মিঠা প্রেম পর্ব -১৪+১৫

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব১৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর পর ই শালিকের বিয়ের কথা ভাবতে লাগেন মিসেস শান্তা আর শালিকের বাবার।তামিমের সাথে পালিয়ে যাওয়ার মাশুল যে এতদিন পর এভাবে দিতে হবে শালিক কল্পনাও করে নি।এক কান দু কান করে খবরটা আহানের কাছেও পৌঁছায়।এবং সে সরাসরি শালিকের মা কে নিজের সিদ্ধান্ত জানায়।কিন্তু শালিকের মা নিজের সিদ্ধান্তে অটল।সে কিছুতেই ননাশের ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে দেবেন না।মায়ের চেয়ে কোনো অংশে কম না মিসেস লাকি।বরং এক কাঠি ওপরে।ওই সংসারে গেলে শালিক দুনিয়াতেই জাহান্নামের অনুভূতি পেয়ে যাবে।জেনে শুনে এমন সংসারে তিনি মেয়েকে দেবেন না।আহানকে তিনি সোজা সাপ্টা ভাবে এর কারণ বলে দেন।কিন্তু আহানও যে নাছোড় বান্দা।সে শালিককে নিয়েই ছাড়বে।আইটেম বাদ দিয়েই সে চলে আসে।জিদ ধরে শালিককে বিয়ে করে না নেওয়া পর্যন্ত সে ফিরবে না।এদিকে মিসেস লাকিও শালিককে আনতে নারাজ।আশরাফ সাহেব আনান আহান দু’জনকেই ছেলের চোখে দেখেন অবশ্য!আনানের চুল দাড়িতে পাক ধরতে শুরু করেছে তার বিয়ের খবর নেই এদিকে আহান তার ছোটভাই বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।বড় ছেলের বিয়ে না করিয়ে ছোট ছেলেকে বিয়ে করাবেন বিষয়টা সমাজও ভালো চোখে দেখবে না।

সকালে চা খেতে খেতে নিউজ পেপার পড়ছিলেন আশরাফ সাহেব।এমন সময় আহান আসে।বাবার কাছে তার রাজ্যের আবদার।আশরাফ সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে বলেন,,,

” কিছু বলবি?”

” আম্মুকে বুঝাও না!”

” কি বুঝাবো বল?বড়টাকে বিয়ের কথা বলি বলে যোগাযোগ করে না আর তুই এমন বিয়ে পাগলা হয়েছিস!”

” ভাইয়া কখনো বিয়ে করবে না আব্বু।তোমরা জানোই না বিয়ের কথা বলে তোমরা নিজেদের অজান্তেই ওকে কত আঘাত করো।”

উদাস গলায় বলে আহান।আশরাফ সাহেব নড়ে চড়ে বসেন।কৌতুহল নিয়ে ছোট ছেলেকে বড় ছেলের বিয়ে না করার কারণ জিজ্ঞেস করেন।আহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,

” জুঁই নামের একটা মেয়ের সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক ছিলো।দেড় বছরের। পরে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়।এখানে ভাইয়ারও অবশ্য দোষ ছিলো।মেয়েটা থাকতে চেয়েছিলো ভাইয়া তাকে রাখেনি।ফিরিয়ে দিয়েছে বারবার ভাইয়া তাকে।”

” তো ওই জুঁই বাদে আর কোনো মেয়ে নাই নাকি দুনিয়ায়?জুঁইয়ের থেকে সুন্দর মেয়ে এনে দেবো ওকে।”

” পৃথিবী সমাজের চোখে না জুঁই আপু সুন্দর ছিলো না সুন্দর ছিলো তার কপাল।জন্মের আগে বাবা আর জন্মের পরে মা মারা যায়।অথচ সেই অভাগীটার মধ্যেই ভাইয়া নিজের সুখ শান্তি খুঁজে পেয়েছিলো।প্লিজ আব্বু তুমি ভাইয়াকে বিয়ের কথা বলে কা টা ঘায়ে নুনের ছিটা দিবে নাহ!”

” আহান খেতে আয়।”

মায়ের ডাকে বাবা-পুত্রের ভাবনাচ্ছেদ ঘটে।আহান ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে গিয়ে দাঁড়ায়।গম্ভীর গলায় বলে,,,

” তুমি তাহলে শালিককে আনবে না?”

” আমার আনা না আনায় কি আসে যায়।শান্তাই তো বলেছে দেবে না ওকে।”

” না দেওয়ার মূল কারণ তুমি।তুমি শুনে রাখো আর তুমি তোমার ভাই বউকেও বলে রাখো আমি শালিককেই বিয়ে করবো আর পারলে ওকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করবো তোমরা মানো আর নাই বা মানো।বলে দিলাম সিদ্ধান্ত তোমাদের।পালিয়ে গেলে তোমাদের সম্মান কমবে বইকি বাড়বে না।”

কথাটা বলে আহান হু হু করে বেরিয়ে যায়।

______💖

আজ চার মাস পর আকাশ এসেছে।জুঁই আকাশের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক না থাকলেও দু’জনে বেশ ভালো বন্ধু।এতদিন পর আকাশ আসায় জুঁই আর আকাশ ঘুরতে বের হয়।টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি হবার পরে আজ রোদ উঠেছে। আষাঢ়ের আকাশ আজ শরতের মতো রৌদজ্জ্বল।সাদা মেঘ হাওয়ায় ধীরগতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। নদীর পাড় ঘেষে থাকা পার্কটায় শীতল বাতাস বইছে।পাশাপাশি বসে আকাশ জুঁই।জুঁইয়কে স্পর্শ করার অধিকার আকাশকে জুঁই দেয় নি।তাই দূরত্ব বজায় রেখে চলার ইই চেষ্টা করে আকাশ।কিন্তু প্রশ্ন করার অধিকার তো দিয়েছে।আকাশের খুব জানতে ইচ্ছে করে।এই তিন বছর পরও কি আনানের জন্য অনুভূতি গুলো জুঁইয়ের মনে জীবন্ত আছে না ম রে গেছে?

” জুঁই?”

” হ্যাঁ বলো।”

” তুমি কি এখনো আনানকে?”

” ভালোবাসি।আমৃত্যু ওর জন্য আমার অনুভূতি গুলো জীবন্ত থাকবে।তবে তোমার জন্য সেই অনুভূতি গুলোকে জীবন্ত সমাধি দেওয়ার চেষ্টায় আছি।”

” তুমি চাইলে ফিরে যেতে পারো আনানের কাছে।”

” থাকতে তো কম চাই নি।ফিরিয়ে দিয়েছিলো ও।এত বছর পরে ওর কাছে গিয়ে তোমায় নিজেকে ছোট করার মানে হয় না।”

” তবে কি করবে?”

” অপেক্ষা করো আর কিছুদিন।শীঘ্রই ওর জন্য অবাদ্ধ অনুভূতি গুলোকে জ্যান্ত কবর দিবো।”

_____💖

” তুমি আবার জন্ম নিও।আমি তোমায় আবার ভালোবাসবো।আবার তোমার প্রেমে পরবো।”

গ্যালারিতে থাকা জুঁইয়ের ছবি দেখতে দেখতে অজান্তেই এই কথাটা বলে ফেলে আনান।আজ কত গুলো দিন হলো জুঁইয়ের সাথে কথা হয় না।ওর আইডির পাশে সবুজ রঙের আলোকবিন্দু জ্বলে ঠিক ইই কিন্তু সেই আইডি থেকে কোনো পোস্ট হয় না।মেসেজ আসে না দীর্ঘকাল।অথচ একটা সময় সেই আইডি থেকে প্রতিদিন মেসেজ আসতো।কল আসতো।সংসার জীবনে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে হয়তো।ওয়াইফাই অন থাকায় হয়তো অনলাইনে দেখায়।আচ্ছা ওর ছেলে হয়েছে না মেয়ে?মেয়ে হলে নিশ্চয়ই জুঁইয়ের মতোই হয়েছে। জুঁইয়ের সাথে আনানের শুরুটা যেমন ঝড়ের গতিতে হয়েছিলো শেষটাও তেমন ইই হয়েছে।খুব অল্প সময় ইই পেয়েছে দু’জনা।এই জন্মের অপূর্ণতা গুলো না হয় পরের জন্মে পূরণ করে নেওয়া যাবে।যদিও ইসলাম ধর্মে পুনর্জন্ম বলে কিছু নেই।এখানে পুনর্জন্ম বলতে শুধু কেয়ামতকেই বোঝানো হয়।তবুও,,, আশায় বাঁচে চাষা।কিছু একটা বলে তো অবাধ্য মনকে স্বান্তনা দিতে হবে!

আনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।জুঁইকে ভুলে থাকার জন্য কাজের চাপ সে বাড়িয়ে নিয়েছে।মানুষ বলে না যে সে তার প্রিয় মানুষকে ছাড়া থাকতে পারবে না।এটা ভুল বলে এবং সম্পুর্ন আবেগের বশে বলে।ব্যস্ততা, কাজের চাপ থাকলে প্রিয় মানুষকে দিব্যি ভুলে থাকা যায়। জীবনও তার আপন গতিতে চলে।কিন্তু অবসরে ওই অবাদ্ধ জেদি মনটা থেমে যায়।তখন বুকের ভেতর তীব্র হাহাকার শুরু হয়। মনে হয় এই শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবো।হৃদস্পন্দনও তখন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়।বক্ষের হাড়ের খাঁচা ভেদ করে মুক্ত হওয়ার জন্য তীব্র ছটফট করে হৃদপিণ্ড নামক দেহযন্ত্র।

_____💗

” তুই তাহলে আহানকে ছাড়া আর কাওকে বিয়ে করবি না?”

” নাহ।”

মায়ের প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর দেয় শালিক।ইদানীং মেয়েটার চাঞ্চল্যতা কমে গেছে।প্রয়োজনের বাইরে আর একটা কথাও বলে না মেয়েটা।সব সময় অন্ধকার ঘরে বসে থাকে।কোনো মা ইই তার সন্তানের খারাপ চায় না।মিসেস শান্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,

” যেনে শুনে কেন আগুনে ঝাঁপ দিবি?”

” সংখ্যা কিন্তু এক্টাই। কারও কাছে সিক্স আর কারও কাছে নাইন।”

” তোর দাদির থেকে এক কাঠি উপরে তোর ফুপু।তুই জানিস।”

” এই সংসারে তুমি একা লড়াই করেছো তাই তোমার কাছে লড়াইটা কঠিন লেগেছে।বাবা তার মা বোনের উস্কানিতে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।কিন্তু বিপদে আমার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর একটা মানুষ আমি বহু আগেই পেয়ে গেছি।তুমি মা হিসেবে আমার ভালো চাও ঠিক ইই কি তু বুঝতে পারছো না কোথায় আমি ভালো থাকবো।”

” বিয়েটা কিন্তু পুতুল খেলা নয় শালিক।কষ্টের শেষ থাকবে না তোর।”

” জানি।আর কষ্ট ছাড়া জীবনেরও কিন্তু কোনো দাম থাকে না মা।কষ্ট ছাড়া জীবন অর্থহীন।কষ্ট আছে বলেই সুখের এত চাহিদা।অন্ধকার আছে বলেই এত চাহিদা।কষ্ট সুখের পরিপুরক।আর অন্ধকার আলোর।”

” যদি তামিমের মতো হয়?”

” আহান ভাইয়াকে আমার থেকে ভালো তুমি চিনো।আর তুমি জানো ও খারাপ হলেও অতটা খারাপ নয় যে আমার সাথে বেঈমানী করবে।না হলে ছোটবেলা থেকে এভাবে আগলিয়ে রাখতো না।”

চলবে,,ইনশাআল্লাহ#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

একপ্রকার ছেলের জেদের কাছে হার মেনেই মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাইঝিকে নিজের পুত্রবধূ করে আনেন মিসেস লাকী।খুবই সাদামাটা একটা বিয়ে হয় শালিক আহানের।লাল জামদানীর সাথে হালকা কিছু রূপালি রঙের গয়না।শালিক বরাবরই ভারী মেকাপ বা সাজগোজের বিপক্ষে। মেট্রিকের পরে এক বান্ধবীর বিয়ের সাজ দেখে সে নিজের অবস্থানে শক্তপোক্ত হয়। লুজ পাউডারের প্রভাবে সে বার শালিকের বান্ধবী তৃষাকে জন্ডিস রোগীর থেকে কোনো অংশে কম লাগছিলো না।

হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের নারী চরিত্রদের মতো শালিকের ভুবন ভোলানো তেমন রূপ নেই।ফর্সা হলেও শালিকের মুখে ব্রণ ব্রণের দাগের কোনো কমতি ছিলো না।সমাজের কাছে এ নিয়েও যে কত কথা শুনতে হয়েছে তার হিসেব নেই।সমাজের মানুষের শালিকের মুখের দাগ নিয়ে হাজারটা সমস্যা থাকলেও আহানের কোনো সমস্যা ছিলো না।আহানের কাছে তার প্রেয়সী শশীর অবতার।যাকে দাগেই মানায়। যার সৌন্দর্য দাগেই।

এমন না যে শালিক সাজতে পারে না। সে পারে সাজতে। কিন্তু সে মেকাপের ভারী আস্তরণে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত সৌন্দর্যকে ঢাকতে নারাজ।বিয়ের দিনও শালিক নিজেকে সম্পুর্ন সাধারণ রাখে।আহানের দেওয়া লাল জামদানীর সাথে হালকা পাতলা রূপোর গয়নাগুলোর মধ্যে ছিলো একটা হাল্কা ভৃঙ্গরাজ ফুলের নকশা খোচিত গলার চোকার,ভৃঙ্গরাজ ফুলের টানা ওয়ালা একজোড়া কানের দুল,কানের দুল আর চোকারের সাথে মিলিয়ে টিকলি।হাত ভর্তি লাল রঙের রেশমী কাঁচের চুড়ি।নামে মাত্র ফাউন্ডেশনের একটা পাতলা আস্তরণ দেয় শালিক।ব্রণের দাগ গুলো ঢাকে না সে।এগুলো আহানের প্রিয়।হাল্কা ব্লাশন,কাজল,লাল লিপস্টিক আর টিপে পূর্ণতা পায় শালিকের বধূ সাজ। বিয়েতে চুলে গাজরা পরার খুব শখ ছিলো শালিকের।আহান তা অপুর্ণতা রাখে না।সাথে হাতে পরার জন্যও দুটো গাজরা এনে সাদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।

আহান পরেছিলো শালিকের সাথে মিলিয়ে লাল পাঞ্জাবী।কাছের কিছু বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের এই ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।আনানও আসে।ফেলতে পারেনি আহান শালিকের অনুরোধ আবদারকে।তবে মানুষজনের কাছ থেকে দূরে দূরেই থাকে আনান।তারপরও এড়িয়ে যেতে পারে না আনান তাদের বিষমিশ্রিত মন্তব্য।

” বড় ছেলের বিয়ে না দিয়ে ছোটটার বিয়ে দিলো যে?বড় ছেলের নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে।”

মানুষের নামে সমালোচনা,নিন্দানোতে এরা পিএইচডি করা।পাড়ার মোড়,চায়ের দোকান গুলোতে বুদ্ধিজীবী পাওয়া যায়।যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যদি পাড়ামোড় চায়ের দোকান গুলোতে হা ম লা চালাতো তাহলে মানুষের নামে সমালোচনা,নিন্দানোর জন্য এরা থাকতো না।

আহান পাশে থাকায় কথাগুলো আহানের কান এড়ায় না।ঠোঁটকাটা স্বভাবের আহান তাদের মুখের ওপর কথা না বলে থাকতে পারে না।ভেবেছিলো বিয়ের দিনটাতে অন্তত চুপচাপ থাকবে।কিন্তু তা আর হলো না।

” আজ একটা দিনই আহানের বিয়ে। বিয়েতে এসেছেন,ইঞ্জয় করবেন,খাবেন বাসায় চলে যাবেন।সব জায়গায় সমালোচনা না করলে খাবার হজম হয় না?অবশ্য আপনারা এখনো খান নি।”

আনান নিচু স্বরে আহানকে থামার অনুরোধ করে কিন্তু আহান তা কর্ণপাত না করেই তাদের বলতে থাকে। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে বিয়ের কার্য আরম্ভ হয়।আহান শালিককে সামনা সামনি বসানো হয়।মাঝখানে ফুলের পর্দার ফুলের মালার ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রেয়সীকে দেখার বৃথা চেষ্টা করে আহান।এক হাত লম্বা ঘোমটা দ্বারা নিজেকে আড়াল করে রেখেছে শালিক।তিনবার ❝কবুল❞ শব্দটা বর কনের মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার মাধ্যমে বিয়ে পড়ানোর কার্য সম্পন্ন হয়।রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে আইনত ভাবে একে অপরের হয়ে যায় আহান শালিক। আহান উঠে হাঁটু গেড়ে বসে ফুলের পর্দার লম্বা মালাগুলো সরিয়ে শালিকের মুখশ্রীর ওপর থেকে ঘোমটা সরায়। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভালোবাসার চুমু একে দেয় শালিকের কপালে।

জুঁই লাজুক হাসি দেয়।আনান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,

” বলেছিলাম না মেডাম যেভাবেই হোক আপনাকে নিজের করে নেবো!”

” করলেন তো সেই বুড়ো বয়সেই।চুলে পাক ধরেছে।আমার বুড়ো বর।”

জুঁইয়ের কথায় আনান হেসে।জুঁইও হাসতে লাগে।এতগুলো বছর হয়ে গেলো আজও শ্যামাঙ্গীর সৌন্দর্যে একটুও ভাটা পরেনি।উল্টো মুগ্ধতার জোয়ার বইছে।

” ভাইয়া খেঁজুর খাবি না?”

আহানের ডাকে আনানের ধ্যান ভাঙে।খানিকটা চমকেই উঠে আনান।ধ্যান ভাঙলে বুঝতে পায় এগুলো ছিলো তার কল্পনা।মানুষ মূলত একা প্রাণী।কিন্তু একা এরা বাঁচতে পারে না।কল্পনায় কাওকে না কাওকে লাগেই।তাই হয়তো রোজ জুঁইকে কল্পনায় খুঁজে বেরোয় আনান।

______💗

ফুল দ্বারা সজ্জিত ঘরে বসে আছে শালিক।ভালোও লাগছে আবার বিরক্তও লাগছে।ভালো লাগার কারণ আহানকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে গেছে তাই আর বিরক্ত লাগার কারণ এই ভ্যাপসা গরমে শাড়ি পরে বসে থাকতে হচ্ছে তাই। আধ ঘন্টা পরে আহান আসে।আহান আসতেই শালিক উঠে গিয়ে ওকে সালাম করে।

” আম্মু করতে বলছিলো সালাম।এখন সালামি দে।”

” ঈদ নাকি যে সালামি দিবো তোকে?”

” ঈদ ইই তো আমার মতো সুন্দর একটা বউ পেলি।”

শালিকের কথা শুনে আহান ভেংচি কাটে।চোখ উল্টিয়ে বলে,,,

” কাইল্যা ছেড়ি।”

” এই তোর থেকে কিন্তু আমি ফর্সা।”

” মেকাপ করলে আমিও ফর্সা হতাম।”

আহানের কথাটা শোনা মাত্রই শালিকের মাথা গরম হয়ে যায়।ঠাস করে মে রে দেয় সে আহানকে।আহান অবাক হয়।

” আমি তোর থেকে বড় আর তোর জামাই লাগি কিন্তু আমি!”

” তো?”

” মা র লি কেন?”

” মিথ্যা দোষ দিলি কেন?”

আহান জবাবে কিছু বলে না।শালিকের গাল ধরে টে নে বলে,,,

” আমার মাথামোটা বউটা।”

বউটা শব্দ শুনতেই শালিকের মনে হলো শালিকের ফোনে ছবি তুলা হয় নি।ফোনটা আহানের হাতে দিয়ে বলে,,,

” ছবি তুলে দে।”

” ছবি তুলে দে মানে?এত এত ছবি তুললি আবার ছবি তুলা লাগে?”

” হু লাগে।বিয়ে এক বার ইই করতেছি।”

আহান খানিকটা বিরক্তই হয়।এই মেয়ের এত ছবি তুলার নেশা।ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে শালিক পোজ দিতে লাগে।এবং আহানকে ছবি বিভিন্ন দিক থেকে তোলার নির্দেশনা দেয়।আহান বিরক্ত হয়ে বলে,,,

” আগে জানলে শা লা বিয়েই করতাম না।”

____💗

” তোমার ছেলে কি আর মেয়ে পেলো না?শালিক আপুকেই বিয়ে করতে হলো?”

গয়না খুলতে খুলতে মা কে কথাটা বলে অহনা।অহনা আহানের বোন।ক্লাস নাইনে পড়ে।স্বভাব চাল চলন কথা বার্তা অনেকটা মায়ের ইই মতো।শুধু শুধু মিসেস লাকী মেয়েকে নিজের অংশ রূপে দেখেন না!শালিককে তার খুব একটা পছন্দ নয়।মামাতো বোন হওয়ায় টুকিটাকি কথা বলতো।এখন ভাইয়ের বউ হয়ে গেছে।সারাজীবনের মতো মেয়েটাকে সহ্য করতে হবে।উফফ!

” মা মেয়ে মিলে তাবিজ করছে নাকি খোদায় ইই জানে।না হলে আমার ওমন ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়?আরেকটা তো বিয়ের কথা শুনে যোগাযোগ ই বন্ধ করে দিয়েছে।বিয়ের উছিলায় বাসায় এলেও কেমন দূরে থাকে।”

” তাবিজ করার কথাটা মা ভুল বলো নি।করতেও পারে।”

” আসলো মাথায়।শালিকের মধ্যে কি দেখে যে আহান পাগল হলো!না আছে মেয়েটার চেহেরা না আছে অন্য কোনো গুন।সাদা চামড়াটাই আছে শুধু।তাবিজ না করলে আমার ওই ছেলের গলায় ওই মেয়েকে কেমনে ঝুলাতো?”

পানি খেতে এসে মা মেয়ের সব কথপোকথন শুনে ফেলে আনান।শালিক সুন্দরী তাই এরা যা কথা বলছে জুঁই হলে না জানি কি বলতো।ভাবতেও লজ্জা লাগে আনানের এরা ওর মা বোন।এত নিচ মানসিকতা মানুষের হয়!শালিককে বলে রাখতে হবে এদের কথা।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here