মায়ায় জড়ানো সেই তুমি পর্ব -০৯

#মায়ায়_জড়ানো_সেই_তুমি
#পার্ট_৯
জাওয়াদ জামী

পুরোটা রাস্তা বাসে উদাস হয়ে বসে থাকে তানিশা। মাঝে মাঝেই চোখ থেকে ঝড়ছে নোনা জল। তানিশা ভেবেছিল যতটা সহজে সব ছাড়তে পারবে কিন্তু বিষয়টা এত সহজ নয়।
এত কষ্ট হচ্ছে কেন!

” তুই মন খারাপ করে আছিস কেন তানু ? নিজেকে শক্ত কর। দেখিস ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
” রিশু, উনি যখন জানবেন আমি নেই, তখন খুব খুশি হবেন তাইনা? আমার জন্য অপেক্ষা করার কেউ রইলনা। উনারও সংসার হবে। দিনশেষে সোহার সাথে সুখী হবে। শুধু আমার জন্য থাকল একরাশ শূন্যতা। ”
” সবশেষে তুই সুখী হবি দেখিস। এতকিছু ভাবতে হবেনা তোকে। বাইরের দৃশ্য দেখ, এক নিমেষেই মন ভালো হয়ে যাবে। ”
তানিশা এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে রয়।

” বাবা প্লিজ বলো, তানিশা কোথায় গেছে? আমি যেভাবেই হোক ওকে ফিরিয়ে আনব। বাবা ও খুব বোকা। স্বার্থপরের দুনিয়ায় নিজেকে সামাল দিতে হিমশিম খাবে। আর তাছাড়া ও আর একা নেই। ও পারবেনা, নিজেকে সামলে, সন্তানকে সামলে পথ চলতে। ”
” এখন এত উতলা হয়ে কি করবে। সময় থাকতে যার মুল্য দাওনি। এখন তাকে হারিয়ে ফিরে পেতে চাইছ! হাসালে তুমি। আর শুনে রাখো আমি জানলেও বলবনা বউমা কোথায় আছে। তবে শুধু এইটুকু জেনে নাও বউমা হয়তো এই মুহূর্তে ঢাকা অতিক্রম করছে। । তার বাস বেলা বারোটায় ছেড়েছে। ”
” তুমি ওকে কেন আটকালেনা! তোমার কথা ও কখনোই ফেলতনা। এখন আমি বেঁচে থাকবো কিভাবে! ”
” তুমি সেই স্বার্থপরই থেকে গেলে সাদিফ। এখনো নিজের বেঁচে থাকার কথা ভাবছ! অথচ ঐ মেয়েটা কয়েকটা বছর তোমার সাথে কাটিয়েছে, ও বেঁচে ছিল কিভাবে? ”
এই প্রশ্নের উত্তর সাদিফের কাছে নেই। মেঝেতে বসে বাবার পা ধরে ছেলে বসে আছে, এমন দৃশ্য কোন বাবারই কাম্য নয়। জামিল চৌধুরীর কষ্ট হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তিনি ছেলেকে তানিশা কোথায় গেছে তা বলতে নারাজ।

বারবার অফিস থেকে ফোন আসছে সাদিফের।চোখ-মুখ মুছে শান্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। নিজের রুম থেকে প্রয়োজনীয় ফাইল নিয়ে অফিসে যায়।

রাতে শায়লা চৌধুরী যখন শুনে তানিশা এই বাড়ি ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে একটু অবাক হলেও খুশিতে ফেটে পরে। শেষমেশ আপদ বিদেয় হয়েছে।

খুশিতে শায়লা চৌধুরী সাদিফের জন্য রাতে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু বারোটা বেজে যায় অথচ সাদিফ আসেনা দেখে শুতে যায়। রহিমা খালা দরজা খুলে দিবে।
সেই রাতে সাদিফ রাত তিনটার দিকে বাড়ি ফিরে।

রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা ঘটায় তানিশাদের সিলেট পৌঁছাতে মধ্যরাত লেগে যায়। রিশা ওর নানিমনিকে ফোন করে সবটা জানানোয় উনি একজনকে পাঠিয়ে দেন ওদের রিসিভ করতে। ক্লান্ত থাকায় বাসায় এসে কিছু না খেয়েই ওরা শুয়ে পরে। ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করে। ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে রিশা তানিশাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। আজ ওর জয়েনিং। কিন্তু ম্যানেজার না থাকায় জয়েন একদিন পিছিয়ে যায়।
রিশা ঢাকা রওনা দেয়ার আগে তানিশার রুমে কাপড়চোপড় গুছিয়ে দিচ্ছে। তানিশা গালে হাত দিয়ে মনযোগ সহকারে রিশার কাজ দেখছে।
” এই মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে কেন! আজ ও না থাকলে আমি কি করতাম! ” এসব ভাবনার মাঝেই তানিশার সেই রিপোর্টের কথা মনে হয়। ” কোথায় রেখেছি ওটা ” জোরে বলে উঠে।
” কিসের কথা বলছিস? ”
” আমার রিপোর্ট যেটা সেদিন পেলাম। ”
তন্নতন্ন করে খুঁজেও রিপোর্টটা পায়না। তানিশা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। ” তবে কি রিপোর্ট ঐ বাসায় ফেলে রেখে এসেছি! ”

সকালে খাবার টেবিলে হুড়োহুড়ি লেগে গেছে৷ তানিশা নেই তাই কাজের ধারাবাহিকতাও নেই।
সাদিফ রেডি হয়ে সোজা বেরিয়ে যেতে লাগলে শায়লা চৌধুরী ডাকে খাওয়ার জন্য। সাদিফ রাজি হয়না তবুও শায়লা চৌধুরী জোড় করলে সাদিফ রেগে উঠে।
” মম, আমি বলছিতো খাবোনা। তুমি শুনতে পাওনা? এক কথা বারবার বলতে হয় কেন! ”
” সাদিফ তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন! আজকে আমাদের আনন্দের দিন। কোথায় একসাথে সবাই মিলে সেলিব্রেট করব! তা না করে তুমি আমার সাথে মিসবিহেভ করছ!”
” আজকে কোন দিন আর কিসের আনন্দ মম? ”
” ঐ ফকিন্নির মেয়েটা বিদেয় হয়েছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে! ”
” চুপ কর মম। কাকে কি বলছ? ঐ ফকিন্নির মেয়ে আমার স্ত্রী। আমার সন্তানের মা। তোমার কিসের এত আনন্দ? আমার বউ আমার উপর অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছে এতে তুমি কেন এত উচ্ছ্বসিত? তুমি কি আদৌ আমাকে ভালোবাসো! যদি ভালোবাসতে নিজের ছেলের এই অবস্থায় আনন্দ করতে পারতেনা। ”
শায়লা চৌধুরী বাকরুদ্ধ। এ কোন সাদিফকে দেখছেন তিনি! যে ছেলে মা অন্ত প্রান সেই ছেলে আজ মাকে এতগুলো কথা শুনালো!
” সাদিফ তুমি খালামনির সাথে এভাবে কথা বলছ কেন! খালামনি কত কষ্ট পাচ্ছে দেখেছ! আর তুমি এসব কি বউ বউ করছ? ”
” এই তুমি একদম চুপ থাকো। আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তুমি নাক গলাচ্ছ কেন? তুমি অতিথি, অতিথির মত থাক। আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি তার তিনি এসেছেন জ্ঞান দিতে। আজকের পর থেকে আমার বউকে নিয়ে কেউ একটা কথা বললেও তার টুটি ছিঁ*ড়ে ফেলব। আর তোমার এতদিন এই বাড়িতে কি কাজ হ্যাঁ? আজ অফিস থেকে এসে যেন এই বাড়িতে তোমাকে না দেখি। ”

শায়লা চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেল! সাদিফ এখন উল্টো স্বরে কথা বলছে! সোহাও বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ভাবতে ভাবতে পাগল হওয়ার দশা তার।

সাদিফ যেন একদিনেই হুট করেই অন্য মানুষে পরিণত হয়েছে। তানিশার ভার্সিটিতে যেয়ে অথরিটির সাথে কথা বলেছে। কিন্তু তারা তানিশার ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি। জানবে কি করে, তানিশা ডিপার্টমেন্টের হেডের সাথে কথা বলে অনুরোধ করেছিল তার বিষয়ে যেন কাউকে না জানানো হয়। তিনি তার কথা রেখেছেন।
সাদিফ ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে সোজা পোঁছে তানিশার গ্রামে। সাদিফকে দেখে তানিশার বাবা-মা অবাক হয়ে যায়। সাদিফ তার আসার কারন জানালে তারা অসহায় চোখে চেয়ে থাকেন। নিজের অপরাধ স্বীকার করে জানতে চায় তানিশার ঠিকানা। কিন্তু তারা নিজেরাই যেখানে তানিশার কাছে ওয়াদাবদ্ধ , সেখানে সাদিফকে কিভাবে সাহায্য করবে!

সাদিফ উদভ্রান্তের ন্যায় এর কাছে, ওর কাছে ঘুরে বেরিয়েছে কিন্তু কোন তানিশার কোন খোঁজই পায়নি।

পাহাড়ের গায়ে হাজার-হাজার চা গাছ সগর্বে বেড়ে উঠেছে। তানিশা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। পাহাড়ের বিশালতার কাছে নিজেকে নিতান্তই নগন্য মনে হচ্ছে। একটা সময় কত ইচ্ছে ছিল প্রিয়জনের হাত ধরে সাগর-পাহাড় চষে বেড়াবে। পাহাড়ের বিশালতায়, সাগরের চপলতায় নিজেকে বিলিয়ে দিবে। তা আর হয়ে উঠল কই! আজ নিঃসঙ্গ অবস্থায় বিশালতার মাঝে নিজেকে সঁপে দিয়েছে।

দেখতে দেখতে পনেরদিন পেরিয়ে গেছে। তানিশা পুরোদমে অফিসের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে। অফিসে ব্যস্ত থাকলে বাসায় খুব আনন্দেই কাটছে তানশার দিনগুলো। রিশার নানিমনি খুবই ভালো মনের মানুষ। তানিশাকে অনেক আদর করেন তিনি। আদর সেদিনই বেড়েছে যেদিন উনি জানতে পেরেছেন তানিশা প্রেগন্যান্ট। উনি তানিশাকে যথাসম্ভব আনন্দে রাখার চেষ্টা করছেন।

ইশান অস্থিরচিত্তে পায়চারি করছে। এর আগেও দুইদিন ভার্সিটিতে এসেছে কিন্তু তানিশার দেখা পায়নি। অনেককে জিজ্ঞেস করেও কোন লাভ হয়নি।
” আরে ম্যাডাম, আপনি কোথায় হারিয়ে গেলেন! আচ্ছা অবিবেচক মেয়েতো আপনি! হারানোর আগে এ্যাটলিষ্ট বলতে তো পারতেন। আমিও নাহয় হারাতাম আপনার সাথে।
ইশান রে, ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন! ভেতরটা পু*ড়ে ছা*ড়*খা*ড় হয়ে যাচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই। আস্ত একটা আহাম্মক তুই ভালোবাসলি তো বাসলি এমন একজনকে যে কিনা বিবাহিতা! অন্যের বউকে নিজের কুখ্যাত মন দিয়ে বসলি! অবশ্য দোষ তোর নয়। আগে কখনো প্রেমে পরিসনি এটাই দোষ। ”

আজকাল সাদিফ বেশ পাল্টে গেছে। শায়লা চৌধুরী আর সাইফ, সাইরার সাথে কথা বলা প্রায় বাদ দিয়েছে। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছে। ওর প্রতিটি মোনাজাতে থাকে তানিশা আর তার সন্তান । অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে ওর প্রধান কাজ জামিল চৌধুরীর পাশে বসে থাকা। ছুটির দিনগুলোতে তানিশার খোঁজ করা।
বারবার জামিল চৌধুরীর কাছে জানতে চায় তানিশার কথা। কিন্তু জামিল চৌধুরী মুখে কুলু পেতেছেন। তিনি চান তার ছেলে বিরহের আ*গু*নে পুড়তে পুড়তে খাঁটি সোনা হোক তবেই তিনি জানাবেন তানিশা কোথায় আছে।

সাদিফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে একধ্যানে টবের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। সে এখন নিয়মিত গাছগুলোর যত্ন নেয়। আর তার প্রতিদান স্বরুপ গাছগুলোও নিজেদের উজার করে ফুল দিচ্ছে। সেই টব, সেই গাছ সবই আছে। গাছগুলো ফুল দিচ্ছে, ফুলে ঘ্রাণ আছে। শুধু গাছপ্রিয় মানুষটা নেই। বেশ রাত করে বিছানায় যায় সাদিফ। আরো একটা নির্ঘুম রাতের নাম লিখতে চলেছে কালের গহব্বরে। একটা নির্ঘুম রাত সাক্ষী হতে চলেছে এক নিঃস্ব, রিক্ত পুরুষের হৃদয় ভাঙার গানের।

তানিশা অফিসে সবার পছন্দের পাত্রী হয়ে উঠেছে। শান্ত, নম্র, মিষ্টভাষী হওয়ায় ওকে সবাই বেশ পছন্দ করে। অফিসের কাজে কিছুটা অপটু হলেও সবাই মানিয়ে নেয়। তাই সব মিলিয়ে অফিসে খুব একটা খারাপ কাটছেনা।

জামিল চৌধুরীর অবসরের আর দেরি নেই। আজকাল তিনিও সুস্থ নেই। নানান রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। মূলত চিন্তা থেকেই সব রোগের উৎপত্তি। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি মৃ*ত্যু*দূ*ত দুয়ারে কড়া নাড়ল। থেকে থেকে বুকেও ব্যথা করছে। কিন্তু এত সমস্যার পরেও তিনি ডক্টর দেখানোর কথা চিন্তাই করেননা। তার মনে একটা কাঁটা বিঁধে রয়েছে তা হলো, তিনি তার ছেলেকে জোর করে বিয়ে না করালে হয়ত সবটাই অন্যরকম হতো। তার ভুলের কারনে আজ সব এলোমেলো হয়ে গেছে। দুটি জীবন ছন্নছাড়া হওয়ার পিছনে তিনিই দায়ী।

তানিশা নিয়মিত ওর বাড়িতে যোগাযোগ করে। ওর বাড়ির সবাই বারবার বলেছে সাদিফের কথা। সাদিফ ওর খোঁজে গ্রামে এসেছিল। কিন্তু তানিশা বরাবরই সেসব কথা এড়িয়ে যায়। ও আর কোন কিছুতেই বাঁধা পরতে চায়না। সাদিফ প্রতি সপ্তাহে কদম তলী আসে শুধু তানিশার ঠিকানা জানতে। তানিশার বাবা-মা অসহায় শুধু চোখে চেয়ে রয় সাদিফের দিকে। তারা ভেবে পায়না তানিশা কবে এত শক্ত হল! তাদের মেয়ে এতটা পাষাণ কখনোই তো ছিলনা। তবে কি পরিস্থিতি তাদের মেয়েকে বদলে দিয়েছে! কিন্তু সাদিফের মুখের দিকে তাকালেও তাদের কষ্ট হয়। তবে কি তাকে তার ভুলের মাশুল আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!

কেবলই জামিল চৌধুরী চোখ বুজেছেন। ফোনের শব্দে তার ঘুম উড়াল দেয়। তিনি না দেখেই বুঝতে পারেন কার ফোন।
” হ্যাঁ, মা বল। কেমন আছো তুমি? আজ এতক্ষণে ছেলের কথা মনে পরল! ”
” আসসালামু আলাইকুম বাবা। আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? আজ সারাদিন অফিসে অনেক কাজ ছিল। তাই ফোন করতে দেরি হলো। ” একসাথেই সকল প্রশ্নের জবাব দিল তানিশা।
” এই অবস্থায় এত কাজ করলে শরীর টিকবে মা! তুমি নিজের খেয়াল রেখো। ”
” আপনি কেমন আছেন বললেননাতো বাবা? ”
” আমি ভালো আছি মা। তবে শুধু বারবার তোমার কথা মনে পরে। কতদিন তোমাকে দেখিনা। একটাবার কি আমার ছেলেকে ক্ষমা করা যায়না মা? ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা। ”
” বাবা, প্লিজ। আমাকে এই অনুরোধ করবেননা। আমি রাখতে পারবনা। ”
কিছুক্ষন টুকটাক কথা বলে ফোন রাখে।

সাদিফ একটা ডায়েরি নিয়ে বসেছে। ডায়েরির পাতায় একেক তারিখ লিখে রেখেছে। তার হাতে তানিশার প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট। সাদিফ সযতনে সেই রিপোর্ট থেকে প্রেগন্যান্সির সময় জেনে নিয়ে প্রতিদিন ডায়েরির পাতায় লিখে রাখে তার আসতে আর কতদিন! আদরে হাত বুলায় রিপোর্টে। তানিশা তার কাছে নেই তো কি হয়েছে, সে তো এখন আশায় বাঁচে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here