#মায়ায়_জড়ানো_সেই_তুমি
#পার্ট_৩৫
জাওয়াদ জামী
সারারাত দুজন পুরুষ – রমনীর মধুমাখা আদর আর প্রেমোহিল্লোলে কাটে। সকালে ঘুম থেকে জেগে তিয়াসার দম বন্ধ হবার জোগাড়। সাইফ ওকে জাপটে ধরে ওর শরীরের উপর শুয়ে আছে । তিয়াসার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তিয়াসা নড়াচড়া করার অবস্থাতে নেই।
” উফ্ কি কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাচ্ছেরে বাবা! এইযে গোমড়ামুখে পেঁচা এবার তো আমাকে ছাড়ুন। কত বাজে সে খেয়াল কি আপনার আছে! ”
” উমমম, কি হয়েছে রসগোল্লা বউ। এভাবে মোচড়ামুচড়ি করলে আমি ঘুমাব কেমন করে। চুপচাপ শুয়ে থাক আর আমাকেও ঘুমাতে দাও। ”
” আপনাকে ঘুমাতে কে বারণ করেছে। আপনি যত ইচ্ছে ঘুমান কিন্তু আমাকে আটকে রেখেছেন কেন! আর এত বেলা পর্যন্ত কিসের ঘুম শুনি? ”
” এত বেলায় কিসের ঘুম তুমি বোঝনা। রাতে একটুও ঘুমাতে দিয়েছ! এখন কথা না বলে আমাকে ঘুমাতে দাও আর নিজেও ঘুমাও। ”
সাইফের কথা শুনে তিয়াসার চোখ কপালে উঠে। এই লোক বলে কি! আমি নাকি তাকে ঘুমাতে দিইনি! ছিহ্ কি লজ্জাটাই না দিল।
” এই বাজে বকবেননা একদম। আমি কি একটাবারও আপনাকে ঘুমাতে নিষেধ করেছি ! নিজেই সারারাত আমাকে নির্ঘুম রেখে এখন আমার উপরই দোষ চাপাচ্ছেন! আমি আপনাকে ঘুমাতে না দেয়ার কে শুনি? ”
” তুমিই তো সব বউ। তুমি না থাকলে কার সাথে রাত জাগব। তুমিই তো আমার রাত জাগার সাথী। আমার যত রোগের ঔষধ। তোমাকে দেখলে এত প্রেম প্রেম পায় কেন বলত? ”
” এবার তো ছাড়ুন। সেই কখন সকাল হয়েছে। সবাই কি ভাবছে বলুনতো। আপনার প্রেম প্রেম পাবার আরও অনেক সময় আছে। আজ আপনার অফিস নেই? ”
” উহু, আমার এখনই ভিষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে। উথাল-পাতাল, বাঁধ ভাঙ্গা প্রেম এসে ভীড় করেছে শরীরের শিরায়-উপশিরায়। এই বাঁধ ভাঙ্গা প্রেম শুধু তোমার মাঝেই বিলীন হতে চাচ্ছে। এবং এখনই। আমি আবার নগদে বিশ্বাসী। বাকি বলে অভিধানে যা কিছু ছিল রাতেই সেগুলো নিস্বেশ হয়েছে। এখন কোন কথা না বলে আমার এই উথাল-পাতাল প্রেমে সাড়া দাওতো। ” তিয়াসাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অধরে অধর আঁকড়ে ধরে সাইফ। সাইফের এই দমবন্ধ করা ভালোবাসায় সাড়া না দিয়ে তিয়াসার কোন উপায় নেই।
” এবার তো আমাকে ছাড়ুন। অনেক বেলা হয়েছে। আমি নিচে যাব কেমন করে ভাবতেই লজ্জা লাগছে। ”
সাইফ তিয়াসাকে ছেড়ে দিয়ে বুকে ভর দিয়ে শোয়। তার চোখে প্রচুর ঘুম। এখন একটু ঘুমাবে।
” এই, আপনি আবার শুচ্ছেন কেন! আজ কি অফিসে সত্যিই যাবেননা! উঠুন বলছি। ” তিয়াসা জোরে ধাক্কা দেয় সাইফকে।
” আমার বউয়ের কি ওয়াশরুমে রোমান্স করার সাধ জেগেছে! আমাকে ছাড়া বোধহয় ওয়াশরুমে যেতেই ইচ্ছে করছেনা। তাই এত ডাকাডাকি করছে। ওকে, আমি রাজি। তুমি চাইলে ওয়াশরুমকেও ফুলের বিছানা বানিয়ে দিব। ” সাইফের এমন নির্লজ্জ কথায় তিয়াসার চোখ বড়, মুখ হা হয়ে গেছে। এদিকে সাইফও উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
” এই নাআআআ। আপনার যত ইচ্ছে ঘুমান। আমি আর ডাকবনা। ” বলেই ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়। দরজা লক করার পর মনে হয় কাপড় না নিয়েই ঢুকে পরেছে। আস্তে করে দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে সাইফ অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে আছে। পা টিপে বের হয়ে কাপড় নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
গোসল সেরে এসে দেখল সাড়ে দশটা বাজে। তিয়াসার ভিষণ লজ্জা লাগছে নিচে সবার সামনে কিভাবে যাবে। অনেক ভেবেচিন্তে লজ্জাকে একপাশে রেখে নিচে নামে। শায়লা চৌধুরী তিতিক্ষাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। তানিশা রান্নাঘরে কি যেন করছে।
তিয়াসা শ্বাশুড়ির কাছে এসে তিতিক্ষাকে আদর করছে।
” আমার ছোট বউরানীকে আজ দেখছি খুব খুশি খুশি লাগছে। তা আমার ছোট পুত্র কি আজ অফিসে যাবেনা? ” শায়লা চৌধুরী তিয়াসাকে দেখে যা বোঝার বুঝে নিয়েছেন৷
তিয়াসা শ্বাশুড়ির এরূপ কথা শুনে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। শ্বাশুড়ির কথার উত্তর দেয়ার মত অবস্থায় সে নেই।
” থাক এত লজ্জা পেতে হবেনা। এমন দিন আমাদেরও গেছে। মেয়ে দেখছি লজ্জাবতী লাজুকলতা মত কুঁকড়ে যাচ্ছে! তোমাদের খাবার টেবিলে রাখা আছে। এখন খেয়ে নাও, অনেক বেলা হয়েছে। ”
তিয়াসা খাওয়ার পর তানিশাকে কাজে সাহায্য করছে। সাইফ আরও দেড় ঘন্টা পর নিচে আসে।
” ভাবি ক্ষুধা লেগেছে খেতে দাও। ”
” আমাকে ডাকছ কেন ভাই! তোমার বউ আছে তাকে বল। এতদিন তো ভাবি ভাবি করেছ। এখন ভাবিকে রক্ষে কর। আজ থেকে বউ করবে বুঝলে? বেশি ভাবি ভাবি করলে বউয়ের রা*গ হতে পারে। ” তানিশা হাসছে আর বলছে।
” কেন ভাবি আমার বউ কি তোমাকে হিং*সা করে! অবশ্য ঐটার দ্বারা হিং*সা করা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। ঐটা ওয়ান পিস বুঝলে?কিভাবে জামাইকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে হয় তা ভালোই জানে। সারা দেশ খুঁজলেও তার মত বউ খুঁজে পাবেনা। আমার জীবনটাই প্যারাময় বুঝছ ভাবি। ” তানিশার দুষ্টুমির সাথে সাইফ পুরোপুরি সায় দেয়।
তিয়াসা নিজের বোন আর নিজের জামাইয়ের মুখে এসব শুনে তব্দা খেয়ে যায়। ‘ এ-ও কি সম্ভব! এরা না আমার নিজেরই সব! তাও আমাকেই খোঁ*চা*চ্ছে! ‘ মনে মনে হাজারটা গালি দিতে থাকে সাইফকে।
” তিয়াসা সাইফকে খাবার বেড়ে দে। ওর ক্ষু…..”
তানিশা কথা শেষ করতে পারেনা। খেঁকিয়ে উঠেছে তিয়াসা।
” তোমার দেবরকে তুমিই খাবার বেড়ে দাও। আমার শখ জাগেনি ঐ গোমড়ামুখো পেঁচাকে খেতে দেওয়ার। পারলে তুমিই মুখে তুলে খাইয়ে দাও। কত বড় সাহস আমাকে বলে ওয়াস পিস! আমি নাকি প্যারা! ”
রা*গে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে তিয়াসার।
” সাইফ, তুই এভাবে বলছিস কেন মেয়েটাকে? সারা দেশ খুঁজলেও ওর মত একটাও বউ খুঁজে পাবিনা বুঝেছিস। অযথা আমার মেয়েটাকে জ্বালাবিনা বলে দিলাম। ” তিয়াসার রা*গ দেখে ধমকে উঠেন শায়লা চৌধুরী। এখন যদি ওর পক্ষ নিয়ে সাইফকে না ধমকান তাহলে তিয়াসার রা*গ আরও বাড়বে বেশ বুঝতে পারছেন তিনি।
” ছোট বউমা তুমিই ঐ উজবুককে খেতে দাও। ওকে বুঝিয়ে দাও তুমিই ওর জন্য পারফেক্ট। ”
তিয়াসা শ্বাশুড়ির কথা অমান্য করেনা।
দুই বোন মিলে কাজ সেরে নিয়ে যে যার রুমে আসে। সাইফ ল্যাপটপে কাজ করছে। তিয়াসা রুমে এসে একবারও তাকায়না সাইফের দিকে। নিজের মনে ঘর গোছাতে থাকে। সাইফ আড়চোখে দেখছে ওকে।
” টুনির মা রা*গ করেছে বুঝি। ” সাইফের কথা শুনে এদিকওদিক তাকায় তিয়াসা। কাউকে না দেখে মনে মনে ভাবে, এই টুনির মা আবার কোথায় থেকে টপকাল! হুঠ করেই বুঝে নেয় সাইফ ওকে খোঁচাচ্ছে। ওকেই টুনির মা বলেছে।
আর যাবে কোথায় দপ করে আ*গু*ন জ্ব*লে উঠে তিয়াসার মাথায়। কিন্তু পরক্ষণেই সাইফের কথার মানে বুঝতে পেরে নিমেষেই রা*গ পানি হয়ে যায়। কিন্তু সাইফকে বুঝতে দেয়না। নিজের মত কাজ করতে থাকে।
” ও টুনির মা। এদিকে একটু তাকাও। দেখ তুমিহীন তোমার এই নিষ্পাপ জামাই কত কষ্টে দুপুর কাটাচ্ছে। এভাবে রা*গ করে থাকলে টুনির আসায় ব্যাঘাত ঘটবে তো। ” সাইফের কথা শুনে ভেতর ভেতর হাসিতে ফেটে পরছে তিয়াসা।
” এইযে টুনির মা, আমার রসগোল্লা বউ। একটিবার কথা বলনা। তোমার এই নিষ্পাপ জামাই তোমার ভালোবাসা বিনা ছটফট করছে। এভাবে বিরহের অ*ন*লে আমাকে পু*ড়ি*য়ে ছাই করনা। ” সাইফের বাচ্চামো কথা শুনে হেসে দেয় তিয়াসা৷
” হয়েছে অনেক বলেছেন। এমন ভাব করছেন যেন আমাকে কয়েক বছর দেখননি। আধাঘন্টা হয়নি আমাকে নিচে দেখে এসেছেন। এতটুকুতেই বিরহ ভর করেছে বুকে! আর সবসময় এত ভালোবাসা ভালোবাসা করেন কেন বলুনতো? সব সময় এসব কি অসভ্য কথা বলেন! এত ভালোবাসা কোথায় থেকে আসে? আবার বলছেন ‘রসগোল্লা বউ ‘ এটা আবার কেমন ডাক? ”
” তোমাকে এক মুহূর্ত না দেখাই সেটা আমার কাছে হাজার বছরের সমান। বিরহের জন্য কি এটা যথেষ্ট কারন নয়! এবার আসি ভালোবাসা প্রসঙ্গে, হাতেনাতে প্রমান দেখাই এত ভালোবাসা কোথায় থেকে আসে? ও রসগোল্লা বউ সব কথা বাদ, এখন একটু কাছে আসো তো। একটু আদর করি। আমার আবার বেশি দেরি সহ্য হয়না। ”
তিয়াসা একলাফে পেছনে সরে যায়। এই ভদ্রলোক কি পাগল হয়েছে! সব সময় আদর, ভালোবাসা জপতে থাকে!
তিয়াসার চিন্তার মাঝেই সাইফ এসে তিয়াসাকে কোলে নিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে।
তানিশা ছোট মেয়েকে ঘুমিয়ে দিয়েছে। তূর্ণার আসতে দেরি হবে। জামিল চৌধুরী ওকে নিয়ে ফিরবেন। ও গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় হুড়মুড়িয়ে রুমে প্রবেশ করে সাদিফ। এই অসময়ে সাদিফকে দেখে বেশ অবাক হয় তানিশা।
” আপনি এখন বাসায়! সব ঠিক আছে? ” তানিশার গলায় স্পষ্ট সন্দেহ।
সাদিফ তানিশার কাছে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়।
” অফিসে বসে কাজ করতে করতে হঠাৎই ভিষণ প্রেম পাচ্ছিল। তাই সব কাজ ফেলে তোমার কাছে ছুটে আসলাম। এখন আমার তোমাকে খুব করে প্রয়োজন। ” গলায় রাজ্যের মাদকতা ঢেলে তানিশার গলায় মুখ ডোবায় সাদিফ।
সাদিফের এমন কামার্ত স্পর্শে শিরশিরিয়ে ওঠে তানিশার শরীর।
” এই ভর দুপুরে এসব কি শুরু করেছেন! লজ্জা-শরমের মাথা বেঁচে খেয়েছেন? দুই ভাইয়েরই কি আজ মাথা খারাপ হয়েছে? ”
” বউকে আদর করলেই যদি মাথা খারাপ হয় তবে প্রতিদিন হাজার বার মাথা খারাপ করতে রাজি আছি। আরও কতদিন এভাবে দূরে রাখবে। এক বছর হতে চলল তোমাকে কাছে পাইনা। প্লিজ, বাঁধা দিওনা। এবার সত্যিই কিন্তু পাগল হয়ে যাচ্ছি। বাসায় এমন সুন্দরী বউ থাকলে শুধু আমরা দুই ভাই কেন দুনিয়ার সব পুরুষই মাতাল হয়ে যায়। ” তানিশাকে চুমোয় ভরিয়ে দিচ্ছে সাদিফ। তানিশা অনেক চেষ্টা করেও সাদিফকে একচুলও নড়াতে পারেনি। সে নাছোড়বান্দার ন্যায় তানিশাকে ধরে রেখেছে।
একপর্যায়ে তানিশাও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে জাপটে ধরে।
সাদিফ মুচকি হেসে কোলে তুলে নেয় তার রমনীকে।
চলবে…..