মান অভিমান পর্ব -১০

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১০_পর্ব
,
আর্দ্র ইয়ানাদের ওখানকার কাজ দেখতে দেখতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো ওখানকার সবকিছু দেখে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে এই মাএ বের হয়েছে ওরা, দুপুরে ওরা ওখানেই খেয়ে নিয়েছে। আর্দ্র একমনে গাড়ি চালাচ্ছে আর ইয়ানা জানালার দিকে তাকিয়ে রাতের ঢাকা শহর দেখছে জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে যেটা শরীলকে কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট, জানালাটা লাগিয়ে দিন নয়ত ঠান্ডা লেগে যাবে আর একবার জ্বর আসলে অফিসের এতো কাজ একটাও করা হবে নাহ।

আরে ঠান্ডা লাগবে না আমার এসবে অভ্যাস আছে, আর আমার যখন তখন জ্বর আসে নাহ অনেক দিন পর পর আসে আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে নাহ আপনি নিশ্চিন্তে গাড়ি চালান।

ও ম্যাডাম আমি আপনার কথা বলেনি আমি আমার কথা বলেছি ওকে আপনার সাইটের জানালা খোলা সেটা দিয়ে যে হাওয়া আসছে সেটা আমার গায়েও লাগছে ওকে এই জন্য বললাম বন্ধ করতে৷ আমার খায়ে কাজ নাই আমি ওনার কথা ভাবতে যাবো।

ইয়ানার এবার রাগ হলো এই লোকটা এমন কেনো কথায় কথায় শুধু ঝগড়া করে আর তেড়্যা তেড়্যা কথা বলে একটু ভালো করে কথা বললে কি এমন হতো, ইয়ানা রেগে জানালা না বন্ধ করে আরো বেশি করে খুলে দিলো এতে যদিও ওর ও শীত লাগছে তবে শীতের চেয়ে এখানে জেদটাই আগে প্রকাশ পাচ্ছে। আর্দ্র দেখলো ইয়ানা জানালা বন্ধ না করে আরো বেশি করে খুলে দিয়েছে এতে আর্দ্রর আরো বেশি রাগ হলো মেয়েটা শীতে কাঁপছে তবুও জানালা বন্ধ করবে নাহ আর্দ্র গাড়িটা রাস্তার এক সাইটে দাঁড় করিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,, কি সম্যসা আপনার মিস ইয়ানা জানালা বন্ধ করছেন না কেনো??

করবো না তো আপনি কি করবেন, শুনুন আমার জানা মতে এটা আমার স্যার এর গাড়ি তাই ওনি যদি বলত তাহলে অবশ্যই বন্ধ করতাম অন্যথায় কারো কথায় আমি জানালা বন্ধ করবো নাহ।

ওহ রিয়েলি?? আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আপনার স্যার আমার বাবা হয় আর আমার বাবার গাড়ি মানেই আমার গাড়ি ওকে।

হ্যাঁ এটাই তো পারেন আপনারা নিজে তো কিছু করতে পারবেন না শুধু বাবার টাকায় ফুটানি করবেন। পারলে নিজে কিছু করে নিজের টাকায় গাড়ি কিনে বাবা কে বলেন যে বাবা দ্যাখো এটা আমার নিজের উপার্জনের টাকায় কেনা গাড়ি, না সেটা করবেন নাহ আপনার বাবা এই বয়সেও অফিসে এসে দিনরাত গাধার মতো খেটে যাবে আর আপনি এতো বড় একটা দামড়া ছেলে হয়ে তার ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছেন। ওহ শুনেছি বিদেশে নাকি আপনার একটা হোটেল আছে তা বলছি সেই হোটেল কি আদেও চলে?? নাকি শুধু মুখেই বলেন কখনো তো আপনাকে কাজ করতে দেখলাম না যে কদিন দেখেছি সে কয়দিন তো শুধু ঘুরে বেড়াতেই দেখেছি, আপনার না আমার মতো হওয়া উচিত ছিল তাহলে বুঝতেন বাবা না থাকলে সমাজে একটা মেয়ে তার মাকে নিয়ে চলাটা কতটা কষ্টের। যাই হোক অনেক রাত হয়েছে গাড়িটা কি চালাবেন নাকি আমি নেমে অন্য কোনো গাড়িতে করে চলে যাবো।

আর্দ্র কিছু বলতে গিয়েও বলল না চুপচাপ গাড়ি স্টাট দিলো কেননা কোথাও না কোথাও ইয়ানা একদম ঠিক কথায় বলেছে, পড়াশুনা শেষ করে বাবা বলেছিলো কিছু করতে কিন্তু বাবার কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো করে গা ছাড়া ভাব করে সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম তখন দাদু গালে একটা চড় মেরে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলো তখন দাদুর উপর অভিমান করে চলে গিয়েছিলাম ভেবেছিলাম কিছু না করা অবধি বাড়ি ফিরবো না খুব কষ্টে একটা হোটেল করেছিলাম ব্যাস ভেবেছিলাম আর কি করা লাগবে তাই বাড়ি ফিরে আসলাম এখানে এসে ওটার তেমন কোনো কাজ করা হয়নি আবারও সেই একি ভুল করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু মাঝপথে এই মেয়েটা আমার সবকিছু আবার মনে করিয়ে দিলো আর্দ্রর ভাবনার মাঝেই ইয়ানা বলল, আরে আরে আমার বাড়ির উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দিবেন নাকি এখানেই থামেন।

আর্দ্র ব্রেক কষতেই ইয়ানা নেমে গেলো আর্দ্র সেদিকে তাকালো না ইয়ানা কিছু দূর গিয়ে থেমে গেলো, আজকে লোকটাকে অনেক বেশিই কথা বলে ফেলেছি এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি একটা সরি বলা উচিত, ইয়ানা পিছনে তাকিয়ে আর্দ্রকে সরি বলতে গিয়ে দেখলো আর্দ্র নেই চলে গেছে, চলে গেলো ওকে কালকে অফিসে বলে দেবো।
,,,,,,
কিরে সরাদিন কই ছিলি আর তোর ভার্সিটি তো দুটোর দিকে ছুটি দেয় তাহলে তুই এই সন্ধ্যায় বাসায় আসলি কেনো??

মায়ের করা প্রশ্নে মাহি কি বলবে বুঝতে পারছে না শুধু আমতা আমতা করছে।

কিরে চুপ করে আছিস কেনো?? আর এই সন্ধ্যা বেলায় চুল ভিজা কেনো?? তুই না সকালে ভার্সিটি যাওয়ার আগে গোসল করে গেলি তাহলে এখনো চুল ভিজা কেনো সারাদিনেও চুল শুকায় নাই??

আ আসলে আম্মু আজকে ভার্সিটি শেষে হিয়ার সাথে ওর বাসায় গিছিলাম আজকে ওর জন্মদিন কাউকে দাওয়াত দেয়নি এমবি ঘরয়া ভাবে পালন করেছে সেখানেই ওরা ময়দা আর ডিম দিয়ে আমার সারা গায়ে মাখিয়ে দিয়েছিলো এই জন্য ওখান থেকে একেবারে গোসল করে খায়ে আসতে দেরি হয়ে গেলো আর চুলও এই কারণেই ভিজা।

ওহ আচ্ছা তাই বল ঠিক আছে রুমে যা।

মাহি যেনো জান ফিরে পেলো যলদি করে রুমে চলে গেলো।

অনু ডয়িং রুমের সোফায় বসে আছে কখন আর্দ্র আসবে আর আর্দ্র কে চেপে ধরবে অনেক মজা হবে আজকে এসব ভাবছে আর ইশান এর সাথে চ্যাটিং করছে তখনি আর্দ্র ধপ ধপ পা ফেলে উপরে যেতে গেলো অনু আর্দ্র কে কিছু বলতে গিয়ে আর্দ্রর মুখ দেখে কিছু আর বলল নাহ,, এই শোননা আর্দ্র ভাই এসেছে।

তো সেই কথা আমাকে না লিখে আর্দ্র ভাইকে গিয়ে চেপে ধর দেখ শিকার করে কিনা।

নারে মনে হয় কিছু একটা হয়েছে আর্দ্র ভাইকে দেখলাম কেমন রেগে মেগে বড় কাকুর রুমের দিকে গেলো।

বলিস কি তাহলে থাক এখন কিছু বলার দরকার নাই পরে এক সময় আমরা দুজনে একসাথে বলব ওকে, এখন চল অন্য কথা বলি।
,,,,,
আর্দ্র সোজা ওর বাবার রুমের সামনে গিয়ে নক করলো বাবা আসতে পারি।

আরে আয়, আমার রুমে আসতে আবার নক করা লাগে পাগল ছেলে আয় ভিতরে আয় বস এখানে।

বাবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।

কি কথা??

বাবা আমার কিছু টাকা লাগবে তবে সেটা লোন হিসেবে, তুমি আমাকে লাখ খানেক টাকা দিবে আমি তোমাকে ছয় মাসের মধ্যে সেটা ফিরিয়ে দেবো।

কি সব বলছিস তুই, নিজের বাবার থেকে টাকা নিবি এতে আবার জিগাস করার কি আছে আর আমার টাকা মানেই তো তোর টাকা যা লাগে তুলে নে আবার ফেরত দেওয়া লাগবে কেনো নিজের টাকা কেউ ফেরত দেয়??

না বাবা তুমি আর ছোট কাকু মিলে এই ব্যবসাটা এতো দূর এনেছো এগুলো তোমাদের টাকা আর আমিও তো বড় হয়েছি এবার আমার ও উচিত কিছু করার তুমি কাল সকালে আমায় টাকা গুলো দিও আর সাক্ষী হিসেবে দাদু আর কাকু তো থাকবেই আমি ঠিক ছয় মাস পর সব টাকা দিয়ে দেবো আর হ্যাঁ কাল থেকে আমি আর অফিসে যাচ্ছি না ওটা তোমার আর ছোট কাকুর অফিস তুমি যখন অসুস্থ তাহলে ছোট কাকুকেই বলো ওকে আসছি।

আর্দ্রর কথায় ওর বাবা আর মা যেনো পুরাই বাক রুদ্ধ হয়ে গেলো কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না শুধু দুজন দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো।

পরদিন সকালবেলা ইয়ানা অফিসে আসলো এসেই আর্দ্রর কেবিনে নক করলো ভিতরে গিয়ে দেখলো সেখানে আর্দ্র নেই ওর বদলে ছোট স্যার বসে আছে, কি হলো ইয়ানা কিছু বলবে??

জি না স্যার আমি আসছি, কোনো রকমে ওখান থেকে বেরিয়ে আসলো ইয়ানা বাইরে এসে ভাবতে লাগবে আর্দ্র আসিনি কেনো তাহলে কি কালকের কথায় ওনি অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন মনে মনে কথাগুলো বলে সামনে তাকাতেই ওর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম কেননা সামনে আর্দ্র,,,,,,,,

চলবে,,,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here