মাত্র তিন মাস পর্ব -০৪

মাত্র তিন মাস
পর্বঃ ৪

এই মুহূর্তে ও ভুলে যায় আমরা যে তিন মাসের একটা শর্তে আছি।

সকাল হতেই আমি চিৎকার করে উঠি।

-কি করেছেন আপনি?ছিঃ ছিঃ ছিঃ।আপনি আপনার শর্তের কথা ভুলে গেছেন?
এত বড় অন্যায় আপনি করতে পারলেন?

কেন করলেন আমার এত বড় ক্ষতি?

-দেখো অনু!প্লিজ আমাকে ভুল বুঝোনা তুমি।প্লিজ।
আমার কথা শোনো।

-কথা শুনবো?ভুল বুঝবোনা?কি কথা শুনবো আমি আপনার?
আপনি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এত বড় অন্যায় করেছেন।
বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন আমার সাথে।আর আমি শুনবো আপনার কথা?

-অনু আমি কোন অন্যায় করিনি।নেই নি আমি তোমার দুর্বলতার সুযোগ।তুমি আমার স্ত্রী।

-হ্যাঁ স্ত্রী।তবে আমি তো আপনাকে স্বামী মানিনা।
তাছাড়া আমাদের মধ্যে একটা তিন মাসের চুক্তি ছিলো।

আপনি হেরে যাবেন বলে আমার সাথে আজ এমন অন্যায় করলেন।

আমি আপনাকে কোন দিন ক্ষমা করবোনা।কোন দিন না।
আমি এ মুখ সায়ানকে কিভাবে দেখাবো আল্লাহ্‌।

আমি বার বার বলেছি ওকে,উৎস এমন ছেলে না যে আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে স্পর্শ করবে।

কিন্তু আমার ধারণাই ভুল ছিলো।
ভুল ছিলাম আমি।

-না,তোমার ধারণা ভুল না।
ভুল না তোমার ধারণা।

তুমি আমাকে অনুমতি না দিলে আমি তোমাকে স্পর্শ করতাম না।
তুমি আমাকে বুকে টেনে নিয়েছো বলেই আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়েছি।
নয়তো এই উৎস কোন দিন তোমাকে ছুঁতোনা।

-বুকে টেনে নিয়েছি মানে?

-গত কাল রাতে তুমি মাতাল অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে।

আর কোন স্বামী তার স্ত্রীকে ওই অবস্থায় ফেলে চলে যেতে পারবেনা।
কোন দিন না।

তুমি মনে করে দেখো,
আমি বার বার চলে যেতে চেয়েছি।
বলেছি ঘুমাও তুমি একটু।

কিন্তু তুমিই আমাকে যেতে দাওনি।

এরপরও যদি তোমার মনে হয় আমি অপরাধী।
তবে তুমি আমাকে যেই শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো।

-আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা।কিচ্ছনা উফফ।

এখন আমি সায়ানকে কি জবাব দিবো।
ও আমাকে কি ভাব্বে।
কেন হলো এমন ভুল আমার দ্বারা।

-দেখো অনু!তুমি এমন পাগলামো করোনা।
কোন ভুল হয়নি আমাদের।আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী।পবিত্র একটা সম্পর্কে বাধা আমরা।

এটা কোন ভুল নয়।অন্যায় নয়।

-চুপ!একদম চুপ।আমি কোন কথাই শুনতে চাইনা আপনার।

যান এখান থেকে।আপনার সামনে থেকে দূর হন।

-আচ্ছা আমি যাচ্ছি।তুমি একটু শান্ত হও।

উৎস চলে যায়।
আর আমি কাঁদতে থাকি।

তখনই সায়ানের ফোন আসে।

কিন্তু আমি ওর ফোন রিসিভ করার সাহস পাইনা।
ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল অফ করে রাখি।

ফ্রেশ হয়ে শাশুড়ি মায়ের রুমে যাই।

-কিরে মা উঠলি?

-হুম।

-কাল প্রোগ্রাম কেমন ইঞ্জয় করলি?

-ভালোই।

-শরীর খারাপ নাকি তোর?
মুখ টা ওমন দেখাচ্ছে কেন?

-এমনি।ভালো লাগছেনা তাই।

-আচ্ছা খেয়ে নে।
খেয়ে একটু রেস্ট কর গিয়ে তাহলে।

-হ্যাঁ অনামিকা খেয়ে তুমি রেস্ট করো গিয়ে।

কিচেনের দিকটা আমি আজ একাই সামলে নিবোনে।

-আচ্ছা ভাবী,থ্যাংক ইউ।

রাতে উৎস অফিস থেকে বাসায় ফিরে।

আমার রুমে আসার সাহস পায়না।

তবুও ধীর পায়ে হেঁটে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে।

-সায়ানের সাথে কথা হয়েছে?
-না।
-তুমি কি আগের কথায়ই অটল এখনো?
-হ্যাঁ।
-থেকে যাওয়া যায়না আমার জীবনে?
খুব ভালো রাখবো।কোন দিন কষ্ট দিবোনা।
তুমি যা বলবে তাই শুনবো।

-যান ফ্রেশ হয়ে নিন।
আমি খাবার দিচ্ছি।

ডিনার শেষ করে মোবাইল টা অন করি।
সারাদিন মোবাইল অফ করে রেখেছিলাম।
সায়ানের মুখোমুখি হবার সাহস পাচ্ছিলাম না।

মোবাইল অন করতেই অনেক গুলো মেসেজ আসে সায়ানের।

মেসেজ গুলো পড়ে আমি সায়ানের নাম্বারে ফোন দেই।

-সায়ান রিসিভ করেই কান্না শুরু করে।

-কোথায় ছিলে তুমি?
ঠিক আছো তো?
কত চিন্তা হচ্ছিলো জানো?
ভয় পেয়ে গেছি আমি।ভাবলাম তোমার কিছু হলো কিনা।

-ঠিকই ভেবেছো।

-মানে?

-মানে, হলো

-চুপ কেন?বলো!

-আমার সাথে গত রাতে এমন কিছু ঘটেছে যা হবার কথা ছিলোনা।

আমি আর তোমার যোগ্য নেই এখন।
আমি আমার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি।
ভুল হয়ে গেছে আমার দ্বারা।
আমি পারিনি নিজেকে সেইফ রাখতে।
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।।

(কান্না করে)

-প্লিজ কেঁদোনা।কেঁদোনা এভাবে প্লিজ।
কিচ্ছু হয়নি।
আমি তোমাকে ভালবাসি অনামিকা।তোমার শরীর টাকে না।
আমি আজই গ্রামের বাড়ীতে এসেছি।
তাই তোমাকে এত বার ফোন দিয়েছি সকালে।

এখানে তেমন নেট থাকেনা।
রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে আছি।যদি তোমার ফোন অন পাই তো ফোন দিবো।

আমি আজ গ্রামে না আসলে তোমাকে এখনই আমার কাছে নিয়ে আসতাম।

দাদুর শরীর টা তেমন ভালোনা।তাকে দেখতে এসেছি।

তুমি কোন চিন্তা করোনা।আমি অতি শীঘ্র এসেই তোমাকে নিয়ে আসবো আমার কাছে।
তুমি তাকে ডিভোর্সে ব্যবস্থা করতে বলো।
আর দরকার নেই তোমার ওই বাসার থাকার।

আগেই বলেছিলাম চলে আসো।
শুনলেনা।তিন মাস সময় নিলে।
আর এখন…

উফফ খোদা।আমিও তো মানুষ।কত সহ্য করবো আমি আর।

-আমারই মরে যাওয়া উচিৎ।
তাহলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।

-এই না।একদম বাজে কথা বলবেনা।

আমি ফিরে এসেই তোমাকে নিয়ে আসবো।
একটু ধৈর্য্য ধরো।

-আচ্ছা ভালো থেকো।দাদুর খেয়াল রেখো।

-তুমিও ভালো থেকো।
রাখছি।

উৎস দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব শোনে।

আমি ওর দিকে তাকাতেই,

-খুব ভালবাসো তোমরা দুজন দুজনকে তাইনা?

-হুম।

-কি বল্লো ও?

-গ্রামে গেছে।গ্রাম থেকে ফিরলেই এসে নিয়ে যাবে আমাকে।

-আচ্ছা, ও ফিরুক।
তারপর যা হয় দেখা যাবে।

ঘুমাও একটু।

-হুম।
-আমাকে ক্ষমা করে দিও।
তোমাদের ভালবাসার মাঝ খানে এসে পড়েছি কাঁটা হয়ে।

আর থাকবোনা বিঁধে তোমাদের জীবনে।
দূরে সরে যাবো।
খুব দূরে।
বহু দূরে।

#চলবে …

(একটু ব্যস্ত আছি তাই পর্ব টি বেশি বড় করে লিখতে পারলাম না,ক্ষমা করবেন)

#মিলটা কার সাথে দিলে ভালো হবে বলুন তো?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here