#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#৯_পর্ব
,
শোনো তোমাকে আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে ওখানে একটা সাইটে আমাদের কোম্পানির কাজ চলছে তোমাকে আমার সাথে ওখানে যেতে হবে, সো হাতের কাজটা শেষ করে নাও।
কই আমাকে তো এই ব্যাপারে আগে কেউ বলেনি, ম্যানেজার সাহেবও তো বলল নাহ যে আপনার সাথে যেতে হবে।
এই অফিসের বস তুমি নাকি আমি,? আমি যখন বলেছি তোমায় যেতে হবে তখন যেতে হবে,, তুমি নিশ্চয়ই তোমার চাকরিকে অনেক ভালোবাসো? সো এটা হারাতে না চাইলে আমি যা বলবো সেটা তোমায় করতেই হবে।
সরি স্যার আমি একটা কথা না বলে পারছি না,, আমি কিন্তু কোনো টাকার বিনিময়ে এই চাকরিটা পাইনি, আপনার বাবা আমার সব সার্টিফিকেট দেখে আমার যোগ্যতা অনুযায়ী এই চাকরিটা আমায় দিয়েছে সো আপনি আমায় চাকরি নেওয়ার ভয়টা দেখাবেন না, আর যদি সত্যি কোনো কাজ থাকে তাহলে আমি নিশ্চয়ই যাবো কেননা আমি কাজ দেখে কখনো পিছু হুটি নাহ সেটা আপনি না জানলেও আপনার বাবা ঠিকি জানে, আসছি স্যার।
একটা মেয়ের এতোটা আত্মসম্মান কীভাবে হয় কেমন শক্ত হয়ে কথাগুলো বলল, অন্য কোনো মেয়ের মতো মোটেও নেকামি নয়, হুমম ভালো , না না আর্দ্র এসব কি বলছিস ওই মেয়েটার এমন বড় কথায় তুই গলে যেতে পারিস নাহ হুম,, নিজেকে বুঝায়ে আর্দ্র কাজে মন দিলো।
,,,,
অনু আর ইশান সেই কখন থেকে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু আর্দ্রর কোনো খবরি নাই, আর ওদের কাছে আইডি কার্ডও নাই যে ভিতরে যাবে, গার্ড তো আইডি কার্ড ছাড়া কাওকেই ভিতরে ঢুকতে দেয় নাহ, যদিও ওরা আর্দ্রর রিলেটিভ হিসেবে যেতেই পারে কিন্তু ওভাবে গেলে আর্দ্রর কাছে ধরা পরে যাবে তাই কোনো উপায় না পেয়ে গেটের বাইরে দাঁড়ায়ে বাদাম খাচ্ছে,, তোর কি মনে হয় আর্দ্র ভাই বাইরে বেরোবে?
হ্যাঁ আমি জানি, গাধী একটা আমি যদি জানতাম তাহলে কি এখানে দাঁড়ায় দাঁড়ায় তোর সাথে বাদাম খেতাম?? যতসব আজগুবি কথা বার্তা।
এই কথায় কথায় আমায় মোটেও গাধী বলবি নাহ ওকে, আসলে তোর সাথে কথা বলায় বেকার শুধু তেড়ামী করে কথা বলিস, ওমা গো ওটা কি।
কিরে ওমন করিস কেন দিনের বেলায় চাঁদ দেইখা ফেলছিস নাকি?
সব সময় তো আমায় গাধী বলিস আরে গাধা পিছনে তাকিয়ে দেখ তাহলে তুইও বিনা টিকিটে স্টক করবি,, অনুর কথায় ইশান পিছনে তাকালো দেখলো আর্দ্র ইয়ানার সাথে গাড়িতে ওঠতেছে এটা দেখে তো সত্যি ইশানের অবস্থা টাইট,, আরে এটা ওই মেয়ে নাহ যে ওইদিন তোদের বাড়িতে এসেছিলো?
হুমম এনিই তো ইয়ানা আপু মাহি আপুদের সিনিয়র আপু, তাহলে এর সাথেই আর্দ্র ভাই তলে তলে সেটিংস করছে আর আমরা করলেই দোষ।
চল ওদের ফলো করি দেখি কোথায় যায় প্রথমে ভিডিও করবো তারপর সরাসরি সামনে গিয়ে চেপে ধরবো যদি অস্বীকার করে তাহলে ভিডিও দেখাবো,, নিজের প্রেম করে বেড়ায় আর ঋষিদের মতো আমাদের জ্ঞান দেয় আজকে জ্ঞান কাকে বলে সেটা দেখাবো।
আর্দ্র আর ইয়ানা গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো গাড়ি গেট থেকে বেরোতেই অনু আর ইশান ও তাদের সাইকেল চালাতে শুরু করলো কিন্তু সাইকেল কি আর কারের সাথে পারে৷ তখন ওরা আর্দ্রর অফিস চিনত তাই আসতে পেরেছে কিন্তু এখন তো আর ওরা জানে নাহ যে আর্দ্র কই গেলো তাই আর যেতেও পারলো নাহ,, যাহ গাড়িটা কোথায় গেলো হারিয়ে ফেললাম তো।
সত্যি তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে নাহ আনতে বলছিলাম বাইক আনলি বাই সাইকেল এখন জানবো কি করে ওরা কোথায় গেলো?
তাতে কি কোথায় গেলো সেটা নাহয় জানি না কিন্তু গেছে তো?? এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ, সন্ধ্যায় আর্দ্র ভাই বাসায় ফিরলে চেপে ধরবো। এখন চল বাসায় যায় এখন তো আর কাম্পাসে ও যাওয়া যাবে নাহ।
,,,,,,
কিরে তোর হলো আর কতক্ষণ আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো পা তো বেথ্যা হয়ে গেলো।
আর একটু পাঁচ মিনিট।
পাঁচ মিনিট করতে করতে তো পুরো দেড় ঘন্টা হয়ে গেলো বলছি আজকে কি তোর শাড়ি পড়া হবে নাকি আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবো।
আসলে আর্দ্র আজকে মাহি আর মেহরাব এর বিয়ে উপলক্ষে ওদের পুরো একদিনের জন্য একটা রুম বুক করে দিয়েছে আর মাহিকেও বাসা থেকে ওই বের করে দিয়েছে তারপর মেহরাব এর সাথে বুক করে রাখা রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে,, আর মাহি চুরি চুরি করে ওর ব্যাগের মধ্যে করে একটা শাড়িসহ যাবতীয় দরকারি জিনিস এনেছে যতই হোক বিয়ের পর আজকে ওদের প্রথম ডেট তাই শাড়ি না পরলে হয় নাকি এই জন্যই ও সেই কখন থেকে শাড়ি পরার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেই না,, অবশেষে বহু কষ্টে শাড়িটা পরে দরজা খুলে দিলো, নিন হয়ে গেছে এবার ভিতরে আসেন।
এতোক্ষণ লাগে?? সেই কখন থেকে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি তার কোনো হিসাব আছে?? লোকজন কি ভাবছিলো??
মাহি কিছু বলছে নাহ শুধু লজ্জা লজ্জা মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝেতে খুঁচাচ্ছে শাড়ির আঁচলের এক কোণা হাতের আঙুলে পেঁচাচ্ছে আর লজ্জা লজ্জা মুখ করে মিট মিট করে হাসতেছে।
কি হলো কথা বলছিস না কেনো?? আর এভাবে লজ্জা পাওয়ার কি আছে আজব আমি কি তোর অচেনা কেউ নাকি যে আমাকে দেখে এমন লজ্জা পেতে হবে,, আচ্ছা শোন যেটা হওয়ার সেটা তো হয়েই গেছে এখন মন দিয়ে পড়তে হবে ভালো রেজাল্ট করে দাদুর মন জয় করে আমাদের বিয়ের কথাটা বলতে হবে বুঝেছিস??
হুট আপনি সত্যি কেমন যেনো মেহরাব আজকের দিনে কেউ এইসব কথা বলে আজকে অন্য কথা বলতে হয় সবকিছুই কি আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে নাকি
অন্য কথা আবার কি আর এভাবে ঘটা করে শাড়ি পরারই বা কি আছে আজব সর তো সামনে থেকে কালকে টেনশনে সারারাত ঘুম হয়নি আমি এখন একটু ঘুমাবো, বিছানার উপর শুয়ে বলল মেহরাব।
আপনি এখানে ঘুমাতে এসেছেন?? আমি এতো কষ্ট করে আপনার জন্য শাড়ি পরলাম আপনি বললেন ও না কেমন হয়েছে,, মন খারাপ করে একরাশ অভিমান নিয়ে বলল মাহি।
আজব আমি আবার কখন তোকে শাড়ি পড়তে বললাম,, এতো বকবক না করে চুপ করে এখানে এসে ঘুমা তো আমার কিন্তু অনেক ঘুম পাচ্ছে।
মেহরাব আমি কিন্তু এখান থেকে চলে যাবো,, ছলছল চোখে বলল মাহি।
চলে যাবি?? আচ্ছা একা যেতে পারবি তো? যদি না পারিস তাহলে ইশানের নাম্বার তো তোর কাছে আছেই ওকে ফোন করিস ও তোকে দিয়ে আসবে আর্দ্র কে আবার কল দিস নাও কিন্তু অফিসে আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে ওই জানালার পর্দাটা একটু দিয়ে যাস রোদ এসে চোখে লাগছে আর হ্যাঁ দরজাটাও দিয়ে যাস, আমি এখন একটু ঘুমাবো,, আর্দ্র এতো টাকা দিয়ে রুমটা বুক করল যদি দুজনেই চলে যাই তাহলে টাকাগুলো নষ্ট হবে তাই তুই বরং যা আমি একটা লম্বা ঘুম দিয়ে রাতের দিকে চলে যাবো ওকে,,চোখের উপর হাত রেখে চোখ দুটি বন্ধ রেখে বলল মেহরাব।
মেহরাব এর কথাশুনে রাগে দুঃখে মাহির কান্না পাচ্ছে এমন কেনো লোকটা এতো কষ্ট করে ওনার জন্য শাড়ি পরলাম ওনি একবার ফিরেও চাইলো নাহ,, কেমন নির্দিধায় চলে যেতে বলল একটা বারও বলল না এই পাগলি কোথায় যাবি তুই তো আমার বউ সব সময় আমার বুকের মধ্যে থাকবি কিন্তু নাহ বললো না কেমন ঘুমাচ্ছে,,, দুচোখ বেঁয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল মাহির অভিমানে ঠিক করল সত্যি চলে যাবে দরজা পযন্ত গিয়ে বন্ধ দরজার সিটকেনি খুলতে গিয়ে কি মনে করে আর খুললো নাহ ফিরে এসে খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল,,, একদিকে কাঁদছে অন্যদিকে দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছতেছে তখন টের পেলো একজোড়া ঠান্ডা হাত ওর শাড়ি ভেত করে খোলা পেট চেপে ধরেছে,, কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাস পড়ছে সাথে শুকনো ঠোঁঠের আনাগোনা,, কারো শক্তপোক্ত বুকে মাহির পিঠ একেবারে শক্ত করে সেঁটে গেছে, মাহি বুঝতে পারলো এটা মেহরাব কেননা এই বন্ধ রুমে মাহি আর মেহরাব ছাড়া অন্যকেউ নেই, নিজেকে মেহরাব এর বাহুডোর থেকে সরাতে চাইলে মেহরাব আরো শক্ত করে মাহির পেট চেপে ধরে নিজের সাথে আটকে রেখে নেশা ভরা কন্ঠে বলল, , এতোই সহজ আমার থেকে ছাড়া পাওয়া হুমম,, যাতই হোক আমার একমাত্র বউ বলে কথা, আর এই দরজার বাইরে এক পা রাখলে পা কেটে হাতে ধরাই দিতাম, কত বড় সাহস বরকে রেখে চলে যাবে।
যাবোই তো আপনি শুধু আমায় কষ্ট দেন কাঁদান শুধু,, অভিমানি কন্ঠে বলল মাহি।
মাহির কথা শুনে নিঃশব্দে হাসলো মেহরাব মাহির ঘাড়ে গভীর চুমো দিয়ে বলল,, আর কষ্ট দেবো নাহ কি বলতো অনেক বেশি আদর করার আগে একটু কাঁদিয়ে নিতে হয় নয়ত আদর হজম করতে পারবি না শেষে বদ হজম হয়ে যাবে,,, কথাগুলো মাহির কানে বলে টুপ করে কানে একটা চুমো দিলো মেহরাব।
ছি কিসব কথা বলছেন লজ্জা নাই আপনার।
হুমম নাই তো, সবার লজ্জা লগে বলেই তো সবাই বাসর রাত করে কিন্তু আমার লজ্জা নেই তাই বাসর দিন করবো, কথাটা বলেই একটানে মাহিকে নিজের দিকে ঘুরায়ে কোলে তুলে নিলো, আর মাহি লজ্জায় মেহরাব এর বুকে নিজের মুখ গুজল,, মাহিকে কোলে নিয়েই মেহরাব খাটের দিকে এগুলো,, আর্দ্র ভাই তোর টাকা গুলো কিন্তু আমি মোটেও নষ্ট হতে দিচ্ছি নাহ।
চলবে,,,,?