মান অভিমান পর্ব -১২

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১২_পর্ব
,
ইয়ানা কয়েকবার নক দেওয়ার পরেও ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেলো নাহ কেননা এখন দুপুর টাইম মেহরাব চেয়ারের উপর বসে ঘুমাচ্ছে কেননা এ কয়দিন অনেক পরিশ্রম হচ্ছে তাই ইয়ানার নক করা ঠিক পাইনি আর আর্দ্র ওয়াশ রুমে ছিলো বিধায় শুনতে পাইনি, ইয়ানা অনেক বার নক দেওয়ার পরেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে চলে গেলো দেখলো ছোট খাটো একটা অফিস রুম, দুইটা ডেস্ক পাশাপাশি দুইটা ডেস্কে দুইটা কম্পিউটার রাখা তার একটাতে মেহরাব চেয়ারে বসে ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে, ইয়ানা সব কিছু ঘুরে দেখছিলো তখনি পিছন থেকে আর্দ্র বলল,, একি আপনি এখানে?? এতো দেখি গরীবের বাড়ি হাতির পা, এমন অবস্থা।

কারো কথায় ইয়ানা পিছন ফিরে তাকালো দেখলো আর্দ্র দাঁড়িয়ে, ইয়ানা চোখমুখ কুঁচকে বলল, আপনি কি আমাকে কোনো ভাবে হাতি বলতে চাইছেন??

মোটেও না আমি আপনাকে সরাসরি হাতিই বলছি।

দেখুন মোটেও বাজে কথা বলবেন নাহ, আমি মোটেও হাতির মতো দেখতে নয় আর হাতির তো চার পা কিন্তু আমার দুই পা, আরো অনেক কিছুই আছে যেটা হাতির সাথে মিলবে না তাই আমি মোটেও হাতি না বরং আপনি গন্ডার।

কিহ??

জি কেননা গন্ডারের মতো আপনার গায়ের চামড়া মোটা এতোবার বলার পরেও দেখা হলে শুধু ঝগড়াই করেন,, তারপর পিনপিন নিরবতা কেউ কোনো কথা বলছে না দুজন দুজনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠল,, দেখেছেন আমি আপনাকে কি বলতে এসেছি সেটা না বলেই বাচ্চাদের মতো ঝগড়া শুরু করে দিয়েছি, আসলে আম সরি।

মানে? না মানে হঠাৎ করে সরি কেনো??

আসলে সেদিন রাগের মাথায় আপনাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি, পরে মাথা ঠান্ডা হলে আমার অনেক খারাপ লাগছিলো তাই ভাবলাম আপনাকে সরি বলি কিন্তু আমার কি আর সে উপায় আছে আপনাকে তো খুঁজেই পাওয়া যাই না কত কষ্ট করে আপনার ঠিকানা যোগাড় করলাম তারপর অবশেষে আপনার দেখা পেলাম, তা এখানে এসব কি??

প্রথমত আপনাকে সরি বলার কোনো প্রয়োজন নেই কোননা সেদিন রাগের মাথায় আপনি আমার উপকারই করেছিলেন কেননা সেদিন আপনি ওই কথাগুলো না বললে আমি হয়ত বুঝতেই পারতাম না, এই জন্যই হয়ত বলে একটা মেয়ে ইচ্ছে করলে কোনো জিনিস গড়তেও পারে আবার ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণন ও করতে পারে। ওকে যাকগে সে কথা আর এটা হলো আমার ছোট খাটো একটা অফিস।

বাবা এরি মধ্যে আবার অফিস ও নিয়ে ফেলেছেন, তা আপনার বাবার এতোবড় একটা অফিস থাকতে আপনি হঠাৎ এতো ছোট অফিস নিলেন যে।

দেখেছেন সেদিন আপনিই আমায় ওতোসত জ্ঞান দিয়ে আবার সেই আমার মতো কথা বলছেন।

সত্যি আপনার সাথে কথায় পারা যাবে নাহ, আমি একটা মেয়ে হয়েও হেড়ে যাচ্ছি, সত্যি বড্ড ঝগড়ুটে আপনি। ওদের কথার মাঝেই মেহরাব জেগে গেলো চোখ খুলে দুহাতে চোখ ডলে আড়মোড়া ভেঙ্গে ওদের দিকে তাকাতেই আর্দ্র বলল,, কি স্যার ঘুম হলো তা এভাবে ঘুমালে কাজ কি আদেও হবে??

এ কথা আমাকে না বলে তোর বোনকে বল গিয়ে এদিক থেকে তুই চাপ দিস আবার অন্য দিক থেকে তোর বোন চাপ দেয় তো আমি কি করবো ওদের দুজনের জ্বালায় ঠিক মতো ঘুমাতেও পারি নাহ।

জ্বালা যখন নিতেই পারবি না তখন বিয়েটা করলি কেনো হমম।

ওটা তো,, আচ্ছা এনি কে?? এনাকে তো ঠিক চিনলাম না।

আরে এনি হলো মিস ঝগড়ুটে, এই না মানে মিস ইয়ানা তারপর আর্দ্র মেহরাব কে সবটা বলল আর ইয়ানার সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দিলো,, ওহ আচ্ছা তাহলে আপনিই সে যার জন্য আমাদের ছোলার ডাল এর মাথায় সুবুদ্ধি টা এসেছে।

মেহরাব এর কথা বুঝতে না পেরে ইয়ানা বলল,, আপনার কথা ঠিক বুঝলাম নাহ এই ছোলার ডাল টা আবার কে??

আরে আপনার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে আর্দ্র ছোট বেলায় ও ছোলার ডাল খেতে খুব পছন্দ করতো তাই আমাদের দাদু আদর করে ওকে ছোলার ডাল বলেই ডাকত।

এই মেহরাব তুই চুপ করবি সব সময় বাজে কথা, মেরে একদম পা ভেঙে দেবো তোকে যে দাদু বগা বলে ডাকত তার বেলায়, মেহরাব কে চোখ রাঙানি দিয়ে আর্দ্র ইয়ানা কে বলল আর আপনি দাঁড়ায় আছেন কেনো বসুন না।

ইয়ানা নিজের হাসিটা চেপে রেখে বলল আজ না আজকে লাঞ্চ এর টাইম এই চলে এসেছি পরে অন্যদিন আসবো আর কোনো দরকার লাগলে আমাকে বলবেন কিন্তু আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো মিস্টার ছোলার ডাল , কথাটা বলে ইয়ানা দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।

আরে এই কি বললেন আপনি, আর্দ্রর কথাটা ইয়ানার কান অবধি গেলো নাহ তার আগেই ইয়ানা পগার পাড় এগিকে আর্দ্র এক হাত কমড়ে আর আরেক হাত মাথার পিছনে দিয়ে ঠোঁট কাঁমড়ে হেসে মাথা ঝাঁকালো এটা দেখে মেহরাব বলল, বা বা সেদিন তো খুব পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিলি আজকে হঠাৎ এতো মিষ্টি মিষ্টি কথা বার হলো কেমনে তার মানে সামথিং সামথিং হমম হমম।

বাজে কথা বলা বন্ধ করবি আর তোকে তো আমি ছাড়বো না ওনার সামনে আমার পেজটিস এর বারোটা বাজিয়ে এখন আবার এসব কথা বলা হচ্ছে তুই দাঁড়া ওখানে তোর হচ্ছে কথাটা বলে আর্দ্র মেহরাব কে ধরতে গেলো আর মেহরাব ও দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, হ্যাঁ এখন তো সত্যি কথা বললেও দোষ, কি যুগ আসলো রে ভাই সত্যি বললেও পিটুনি খেতে হয়।

তুই শুধু দাঁড়া তারপর তোকে বোঝাবো সত্যি কথা কোথায় আর কীভাবে বলতে হয় তোকে ধরতে পারি একবার।

পরদিন সকালে,,

মেহরাব এর খালি বুকে শুয়ে আছে মাহি দুজনের গায়ের উপর শুধু একটা চাদর ছাড়া আর কিছুই নেই মেহরাব চিৎ হয়ে শুয়ে ডান হাত মাথার নিচে দিয়ে আর বাম হাত মাহির পিঠের উপর দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, আর মাহি মেহরাব এর বুকে মাথা দিয়ে বুকের উপর আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি আঁকতে আঁকতে বলল,তাহলে এই ব্যাপার আপনি আমায় আগে বলবেন তো আমার চিন্তা হয় না বুঝি।

আমি কি করবো বল তোর মামাত ভাই কে তো চিনিসই কেমন সারাদিন কাজের মধ্যে থাকতে হয়, আজকে তাও বহু কষ্টে তিন ঘন্টা সময় ম্যানেজ করেছি একটু পরেই আবার চলে যেতে হবে।

এখনি আবার চলে যাবেন? হুর ভালো লাগে না কেবলি তো আসলেন এখনি আবার চলে যাবেন?

না গিয়ে কি করবো বল কাজের অনেক চাপ আর আমাদের কাজ এতোটাও রানিং হয়নি যে অন্য লোক নেবো কেননা অন্য লোক নিলেও তো তাকে আবার বেতন দিতে হবে সেই বেতন টা কোথা থেকে দেবো তাই চারজনের কাজ আমরা দুইজন মিলেই করি এই জন্য তোকে সময় দিতে পারি নাহ।

মাহি মেহরাব এর বুক থেকে মাথা তুলে মেহরাব এর দিকে তাকিয়ে বলল, আচ্ছা আমার তো এখন পরিক্ষা শেষ পড়ার তেমন কোনো চাপও নেই আমি যদি আপনাদের ওখানে কাজ করি তাহলে কেমন হবে? আপনাদেরও সাহায্য করাও হবে আবার আমাদের দেখাও হবে।

হুম এটা করলেও মন্দ হয় না তুই একদিক থেকে ঠিকি বলেছিস কিন্তু তুই ওখানে কি কাজ করবি??

কেনো আপনাদের ওখানে তো অর্ডার নেওয়ার জন্য আর কাস্টমার এর সাথে কথা বলার জন্য একজন থাকেই সেখানে না হয় আমি কথা বলবো আর আপনারা অন্য কোনো কাজ করবেন তাহলে তো একদিকের টেনশন কমবে।

আরে এটা তো আমি একদম ভেবে দেখেনি তুই একদম ঠিক কথা বলেছিস ইস এ কথা আমার মাথায় আগে আসলো না কেনো।

কেননা আপনার মাথায় গরব ভরা তাই আসেনি।

ওরে আমার বুদ্ধিমতী বউরে তুই যখন এতো ভালো একটা আইডিয়া দিলি তখন তো তোকে একটা পুরুষ্কার দিতেই হয়।

সত্যি? কি পুরুষ্কার দিবেন হমম,, খুশি হয়ে বলল মাহি।

হাতে এখনো আরো এক ঘন্টা সময় আছে তাহলে চল আরেক বার আদর হয়ে যাক, দুষ্ট হেসে বলল মেহরাব।

ছিঃ কি সব কথা বার্তা বলেন ছাড়ুন আমায় আমি উঠবো বাড়ি যেতে হবে৷

ওমমম সেটা তো হচ্ছে না পুরুষ্কার তো তোকে আমি দিয়েই ছাড়বো, মাহি না না করলেও মেহরাব এর ভালোবাসায় মাহি সাড়া না দিয়ে পারলো না আবার দুজনে ভালোবাসায় সাগরের অতলে তলীয়ে গেলো।
,,,,,,
কিরে ওদিকের খবর কি আর্দ্র ভাই এর আর কোনো ক্লু পেয়েছিস?

হুমম পেলে আমি বুঝি আর্দ্র ভাইকে ব্লাকমেল না করে তোর সাথে এখানে বসে থাকতাম।

অনু তোর এই তেড়ামি করে কথা বলার অভ্যাসটা গেলো নাহ ধুর তোর সাথে কথা বলায় বেকার।

হুম এখন তো আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগবেই নাহ৷ এখন তো তানিয়া আছে যা না যা তোর তানিয়ার কাছে যা।

আরে এখানে আবার তানিয়া আসলো কোথা থেকে আর আমি ওর কাছেই বা যাবো কেনো আজব তো।

হ্যাঁ এখন আমার কথা আজব তো মনে হবেই সকালে যখন তানিয়ার সাথে ঢলাঢলি করছিলি তখন আজব লাগিনি, সত্যি তোরা ছেলেরা এমনি একটা দিয়ে তোদের হয় না সালা মেয়েবাজ,, কথাটা বলে অনু ওর ব্যাগটা নিয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেলো।

লে আমি আবার কি করলাম কেউ আমাকে বলোরে ভাই এই মেয়েরা এমন কেনো সত্যি মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা, কোথায় যে গেলো কে জানে, এই অনু দাঁড়া আমি ও আসছি, কথাটা বলে ইশান অনুর পিছনে পিছনে গেলো।

চলবে,,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here