ক্যাসিনো পর্ব -০২

#ক্যাসিনো ©লেখিকা (মায়া)

#পর্বঃ২

এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছেন মেহমেত। পাশেই ডিভানে বসে আছে মরিয়ম। রাত ৩টা ২৩ বাজে, তার চোখ যেন রক্ত বর্ন ধারন করেছে, গত কয়েক দিন ধরে তার ঘুম নেই। স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,মেহমেতের দিকে।

মেহমেত কখনোই এমন ছিল না। সে ছিল বাবা মার আদর্শ ছেলে, বোনের সব থেকে ভালো ভাই,স্ত্রীর পারফেক্ট সঙ্গিনী, সন্তানের এক মাত্র বন্ধু। কিন্তু গত ৬মাসে সব শেষ হয়ে গেছে।

হঠাৎ মরিয়মের চোখের পানি গাল গড়িয়ে পরতে লাগলো। আগের কিছু কথা মনে পড়তেই। ।।

মেহমেতের বাবা আবদুল হামিদ খান,
আর মরিয়মের বাবা জাবেদ তালুকদার একি গ্রামে বড় হয়েছেন,দুই জন অনেক ভালো বন্ধু ছিলেন। এক দম যেন গুপি গাইন, বাঘা বাইন এর মত।প্রথম যেদিন ব্যবসার কাজে তিনি শহরে চলে আসেন । সেদিন তাদের দুজনের কান্না দেখে গ্রামের লোকজন মনে করেছিল যে দুজনের মধ্যে এক জন বুঝি মারা গেছেন।

সময়ের বিবর্তনে দুই বন্ধু দুই মেরুতে অবস্থান করতে শুরু করে। হামিদ খান ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন আর জাবেদ তাদের গ্রামের হেড মাস্টার।
ভাগ্য সহায় ছিল বলে আবদুল হামিদ এক জন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন ৭বছরেই

বিয়ে করলেন শহরেই মাসুমা কে। যিনি ছিলেন ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষ মালেক আফসারীর মেয়ে। তার পর আর কি দুই দিকের ব্যবসা এক হয়ে যাওয়ায় হামিদ হয়ে উঠলেন দেশের সপ্তম সফল ব্যবসায়ী। আর জাবেদ এর জীবন সেই হেড মাস্টারী করেই কাটতে লাগল। তাদের বন্ধুত্বেও দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছিল অনেক, তাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় । আগে তবুও চিঠি আদান প্রদান করা হতো কিন্তু পরে হামেদের কাজের ব্যস্তায় না খোঁজ ছিল, না মনের টান।
জাবেদ ও বিয়ে করেন কেরানির মেয়ে আছিয়া কে।
গ্রামে হামিদ পা রাখেননি প্রায় ২০বছর হয়ে গেছিল।

তার পর হঠাৎ জাবেদর বাড়িতে উপস্থিত হয় হামিদ। জাবেদ অভিমানে ৩দিন কথা বলেনি তার সাথে। শেষে না থাকতে পেরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিলেন হামিদের গলা জড়িয়ে।
হামিদ তখন মরিয়ম কে চেয়ে বসে নিজের ছেলের জন্য। জাবেদ নির্দিধায় রাজী হয়ে যায়। নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্ব অটল রাখার জন্য। মহা ধুমধামে তাদের বিয়ে হয়েছিল। গ্রামের প্রতিটা মানুষ তাদের সেদিন দেখে বলেছিল। রাজ জুটক।

মরিয়ম কে নিয়ে শহরের চলে আসে তারা সেদিনই।
বাসর ঘরে মরিয়ম কে সেদিন সেই রকমের অবাক করে দিয়েছিল মেহমেত। যা তার কল্পনার ও বাহিরে ছিল।

সে সবসময় গল্প শুনেছে বান্ধবীরদের কাছ থেকে যাদের বিয়ে হয়েছিল,,যে বাসর রাতে প্রতি টা ছেলে হায়না রূপ ধারণ করে। দিনে তারা মানুষ থাকলেও রাতে হয়ে উঠে পশু।

কিন্তু মেহমেত ঘরে প্রবেশ করেই আগে নামাজের জন্য তাকে ওজু করে আসতে বলে। এবং নামায আদায় করে দুজনে একসাথে, তাকে নিয়ে বসে পড়ে জায়নামাজেই। মরিয়ম তখন ভয়ে গা শিউরে উঠে আছে।

মেহমেত তখন মুচকি হেসে বলেছিল, আপনার কি ক্ষুধা পেয়েছে?? মরিয়ম কিছু টা অবাক হয়। বাসর রাতে কেউ কি খাবারের কথা জিজ্ঞেস করে এটা তার জানা ছিল না। নতুন জায়গায় এসে মরিয়ম অনেক ভয়ে ছিল, তার উপর এতো বড় বাড়িতে তার বিয়ে হয়েছে। বড় লোকরা নাকি মানুষ কে মানুষ মনে করে না । যদি এরাও নামে বড় লোক হয় আর মনুষ্যত্বে যদি ছোট লোক হয় তাহলে কিভাবে চলবে তার জীবন। এসব নানা ধরনের ভয়ের চিন্তায় তার গলা দিয়ে খাবার ও নামেনি যা মেহমেতের চোখ এড়ায়নি তাই এই প্রশ্ন টা করেছে।

মরিয়ম শুধু মাথা নাড়িয়ে না বলল যে তার ক্ষুধা পাইনি।

মেহমেত তখন তার ভবন ভুলানো হাসি দিয়ে উঠে ঘর থেকে চলে যায়। তার সেই হাসিতে মরিয়ম সেদিন এমন ভাবে ঘায়েল হয়েছিল। যা সে আজো ভুলেনি।
মেহমেত খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হয় ‌। মরিয়ম তখন অবাক হয়ে গেছিল। আর সব থেকে বড় অবাক করার বিষয় ছিল,যখন মেহমেত খাবার টা তাকে নিজের হাতে তুলে খাইয়ে ছিল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল সে সেদিন মেহমেতের দিকে। আবেগে তার চোখের কোণে পানি জমে গেছিল।

খাইয়ে দিতে দিতে সেদিন সে বলেছিল। আমি জানি আপনি ভয় পাচ্ছেন নতুন জায়গায়, কিন্তু আপনাকে আমি আস্বাস দিচ্ছে যে আপনি এখানে খুব ভালো থাকবেন। আমার মা বাবা ,আর আরিফা কে একটু শুধু আপন করে রাখবেন। আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে এক ফোঁটা চোখের পানি ও পড়তে দিবো না।

মরিয়ম শুধু বিস্ময়ে মেহমেতের দিকে তাকিয়ে ছিল। একজন স্ত্রীকে যদি এমন অভয় দেওয়া যে তার চোখ কখন ও পানি আসতে দিবে না। মানে হলো তাকে সে সব চেয়ে সুখি করে রাখবে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে !

খাবার শেষ করে মরিয়মের উদ্দেশ্য বলে। আপনার কি ঘুম পেয়েছে??
মরিয়ম তখন কাচুমাচু করতে থাকে। তার এহেন কান্ডে মেহমেত তখন বুঝতে পারে কেন এমন করছে সে। তাই ভয় কাটানোর জন্য বললেন

আপনাকে আমি এখন ছুঁবো না।।
আগে আপনি এই জায়গাটা মানিয়ে নেন তার পর। আর ছুঁয়ে দেখার জন্য সারা যুগ পরে আছে। আপনি যদি চান তো আমরা একটু বের হবো।

মরিয়ম এমন অভয় পেয়ে এক গাল হেসে দেয়। যা মেহমেতের চোখ এড়ালো না। সেও মুচকি হাসলো। মরিয়ম তখন বলে রাত সারে ১২টা পার হয়েছে এখন আপনি কোথায় যাবেন???

মেহমেত উৎসুক হয়ে বললেন, আমাদের বাসা থেকে প্রায় মিনিটখানেক হাঁটার পর একটা বড় মাঠ আছে। অনেক বড়। আজ তো আকাশে অনেক তারা উঠেছে। তাই দেখতে যাবো আপনাকে নিয়ে। যদি আপনার আপত্তি না থাকে?? কিন্তু বাড়ি থেকে বের হবেন কি করে?? কেউ যদি বোকা ঝোকা করে?? তখন মেহমেত টিপুনি কেটে বলেছিল সুন্দরী রমণীর জন্য বোকা ঝোকা করলেও কোন সমস্যা নেই। মরিয়ম তখন লজ্জায় মাথা নিচু করে নিয়েছিল।

শুনশান নীরবতা পালন করছে প্রকৃতি। বড় একটা মাঠের মাঝখানে বসে রয়েছে এক জন সুদর্শন পুরুষ,আর পরির মত একটা সুন্দরী মেয়ে।

আকাশে লক্ষ তারার মেলা। কিন্তু চাঁদ নেই, মৃদু মৃদু ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে সেই দম্পতির গা ছুঁয়ে। আর সুন্দর পরিবেশ টা উপভোগ করছে তারা দুজনে। তারার মিটিমিটি আলো যেন ঝলমল করে হাসছে। কত সুন্দর ছিল সেই দৃশ্য।

মরিয়ম তখন মিষ্টি স্বরে বললেন, আকাশের এতো তারার মাঝে যদি চাঁদ টা থাকতো আরো মনোরম পরিবেশ হতো তাই না???

মেহমেত তখন মুচকি হেসে বলেছিল, আকাশের চাঁদ টা আজ আমার সাথেই তো আছে। আকাশে না থাকলে কিছুই হবে না। মরিয়ম তখন লজ্জায় লাল হয়ে গেছিল।

জানেন আমার এটা শখ ছিল যে আমি আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে এভাবে আকাশ ভরা তারা দেখবো। কিন্তু এটা যে সত্যি হবে তা ভাবিনি। আর শুনুন আমার জীবনে কিন্তু আপনিই প্রথম নারী আর ইনশাল্লাহ আপনিই শেষ হবেন। আমি কি আপনার হাত একটু ধরতে পারি??? মরিয়ম কিছু টা লজ্জা মিশ্রিত মুখ করে শুধু মাথা নড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো।
মেহমেত তখন তৃপ্তির হাসি দিয়ে মরিয়মের হাত টা আলতো করে ধরেছিল। মরিয়মের শরীরে তখন কেমন করে কম্পিত হয়ে উঠেছিল। আর এমন ভালো লাগা কাজ করছিল তা মেহমেতের অজানাই রয়ে গেছে। তার কেমন যেন বার বার আল্লাহুর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে ইচ্ছে করছিল তাকে এমন একটা সঙ্গি দেওয়ার জন্য।

ফজরের আজানে মরিয়মের ভাবনার ছেদ ঘটে। আগের সেই মেহমেত আর এখন কার মেহমেতের মধ্যে যেন আকাশ পাতাল পার্থক্য চলে এসেছে। সে বলেছিল যে তাকে প্রথম এবং শেষ নারী করবে। কিন্তু আগামী ৯দিন ধরে সে পতিতা পল্লিতে বসবাস করছেন।

মরিয়ম এবার ডুকরে কেঁদে উঠে। তার ভিতরের চাঁপা কষ্ট যেন মাথা চাড়া দিতে চাচ্ছে । এভাবে ভেঙে পড়ার সময় নয় মরিয়ম। তোকে ভেঙে পড়লে চলবে না। তোকে পাথরের মত শক্ত হতে হবে।
নিজের মনেই কথা গুলো নিজেকে বলছে মরিয়ম।

ফজরের নামাজ আদায় করে, মুনাজাতে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো মরিয়ম। তাকে পথ দেখানোর মালিক শুধু তার আল্লাহ। তার জীবনের ভালো মন্দ সব কিছুর মালিক তো শুধু তো মাবুদই।

তার সুখের সংসারে কার কু নজর পড়ল ।তাকে শুধু আল্লাহই তার সামনে উন্মোচিত করতে পারে। আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে বান্দা কে কোন দিন খালি হাতে ফেরান না। তাকেও ফিরাবে না সে তা দৃঢ় বিশ্বাস করে।

সকাল ৯টা বাজে। অফিসের সব কাছের মানুষদের মরিয়ম ডেকেছে । কারন তার দৃঢ় ধারনা তার সংসারে আগুন তার কোন কাছের মানুষই ধরিয়েছে।

ড্রয়িং রুমে বসে আছে পাশাপাশি ৭জন ব্যাক্তি। সামনে বসে আছে মরিয়ম। গম্ভির মুখ করে।

চলবে…..????

ভালো লাইক কমেন্ট হলে পরবর্তী পর্ব রাতে পোস্ট করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here