#মিস্টার__সিনিয়র
#পর্বসংখ্যা_০৬
®ফিহা আহমেদ
“তুমি এই ছেলেটার সাথে কেন আসলে এখানে মিস জুনিয়র? (জিহা)
“মিস জুনিয়র না বলে পরশি বলে ডাকো”। (পরশি)
“আসলে ভাই তোমায় এই নামে ডাকে তো তাই আমি ও বললাম”। (জিহা)
“তুমি মিস্টার সিনিয়রের কি হও?(পরশি)
“আমি জোভান চৌধুরীর বোন জিহা চৌধুরী”। (জিহা)
জোভান নাম শুনতেই পরশি স্তব্ধ হয়ে গেল।
[জোভানের নাম শুনে পরশি স্তব্ধ হলো কেন পরে বলে দেওয়া হবে]
“আমি কাশফুল দেখতে দেখতে ভিতরে চলে আসি আমার সাথে তাসির ভাই ছিল না।সামনে এগোতে এগোতে হঠাৎ ওনার সাথে ধাক্কা লাগে আমার। ভাইয়ার অদ্ভুত ব্যবহারে আমি বুঝতে পারলাম ভাইয়া কি করতে চাচ্ছে। ভাইয়া একজন মুখোশরুপী শয়তান আমার ইজ্জত কেড়ে নিতে চাইলো”। (পরশি কান্না করতে করতে বললো)
পরশি পায়ের জন্য হাঁটতে পারছে না।পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে পরশির।
“শালা এক নম্বরের বজ্জাত মিস জুনিয়রের ক্ষতি করতে চাইছিলি”। (জোভান)
জোভান রেগে মারতে থাকে তাসিরকে। জিহা পিছনে ফিরে দেখলো। জোভান যেভাবে মারছে তাসির মরে যাবে। জিহা পরশিকে রেখে ভাইয়ের কাছে এসে হাত ধরে বললো,,,,,
“ভাই মরে যাবে ছেড়ে দে।যা মার খেয়েছে যদি মনে থাকে আর কোনো মেয়ের ক্ষতি করতে আসবে না।চল ভাই পরশির পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে”।
“পরশি” (জোভান)
“হ্যাঁ মিস জুনিয়রের নাম পরশি” । (জিহা)
“ঠিক আছে চল।একে আমি আবার পরে দেখে নিব”। (জোভান)
বলে জোভান তাসিরের বুকে একটা লাথি মেরে পরশির কাছে আসলো।
পরশিকে কোলে তুলে নিলো জোভান।পরশি টলমল চোখে জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোভান পরশির দিকে তাকালো না। জোভান পরশির ওপর রেগে আছে।জোভান পরশিকে লারা আর রিশার কাছে নিয়ে আসলো।
“পরশি তোকে কতক্ষণ ধরে খুঁজেছি কোথায় চলে গেলি। তাসিরকে ও অনেকক্ষণ ধরে দেখছি না। আর তোর এমন অবস্থা কি করে হলো? (লারা চিন্তিত হয়ে বললো)
“আরে লারা জোভান চৌধুরী কোলে পরশি বিশ্বাস ই হচ্ছে না আমার”। (রিশা ফিসফিস করে লারার কানে বললো)
“চুপ থাক আগে দেখ কি হয়েছে আর রিফাত চৌধুরীর ছেলে জোভান চৌধুরী এখানে কেন? (লারা)
কিছুক্ষণ পর তাসির বিধ্বস্ত অবস্থায় সবার সামনে এসে হাজির হলো।তাসিরের অবস্থা দেখে লারা আর রিশা দৌঁড়ে তাসিরের কাছে আসলো।
“তাসির তোর এই অবস্থা কি করে হলো? (লারা চিন্তিত হয়ে বললো)
তখন জোভান বলে উঠলো,,,,,
“এই কুলাঙ্গার কি হয় তোমাদের? (জোভান গম্ভীর কণ্ঠে বললো)
“মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার জোভান চৌধুরী”। (রিশা)
“এই কুলাঙ্গার মিস জুনিয়রের ইজ্জত কেড়ে নিতে চাইছিল তার জন্য ধমকি দিচ্ছেন আমায়।আর একটু দেরি হলে মিস জুনিয়রের সব শেষ হয়ে যেত”। (জোভান রেগে বললো)
“কি বলছে এসব তাসির? (লারা)
তাসির কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললো।লারা তাসিরের গালে থাপ্পড় মারলো।
“ছিঃ তাসির তুই এমন নিচু কাজ করতে পারলি তোকে আমার বন্ধু ভাবতে লজ্জা লাগছে।আজ এক্ষুনি তুই চলে যাবি এখান থেকে।আজ থেকে তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ। কোনোদিন তোর এই অপয়া মুখ আমাদের দেখাবি না”। (লারা রেগে বললো)
তাসির খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে চলে গেল।লারা জোভানের সামনে এসে বললো,,,,,,
“ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি ঠিক সময়ে না গেলে পরশির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত।বেচারির মা-বাবা নেই এই যন্ত্রণা এখনো সহ্য করছে।আজ যদি কিছু হয়ে যেত,,,,(লারা)
লারা কান্না করে দেয়। রিশা এসে লারাকে জড়িয়ে ধরে।
“কান্না করবেন না আপু চলুন এখান থেকে যাওয়া যাক”। (জিহা লারার কাছে গিয়ে বললো)
“তুমি কে? (লারা কান্না করতে করতে বললো)
“আমি জিহা। রিফাত চৌধুরীর মেয়ে”। (জিহা)
“আচ্ছা তুমি জোভান ভাইয়ার বোন”। (লারা)
“হুম চলুন”। (জিহা)
জোভান পরশিকে নিজের গাড়ির কাছে নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসিয়ে দিল।তারপর গাড়ি থেকে মেডিসিন বাক্স বের করে পরশির পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। পরশি কিছু বললো না। জোভান যা করতে চাইছে তাকে করতে দিচ্ছে।
তরল কিছু হাতে পড়তেই জোভান পরশির দিকে তাকালো।পরশির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।পরশির চোখের পানি যেন জোভানের বুকে ছুরির আঘাত করছে। জোভান পরশির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,,,,,,
“Don’t cry” .
পরশি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
লারা,রিশা আর জিহা ছয়-সাত হাত দূর থেকে সব দেখছে। পরশির পায়ে ব্যান্ডেজ দেওয়া শেষ হতেই তারা তিন জন আসলো।
“তাসির গাড়ি নিয়ে চলে গেছে পরশি এখন অটোতে করে আমাদের যেতে হবে৷ ধীরে ধীরে ওঠে আয়”। (লারা)
“আমি ড্রপ করে দিচ্ছি আপু আপনি রাস্তা দেখিয়ে দেন”। (জোভান)
জোভানের কথায় সবাই গাড়িতে উঠলো।লারা রাস্তা দেখিয়ে দিল জোভানকে।
_____
দু’ঘন্টা গাড়ি চালানোর পর জোভান সিকদার বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।বাড়ির সামনে তাকাতেই জোভানের মাথায় ব্যথা হতে লাগলো। জোভানের কেন জানি মনে হচ্ছে এই বাড়িতে জোভান আগে ও এসেছে।
“ভাই শরীর খারাপ লাগছে? (জিহা)
“I am ok” . (জোভান)
জোভান গাড়ি থেকে নেমে পরশিকে আবার কোলে তুলে নিলো। এতক্ষণ পরশি চুপ থাকলেও এখন বলে উঠলো,,,,,
“আমায় নামিয়ে দেন প্লিজ বাড়ির কেউ দেখলে কি ভাববে।প্লিজ নামিয়ে দেন মিস্টার সিনিয়র”।
জোভান পরশির কথা না শুনে পরশিকে কোলে নিয়ে ই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো ।
তখন মিসেস ইয়ানা আর শিখা পরশিকে কিভাবে শাস্তি দিবে সেসব নিয়ে কথা বলছে।সামনে চোখ যেতেই ইয়ানা বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো।
“দাদী দেখ পরশি,,,,
“ছিঃ ছিঃ পরশি শেষ কিনা তুই ছেলেদের কোলে চড়া শুরু করলি।আজ তোকে এমন মার মারবো জীবনে আর এইসব অসভ্যতামি করার সাহস পাবি না”। (মিসেস শিখা রেগে বললো)
“প্লিজ আমায় নামিয়ে দেন”। (পরশি)
জোভান পরশির কথা না শুনে পরশিকে সোফায় বসিয়ে দিল। তারপর মিসেস শিখার সামনে দাঁড়ালো।
“কি যেন বলছিলেন আবার বলেন? (জোভান কোমরে হাত দিয়ে ব্রু কুঁচকে বললো)
“এই ছেলে তোর সাহস তো কম না তুই আমার সাথে কথা বলতে এসেছিস”। (মিসেস শিখা)
“আমার সাহসের এখনো কিছুই দেখেননি আপনি বুড়ি মা”। (জোভান বাঁকা হেসে বললো)
“দাদী চুপ থাকো। রিফাত চৌধুরীর ছেলে জোভান চৌধুরীর সাথে তুমি এখন কথা বলছো”। (ইয়ানা ফিসফিস করে মিসেস শিখার কানে বললো)
মিসেস শিখা যেন আকাশ থেকে পড়লো ইয়ানার কথা শুনে। হঠাৎ করেই মিসেস শিখা জোভানকে বলতে শুরু করলো,,,,,
“এতক্ষন তোমার সাথে মজা করছিলাম। বাবা বসো খেয়ে যাবে” ।
“শয়তান বুড়ি মিনিটে মিনিটে চেন্জ হয়ে যায়। এখন না খেপানোই ভালো না হলে পরশির বিপদ আরো বেড়ে যাবে। অসভ্য বুড়ি একটা। তোকে তো পরে দেখে নিব আমি”।(জোভান মনে মনে বললো)
জোভান কিছু না বলে পরশির দিকে একপলক তাকিয়ে জিহার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
জোভান যেতেই ইয়ানা পরশির কাছে এসে রেগে বলে,,,,,
“শেষমেশ তুই চৌধুরী বাড়ির ছেলেকে হাত করার জন্য লেগে পড়েছিস”।
“মুখ সামলে কথা বলো আপু। পরশি বিপদে পড়েছে জোভান ভাইয়া পরশিকে বাঁচিয়েছে”। (লারা)
“তা তোমরা কি বসে বসে আঙ্গুল চুষেছিলে।তোমরা বিপদ থেকে বাঁচাতে পারতে না।চৌধুরী বাড়ির ছেলেকে আসতে হলো এই অসভ্য মেয়েকে বাঁচাতে”। (ইয়ানা রেগে বললো)
তারপর রিশা সব ঘটনা খুলে বললো দু’জনকে।
“হয়েছে তাসির যে একাই খারাপ সেটা ভুল। এই অপয়া ও খারাপ তাই এমন হয়েছে। যা হয়েছে ভালো হয়েছে। মেরে ফেলতে পারতো এই অপয়াকে তাহলে আর এর অপয়া মুখ দেখতে হতো না”। (মিসেস শিখা)
মিসেস শিখার কথা শুনে লারা আর রিশা মন খারাপ করে পরশির দিকে তাকালো। পরশি পাথরের ন্যায় বসে আছে কোনো কথা বলছে না।দাদী যে তাকে এমন বাজে কথা বলবে সে কোনোদিন ভাবতে ও পারেনি।পরশি বসা থেকে ওঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নিজের রুমে গেল।লারা আর রিশা সাহায্য করতে চেয়েছিল রুমে আসতে কিন্তু পরশি বাঁধা দিল।
_____
পরশি রুমের দরজা বন্ধ করে খাটের ওপর বসে পড়লো।তারপর অতীতে ডুব দিলো।
“পরশির যখন তিন বছর তখন পরশির সপরিবার চৌধুরী ভিলাতে গিয়েছিল জোভানের জন্মদিনে। জোভানের বাবা রিফাত চৌধুরী আর পরশির বাবা সৈয়দ সিকদার ছিল ভালো বন্ধু।
পরশি চৌধুরী ভিলায় প্রবেশ করতেই তার বাবাকে বললো,,,,,
“বাবা আমি জোভান ভাইয়ার কাছে যাব”। (পরশি)
“ঠিক আছে যাও মামনি”। (সৈয়দ)
পরশি জোভানকে খুঁজতে খুঁজতে বাগানে চলে আসলো। জোভান তখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।পরশি তখন জোভানের কাছে গিয়ে বললো,,,,,
“Handsome boy happy birthday to u” .
“Thank you sweet fairy” . (জোভান)
“হ্যান্ডসাম বয় তুমি আমার ভবিষ্যৎ বর হবে? (পরশি মিষ্টি হেসে লজ্জা ভাব নিয়ে বললো)
পরশির কথায় জোভান হেসে দিলো। জোভান পরশিকে নিজের কাছে এনে বললো,,,,
“আগে তুমি বড় হও আমার মিষ্টি পরী তারপর তোমায় আমার বউ বানিয়ে নিয়ে আসবো”।
“সত্যি বলছো তুমি জোভান ভাইয়া”। (পরশি)
“সত্যি বলছি”। (জোভান)
~ বর্তমান,,,,
“জোভান ভাইয়া কি সব ভুলে গেছে ওনার কি তার ছোট্ট মিষ্টি পরীর কথা মনে নেই? (পরশি)
‘
চলবে…..
_____
(বানানে ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
‘
(গল্প পড়ে সবাই লাইক – কমেন্ট করবেন। নাইচ,নেক্সট না বলে গল্প সম্পর্কে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ।পাঠক-পাঠিকাদের ভালো রেসপন্স ফেলে পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে।)
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ❌]