মাত্র তিন মাস পর্ব -০৮ শেষ

মাত্র তিন মাস
পর্বঃ৮/শেষ

উৎস আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিঝুমের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়..

-নিঝুম,
-কখন এসেছো?
-এই তো মাত্রই এলাম।
-কি হয়েছে তোমার?ঠিক আছো তুমি?
এত দিন কোথায় ছিলে?অফিসেও আসোনি।

-গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম।
দাদু খুব অসুস্থ ছিলেন তাই।
-ওহ আচ্ছা।
-তো এখন কেমন আছেন তিনি?
-আছেন কোন রকম।

-তো বলো,এত রাতে তুমি এইভাবে কান্না করলে কেন?
আমি তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
কি হয়েছে বলো আমাকে।

-আমি তোমাকে ভালবাসি এটা নিশ্চয়ই জানো তুমি।

উৎস এবার আমার দিকে ঘুরে তাকালো।

-দেখো,এসব কথা এখন রাখো।

নিঝুমের কথাটা শুনে বুকের ভেতর যেন ছোট খাটো একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো আমার।

-জানো,আমার কপাল টাই খারাপ।
তোমাকে সেই কলেজ লাইফ থেকে ভালবাসি।এক সাথে জবে ঢুকলাম।
কিন্তু তোমার মন পেলাম না।

ওই দিকে যাকে বিয়ে করলাম।সেও আরেকজনকে মন দিয়ে বসে আছে।

-কি?বিয়ে করেছো তুমি?ওই পঁচা মেয়ে।হুট করে বিয়ে করে ফেললে আর আমাকে জানালেও না।
দাওয়াত না হয় নাই দিলে।ট্রিট তো দিতেই হবে।

নিঝুমের বিয়ের কথাটা শুনে কেন যেন শান্তি লাগছে আমার।
জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলাম।

-বিয়েটা আসলে হঠাৎ করেই হয়ে গেলো।
তাই কাউকে জানাতে পারিনি।

সিনেমার মত দাদু মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে বল্লেন,

আমার শেষ ইচ্ছা আমার নাতী এবং নাতনীর বিয়ে দেখা।

আর আমি ওদের দুজনের বিয়ে দেখে মরতে চাই।

দাদুর ইচ্ছে আমি যেন আমার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করি।
তাই বাধ্য হয়ে আমাদের বিয়ে টা করতে হয়।
কিন্তু বাসর ঘরেই তার মুখে শুনি সে আমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবেনা।

আর তখনই সায়ান এসে সেখানে উপস্থিত হয়ে উত্তর দেয়:

-কারণ আমি অনামিকাকে ভালবাসি।

-সায়ান তুমি?(আমি)

-হ্যাঁ আমি।

-আপনি সায়ানকে চিনেন নাকি?(নিঝুম)

-এই সায়ান ই কি সেই সায়ান অনু?

-এই সায়ানই তো আমার চাচাতো ভাই আর এখন আমার বর।

-উফ শিট।(উৎস)
আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।

-আমি ক্লিয়ার করি,

নিঝুম আমার চাচাতো বোন,আর দাদুর কথায় বাধ্য হয়ে ওকে আমার বিয়ে করতে হয়।গ্রামে নেট ছিলোনা আর বিয়ে এসব ঝামেলার কারণে আমি এত গুলো দিন অনামিকাকে ফোন দিতে পারিনি।

এত দিন পর আমি বাসায় কোন রকম ম্যানেজ করে তারপর নিঝুমকে নিয়ে চলে আসি।

আর অনামিকা আমার ভালবাসা।
যাকে আমি চিরদিনের মত আমার করে নিয়ে যেতে এসেছি আজ।

-অথচ আমি এসবের কিছুই জানিনা।
আমিতো এসেছি উৎসের সাথে দেখা করে ওর সাথে আমার মনের কষ্ট গুলো শেয়ার করতে।
আর এখন এসে দেখি আমারই বরের প্রেমিকা আমারই ভালবাসার মানুষ টার ওয়াইফ।
আর আমার বর তাকেই পেতে আমাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে আমার জায়গা মত আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আর ও ওর জায়গায় চলে গেছে।

সব কিছু এলোমেলো লাগছে।

-কিছুই এলোমেলো না।এখন সব ক্লিয়ার হলো।
তা ভাই উৎস!আপনি তো সবই জানেন,আমি আর অনামিকা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসি।
আর আমরা চাই দুজন এক হতে।
তাই আপনি দয়াকরে আমাদের মাঝ থেকে সরে দাঁড়ান।আমাকে আমার অনামিকাকে নিয়ে যেতে দিন।

-তাহলেতো আমার জন্য আরো ভালো।
অনামিকা,বোইন তুমি দয়া কইরা উৎসের জীবন থেকে সইরা গিয়া সায়ানের সাথে চইলা যাও।

তুমিও তোমার ভালবাসার মানুষ নিয়া সুখি হও।
আমারেও আমার ভালবাসার মানুষ নিয়ে সুখি হতে দাও।

এত ক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলাম।
মাথাটা চক্কর দিচ্ছে আমার।
কি হচ্ছে এসব।
জীবন কেমন গেইম খেলছে আমার সাথে।

উৎস, সায়ান আর নিঝুমের কথা শুনে আমার দিকে তাকালো।
তাকিয়েই আছে আমার দিকে।

এদিকে সায়ান আমাকে বলছে,

তাহলে তো ঝামেলা সলভ।
চলো তাড়াতাড়ি।
আমরা দুজনই দুজনকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবোনে।
তুমি উৎসকে,
আমি নিঝুমকে।
তারপর আমরা বিয়ে করে নিবো।

উৎস আমার দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে নিঝুম ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে বলে,

-চলোতো এখান থেকে,ওদের ওদের মত যেতে দাও।
আল্লাহ্‌ যা করে ভালোর জন্যই করে।
চলো।

নিঝুম উৎসর হাত ধরে টানতে থাকে।

আর সায়ান আমার কাছে এসে দাঁড়ায়।

আর তখনই আমি বলে উঠি,

-হাত ছাড়ুন,
-মানে?
-আমি বলেছি হাত ছাড়ুন।
-আমি তো সায়ানের হাত ধরিনি,আমি উৎসের হাত ধরেছি।

-আমি বলছি ছাড়ুন আমার স্বামীর হাত।
-কিহ?(সায়ান)

নিঝুম হাত ছেড়ে দেয় উৎসর।

আমি উৎসর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি,

এই তিন টা মাসে যত টুকু ভালবেসেছো তার থেকেও শত গুন বেশি আমাকে ভালবাসতে হবে।

পারবেনা বাসতে?

যদি পারো,তাহলে আমি প্রতি রাতে আমার কোলে তোমায় মাথা রাখতে দেবো।
চুল গুলোও টেনে দিবো।

শাড়ীর কুঁচি ধরে দিতে চেয়েছিলেনা সারাজীবন?সেই অধিকারটাও দিবো।

পারবে বাসতে?

উৎস আমার কথা শুনে বাচ্চা ছেলের মত কান্না করে দেয়।

আর যেই না আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে আসে আমি মাথা ঘুরে উৎসের উপরই পড়ে যাই।

এরপর যখন আমার জ্ঞান ফিরে আমি তখন আমাকে হসপিটালের বেডে দেখতে পাই।

আমার মাথার কাছে বসে আছে উৎস।

আর একটু দূরে বসে আছে সায়ান আর নিঝুম।

-কি হয়েছে?আমি এখানে কেন?
-কিছু হয়নি তবে হবে।

আমি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে উৎসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,কি হবে?

-আরে পাগলী ভয়ের কিছুনা।এভাবে তাকিও না।

-তাহলে কি হবে বলো?

-বলবো?
-হুম।

-তুমি মা হবে।
-কিইই?
-হ্যাঁ।আর আমি বাবা।

আমি লজ্জায় দু হাত দিয়ে আমার মুখ ডেকে ফেলি।
আর উৎস আমাকে জড়িয়ে ধরে।

ওইদিকে সায়ান আর নিঝুম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

কিছু ক্ষণ পর আমি ওদের কাছে ডেকে বলি,

-আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্য করেন।
আর উনি চান তুমি আর নিঝুম এক সাথে থাকো।

আর আমি এবং উৎস।

বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন।
এ বন্ধন চিরদিন অটুট থাকুক।

কথা গুলো বলেই আমি নিঝুমের হাত টা সায়ানের হাতে তুলে দিলাম।

সুখী হও তোমরা।

-আমার ভালবাসার মানুষটাকে কোন দিন কষ্ট দিওনা ভাই।(সায়ান)
-আমার জীবন দিয়ে আমি অনুকে আগলে রাখবো।(উৎস)

-আর তুমিও আমার ভালবাসার মানুষটাকে কোন দিন আঘাত করোনা।(নিঝুম)
-ও আপনি চিন্তা করবেন না।
আপনার ভালবাসার মানুষকে আঘাত না করলেও আমার সন্তানের বাবাকে তো আমি আঘাত করতেই পারি।হি হি।

-দুজন দুজনকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো।
দুজন দুজনকে এতটা ভালবাসো যাতে কারো মনে কোন দুঃখের ছাপ ই না থাকে।
সুখী হও। (উৎস)

সায়ান আমার মাথায় হাত রেখে বল্লো,
নিজের খেয়াল রেখো।আমি নিঝুমকে নিয়ে একবারে গ্রামে চলে যাবো।তোমাদের বেবী হলে জানিও।এসে দেখে যাবো।আসি।

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে চোখ বন্ধ করে বললাম,হুম।

-আসি তাহলে।(নিঝুম)
-এসো।(উৎস)

সায়ান আর নিঝুম চলে গেলো।

-আর কত ক্ষণ এখানে থাকবো হুম?
-ডাক্তার বলেছে একটু পরেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।

তাহলে চলো তাড়াতাড়ি বাসায়।
আমাদের তিন মাসের সংসারকে জন্মজন্মান্তরের সংসার করে গড়তে হবে যে।আমাদের ঘর টাকে নতুন করে সাজাতে হবে যে।

উৎস আমাকে ওর বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে বল্লো,
-ভালবাসি।
আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম,
ভালবাসি কিনা জানিনা,
তবে তোমায় ছেড়ে থাকতে পারবোনা।

#চলবে

#ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর গল্পটি কেমন লেগেছে অবশ্যই জানাবেন।

Stay home
Stay safe
#আল্লাহ_হাফেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here