মুখোশের আড়ালে পর্ব ১১

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_১১
#Saji_Afroz
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজের বুকের মাঝে পৌষীকে আবিষ্কার করলো ফাহাদ । মেয়েটি আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে ফাহাদকে । ফাহাদ তার কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো । খুব সাবধানে পৌষীর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো সে । গোসলটা সেরে নেওয়া প্রয়োজন ।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো পৌষী এখনো ঘুমিয়ে আছে । তাকে ডাকলো না ফাহাদ ।
এই শীতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক চাপ চা না খেলে চলেনা ।
রান্নাঘরে এসে চা বানাতে থাকলো ফাহাদ ।
হঠাৎ নিজের মনেই হেসে ফেললো সে । আজ চা টা বানানো নেই । প্রতিদিনের মতো চা টাও বানানো থাকলে মন্দ হতোনা ।
.
.
বারান্দায় বসে পত্রিকা পড়ছে ফাহাদ । গ্রিলের ফাঁকে রোদ এসে গায়ে পড়ছে তার । মূলত এই রোদের জন্যই বারান্দায় বসা ।
পৌষী এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে । ফাহাদ হেসে বললো-
ঘুম ভেঙেছে মহারানীর?
-হু ।
-গোসল করে এসেছো তাইনা?
-কি করে বুঝলেন?
-তোমার ভেজা চুল আমার শরীর স্পর্শ করছে ।
-ঠান্ডা লাগছে?
-উহু ।
.
ফাহাদের কানে আলতো করে কামড় বসিয়ে পৌষী বললো-
ব্যাথা লাগছে?
-নাহ ।
.
ফাহাদকে ছেড়ে চেয়ার টেনে তার সামনে বসে পৌষী বললো-
তো কি লাগছে?
.
পৌষীর দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফাহাদ বললো-
নেশা লাগছে ।
.
চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে পৌষী বললো-
এই ঠান্ডার মাঝে আর গোসল করার ইচ্ছে নেইগো আমার ।
.
পৌষীর হাত ধরে তাকে নিজের কাছে টেনে এনে কোলে বসিয়ে ফাহাদ বললো-
আমি একশোবারও করতে পারবো গোসল ।
-আপনাকে বীর পুরুষ উপাধি দেয়া উচিত ।
-হু মন্দ না । পৌষীর বীর পুরুষ ।
.
কথাটি শুনেই হেসে উঠলো ফাহাদ । তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো পৌষীও । কিন্তু তাদের সাথে অন্য কোনো মেয়ের হাসির শব্দও তাদের কানে ভেসে এলো ।
দুজনেই থেমে গেলো ।
পৌষী বললো-
আমার মনেহয়েছে আমাদের সাথে অন্য কেউ হাসছে ।
-আমারো ।
.
পৌষীর মুখের দিকে তাকিয়ে ফাহাদ বললো-
আশেপাশে থেকে হয়তো শব্দটা এসেছে ।
-হুম ।
.
.
ঘুম থেকে উঠেই ফেইসবুকে প্রবেশ করলো উষ্ণ ।
বেশ কয়েকদিন হলো পৌষীর কোনো খবর নেই। ফেবুতেও দেখা যায়না । শরীরের কি অবস্থা তাও জানা হয়নি । এই ভেবে পৌষীর নাম্বারে ফোন দিলো উষ্ণ । কিন্তু ফোন বন্ধ পেলো সে ।
ফেবুতে মেসেজ দিলো –
শরীরের কি অবস্থা পৌষী?
.
.
রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলো পৌষী । এমন সময় ফাহাদ এসে বললো-
তোমার বাসা থেকে ফোন এসেছে ।
.
মা-বাবার সাথে কথা বললো পৌষী ।
কথা শেষে ফাহাদ বললো-
তোমার ফোন কি বন্ধ?
-বোধহয় চার্জ নেই ।
-ওহ! তাই আমাকে ফোন দিলেন তারা ।
-হয়তোবা ।
-চার্জ দিয়ে রেখো ।
-লাগছে না । বাবা ছাড়া কেইবা ফোন দেয়! আপনি অফিসে যাওয়া শুরু করলে দেবো ।
.
পৌষীর কথা শুনে মুচকি হাসলো ফাহাদ । মেয়েটার সব কিছু জুড়ে ফাহাদই আছে । আর সেই কিনা ভুল বুঝেছিলো তাকে!
.
.
গোসল সেরে ছাদে আসলো পৌষী । রশিতে ভেজা কাপড় শুকোতে দিচ্ছিলো সে ৷ এমন সময় কোনো মেয়েলী কণ্ঠের গানের শব্দ শুনতে পেলো সে । মনেহচ্ছে কেউ গুনগুনিয়ে গান গায়ছে ।
এই বাড়িতে সে আর ফাহাদ ছাড়া কেউ নেই । আশেপাশেও বাড়ি নেই কোনো । তবে এই শব্দ আসছে কোথাথেকে!
পৌষী চারদিকে তাকিয়ে দেখতে থাকলো । রেলিং এর পাশে এসে নিচে থাকাতেই দেখতে পেলো, তাদের উঠোনেই শাড়ি পরিহিতা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
মেয়েটির চেহারা দেখার চেষ্টা করতে থাকলো পৌষী । কিন্তু দেখতে পাচ্ছেনা ৷ তাড়াহুড়ো করে নিচের দিকে এগিয়ে গেলো সে । উঠোনে আসতেই একটি বয়স্ক ভিক্ষুক মহিলাকে দেখতে পেলো ।
পৌষীকে দেখে সে বললো-
আম্মা দুটো ভিক্ষা দেন ।
.
পৌষী চোখ বুলিয়ে চারপাশে দেখে ভিক্ষুক মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললো-
আপনি কি এখানে কোনো যুবতী মেয়েকে দেখেছেন?
-কই নাতো!
-ওহ! আপনি দাঁড়ান, আমি আসছি ।
.
এক পা এগিয়ে থেমে গেলো পৌষী । ভ্রু জোড়া কুচকে বললো-
আপনি কি গান গেয়েছেন এখানে দাঁড়িয়ে?
-না আম্মা!
.
তার কথা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলো পৌষী । সে কি ভুল দেখেছে বা শুনেছে!
.
.
দুপুরের খাবার শেষ করে টিভির সামনে বসলো ফাহাদ । ঠিক তখনি ফোন এলো মিয়াজ শেখের ।
-হ্যালো আসসালামুআলাইকুম আঙ্কেল । ভালো আছেন?
-হ্যাঁ তুমি?
-আছি ।
-পৌষীর ফোন বন্ধ পাচ্ছি ।
-চার্জ নেই ওর ফোনে ।
-ওকে দেয়া যাবে?
.
পৌষীকে ডাকলো ফাহাদ । সে চেঁচিয়ে বললো-
আমি ওয়াশরুমে!
.
মিয়াজ শেখা তা শুনে বললেন-
আচ্ছা তোমাকেই বলি । ও কি লেখালেখি শুরু করেছে?
-না । আসলে শরীরটা খারাপ ছিলো ।
-বুঝেছি । তবে শুরু করতে বলো । সামনে মেলা, ভুলে গেলে চলবেনা ।
-আচ্ছা আমি বলবো ।
.
একটু পরে পৌষী আসতেই ফাহাদ বললো-
অনেকদিন আরাম করা হয়েছে এবার যাও দেখি কবিতা লিখো । একদিন অন্তত একটা লেখার চেষ্টা করো ।
.
পৌষী কিছুটা অবাক হয়ে বললো-
কবিতা লিখবো আমি?
.
টিভি দেখতে দেখতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ফাহাদ বললো-
হুম ।
-কিন্তু কি নিয়ে লিখবো?
-তোমার যা খুশি ।
.
নিজের রুমে এসে খাটের উপরে বসে পড়লো পৌষী । হাতে তার কলম ও কাগজ ।
ফাহাদ তাকে কবিতা কেনো লিখতে বললো? ফাহাদ কি পৌষীর হাতের লেখা কবিতা চায়? তবে রোমান্টিক কোনো কবিতা লেখা উচিত ।
পৌষী মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে ভাবতে লাগলো কি লিখবে ।
.
.
ঘন্টা খানেক পর পৌষীর রুমে এসে ফাহাদ দেখলো, সে ঘুমিয়ে আছে ।
তার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাগজ ও কলম । এভাবে পৌষীকে দেখে নিজের মনে ফাহাদ বললো-
আমি আরো ভাবছিলাম, এতো সময় ধরে মহারানী করছে টা কি! ঘুমিয়েই পড়েছে লিখতে লিখতে ।
.
বিছানার উপর থেকে কাগজটি নিয়ে পড়লো ফাহাদ । কবিতাটি পড়েই ফাহাদ চোখ কপালে ।
————————
আমি তোমায় ভালোবাসি,
তোমাকে না পেলে দিবো গলায় ফাঁসি ।
আরো বেশিবেশি চাই তোমার আদর,
বুঝেছো আমার বাদর?
.
এতোক্ষণে পৌষী এই চার লাইন লিখেছে? তাও আবার এমন কবিতা! সেই বাজে হাতের লেখা…
পৌষী কি এসব দুষ্টুমির বশে ইচ্ছে করেই করলো!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here