মান অভিমান পর্ব -১১

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১১_পর্ব
,
ইয়ানা হা করে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে কেননা আর্দ্র একটা নরমাল পোশাক পড়ে এসেছে হাতে একটা ফাইল যেমনটা সবাই ইন্টারভিউ দিতে আসলে বা কোনো ব্যাংক থেকে লোন নিতে আসলে সাধারণত যেমন পোশাক পড়ে তেমনটাই পড়ে আসছে, আর্দ্র সোজা এসে ইয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, এক্সকিউজমি আনোয়ার( আর্দ্রর ছোট কাকা) সাহেব এর কেবিন কোনটা বলবেন প্লিজ?

ইয়ানা কথা কি বলবে ওতো আর্দ্র কে দেখে এখনো হা করে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে আর সবথেকে বেশি অবাক হয়েছে ওনি নিজের অফিসে এসে নিজেরই কেবিনের কথা আমার কাছে জিগাস করছে তাও এমন ভাবে যেনো ওনি আমায় চেনেনই নাহ,, এই যে মিস একটু যলদি বলবেন প্লিজ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর্দ্রর কথায় ইয়ানার হুশ আসলো ওহ হ্যাঁ জি মানে এই যে এটা।

ওহ থ্যাংক্স, এই বলে আর্দ্র ইয়ানার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো, আর ইয়ানা ওখানে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে লাগল কেননা এই মাএ কি হলো সেটা সম্পূর্ণ ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো প্রায় অনেকটা সময় পর আর্দ্র কেবিন থেকে বার হলো আর কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা হেঁটে চলে গেলো ইয়ানা ওর সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো তবুও ওকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলো ওদিকে ইয়ানা ওকে সরি কি বলবে ওতো অবাক এর উপর অবাক হচ্ছে।
,,,,,,,,
মেহরাব মাহিকে ভার্টিসিটে নামিয়ে দিয়ে এসে কেবলি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে তখন ওর ফোনটা বিকট শব্দে বেজে উঠল একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বলল, হ্যাঁ বল।

দশ মিনিট সময় দিচ্ছি আমার বলা ঠিকানায় চলে আয় অনেক কাজ আছে এখন মোটেও বসে থাকার সময় নয় ওকে যলদি কর হাতে কিন্তু সময় নেই আমি অপেক্ষা করছি, এই বলে আর্দ্র ফোনটা কেটে দিলো তবে মেহরাব এখনও ফোনটা কানেই ধরে আছে কেননা আর্দ্র কিসের ভিতর কি বলল ও কিছুই বুঝতে পারেনি তবুও আর্দ্র যখন যেতে বলেছে তখন তো যেতেই হবে, মেহরাব শুয়া থেকে উঠে বিরবির করতে করতে রেডি হতে লাগল, এই দুই ভাই বোন মিলে আমায় পাগল করে দেবে একজন সাত সকালে ফোন দিয়ে বলে আমায় ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে আসেন তো আর একজন আধা বেলায় ফোন দিয়ে বলে কাজ আছে যলদি আয় ওফ আমার হয়েছে যত জ্বালা, হে আল্লাহ আর্দ্রর যেনো এমন বউ পাই যে ওকে সব সময় দৌড় এর উপর রাখে তাহলে বুঝবে কেমন লাগে। রেডি হয়ে মেহরাব নিচে নেমে চলে গেলো ওর মা অবশ্য বলেছিলো খেয়ে যেতে কিন্তু ও বলেছে আর্দ্রদের ওখান থেকে খেয়ে নেবে।
,,,,,
কিরে হঠাৎ এতো জুরুরি তলব কেনো? আর এটা কার বাসা এখানে ডাকলি কেনো?

এটা করো বাসা নয় এটা আমি ভাড়া নিয়েছি এখানে একটা ছোট খাটো অফিস করবো এখন তো পুরো ফাঁকা তাই আমরা বাজারে যাবো আর অল্প কিছু আসবাবপত্র কিনে এনে অফিস টা ভালো করে সাজাতে হবে এখানে বসেই আমরা ওখানকার সব কাজ আর সব অর্ডার নেবো, শুধু একদেশে নয় সব দেশেই আমাদের বিজনেস ছড়ায়ে দিতে হবে আর হ্যাঁ আমি লাখ খানেক টাকা লোন নিয়েছি এটার অর্ধেক বিজনেসে লাগাবো আর বাকিটা দিয়ে জিনিসপত্র সহ অগ্রীম ভাড়া দিয়েছি, শোন মন দিয়ে কাজ করতে হবে আর ছয় মাসের মধ্যো সব লোন শোধ করতে হবে আর তারপর ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটা গাড়ি কেনবো দেন ততদিনে তো আল্লাহ চাইলে ব্যাবসাটাও ঠিক অবস্থায় চলে আসবে তখন মাসে মাসে ইয়েমাই টাও দিতে পারবো, কিরে শুনছিস আমার কথা কি বললাম বুঝলি কিছু??

মেহরাব হ্যাঁ করে আর্দ্রর কথাগুলো শুনলো তারপর বলল, কিন্তু হঠাৎ করে এসব কেনো?

এসব কেনো বুঝিস না নতুন বিয়ে করলি বউকে খাওয়াবি কি আর মাহির একটা খরচ আছে নাহ ভার্সিটির খরচ ওর জামা কাপড় আরো কত খরচ আর আংকেল এর ও তো বয়স হয়েছে তার আর্দ্র ইয়ানা ওকে যা যা বলেছিলো সেটা হুবহু কপি করে মেহরাব কে বলল সবটা শুনে মেহরাব শুধু অবাক এর উপর অবাকই হচ্ছে।

বা বা ভূতের মুখে রাম নাম তা এই বুদ্ধি গুলো আগে কোথায় ছিলো?? এতোদিন মাথায় আসেনি কেনো?

কেননা এতোদিন যে তার সাথে দেখা হয়নি তাই আসেনি সে না বললে হয়ত কখনো বুঝতেই পারতাম নাহ।

করে বিরবির করে কি বলিস, জিনিসপত্র কিনতে যাবি বলে চল

হ্যাঁ চল বাইক তো এনেছিস?

হুম

তাহলে চল ওটা করেই যাবো।

১ সপ্তাহ পর,,

এই কয়দিনে আর্দ্র আর মেহরাব পুরোদমে কাজে লেগে গেছে গোসল খাওয়া শুধু ঠিক মতো করে তাছাড়া আর কোনোদিকে কোনো হুশ নেই, ওরা একটা রুটিন তৈরি করেছে সেই অনুযায়ী কাজ করে আর টেবিলের উপর তো ম্যাপ রেখেছেই প্রথমে কোথা থেকে আর কীভাবে শুরু করবে সবটা লিখে রাখে,, মেহরাব এর ফোনটা সেই কখন থেকে বেজে যাচ্ছে কিন্তু ফোন ধরার কোনো মানুষই নেই এই নিয়ে পরপর বিশ বার কল দিলো মাহির রাগে পুরো শরীল জ্বলছে আজ পুরো এক সপ্তাহ হয়ে গেলো মেহরাব এর কোনো খোঁজ নেই না ফোন ধরছে না কোনো মেসেজ এর রিপলে করছে এর মাঝে কয়েকদিন করে মেহরাব এর বাড়িতেও গিয়েছে কিন্তু মেহরাব কে পাইনি, এই শেষ বার কল ধরলে ভালো নয়ত আর কল দেবোই নাহ এই মনো স্থির করে মাহি শেষ বারের মতো কল দিলো, কলটা কেটে গেলো কেউ ধরল না শেষ আশাটাও নিভে গেলো মনের মাঝে অভিমানেরা ভিড় করলো মাহি ঠিক করল আর কখনোই কল দিবে নাহ, কিন্তু পরক্ষণেই মাহির ফোনটা বেজে উঠল দেখল মেহরাব কল দিয়েছে হাজারও অভিমান নিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল মাহি,, হ্যাঁ বলুন কেনো কল দিয়েছেন আর আমি কে কেনই বা আমায় কল দিয়েছেন এখন তো আর কোনো দরকার নেই আমার তাই না? হয়ত ভুল করে কল দিয়ে ফেলেছেন আচ্ছা আমিই রেখে দিচ্ছি আপনি তো এখন অনেক ব্যাস্ত,, অনেক অভিমানে কথাগুলো বলল মাহি।

চেয়ারের উপর ক্লান্ত শরীলটা এলিয়ে দিয়ে চোখটা বন্ধ করে মাহির সবটা অভিযোগ শুনলো মেহরাব চোখ বন্ধ রেখেই কিঞ্চিৎ হাসল মেহরাব ও ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ওর পাগলি বউটা ওর উপর ভীষণ অভিমান করে আছে,, শোন কালকে সকাল দশটার দিকে আগের সেই হোটেলে চলে আসবি তারপর তোর সব অভিযোগ শুনবো ওকে।

আমি মোটেও আসবো না আপনি পারলে অপেক্ষা করেন গা আমি জীবনেও আসবো নাহ।

প্লিজ সোনা বউ রাগ করে নাহ কালকে প্লিজ চলে আসিস অনেকদিন হলো হলো তোকে দেখি নাহ আদর করি নাহ বিয়ের পর সুন্দরী বউ রেখে কি এভাবে দূরে দূরে থাকা যায় বল কিন্তু তোর মামাত ভাই যদি সেটা বুঝত নিজেতো বিয়ে করেনি তাই আমার অবস্থাটা টাও বুঝতে পারছে নাহ, কালকে সবটা বলবো প্লিজ চলে আসিস।

কিরে মেহরাব তোর প্রেমালাপ হলো সময় কিন্তু শেষ যলদি আয় কাজ আছে এতো প্রেম করলে কাজ করবি কখন?

ওই যে তোর ভাই আবার ডাকছে অনেক কষ্টে কালকের দিনটা ম্যানেজ করেছি প্লিজ চলে আসিস এখন গেলাম প্লিজ সোনা বউ রাগ করিস নাহ, ফোনটা কেটে মেহরাব আবার কাজে লেগে গেলো, কান থেকে ফোনটা নিচে রেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মনে মনে বলল মাহি কালকে একবার আসেন আপনার খবর আছে।
,,,,,,,,
একটা সরি বলার জন্য এতো কষ্ট করতে হবে জানলে কখনোই আমি ওনাকে এতোগুলো কথা বলতাম না, এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে কিন্তু ওনাকে কোথায় পাবো হঠাৎ করেই কেমন কপ পুরের মতো উবে গেলো নাকি, অনেক কষ্টে জানতে পেরেছি ওনি এই ঠিকানায় নাকি অফিস নিয়েছে দেখি দেখা করে কি বলে,, কি আর বলবে ওনি বলবো তো আমি শুধু একটা সরি বলেই চলে আসবো। এইতো এই ঠিকানায় তো ভিতরে আদৌ ও কোনো মানুষ আছে কি না আল্লাহই জানে, অনেক ভেবে চিন্তে ইয়ানা দরজার সামনে গিয়ে নক করলো যদিও দরজাটা খোলা তবুও কারো কেবিনে ঢুকতে হলে তার পারমিশন নেওয়াটা জুরুরি।

চলবে,,,,,,??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here