মাত্র তিন মাস পর্ব -০৭

মাত্র তিন মাস
পর্বঃ ৭

রাখবে আমার শেষ আবদার টা?
-হুম।

আমি শোয়া থেকে উঠে বসলাম।
উৎস আমার কোলে মাথা রাখলো।

-আমার মাথায় একটু হাত রাখবে?একটু চুলে বিলি কেটে দেবে?
টেনে দিবে চুল গুলো?

ছেলেটা কাঁদছে।ওর চোখের জলে আমার পা ভিজে যাচ্ছে।

আমি ওর চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দিতে লাগলাম।

-জানো অনু,আমি তোমাকে নিয়ে জীবনে অনেক স্বপ্ন দেখেছি।
এত স্বপ্ন যে,তা গুনে শেষ করা যাবেনা।
কিন্তু দেখো,
আমার একটা স্বপ্নও পূরণ হবেনা।

আসলেই,অভাগা দের স্বপ্ন দেখতে নেই।
অভাগাদের স্বপ্ন পূরণ হয়না।

-আপনি খুব ভালো।আপনি আমার থেকেও খুব ভালো একজনকে জীবন সঙ্গী করে পাবেন।দেখে নিয়েন।
সে আপনাকে খুব ভালবাসবে।

-অনু,চাইনা আমার ভালো কাউকে।চাইনা আমার অনেক ভালবাসা।
আমি শুধু তোমাকে চাই অনু।তোমাকে চাই।
আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ।যেওনা আমাকে ছেড়ে।

তুমি ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো?

উৎস কাঁদতে থাকে সমানে।

আমি আমার চোখেও জল অনুভব করি।
কিন্তু কেন এই জল আজ আমার চোখে।
কেন উৎসর কান্না আমার বুকে এসে আঘাত করছে।
কেন কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য আমার।
প্রশ্নের উত্তর গুলো জানা নেই আমার।

-একটা গল্প শুনবে অনু?
-হুম।
-বলবো?
-হুম।

-এক দেশে অভাগা এক ছেলে ছিলো।
ছেলেটা একটা মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো।
স্বপ্ন দেখতো মেয়েটাকে বিয়ে করে খুব ভালো থাকবে।
মেয়েটাকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমায় যাবে।

মেয়েটার ছোট ছোট আবদার পূরণ করবে।
হঠাৎ হঠাৎ সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিবে মেয়েটাকে।

আর স্বপ্ন দেখতো,অফিস যাবার সময় মেয়েটা ছেলেটার কপালে চুমু দিয়ে বলবে,সাবধানে যেও।

ঘুম ভাঙবে ছেলেটার কপালে মেয়েটার চুমু খেয়ে।

আর মেয়েটা প্রতি রাতে ঘুমাবে ছেলেটার ঠোঁটের স্পর্শ নিয়ে ওই কপালে।

তারপর ওদের না ছোট ছোট দুটো রাজকুমার রাজকুমারী হবে।

সংসার টা স্বর্গে পরিণত হবে।

এক সময় ওরা বড় হবে,ওদের বিয়ে হবে।
সেই ছেলেটা মেয়েটা এক সাথে বুড়ো বুড়ি হবে।

আর একদিন ছেলেটা হঠাৎ করে বুড়িটার আগেই..

কথা টা শেষ করার আগেই আমি উৎসর মুখ আটকে ধরি।

-চুপ আর বলতে হবেনা।

-উৎস আমার চোখের দিকে তাকালো।

হঠাৎ করেই উঠে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

আর বলতে লাগলো,

আমার মরণের কথা যদি শুনতেই না পারিস।তাহলে আমাকে ছেড়ে গিয়ে মরণ যন্ত্রণা কিভাবে দিয়ে যাবি বল?

কিভাবে কিভাবে কিভাবে?

উৎস আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।

আমি ওর পিঠ পর্যন্ত হাত উঠিয়েও ওকে জড়িয়ে ধরলাম না।

উৎস কাঁদছে,কাঁদছি আমিও।

-তুই কোন দিন আমাকে ভুলতে পারবিনা অনু।কোন দিন না।

দেখে নিস তুই।
সায়ানের সাথে সংসার করলেও ভাবনা জুড়ে শুধু আমিই থাকবো।
এই উৎসই থাকবে।

হঠাৎ উৎসের মোবাইল টা বেজে উঠে।

-আপনার ফোন বাজছে।
-বাজুক।
আমার জীবনেরই ১২ টা বেজে গেছে।
আর ফোন।

ফোন অবিরত বেজেই যাচ্ছে।বেজেই যাচ্ছে।

তাই আমি উৎসকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,

ইম্পর্ট্যান্ট কল বোধয়।

উৎস গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো।

রিসিভ করেই বল্লো,

-হ্যালো নিঝুম।

কথাটা বলার সাথে সাথে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম।

বুঝলাম না নিঝুমের নাম নিতেই এত খারাপ লাগছে কেন আমার।

-নিঝুম,কি হয়েছে?কাঁদছো কেন?

স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নিঝুম কাঁদছে।

তাই উৎস বার বার জিজ্ঞেস করছে নিঝুমকে।
ওর কি হয়েছে কাঁদছে কেন ও।

-আরে কি হয়েছে বলবে তো,এইভাবে কেঁদে গেলে আমি কিভাবে বুঝবো কান্নার কারণ টা কি।

-আমার সাথে আগামীকাল দেখা করবে?
-কি হয়েছে আগে বলবে তো নাকি?

-আমি আগামীকাল তোমার সাথে দেখা করতে চাই।

-আচ্ছা,অফিসে এসো দেখা হবে।

-না,অফিসে না।
অন্য কোথাও।

-আচ্ছা বলো,কোথায়?

নিঝুম উৎসকে একটা ঠিকানা বলে।

-তুমি কেঁদোনা।আমি আগামীকাল সকালেই আসবো।
এখন ঘুমাও তুমি।

-আসবেই কিন্তু।
-হ্যাঁ আসবো।

নিঝুম ফোন রেখে দেয়।

কিন্তু আমার কেন যেন অস্বস্তি লাগতে শুরু করে।

-কি বল্লো নিঝুম?
-দেখা করতে বল্লো।
-কেন?
-জানিনা,বলেনি।
-ও এত রাতে ফোন কেন দিলো?
-ওই যে দেখা করতে চায়।সেই জন্য।

-তাই বলে এত রাতে ফোন দিবে?
আর ও কেন দেখা করতে চাইবে আপনার সাথে?

-তুমি কেন এমন রিয়েক্ট করছো?
আমি কিভাবে জানবো ও কেন দেখা করতে চাইছে।

-আমি কেন রিয়েক্ট করছি তাইনা?
সেটাইতো।আমি কেন রিয়েক্ট করবো।

ওকে যান,গিয়ে দেখুন কি বলে।
হয়তো বিয়ে টিয়ে করতে চাইবে।

ভালোই হয়েছে।আপনার তো বউ রেডীই আছে।
এখন শুধু আমার যাবার পালা।
আমি গেলেই লাইন ক্লিয়ার।

-হ্যাঁ এটা অবশ্য ঠিক বলেছো।
আমার তো নিঝুমের কথা মনেই ছিলোনা।
যদিও মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালবাসে।

ওহ হ্যাঁ,সকালেই যাবেতো তুমি তাইনা?
আমি কি তোমাকে পৌছে দিবো তাহলে?

তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি তাহলে নিঝুমের ওখানে চলে যাবোনে।

আচ্ছা ঘুমাও তুমি।

থ্যাংক্স নিঝুম।
আমাকে এতটা ভালবাসার জন্য।অন্তত তোমার ভালবাসা পেয়ে হলেও কিছুটা ভুলতে পারবো কাউকে।

উৎস একা একা কথা গুলো বলে বালিশ নিয়ে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।

আর এই দিকে আমার সারা শরীর জ্বলতে লাগলো।

এটা কি জেলাসি?নাকি অন্য কোন কারণ?
এই উত্তরটাও জানা নেই আমার।

সকাল হতেই বাড়ীর সবাইকে বললাম,বাসায় যাবো বেড়াতে কিছু দিনের জন্য।

সবাই কথাটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো।

-উৎসও যাবে?
-না মা,ওর নাকি অফিসে কি কাজ আছে।
আমাকে দিয়ে চলে আসবে।

-ওহ আচ্ছা।
সাবধানে থাকিস মা।

-আপনারাও সবাই ভালো থাকবেন।

সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলাম।
জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে কান্না চলে আসে আমার।
আমি কেঁদে দেই।

-আরে পাগলী মেয়ে,কয়েক দিনের জন্য যাচ্ছিস।
সারা জীবনের জন্য না।
কাঁদিস না।

-সবাই ভালো থাকবেন।
নিজেদের খেয়াল রাখবেন।
আসি।

আমি সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম উৎসর সাথে।

বুকের ভেতর টা খাঁ খাঁ করছে।

অসহ্য ব্যথা হচ্ছে বুকের ভেতর।

এই মানুষ গুলোকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো আমি।

উৎস আমাকে বাইকে করে নিয়ে যায় সায়ানের দেয়া ঠিকানায়।

আমি উৎসকে জড়িয়ে ধরে বাইকে বসি।

উৎস অবাক হয়ে যায়।

-নিজের খেয়াল রাখবে।আর যে কোন প্রয়োজনে আমাকে ফোন দিবে।
আমি তোমার জন্য সদা প্রস্তুত থাকবো।
দোয়া করি সুখী হও তোমার ভালবাসার মানুষ টার সাথে।

আমার মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছে না।

দুজন চুপচাপ।
কিছু ক্ষণ পর আমরা গন্তব্যে পৌছে যাই।

-এই খানে আসতে বলেছে সায়ান তোমাকে?

-হ্যাঁ।
-নিঝুমও তো আমাকে এখানেই আসতে বলেছে।
-ওহ।

-আসলে এই জায়গাটাতেই সব জুটি মিট করেতো।তাই আরকি।
পপুলার জায়গা এটা কাপল দের জন্য।

-উৎস,

-হুম।

ওই ওই তুমি আমার নাম ধরে ডেকেছো?

-উৎস,

-বলো,

-একবার জড়িয়ে ধরবে আমাকে?
শেষ বারের মত?

উৎস কোন কথা না বলে আমাকে বুকের সাথে জাপটে ধরে।

আমি কান্না করে দেই।

-উৎস,আমি তোমাকে খুব মিস করবো।
খুব বেশি মিস করবো।

তুমি আমাকে ক্ষমা দিও প্লিজ।
ক্ষমা করে দিও আমায়।

আর তখনই নিঝুম এসে উপস্থিত হয়।

-উৎস,

আর উৎস আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিঝুমের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here