#মায়াবতী
#পর্ব:৮
তানিশা সুলতানা
তন্নি এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি তার বন্ধুদের সাথে অর্ণব আর অথৈকে পরিচয় করাচ্ছে। সবাই মিলে পিক তুলছে হাসাহাসি করছে। তন্নির অনইজি ফিল হচ্ছে। এখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
অর্ণব একটু পরপরই তন্নির মুখের দিকে তাকাচ্ছে। এক অদ্ভুত যন্ত্রণায় ফেসে গেছে অর্ণব। না পারছে কাউকে বলতে আর না পারছে সয্য করতে। সবটার জন্য দায়ী তন্নি। হ্যাঁ তন্নির দোষ। মাথা খারাপ করার মতো কেনো সেজেছিলো? কেনো অর্ণবের সামনে এসেছিলো? বেশ তো চলছিলো সব কিছু। এখন অর্ণব করবে টা কি?
এই কথা তন্নি শুনলে অবশ্যই বলতো “কেমন প্রেমিক আপনি? নিজের প্রেমিকা থাকতে অন্য নারীর দিকে নজর দেন? লজ্জা করে না আপনার?
তখন অর্ণব কি বলতো? নাহহহ লজ্জা করে না। তুমি আমাকে নিলজ্জ বানিয়ে দিচ্ছো।
অনর্বের এসব ভাবনার মাঝেই তন্নির পাশে একটা ছেলে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটা তন্নিদের বড় ভাই। অনার্সে পড়ে। তন্নি চেনে ছেলেটাকে। প্রায়দিন ওদের ক্লাস নেয়। দুর্দান্ত স্টুডেন্ট। পুরো কলেজে নাম ডাক আছে ছেলেটার।
” হেই তন্নি। ইউআর লুকিং সো কিউট।
তন্নি মুচকি হাসে।
“ধন্যবাদ ভাইয়া।
” নাচটাও কিন্তু ফাটিয়ে করেছো।
এবারেও তন্নি মুচকি হাসে।
“তন্নি তোমার সাথে আমার পারসোনালি কিছু কথা আছে। মানে বুঝতে পারছি না তুমি কিভাবে নিবে। বাট ভেরি আর্জেন্ট। এমনিতেই লেট করে ফেলেছি। পাঁচ মিনিট সময় হবে?
তন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না। সাগর নামের ছেলেটা অধিক আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব এটা দেখে রেগে যায়। কি এমন কথা বলছে?
” অথৈ তো ওনাদের সাথে কথা বলছে। অথৈয়ের কথা শেষ হোক।।তারপর নায়ত আপনার কথা শুনবো।
তন্নি বলে ওঠে। সাগর হাসে।
“কাম অন তন্নি। সব সময় অথৈ কেনো লাগবে? আমাকে চিনো না তুমি?
তন্নি শাড়ির আঁচল কচলাচ্ছে আর অথৈয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
অর্ণব ওদের এক্সকিউজ মি বলে চলে আসে।
” আরে অথৈয়ের তন্নি। তোমার মাথা ঘুরছে? বমি বমি পাচ্ছে? শরীর চলছে না? এ বাবা চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমায়? এখুনি তো পড়ে যাবে। এতোটা শরীর খারাপ তোমায়।
অর্ণব বিচলিত হয়ে বলে। তন্নি ঘাবড়ে যায়। সাগর ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে।
“ইয়ে মানে আমি তো ঠিক
তন্নি আমতা আমতা করে বলতে যায়।
” ঠিক নেই তুমি? আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছি। তোমার তো একটা রোগ আছে। এভাবে কিছুখন থাকার পরে ঠাসস করে পড়ে যাওয়ার।এখুনি পড়ে যাবে নিশ্চয়।
অর্ণব তন্নির হাত ধরে বলে। তন্নি ইতস্তত বোধ করছে। কিছু বলতেও পারছে না। খালি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“তন্নি তাহলে চলো আমি তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
সাগর বলে ওঠে।
” তোমার ওয়েট কতো?
অর্ণব ফট করে সাগরকে প্রশ্ন করে। সাগর ভ্রু কুচকে তাকায়।
“কেনো?
” বলো তো আগে।
“৬৮
” আমার ৮০। তন্নির ৫৬। এবার ভেবে দেখো অথৈয়ের তন্নি ঠাসস করে পড়ে গেলে তুমি তাকে কোলে তুলতে পারবে? নিজেই কুপোকাত হয়ে পড়ে যাবে। শেষমেশ আধমরা ছেমড়ি পুরোপুরি মরে যাবে।
তার থেকে ভালো তুমি গিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে পড়ো। বেশি বেশি খেতে থাকো। তারপর যখন তোমার ওয়েট ৮০ হয়ে যাবে তখন এসো পৌঁছে যেতে।
কেমন?
এখন টাটা বাই বাই
আবার যেনো দেখা না পাই।
বলেই অর্ণব তন্নির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে। সাগর ভেবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
নিধি এটা দেখতে পায়। সোজা এসে দাঁড়ায় ওদের সামনে। নিধিকে দেখে অর্ণব থেমে যায়।
“এই মেয়েটা কে অর্ণব?
” ও?
ও হলো
অথৈয়ের ফ্রেন্ড। মেয়েটা বেশ ভালো। কি হয়েছে বলো তো?
থাক তুমি বুঝবে না। শর্টকাট এ বলি?
আমাকে যেতে হবে ওকে নিয়ে।
নিধি বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। অর্ণবের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
তন্নি অর্ণবের হাতের ভাজ থেকে নিজের হাত ছোটানোর চেষ্টা করতে থাকে। তন্নি যত ছাড়াতে চাইছে অর্ণব তত শক্ত করে ধরছে।
“অর্ণব ক্লিয়ার করো বলো।
” আমার হাতটা ছাড়ুন ভাইয়া।
তন্নি ফিসফিস করে বলে।
অর্ণব বাঁকা চোখে এক পলক তাকায় তন্নির দিকে।
“নিধি হয়েছে কি
বলতে বলতে তন্নির হাতটা ছেড়ে দেয়। শাড়ির আঁচলে বেঁধে ঠাসস করে পড়ে যায় তন্নি। সকলের দৃষ্টি পড়ে তন্নির দিকে। নিধিও চমকে ওঠে।
তন্নি লজ্জায় ব্যাথায় দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে।
” এটাই হয়েছে। আমি ছেড়ে দিলেই এ পড়ে যাবে। বুঝেছো নিধি? না বুঝলে বাকিটা তোমায় পরে বোঝাবো।
শান্ত গলায় বলে তন্নিকে কোলে তুলে নেয় অর্ণব। তন্নি চমকে অর্ণবের শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। মনের কোণে অর্ণবের জন্য এক রাশ ঘৃণা তৈরি হয়ে যায়। ঠাটিয়ে কয়েকটা চর মারতে ইচ্ছে করছে তন্নির। কিন্তু এই স্বভাবটা তন্নির নেই। সে আপাতত কাঁপছে। এটা লজ্জায় ঘৃণায়।
অর্ণব ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। পেছনে ফেলে গেছে বিষ্ময়কর নিধিকে।
নিধির বুকটা কেঁপে ওঠে।
গাড়িতে তন্নিকে বসিয়ে দেয় অর্ণব।
এবং সাথে সাথে সরে আসে না। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে থাকা তন্নিকে দেখতে থাকে।
“জেলাসি ঠেলার মতো মানুষ আমি না। যা আমায় জেলাস ফিল করায় তা আমি বুকের বা পাশে আলো বাতাসহীন জায়গায় যত্নে পুষে রাখতে জানি।
নেক্সট টাইম এসব আজাইরা বিহেভিয়ার যেনো না দেখি।
মে*রে একদম আমার রুমে পুতে রাখবো।
শান্ত গলায় হুমকি দিয়ে সরে আসে অর্ণব। তন্নি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ভাবতে থাকে। কি বললো?
অর্ণব অথৈকে কল করতে করতে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। তন্নি আড়চোখে তাকায়। লোকটা কি রেগে গেছে? চোখ মুখ কেমন দেখাচ্ছে।
সমস্যা কি এর?
” আমি রিকশা করে যেতে পারবো।
তন্নি এক আকাশ সমান সাহস নিয়ে বলে বসে।
অর্ণব দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ ফেলে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় তন্নির দিকে।
“যেতে পারবে? আমি ভেবেছিলাম পারবে না।
তন্নি এবার কি বলবে খুঁজছে।
” তোমাকে এখন বিয়ে করা যাবে?
তন্নি বড়বড় চোখ করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
চলবে