ক্যাসিনো পর্ব -০৩

#ক্যাসিনো ©লেখিকা–মায়া

#পর্বঃ৩

মরিয়ম এর গম্ভির মুখের দিকে চেয়ে আছে সবাই। এই ৭জন লোক অফিসের সব চেয়ে বিশ্বাসী এবং কাছের লোক। যাদের অবিশ্বাসের তালিকায় রাখতে মরিয়মের কষ্টই হচ্ছে। কিন্তু নিজের পরিবারের ভালোর জন্য এদের কে এই তালিকায় রাখতেই হবে।

আজম হোসেন,যিনি কম্পানির ম্যানাজার। ৮বছর ধরে এই কম্পানিতে আছেন। এবং সততার সঙ্গে কাজ করে গেছেন ‌। এই লোক টাকে তিনি ৭ নাম্বার সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন।
নাঈম আহমেদ, অল্প বয়সী ছেলে। কম্পানির রিসিভশনের কাজ করেন। কে অফিসে আসলো আর কে গেল তার সব ডিটেল তার কাজে পাওয়া যাবে নম্র ভদ্র ছেলে।

বাকি পাঁচ জন, আকাশ,মুমিন,রিপন, রায়হান, মিনাল। মেহমেতের কলেজের ফ্রেন্ড। এদের মধ্যে সব চেয়ে কাছের বন্ধু মিনাল। যে এখন মেহমেতের assistant manager হিসেবে আছে।

যারা পুরো অফিসে মেহমেতের সঙ্গেই থাকে।

মরিয়ম এর গম্ভির মুখ দেখে ম্যানেজার বলেন। এমন জরুরি ভিত্তিতে ডাকার কারণ কি মেডাম?? কোন সমস্যা???

মরিয়ম একটা মেকি হাসি দিয়ে বললেন। যে গত ৯দিন ধরে মেহমেত অফিসে যায়নি। বাসায় আসেনি।
যে অফিসের কাজে মেহমেত দেশের বাইরে গেছে?? অথচ মেহমেত ৯দিনের মাঝে অফিসের ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়েছে। তা আপনারা জানার পর ও আমাকে বলেননি কেন??

মিনাল তখন বলল, ভাবি মেহমেত আমাদের এই মিথ্যা টা বলতে বলেছিল। এতে আমাদের কিছু করার ছিল না!!
আমরা শুধু আদেশ টাই পালন করেছি।

আকাশ তখন মিনালের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, আর যদি আমরা সত্যি কথা টা বলে দেই। তাহলে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে,যে বলবে তার চাকরি থাকবে না!!!

মরিয়ম শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
ম্যানেজারের উদ্দেশ্য বলল, মেহমেত ৯দিনে ১কুটি টাকা ব্যাংক থেকে উঠিয়েছে। সে কি করেছে এতো টাকা দিয়ে?? তবুও মাত্র ৯দিনে???

ম্যানাজার বললেন আমি কিছু জানি না মেডাম। স্যার কে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু উনি উল্টো আমার উপর রেগে যান। তাই আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি।

নাঈম এর দিকে চেয়ে মরিয়ম বললেন। মেহমেতের সাথে কখনো কোন অপরিচিত লোক দেখেছেন ৯দিনে??

নাহ মেডাম উনি টাকা নেওয়ার জন্য সব সময় একাই আসতেন আর অনেক চিন্তিত থাকতেন। মনে হয় অনেক চাপের মধ্যে আছেন। টাকা নিয়েই আবার হনহনিয়ে বের হয়ে যেতেন।

মরিয়ম এবার চিন্তিত স্বরে বললেন, উনি কি তখন নেশায় থাকতেন???

মরিয়মের এমন কথা শুনে,৭জন ব্যাক্তি চমকে উঠলেন।

মুমিন তখন অবাক হয়ে বললেন। মেহমেতের তো কখনো কোন নেশা ছিল না!!

কিন্তু আগামী ৬মাস ধরেই কেমন যেন বদলে গেছে, খিটখিটে মেজাজে থাকে সব সময়। মেহমেত কাজ নিয়ে কখনো রেগে যেত না। কিন্তু এখন প্রায় সবার সাথে কাজ নিয়ে খারাপ ব্যাবহার করে।

মরিয়ম তখন চোখ ছোট ছোট করে বললেন। তার মানে আপনারা জানেন না?? যে গত ৬মাস ধরে মেহমেত ড্রাগ নিচ্ছে।

মরিয়মের কথায় সবাই যেন অবাকের শেষ সীমানায় চলে যায়। তারা বলল তারা কখনো তাকে নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য নিতে তারা দেখেনি। আর মেহমেত
ভিতরে নেশা করলে যে বদলানো ভাব ও তারা দেখেনি।

মরিয়মের মাথা এবার কাজ করা বন্ধ করে দিল। তার আশা ছিল যে অফিসের কেউ হয়তো জানবে যে মেহমেতের সাথে সেই আগন্তুক লোক টাকে দেখে থাকবে। কিন্তু কেউ জানে না। নিজের স্বামীর এমন বিষয় নিয়ে সে কথা বলার পরও কোন সূত্র সে পেল না। মেহমেত কে সে এদের সামনে ছোট করে দিল। এটা ভাবতেই কষ্ট লাগছে তার।

মরিয়ম ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন। আচ্ছা গত ৬মাসে কোন অপরিচিত লোক কে মেহমেতের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছেন…? বা কারো সাথে অতিরিক্ত মিশতে???

সবার জবাব না আসলো। মেহমেত এর সাথে কাউকেই দেখেনি সে।
মরিয়ম আশাহত হয়ে সবাই কে চলে যেতে বললো। আর ম্যানাজার কে বলে রাখলো। মেহমেতের অনুপস্থিতে অফিসের দায়িত্ব টা নিতে।

মরিয়মের এমন কথা তে মিনালের চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। যা কারোই নজরে পড়ল না।

সবাই চলে যাওয়ার পর মরিয়ম গভীর চিন্তায় চলে গেল। এদের মধ্যে কেউ তো মিথ্যা বলছেই। মেহমেত যে ড্রাগ নিচ্ছিল তা কারোর নজরে আসবে না তা কখনো হতেই পারে না।
কিন্তু কে সে?? যে মিথ্যা বলছে???কেনই বা মিথ্যা বলছে??? কি স্বার্থে??

মরিয়মের এতো সব ভাবনায় এক ছোট মেয়ের মিষ্টি কন্ঠ ভেসে এলো তার কানে। আম্মু দেখেন না ভাইজান আবার আমার সাথে কেমন করেছে। ৬বছরের মিহিরিমা কে দেখে, মুচকি একটা হাসি দিল মরিয়ম। মিহিরিমার পিছন পিছন একটা ৯বছরের ছেলে এসে উপস্থিত হলেন।

মরিয়ম মিহিরামা আর ছেলে টাকে কাছে আসতে বললেন। দৌড়ে তারা মরিয়মের কাছে আসে‌। মরিয়ম তখন আদুরে গলায় ছেলে টির উদ্দেশ্য বলল, নেহাল সোনা, আবার বোনের সাথে লেগেছো কেন?? নেহাল তখন কাচুমাচু করে বলে আমি মিহিকে কিছু করিনি ছোট আম্মু। ওর স্কুলে যাওয়ার জন্য তো দেরি হচ্ছিল তাই চুল টা বেঁধে দিতে চেয়েছিলাম।
মিহিরিমা তখন নালিশই গলায় উত্তর দেয়,আম্মু ভাইজান মিথ্যা বলছে। ও আমার চুল টেনে টেনে আছরাচ্ছিল। আমি চুলে ব্যাথা পাচ্ছিলাম তবুও ছাড়ছিল না।

মরিয়ম মুচকি হেসে বলল,হ্যাঁ হয়েছে হয়েছে। এবার চল নাস্তা করে নিবে। স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নেহাল মেহমেতের চাচাতো ভাই নাজিমের ছেলে। নাজিম দের বাসা তাদের বাসার থেকে ১০মিনিটের রাস্তা। নাজিম পেশায় একজন ডক্টর।

নাজিমের কাছে থেকেই ১৫দিন আগে মরিয়ম জানতে পারে মেহমেত ড্রাগ নেই। কি করে জানতে পারে সেটাও অনেক কাহিনী।
আপাতত মরিয়ম আর এসব আর ভাবতে চাচ্ছে না‌। ডাইনিং টেবিলে মিহি আর নেহাল বসে দুষ্টুমি করছে।
তাদের নাস্তা দিচ্ছে মরিয়ম। দুধ গরম হয়েছে কিনা তার জন্য রহিমা খালাকে বার বার ডাকছে মরিয়ম। কিন্তু রহিমার কোন শব্দ নেই।

মরিয়ম নিজে রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন, রহিমা গ্রাসের চুলাতে দুধ উঠিয়ে দিয়ে এক মনে কি যেন ভাবছে। এই দিকে দুধ যে পাতিল থেকে উপচে উঠছে সে দিকে তার খেয়াল নেই। মরিয়ম তখন জোর গলায় ডাকে রহিমা খালা ?? দুধ পড়ে যাচ্ছে!! তার পর তারাতারি করে গ্যাস অফ করে দেয়।

রহিমার ধ্যান কেটে গেলে, ভয়ে চুপসে যায়। নত গলায় বলেন,মাফ করবেন ম্যাম সাহেব, আমি আসলে ঐ।

মরিয়ম ধরা গলায় বলেন,বাদ দাও সমস্যা নেই‌। মাঝে মাঝে এমন হয়ে যায়। কিন্তু তুমি এতো চিন্তিত কেন?? কি হয়েছে??..

রহিমা শুকনো হাসি দিয়ে বলে কিছুই হয় নাই। এমনিতেই একটু ভাবনায় পইরা গেছিলাম। মরিয়ম নিশ্চিত বুঝতে পারছেন কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু রহিমা খালা বলতে চাচ্ছে না।তাই তাকে আর না ঘাটিয়ে বাচ্চাদের কাছে আসে।

তারাতারি খাবার শেষ করো। ড্রাইভার চাচ্চু বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।

মিহি তখন খাবার থেকে চোখ উঠিয়ে বলে,আম্মু আজকেও আপনি যাবেন না আমাদের সাথে??

মরিয়ম শুকনো হেসে বলেন। আব্বু এসেছে মিহি!! উনি তো অনেক অসুস্থ। আব্বুর কাছে তো থাকতে হবে আমায় তাই না?? ।

আব্বু এসেছেন বলেই মিহি ভয়ে কুকড়ে গেল। মরিয়ম বুঝতে পারলেন মিহির কেন ভয় করছে।

আগে মেয়েটা বাবার জন্য কতই না পাগল ছিল আর এখন বাবার কথা শুনে ভয় পাচ্ছেন। মরিয়ম ভেতর টা যেন হাহাকার করে উঠলো।

মিহি আর নেহাল স্কুলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তাদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে মরিয়ম সাথে আসলেন।

ড্রাইভার কে সাবধানে গাড়ি চালাতে বললেন।আর স্কুল ছুটি না হওয়া অবদি অপেক্ষা করতে বললেন স্কুলেই।

মিহি আর নেহালের উদ্দেশ্য বলেন। নেহাল সোনা বোনের খেয়াল রেখো। আর মিহি এক দম দুষ্টুমি করবে না। ভাইজানের কথা শুনবে। ঠিক আছে??

দুজনেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। তার পর ফি আমানিল্লাহ বলে চলে গেল।

মরিয়ম নাস্তা আর করল না মেহমেতের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
ঘরে গিয়ে দেখে মেহমেতের ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি।

মেহমেত ডাকল না আর মরিয়ম।
১২টার দিকে মেহমেতের ঘুম ভাঙ্গে।
ছোট ছোট চোখ করে আশেপাশে দেখছে আর বুঝতে চেষ্টা করছে যে সে এখন কোথায় আছে। তার পর যখন বুঝার চেষ্টা করলো এটা তার নিজের ঘর। তখন সে উঠে দাঁড়াতে গেলেই মাথা চেপে ধরে আবার শুয়ে পড়ে।
মাথায় অসহ্য ব্যাথাই খসে পড়ছে যেন।সে বুঝতে চেষ্টা করছিল বাসায় কিভাবে আসল।সে তো বাসায় ছিল না।

মরিয়ম ঘরে প্রবেশ করেই দেখল।মেহমেত উঠে গেছে। মরিয়ম মেহমেতের কাছে এসে তাকে নরম স্বরে ডাকলো। মরিয়মের গলা শুনতেই তার দিকে তাকালো সে।

উঠে পড়েন,আর গিয়ে গোসল করেন। অনেক ঘুমিয়েছেন। মরিয়মের কথায় কর্নপাত না করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে মারে,
আমি বাসায় আসলাম কি ভাবে?? কে নিয়ে এসেছে আমাকে??

মরিয়ম আলমারি থেকে মেহমেতের জন্য কাপর বের করতে করতে বললেন, আমি নিয়ে এসেছি আপনাকে পতিতাপল্লী থেকে।

পতিতা পল্লি নাম শুনতেই আতংকে উঠলো মেহমেত। ভয়ে ঘামছে সে।
মরিয়ম তখন ধরা গলায় বলেন,আগে গোসল দিয়ে আসুন, খাবার খান তার পর এ বিষয় নিয়ে আপনার সাথে কথা আছে আমার মেহমেতের কাপর গুলো ওয়াশরুমে দিয়ে এসে মরিয়ম ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় মা বাবা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে জানেন কি সেটা???

মেহমেত তখন শুধু ভাবছে মরিয়ম কি সব জেনে গেছে তার ব্যাপারে???

টিভির হ্যাড লাইনে দেখানো হচ্ছে, আবার ও এক সাধারণ ব্যাক্তির খুন হয়েছে নৃশংস ভাবে । আগামীকাল রাত ৩টাই হাইওয়ের বড় মাঠের পাশে লাশ পাওয়া গেছে।
আগামী ৩মাসে ৬টা খুন হয়েছে, পুলিশ এই খুন গুলোর কোন হদিস মিলাতে পারছে না এখনো। এভাবে কেন সাধারণ জনগণ খুন হচ্ছে তা বুঝতে পারছেন কেউই। সমর্পিত সাধারণ জনগণ আরোপ তুলেছেন। যেখানে সাধারণ জনগণ নিরাপদ নয়। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের রেখে কি লাভ???
কে এই খুন গুলো করছে?? এবং কেনই বা করছে?? সাধারণ জনগণ কে হত্যা করে লাভ কি?? এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ জনগণের মাঝে।

পরবর্তী পর্ব রাত ৯ টার সময় পোস্ট করা হবে। বেশি বেশি কমেন্ট করুন।

চলবে ____?????

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here