মান অভিমান পর্ব -১৩

#মান_অভিমান
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#১৩_পর্ব
,
আকাশ ভেঙে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে সত্যি এই অসময়ে বৃষ্টি কেউই আশা করেনি, আর্দ্র মেহরাব এর বাইক নিয়ে একটা কাজে বেরিয়েছিলো কিন্তু মাঝ রাস্তায় এভাবে বৃষ্টি নামায় বাইক থামিয়ে কোনো মতে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়েছে। আকাশ পরিষ্কার দেখে সাথে করে রেনইকোট টা আর আনা হয়নি, এভাবে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে আর্দ্র সত্যি বিরক্ত ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে মাথার চুলটা ঝেড়ে পকেট থেকে ফোনটা বার করে মেহরাব কে কল দিয়ে বলল এখানে ছাতা নিয়ে আসতে বৃষ্টি কখন থামবে কেউ বলতে পারেনা, মেহরাব কে বলে ফোনটা পুনরায় পকেটে রেখে মাথা ঝাঁকিয়ে চুলগুলো একটু নেড়ে দুহাত পকেটে রেখে বৃষ্টির পানে তাকিয়ে আছে। আজকে শুক্রবার বিধায় রাস্তাঘাটে তেমন মানুষ নেই কেননা ছুটির দিনে সবাই একটু আরাম করে ঘুমাতে চাই তাই ছাউনির নিচে বর্তমানে আর্দ্র একাই আছে।

ওফ্ফ বৃষ্টিটা এখনি আসতে হলো ভাগ্যিস বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ছাতাটা নিয়ে এসেছিলাম নয়ত কি যে হতো, মাকেও বলি কোথায় ভাবলাম আজকে শুক্রবার কাঁথামুড়ি দিয়ে আরাম করে ঘুমাবো কিন্তু তা আর হলো কই আমার আরামের ঘুম হারাম করে আম্মু বলল মাসের শেষ ঘরে বাজার নেই যলদি করে বাজারটা করে নিয়ে এসে গোসল করে নামাজ পড়ে খেয়ে তারপর একেবারে লম্বা একটা ঘুম দিস, এটা কোনো কথা হলো হুম এটাই কথা সেই জন্যই তো বাজার করতে যাচ্ছি কিন্তু মাঝরাস্তায় বৃষ্টি মামা এসে বাঁধা দিলো তাই আর বাজার করা হলো নাহ কিন্তু এতো বৃষ্টি ছাতাতে তো কিছুই হবে নাহ কোথাও একটা দাঁড়াতে হবে। ইয়ানা সামনে একটা ছাউনি দেখে ওখানে গিয়ে দাঁড়ালো ছাতাটা পাশে রেখে হাত দিয়ে জামা আর চুল থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়ছিলো তখনি পাশ থেকে কেউ একজন বলল,, আরে আপনি এখানে?

কারো কথার আওয়াজ শুনে ইয়ানা পাশে তাকিয়ে দেখলো আর্দ্র দাঁড়িয়ে আছে, আরে মিস্টার ইগো ওয়ালা যে না মানে মিস্টার আর্দ্র আপনি এখানে??

দেখেছেন আপনিই কিন্তু প্রথমে ঝগড়ার উষ্কানি দেন তারপর আমি ও রেগে যায় দেন শুরু হয় ঝগড়া, ওকে আজকে আর ঝগড়া করবো নাহ, আসলে আমার একটা কাজ ছিলো সেটার জন্যই যাচ্ছিলাম কিন্তু মাঝপথে বৃষ্টি শুরু হলো তাই আর যাওয়া হলো নাহ, তা আপনি কোথায়?

আমার আর কি ছুটির দিন কোথায় ভাবলাম সারাদিন ঘুমাবো কিন্তু তা আর হলো কই আম্মু উঠিয়ে দিলো বলল বাজার শেষ তাই বাজার করতে যাচ্ছি, তা আপনার বিজনেস এর কি খবর??

এই তো মোটামুটি ভালোই চলছে আগে দুজন ছিলাম এখন তিনজন হয়েছে।

মানে??

মানে দুজন মিলে তো আর এতো কাজ করা যায় নাহ আরো লোক দরকার হয় কিন্তু এখন হাতের যে অবস্থা তাই লোক নিতে পারিনি কিন্তু মাহি বলল ও এখানে কাজ করবে এতে নাকি ওর অভিজ্ঞতা ও হবে আবার কাজ শেখাও হবে তাই আর কি ওকে নিয়েছি।

সত্যি আপনাকে দেখে শেখা উচিত বাবার এতো কিছু থাকতেও আপনি নিজে কিছু করার চেষ্টা করছেন অবশ্যই আপনি সফল হবেন। আর আমি কিন্তু হিসাব নিকাশ এ একটু ভালোই পারি কোনো কাজ থাকলে বলবেন ফ্রিতে করে দিবো।

বলছেন?

হমম,, ওদের কথার মাঝেই মেহরাব চলে আসলো তবে ইয়ানা যে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো মেহরাব সে পাশ থেকে আর্দ্র কে ডাকলো এর জন্য ইয়ানা আর্দ্র দুজনেই তাকালো মেহরাব এর দিকে আর্দ্র ইয়ানার পাশে আর ইয়ানা আর্দ্রর আগে তাই আর্দ্র মেহরাব এর দিকে তাকিয়েই আছে বৃষ্টি কমে গেছে ইয়ানা চলে যাবে সেটা বলার জন্য আর্দ্রর দিকে মাথা ঘুরাতেই অপ্রত্যাশিত ভাবে ইয়ানার ঠোঁটের সাথে আর্দ্রর ঠোঁট লেগে গেলো বিষয়টা আচমকা হওয়াই দুজনেই চমকে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহরাব আবার ডাকায় দুজনের হুশ ফিরলো ইয়ানা যলদি করে পাশ থেকে ছাতাটা নিয়ে কোনো কথা না বলেই চলে গেলো কিন্তু আর্দ্র এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে চোখ বড় বড় করে।
কিরে তুই তো আমায় এখানে ছাতা দেওয়ার জন্য ডাকলি কিন্তু এভাবে যে ফ্রিতে এতো রোমান্টিক একটা সিনেমা দেখাবি সেটা তো বললি নাহ।

কে শোনে কার কথা আর্দ্র তো শকড হয়ে এখনো ওমনেই দাঁড়িয়ে আছে, কেননা একটু আগে যেটা হলো সেটা শুধু মাএ একটা কিস নাহ এটা যেনো একটা পারমানবিক বোমার থেকেও বেশি যেটার প্রভাব কাটতেই চাচ্ছে নাহ, আর্দ্র কে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহরাব আর্দ্রর গায়ে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল, কিরে কিসি খেয়ে কি পুরাই মিসিং হয়ে গেলি নাকি।

হ হ্যাঁ ক কিছু বলছিস??

লে আমি তাহলে এতোক্ষণ খামখা একা একাই বকবক করে গেলাম। যাগ গে তুই তো বললি তুই নাকি ওই মেয়েকে পছন্দ করিস না ওনি নাকি শুধু ঝগড়া করে তাই তাহলে একটু আগে এটা কি ছিলো হমম??

আব আরে ওটা কিছুই নাহ তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই হয়নি একটু আগে যেটা হলো সেটা শুধু মাএ একটা এক্সিডেন্ট বুঝলি এখন বেশি কথা না বলে চল।

হুম এমন এক্সিডেন্ট হলে তো ইচ্ছে করে প্রতিদিনই এক্সিডেন্ট করা যায়।
,,,,,
হ্যাঁরে ইশান এই মাএ আমি যেটা দেখলাম তুই ও কি সেটাই দেখলি?

মনে তো হচ্ছে তাই নয়ত কি আর এভাবে মাঝ রাস্তায় তোর সাথে বসে থাকতাম।

আসলে হয়েছে কি আজকে শুক্রবার বিধায় ভার্সিটি অফ তাই অনু আর ইশান দেখা করতে এসেছিলো কিন্তু বৃষ্টি নামায় দুজনে ভিজে যাচ্ছিলো তাই দৌড়ে ছাউনির নিচে আসতে গেলে দেখল আর্দ্র আর ইয়ানা একে অপরকে কিস করছে আর একটু দূরেই মেহরাব হা করে সেই দৃশ্য গিলছে মানে দেখছে, ব্যাস এটাই অনু আর ইশান কে ফিট করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। ওরা আর সামনে না গিয়ে ওখানেই মাঝ রাস্তায় বৃষ্টির মধ্যে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ল যেনো ওরা দিনের বেলায় ভুল করে চাঁদ দেখে ফেলেছে,, হ্যাঁ আমরা আর্দ্র ভাই কে প্রেম করানোর কথা ভাবছিলাম কিন্তু এখানে তো দেখি আর্দ্র ভাই অনেক ফাস্ট একেবারে সোজা কিসে চলে গেলো, সালা আমি এতোদিনে যেটা করতে পারলাম না আর্দ্র ভাই সেটা এই কয়দিনে করে ফেলল??

কেনো রে তোর বুঝি আফসোস হচ্ছে?? তাহলে যা না তানিয়ার কাছে ও তোকে অনেক কিসি দিবে।

যাবোই তো তুই যদি না দিস তাহলে তো ওর কাছে যাবোই আর আমি জানি আমি শুধু একবার বললে ও একটা কেনো হাজারটা কিসি দিবে।

ছিঃ কি খারাপ তুই তোর সাথে কোনো কথায় নেই সালা চরিত্রহীন, এই বলে অনু রাগে রাগে উঠে চলে গেলো।

আরে আমি তো মজা করছিলাম তুই এভাবে রাগ করিস না দরকার হলে আমি তোকে ব্রাশ করার আগেও কিসি দেবো তাও রাগ করিস না এই অনু দাঁড়া আরে।
,,,,,
ইয়ানা সেই কখন থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর নিজের ঠোঁট দেখছে, এখানে আজকে আর্দ্র ওকে কিস করেছে যদিও সেটা এক্সিডেন্টলি তবুও কিস তো করেছে, এটা ভাবতেই ইয়ানার কেমন যেনো লাগছে, কিছু একটা মনে করে ইয়ানা দুহাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢাকলো কেনো জানি হঠাৎ করে খুব লজ্জা লাগছে,, ইস এটার পর আর ওনার সামনে যাবো কেমন করে আমি তো লজ্জায় মরেই যাবো৷

চলবে,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here