ক্যাসিনো পর্ব -০৪

#ক্যাসিনো

#পর্বঃ৪ ©লেখিকা (মায়া)

মেহমেত গোসল করে এসে দেখে, মরিয়ম খাবার নিয়ে বসে আছে!!
মেহমেতের দিকে তাকিয়ে বললেন, খাবার খেয়ে নাও তারাতারি। তার পর আপনার সাথে আমার কথা আছে।

মেহমেত খাবার খাচ্ছেন। এমন ভাবে খাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন কত দিনের অভুক্ত। মরিয়ম মেহমেতকে এভাবে খেতে কখন দেখেনি।

মরিয়ম মেহমেতের খাওয়া দেখছে মনোযোগ দিয়ে আর ভাবছে। আগে খাওয়ার সময় মরিয়ম খেয়েছে কিনা তার খোঁজ নিয়ে তার পর খাওয়া শুরু করতো। আর যদি মরিয়ম কোন দিন না খেয়ে থাকতো। তখন মেহমেত তাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিত।

মরিয়ম গোপনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। যেই দীর্ঘশ্বাসে নিজের এক অব্যাক্ত বেদনা কে উরিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টা।

মেহমেতের খাওয়া প্রায় শেষর দিকে । তখন মরিয়ম মেহমেতের উদ্দেশ্য বললেন। তাহলে এখন কি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি‌।

মেহমেতের আতংকিত চোখ জোড়া নিমিষেই প্রশস্ত হয়ে গেল। খাওয়ার শেষ লোকমা টা মুখে পুরে নিল। তার পর হাত ধুয়ে পানি খেয়ে নিল,ঢকঢক করে।

মরিয়মের কথার উত্তর সে না দিয়েই উঠে দাঁড়াল। মরিয়ম ভ্রু কুঁচকে বললেন, আমার কথার উত্তর দেন মেহমেত??.

মেহমেত মরিয়মের দিকে না তাকিয়ে বললেন। তুমি কি বলবে আমি জানি,তাই সে বিষয়ে তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।

মরিয়ম রাগ মিশ্রত কন্ঠে বলল।। বলতে চাচ্ছেন না মানে টা কি???

আপনি আগামী ৬মাস থেকে থেকে ড্রাগ নিচ্ছেন। ব্যাংক থেকে কুটি কুটি টাকা উঠিয়েছেন। আর সব থেকে বড় কথা হলো আপনি পতিতাপল্লীতে ছিলেন। শেষের কথা টা বলতে গিয়ে মরিয়মের কন্ঠস্বর ভাড়ি হয়ে গিয়েছিল। চোখ জোড়া ভিজে উঠলো।

মেহমেত কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না। তার ভিতরের আত্মাপুরি যেন বার বার শুকিয়ে উঠছে। ক্রমশ নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।

হঠাৎ মেহমেতের ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো। মেহমেত সাথে সাথে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো।

তারাতারি করে গায়ে শার্ট জরিয়ে ঘর থেকে বের হতে নিলে।
মরিয়ম মেহমেতের পথ আটকে ধরে হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে‌। কোথায় যাচ্ছেন আপনি?? আমার কথার উত্তর না দিয়ে!??

মরিয়ম সরে দাঁড়াও যেতে দাও আমাকে। আপনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে এখান থেকে যেতে দিবো না। বলুন কে সেই মুখোশ পড়া ব্যাক্তি যে আপনাকে এসব করাচ্ছে!!??…

মুখোশ পড়া ব্যাক্তির কথা শুনতেই মেহমেত ঘামতে লাগলো। মরিয়মের এক বার ও তাকাইনি সে। কি যেন লুকাতে চাচ্ছে নিজের চোখের মধ্যে দিয়ে। মেহমেত এক ঝটকায় মরিয়ম কে শরিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যেতে লাগল। মরিয়ম পিছন পিছন দৌড়ে যাচ্ছে আর জোর গলায় বলছেন।

আল্লাহর দোহাই আপনি আর এক পা ও আগে বাড়াবেন না মেহমেত।
মেহমেত দাঁড়িয়ে যায়। মরিয়ম কে কি জবাব দেওয়া যায় এসব নিয়ে ভাবছে সে। সে সত্যি টা বলতে পারবে না আবার কিছু না বলে যেতেও পারবে না‌।
হে আল্লাহ রক্ষা কর আমায়।

মরিয়ম মেহমেতের সামনা সামনি হলেন। ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষটির দিকে। আপনাকে বলতেই হবে মেহমেত কেন আপনি এসব করছেন??! মা বাবার কথা টাও কি ভাবছেন না??? তারা যদি জানতে পারে তাদের আদর্শ ছেলে এসব করে বেরাচ্ছে?? তাহলে কি হবে তাদের এক বার ভেবে দেখেছেন?? আপনি বলেছিলেন মেহমেত,আমিই আপনার জীবনের প্রথম এবং শেষ নারী হবো। কিন্তু আপনি কথা রাখেননি । মরিয়মের গলা কাঁপছে গাল গড়িয়ে নোনা জলের ধারা বয়ছে।

মেহমেত তখন হুংকার গলায় জবাব দেয়। কি উত্তর চাচ্ছো তুমি??

আমার ইচ্ছে আমি নেশা করবো। তোমার তাতে কি???
আমার বাবার টাকা আমি কি করি না করি সেটা তোমাকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। আর শেষ প্রশ্নের উত্তর, আমার মর্জি আমি কোন নারীর সাথে থাকবো কিংবা কোথায় রাত কাটাবো। সেটাও তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
ঘরের বউ,ঘরেই থাকো। বাহিরের খবর রাখার তোমার দরকার নেই।

মেহমেতের প্রতি টা কথা নির্বাকের মত স্তব্ধ হয়ে শুনছে মরিয়ম। তার প্রতি টা কথা যেন কথা ছিল না।একেক টা যেন বিষাক্ত তীরের ফোলা ছিল। যা মরিয়মের নরম হৃদয়ে এমন ভাবে গেথে গেল ‌। যেন এই তীব্র যন্ত্রনা তাকে ছীন্ন বিন্ন করে দিতে চাচ্ছে।

মরিয়ম চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে,মেহমেতের কলার চেপে ধরে ধরে বলে। আপনি এসব কি করে বলতে পারেন মেহমেত?? কি করে?? আমি আপনার স্ত্রী মেহমেত!! আপনার প্রত্যেক কাজের কৈফিয়ত নেওয়ার অধিকার রাখি।
মরিয়মের কাছ থেকে কলার ছেড়ে ঝটকা মেরে মরিয়ম কে ফেলে দেয়। সামনে থাকা কাঁচের টেবিলে ধাক্কা লেগে কপাল কেটে যায়। যেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত গরগর করে বের হয়ে,কপাল বেয়ে পড়তে লাগলো।

মরিয়ম মেহমেতের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সদর দরজায় ভীতি চোখে তাকিয়ে আছে মিহি ।
ভয়ে সে থরথর করে কাপছে।

মেহমেত মরিয়মের দিকে ক্ষীণ চোখে তাকিয়ে আছে। তার বুক টা ধুক করে উঠলো মরিয়মের রক্ত মাখা মুখ দেখে।

মেহমেত সদর দরজার দিকে চেয়ে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে নিল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো মিহির দিকে চেয়ে রইল। সামনে হেঁটে মিহির কাছে যেতে নিলে। এক দৌড়ে সে মায়ের কাছে চলে গেল।

মরিয়মের কাছে যেয়ে কান্না মাখা গলায় বলল আম্মু। আপনার কপাল দিয়ে রক্ত পড়ছে। মরিয়ম অস্থীর হয়ে বলল,না মা আমি ঠিক আছি। কিছু হয়নি।

মিহি কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো। আব্বু পঁচা আব্বু ভালো নয়। আব্বু আমাকে ও মেরেছিল,তোমাকেও আব্বু ব্যাথা দিয়েছে।
আমরা আব্বুর সাথে থাকবো না। আমরা দাদুর কাছে চলে যাবো চল আম্মু।

মেহমেতের বুকটা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। নিজের মেয়ের এমন ভয়ঙ্কর কথা শুনে তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

হাসি খুশি জীবন টা এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। শুধু মাত্র তার একটি বোকামীর জন্য ।
হঠাৎ মেহমেতের আবার মেসেজ টোন বেজে উঠলো।

মেহমেত আর এক দন্ড দাঁড়ালো না। চোখের কোনের পানি টা মুছে হনহনিয়ে চলে গেল।

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন। আজকের পাওয়া লাশ টা ও বেওয়ারিশ। গত ৫টা খুন হওয়া লাশ গুলো ও ছিল বেওয়ারিশ ছিল। খুঁজে খুঁজে বেওয়ারিশ মানুষ গুলোই কেন খুন হচ্ছে??

গত খুনের ফাইল গুলো ঘাটতে লাগলো রকিবউদ্দীন এতো শুষ্ক খুন করা হয়েছে যে কোন প্রমাণ নেই, শুধু খুন করা হয়েছে এটাই এক সূত্র । লাশের গায়ে কোন দাগ কিংবা আচর কিছুই নেই
গলায় ছুরির একটা গভীর ক্ষত। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনে তাদের মৃত্যু হয়।

প্রথমে কয়েক জনের মৃত্যু কে ,চোর ডাকাতের কবলে পড়ে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল কিন্তু পরে তাদের শরীরে কোন দাগ না খুঁজে পাওয়াই এটা এটাকে প্লেনিং খুন নামে ধরা হয়েছে। কারন ডাকাতরা খুন করার সময় অবশ্যই ধস্তাধস্তি হতে পারে। অথবা একটা চর থাপ্পরের দাগ তো থাকবেই। কেননা তাদের সম্বল কেউই ইচ্ছাকৃত ভাবে দিতে চাইবে না‌। আর দিয়ে দিলেও তাকে অযথা খুন করতে তো যাবে না।

এসব নিয়ে চিন্তাই রকিবউদ্দীনের মাথা ফেটে যাচ্ছে। উপর তলা থেকে চাপ পড়েছে,১৫দিনের ভিতর কেস solved করতে হবে। প্লেস মিডিয়া দের আবার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই,তিল কে তাল বানানোই তাদের কর্ম।

চলবে_____????

পরবর্তী পর্ব গুলো পড়তে পেজটা ফলো করে রাখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here