মাতাল_হাওয়া পর্ব ৬

#মাতাল_হাওয়া
#৬ষষ্ঠ_পর্ব
#তাসনিম
রাতের খাবার খেয়ে নিরব আর তুলি হোটেল এর সামনে সমুদ্রের ধারে হাটার জন্য বের হলো। তুলি বিকেল এর ঘটনা মনে করে খুব লজ্জা পাচ্ছে। নিরব তুলির লজ্জা কাটানোর জন্য বলে উঠলো,
“তুলি একটা জায়গায় নিয়ে যাব যাবি”?
“কোথায়”?
“তার আগে চোখ বন্ধ করতে হবে”। এই বলে নিরব তুলির চোখ বন্ধ করে নিয়ে চললো। তুলি নিজেও জানেনা নিরব ওর জন্য কত সুন্দর সারপ্রাইজ তৈরি করে রেখেছে। কিছুদূর যেয়ে তুলির চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো নিরব। তুলি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে নিরব এর দিক এ তাকালো। সমুদ্রের সামনে ছোটো করে একটা টেবিল বসানো তার উপর মোমবাতি জালানো, খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা চারিপাশের সবকিছু, টেবিল এর আসেপাশে বাশ দিয়ে ডিজাইন করা তার উপর কিছু মরিচ বাতি দিয়ে লাইটিং করা। সমুদ্রের গর্জন আর চারিপাশের সৌন্দর্য যেনো পরিবেশ টাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। নিরব তুলির হাত ধরে টেবিল এ নিয়ে বসালো তুলির হাত এ চুমু খেল তুলি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।
“আজকের এই রাত টা স্মরণীয় করে রাখতে চাই তুলি, তোর জন্য এই সারপ্রাইজ প্লেন করেছি, তোকে আজ নিজের মনের অব্যক্ত কথা গুলো বলতে চাই, সুনবি আমার কথা গুলো”?
তুলি মাথা নারিয়ে সায় দিলো। নিরব তুলির সামনে হাটুগেড়ে বসে বললো,
“তুই তো জানিস আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারি না, আজকে ও পেচাবো না যা বলবো সরাসরি বলবো, তুলি জানিনা কবে থেকে তুই আমার মনে জায়গা করে নিলি, তোকে একদিন না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, তোকে আমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ দেখুক আমি সেটা সহ্য করতে পারিনা, তোর কষ্টে আমার বুক ছিড়ে যায়, তোর হাসিতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে ও দ্বিধাবোধ করবো না কখনও, তোকে কেউ কিছু বললে সহ্য করতে পারিনা প্রতিবাদ করে উঠি, এটাই যদি হয় ভালোবাসা তাহলে হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি”!
তুলি ছলছল চোখ এ তাকায় নিরব এর দিকে। তুলির ছলছল চোখ দেখে নিরব এর বুকে মোচড় মারে তাহলে তুলি কি ওর কথা সুনে কষ্ট পেল! তাহলে তুলি কি ওকে ভালবাসে না! নিরব অস্থির হয়ে তুলিকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুলি তুই কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিস? আমি তো আমার মনের কথাগুলো তোকে বললাম প্লিজ তুই নিজের এত দামি অশ্রুগুলো আমার কথা সুনে বিসর্জন দিসনা। তোর মনে আমার জন্য কোনো ফিলিংস না থাকলে আমি তোকে কখনও জোর করবো না”।
তুলি চোখ মুছে বিরক্ত হয়ে বললো,
“সব কি আপনিই বলবেন? নাকি আমাকেও কিছু বলতে দিবেন? আমি কষ্ঠ পেয়ে কান্না করছিনা এইটা তো আমার খুশির অশ্রু। আপনি নিজেও জানেননা আমি আপনার জন্য কি ফিল করি! আপনার শাসন, আপনার কথা, আপনার হাসি, আপনার চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, সারাক্ষণ আপনাকে নিয়ে ভাবা, আপনার কথা ভাবলে নিজের অজান্তেই মুখে অদৃশ্য এক হাসি চলে আসে, নিজেকে পাগল পাগল লাগে। এই অনুভূতির সাথে আমি আগে পরিচিত ছিলাম না কিন্তু আপনি আমাকে এই অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়েছেন। এই অনুভূতির নাম যদি ভালবাসা হয় তাহলে আমিও আপনাকে অনেক ভালবাসি। আজীবন আগলে রাখবেন তো আমাকে”?

“আজীবন হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবো, আজীবন আগলে রাখবো। আজ তুই আমাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করলি, বুকের উপর থেকে অনেক বড় বোঝা নামলো। এই পিচ্চিটার প্রেমে পরবো কখনও ভাবতে পারিনি কিন্তু দেখ আজ তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি”!

তুলি নিরবকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। নিরব তুলির কপালে আলতো করে চুমু খেল। তুলি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। দুইজন দুইজনের বুকের স্পন্দন সুনতে পাচ্ছে যেনো বলছে ” ভালোবাসি”। এই সময়টা এখানে থেমে গেলে মন্দ হতোনা। একজোড়া কপোত কপোতীর ভালোবাসার সাক্ষী এই আকাশ, বাতাস, সমুদ্র।

রায়না আর রাকিব সমুদ্রের ধারে হাটছে। রায়না রাকিব এর হাত জরিয়ে ধরে হাটছে। রাকিব রায়নাকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে আছে।
“আগে তো এমন ভাব করতা যেন আমাকে দেখতেই পারোনা আর এখন জরিয়ে ধরে আছো, ইশ! জানো কতদিন এইদিনটার অপেক্ষা করেছি। তোমাকে নিয়ে আকাশ দেখব, একাকী নিঝুম রাতে হাটব, প্রেম করব, ভালোবাসবো”।
“ইশ! শখ কতো এইলোকের। এইটা সেন্টমার্টিন তাই এইরাতে হাটছি দেখে কোনো সমস্যা হবেনা। ঢাকা হলে এতক্ষণে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতো। আমরা বিবাহিত না এইকথা খেয়াল আছে”? রায়না হেসে বললো।
“বিবাহিত না তো কি হয়েছে হয়ে যাব কিছুদিন সময় দিয়েই দেখোনা, ঢাকা যেয়েই মার সাথে তোমার ব্যাপারে কথা বলে তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আজীবনের জন্য আমার কাছে আগলে রাখতে”।

রায়না লজ্জা পেয়ে রাকিব এর বুকে মাথা লুকালো। রাকিব রায়নার দুচোখে চুমু খেল। রায়না শিউরে উঠে রাকিবকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।

পবিত্র ভালোবাসার চাদরে দুইজোড়া কপোত-কপোতী মুড়িয়ে আছে। সময়টা থেমে গেলে মন্দ হতোনা। ( কি বলেন আপনারা…….?)

চলবে……….

[বিঃদ্রঃ দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here