মিঠা প্রেম পর্ব -১৬+১৭

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মেয়েকে ডাক দেন মিসেস লাকী।বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে অহনা বলে,,,

” এত সকালে কেউ ডাকে?কালকে একটা বিয়ে গেলো!”

” শালিককে ডেকে তুলে আবার ঘুম দিস। যা শালিককে ডেকে উঠা।আমি ডাকলে বিষয়টা খারাপ দেখাবে।তুই ননদ লাগিস তুই যা।”

” এত সকালে ও কি করবে?বেচারি ঘুমাক।কালকে বিয়েতে ত ওর ওপর দিয়ে কম ধকল যায় নি!”

চোখ কচলাতে কচলাতে বলে অহনা।মেয়ের কথায় খানিকটা বিরক্ত হন মিসেস লাকী সাথে রেগেও যান।বড় হয়ে গেলো এখনো এই মেয়ে কিচ্ছু বুঝে না কথার ইশারা ইঙ্গিত। রেগে গিয়ে মেয়েকে বলেন,,,

” সব কথা তোকে ভেঙে বলা লাগবে?নেচে নেচে বিয়ে বসেছে এবার বুঝতে হবে না সংসারের জ্বালা?”

মায়ের কথা শুনে অহনা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসে দেয়।

” বুঝেছি।”

অহনা উঠে যায়।গিয়ে আহানের ঘরে কড়া নাড়তে থাকে।কিন্তু কারও দরজা খোলার নাম নেই।বেশ কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর আহান উঠে দরজা খুলে।

” এত সকালে কি?”

” তোর জেনে লাভ নাই।তোর বউকে ডাক। ”

” বল তুই।তারপর ওকে ডেকে তুলছি।”

” আম্মু শালিক আপুকে নাশতা বানাতে বলছে।”

অহনার কথা শুনে আহান ঘড়িতে সময় দেখে।পাঁচটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট।খানিকটা রেগেই যায় আহান।ধমক দিয়ে অহনাকে বলে,,,

” এত সকালে কেন ও নাস্তা বানাবে?নাস্তা তো করা হয় আটটার দিকে।সারাদিন কালকে ধকল গেছে আমার শালিক দুইজনের ওপর দিয়েই।তোর ক্ষুধা লাগলে নিজের নাস্তা নিজে বানিয়ে খা যা।”

কথাটা বলে মুখের ওপর আহান দরজা আটকিয়ে দেয়।আহানের ব্যবহারে অহনার শালিকের ওপর বেশ রাগ হয়।বিয়ে করতে না করতেই ভাইকে বশ করে ফেলেছে।কিভাবে বউয়ের হয়ে কথা বলে মুখের ওপর দরজা মেরে দিলো!রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের ঘরে ফিরে যায় অহনা।মেয়েকে দেখতেই মিসেস লাকী শালিক উঠেছে কি না জিজ্ঞাসা করেন।অহনা উচ্চস্বরে মাকে বলে,,,

” তোমার ছেলেকে যেভাবে বশ করেছে তাতে মনে হয় না নবাব নন্দিনী কোনো কাজ করবে সংসারের।”

” কি হয়েছে?”

” কি আর হবে বউকে কাজ করতে হবে শুনে তোমার ছেলে কথা শুনিয়ে মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো।”

____💗

ন’টার দিকে আহানের ঘুম ভাঙে।উঠে দেখে শালিক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মানুষ ঘুমালে ত্বকের লোমকূপ থেকে তৈলাক্ত পদার্থ নির্গত হয় যার কারণে মানুষের মুখে তৈলাক্ত ভাব আসে।শালিকের মুখেও তৈলাক্ত ভাব এসেছে।কিন্তু তাতেও তার সৌন্দর্যের এক্টুকুও ভাটা পরে নি।আহান অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত শালিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে! কে বলবে জাগ্রত অবস্থায় এই মেয়ে আহানকে জ্বা লি য়ে মা রে।

আহান মুচকী হেসে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়।আধঘন্টা পরে এসে দেখে শালিক এখনো সেই ম রার মতো ঘুমোচ্ছে।

” শালিক ওঠ।দশটার মতো বাজে।”

” আম্মু আরেকটু ঘুমাই না!তুমি যাও।”

” আমি তোর আম্মুর বাপ বলছি।ওঠ।”

হালকা ধমক দেয় আহান।ধমক শুনে শালিক “আল্লাহগো” বলে লাফ দিয়ে ওঠে।

” এমন লাফ দিয়ে উঠলি যে!”

” অহ তুমি?আমি ভাবছি আম্মুর ম রা বাপ।আমায় নিতে এসেছে।”

” তোকে নিতে এসেছে মানে?তোকে নিতে আসবে কেন?”

” ছোট গিন্নি বলতো তো!তার বউ বিয়ে করলো আরেকজনকে তাই হয়তো রাগ করে নিতে আসছেন উনি!”

” হয়েছে হয়েছে!যা ফ্রেশ হয়ে আয়।তুই বেরুলে আমি নাস্তা করতে যাবো।”

নাস্তা মিসেস লাকী ইই বানিয়েছেন।খাবার তালিকায় আছে জ্যাম পাউরুটি,ডিম পোচ আর ফলের জুস।এক কথায় ইংলিশ ব্রেকফাস্ট যাকে বলে।

আশরাফ সাহেব আজ ভীষণ খুশী।কত্ত দিন পর সবাই এক সাথে সকালের নাস্তা করতে চলেছেন।
আহান আর শালিক পাশাপাশি বসে।শালিক আহানকে পাউরুটিতে জ্যাম লাগিয়ে দেয়।তারপর নিজের জন্য প্রস্তুত করে।খেতে খেতে মিসেস লাকী বলে,,,

” আমাদের শালিক কিন্তু খুব ভালো পোলাও আর মুরগীর মাংস রান্না করতে পারে।আজকে দুপুরের খাবার শালিক রান্না করবে।”

শালিক আর তাতে দ্বিমত পোশন করে না। ব্রেকফাস্ট শেষ করেই শালিক দুপুরের রান্নার কাজে লেগে পরে।প্রথমেই ফ্রিজ থেকে বের করে মুরগী মাংসের বরফ ছাড়ার জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখে। মাংসের বরফ ছাড়ার সময়টুকুতে পোলাও করে ফেলে সে।বেশিক্ষণ নিয়ে চাল ভাজায় পোলাওটা বেশ ঝড়ঝড়ে হয়।তেলের সাথে ঘি দিয়েছিলো শালিক।যার কারণে সুন্দর একটা গন্ধ বের হয়।আহান দাঁড়িয়ে শালিকের রান্না করা দেখছিলো।অলস মেয়েটা একদিনে কেমন সংসারি হয়ে গেছে।আগে মন না চাইলে পানি পর্যন্ত গ্লাসে ভরে খেতো না। সৃষ্টি কর্তার সব সৃষ্টিই রহস্যময়।তবে মেয়ে জাতটা একটু বেশিই রহস্যে ঘেরা।
আহানের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা শালিক খেয়াল করে।সে টিপ্পনী কেটে বলে,,,

” নয়া নয়া বিয়ে করছো তো তাই এমন বউয়ের আঁচল ধরে আছো।কয়টা দিন যেতে দাও!তখন দেখবো ভালোবাসা কই যায়!”

” তোমায় যতবার দেখি ততবার ইই নতুন করে তোমার প্রেমে পরি।ভালোবেসে ফেলি নতুন করে।”

” বাদ দাও মিয়া।পৃথিবীর সব ভালোবাসার স্থায়িত্ব বড়জোর চারবছর।আগেও বলছি আমি।”

” তাই রোজ তোমাকে নতুন করে ভালোবাসি।”

মাংস কষানো হয়ে গেলে আহান একটা বাটি নিয়ে শালিকের পাশে দাঁড়ায়।শালিক তা দেখে মজা করে বলে,,,

” মাফ করবেন টাকা নাই।”

” টাকা কে চাইছে।মাংস দে।টেস্ট করি।”

শালিক কোমড়ে হাত দিয়ে আহানের দিকে পেছন ফিরে তাকায়।আদুরে রাগ নিয়ে বলে,,,

” কালকে রাত্রে কি চুক্তি হইছে?”

” কী?”

” এই ব্রেন নিয়ে তুমি ডাক্তারি পড়ছো?কালকের কথাও মনে নেই?”

” ডাক্তারি পড়তে পড়তেই সব ভুলে যাচ্ছি।”

” চুক্তি হয়েছিলো আমাদের।যে আমাদের মধ্যে তুই তুকারি থাকবে না।নো মোর তুই তুকারি।ভালোভাবে বলো। ”

” মাননীয় অর্ধাঙ্গিনী আপনার রান্না চেকে দেখার সুযোগ করে দিন প্লিজ।”

শালিক হেসে বাটিতে এক টুকরো মাংস দেয়।আহান তার অর্ধেক খেয়ে বলে,,,

” উমমম!অসাধারণ। ”

” লবণ ঠিক আছে?আমি আবার লবণ দিতে ভুলে যাই।”

” তুমিই খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে!”

কথাটা বলে আহান বাকী মাংসটুকুও শালিককে খাইয়ে দেয়।

_____💗

ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে রুমে নিয়ে আসছিলো আনান।এমন সময় অহনাকে রান্না ঘরে দেখে সে।চাল চলণ সন্দেহ ভাজন দেখে সে আড়ালে দাঁড়িয়ে অহনাকে পর্যবেক্ষণ করে।কেবিনেট থেকে লবণের কৌটা বের করে বেশ খানিকটা লবণ অহনা মুরগীর তরকারিতে দিয়ে দেয়।

খাবার নষ্ট করা আনানের বরাবরই অপছন্দের। কত মানুষ না খেয়ে আছে।এদিকে জিদ আর হিংসের বশে অহনা এতগুলো মানুষের খাবার নষ্ট করলো।

আনান নিজের ঘরে না গিয়ে আহানের ঘরে যায়।আহান তখন ফোনে ব্যস্ত।আনান গিয়ে খাটে বসে।

” শালিক কই?”

” গোসলে।কেন?”

” এমনি।ওকে একটু আমার সাথে দেখা করতে বলিস তো!কথা আছে।”

কথাটা বলে আনান উঠে চলে যায়।ঘন্টাখানেক পর শালিক বের হয়।আহান শালিককে আনানের কথা জানায়।শালিক দেরি না করে আনানের ঘরে যায়।

” ভাইয়া ডাকছিলে?”

” হু।রান্নাঘরে চল একটু।”

” কেন?”

” গেলেই বুঝতে পারবি।”

আনান রান্না ঘরে গিয়ে একটা চামচে করে তরকারির কিছুটা ঝোল শালিককে খেতে দেয়।শালিক খায় না।তীব্র আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে লাগে,,,

” নিজের রান্না এভাবে খেলে তো বাকীরা খেতেই পারবে না ভাইয়া।”

” না খেলে খাওয়া তো দূরে থাক মুখেও তুলতে পারবে না কেউ।খা।”

শালিক খায়।মুখে তোলা মাত্রই চেহারার ভাবভঙ্গি বদলে যায়।আনান ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে মুখ টিপে হাসে।দৌড়ে বেসিনের কাছে ছুটে যায় শালিক।কুলকুচি করে আবার রান্না ঘরে আসে।

” এত লবণ আসলো কোথা থেকে!”

” ঘর শত্রু।”

” এখন এতগুলো তারকারি কি করবো?খাবার জিনিস নষ্ট করবো ফেলে দিয়ে?”

আনান হাসে।হাসতে হাসতে জগের অনেকটা পানি তরকারিতে ঢেলে দেয়।শালিকের তা দেখে মাথায় হাত।

” এটা তুমি কি করলে ভাইয়া?”

” ঝটপট ক’টা আলু কে টে দে তো আমায়।”

” কেন?”

” যা করতে বলছি কর।হাতে সময় নেই একটু পরেই গেস্টরা চলে আসবে। ”

শালিক আনানের কথামত আলু কেটে দেয়।আনান আলুগুলো তরকারিতে দিয়ে তরকারিটা জ্বাল দিতে লাগে।ঝোল খানিকটা শুকিয়ে এলে দুই জন আবার চেকে দেখে।নোনতা ভাব কিছুটা কমেছে।বেশি জ্বাল দিলে আবার মাংস গলে যাবে।তৎক্ষনাৎ শালিকের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।আচ্ছা এখানে একটু দুধ ফেটিয়ে দিলে কেমন হয়!চোরাই পদ্ধতিতে বাটার মিল্ক চিকেন কারী!

শালিক ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খানিকটা গরম করে নিয়ে লেবুর রস দেয়।দুধ খানিকটা ফেটে যায়।তারপর দুধ টুকু তরকারিতে ঢেলে দেয়।দু চার মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নেয়।চামচে করে একটু ঝোল নিয়ে শালিক আনান দুইজন ই স্বাদ চাকেএ। নাহ!এবার সব ঠিক আছে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৭
(অনুমতি ব্যাতিত কপি নিষেধ)

খাবার মুখে নিয়ে সবাই শালিকের রান্নার প্রশংসা করতে দেখে মিসেস লাকী আর অহনার মনে খুঁতখুঁতানির সৃষ্টি হয়।তরকারিতে এত লবণ দেওয়ার পরও সেভাবে কারও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না কেন!মিসেস লাকী রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকান।

” বিশ্বাস করো আম্মু আমি অনেক লবণ দিয়ে ছিলাম।নিজে চেকেও দেখে ছিলাম।”

ফিসফিসিয়ে বলে অহনা।মা মেয়ের কানাকানিটা বেশ ভালোই উপভোগ করে শালিক।মুখ টিপে হাসতে থাকে।দূর থেকে মা মেয়ের তা দেখে সর্বাঙ্গে তীব্র জ্বলুনির সৃষ্টি হয়।যদিও তা মনের জ্বালা নামেই পরিচিত! দুই পরিবার এক হয়েছে আজ।তাই দুই ধাপে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।ছেলেদের খাওয়ার পর্ব শেষ হলে মেয়েরা বসে।কাছ থেকে তরকারির রঙ দেখেই অহনার চোখ ছানাবড়া। কেমন একটা সাদা সাদা ভাব এসেছে তরকারিতে।অথচ লবণ মেশানোর সময় তা ছিলো টকটকে লাল। অহনা জোর পূর্বক স্বাভাবিক কন্ঠ নিয়ে বলে,,,

” তরকারির রঙ এমন কেন ভাবি?”

” বাটারমিল্ক চিকেনের রঙ এমন ইই হয় রায়বাঘিনী ননদিনী!”

খানিকটা ঠেস মেরেই বলে শালিক।খাবার মুখে তুলে মা মেয়ের চোখ কপালে উঠে যায়।এত সুস্বাদু রান্না তারা আগে কখনো খায় নি এ জন্য নয়।লবণ দেওয়া তরকারির স্বাদ এমন সুস্বাদু হওয়ায় বেশি অবাক হয় মা মেয়ে।

___💗

” তুই আসলেই লবণ দিয়েছিলি?”

” তোমার কসম আম্মু।”

” উল্টাপাল্টা কসম কাটবি না।তোর জন্য আমি মরতে পারবো না।”

মিসেস লাকীর কথা শেষ হতে না হতেই ট্রেতে মগ ভর্তি চা আর পিরিচে সাজানো বিস্কুট নিয়ে হাজির হয় শালিক।অপ্রস্তুত অবস্থায় শালিককে দেখে মা মেয়ে দু’জন ইই চমকে যায়।ট্রেটা ড্রেসিনটেবিলের ওপর রেখে বলে,,

” ট্রাস্ট হার ফুপ্পি সরি শ্বাশুমা।সে অনেকগুলা লবণ দিয়েছিলো।কিন্তু কি আর করার!আপনি ভুলে গেলেও কি আর আমি ভুলি!আমরা তো একই গুদামের চাল খেয়ে বড় হওয়া মেয়ে না?আপনিও যে বংশের মেয়ে আমিও সে বংশের।আপনি ডালে চললে আমি চলি পাতায়য়য়…পাতায়।”

কথাটা বলে কৃত্রিম হাসি দেয় বসে শালিক।অহনা ভেংচি কেটে বলে,,,

” তার নমুনা দেখলাম।ভাইয়াকে কালোজাদু করে বশ করেছো।”

” আচ্ছা! আমার জামাইকে করছি বশ তোর জামাইকেও তো বশে এনে দেবো নি ।শুধু বিয়ে কর তুই।”

শালিক এই কথা বলা মাত্রই অহনা কেঁদে দেয়।ন্যাকা কান্নাই বলা চলে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,

” দেখেছো আম্মু আসতে না আসতেই আমায় বিদায় করার জন্য উঠে পরেছে!”

” তোমার অভিনয় হয় নি তুমি আউট।”

গম্ভীর ভাব ধরে বলে শালিক।অহনার ন্যাকা কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।মিসেস লাকী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে স্বান্তনা দেওয়ার মিথ্যে চেষ্টা করে।শালিক কোনোটা আমলে নেয় না।নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে লাগে।

” গরম গরম চা টা খেয়ে ফেলার অনুরোধ রইলো।চা খেলে ভেতরের সব প্যাঁচ ছেড়ে যায়।”

মা মেয়ে দু’জন রক্তচক্ষু নিয়ে শালিকের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।ট্যাকস ট্যাকস করে কিভাবে কথা শুনিয়ে গেলো।কিন্তু বড় কথা তো সেটা না।বড় কথা হচ্ছে শালিক লবণ দেওয়ার বিষয়টা জানলো কিভাবে?আর জানলোই বা কিভাবে যে লবণটা অহনা ই দিয়েছে?

_____💗

” বিয়ের এতগুলা বছর হয়ে গেলো আপা। জুঁই তো খুশীর খবর দেয় না।ওর সমস্যা আছে নাকি আপা?”

ফোনের এপাশ থেকে জুঁইয়ের মামীকে কথাটা বলে জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি।রান্না শেষে ঘরে যাওয়ার সময় কথাটা শুনে ফেলে জুঁই।আড়িপাতা যদিও খারাপ স্বভাব তারপরও সে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে নেয়।শ্বাশুড়ির কন্ঠ বলে দিচ্ছে জুঁইকে তিনি ভালো চোখে দেখছেন না।জুঁইয়ের চরিত্র দাগ ফেলতেও তিনি দ্বিধাবোধ করছেন না।অথচ তিনিও একজন মেয়ে।তিনিই জানেন চরিত্র,সম্মান, ইজ্জত মেয়েদের কাছে নিজেদের জীবনের চাইতেও বড়। জুঁই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে চলে যায়। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আকাশও এসেছে ঈদে ছুটি কাটাতে।ঘরে এসেই জুঁই ধপ করে বসে পড়ে। প্রিয়তমার এ হেন আচরণে উদ্বীগ্ন হয়ে জুঁইয়ের কাছে যায় আকাশ।

” কি হয়েছে?তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন?”

” আমার এখন কি করা উচিত আকাশ?না পারছি আমি আনানকে নিজের মন থেকে সরিয়ে নিতে না পারছি তোমার প্রাপ্য তোমায় বুঝিয়ে দিতে।”

” তোমার মন যা চায় তাই ইই করবে।”

” মন তো আনানকে চায় আর মস্তিষ্ক তোমার পক্ষ হয়ে কথা বলে।”

” তো চলো।আমি নিজে তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিবো।”

” কখনোই না।আনান বলেছিলো মনকে গুরুত্ব কম দিতে।আমাদের মন আবেগকে প্রাধান্য দেয় আর মস্তিষ্ক বাস্তবতাকে।আর আনান কি আমার জন্য বসে আছে নাকি?দেখো গে,বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হয়ে গিয়েছে।আমার মতো ধুকে ধুকে কষ্ট পাওয়ার মানুষ ও নয়।সৃষ্টিকর্তা বোধহয় ওর ভাগের কষ্ট গুলো আমায় দিয়ে দিয়েছেন।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে জুঁই। আকাশ কিছু বলে না।ভাষা খুঁজে পায় না বলার।খানিকক্ষণ বাদে জুঁই আকাশের অনেকটা কাচগে গিয়ে বসে।আকাশ চমকে যায়।করুণ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে জুঁই বলে,,,,

” আকাশ তোমার কাঁধে আমি মাথা রাখতে পারি?”

আকাশ অনুমতি দেয়।জুঁই আকাশের কাঁ্ধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে।চোখে মুখে তার প্রশান্তির ছাপ জেগে ওঠে।পরম আয়েশে জুঁই বলে,,,

” জানো?এভাবে আমি প্রথম মাথা রেখেছিলাম আনানের কাঁ্ধে।অন্য রকম একটা শান্তি পেয়েছিলাম।আজ তোমার কাঁধে মাথা রাখলাম।সেই শান্তি পাই নি।পাবোও না হয়তো।কিন্তু আরেকটা অন্য রকম শান্তি পাচ্ছি।”

চাপা কান্না নিয়ে বলে জুঁই।আকাশ এইবারও কিছু বলে না।জুঁইয়ের মাথার ওপর মাথা রেখে সেও পরম আয়েশে চোখ বন্ধ করে।জুঁই আবারও চাপা কান্না নিয়ে বলে,,,

” জানো আকাশ?আনান যাবার পর নিজেকে যেমন গুরুতর অভাগী মনে হয় ঠিক তেমন তোমায় স্বামী হিসেবে পাওয়ার পর ভাগ্যবতীও মনে হয়।তুমি বলেই আমায় এত সময় দিয়েছো।অন্য কেউ হলে সময় তো দূরে থাক প্রথম দিন ই জবরদস্তি করতো আমার সাথে।অন্যথায় ডিভোর্স দিতো।”

____💗

শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন বিকেল।আনান ঘরে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।এমন সময় দরজায় শালিক টোকা দেয়।আনান পিছন ফিরে শালিককে দেখতে পায়।

” ভাইয়ের ঘরে আসবি দরজায় টোকা দেওয়ার কি আছে?”

” ভদ্রতা এটা।”

শালিকের কথা শেষ হতে না হতেই আহানের আগমন ঘটে। হাতে ট্রে।তিনটে মগে কফি।আহান শালিক আনানের হাতে কফির মগ দিয়ে নিজেরটা বুঝে নেয়।আনান আহানকে সিগারেটের অফার দেয়।আহান মুচকী হাসে।

” ভাইয়া ডাক্তারি পড়তেছি।আর মেডিকেলের স্টুডেন্টদের স্মোকিং করা ঠিক না আই থিংক।প্রফেশনের সম্মান রক্ষার্থে বাদ দিয়েছি।”

আনান কিঞ্চিৎ হাসে।শালিক কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,,,

” ভাইয়া টিরিংকুউউ ছু মাছ।”

” কেন?”

” তুমি না থাকলে সেদিন চরম বেইজ্জতির শিকার হতাম।”

শালিকের কথা শুনে আনান উঁকিঝুঁকি মারে।যে কেউ শুনছে নাকি ওর কথা!আনানের কর্মকাণ্ড দেখে আহান শালিক একসাথে হেসে ওঠে।

” চিল ভাইয়া।আম্মু আর অহনা পার্লারে গেছে আর আব্বু ফ্যাক্টরিতে।ভাইয়া তোমার মনে আছে?আগে আমরা দুইজন ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতাম?সারাদিনে কি হয়েছে তুমিও বলতে আমিও বলতাম।”

আনান মুচকী হাসে।আনান এমনিতেই চুপচাপ স্বভাবের।জুঁইয়ের চলে যাওয়ার পর আরও চুপচাপ হয়ে গেছে।গু লি মে রেও মুখে বুলি ফুটে না।কাছের হওয়ায় এই বিষয়গুলো আহান খুব ভালো করেই লক্ষ্য করে।কষ্ট লাগে আহানের।ভাইকে জ্যান্ত লাশ হিসেবে সে মেনে নিতে পারে না।কিন্তু কি আর করার? আহানেরও যে হাত পা বাঁ্ধা।আনান ওকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছে।আহান যেন জীবনেও আনানের সামনে বা ওর অনুপস্থিতিতে আনানের বিয়ের কথা না তুলে।কেউ তুললেও যেন আহান তাকে থামিয়ে দেয়।

চলবে,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here