#মায়াবতী
#পর্ব:১০
#তানিশা সুলতানা
“হেই মায়াবতী এতো দ্রুত পা চালিও না। রাস্তা ব্যাথা পাবে তো।
অর্ণব দৌড়ে এসে তন্নির সমান সমান হয়ে বলে। তন্নি আড়চোখে এক পলক তাকায় অর্ণবের দিকে। এই ছেলেটা এতো সকালে এই রাস্তায়? খানিকটা ঘাপলা লাগে তন্নির। কিন্তু পাত্তা দেয় না। আসতেই পারে। হয়ত মনিং ওয়ার্ক করছে।
” হেই তুমি কি আমায় ইগনোর করছো? তাকালে কিন্তু কথা বললে না। পারফেক্ট ইগনোর এটাকে বলে। এর পানিশমেন্ট কি হতে পারে ভাবতে পারছো তুমি?
তন্নির সামনে গিয়ে পেছন দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলে অর্ণব। তন্নি ফোঁস করে একটা শ্বাস টানে। ছোটছোট চোখ করে তাকায়। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর কোঁকড়া চুলে লোকটাকে দেখতে মন্দ লাগে না। নিধি আপুর সাথে মানাবে খুব। আনমনে হাসে তন্নি। কিন্তু মুখে গম্ভীর ভাবটা বজায় রাখে।
“এটা কি ধরণের বিহেভার ভাইয়া? পথ আটকে হাঁটছেন কেনো? এপাশে জায়গা আছে ওপাশে জায়গা আছে।
” তো তুমি রাস্তাকে ব্যাথা কেনো দিচ্ছো? রাস্তা তো ভেঙে যাবে মায়াবতী। আস্তে হাটো। আমি জাস্ট রাস্তার জীবনটা বাঁচাতে তোমাকে থামাতে চাইছি। কিন্তু তুমি তো টর্নেডোর মতো আমাকে সহ উড়িয়ে নিতে চাইছো।
চোখ বড়বড় করে বলে অর্ণব।
“তন্নি
তন্নি নাম আমার। মায়াবতী আবার কি? নামটা উচ্চারণ না করতে পারলে এই মেয়ে বলেও ডাকতে পারেন।
“টমেটো নাম তোমার? আই হেইট টমেটো। টমেটো বলে ডাকতে বলো না প্লিজ। পারবো না। মায়াবতী বলেই ডাকবো।
“ভাইয়া আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেতে হবে আমায়। পথ ছাড়ুন প্লিজ।
দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে তন্নি।
” বয়ফ্রেন্ড ওয়েট করছে?
অর্ণবও দাঁড়িয়ে যায়।
“জ্বী
কাঠকাঠ গলায় বলে তন্নি। অর্ণব ভ্রু কুচকে ফেলে।
” দেখো মেয়ে
আঙুল তুলে বলে অর্ণব
“দেখান
হকচকিয়ে যায় অর্ণব। আঙুল নামিয়ে নেয়। চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে করে ফেলে।
” কথা শিখে গেছো?
“আট মাস বয়স থেকেই।
অর্ণব এবার কি বলবে? এই মেয়েটা পকপক শিখলো কিভাবে?
” আমার সাথে এভাবে কথা বলবে না একদম। একদম ওই বড় গাছটার মগ ডালে ফিক্কে দিবো তোমায়। চিনো তুমি আমায়? আমার মুখ
” ওই দেখুন নিধি আপু
তন্নি কিছুটা জোরে বলে। অর্ণব “কই কই ” বলে পেছনে তাকায়। এই ফাঁকে তন্নি ভৌ দৌড় দেয়। অর্ণব হকচকিয়ে যায়। মেয়েটা বোকা বানালো ওকে?
এক দৌড়ে অথৈদের বাড়িতে চলে আসে তন্নি। দারোয়ান গেইট খুলে চেয়ারে বসেই ঘুমচ্ছে। তন্নি ভেতরে ঢুকে যায়। আশা রান্না করছে আনোয়ার খবরের কাগজ পড়ছে। অথৈ এখনো ঘুম থেকেই উঠে নি।
তন্নি মাথার ঘোমটা ঠিক করে আনোয়ার চৌধুরীর সামনে যায়।
“গুড মর্নিং আংকেল।
আনোয়ার তন্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
” গুড মর্নিং মা। বসো আমার পাশে।
নিজের পাশে জায়গা করে দিয়ে বলে আনোয়ার। তন্নি বসে পড়ে। দুজন মিলে গল্প করতে থাকে। তারিকের কথা জিজ্ঞেস করে আনোয়ার।
এরই মধ্যে অর্ণব চলে আসে। ঠাসস করে বসে পড়ে ওদের মুখোমুখি। ঘেমে নেয়ে একাকার। ছোট হাতার টিশার্টটা একদম ভিজে গেছে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে। বড়বড় কোঁকড়া চুল গুলো কপালে পড়েছে। গোলাপি ঠোঁট জোড়া একটু পরপরই জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে।
আনোয়ার ছেলের দিকে তাকায়। অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে তন্নির দিকে। তন্নি তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়। মুখ বাঁকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয় তন্নি।
“কোথায় ছিলে তুমি?
আনোয়ার জিজ্ঞেস করে।
” বউ আনতে গেছিলাম।
“তো খালি হাতে ফিরলে? কোনো মেয়ে পাত্তা দিলো না? উল্টে দৌড়ানি দিলো?
তন্নি মুখ টিপে হেসে ওঠে। অর্ণব অপমানিত হয়।
“আমাকে পাত্তা দিবে না? আমি কতো স্মার্ট হ্যান্ডসাম, ড্যানিশ দেখো না তুমি? মেয়েরা তো আমার পেছনে লাইন লাগিয়ে থাকে।
বেশ ভাব নিয়ে বলে অর্ণব।
” কই দেখি না তো?
আনোয়ার পেছনে তাকিয়ে বলে। তন্নি খিলখিল করে হেসে ওঠে। অর্ণব থতমত খেয়ে যায়।
“এদের বলবেন না আংকেল। ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। একদম পরির মতো দেখতে। আমি দেখেছি।
তন্নি হাসি থামিয়ে বলে। অর্ণব বিরক্ত হয়। আনোয়ার ঠাস করে খবরের কাগজ নামিয়ে ফেলে। তন্নির দিকে মুখ করে বসে।
” গার্লফ্রেন্ড? আমার ছেলের? নাম কি? বাসা কই? বাবার নাম কি? আমি আজকেই যাবো বউমা দেখতে। ঠিকানা দাও আমায়।
এক সাথে এতো প্রশ্ন করা দেখে ঘাবড়ে যায় তন্নি। হাসি মুখটা চুপসে যায়। আড়চোখে অর্ণবের দিকে তাকায় এক পলক।
“আংকেল অথৈ বলছিলো আজকে নিধি আপুকে নিয়ে আসবে আপনাদের বাড়িতে।
” তাহলে আজকে আর আমি অফিসে যাচ্ছি না।
কই গো তুমি? বাড়িতে বউমা আসবে আজকে।
আনোয়ার আশাকে ডাকতে ডাকতে চলে যায়। তন্নি বুকে হাতে দিয়ে জোরে শ্বাস টানে।
“খুব দরকার ছিলো বাবাকে এটা বলার?
অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে।
” আপনার রেপুটেশন বাঁচালাম।
বলেই তন্নি যেতে নেয় অর্ণব হাত ধরে তন্নির। তন্নি কপাল কুঁচকে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণবের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চোয়াল শক্ত।
“বলেছিলাম তোমায় রেপুটেশন বাঁচাতে? পাকনামি করতে কে বলেছে তোমায়? এবার সামাল দিলো কিভাবে?
সবটা বিগড়ে দিলে তুমি।
ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। তন্নি খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। অর্ণবের থেকে হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরা মুচড়ি করতে থাকে।
” ভাইয়া প্লিজ ছেড়ে দিন। কেউ দেখে ফেললে বেপারটা বাজে দেখাবে।
মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে তন্নি।
“ডোন্ট কল মি ভাইয়া। আজাইরা
তখন থেকে শুধু ভাইয়া ভাইয়া।
তোর কোন সম্পর্কের ভাই আমি? একদম মে*রে তক্তা বানিয়ে দিবো।
তন্নির এবার চোখে পানি চলে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায়।
” কেউ দেখে ফেললে কি হবে? দেখুক। ভাবতে বলেছি তোমায়? সারাক্ষণ বেশি বুঝো তাই না?
অর্ণব তন্নির চোখে পানি দেখে তন্নির হাতটা ছেড়ে দেয়। তন্নি চোখের পানি মুছে এক দৌড়ে অথৈয়ের রুমে চলে যায়। অর্ণব নিজের চুল খাঁমচে ধরে বসে পড়ে।
” এভাবে ধমক দেওয়া একদম ঠিক হয় নি। ও ভয় পেয়ে গেছে। ইসস কাঁদিয়ে দিলাম আমি। সরি জান। আর কখনো এমন করবো না প্রমিজ।
অর্ণব বিরবির করে বলে।
তন্নি অথৈয়ের রুমে এসে দেখে কোলবালিশ জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমচ্ছে অথৈ। তন্নি অথৈয়ের পাশে বসে চোখের পানি মুছে ফেলে।
“আপনার সাথে আমি আর কখনো কথা বলবো না।
বিরবির করে বলে তন্নি।
তারপর অথৈকে ডাকতে থাকে।
” অথৈ ওঠ না। এতো আর্জেন্ট ডাকলি কেনো আমায়? ওঠ না।
অথৈয়ের হাত ধরে নারাতে নারাতে বলে তন্নি। অথৈ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
“তুই এতো সকালে?
ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে অথৈ।
” তুই ই তো মেসেজ করলি। তাই তো চলে আসলাম।
“আমি কখন? আমি তো মেসেজ করি নি। ভেবেছিলাম ঘুম থেকে উঠে করবো।
তন্নির কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। অথৈ মেসেজ করে নি? তাহলে কে করলো?
” ভালো করেছিস এসে। দুই মিনিট বস। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
বলেই অথৈ চলে যায় ওয়াশরুমে। তন্নি ভাবতে থাকে।
এরই মধ্যে হুরমুরিয়ে কেউ রুমে ঢুকে পড়ে।
চলবে