#মায়াবতী
#পর্ব_৮
#সুলতানা_পারভীন
রাহাতের অপলক চাহনি দেখে মায়া লজ্জায় মুখটাও তুলতে পারছে না। এমন না যে এই মানুষটা শাড়িতে আজকে ওকে প্রথম দেখছে। প্রতিবারই শাড়িতে মায়াকে দেখে এভাবেই হা করে তাকিয়ে থাকে মানুষটা। আর এই অবাক চাহনিতেই মায়া লজ্জায় লাল নীল বেগুনি হয়ে যায়। মায়া বেশ অনেকক্ষণ পর মুখ তুলে রাহাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মানুষটা একইভাবে অপলকে ওকে দেখছে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মায়া রাহাতকে কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মায়ার ডাক মনে হয় রাহাতের কান পর্যন্তই পৌঁছচ্ছে না। মায়া এবার রাহাতের সামনে এসে রাহাতের একটা হাত ধরো ঝাঁকি দিতেই রাহাতের ঘোর কাটলো।
-স্যার?
-হুম? কি? কি?
-কতোক্ষণ থেকে ডাকছি আপনাকে–? শুনতে পান না?
-চোখের সামনে একটা পরী এসে দাঁড়ালে কে আর কি শুনতে পায় বলো?
-কি?
-কই কি!
-এতোক্ষণ এতো তাড়াহুড়ো করে ডেকে এখন চুপ করে গেলেন কেন?
-ওহ—। এসো এসো?
-কোথায়?
-এতো কথা বলো কেন?
রাহাত মায়াকে নিয়ে আরেকটা রুমে গেল। এই রুমটাও সুন্দর করে গোছানো। রুমের মাঝামাঝিতে খাট পাতা। একপাশে বারান্দা আর অন্য পাশে ওয়াশরুম। দেয়ালের গা ঘেষে ওয়ারড্রব আর আলমারি। খাটের পাশেই বেড সাইড টেবিল আর বিছানার সামনাসামনি তিনজনে বসার একটা সোফা। রুমের বেড কাভার, পর্দা হতে শুরু করে সব কিছুই ডার্ক ব্রাউন মেরুন কালারের। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। এসব দেখতে দেখতেই রাহাত মায়ার একটা হাত আলতো করে ধরে এনে খাটে বসিয়ে নিজে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে পাশে বসলো। প্লেটের ভাত মাখানো হলে এক লোকমা মায়ার মুখের দিকে তুলে ধরলো। মায়া অবাক চোখে রাহাতকে দেখছে।
-এই যে মায়াবতী? হা করো?
——————————
-কই? হা করো? খেয়ে একটা ব্যথার ওষুধ খেতে হবে তো?
-এটা কার রুম স্যার?
-এটা কার রুম আবার! আমা– আমার—-।
-আর আমি যে তখন গেলাম! ওটা?
-এতো প্রশ্ন কেন করো?
-বলুন না?
-বলছি না হা করো? কথা কম বলক হা করো?
– খাবো না–। বাড়ি যাব—।
-বেশি বাড় বেড়ো না মায়াবতী–। কথা না শুনলে হাত পা ভেঙে এখানেই বসিয়ে রেখে দিব বলে দিলাম–।
-কেন? আমি আপনার কে? পি.এ ও তো রাখছিলেন না—।
-তুমি বুঝবেও না তুমি আমার কে—।
-কে বলুন? ——উমম–।
মায়া আর কিছু বলার আগেই রাহাত ওর মুখে এক লোকমা ভাত পুরে দিলো।
-কথা কম বলো—–।
-হুহ—–। অসহ্য—-।
-হা——-?
মায়াকে খাইয়ে দিতে দিতে নিজে নিজেই কথা শুরু করলো রাহাত।
-আসলে–। ওই রুমটা ছিল মায়ের। মা শাড়ি খুব পছন্দ করতেন। যেমন পছন্দ করে পড়তেন শাড়িগুলো তেমনি যত্ন করেও রেখে গেছেন–।
-কার জন্য স্যার?
-তোমার জন্য—।
-হ্যাঁ?
-কার জন্য আর রাখবে ছেলের বউয়ের জন্য রেখেছে——–।
রাহাত মায়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে আবার খাইয়ে দিতে লাগলো। মায়াও মাথা নিচু করে আর প্রশ্ন না করে খাচ্ছে চুপচাপ।
-এই? মায়াবতী? আর একটু ভাত নিই?
-না না–। স্যার–। আর খেতে পারবো না–।
-জিজ্ঞেস করায় মানা করছো?
-নাহ স্যার—। আর পারবো না–।
-আচ্ছা —।
রাহাত নিজে হাত ধুয়ে মায়ার মুখ মুছিয়ে দিয়ে প্লেটটা রাখলো। তারপর মায়ার হাতে একটা ওষুধ ধরিয়ে দিলো। মায়া একবার ওষুধ দেখছে আর একবার রাহাতকে।
-কি সমস্যা? খাও না কেন?
-এই ওষুধটা একদম পচা–। আগেও খেয়েছি। মুখের ভিতরে লাগলেই তিতা তিতা—। ইইইই।
-হা হা হা—। আচ্ছা আগে একটু পানি নাও। আর টুপ করে ওষুধটা মুখে দিয়ে গিলে ফেল। মুখেও লাগবে না তিতাও লাগবে না-। হা হা হা।
-খারাপ –। মানুষের সমস্যাটা না বুঝেই খালি হাসে—। হুহ—।
-খেতে বললাম না?
-হুম–। খাচ্ছি তো?
আরো মিনিট পাঁচেক বসে থেকে মায়া আসলেই টুপ করে ওষুধটা গিলে ফেললো। আর রাহাত ওর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। মায়া সেটা দেখে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রাহাত লাঞ্চ করে মায়াকে বাসায় দিয়ে এলো। পুরোটা রাস্তা চুপ করে জুবুথুবু হয়ে বসেছিল মায়া। চোখে মুখে আগের সেই ছেলেমানুষি কৌতূহল খেলা করছে না। মায়ার দিকে তাকাতেই বারবার চোখাচোখি হচ্ছে দুজনের। দুজনেই তখন মুচকি হেসে অন্য দিকে ফিরছে। সারা রাস্তা এসব করেই কাটলো ওদের।
মায়াকে ওর ফ্ল্যাটে দিয়ে এসে রাহাত দেখলো মায়ার জন্য কেনা ওষুধগুলো বাসাতেই রয়ে গেছে। ভেবে রাখলো পরেরদিন মায়া অফিসে আসলে দিয়ে দিবে।
পরে দুটো দিন কাটলো। মায়া অফিসে আসে নি। রাহাত কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মেয়েটাকে না দেখে দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর। কল যে করবে সেই নাম্বারটা পর্যন্ত নেই। নিজে নিজেরই চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে রাহাতের। শেষ মেষ আর থাকতে না পেরে মায়ার ফ্ল্যাটে গিয়েই হাজির হলো রাহাত। দরজা খুলে সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে আগে কখনো দেখে নি রাহাত। আসলে মায়ার পরিবারের কাউকেই আগে দেখে নি ও আগে। কে কে আছে সেটাও জানে না। তাই এখন ছেলেটাকে চিনতেও পারলো না। আর কি বলবে কিছুই বুঝতে না পেরে চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলো বেচারা।
চলবে