#মায়াবতী
#পর্ব:১১
#তানিশা সুলতানা
অর্ণব রুমে ঢুকতেই তন্নি হুরমুরিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে ভীষণ রাগ হয় অর্ণবের। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।
এভাবে ইগনোর করলো?
অর্ণব কি এখন জ্বালাতে এসেছিলো না কি? এসেছিলো তো তন্নির ছবি গুলো দিতে।
বা হাতে থাকা খামটার দিকে তাকায় অর্ণব। ইচ্ছে করছিলো খামটাকে মুচরে ফেলে দিতে। কিন্তু এতে তন্নির ছবি গুলো নষ্ট হয়ে যাবে তাই আর করে না।
তখনই অথৈ বেরিয়ে আসে।
“ভাইয়া তুই এখানে? তন্নি কোথায়?
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলে অথৈ।
” আমার মাথায় তন্নি। দেখতে পাচ্ছিস না?
অর্ণব রেগে ধমক দিয়ে বলে। অথৈ চমকে ওঠে।
“তোর তন্নিকে বলে দিবি। আমার সাথে যেনো বেশি ঢং না করে। কি মনে করে নিজেকে? একটা থা*প্প*ড় দিলে আরেকটা থা*প্প*ড় দেওয়ার জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে আমাকে এটিটিউট দেখায়।
বকতে বকতে চলে যায় অর্ণব। অথৈ হা করে তাকিয়ে থাকে। কি হলো বেপারটা? তন্নির ওপর এতোটা ক্ষেপলো কেনো?
তন্নি সোজা আশা বেগমের কাছে চলে এসেছে। সে বিরিয়ানি রান্না করছে। সাত সকালে বিরিয়ানি দেখে তন্নি খানিকটা অবাক হয়ে। এতো বড়লোক মানুষ। তারা ব্রেকফাস্টে বিরিয়ানি খায়?
আশা তন্নিকে দেখে মুচকি হাসে।
” আন্টি আমি হেল্প করবো তোমায়?
“না না সোনা
হেল্প করতে হবে না। তুই বস তো আমার পাশে।
মোড়া টেনে দিয়ে বলে আশা। তন্নি বসে পড়ে।।
” আমার ছেলেটা হয়েছে একটা বজ্জাতের হাড্ডি। সারাক্ষণ জ্বালিয়ে মারবে আমায়। কখন কি করবে না করবে আল্লাহ জানে। বিদেশে থাকতে পরাণে পানি থাকতো না আমার। সারাক্ষণ মনে হতো পাগলটা কি করছে না করছে।
এখন আমার কাছে এসেছে তবুও চিন্তা দূর হচ্ছে না। সারাক্ষণ টইটই করে ঘুরে বেড়াবে।
(তন্নি মন দিয়ে আশা বেগমের নালিশ শুনছে।)
ছেলেটাকে বিয়ে দিয়ে যদি একটু ঘরে বাঁধতে পারি তবেই আমার শান্তি।
“ঠিক ভেবেছেন আন্টি। আপনার বজ্জাতের হাড্ডিকে বিয়ে দিয়ে দিলে ঘরে বসবে।
তন্নি কিটকিটিয়ে হেসে উঠে বলে। আশা বেগমও হাসে।
ফ্রিজ থেকে কেক বের করে তন্নিকে দেয়৷ তন্নি কেক খেতে থাকে।
অথৈ চলে আসে কিচেনে। প্রথমেই তন্নির কাছে মুখ এগিয়ে হা করে। তন্নি কেক খাইয়ে দেয়। অথৈ মুখে পুরে তন্নির গা ঘেসে বসে।
তারপর তিনজন গল্প করতে থাকে।
অর্ণব ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। রাগটা এখনো পরে নিয়ে। তন্নিকে এর উচিৎ জবাব দেওয়ার পরেই রাগ কমবে। তার আগে না।
ধুপধাপ পা ফেলে খাবার টেবিলে বসে পড়ে।
“মাম্মা খেতে দাও।
চিৎকার করে বলে। আশা বেগম খাবার বারছিলো। তন্নি আর অথৈ ফোন দেখছিলো। অর্ণবের চিৎকারে কেঁপে ওঠে। তাকায় অর্ণবের দিকে।
” কি রে মা কে আবার তুই মাম্মা বলিস কবে থেকে?
অথৈ খানিকটা অবাক হয়ে বলে। তন্নি ঠোঁট টিপে হাসছে। মাম্মা বলাটাতে তার খুব হাসি পাচ্ছে।
“আজ থেকে বলি আমার মা আমি তাকে আম্মু, মাম্মা, মম, মামনি যা খুশি বলবো। তোর কি? তুই বলার কে?
অথৈকে রীতিমতো ধমক দিয়ে বলে অর্ণব। অথৈ অবাকের ওপর অবাক। এতোগুলো ধমক এক সাথে কখনোই দেয় নি অর্ণব। আজ কি হলো তার?
অথৈ আরও কিছু বলতে যায় তন্নি থামিয়ে দেয়। আশা তারাহুরো করে খাবার বারে।
আর্থি হেলেদুলে এসে ঠাসস করে অর্ণবের এক পাশে বসে পড়ে। আনোয়ার বাজার নামিয়ে একটা চেয়ার দখল করে নেয়। অথৈ অর্ণবের ওপর রেগে আছে তাই সে অর্ণবের পাশে বসবে না। মাঝখানে একটা চেয়ার ফাঁকা রেখে বসেছে সে। এমনকি গালটাও ফুলিয়ে রেখেছে।
তন্নি এবার কি করবে? অর্ণবের পাশে বসবে?
” তন্নি দাঁড়িয়ে কেনো তুই? বস।
আশা প্লেট ঠিক করতে করতে বলে।
“বসে খেতে হয় এটা জানে না কি ও? গাধা
অর্ণব বলে ফেলে। তন্নি দাঁত কটমট করে তাকায় অর্ণবের দিকে।
” তোর থেকেও বেশি জানে ও। তুই কি বলদ।
আর্থি রেগে বলে।
“ও গাধা হলে আমি তো বলদই হবো। তাই না?
এটা আবার বলার কি হলো?
আর্থি ফোঁস করে শ্বাস টানে। দিন দিন চরম লেভেলের ঘাড় ব্যাঁকা হয়ে যাচ্ছে তার ভাই।
” তন্নি বস তো।
পাগলের কথায় কান দিতে নেই।
আশা তন্নির হাত ধরে টেনে অর্ণবের ঠিক পাশের চেয়ারেই বসিয়ে দেয় ওকে। তন্নি ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে।
তন্নি পাশে বসাতে অর্ণব একটু নরেচরে বসে। তন্নির গা থেকে খুব সুন্দর একটা স্মেল আসছে। অর্ণব নাক টেনে টেনে ঘ্রাণ নিতে থাকে।
আশা সবার প্লেটে খাবার দিয়ে দেয়।
অথৈ তন্নিকে এটা সেটা বলছে আর মুখে খাবার তুলছে। তন্নি শুনছে আর অল্প অল্প করে খাচ্ছে। আসলে তন্নি এভাবেই খায়। খাওয়াটা হলো শান্তির জিনিস।
শান্তি করে আস্তে আস্তে খেতে হয়।
অর্ণব খুব ভালো করে তন্নির খাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে। আহহা হাতে গোনা কয়েকটা ভাত মুখে পুরছে সাথে একটুখানি আলু আর একটুখানি মাংস।
“গাধা খেতে পর্যন্ত জানে না।
অর্ণব বিরবির করে বলে। তন্নির কানে এটা পৌঁছায় না।
অর্ণব এবার একটা কাজ করে ফেলে। তন্নির পায়ের ওপর নিজের পা তুলে দেয়। নিজের পায়ের পাতা তন্নির পায়ের ওপর রাখে। তন্নি চমকে ওঠে। খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। হুরমুর করে দাঁড়িয়ে পড়ে। সবাই তাকায় তন্নির দিকে। অর্ণব বিরক্ত হয়। আরে বাবা একটু তো টাচই করেছে। মুখ বুজে সয্য করা যেতো না?
” কি হলো অথৈয়ের তন্নি। পায়ে ফোঁসকা পড়েছে?
অর্ণব দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“আমি সোফায় বসে খাবো।
বলেই প্লেট নিয়ে চলে যায় তন্নি। অর্ণব আবারও হতাশ হয়। একে কি করে বশ করবে? কি করে এর মন ওবদি পৌছাবে?
তন্নির দেখাদেখি অথৈও প্লেট নিয়ে সোফায় চলে যায়। অর্ণব খাওয়া বাদ দিয়েই চলে যায়। পেছন থেকে আনোয়ার আশা আর্থি সবাই ডাকে কিন্তু অর্ণব ফিরেও তাকায় না।
তন্নি সেদিকে পাত্তা দেয় না।
রুমে গিয়ে অর্ণব ভাংচুর শুরু করে দেয়। এটা সেটা ফেলে দিচ্ছে।
চমকে ওঠে সবাই। আশা আর আর্থি দৌড়ে চলে যায় ওপরে। আনোয়ার চিন্তিত মুখে যায়।
তন্নি ভয় পেয়ে যায়। পা সরিয়ে নেওয়ার জন্যই কি এতোটা রেগে গেলো?
অথৈ আর তন্নিও যায়।
অর্ণব দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আশা কান্না করছে আর অর্ণবকে দরজা খুলতে বলছে। আর্থি আর অথৈও কাঁদছে আর ভাইয়া বলে ডাকছে। ভেতর থেকে একটার পর একটা ভাংচুরের শব্দ আসছে। আনোয়ার ফ্লোরে বসে পড়েছে।
” বাবা তোর লেগে যাবে।
বিরবির করে এটাই বলছেন তিনি। তন্নির ভীষণ খারাপ লাগছে। এই মানুষ গুলো কতোটা ভালোবাসে অর্ণবকে।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে যায়।
কেনো জানি তন্নির মনে হচ্ছে ও ডাকলে দরজা খুলবে।
ওড়নার কোনা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে তন্নি দরজার সামনে দাঁড়ায়।
“শুনছেন? দরজাটা খুলুন প্লিজ।
কাঁদো কাঁদো গলায় রিনরিনিয়ে বলে তন্নি। সাথে সাথে থেমে যায় অর্ণব। মিনিট পেরুনোর আগেই দরজা খুলে দেয়। আশা আর্থি আর অথৈ হুরমুরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। অথৈ ভাইকে জড়িয়ে ধরে। অর্ণব এক হাতে অথৈকে আগলে রেখেছে। আর্থি মাথা নিচু করে কাঁদছে।
আনোয়ার উঠতে পারে না। সে একই ভাবে বসে আছে। আর তন্নি দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
” আই এম ওকে। কাঁদিস না।
অর্ণব গম্ভীর গলায় বলে। আর্থির নজর পড়ে অর্ণবের হাতের দিকে। টপটপ করে র*ক্ত ঝড়ছে সেখান থেকে।
“ভাইয়া তোর হাত।
চিৎকার করে বলে আর্থি। আনোয়ার এটা শুনেই দৌড়ে চলে আসে রুমে। আশার কান্নার আওয়াজ বেজে যায়। অথৈ দৌড়ে চলে যায় ফাস্ট এইচ বক্স আনতে।
আনোয়ার অর্ণবকে ধরে বসায়।
অর্ণবের নজর তন্নির দিকে। আর তন্নি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়ে গেলো এটা?
অথৈ হাতে বক্স নিয়ে আবারও দৌড়ে এসে অর্ণবের পায়ের কাছে বসে পড়ে।
” তন্নি একটু হেল্প কর আমায়।
অথৈ কাঁদতে কাঁদতে বলে। তন্নি মাথা নিচু করে এগিয়ে আসে। অথৈয়ের পাশে হাঁটু মুরে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে অর্ণবের হাত স্পর্শ করে। অর্ণব চোখ বন্ধ করে ফেলে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসে দেখা যায়।
খুব যত্ন নিয়ে তন্নি অর্ণবের হাত পরিষ্কার করে দেয়। আনোয়ার ডাক্তারকে কল করতে করতে বেরিয়ে যায়।
চলবে