার পথ চলার সঙ্গী হতে চাই, তোমাকে নিজের বুকের মাঝে আটকে রাখতে চাই, হবে কি আমার সঙ্গী”? রায়না পিছনে ফিরে দেখে রাকিব হাটু গেড়ে বসে ওকে প্রপোজ করছে। রায়না অনেক বেশি অবাক হলো কারণ ও কখনও ভাবেই নাই যে রাকিব ওকে এইভাবে প্রপোজ করবে। মুচকি হেসে রায়না বলে উঠে ” আমি তো সেইকবেই আপনাকে মন দিয়ে বসে আছি, সেই কবেই ভালবেসে বসে আছি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম যে কবে আপনি আপনার মনের কথা বলেন”। রাকিব খুশিতে রায়না কে জরিয়ে ধরে পাগল এর মতো চিতকার দিয়ে বলে ” ভালবাসি”। “আমিও”#মাতাল_হাওয়া
#৫ম_পর্ব
#তাসনিম
বিচ থেকে ফিরে সবাই যার যার রুম এ গিয়ে ঘুমিয়ে গেল কারণ পরদিন অনেক জায়গায় ঘুরবে। সকাল এ সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা খেয়ে নিলো। নিপা বললো,
“আমরা আজকে কই কই যাব ভাই?”
“আমরা আজকে ছেড়াদ্বীপ, প্রবাল দ্বীপ এ যাব।” নিরব বললো। তুলি খুব এক্সাইটেড জায়গা গুলো ঘুরে দেখার জন্য। তুলি খেয়াল করলো রায়না আর রাকিব একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তুলি কিছু টা আন্দাজ করতে পেরে মজার ছলে রাকিবকে বললো,
“রাকিব ভাই আপনাকে আজকে অনেক খুশি খুশি লাগছে বেপার কি হুম?” আর রায়না তোকেও খুব খুশি লাগছে কিরে কি বেপার?” তুলি আগে থেকেই জানে রায়না রাকিবকে পছন্দ করে।
রায়না বুঝতে পারলো তুলি ওদের মজা নিচ্ছে তাই তুলিকে চোখ গরম দিলো। তুলি মুচকি হাসছে। আর রাকিব মজার ছলে বললো,
“তুলি তোমার মুখে ও কেমন জানি আজকে একটু অন্যরকম হাসি এই সবাই খেয়াল করছ?”
তুলি লজ্জা পেয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
“রাকিব ভাই এখন না পেরে আমাকে পচাচ্ছেন এইটা ঠিক না আর আমি তো এই প্রথম এতো জায়গায় ঘুরছি তাই আমি অনেক খুশি।”
নিরব তুলির কথা সুনে হাসলো। ওর তুলি যে অনেক লজ্জা পেয়েছে তা ও বুঝতে পেরেছে কারণ তুলির এই লাল টমেটোর মতো গাল গুলোই তার প্রমাণ, লজ্জা পেয়ে মেয়েটা আরও লাল হয়ে গেছে। নিরব তুলিকে লজ্জা থেকে বাচানোর জন্য বলে,
“চলো এখন যাওয়া যাক আজকেই আমাদের টাইম আছে কালকে চলে যাব তাই সময় নষ্ট করা যাবে না”।

সবাই ছেড়াদ্বীপ আর প্রবাল দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ছেড়াদ্বীপ এ যেয়ে সবার মন জুরিয়ে গেলো এত সুন্দর মহান আল্লাহ পাক এর দান। সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ, সারি সারি নারিকেল গাছ, কিছু কিছু লোকেরা ডাব বিক্রি করছে সবাই ডাব এর পানি খেলো। পাথর এ বসে সবাই ছবি তুলে নিল স্মৃতি হিসাব এ। তারপর সবাই প্রবাল দ্বীপ এ ঘুরে হোটেল এ চলে এলো। লাঞ্চ করে সবাই একটু রেস্ট নিতে রুম এ চলে এলো। বিকেল এ সবাই বিচ এ ঘুরতে যাবে কিন্তু তুলির খুব মাথা ব্যাথা করছে আর ওর মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে তাই ও না করে দিল যাওয়ার জন্য। সবাইকে দেখে নিরব বললো,
“কিরে তুলি কোথায়? ও এলো না যে?”
“ওর অনেক মাথা ব্যাথা করছে তাই ও যাবেনা” রায়না বললো। নিরব সুনে বললো,
“কি বলিস! আচ্ছা আমি তাহলে না যাই ওর কাছে থাকি ওকে একা রেখে যাওয়াটা তো ঠিক হবে না। রাকিব তুই সবাইকে দেখে রাখিস আর বেশিদূর যাস না কাছাকাছি কিছুক্ষন ঘুরে আয়।”
“ঠিক আছে দোস্ত আমি আছি তুই টেনশন নিছনা।তোর সবগুলো সুন্দরী বোনকে সেফ রাখবো আর যথাসময়ে হোটেল এ ফিরিয়ে নিয়ে আসবো, চোখ টিপ দিয়ে ইশারা করে নিরব কে বুঝালো যে তুই ও তুলির সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটা।”

নিরব লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো। ওরা বের হয়ে গেলো আর নিরব ভাবলো তুলিকে যেয়ে দেখে আসি।তুলির খুব খারাপ লাগছে তাই ও গোসল করে নিল কিন্তু ঝামেলা বাধলো ও ওয়াসরুম এ কাপর নিয়ে আসতে ভুলে গেছে পরক্ষনেই ভাবলো রুম এ তো কেউ নেই আমি বরং তাওয়াল টা পেচিয়ে যাই যেয়ে কামিজ টা পড়ে ফেলবো কিন্তু ও কি আর জানে ওর রুম এ কেউ অলরেডি বসে আছে। তুলি দরজা খুলে বের হয়ে নিরব কে ওর বেড এ বসে থাকতে দেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। নিরব তুলিকে দেখে বাকশূন্য হয়ে গেলো মুখ দিয়ে যেন কোনো কথা বের হচ্ছেনা। তুলি গায়ে একটা তাওয়াল পেচিয়ে আছে, সারা গায়ে ফোটা ফোটা পানি, মুখ এ চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ঠোঁট টা অনবরত কাপছে যা দেখে নিরব নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না একটা অদৃশ্য মাদকতা ঘিরে ধরেছে ওকে। ধিরে ধিরে নিরব তুলির কাছে গেলো তুলির মুখ এ ফু দিয়ে বললো,
“এত স্নিগ্ধ এত পবিত্র কাওকে লাগতে পারে আমার জানা ছিলো না, সত্যি বলছি আজকে তোকে দেখে কন্ট্রোল হারা হয়ে যাচ্ছি, আজকে যদি তুই আমার বউ হতি তোর মাঝে হারিয়ে যেতে চাইতাম”। এইটা বলে নিরব তুলির অনেক কাছে চলে যায় নিরব এর গরম নিঃশ্বাস তুলির মুখ এর উপর পরছে তুলি না পারছে চোখ খুলতে না পারছে বন্ধ করতে। তুলি নিরব এর দিক এ তাকিয়ে দেখে নিরব একধ্যান এ ওর দিক এ তাকিয়ে আছে নিরব এর তাকিয়ে থাকা দেখে তুলি পারে না কোথাও লুকিয়ে যায় জীবন এ এত লজ্জায় কখনও পড়ে নাই ও। নিরব আস্তে আস্তে তুলির ঠোঁট এর কাছে চলে যায় তা দেখে তুলি চোখ বন্ধ করে নেয়। নিরব ওর কপাল এ চুমু খেয়ে বলল,
“এতটাও খারাপ ভাবিস না বৈধ করে নিয়ে যা করার করবো তার আগে কখনো না, তারাতারি কাপর পরে নে।” এইটা বলে নিরব রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর তুলি লজ্জায় ওয়াসরুম এ দৌড় দেয়। তুলির খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে যে অনুভূতির নাম লজ্জা খুশির সংমিশ্রণ। ও বুঝতে পারছে না ওর লজ্জা পাওয়া উচিৎ নাকি নিরব যে বললো ওকে বউ বানাতে চায় সেই কথা নিয়ে খুশি হওয়া উচিৎ। নিরব বাইরে যেয়ে নিজের মাথা চাপরাচ্ছে কি করতে যাচ্ছিলো ও, আর তুলি ও কি ভাবছে ওকে নিয়ে কে জানে, ” উফ আর ভাবতে পারছি না যা ভাবার ভাবুক এইবার বাসায় যেয়ে মা কে বলবো যে তোমার ছেলে বিয়ে করার জন্য রাজি আর মেয়ে টা হচ্ছে তুলি মা আমি যতটুকু জানি অমত করবে না।” এইসব ভেবে ঠোঁট কামরে হাসছে নিরব আর ভাবছে আগে তো তুলিকে জানাতে হবে আমার মনের কথা। আর ঔদিক এ তুলি ভাবছে এই কাহিনি হওয়ার পর নিরব এর সামনে যাবে কি করে?

চলবে……….

[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]
চলবে……….

[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here