#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৮
(অনুমতি ব্যাতিত কপি নিষেধ)
এডমিশনের কোচিং করার জন্য শালিক আহানের সাথে ঢাকায় চলে আসে।দু রুমের একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুরু করে টোনাটুনির সংসার।শালিক আগেই হার স্বীকার করে যে পৃথিবীর সব খাবার রান্না করতে পারলেও ভাত রান্না সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এবং সে এটাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহীও নয়।অগত্যা ভাতটা আহানেই করে।আর বাদ বাকী রান্না শালিক ইউটিউব দেখে করে।
শ্রাবণের মেঘলা বিকেল।বিরতিহীন টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে।রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটা শালিক নিজের মতো করে সাজিয়েছে।ওয়ান টাইম পাতলা প্লাস্টিকের গ্লাসে ছোট ছোট গাছ লাগিয়েছে।ক্যাকটাস শালিকের ভীষণ প্রিয়।তাই বেশির ভাগ গাছ গুলো ক্যাকটাস প্রজাতির।কোনোটা ফুল দেয় আর কোনোটা নিজের কাঁটা যুক্ত দেহ দিয়েই বারান্দার সৌন্দর্য বর্ধন করে। আহান শালিক বাসায় থাকে তখন এই বারান্দায় এসে দু’জন সময় কাটায়।
____💗
হসপিটাল থেকে চেকাপ করে বের হচ্ছিলো জুঁই।আচমকা পেছন থেকে কারও ডাকে সে থামে।পিছন ফিরে এক তরুণীকে হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে।জুঁইকে দেখে মেয়েটা এগিয়ে আসে।
” জুঁই আপু?”
” তুমি?”
তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে জুঁই।মেয়েটা মুচকী হেসে বলে,,,
” আমি শালিক।আনান ভাইয়ার মামাতো বোন আর এখন ছোট ভাইয়ের বউ।ভাইয়ার ফোনের ওয়ালপেপারে সেদিন আপনার ছবি দেখেছিলাম তাই চেনা আপনাকে।”
শালিকের মুখে আনানের কথা শুনে জুঁইয়ের মন বড়সড় হোঁচট খায়।আনানের ফোনের ওয়ালপেপারে জুঁইয়ের ছবি।তারমানে আনান এখনো জুঁইকে ভালোবাসে!আচ্ছা ওর বউ কি কিছু বলে না ওকে?নাকি আকাশের মতো ওর বউও সব জেনে শুনে মেনে নিয়েছে? খুব জানতে ইচ্ছে জুঁইয়ের আনানের সম্পর্কে। কেমন আছে ও।ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে।
” আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো আপনার সাথে দেখা করার।”
শালিকের ডাকে জুঁইয়ের ধ্যান ভাঙে।
” ভাইয়াকে যে কত বলছি বলতো বিয়ের সময় দেখিস।আমার সাথে কি এক কাপ কফি খাওয়া যাবে?”
” শিউর।”
শালিক জুঁই হসপিটালের ক্যান্টিনের দিকে যায়।গিয়ে দু কাপ কফি আর দুটো শর্মা অর্ডার দেয় শালিক।জুঁই কফির কাঁপে চুমুক দিয়ে বলে,,,
” তা বলো তোমার খবর কি?”
” আর খবর!আপনার না হওয়া…..”
” তুমি বলতে পারো আমায়।”
” ওই তো তোমার না হওয়া দেবরকে বিয়ে করে ভেবেছিলাম লক্ষ্মী বউ হয়ে সংসার করবো তা আর হলো কই!ঘাড়ে ধরিয়ে এডমিশনের কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিলো।”
শালিকের কথায় জুঁই হাসে।বেশ অনেক দিন পর সে প্রাণ খুলে হাসতে পারছে।জুঁইকে এভাবে হাসতে দেখে শালিক এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।বিমোহিত কন্ঠে বলে,,,
” ভাইয়া মনে হয় এই হাসি দেখেই তোমার প্রেমে পরেছিলো না?”
জুঁইয়ের হাসি মলিন হয়ে যায়।বুকের মধ্যে থাকা ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠছে একটু একটু করে।ভুলতে গিয়েই বারবার মনে পরছে আনানকে।সামনে চলে আসছে ওর সম্পর্কিত নানা প্রসঙ্গ।জুঁই দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসি মুখে বলে বলে,,,
” আমার না হওয়া দেবরের খবর কি?”
” এই মেডিকেলেই এমবিবিএস করছে।”
কথা শেষ হতে না হতেই শালিকের ফোন আসে।ব্যাগ থেকে বের করে ফোনের স্ক্রিনে আহানের নাম ভাসতে দেখে শালিক।ফোন রিসিভ করে সালাম দেয় শালিক।ওপাশ থেকে সালামের জবার দিয়েই আহান শালিককে জিগ্যেস করে যে সে কথায় আছে।শালিক জবাব দেয়।
” ক্যান্টিনে আছি।তুমিও তাড়াতাড়ি আসো।একটা সারপ্রাইজ আছে।”
শালিক কল কেটে দেয়।জুঁইকে ওর স্বামী,শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে শালিক।জুঁই খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় সেগুলোর।এরই মধ্যে আহানও চলে আসে। জুঁইকে দেখে সে ছোটো খাটো ধাক্কা খায়।সাথে খুশীও হয়। এতদিনের জমানো সব কথা এক এক করে বলতে লাগে তিনজন।কথার এক পর্যায়ে জুঁই বলে,,,
” আনানের ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে?”
জুঁইয়ের কথা শুনে শালিক আহান দু’জন একেঅপরের দিকে তাকায়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহান বলে,,,
” ভাইয়া বিয়ে করে নি।রাজী হয় নি করতে।”
” তোমরা আছো কি করতে?জোর করে বেঁধে বিয়ে করিয়ে দিতে পারলে না?”
” তুমি তো জানোই ভাইয়া কেমন মানুষ।”
” সবসময় নিজেকে সঠিক মনে করে।এবং ত্যাগ করে মহান হতে চান।”
তাচ্ছিল্যের সুরে উদাস কন্ঠে বলে জুঁই।
” আপু তুমি হসপিটালে এসেছিলে কেন?কারও কিছু হয়েছে?”
আহানের কথায় ধ্যান ভাঙে জুঁইয়ের।কিঞ্চিৎ হেসে বলে,,,
” তোমার ভাইকে বলে দিও তার ত্যাগের পুরষ্কার
হিসেবে আল্লাহ চাইলে তিনি মামা ডাক শুনতে পারবেন।”
জুঁইয়ের কথা শুনে আহান শালিক দুইজন ই খুব খুশী হয়ে যায়।দু’জন ইই একসাথে জুঁইকে অভিনন্দন জানায়।আহান জুঁইকে সিএনজি ঠিক করে উঠিয়ে দেয়।শালিক জুঁইকে বিদায় দেওয়ার আগে জুঁইয়ের নাম্বার নিয়ে নেয়।গল্প গুজব করা যাবে।
____💗
রাতে খাওয়া শেষে আহান শালিক দু’জনেই পড়ছিলো।আহানের পড়ার দিকে পুরোদমে মনোযোগ থাকলেও শালিকের নেই। সে বিছানায় বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে।তা আহানের চোখ এড়ায় না।সে গম্ভীর গলায় বলে,,,
” পড় শালিক পড়।না হলে রিক্সা ওয়ালার সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
” তুই জামাই।তুই রোমান্টিক রোমান্টিক আলাপ পারবি।তুই কেন পড়তে বলিস আর রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ের হুমকি দেস।লজ্জা করে না?”
” পড়াচোর মেয়েকে বিয়ে করে লজ্জার মাথা খে য়ে ফেলেছি।”
শালিক কিছু বলতে গিয়েও বলে না।আহানও পড়ায় মন দেয়।কিন্তু খানিকক্ষণ বাদে দেখা যায় শালিকের আচার-আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। লাজুক লাজুক হাসছে সে।আহান বইয়ের ভেতর কলম রেখে বইটা বন্ধ করে বলে,,,
” সমস্যা কি?”
” অনেক কিছু।আনলিমিটেড প্রবলেম ওয়ান সালিউশন।”
শালিকের কথার মানে খুঁজে পায় না আহান।ভ্রু কুঁচকে বলে,,,
” মানে?”
” তোমার কি মনে চায় না একটা বাবু তোমায় আব্বা ডাকুক?”
” বড় হ।তখন একটা কেন দশটা বাবু আমায় আব্বা ডাকবে নি আর তোকে আম্মাও ডাকবে নি।”
” আর কত বড় হবো?আমার বয়স একুশ।আর আমার দশটা লাগবে না একটা হলেই হবে।”
কথাটা বলেই হেসে মুখ লুকোয় শালিক।আহান ভেংচি কেটে বলে,,,
” নির্লজ্জ মেয়ের লাজুক হওয়ার বৃথা চেষ্টা।”
” দাদু বলছে জামাইয়ের সামনে শরম পাওয়া লাগে না আর তুমি তো আমার আগে থেকেই চেনা।জন্মের পর থেকেই। তোমার সামনে কিসের লজ্জা শরম?”
শালিকের কথা শুনে আহানের অনেক হাসি পায় কিন্তু প্রকাশ করে না সে।হাসিকে গলধঃকরণ করে ফেলে সে।কিছুটা রাগী ভঙ্গিতে শালিককে ধমক দেয় সে।শালিক তা গায়ে মাখে না।লাজুক কন্ঠে বলে,,,
” জুঁই আপুর কথা শোনার পর থেকে আমারও না মন চাচ্ছে সাদ ভাইয়াকে মামা আর আনান ভাইয়াকে……
থেমে যায় শালিক।মনে মনে এক গভীর হিসাব মিলাতে থাকে যার প্রকাশ ঘটায় তার চোখজোড়া।প্রশ্নসূচক কন্ঠে আহানকে বলে,,,
” আচ্ছাহ!আনান ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই।তার মানে সেই হিসাবে ভাইয়া আমার বাবুর মামা।আবার তোমার বড় ভাই।সেই হিসাবে বাবুর চাচ্চু লাগবে ভাইয়া।এতগুলা ডাক বাবু কিভাবে দিবে ভাইয়াকে?কনফিউজড হয়ে যাবে না বাবু?”
” গরু কিনার নাম নাই হাড়ি কোনটায় দুধ,কোনটায় ঘি,কোনটায় মাখন,কোনটায় ননি রাখবে তা নিয়ে বসেছে।সামনে মেডিকেল এডমিশন পড়।বাবু কোনো অশিক্ষিত মহিলাকে আম্মা ডাকবে না।”
ধমক দিয়ে বলে আহান।শালিক পালটা রাগ দেখিয়ে বলে,,
” হুহ,বাবুর মা অশিক্ষিত হয় কিভাবে?বাবুর মা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।”
চলবে,,ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৯
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
রাত প্রায় দশটা।এমন সময় জুঁইয়ের ফোনে কল আসে।কল রিসিভ করে জুঁই যা জানতে পারে তার জন্য জুঁই মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।আকাশ আর নেই।সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আলিকদমে দুর্বৃত্তদের সাথে সেনাবাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়।সেই বন্ধুকযুদ্ধেই আকাশ শাহাদাত বরণ করেছে। সংবাদটা শোনা মাত্রই জুঁইয়ের পায়ের তলার মাটি সরে যায়।জ্ঞান হারিয়ে ফেলে জুঁই।শব্দ শুনে ঘরে আসে জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি অর্থাৎ আকাশের মা।গর্ভবতী পুত্রবধূকে এই অবস্থায় দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে পরেন।ওয়াশরুম থেকে হাতে করে পানি এনে জুঁইয়ের মুখে পানির ছিটা মারেন সে।
” কি হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে?”
” মা আপনার ছেলে….”
কথা শেষ করতে পারে না জুঁই।আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।ছেলের কথা শুনে আরও চিন্তিত হয়ে পরেন জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি।গত পরশু ছেলের সাথে কথা হয়েছিলো তার। পাহাড়ের অবস্থা ভালো না ছেলে তাকে জানিয়েছেন।আকাশের কিছু হয় নি তো?জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি আবার পানির ছিটা দেন।জুঁইয়ের জ্ঞান ফেরে।আকাশ বলেই সে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি আরও আতঙ্কিত হয়ে যান।
” কী হয়েছে আকাশের?”
জুঁই কথা বলে না। হাউমাউ করে সে কেঁদেই যাচ্ছে।জুঁইয়ের কান্না দেখে আকাশের মায়ের আতঙ্ক ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
” এই জুঁই বলো না আকাশের কি হয়েছে?”
” আকাশ আর নেই মা।”
কথাটা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে দেয় জুঁই।জুঁইয়ের কথা শুনে আকাশের মা ও থমকে যায়।কয়েক মুহুর্তের জন্য সে মূর্তির ন্যায় হয়ে উঠে।তারপর হাও মাও করে কেঁদে দেন তিনিও।স্ত্রী পুত্র বধুর কান্না শুনে আকাশের বাবা আসেন।স্ত্রীর মুখে নিজের পুত্রের মৃত্যুর খবর শুনে তিনিও ভেঙে পড়েন। কথায় আছে না?খারাপ খবর বাতাসের আগে যায়।মুহুর্তেই আশেপাশে আকাশের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরে।
হেলিকপ্টার দিয়ে আকাশের মরদেহ আনা হয়।ভোর রাতের মধ্যেই আকাশের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি শোকে বিলাপ করছে।প্রতিবেশি মহিলারা তাকে সামলাচ্ছে।আর জুঁই?সে আকাশের খাটিয়ার পাশে পাথরের ন্যায় হয়ে বসে আছে।অপলক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে নিজের প্রিয়তম বন্ধুর দিকে।কি সুন্দর চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে ছেলেটা!স্বার্থপরের মতো চলে গেলো জুঁইকে একা করে।অনাগত সন্তানের কথাও ভাবলো না মানুষটা!
জুঁই আসলেই দুর্ভাগা আর কুফা।মামি ঠিক ইই বলতো।জন্মের আগেই বাবা জন্মের পরে মা।এদিকে সন্তান জন্মের আগেই নিজের স্বামীকে হারালো।আকাশ শুধু জুঁইয়ের স্বামী ছিলো না সাথে ছিলো খুব ভালো বন্ধু।জুঁইয়ের বলা প্রতিটি শব্দকে আকাশ প্রাধান্য দিতো।স্বামীর অধিকারের জন্যও যে মানুষটা কখনো জুঁইকে জবরদস্তি করে নি।অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর।আগে যদি জুঁই জানতো আকাশকে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিলে আকাশ এভাবে চলে যাবে তাহলে জুঁই কখনো তাকে তার অধিকার দিতো না।
____💗
সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে কলিজা কেঁপে ওঠে আহানের।শালিককে পড়তে দিয়ে ঘুমিয়েছিলো সে যেহেতু সকাল আটটায় তার ক্লাস আছে।কিন্তু মেয়েটা যে পড়া বাদ দিয়ে এমন কাজ করবে আহান কল্পনাও করে নি।
” শালিক!”
গম্ভীর স্বরে ডাক দেয় আহান। শালিক বাচ্চাদের মতো মোচড়ামুচড়ি করে।ঘুমন্ত গলায় বলে,,,
” রাত তিনটা পর্যন্ত পড়ছি।একটু ঘুমাতে দেও।”
” পড়ছিস না ছাই আমার মুখের এই অবস্থা কেন!”
ধমক দিয়ে বলে আহান।ধমক খেয়ে শালিক এক লাফে ঘুম থেকে উঠে যায়।ঘুমু ঘুমু চোখে আহানের চেহারা দেখে সে ভুত ভুত করে লাফিয়ে ওঠে।
” আল্লাহ গো ভুত!”
” নিজে আকাম করে নিজেই ভয় পাস?”
” সকাল বেলা ভুত বের হয় কেমনে।”
” তোর জামাই আমি পেত্নী কোথাকার।”
আহানের কথা শুনে শালিক মুখ টিপে ফিক করে হেসে দেয়।আহান তাজ্জব হয়ে যায়।
” হাসছিস কেন?”
” তোমায় না ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
” এত ফাজলামো করিস কেন তুই?”
” এত ভাল্লাগে কেন ফাজলামো করতে?বিশেষ করে তোমার সাথে!”
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে শালিক।আহান কিছুটা বিব্রত হয়ে যায়।মেয়েটা বেশ ভালো করেই জানে আহানের দুর্বলতা সে।দুষ্টুমি করেও এমন ভাবে তাকাবে যে চাহনিতে আহানের রাগ গলে যেতে বাধ্য।
” তুই আমায় এমন সাজিয়েছিস কেন?”
দাঁতে দাঁত চেপে বলে আহান।শালিক মৃদু হেসে বলে,,
” ইউটিউবে মেকাপ টিউটোরিয়াল দেখছিলাম তো!”
” তাই বলে তুই তার ট্রায়াল আমার ওপর দিবি!”
” তো কার ওপর দেবো!তুমি ছাড়া কে আর আছে আমার বলো!”
নিষ্পাপ চাহনিতে তাকিয়ে বলে শালিক।আহান বিরক্ত হয়।সে চাহনির মায়ায় ডুবে যাওয়ার আগেই আহান সেই স্থান প্রস্থান করে।শালিক বিছানায় আবার ধপাস করে পরে ঘুমিয়ে পরে।
_____💗
বাদ জোহর আকাশের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আকাশ ও তার পরিবারকে বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়।দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করায় আকাশের মরদেহকে গার্ড অফ ওনার দেওয়া হয়।জানাজা নামাজ শেষ হলে দাফন করা হয়।
আকাশের মৃত্যুতে সবচে বেশি ভেঙে পরেছে জুঁই তা আর না বোঝার কোনো উপায় নেই।মেয়েটা পাথরের ন্যায় হয়ে গেছে।বলা,চলা কিছুই বলছে না।আকাশের ইউনিফর্ম বুকে জড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।সাদের বউ অদ্রি বেশ কয়েকবার জুঁইকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করে।ব্যর্থ হয় সে।
” দেখো জুঁই তুমি এইভাবে না খেয়ে থাকলে তোমার বাচ্চার কি হবে বলো তো?”
জুঁই নিশ্চুপ।অদ্রি আবার বলে,,,
” বাচ্চার কথা ভেবে অন্তত কিছু খাও।”
” ভালো মানুষরা তাড়াতাড়ি চলে যায় তাই না ভাবী?”
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে জুঁই।অদ্রি কান্না চেপে জুঁইকে জড়িয়ে ধরে।জুঁই বিলাপ করতে করতে বলে,,,
” জানো ভাবী মানুষটা না খুব ভালো ছিলো গো।কখনো আমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করে নি।আমাকে সব সময় প্রাধান্য দিতো।যা আগে কেউ কখনো দেয় নি।”
” এখন দোয়া করতে হবে ওর জন্য।মানুষটা তো আর ফিরে আসবে না।মানুষটা নিজের একটা অংশ তোমাকে দিয়ে গেছে।তোমার ভেতরেই ছোট্ট একটা প্রাণ একটু একটু করে বড় হচ্ছে।তাকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনতে হবে না?”
” যখন ও আমায় তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন আমি কি বলবো।বাচ্চাটা আমার মতোই দুর্ভাগা হলো।বাবার আদর পেলো না।”
___💗
ধানমন্ডি লেকের পাশ দিয়ে হাঁটছে শালিক আহান।আহান স্বাভাবিক ভাবে হাঁটলেও শালিক কিছুটা খরগোশের ন্যায় লাফাচ্ছে।আহান শালিকের এই বাচ্চামোগুলো বেশ উপভোগ করে।মেডিকেলে পড়াশোনার কারাগারে বন্দি থাকা আহানের কাছে শালিক শালিকের বাচ্চামোগুলো যেন এক বিশাল মাঠ যা দূরে গিয়ে মিলিত হয়েছে নীল আকাশের সাথে।যেখানে আহান প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারে।
” আচ্ছা শালিক?”
আহানের ডাকে শালিক থেমে যায়।পিছন ঘুরে বলে,,
” কি?”
” তুই কি কখনো বড় হবি না?”
” তুমিও কি কখনো আমায় তুই বলা পুরোপুরি ছাড়বে না?”
আহান লাজুক হাসে।শালিক কংক্রিটের তৈরি বসার জায়গায় গিয়ে বসে।আহানও তার পাশে গিয়ে বসে।শালিক মৃদু হেসে বলে,,
” আসলে আমি মানুষটা একটা দেহের ভিতর অনেক গুলো সত্তাকে পুষে রেখেছি।কারও কারও কাছে বাচ্চা, ইমম্যাচিউর একটা মেয়ে।যে কিছু বুঝে না।তাদের কাছে আমি খুবই নরম স্বভাবের,মিশুক প্রকৃতির হাসিখুশি মেয়ে।আবার কারও কাছে আমি অল্প বয়সেই ম্যাচিউর হয়ে যাওয়া একটা মেয়ে।যে দুনিয়ার সব প্যাচট্যাচ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা নিয়ে চলে।তাদের কাছে আমি অল্পভাষী, রুক্ষ স্বভাবের একজন মেয়ে।যার মুখ দিয়ে অনবরত কথার বিষ নির্গত হয়।বেয়াদবও বটে!আসলে আমি ব্যক্তি স্থান বিশেষে নিজের ক্যারেক্টার চ্যাঞ্জ করি।যেমন ধরো তোমার কাছেই আমি বাচ্চা সুলভ স্বভাবের বাচাল,ছিচকাঁদুনি প্রকৃতির মেয়ে।কিন্তু অন্য কারও কাছে গিয়ে তুমি ঠিকই শুনতে পারবে আমার আচরণ নব্বই বছর বয়সী বৃদ্ধার ন্যায়,আমি হৃদয়হীনা।আমি অল্পভাষী রুক্ষভাষী স্বভাবের খারাপ মেয়ে।”
” অনেক শক্ত শক্ত কথা বললে।”
শালিক হাসে।হেসে বলে,,
” নাও চয়েজ ইজ ইউর।তুমি কোন ক্যারেক্টারের শালিককে চাও?”
” আমার বাচ্চা শালিক ই ভালো আছে।এর কাছেই আমি শান্তি পাই।অন্য কোনো শালিককে লাগতো না আমার।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত। লিখতে লিখতে মস্তিষ্ক সেলফোনের ন্যায় হ্যাং খায়। কাজ করে না। হাতও ক্লান্ত আর ব্যথিত হয়। মন লিখতে মন চায় অথচ, লেখা এগোয় না, শব্দ বাড়ে না। দু-তিন ঘন্টা ব্যয় করে লিখতে চাই ঝাক্কাস আলী হয়ে যায় আক্কাস আলী